চতুর্থ শ্রেণি (প্রাথমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

ইবাদত অর্থ গোলামি করা, মালিকের কথামতো চলা। আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুল (স)-এর কথামতো কাজ করাকে ইবাদত বলে। ইবাদত শব্দটির অর্থ ব্যাপক। যেমন, সালাত আদায় করা,কুরআন মজিদ তিলাওয়াত করা, রোগীর সেবা করা, কথা বলার সময় সত্য কথা বলা সব কিছুই ইবাদত।

ইবাদতের পরিচয় 

আল্লাহ তায়ালা কুরআন মজিদে বলেন, “ আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্য যে, তারা শুধু আমারই ইবাদত করবে।” 

এর অর্থ হলো : 

১. আমরা কেবল আল্লাহ তায়ালার গোলামি করব, অন্য কারও নয় ৷

 ২. আমরা কেবল আল্লাহ তায়ালার আদেশমতো চলব, অন্য কারও নয় ৷

 ৩. কেবলমাত্র তাঁরই সামনে মাথা নত করব, অন্য কারও নয়।

 ৪. কেবলমাত্র তাঁকেই ভয় করব, অন্য কাউকে নয় ৷

 ৫. কেবলমাত্র তাঁর কাছে সাহায্য চাইব, অন্য কারও কাছে নয় ৷

এই পাঁচটি জিনিসকে আল্লাহ তায়ালা বুঝিয়েছেন ইবাদত শব্দ দ্বারা। কুরআন মজিদের বিভিন্ন আয়াত হতে ইবাদত শব্দের এরূপ অর্থ পাওয়া যায় । তাই অর্থ বুঝে ইবাদত করা উচিত । আমাদের প্রিয় নবি (স) এবং তাঁর পূর্ববর্তী সকল নবির শিক্ষার সারকথা হলো, “আল্লাহ ছাড়া আর কারও ইবাদত করো না।” আমরা সালাতের প্রতি রাকআতে সূরা ফাতিহা পড়ি; তখন একথাগুলোরই ঘোষণা করে থাকি। 

ইয়্যাকা না'বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন,

অর্থ : আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি। আমরা শুধু তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর বিভিন্ন ইবাদত ফরজ করেছেন। যেমন সালাত, সাওম, যাকাত ও হজ।

দলীয় কাজ : দলে বসে পরস্পর আলাপ-আলোচনা করে ইবাদতের একটি তালিকা তৈরি করে মার্কার দিয়ে পোস্টার পেপারে লিখবে।

 

Content added || updated By
৬ ওয়াক্ত
৭ ওয়াক্ত
৫ওয়াক্ত
৩ ওয়াক্ত
দাঁড়ানো অবস্থায়
সিজদাহ অবস্থায়
রুকুতে
শেষ বৈঠকে

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা পাক-পবিত্র থাকে আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।” 

মহানবি (স) বলেন, “পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ।” 

পাক-পবিত্র থাকাকেই তাহারাত বলে। তাহারাত অর্থ পবিত্রতা। ওযু করা, গোসল করা ইত্যাদি। যারা পাকসাফ থাকে, পরিষ্কার পোশাক পরে, তাদেরকে সবাই ভালোবাসে। সবাই তাদের আদর করে। পাকসাফ থাকলে দেহমন ভালো থাকে। লেখাপড়ায় মন বসে। আল্লাহ খুশি হন।

ওযু-

কুরআন মজিদে আল্লাহ তায়ালা সালাত আদায়ের আগে ওযু করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাকসাফ ও পবিত্র থাকার অনেক নিয়ম আছে। ওযু তার মধ্যে একটি উত্তম নিয়ম। সালাতের আগে ওযু করা ফরজ। ওযু ছাড়া সালাত আদায় হয় না 

ওযুর ফরজ 

ওযুর ফরজ চারটি। যথা : 

