নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ক্যারিয়ার এডুকেশন - NCTB BOOK

আমি ও আমার ক্যারিয়ার

ক্যারিয়ার শিক্ষা একটি ব্যাপক বিষয়। এটি বোঝার জন্য পূর্বের শ্রেণিগুলোতে আমরা বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছি এবং সেই সব কাজের সাথে আমাদের জীবনযাপনের সম্পর্কের বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করেছি। এবার আমরা ক্যারিয়ার গঠনবিষয়ক কিছু সুনির্দিষ্ট ও প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে জানব। ক্যারিয়ার বিষয়ে শিক্ষা এবং এ সংক্রান্ত কাজগুলো আমাদের ক্যারিয়ারের পথ অনুসন্ধানের কৌশল নির্ধারণ ও সঠিক ক্যারিয়ার গঠনে সাহায্য করবে।ক্যারিয়ারের ধারণা

ক্যারিয়ারের ধারণাটি ভালোভাবে বোঝার জন্য এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। এসো নিচের শব্দগুলোর সাথে পরিচিত হই। এগুলো কি একই অর্থ বহন করে নাকি ভিন্ন ভিন্ন? কর্মসংস্থান বলতে আমরা কী বুঝি? চাকরি আর পেশার মধ্যে কি কোনো পার্থক্য রয়েছে? থাকলে সেগুলো কী? এগুলো নিয়ে একটু চিন্তা করা যাক।

কাজ (Work)

ক্যারিয়ার (Career)

পেশা (Profession)

বৃত্তি (Vocation/Occupation )ক্যারিয়ার সংক্রান্ত এ ধারণাগুলোর মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য নির্ণয় করা বেশ কঠিন। ধারণাগুলো একটি আরেকটির সাথে সম্পর্কিত। এ ছাড়া দৈনন্দিন জীবনে প্রায়ই আমরা এই ধারণাগুলোকে একই অর্থে ব্যবহার করি। যেমন আমরা অনেক সময় বলি আমার বাবা একজন কৃষক। কৃষিকাজ তার কর্ম আবার বলি, এটি তার পেশা। কিন্তু এই শব্দগুলোর মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। আমরা এই পার্থক্য বোঝার চেষ্টা করছি। এবার চলো নিচের ঘটনাটি পড়ি ।

পরের কাজগুলো করার পর আমাদের কাছে ধারণাগুলো আরও স্পষ্ট হবে।

কেস স্টাডি: নিরুপমা নাটোর জেলার একটি বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) নির্বাহী পরিচালক হিসেবে সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়েছেন। তাকে অভিনন্দন জানানোর জন্য তার সহকর্মীরা একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন । সকালে উঠেই নিরুপমা বাগানে কাজ করছেন আর চিন্তা করছেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় কী কী বলবেন। তিনি ভাবছেন, শিক্ষাজীবন থেকেই গ্রামের নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার প্রচণ্ড ইচ্ছা তার ছিল- একথা দিয়েই তিনি শুরু করবেন। তার বাবার ইচ্ছা ছিল নিরুপমা ডাক্তার হোক। তার ইচ্ছা ছিল এনজিওতে কাজ করার। তাই তিনি সমাজকল্যাণ বিষয়ে পড়তে চেয়েছিলেন, যা তার কাজের সাথে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু সে সুযোগ তার হয়নি। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শেষে এনজিও-তে যোগ দেবার জন্য যা যা যোগ্যতা লাগে তা পূরণে নিরুপমা বিভিন্ন কোর্স করেছেন এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এরপর তিনি একটি এনজিওতে মাঠ। কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি শিশুশিক্ষা নিয়ে কাজ করতেন। অথচ নিরুপমার ইচ্ছা ছিল। গ্রামের নারীদের কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করার। এ জন্যে তখন তিনি বেশ কটি এনজিওতে পরীক্ষা আর সাক্ষাৎকার দেন। অবশেষে তিনি ছোট্ট একটি এনজিওর প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে যোগ দেন। তিন বছর পরে তিনি আজকের এই এনজিওতে যোগ দেওয়ার সুযোগ পান। গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে এই প্রতিষ্ঠান স্বনামধন্য। ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা আর দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে তার দ্রুত পদোন্নতিহয়। আজ নিরুপমা তার স্বপ্নপূরণের পুরো পথটি মনের জানালায় দেখতে পান। অনেক পরিশ্রম আর

সাধনার পথ, তবে অবশ্যই সাফল্যমণ্ডিত। তিনি বাগান থেকে একটি গোলাপ তুলে এনে বাসায় ফুলদানিতে রাখেন। এটিও অনেক সাধনা আর যত্নের ফসল। উপরের ঘটনাটি থেকে ছোট দলে ভাগ হয়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি :

১. নিরুপমা বাগানে যে কাজ করছিলেন এটিকে আমরা কী বলব? কাজ, পেশা, বৃত্তি, চাকরি নাকি ক্যারিয়ার? তোমার উত্তরে সাথে অন্য বিষয়গুলোর পার্থক্য কী?

২. ডাক্তারি করা বা এনজিওতে কাজ করাকে পেশা, বৃত্তি, কাজ, চাকরি, ক্যারিয়ার- এগুলোর কোনটি বা

কোনগুলোর আওতায় ফেলা যায়? কেন?

