নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

অষ্টম অধ্যায়

স্বাধীনতা ও জীবনাহহ্বান

 

ঈশ্বর আমাদেরকে একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন । সারা বিশ্বের জন্য তাঁর একটা পরিকল্পনা আছে । আমরা ক্ষুদ্রতম হলেও বিশ্বেরই একেকটি অংশ । আমাদেরও কোন না কোন ভূমিকা আছে এই পৃথিবীতে । কী সেই ভূমিকা? তা আবিষ্কার করার এখনই আমাদের সময় । বিভিন্ন ব্যক্তির জীবনাহ্বান সম্পর্কে জানা, বিভিন্ন গুরু ব্যক্তির সাথে আলাপ-আলোচনা করা এবং নিজে ব্যক্তিগতভাবে ধ্যান-প্রার্থনা করার মাধ্যমে আমরা নিজ নিজ জীবনাহ্বান আবিষ্কার করব এবং সেই আহ্বানে সাড়া দেব । এভাবেই আমাদের জীবনে প্রকৃত সুখ খুঁজে পাব ।

এই অধ্যায় শেষে আমরা-

  • জীবনাহ্বানের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব;
  • আমাদের স্বাধীন হওয়ার জন্য ঈশ্বরের আহ্বানের অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারব; 
  • আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে পারব;
  • আহ্বান ও জীবনের পারস্পরিক সম্পৃক্ততা বিশ্লেষণ করতে পারব;
  • নিজ আহ্বানের প্রতি দায়বদ্ধতা ব্যাখ্যা করতে পারব এবং
  • ঈশ্বরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্ত-স্বাধীন মানুষ হবো ।

জীবনাহ্বানের গুরুত্ব

একবার একটি ছোট্ট মেয়ে তার মাকে জিজ্ঞেস করেছিল, সে জীবনে সুখী হতে পারবে কি না এবং স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করতে পারবে কি না । তার মা তাকে উত্তর দিয়েছিলেন, ভবিষ্যতকে দেখা যায় না । ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চয়তা দিয়ে কিছু বলা বা করা যায় না । আসলে যে ব্যক্তি যত বেশি নিজের জীবন আহ্বান সম্বন্ধে সচেতন, সে ব্যক্তি তত বেশি স্বাধীন । জীবনাহ্বান আমাদের প্রত্যেকের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । আমরা বিভিন্নজন বিভিন্ন আহ্বান পেয়েছি । আমাদের সেই আহ্বান আবিষ্কার করতে হয় এবং সেভাবে সাড়া দিতে হয় । খ্রিষ্টান হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের আহ্বান হলো স্বাধীনতার আহ্বান ।

সুখী জীবন লাভের জন্য ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা প্রয়োজন । ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সুন্দর আশা ও স্বপ্ন থাকলে, সে অনুসারে চলতে বা সে লক্ষ্যে পৌঁছতে সবাই দায়িত্বশীল হবে । নিজের ভবিষ্যতকে গড়ার জন্য প্রত্যেকের দায়িত্ব আছে । সে দায়িত্ব অনুসারে জীবন যাপন করতে হয় । তবেই প্রত্যেকের জীবন সুখের ও সুন্দর হতে পারে ।

ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে দুই ধরনের ধারণা আছে । কেউ কেউ বলে থাকে, ভবিষ্যৎ বলতে কিছু নেই । তারা বর্তমানকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে এবং বর্তমানকে সর্বশক্তি দিয়ে উপলব্ধি ও উপভোগ করে । অনাগত ভবিষ্যতকে নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে বর্তমানে সুখী হওয়াটাই তারা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে । অনেক সময় বাস্তবতার কারণে ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণ হয় না, যেমন একজন মেধাবী ছাত্র ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে স্কুল ছেড়ে কাজ করতে হয়েছে । সে এখন গাড়ির গ্যারেজে কাজ করছে ।

 

 

 

আবার কেউ কেউ মনে করে, ঈশ্বর যদি আমাদের ভবিষ্যৎ রচনা করে থাকেন তবে আমাদের কোন স্বাধীনতা নেই ভবিষ্যতকে বেছে নেওয়ার। ঈশ্বরের পরিকল্পনা অনুসারেই আমাদের জীবনে সব কিছু ঘটবে। উল্লিখিত এসব ধারণা আমাদের কাছে কী বলে? আমাদের কি জীবন আহ্বান আবিষ্কার করার স্বাধীনতা আছে?