১. মুখমণ্ডল ধোয়া।

 ২. কনুইসহ উভয় হাত ধোয়া ।

 ৩. চার ভাগের এক ভাগ মাথা মাসাহ করা।

 ৪. গিরাসহ উভয় পা ধোয়া

পরিকল্পিত কাজ : ওযুর ফরজগুলোর একটি তালিকা তৈরি করবে। 

ওযুর সুন্নত 

ওযুর সুন্নত ১১টি। যথা : 

১. নিয়ত করা, 

২. বিসমিল্লাহ বলে ওযু আরম্ভ করা, 

৩. দাঁত মাজা,

 ৪. কব্জি পর্যন্ত দুই হাত তিনবার ধোয়া,

৫. তিনবার কুলি করা, 

৬. পানি দিয়ে তিনবার নাক সাফ করা, 

৭. প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার ধোয়া, 

৮. কান মাসাহ করা,

 ৯. হাত-পা ধোয়ার সময় ডান হাত ও ডান পা আগে ধোয়া, 

১০. সম্পূর্ণ মাথা একবার মাসাহ করা,

 ১১. ওযুর কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে পর পর করা।

আব্বা-আম্মা, বড় ভাইবোন, শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম সাহেব ভালোভাবে ওযু করেন।

 আমরা তাঁদের ওযু দেখে ভালোভাবে ওযু করা শিখব।

পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষক প্রথমে ওযু করে শিক্ষার্থীদের দেখাবেন। এরপর শিক্ষার্থীরা ওযু করবে। শিক্ষক দেখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দেশনা দেবেন ৷

ওযু নষ্ট হওয়ার কারণ 

নানা কারণে ওযু নষ্ট হয়। এগুলোর প্রতি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। যেসব কারণে ওযু নষ্ট হয় তা হলো :

১. পেশাব বা পায়খানার রাস্তা দিয়ে কিছু বের হলে। 

২. মুখ ভরে বমি করলে। 

৩. কোনো কিছু ঠেস দিয়ে বা শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লে।

 ৪. অজ্ঞান হলে।

 ৫. রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে শরীর থেকে গড়িয়ে পড়লে।

 ৬. সালাতের মধ্যে উচ্চস্বরে হেসে ফেললে। 

ওযু করা ফরজ। ওযু ছাড়া সালাত আদায় হয় না। ওযু সম্পর্কে আমরা সাবধান থাকব। ওযু নষ্ট হলে ওযু করে নেব।

পরিকল্পিত কাজ : ওযু নষ্ট হওয়ার কারণগুলো লিখবে।

 

Content added By

সুস্থ শরীর ও সুন্দর মনের জন্য পাকসাফ থাকার প্রয়োজন । কিন্তু নানা কাজে নানাভাবে শরীর ময়লা হয়, অপবিত্র হয়। তাই অস্বস্তি লাগে। এই ময়লা ও অপবিত্রতা দূর করার উত্তম উপায় হলো গোসল করা। পানি দিয়ে সারা শরীর ধোয়াকে গোসল বলে।

গোসল করলে গায়ের ঘাম দূর হয়। দুর্গন্ধ দূর হয়। দেহমন পবিত্র হয়। মন ভালো থাকে। কাজে উৎসাহ আসে।

গোসলের নিয়ম 

আমরা গোসলের শুরুতে দুই হাত ধুয়ে নেব। গড়গড়াসহ কুলি করে মুখ পরিষ্কার করব। পানি দিয়ে নাক সাফ করব। পরে সারা শরীর ভালো করে তিনবার ধুয়ে ফেলব। এভাবে গোসল করব।

গোসলের ফরজ তিনটি। যথা:

 ১) গড়গড়াসহ কুলি করা, 

২) পানি দিয়ে ভালোভাবে নাক সাফ করা।

৩) পানি দিয়ে সারা শরীর ধোয়া ।

খেয়াল রাখতে হবে সারা শরীরের কোনো অংশ যেন শুকনা না থাকে। নিয়মিত গোসল করলে শরীর ভালো থাকে। গোসল করা আল্লাহ তায়ালার হুকুম। এটাও একটা ইবাদত।