৩. এনজিওতে কাজ করার সময় নিরুপমা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদে ছিলেন। যেমন- মাঠ কর্মকর্তা,

প্রোগ্রাম অফিসার, নির্বাহী পরিচালক । এগুলোকে আমরা কী বলতে পারি । কাজ, পেশা, বৃত্তি, চাকরি

নাকি ক্যারিয়ার? যুক্তি সহকারে তোমার মতামত দাও । কাজ-এর অর্থ অনেক ব্যাপক। মূলত কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যেকোনো শারীরিক বা মানসিক কর্মকাণ্ডই কাজ। এটি অর্থ উপার্জনের জন্য হতে পারে বা অর্থ উপার্জন ছাড়াও হতে পারে। পেশা মূলত এমন কাজ যার জন্য ব্যক্তির বিশেষ ধরনের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। আর বৃত্তি হলো এমন একটি কাজ যা দ্বারা কোনো ব্যক্তি বিশেষ কোনো শিক্ষা বা দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ ছাড়াই অর্থ উপার্জন করতে পারে। এটি ক্যারিয়ারের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। তবে ক্যরিয়ারের সাথে পেশা বেশি সম্পর্কযুক্ত। দুটি ধারণাই কাছাকাছি।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যারা বাড়ির নকশা প্রণয়ন করেন তারা হলেন পেশাজীবী। আর যারা নির্মাণ করেন তারা বৃত্তিধারী ।

আমাদের আলোচনা থেকে পাওয়া ধারণার সাথে নিচের বর্ণনাগুলো মিলিয়ে দেখি :

কাজ কোনো কিছু করাকে সাধারণ ভাষায় কাজ বলে। এটি একটি ব্যাপক ধারণা যার মধ্যে যেকোনো ধরনের কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত । চাকরি, পেশা বা ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে মানুষকে যা যা করতে হয়, সেগুলো কোনো না কোনো কাজ। এর বাইরেও দৈনন্দিন জীবনে মানুষ যা করে যেমন লেখাপড়া করা, খাওয়া, ব্যায়াম করা, বাজার করা এগুলোকেও সাধারণভাবে আমরা কাজ বলে থাকি।

ব্যক্তির কর্মক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদে অবস্থান করাকে চাকরি বলে। যেমন- সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, জেলা

প্রশাসন অফিসের বাগান পরিচর্যাকারী, বিদ্যালয়ের দারোয়ান, গার্মেন্টস কর্মী ইত্যাদি।

বৃত্তি ও পেশা ঃ বৃত্তি ও পেশা শব্দ দুটিকে কখনো কখনো একই অর্থে ব্যবহার করা হয় । যদিও বৃত্তি ও পেশা শব্দ দুটির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। পেশার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের দরকার হয়, যা সাধারণত বৃত্তির জন্য দরকার হয় না। যেমন- একটি ভবনের নকশা যে স্থপতি করেন তাকে স্থাপত্যবিদ্যায় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিতে হয়। তাই এটি তার পেশা। অন্যদিকে যারা নির্মাণ শ্রমিক তাদের কাজকে বৃত্তি বলা যায়।

ক্যারিয়ার ঃ ক্যারিয়ার হলো সব ধরনের কাজ, পেশা, চাকরি বা জীবন অভিজ্ঞতার সমন্বিত রূপ, যা একজন

ব্যক্তি তার সারা জীবনে অর্জন করে ।প্রজেক্ট : আমাদের আশপাশে বিভিন্ন ধরনের পেশা ও বৃত্তির মানুষ রয়েছে। তাদের কাছ থেকে আমরা তাদের পেশা ও বৃত্তি সম্পর্কে জানতে পারি। এ প্রজেক্টের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন বৃত্তি ও পেশার মানুষ খুঁজে নিয়ে তাদের কাছ থেকে সে পেশা সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেষ্টা করব । এটি আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের পেশা সম্পর্কে জানতে ও ভবিষ্যতে নিজের পেশা বেছে নিতে সাহায্য করবে।

এসো করি

১. ক্লাসের সবাই মিলে বোর্ডে বিভিন্ন পেশার নাম লিখি। একই পেশার পুনরাবৃত্তি হলে তা মুছে যত বেশি সম্ভব নতুন পেশার নাম লেখার চেষ্টা করি।

2. এবার ক্লাসের সবাই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যাই। প্রজেক্টের জন্য প্রত্যেক দল একটি নির্দিষ্ট পেশা

বেছে নিই।৩. এবার চলো বিভিন্ন পত্রিকা, সংবাদপত্র, ওয়েবসাইট থেকে নিচের তথ্যগুলো সংগ্রহ করি :

এই পেশার জন্য

> কী কী ধরনের চাকরির/পদের বিজ্ঞাপন রয়েছে?

> মূলত কী কী দায়িত্ব ও কাজ পালন করতে হয়?

> সাধারণত সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা কী চাওয়া হয়? > কী কী ধরনের বা কত দিনের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়?

> বেতন কাঠামো কেমন?

