পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক) - প্রাথমিক বিজ্ঞান - NCTB BOOK

বেঁচে থাকার জন্য আমরা পরিবেশকে নানাভাবে ব্যবহার করি। ফলে পরিবেশে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তন যখন জীবের জন্য ক্ষতিকর হয়, তখন তাকে আমরা পরিবেশ দূষণ বলি। বিভিন্ন ক্ষতিকর ও বিষাক্ত পদার্থ পরিবেশে মিশলে পরিবেশ দূষিত হয়।

Content added By

প্রশ্ন : কী কী কারণে পরিবেশ দূষিত হয়?

কাজ : আমাদের চারপাশের পরিবেশ দূষণ

কী করতে হবে :

১. খাতায় একটি পর্যবেক্ষণ ফরম তৈরি করি।

২. শ্রেণিকক্ষের বাইরে আশপাশে বিভিন্ন ধরনের দূষণ খুঁজে বের করি। 

৩. পর্যবেক্ষণ ফরমে দূষণগুলোর ছবি আঁকি। 

৪. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।

আলোচনা

নিচের বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করি। 

১. আমাদের চারপাশে কী ধরনের দূষণ রয়েছে? 

২. দূষণের কারণ কী? 

৩. সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে কাজটি সম্পন্ন করি।

Content added By

বর্তমানে পৃথিবীর অনেক সমস্যার মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো পরিবেশ দূষণ ।

পরিবেশ দূষণের উৎস ও কারণ

পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হলো শিল্পায়ন। শিল্পকারখানা সচল রাখতে বিভিন্ন ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন— তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারই দূষণের প্রধান উৎস। জনসংখ্যা বৃদ্ধি দূষণের আরও একটি বড় কারণ। প্রয়োজনীয় খাদ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য মানুষ পরিবেশ ধ্বংস করছে। পরিবেশের বেশির ভাগ দূষণ মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের ফলেই হয়ে থাকে।

পরিবেশ দূষণের প্রভাব

দূষণের ফলে মানুষ, জীবজন্তু ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দূষণের কারণে মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যেমন— ক্যান্সার, শ্বাসজনিত রোগ, পানিবাহিত রোগ, ত্বকের রোগ ইত্যাদি। দূষণের ফলে জীবজন্তুর আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে। খাদ্য শৃঙ্খল ধ্বংস হচ্ছে। ফলে অনেক জীব পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে হিমবাহ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে।

 

Content added By

বিভিন্ন প্রকার দূষণবায়ু, পানি, মাটি ও শব্দ দূষণের মাধ্যমেই সাধারণত পরিবেশ দূষিত হয়।

(১) বায়ু দূষণ

বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস, ধূলিকণা, ধোঁয়া অথবা দুর্গন্ধ বায়ুতে মিশে বায়ু দূষিত করে। যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া বায়ু দূষণের প্রধান কারণ। গাছপালা ও ময়লা আবর্জনা পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ার মাধ্যমেও বায়ু দূষিত হয়। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা এবং মলমূত্র ত্যাগের ফলে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ায়। বায়ু দূষণের ফলে পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও এসিড বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও মানুষ ফুসফুসের ক্যান্সার, শ্বাসজনিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

 

(২) পানি দূষণ

পানিতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত হয়ে পানি দূষিত হয়। পয়ঃনিষ্কাশন ও গৃহস্থালির বর্জ্য অথবা কারখানার ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থের মাধ্যমে পানি দূষিত হয়। এছাড়াও ময়লা আবর্জনা পানিতে ফেলা, কাপড় ধোয়া ইত্যাদির মাধ্যমে পানি দূষিত হয়। পানি দূষণের ফলে জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে এবং জলজ খাদ্য শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটছে। পানি দূষণের কারণে মানুষ কলেরা বা ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগে এবং বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

(৩) মাটি দূষণ

বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর বস্তু মাটিতে মেশার ফলে মাটি দূষিত হয়। কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশক, গৃহস্থালি ও হাসপাতালের বর্জ্য, কলকারখানার বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও তেল ইত্যাদির মাধ্যমে মাটি দূষিত হয়। মাটি দূষণের ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়। গাছপালা ও পশুপাখি মারা যায় ও তাদের বাসস্থান ধ্বংস হয়। মাটি দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের উপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। দূষিত মাটিতে উৎপন্ন ফসল খাদ্য হিসাবে গ্রহণের ফলে মানুষ ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।