পরিকল্পিত কাজ : গোসলের ফরজ কাজগুলোর তালিকা তৈরি করবে।

আযান 

সালাত জামাআতের সাথে আদায় করতে হয়। মহানবি (স) জামাআতে সালাত আদায় করতে তাগিদ দিয়েছেন। জামাআতে সালাত আদায়ের জন্য কীভাবে ডাকতে হয় কেউ তা জানত না। মহানবি (স) সাহাবিদের নিয়ে একদিন পরামর্শে বসলেন, আলোচনা চলল। কেউ বললেন, সালাতের সময় হলে ঘণ্টা বাজানো হোক। কেউ বললেন, শিঙ্গায় ফুঁ দিয়ে ডাকা হোক। কেউ বললেন, আগুন জ্বালানো হোক। আরও অনেকেই অনেক কথা বললেন। মহানবি (স) কোনোটাই পছন্দ করলেন না ৷

গভীর রাত। সাহাবি হযরত আবদুল্লাহ গভীর ঘুমে মগ্ন। স্বপ্ন দেখেন, একজন ফেরেশতা তাঁকে আযানের বাক্যগুলো শুনাচ্ছেন। ভোরে তিনি ঐ বাক্যগুলো মহানবি (স)-কে শুনালেন। আশ্চর্যের কথা, হযরত উমর (রা)ও একই স্বপ্ন দেখেন। বাক্যগুলো মহানবি (স)- এর খুব পছন্দ হলো। তিনি বললেন,‘এটা মহান আল্লাহরই নির্দেশ। মহানবি (স) হযরত বিলাল (রা)-কে আযান দিতে বললেন। হযরত বিলালের কণ্ঠে ধ্বনিত হলো প্রথম আযান। হযরত বিলাল হলেন ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন।

আযানের বাক্যগুলো হলো:

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,                                            اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُد

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,                                             اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ

আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ                                                أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ إِلَّا اللهُ

আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ                                                 أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ                                            اشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ                                            اشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

হাইইয়া আলাস সালাহ, হাইইয়া আলাস সালাহ                              حَى عَلَى الصَّلوةِ - حَيَّ عَلَى الصَّلوة 

হাইইয়া আলাল ফালাহ, হাইইয়া আলাল ফালাহ                             حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ . حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ 

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার                                                اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُر

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ                                                                           لا إله إلا الله 

অর্থ : আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড় ।

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। (দুইবার)

 আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (স) আল্লাহর রাসুল। (দুইবার)

 সালাত আদায়ের জন্য এসো, সালাত আদায়ের জন্য এসো।

 কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য এসো, কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য এসো।

আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়। আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই ৷

ফজরের আযানে হাইইয়া আলাল ফালাহ-এর পর ঘুম ভাঙানো ডাক দেয়া হয়। বলতে হয়:

আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম   

আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম  

অর্থ : ঘুম থেকে সালাত উত্তম, ঘুম থেকে সালাত উত্তম ।

আযানের এই মর্মস্পর্শী ডাক শুনে কোনো মুমিনব্যক্তি বসে থাকতে পারে না। প্রকৃত মালিকের দরবারে হাজির হয়ে তাঁর সামনে মাথা নত না করে সে কিছুতেই শান্তি পায় না। 

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন :

                                           বাজল কিরে ভোরের শানাই 

                                               নিদমহলা আঁধার পুরে।

                                              শুনাই আযান গগনতলে

                                              অতীত রাতের মিনার চূড়ে 

কবি কায়কোবাদ বলেন :

 কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি

 মর্মে মর্মে সেই সুর

 বাজিল কী সুমধুর

 আকুল হইল প্রাণ নাচিল ধমনী ৷

একক কাজ : শিক্ষার্থীরা আযানের বাক্যগুলো বাংলায় মার্কার দিয়ে পোস্টার পেপারে লিখবে। আযানের শেষে এই দোয়া পড়তে হয় :

اللهُم رَبِّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلوةِ الْقَائِمَةِ أَتِ مُحَمَّدَانِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ

وَالدَّرَجَةِ الرّفِيعَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُودَانِ الَّذِى وَعَدْتَهُ - إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ .

আল্লাহুম্মা রাব্বা হাযিহিদ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াসসালাতিল কাইমাতি আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়ালফাযীলাতা ওয়াদ্দারাজাতার রাফিয়াতা ওয়াবআসছু মাকামাম মাহমুদানিল্লাযী ওয়া আদতাহ্র। ইন্নাকা লা তুখলিফুল মীয়াদ।

মুয়াজ্জিন প্রতিদিন পাঁচবার আযান দেন। রেডিও-টেলিভিশনে আযান প্রচার করা হয়। আমরা তা মনোযোগ দিয়ে শুনব। আমরা আযান শুনে সালাতের জন্য তৈরি হব। সময়মতো সালাত আদায় করব।

Content added By

দরুদ 

সালাতে তাশাহহুদের পর দরুদ পড়তে হয়। দরুদ হলো—

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি                               اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ عَلَى أَلِ

মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীমা                                           مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرُ هِيْمَ

 ওয়াআলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ                                

 আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়াআলা আলি                              اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ

মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা                                            مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَهِيْمَ

 ওয়াআলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ                                 

অর্থ: হে আল্লাহ! দয়া ও রহমত কর হযরত মুহাম্মদ (স)-এর প্রতি এবং তাঁর বংশধরদের প্রতি যেমন তুমি রহমত নাজিল করেছ হযরত ইবরাহীম (আ) ও তাঁর বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই তুমি অতি উত্তম গুণের আধার এবং মহান। হে আল্লাহ! বরকত নাজিল কর হযরত মুহাম্মদ (স) এবং তাঁর বংশধরদের উপর যেমন তুমি হযরত ইবরাহীম (আ) এবং তাঁর বংশধরদের উপরে করেছ। নিশ্চয়ই তুমি অতীব সৎগুণবিশিষ্ট ও মহান 

দোয়া মাসুরা 

কুরআন-হাদিসে বর্ণিত দোয়াাগুলোকে দোয়া মাসুরা বলা হয়। সালাতে দোয়া মাসুরা পড়া ভালো। মহানবি (স) সালাতে দোয়া মাসুরা পাঠ করতেন। সালাতে দরুদের পর এই দোয়া মাসুরাটি পড়া হয়।

আল্লাহুম্মা ইন্নি যালামতু নাফসী যুলমান কাসীরাও                      اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا

ওয়ালা ইয়াগফিরুয যুনুবা ইল্লা আনতা ফাগফিরলী                   

 মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা                         مَغْفِرَةٌ مِّنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّكَ

 আনতাল গাফুরুর রাহীম                                                                   انْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ .

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর অধিক পরিমাণে জুলুম করেছি। তুমি ছাড়া আমার অপরাধ ক্ষমা করার ক্ষমতা কারো নেই। (অতএব আমি আমার অপরাধসমূহের জন্য তোমার নিকটই ক্ষমা প্রার্থনা করছি)। আমার উপর রহমত বর্ষণ কর, আমার উপর অনুগ্রহ কর। নিশ্চয়ই তুমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াময় । 

 

Content added By

সালাতের শেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো সালাম। দোয়া মাসুরা পড়ার পর প্রথমে ডানে ও পরে বামে সালাম ফেরাতে হয়। সালামের বাক্যটি হলো : 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ   