> নির্দিষ্ট কী কী দক্ষতার প্রয়োজন হয়? > অন্য বিষয়াদি (যদি তোমরা প্রয়োজনীয় মনে কর

৪. প্রতিটি দল একটি নির্দিষ্ট দিনে প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন চার্ট, ছবি, গ্রাফ, কার্টুন, পোস্টার ইত্যাদি নিয়ে আসবে। তারা নিজের কাজ শ্রেণিকক্ষের নির্দিষ্ট স্থানে প্রদর্শন করবে। সাথে সংগ্রহ করা পত্রিকা, সংবাদপত্র, বিজ্ঞপ্তি, ছবি ইত্যাদি থাকতে পারে।

৫. বিভিন্ন দল ঘুরে ঘুরে অন্যদের উপস্থাপনা দেখবে। সম্ভব হলে বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সপ্তম অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানাতে পারো।

[ প্রজেক্টের জন্য যদি এমন কোনো পেশা বা বৃত্তি পছন্দ কর, যার কোনো বিজ্ঞাপন খুঁজে পাওয়া যায়নি, তবে সেই পেশার মানুষদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করতে পারো।

তোমরা দেখে থাকবে বিভিন্ন পেশা ও চাকরিজীবীর দায়-দায়িত্ব ভিন্ন। তাই তাদের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ইত্যাদিও ভিন্ন। প্রত্যেক পেশাই সমাজের জন্য উপকারী। আমাদের তাই সকল পেশার মানুষের প্রতিই শ্রদ্ধা রাখা উচিত। তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা ও তাদের কাজে সহায়তা করা আমাদের সকলের কর্তব্য ।

ক্যারিয়ারের বিকাশ

নিচে ক্যারিয়ারের কয়েকটি সংজ্ঞা দেওয়া হলো-

• জীবনব্যাপী একজন ব্যক্তি মূলত তার পেশা সংক্রান্ত যে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন তাই তার ক্যারিয়ার। এটি বিভিন্ন চাকরি, পদ, কাজ, সম্মান ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়।

• ক্যারিয়ার হলো এক বা একাধিক ধরনের চাকরি যা পেশাগত কারণে একজন ব্যক্তির জীবনের অনেকটুকু সময় জুড়ে করে থাকে।

জীবনের সুনির্দিষ্ট কর্মময় অংশই হলো ক্যারিয়ার।ক্যারিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা বুঝতে পারি যে, ব্যাপারটি স্থির কিছু নয়, বরং পরিবর্তনশীল ও বিকাশমান। কারণ ক্যারিয়ারের পরিবর্তন সুশৃঙ্খলভাবে, লক্ষ্য অনুযায়ী ধাপে ধাপে হওয়াই কাম্য। এজন্য আমাদের বিভিন্ন ধাপে ক্যারিয়ারের বিকাশকে এগিয়ে নিতে হবে। নিচে ক্যারিয়ার বিকাশেরবিভিন্ন ধাপ বা পরিকল্পনার পর্যায়গুলো দেওয়া হলো :

নিজেকে জানা ক্যারিয়ারের পথে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের আগ্রহ, ভালো লাগা, মন্দ লাগা, দক্ষতা বা যোগ্যতা, মূল্যবোধ ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে ও বুঝে প্রতিটি ধাপে অগ্রসর হতে হবে । যে কাজ আমরা করতে ভালোবাসি তেমন কাজ যদি জীবনের অধিকাংশ সময়ই করা যায় তাহলে ক্যারিয়ার আনন্দময় হয়ে ওঠে। আবার যে কাজে আমাদের আগ্রহ নেই সে কাজ করলে ভালো করার সম্ভাবনা কম থাকে ।

বিভিন্ন ধরনের পেশা, বৃত্তি ও চাকরি সম্পর্কে জানা শুধু নিজের সম্পর্কে ভালোভাবে জানলেই চলবে না । নিজের পছন্দ ও দক্ষতার সাথে মানানসই পেশা বা বৃত্তি খুঁজে বের করা ও এর জন্য নিজেকে যোগ্য করে তোলা ক্যারিয়ার গঠনের পূর্বশর্ত। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা, যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি বিষয় জানাও জরুরি। জানতে হবে নির্দিষ্ট পেশা বা বৃত্তিতে কী ধরনের চাকরি রয়েছে, সেগুলোতে কী কী দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয় ইত্যাদি। সঠিক তথ্য আমাদের সঠিক পেশা বা চাকরি বাছাইয়ে সাহায্য করবে।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করা : ক্যারিয়ার বিকাশে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ অপরিহার্য। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকলে বৃত্তি বা পেশা নির্বাচনে এবং এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে সঠিক পরিকল্পনা করা যায়। ফলে ক্যারিয়ার গঠনে সফলতার সাথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। অনেক সময় যথেষ্ট যোগ্যতা ও আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও সুস্পষ্ট লক্ষ্য ও পরিকল্পনার অভাবে ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মনে কর তুমি তোমার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করেছ। এরপর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তোমাকে কী করতে হবে? অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট পেশা বা বৃত্তির জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও দক্ষতার দরকার। তোমাকে সেগুলো অর্জন করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এগুলো অর্জন করা যায়। এটি যে কোনো নির্দিষ্ট বৃত্তি বা পেশায় প্রবেশের জন্যই শুধু প্রয়োজন তা নয়। কোনো বৃত্তি বা পেশায় থাকাকালে সেই পেশা বা বৃত্তিতে সাফল্যের জন্য নতুন নতুন যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন।