(৪) শব্দ দূষণ

শব্দ দূষণ মানুষ ও জীবজন্তুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন করে। বিনা প্রয়োজনে হর্ন বাজিয়ে, উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে এবং লাউড স্পিকার বা মাইক বাজিয়ে মানুষ শব্দ দূষণ করছে। কলকারখানায় বড় বড় যন্ত্রপাতির ব্যবহারও শব্দ দূষণের কারণ। শব্দ দূষণ মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। অবসন্নতা, শ্রবণ শক্তি হ্রাস, ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি, কর্মক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি সমস্যা শব্দ দূষণের ফলে হয়ে থাকে। আমরা যখন তখন হর্ন না বাজিয়ে এবং উচ্চ শব্দ সৃষ্টি না করে শব্দ দূষণ রোধ করতে পারি।

আলোচনা

নিচে দেখানো ছকের মতো একটি ছক তৈরি করি।

বিভিন্ন প্রকার দূষণদূষণের কারণদূষণের প্রভাব
বায়ু দূষণ  
পানি দূষণ  
মাটি দূষণ  
শব্দ দূষণ  

২. বিভিন্ন প্রকার দূষণের কারণ ও প্রভাব ছকে লিখি ।

৩. সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে কাজটি সম্পন্ন করি।

Content added By

প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষা এবং যথাযথ ব্যবহারই হচ্ছে পরিবেশ সংরক্ষণ ।

প্রশ্ন : আমরা কীভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি ?

কাজ : পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য আমরা যা করব

কী করতে হবে :

১. নিচের ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।

আমরা কী করতে পারি?
 
 
 

২. আমরা কীভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি তার একটি তালিকা ছকে তৈরি করি।

৩. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি ।

সারসংক্ষেপ

বিদ্যুৎ বা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আমরা পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারি। কাজ শেষে বাতি নিভিয়ে রেখে আমরা বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করতে পারি। গাড়িতে চড়ার পরিবর্তে পায়ে হেঁটে বা সাইকেল ব্যবহার করে আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারি। প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কমিয়ে, পুনর্ব্যবহার করে ও রিসাইকেল করেও আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি। কারখানার বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ, তেল ইত্যাদি পরিবেশে ফেলার পূর্বে পরিশোধন করতে পারি। মাটি, পুকুর বা নদীতে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকতে পারি। ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে এবং গাছ লাগিয়ে আমরা পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি। পরিবেশ সংরক্ষণের অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।

Content added || updated By

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন :

১) পরিবেশ দূষণ বলতে কী বোঝ ? 

২) বায়ু দূষণের ফলে কী হয় ? 

৩) পরিবেশের দূষণগুলো কী কী? 

৪) পরিবেশ দূষণের উৎসসমূহ কী ? 

৫) পরিবেশ সংরক্ষণের ৫টি উপায় লেখ ?

 

বর্ণনামূলক প্রশ্ন :

১) পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ ব্যাখ্যা কর। 

২) শব্দ দূষণ কী? শব্দ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব কী? 

৩) পরিবেশ সংরক্ষণ কী ? আমরা কীভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি? 

৪ ) মাটি দূষণ কেন মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ? 

৫) জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কেন পরিবেশ দূষিত হয় ? 

৬) মাটি এবং পানি দূষণের সাদৃশ্য কোথায় ?

Content added By
কীটনাশকের ব্যবহার
কলকারখানার ধোঁয়া
উচ্চ শব্দে গান বাজানো
রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ
শ্রবণ শক্তি হ্রাস
ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি
ডায়রিয়া
মাটির উর্বরতা হ্ৰাস
পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি
চাষাবাদে যন্ত্রপাতির ব্যবহার
কীটনাশকের ব্যবহার
মাটির উর্বরতা হ্ৰাস
অনবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করা
মোটর গাড়ি ব্যবহার করা
জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা
রিসাইকেল করা