অর্থ : তোমাদের উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক ।

মুনাজাত-

আল্লাহ তায়ালার কাছে আবেদন-নিবেদন, কাকুতি-মিনতি করাকে মুনাজাত বা দোয়া বলে। প্রত্যেক ফরজ সালাত শেষে মুনাজাত কবুল হওয়ার একটি উপযুক্ত সময়। এ সময় যে কোনো ভালো দোয়া করা যায়। কুরআন মজিদ ও হাদিস শরিফে অনেক মুনাজাত আছে। একটি সংক্ষিপ্ত এবং সুন্দর মুনাজাত হলো :

রব্বানা আতিনা ফিদদুনইয়া হাসানাতাওঁ ওয়াফিল;

আখিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা আযাবান নার  

অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের এ দুনিয়ায় কল্যাণ দাও আর আখিরাতেও কল্যাণ দাও এবং দোযখের শাস্তি থেকে আমাদের রক্ষা কর। সূরা বাকারা-২০১

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো সালাত বা নামায। সালাতের কতকগুলো নিয়ম আছে। এই নিয়মগুলো পালন করা ফরজ। 

সালাতের আহকাম-

সালাত শুরুর আগে সাতটি ফরজ কাজ করতে হয়। এগুলোকে বলে সালাতের আহকাম আহকাম ঠিকমতো পালন না করলে সালাত আদায় হয় না। 

১। শরীর পাক হওয়া ২। কাপড় পাক হওয়া ৩। সালাতের জায়গা পাক হওয়া

 ৪। সতর ঢাকা ৫। কিবলামুখী হওয়া ৬। নিয়ত করা

 ৭। সময়মতো সালাত আদায় করা।

সালাতের ওয়াক্ত - أَوْقَاتُ الصَّلوة

সময়মতো সালাত আদায় করা আল্লাহ তায়ালার আদেশ। সময়মতো আদায় না করলে সালাত আদায় হয় না। মহান আল্লাহ বলেন, সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনের 66 জন্য ফরজ।” সালাতের নির্দিষ্ট সময় হলো :

ফজর রাত শেষে পূর্ব আকাশে সাদা আভা দেখা দিলে ফজর শুরু হয়। সূর্য উঠার পূর্ব মুহূর্তে তা শেষ হয়।
যোহরদুপুরে সূর্য পশ্চিমে নামতে আরম্ভ করলে যোহর শুরু হয়। আর কোনো কাঠির ছায়া সে কাঠির মূলছায়া বাদে তার দ্বিগুণ হলে তা শেষ হয়।
আসরযোহর শেষ হওয়ার সাথে সাথে আসর শুরু হয়। সূর্য ডোবার পূর্বে তা শেষ হয়।
মাগরিব সূর্য ডোবার পর মাগরিব শুরু হয়। পশ্চিম আকাশে আলোর লাল আভা মুছে যাওয়ার সাথে সাথে তা শেষ হয় ৷
মাগরিব শেষ হওয়ার পর এশা শুরু হয়। ফজরের পূর্ব পর্যন্ত এশার সালাতের সময় থাকে। তবে মধ্য রাতের পূর্বে এশার সালাত পড়া ভালো। এশা 

সালাতের আরকান-

সালাতের ভিতরে সাতটি ফরজ কাজ আছে। এগুলোকে সালাতের আরকান বলে। যথা:

১। তাকবির-ই-তাহরিমা বা আল্লাহু আকবর বলে সালাত শুরু করা। 

২। কিয়াম অর্থাৎ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা। তবে কোনো কারণে দাঁড়াতে অক্ষম হলে বসে, এমনকি শুয়েও সালাত আদায় করা যায় 

৩। কিরাত অর্থাৎ কুরআন মজিদের কিছু অংশ তিলাওয়াত করা।

 ৪। রুকু করা। 

৫। সিজদাহ্ করা। 

৬। শেষ বৈঠকে বসা । 

৭। সালাম-এর মাধ্যমে সালাত শেষ করা।

এর কোনো একটি বাদ পড়লে সালাত আদায় হয় না। তাই এগুলো আদায়ের ব্যাপারে আমরা খুবই সাবধান থাকব। 