চাকরি খোঁজা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি কোনো ব্যক্তি চাকরি খুঁজছেন। আবার পত্রপত্রিকায় ও ইন্টারনেটেও বিভিন্ন চাকরির বিজ্ঞাপন দেখতে পাই। ব্যক্তি যখন চাকরি করতে চান তখন বিজ্ঞাপন দেখে যাচাই-বাছাই করে আবেদনপত্র জমা দেন। এজন্য যথেষ্ট মনোযোগ ও ধৈর্যের প্রয়োজন। নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা, আগ্রহ, মূল্যবোধ ইত্যাদি বিষয় লক্ষ রেখে সংশ্লিষ্ট চাকরির জন্য আবেদন করতে হয়। নিজের শিক্ষাগত ও পেশাগত অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে একজন ব্যক্তি তার জীবন বৃত্তান্ত (Curriculum Vitae বা CV) তৈরি করেন। এক্ষেত্রে সুন্দরভাবে গুছিয়ে নিজের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতাকে তুলে ধরা আবশ্যক। সংশ্লিষ্ট চাকরিদাতা সংস্থা কখনো কখনো লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকে। সেক্ষেত্রেও যথেষ্ট প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়।

চাকরি পরিবর্তন : বিভিন্ন কারণে মানুষ চাকরি পরিবর্তন করে থাকে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান কারণ হলো আরও ভালো কোনো চাকরির সুযোগ পাওয়া। আমরা জানি ক্যারিয়ার বলতে কোনো একটি নির্দিষ্ট চাকরি বা পেশা বোঝায় না বরং জীবনের পথে বিভিন্ন চাকরি ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়কে বোঝায়। তাই নিজের আগ্রহ, পছন্দ, দক্ষতা ইত্যাদি পরিবর্তনের পটভূমিতে নতুন চাকরির জন্য চেষ্টা করা ক্যারিয়ারেরই অংশ।ক্যারিয়ারের বিকাশকে বিভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়। যেমন-

রৈখিক বিকাশ : ক্যারিয়ারের রৈখিক বিকাশ বলতে নিম্ন পদ থেকে ধীরে ধীরে উপরের পদে উন্নীত হওয়াকে

বোঝায়। যেমন সহকারী কমিশনার পদে যোগ দেওয়ার পর ধীরে ধীরে সচিব পদে উন্নীত হওয়া । দক্ষতাভিত্তিক বিকাশ। এক্ষেত্রে ব্যক্তির একটি নির্দিষ্ট কাজ বা বিষয়ে ক্রমাগত দক্ষ হওয়াকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। যেমন একজন শিক্ষকের বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ানোর ক্রমাগত চর্চার ফলে দক্ষতা বৃদ্ধি এক ধরনের দক্ষতাভিত্তিক বিকাশ।

শচ্ছিল বিকাশ : ক্যারিয়ারের শঙ্খিল বিকাশ বলতে সময়ের সাথে সাথে ব্যক্তির জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার

ক্রমবিকাশকে বোঝায় । এক্ষেত্রে ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন।

এর বাইরেও তার নানা রকম কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে। ধরা যাক, একজন বিজ্ঞান শিক্ষক

বিজ্ঞান ছাড়াও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিলেন। এরপর তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি

বিষয়ে অন্য একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণকে প্রশিক্ষণ দেন। এভাবে তার ক্যারিয়ারের শঙ্খিল বিকাশ শুরু হয়।

গতিময় বা চলমান বিকাশ : এক্ষেত্রে ব্যক্তির ক্যারিয়ারে ক্রমাগত পরিবর্তন দেখা যায়। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মক্ষেত্রে কাজ করে থাকেন। এ পরিবর্তন চলমান। ধরা যাক, সেই বিজ্ঞান শিক্ষক এবার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে আরেকটি চাকরি নিলেন। সেটি পরিবর্তন করে কয়েক বছর পর গ্রন্থাগার বিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করে একটি গ্রন্থাগারের প্রধান গ্রন্থাগারিক হিসেবে নিযুক্ত হলেন। এই যে তার ক্যারিয়ারের বিভিন্নমুখী পরিবর্তন, একেই বলে ক্যারিয়ারের গতিময় বা চলমান বিকাশ ।

মনে রাখা প্রয়োজন, একজন ব্যক্তির জীবনে ক্যারিয়ারের সব ধরনের বিকাশই সম্ভব। তবে কখনো কখনো

একটি নির্দিষ্ট ধারা লক্ষ করা যায়।

ক্যারিয়ারের রূপরেখা বা মডেল

মনোবিজ্ঞানী ডোনাল্ড সুপার সময়ের সাথে সাথে এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের নিজের সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তনের ভিত্তিতে একটি মডেল তৈরি করেছেন। এটিকে Life Rainbow বলা হয়েছে কারণ এর ধাপগুলোকে রঙধনুর মতো ধাপে ধাপে সাজানো যায়।যদিও ডোনাল্ড সুপার তার পর্যায় বা ধাপগুলোকে বয়স অনুযায়ী ভাগ করেছেন, তবে এই ধাপ বিভাজন ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে ।

