সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - শিল্প ও সংস্কৃতি - NCTB BOOK

রাফি স্কুল থেকে ফিরছে। পথে কাঠ বিড়ালি, পাখি, নদীর সাথে দেখা

রাফি : কাঠবিড়ালি, ও কাঠবিড়ালি কি হয়েছে যাও না বলি। 

কাঠবিড়ালি : কি হবে আর কথা শুনে বড্ড কষ্ট পেলাম মনে। বন বাদাড় সব উজাড় করে থাকার জায়গা নিয়েছো কেড়ে। 

রাফি : ও পাখিরা কোথায় যাও সবাই দলে দলে কেনোই বা যাচ্ছো চলে? 

পাখি : কোথায় যাবো তা জানি না তবে যাচ্ছি চলে এটাই জানা । 

রাফি : এখানে থাকতে কিসের মানা? 

পাখি : গাছ কেটেছো, আবাস ভেঙেছো কি আর হবে থেকে তাই চলেছি ঝাঁকে ঝাঁকে 

নদী : আমায় মেরেছো, দখল করেছো দুষিত করেছো, প্রাণ কেড়েছ, দালান করেছো বাঁকে বাঁকে। তাই চলেছি অজানার দিকে।

রাফি : না, চলে যেও না, কথা শোনো একখানা, 

প্রজাপতি : ফিরে যাও খোকা পিছু ডেকো না। আমরা চলেছি অজানা পথে বিদায় নিলাম এখান হতে। 

রাফি : তবে কি আর খেলতে পাব না তোমাদের সাথে?

পাখি : আরে বোকা মানুষ গাছ না থাকলে অক্সিজেন পাবে কি করে?

কাঠবিড়ালি : বিষাক্ত হয়ে আসবে চারপাশ নিশ্বাস নিতে করবে হাস পাশ।

প্রজাপতি : তিলে তিলে মরবে সবে নিজের ধ্বংস নিজ হাতে, কে এমন দেখেছে কবে?

নদী : বিরানভূমি হবে দেশ নিজ হাতে ধ্বংস করছ স্বদেশ।

রাফি :না না, এমন করে বলো না এমন পৃথিবী আমরা চাই না।

পাখি : না চাইলে যাও লেগে পড়ো কাজে প্রকৃতিকে সাজাও সবুজে সবুজে।

নদী : সুন্দর করে তোলো পৃথিবী গাছ, পাখি, নদী বাঁচাও সবি।

প্রজাপতি : গাছগাছালিতে সব দাও ভরে আমরাও ফিরব আপন ঘরে।

সবাই : হাসিখুশিতে উঠব মেতে আনন্দেতে বাঁচব একসাথে। যাও, দেরি কোরো না সবাই কে হবে বোঝাতে....

আমরা চাইলেই কিন্তু প্রকৃতিকে বাঁচাতে পারি। কীভাবে? চলো এর উত্তরটা আমরা খুঁজে দেখি মজার একটি কাজের মাধ্যমে।

কাজটির নাম দিলাম – সবুজ ডাকে আজ আমায়।

আমাদের জীবন ধারণের জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার অনেক কিছুই আমরা পাই গাছ থেকে। আমাদের লেখা কাগজও হয় গাছ থেকে। আমরা recycle বা পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের ব্যবহার করা কাগজ নষ্ট না করে তা দিয়ে নতুন কিছু তৈরি করে পরিবেশ রক্ষায় ভুমিকা রাখতে পারি।

এই কাজটি করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন প্রথমে তার একটি তালিকা দেয়া হলো :

১। পুরোনো খবরের কাগজ/পত্রিকা/পুরানো লেখার কাগজ 

২। পানি 

৩। বড় একটা পাত্র/বালতি 

৪। চালনি/নেট/পাতলা সুতির কাপড় 

৫। সব্জি/ফুল গাছের ছোটো বীজ।

যেভাবে কাজটি করব— 

■ প্রথমে পুরোনো কাগজ কেটে বা ছিঁড়ে একটা বড় পাত্রে নিতে হবে তারপর সেই পাত্রে প্রয়োজন মতো পানি নিয়ে নিতে হবে। এই অবস্থায় বেশ কিছু সময় রেখে দিলে দেখা যাবে যে কাগজগুলো মণ্ডে পরিণত হয়েছে। মন্ড যদি ঘন থাকে তাহলে আরও কিছু পানি মিশিয়ে পাতলা করে নিতে হবে। যদি সম্ভব হয় আমার কোন প্রাকৃতিক আঠা মন্ডের সাথে মিশিয়ে নিতে পারি।

■ এরপর সেই তরল মণ্ডের মিশ্রণটি একটা চালনি/নেট/পাতলা সুতি কাপড়ে ঢেলে ছড়িয়ে দিয়ে ছেকে নিতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে যাতে করে মণ্ডটি সবদিকে সমান পুরু হয়ে বসে যায়। এরপর কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে যাতে করে সব পানি পড়ে যায়। 

■ ভেজা থাকতেই মণ্ডের আস্তরণটির উপর দুচারটি বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে যেন বীজগুলো মণ্ডের আস্তরণের সাথে লেগে যায়। এরপর খুব সতর্কতার সাথে চালনি/কাপড় থেকে মণ্ডের আস্তরণটি তুলে ফেলতে হবে যাতে করে কোনোভাবে এটি ছিঁড়ে না যায়। 