 সালাত আদায়ের নিয়ম

 

কিবলামুখী হয়ে সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায়

 

 

সালাত সবচেয়ে বড় 

ইবাদত। মহানবি (স)

 যেভাবে সালাত আদায় 

করতেন আমরাও সেভাবে

 সালাত আদায় করব। আমরা

 সালাত আদায়ের জন্য

 দাঁড়াব। আমাদের মুখ 

থাকবে পবিত্র কিবলার 

দিকে। আমরা পাকসাফ হয়ে 

সারা জাহানের বাদশাহ আল্লাহ

 তায়ালার দরবারে হাজির

 হব। সালাতে যা যা পড়বো

 তার অর্থ জেনে নেব 

সর্বপ্রথম বলব : আল্লাহু আকবর- الله اكبر 

                                           অর্থ: আল্লাহ সবচেয়ে বড়।

মুখে এ বিরাট অঙ্গীকার করে পৃথিবীর যাবতীয় জিনিস হতে নিজের সম্পর্ক ছিন্ন করব। প্রতীক হিসেবে কান পর্যন্ত দুই হাত তুলব। এরপর সারা জাহানের বাদশাহর সামনে আল্লাহু আকবর বলে হাত বেঁধে দাঁড়াব।

তাকবিরে তাহরিমার দৃশ্য 

এরপর বিনয় সহকারে সানা পড়ব। সানা হলো –

সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতায়ালা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা ৷

এরপর আউযূ বিল্লাহি মিনাশ শায়তনির রাজিম এবং বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ব।

তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করে অন্য কোনো সূরা বা সূরার অংশ পাঠ করব। আল্লাহু আকবর বলে রুকু করব। রুকুতে তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম পড়ব। সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে সোজা হয়ে দাঁড়াব। দাঁড়ানো অবস্থায় রব্বানা লাকাল হামদ বলব। এরপর আল্লাহু আকবর বলে সিজদাহ্ করব। 

এরপর আল্লাহু আকবর বলে সোজা হয়ে দাঁড়াব। সূরা ফাতিহা পাঠ করে অন্য কোনো সূরা পাঠ করব। পরে প্রথম রাকআতের মতো রুকু সিজদাহ্ করে স্থির হয়ে বসব। তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পাঠ করব। এরপর প্রথমে ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, পরে বাম দিকে মুখ ফিরিয়ে বলব আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। এভাবে দুই রাকআত বিশিষ্ট সালাত আদায় করব।

সালাম ফেরানোর দৃশ্য

যদি তিন বা চার রাকআত বিশিষ্ট সালাত হয় তবে আবদুহু ওয়া রাসূলুহু পর্যন্ত পড়ে আর বসব না। আল্লাহু আকবর বলে উঠে দাঁড়াব। তারপর আগের মতো তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআত পড়ব। তবে ফরজ সালাতের ক্ষেত্রে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআতে শুধুমাত্র সূরা ফাতিহা পাঠ করব।

মহানবি (স) জামাআতের সাথে সালাত আদায় করতেন। আমরাও জামাআতের সাথে সালাত আদায় করব।

 

Content added By

প্রতিদিন পাঁচবার মসজিদে জামাআত হয়। পাড়ার, মহল্লার লোকজন একসাথে সালাত আদায় করেন। এতে পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ হয়, কুশলাদি জানা যায়। সুখে-দুঃখে একে অন্যের সাহায্য-সহযোগিতার সুযোগ হয়।

প্রতি সপ্তাহে জামে মসজিদে আরও বড় আকারে জুমুআর জামাআত হয়। শুক্রবারে জুমুআর সালাতের জন্য অনেক মুসল্লির সমাবেশ ঘটে। আল্লাহপাক বলেন,“জুমুআর দিন আযান হলে সালাতের জন্য দ্রুত যাও। বেচাকেনা বন্ধ রাখ। সালাত শেষে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর রহমত তালাশ কর।”