১. প্রত্যেকে এমন একজন ব্যক্তিকে প্রজেক্টের জন্য বেছে নেব যিনি কর্মক্ষেত্র থেকে অবসরে গেছেন বা খুব শীঘ্রই যাবেন। এবার তার জন্মকাল থেকে এ পর্যন্ত জীবন ইতিহাস জানতে সাক্ষাৎকার নেব। প্রয়োজনে একাধিকবার সাক্ষাৎকার নিতে হবে।

২. এবার তার একটি প্রোফাইল তৈরি করি। অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত তথ্য বৃহত্তর পরিসরে দিতে নাও পারেন। তাই আমরা ছদ্মনাম ব্যবহার করব। প্রোফাইলটিতে আমরা ব্যক্তির জীবনী বছর অনুযায়ী অথবা বিশেষ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সাজাতে পারি। এতে নিচের তথ্যগুলো যেন থাকে তা লক্ষ রাখতে হবে :

ব্যক্তির নাম (ছদ্মনাম)

• জন্মকাল ও জন্মস্থান

• শিক্ষাজীবন

• কর্মজীবন

• ব্যক্তিগত জীবন

• অবসরজীবন (যদি থাকে)

• ক্যারিয়ারে কী কী ধাপ সফলভাবে পার করেছেন?  কী কী বিষয়ে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন? তা থেকে কীভাবে বেরিয়ে এসেছেন?

এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা অন্যরকম হলে ভালো হতো মনে করেন? অন্য কোন কোন বিষয় ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে?

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

এবার ব্যক্তির জীবনটিকে মডেলের সাথে তুলনা করে দেখ। প্রয়োজন হলে তুমি তোমার মতো করে নতুনভাবে ধাপ নির্ধারণ করে তার জীবনধারা বর্ণনা করো ।

প্রত্যেকে তাদের প্রজেক্টটি শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে ।

ক্যারিয়ার শিক্ষার গুরুত্ব

আমরা ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ে একটু একটু করে জানছি। কখনো চিন্তা করেছ কেন আমরা এই বিষয়টি

পড়ছি? এটি পড়ার কারণে আমাদের জীবনে কি কোনো পরিবর্তন হচ্ছে বা হতে পারে? চলো, একটু

ভেবে দেখি ।দেখলে তো ক্যারিয়ার শিক্ষা আমাদের জীবনে কী কী কাজে লাগে। তাই আজকাল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আলাদা বিষয় হিসেবে ক্যারিয়ার সম্পর্কে জ্ঞান, দক্ষতা আর দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক মানুষই চায় একটি সুন্দর ও সফল ক্যারিয়ার। তাই এটি সম্পর্কে জানা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়টি পাঠের মাধ্যমে আমরা নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে পারি।

সিদ্ধান্ত গ্রহণ

ক্যারিয়ার গঠনে আমাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন হয় । যেমন আমি কোন বিভাগে পড়ব অথবা ভবিষ্যতে কোন পেশা বা বৃত্তি বেছে নেব ইত্যাদি । প্রতিটি সিদ্ধান্তই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জীবনযাপন শৈলী, মান, উপার্জন, জীবনের গতিময়তা ইত্যাদি এর মাধ্যমে নির্ধারিত হতে পারে। আমাদের এই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত শুধু নিজের জীবন নয় পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় এবং বৈশ্বিক পর্যায়কেও প্রভাবিত করতে পারে। যেমন আমরা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই যদি বিজ্ঞান শাখায় পড়ি এবং এই সংক্রান্ত পেশায় নিযুক্ত হই তবে সমাজ এক রকম হবে, আর বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই যদি মানবিক শাখায় পড়ি ও এই সংক্রান্ত চাকরি করি তাহলে সমাজ হবে আরেক রকম। আবার যদি বিশ্ববাজারে বিজ্ঞান শাখা থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচুর চাকরি থাকে, যা দেশে নেই তখন অনেকে হয়তো ভালো চাকরির সন্ধানে অন্যান্য দেশে চলে যেতে পারে। আবার পুরো ব্যাপারটাকে উল্টোভাবেও দেখা যায়। যেমন বহির্বিশ্বে চাকরির বাজার, দেশে চাকরির পরিস্থিতি, সমাজের চাহিদা ইত্যাদি লক্ষ করেও অনেক সময় মানুষ শিক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো ধারা বা শাখা বেছে নেয়। কাজেই আমরা বিশ্ব, সমাজ, পরিস্থিতি ইত্যাদির উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি । আবার আমাদের সিদ্ধান্তের ওপর বিশ্ব, সমাজ, পরিস্থিতি ইত্যাদিও নির্ভরশীল। যেহেতু ক্যারিয়ার- সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই চিন্তা-ভাবনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ।