■ এবার এটিকে ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে। শুকিয়ে গেলেই দেখা যাবে যে এটি আবার কাগজে পরিণত হয়েছে।

পুরোনো কাগজ থেকে যেই নতুন কাগজ তৈরি করা হলো, এবার সেই কাগজ দিয়ে আমরা বিভিন্ন রকমের শুভেচ্ছা কার্ড বানাব। নিজের হাতে তৈরি শুভেচ্ছা কার্ডগুলো যেকোনো উৎসব উপলক্ষ্যে শিক্ষক/বন্ধু/আত্মীয়কে উপহার দিব। কার্ডটি দেবার সময় কার্ডের ভিতরে লিখে দিতে হবে যেন খুঁজে দেখা হয় কাগজের কোন অংশে বীজ আছে। বীজের অংশটুকু ছিড়ে মাটিতে পুঁতে দিতে হবে যাতে করে সেই বীজ থেকে গাছ হয়। এভাবেই আমরা আমদের বাগানটা করতে পারি স্কুলে বা বাড়িতে।

এবার আমরা শিল্পী এস এম সুলতানের আঁকা কিছু ছবি দেখব এবং তার সম্পর্কে জানব ।

সুলতানের জন্ম ১৯২৩ সালের ১০ই আগস্ট নড়াইল জেলার মাছিমদিয়া গ্রামে। তার পুরো নাম শেখ মুহাম্মাদ সুলতান। ছোটবেলা থেকে তিনি ছবি আঁকতে ভালোবাসতেন। তার ছবি মূল বিষয় ছিল এই বাংলার মাটি আর এর জনমানুষ। প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি ছিল তার অসীম ভালোবাসা। মননশীল নতুন প্রজন্ম গড়ার জন্য তিনি নড়াইলে প্রতিষ্ঠা করেন শিশুস্বর্গ। সেখানে তিনি একটা বড় নৌকা তৈরি করেছিলেন। যাতে ছোটো ছেলেমেয়েরা নৌকা ভ্রমণ করতে করতে ছবি আঁকার মজার অভিজ্ঞতা পায়।

কৃষকরাই এই দেশের মূল প্রাণ শক্তি বলে তিনি বিশ্বাস করতেন, তাই শিল্পী সুলতানের ছবিতে কৃষকদেরই আমরা খুঁজে পাই মুখ্য ভূমিকায়। তাঁর ছবিগুলোতে কৃষকের অদম্য বীরত্ব, বেঁচে থাকার শক্তি এবং ভূমির প্রতি অবিরাম প্রতিশ্রুতিকে চিত্রিত হয়েছে। কৃষকরাই দেশের প্রকৃত নায়ক। একজন নায়ক কি কখনো দুর্বল হতে পারে? এইজন্য তাদের একেবারে পেশিবহুল হতে হবে। ফসল তোলার জন্য তারা রুক্ষ জমিতে লাঙলের ফলক ঠেলে দেয়। তারা এখানে না থাকলে আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ত। তারা আমাদের জাতির বীর সন্তান। যদিও বাস্তবে তাদের শারীরিক গঠন এমন নয়। সুলতান তাদের শক্তির প্রতীক হিসেবে কল্পনা করেছেন। তিনি তাদের জন্য একটি সমৃদ্ধ জীবন কামনা করেছিলেন। সুলতান তাঁর ছবির মধ্য দিয়েই তাদের বীরত্বগাঁথাকে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন।

শিল্পী সুলতানের মতো প্রকৃতির প্রতি আমাদেরও ভালোবাসা প্রকাশ করা খুব দরকার। সবুজকে বাঁচিয়ে রাখা, সবুজকে ছড়িয়ে দেয়া জরুরি।

যা করব— 

■ পুরোনো কাগজ recycling করে নতুন কাগজ বানাব। 

■ সেই নতুন কাগজে বীজ সংযুক্ত করব। 

■ বানানো নতুন কাগজ দিয়ে নিজের মতো নকশা করে কার্ড বানাব। 

■ বানানো কার্ডগুলো বন্ধুদের উপহার দিব। 

■ বন্ধুর কাছ থেকে প্রাপ্ত বীজযুক্ত কার্ডটি মাটিতে লাগিয়ে দিব এবং তার পরিচর্যা করব। 

■ বীজ থেকে গাছ হওয়ার প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করব। চাইলে গাছটির বেড়ে ওঠার গল্প বন্ধুখাতায় এঁকে বা লিখে রাখতে পারি।

■ প্রতিদিনের কাজে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে আমাদের দ্বারা পরিবেশ দূষণ না হয় এবং প্রকৃতির ক্ষতি না হয়।

■ অপচয় রোধে এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য নিজ উদ্যোগে যা যা কিছু তা পূন:ব্যবহার বা recycle করা যায় তার তালিকা করব। এবং নিজ পরিবারে তা ব্যবহার করব। 

■ শিল্পী এস এম সুলতানের শিল্পজগত সম্পর্কে আমরা বিভিন্ন উৎস থেকে আরো জানার চেষ্টা করব।

 

Content added || updated By

Promotion