মসজিদে নববী

জুমুআর দিন গোসল করা, ভালো পোশাক পরা, আতরমাখা সুন্নত। এদিন যোহরের সালাতের পরিবর্তে জুমুআর দুই রাকআত সালাত ফরজ।

ফরজ সালাতের আগে চার রাকআত কাবলাল জুমুআ সালাত পড়া সুন্নত। ফরজের পর চার রাকআত বাদাল জুমুআ সালাত পড়াও সুন্নত। এ ছাড়া সময় পেলে নফল সালাত পড়াও উত্তম ।

জুমুআর সালাত যোহরের ওয়াক্তেই জামাআতে আদায় করতে হয়। জামাআত ছাড়া জুমুআর ফরজ আদায় হয় না ।

জুমুআর জন্য দুটি আযান দেওয়া হয়। প্রথম আযান মিনারায় বা মসজিদের বাইরে দিতে হয়। ইমাম সাহেব খুতবা দিতে মিম্বারে বসলে দ্বিতীয় আযান দিতে হয়। এরপর ইমাম মিম্বারে দাঁড়িয়ে দুটি খুতবা দেন। খুতবা অর্থ বক্তৃতা। খুতবায় ইসলামের বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করা হয় ।

খুতবা শোনা ওয়াজিব। এ সময় কথা বলা বা অন্য কিছু করা যায় না। এমনকি সালাত আদায় করাও নিষেধ।

খুতবা শেষে ইমামের সাথে দুই রাকআত ফরজ সালাত আদায় করতে হয়। ফরজের আগে নিয়ত করব, “আমি কিবলামুখি হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে দুই রাকআত জুমুআর ফরজ সালাত এই ইমামের সাথে পড়ার নিয়ত করলাম আল্লাহু আকবর।” তবে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা বা পড়া আবশ্যক নয় ।

জুমুআর সালাত মোট দশ রাকআত। চার রাকআত কাবলাল জুমুআ সুন্নত। দুই রাকআত ফরজ । চার রাকআত বাদাল জুমুআ সুন্নত।

Content added By

ঈদ হলো খুশির দিন। বিশ্বের মুসলিমগণ দুটি ঈদ উৎসব করেন। একটি রোযার শেষে ঈদুলফিতর। আরেকটি হলো কুরবানির ঈদ বা ঈদুলআযহা। ঈদের দিন সারা এলাকার মুসল্লিগণ ঈদগাহে একত্রিত হন। দুই রাকআত ঈদের সালাত আদায় করে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ঈদের সালাত পড়া ওয়াজিব।

 ঈদুলফিতর 

পবিত্র রমযান মাসে সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিন হলো ঈদুলফিতর এর দিন। ঈদ অর্থ আনন্দ। ফিতর অর্থ রোযা ভঙ্গ করা। দীর্ঘ একমাস রোযা রাখার তাওফিক দানের জন্য মুসলিমগণ এদিন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এটি নিছক আনন্দ উৎসবের দিন নয়।

এদিন পাড়া-প্রতিবেশী, গরিব-দুঃখীর খোঁজখবর নিতে হয়। বিধবা, ইয়াতীম, সকলের মুখে সাধ্যমতো হাসি ফুটানোর চেষ্টা করতে হয়। ধনীদের উপর এ দিন সাদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। কারণ আনন্দের দিন যাতে কেউ অভুক্ত না থাকে। ঈদের দিনে রোযা রাখা হারাম ।

ঈদের দিনের সুন্নত: সকালে গোসল করা, খুশবুমাখা, পরিষ্কার কাপড় পরা, মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া, ঈদের সালাত মাঠে আদায় করা।