এখানে আরেকটি বিষয়ও বিবেচনা করতে হবে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে আমাদের নিজের হাতে নাও থাকতে পারে। যেমন, অনেক সময় নির্ধারিত শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট শাখা বা বিভাগ বরাদ্দ হতে পারে। তাই এ সমস্ত বিষয় চিন্তা করে আগে থেকেই সতর্ক থেকে কর্মপন্থা নির্ধারণ করাও এক ধরনের সিদ্ধান্ত। আমি যদি জানি বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির জন্য আমাকে বিজ্ঞান বিষয়ে কমপক্ষে ৭০% নম্বর পেতে হবে এবং আমার লক্ষ্য যদি হয় বিজ্ঞান বিভাগে পড়া তবে এ বিষয়টি ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। মনে রাখা দরকার, লক্ষ্য পূরণ নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে বাস্তবতার নিরিখে লক্ষ্য পরিবর্তন করা যেতে পারে।

শেখার জন্য অনুপ্রেরণা

ক্যারিয়ার শিক্ষা অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যখন বিভিন্ন বিষয় থেকে কোনো একটি নির্বাচন করে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো শেখার প্রতি আগ্রহ জন্মায়। ক্যারিয়ার শিক্ষার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যা শিখছি তা কীভাবে আমাদের কাজে লাগছে এবং ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। এই অনুধাবন শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ায় এবং অনুপ্রেরণা তৈরি করে ।

সমাজজীবনে কর্ম ও পেশার চাহিদা

সমাজের জন্য সকলের কাজ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন বৃত্তি, চাকরি ও পেশার মধ্য দিয়ে সমাজে মানুষ উপার্জনকরে জীবনধারণ করে। সমাজের বিভিন্ন চাহিদা যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, নিরাপত্তা ইত্যাদির জন্য মানুষ সমাজে নানা ধরনের কাজ করে। কেউ নিজের বা পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য, কেউ আত্মতৃপ্তির জন্য কাজ করে। কাজ মানুষের জীবনে প্রয়োজন মেটায়, তৃপ্তি আনে। এতে সমাজও লাভবান হয়। ক্যারিয়ার শিক্ষা আমাদের তুলনামূলকভাবে পছন্দের কাজ বেছে নিতে ও সফল হতে সাহায্য করে । কাজের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনেও এটি সাহায্য করে ।

পরিবর্তনশীল কাজের ধরন সম্পর্কে ধারণা

দেশে-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় কাজের চাহিদা ও সুযোগের পার্থক্য রয়েছে। আবার কাজের এই চাহিদা সময়ের প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনশীল চাহিদা সম্পর্কে জানতে এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে বিভিন্ন জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ করতে ক্যারিয়ার শিক্ষা আমাদের সহায়তা করে।

উচ্চতর জ্ঞান ও দক্ষতার বিকাশ

যতই দিন যাচ্ছে ততই বিভিন্ন কাজে আগের চেয়ে বেশি জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োজন হচ্ছে। যে কোনো ধরনের কাজের জন্যই ন্যূনতম পর্যায়ের ভাষা দক্ষতা, বিশেষ করে মৌখিক যোগাযোগ দক্ষতা, গাণিতিক দক্ষতা, উপার্জনের জন্য অনুপ্রেরণা, সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপনের দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । বিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয় এবং ক্যারিয়ার শিক্ষার ধারণা শিক্ষার্থীকে এই যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের প্রস্তুতি

প্রতিটি চাকরি বা পেশার জন্য নির্দিষ্ট কিছু দক্ষতার প্রয়োজন হয়। নির্দিষ্ট বিষয়ে লেখাপড়া, প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা এই দক্ষতাগুলো অর্জন করি। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে কিছু সাধারণ দক্ষতা যেমন- বিভিন্ন মানুষের সাথে একত্রে কাজ করা, অন্যকে সাহায্য করা, ইত্যাদি দক্ষতার পাশাপাশি মনোযোগ, ধৈর্য, কাজের প্রতি নিষ্ঠা প্রভৃতি গুণও থাকা দরকার হয়। ক্যারিয়ার শিক্ষা আমাদের যে সকল গুণ, বৈশিষ্ট্য, দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন সে সম্পর্কে ধারণা দেয়।

পরিকল্পনা করতে উদ্বুদ্ধকরণ

ক্যারিয়ার শিক্ষা আমাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করতে শেখায়। এটি পাঠ করার মধ্য দিয়ে আমরা শুধু শিক্ষা, বৃত্তি বা কর্মক্ষেত্রের পরিকল্পনাই করি না, বরং বৃহৎ অর্থে জীবনেরই পরিকল্পনা করি। এটি কখনোই স্থির বা নিশ্চিত নয় বরং পরিবর্তনশীল। তবে পরিকল্পনা মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে, কোন পথে কীভাবে লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে তা নির্ধারণ করে। সঠিক পরিকল্পনা অনেক সমস্যার সমাধান দেয়।

সংবেদনশীলতা তৈরি

ক্যারিয়ার শিক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা বৈচিত্র্যপূর্ণ কর্ম, পেশা ও পেশাজীবী মানুষ সম্পর্কে জানতে পারি। তাদের শ্রদ্ধা করতে শিখি। এটি আমাদের বিভিন্ন পেশা ও কর্মে নিযুক্ত মানুষের প্রতি সহনশীল, সহমর্মী ও সংবেদনশীল হতে শেখায় ।আমি, আমার শিক্ষা ও ক্যারিয়ার

আমরা যে নির্দিষ্ট ক্যারিয়ার বেছে নিতে চাই, তার জন্য নির্দিষ্ট ধরনের শিক্ষার প্রয়োজন। আবার যে বিষয়গুলো শিখতে ভালো লাগে বা আমি যেটিতে বেশি পারদর্শী, তার ভিত্তিতে আমার ক্যারিয়ার নির্ধারণ হয়। নিজের পছন্দ, আগ্রহ, চাহিদা, ক্ষমতা, সীমাবদ্ধতা, মূল্যবোধ ইত্যাদি বিবেচনা সাপেক্ষে আমরা তুলনামূলকভাবে একটি উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র খুঁজে বের করতে পারি। এজন্য আমাদের নির্দিষ্ট শিক্ষা এবং কখনো কখনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

এক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেককে ধাপে ধাপে-

* নিজেকে জানতে হবে (নিজের সবলতা ও দুর্বলতা সম্পর্কে)

* বিভিন্ন ধরনের কর্ম, পেশা বা চাকরি সম্পর্কে জানতে হবে

* পরবর্তী পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হবে

* করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।

এসো নিচের কাজগুলোর মধ্য দিয়ে ধাপগুলো পার হই।

কর্মজগৎ ও আমি

আমরা প্রায়ই বিভিন্ন পেশা, বৃত্তি বা নির্দিষ্ট চাকরিতে প্রবেশের স্বপ্ন দেখি। কখনো হয়তো সেটি পূরণ হবে । তবে কর্মে প্রবেশ করলেই শুধু হয় না। কীভাবে সাফল্যের সাথে কর্মজগতে বিচরণ করা যায় তাও কিন্তু চিন্তা করা প্রয়োজন । আমরা আগেই জেনেছি বিভিন্ন ধরনের পেশা বা কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রয়োজন হয়।আমার পছন্দের পরিবর্তন

আমরা যা যা পরিকল্পনা করছি তা যথেষ্ট নমনীয় হওয়া দরকার। আমাদের ইচ্ছা, আগ্রহ ইত্যাদির পরিবর্তন খুবই স্বাভাবিক । যদি ইচ্ছা, আগ্রহের পরিবর্তন হয় তবে সে অনুযায়ী ক্যারিয়ারের পরিকল্পনাও পরিবর্তিত হতে পারে । এর মধ্যে তোমার কী ধরনের পছন্দ, অপছন্দ, চাহিদা, আগ্রহ, মূল্যবোধের পরিবর্তন হয়েছে চিন্তা করে লিখে রাখো-দেখলে তো মানুষের চিন্তার পরিবর্তনের সাথে সাথে আগ্রহ, পছন্দ, চাহিদা ইত্যাদিরও পরিবর্তন হয় । তুমি কি এমন কাউকে চেনো যার পছন্দের শিক্ষা, চাকরি ইত্যাদি পরিবর্তন হয়ে অন্য রকম হয়েছে? থাকলে দলগত আলোচনায় সবাইকে জানাও। ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে পরিবর্তন স্বাভাবিক ব্যাপার। পরিবর্তনকে মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে। এ জন্য পরিকল্পনায় নমনীয়তা থাকলে তা পরিবর্তন করা সহজ হয় ।

আমার আগ্রহ, যোগ্যতা ও মূল্যবোধ

আমি ভবিষ্যতে কোন ধরনের কাজ করব বা করতে চাই তা বোঝার জন্য নিজের আগ্রহ, যোগ্যতা, মূল্যবোধ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। ক্যারিয়ার নির্ধারণে 'আগ্রহ' অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে সে বিষয় পড়তে এবং সে সংক্রান্ত কাজ করতে আমরা অনুপ্রাণিত হই। আগ্রহ না থাকলে অনেক বিষয়ই একঘেয়ে মনে হয়। যথেষ্ট আগ্রহ না থাকার কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেক কাজে মানুষের সাফল্য নাও আসতে পারে।

এসো একটি পরীক্ষা করে দেখি। এটি শুধু আনন্দের জন্য। এটি আমাদের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সামান্য ধারণা দেবে । প্রথমে নিচের ছকে দেওয়া মন্তব্যগুলো পড়। প্রতিটি মন্তব্য তোমার ক্ষেত্রে কতটুকু সত্য তার ভিত্তিতে মন্তব্যের পাশে যেকোনো একটি ঘরে টিক চিহ্ন দাও মনে রাখবে এখানে ভুল বা সঠিক বলে কিছু নেই ।

এবার নম্বর দেওয়ার পালা। নিচের ছকে আট ধরনের ব্যক্তিত্বকে আলাদা করে দেখানো হয়েছে । প্রতিটি ঘরের উপরের সারিতে যে নম্বরগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো মন্তব্যের নম্বর যেমন, সম্পূর্ণ ভিন্নমত-০, ভিন্নমত-১, নিরপেক্ষ-২, একমত-৩, সম্পূর্ণ একমত-৪। মন্তব্যগুলোতে তোমার পাওয়া নম্বর ছকে বসিয়ে যোগ করো।কর্মক্ষেত্রে মূল্যবোধ

সাবিহা একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। একটি নতুন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও অন্য ফলাফলসহ একটি রিপোর্ট এসেছে। এ বিষয়ে সকল তথ্য-উপাত্ত একটি সেমিনারে উপস্থাপন করা তার দায়িত্ব। হঠাৎ তার তত্ত্বাবধায়ক তাকে একটি নোট পাঠালেন। তাতে লেখা সে যেন একটি নির্দিষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উল্লেখ না করে তা উপস্থাপন করেন। সাবিহা চিন্তায় পড়ে গেলেন। এটা কি তার করা উচিত ?