ইমামের সাথে দুই রাকআত ঈদুলফিতরের সালাত আদায় করা ওয়াজিব। এতে ছয়টি অতিরিক্ত ওয়াজিব তাকবির দিতে হয়। 

ঈদের সালাত আদায় করার নিয়ম

প্রথমে কাতার করে ইমামের পিছনে দাঁড়াব। নিয়ত করব। আল্লাহু আকবর বলে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে তাহরিমা বাঁধব। সানা পাঠ করব। এরপর কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে ইমামের সাথে তিন তাকবির দিব। প্রথম দুইবার হাত না বেঁধে ছেড়ে রাখব। তৃতীয় তাকবির দিয়ে সালাতে হাত বাঁধার মতো দুই হাত বাঁধব। এরপর ইমাম সাহেব অন্যান্য সালাতের মতো সূরা ফাতিহা ও যে কোনো সূরা পাঠ করবেন এবং যথারীতি রুকু সিজদাহ্ করে প্রথম রাকআত শেষ করবেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাকআতে ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা ও যে কোনো সূরা পাঠ করবেন। এরপর তিন তাকবির দিবেন। আমরাও তিনবার আল্লাহু আকবর বলব। তিনবারই কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে নামিয়ে রাখব, হাত বাঁধব না। পরে চতুর্থবার আল্লাহু আকবর বলে রুকু করব।

এরপর অন্যান্য সালাতের মতো সিজদাহ্ করব,তশাহহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পাঠ করে ইমামের সাথে সালাম ফিরাব। সালাত শেষে ইমাম সাহেব দুইটি খুতবা দেবেন। খুতবা শোনা ওয়াজিব।

পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা ঈদুলফিতর-এর দিনের করণীয় কাজগুলোর একটি তালিকা তৈরি করবে।

ঈদুলআযহা 

দ্বিতীয় ঈদ হলো ঈদুলআযহা বা কুরবানির ঈদ। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। আল্লাহর নির্দেশে এদিন হযরত ইবরাহীম (আ) নিজপুত্র হযরত ইসমাঈল (আ)-কে আল্লাহর নির্দেশে কুরবানি করতে তৈরি হন। তাঁর এ ত্যাগের স্মৃতি স্বরূপ মুসলমানের উপর

কুরবানি ওয়াজিব করা হয়েছে।

যিলহজ মাসের দশম তারিখ ঈদুলআযহার দিন। ঈদুলফিতরের মতো এদিনও গোসল করে খুশবু মেখে পরিষ্কার কাপড় পরে ঈদগাহে একই নিয়মে দুই রাকআত ওয়াজিব সালাত আদায় করতে হয়। সালাত শেষে ইমাম দুইটি খুতবা দেবেন। খুতবা শোনা ওয়াজিব এদিন সালাতের আগে কিছু না খাওয়া ভালো। রাস্তায় জোরে জোরে তাকবির পড়া সুন্নত।

ঈদের তাকবির হলো: আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

যিলহজ মাসের নবম তারিখ ফজর থেকে তের তারিখ আসর পর্যন্ত ফরজ সালাত শেষে এই তাকবির পড়া ওয়াজিব। ঈদুলফিতরের দিন এই তাকবির আস্তে আস্তে পড়তে হয়।

সালাত শেষে কুরবানি করতে হয়। কুরবানির গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজের জন্য রাখব, একভাগ আত্মীয়দের মাঝে বিতরণ করব, আরেক ভাগ গরিবদের মাঝে বণ্টন করব। এভাবে ঈদের খুশিতে সবাই শরিক হতে পারে। এতে সমাজে মধুর সম্পর্ক স্থাপিত হয় ।

আমরা ঈদের এ মহান শিক্ষা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়িত করব। সবার সঙ্গে মিলেমিশে ঈদের আনন্দ উপভোগ করব। ঈদের এ শিক্ষাকে সমাজে ছড়িয়ে দেব। 

 

Content added By