তোমরা দলে বসে চিন্তা কর-

১. সাবিহার সামনে কী কী পথ রয়েছে?

২. প্রতিটি সিদ্ধান্তের সুবিধা ও অসুবিধা অর্থাৎ ফলাফল আলোচনা করো।

উপরের ঘটনাটির মতো কর্মক্ষেত্রে অনেক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। যখন আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন হয়, কী করা উচিত কী করা উচিত নয় তা আমরা ভাবি। এই উচিত বিষয়টিই মূল্যবোধ। তোমরা যখন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বলেছ তখনো নিশ্চয়ই খেয়াল করেছ যে এই মূল্যবোধ ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ভিন্ন হতে পারে। আবার কিছু কিছু কর্মক্ষেত্রে মূল্যবোধ সংক্রান্ত শর্ত দেওয়া থাকে যা সবাই মেনেচলবে বলে আশা করা হয়। কাঙ্ক্ষিত মূল্যবোধের সাথে আত্মনিয়ন্ত্রণ অর্জিত হয়। যেমন-

১. এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকা যেটি আমি করতে চাই ।

২. এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকা যেটি করার অধিকার আমার রয়েছে।

[যেমন আমি বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চাই কিন্তু এজন্য অনৈতিক কিছু করতে হলে আমি ঐ প্রতিষ্ঠানে কাজ করব না।

এমন আরও কয়েকটি উদাহরণ খুঁজে বের করো।

মূল্যবোধের সাথে আরও কিছু বিষয় জড়িত। যেমন- বিশ্বাস, সততা, নিষ্ঠা, আনুগত্য ইত্যাদি ।

দলগত কাজ

চারটি দলে ভাগ হয়ে এই বিষয়ে আলোচনা করো। সাবিহার মতো নির্দিষ্ট একটি ঘটনা বা গল্প

তৈরি কর যাতে একটি নির্দিষ্ট মূল্যবোধের উভয় সংকট প্রকাশ পায় ।

আমার স্বপ্নের ক্যারিয়ার

ছোট দলে ভাগ হয়ে প্রতিটি দল একজন করে ব্যক্তি চিহ্নিত করো (পরিচিত, আত্মীয়) যারা তাদের স্বপ্নের ক্যারিয়ার গঠন করতে পেরেছে বলে মনে করো। তাদের সাক্ষাৎকার নাও এবং একটি ছোট ম্যাগাজিন

তৈরি করো (হাতে তৈরি)।

মলাটে তার ছবি ও একটি চমৎকার শিরোনাম দাও। ভিতরে তার ছবিসহ বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করো। তার

স্বপ্ন, শিক্ষাজীবন, আগ্রহ, মূল্যবোধ, বিশেষ যোগ্যতা, চাকরিজীবন, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য দিয়ে

ম্যাগাজিনটি সাজাও।

এক্ষেত্রে সৃজনশীলতা ও শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবহারের চেষ্টা করো। পৃষ্ঠাগুলো স্টেপলার, স্কচটেপ বা আঠা দিয়ে এক সঙ্গে জুড়ে দাও। প্রয়োজন মতো রঙ করো।ক্যরিয়ারের সাথে আগ্রহ, যোগ্যতা ও মূল্যবোধের সম্পর্ক

> আমি কী করতে পছন্দ করি?

> আমি কী করতে পারি?

> আমার কী করা উচিত বলে আমি মনে করি?

এগুলো যথাক্রমে আগ্রহ, যোগ্যতা ও দক্ষতা এবং মূল্যবোধ নির্দেশ করে। আমি যা করতে পছন্দ করি তা করার দক্ষতা আমার নাও থাকতে পারে। তবে সচরাচর যা আমরা পছন্দ করি তা বেশি করে চর্চার কারণে দক্ষতা গড়ে উঠে । পছন্দ-অপছন্দ ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ক্যারিয়ার হলো জীবনব্যাপী। আগ্রহ না থাকলে কোনো বিষয় নিয়েই বেশিদূর অগ্রসর হওয়া যায় না, সফলতাও আসে না।

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি :

আগ্রহ-মূল্যবোধ যা আমার করতে ভালো লাগে, তা কি সব সময়ই করা উচিত বা নৈতিক? দক্ষতা-আগ্রহ কোনো বিষয়ে আমার দক্ষতা থাকলেই কি আমার আগ্রহও থাকবে?

দক্ষতা-মূল্যবোধ : যে কাজে দক্ষতা রয়েছে সেটি কি সবসময়ই নৈতিক?

মূল্যবোধ-আগ্রহ যা করা উচিত তাতে কি সবসময়ই আগ্রহ থাকে? মূল্যবোধ-দক্ষতা যা করা উচিত সে বিষয়ে কি সবসময় দক্ষতা থাকে?

Content added || updated By