কাজ: ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে তোমার ধারণা কী? তোমার কি ভবিষ্যৎ স্বপ্ন আছে? খাতায় তা লেখ ও পরস্পরের সাথে সহভাগিতা কর ৷

স্বাধীন হওয়ার আহ্বান

আহ্বান আবিষ্কার করা ও বেছে নেওয়াই জীবনের চূড়ান্ত বিষয় নয়। আমাদের পারিপার্শ্বিকতা ও জীবন অবস্থার সাথে আহ্বান ওতপ্রোতভাবে জড়িত--তা দ্বারা আমরা প্রভাবিত হই । আমরা আহ্বানকে জীবন থেকে আলাদা করে দেখতে পারি না ।

একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, অনিলের স্বল্প আয়ের বাবা একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি । সে তার মাসিক আয়ের একটি বড় অংশ মদ্য পান করে শেষ করে, যার ফলে সে তার পরিবারের ভরণপোষণ ও অনিলের পড়ালেখার খরচ জোগাতে পারে না । অনিল খুবই মেধাবী ছাত্র । তার খুব ইচ্ছা সে ডাক্তার হবে। পারিবারিক বাস্তবতার করণে স্কুল জীবন পার হতে না হতেই অনিলকে একটা কাজ নিতে হয়েছে। কয়েক বছর কাজ করার পর সে কাজ আর পড়াশুনা একসাথে চালাতে লাগল । এভাবে মাস্টার্স শেষ করার মাধ্যমে সে তার কর্মস্থলে ম্যানেজার পদ লাভ করল যার ফলে বিধবা মা ও ছোট ভাইয়ের পড়াশুনার খরচ ও সংসারের ব্যয় সে চালাতে পারছে ।

এক্ষেত্রে, অনিল তার জীবনাহ্বান বেছে নেওয়ার জন্য কতটুকু স্বাধীন ছিল? কীভাবে তার অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণ হলো । সে কি অন্য কোনভাবে নিজেকে ধাবিত করতে পারত? তাতে কী ফল হতো?

আসলে মানুষের স্বাধীনতার কোন চূড়ান্ত সমাপ্তি নেই । স্বাধীনতা মানুষের ইতিহাস, শিক্ষা, পারিপার্শ্বিকতা, চলমান বাস্তবতা, সামাজিক ও পারিবারিক কৃষ্টি, সংস্কৃতি, অভ্যাস, বৃদ্ধি ও সমসাময়িক অবস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত।

স্বাধীনতা কী?

বাংলা ভাষায় 'স্বাধীনতা' শব্দটি বুৎপত্তিগতভাবে দুইটি শব্দ থেকে আগত: স্ব (নিজ) + অধীনতা । কাজেই স্বাধীনতার অর্থ হলো নিজেকে নিজের অধীনে রাখা । যে-ব্যক্তি বা দেশ নিজেকে নিজের অধীনে রাখতে বা নিজেকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারে, তখন তাকে স্বাধীন ব্যক্তি বলা যায় । অন্যদিকে, যে ব্যক্তি বা দেশ নিজেকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারে না, সে ব্যক্তি বা দেশ স্বাধীন নয়; সে পরাধীন ।

স্বাধীনতা প্রতিটি মানুষের জন্মগত অধিকার । এটি একটি সর্বজনীন মূল্যবোধ যা সারা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত । এই স্বাধীনতা শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত সবার কাম্য। মায়ের কোলের যে শিশু, সে-ও স্বাধীনভাবে তার হাত-পা নাড়া-চাড়া করতে চায়; একটু বড় হলে নিজের মতো করে হামাগুড়ি

 

 

 

 

দিতে চায়; হাঁটতে ও দৌড়াতে চায় । তার স্বাধীনতা ব্যাহত হলে সে ছট্‌ফট্ করে, কান্নাকাটি করে । একজন বিবাহিত নারীও স্বাধীনভাবে তার স্বামী-সন্তানদের সাথে বিবাহিত জীবন যাপন করতে চায় । শ্বশুর-শাশুড়ি বা অন্য কারো দ্বারা তার এই স্বাধীনতা বিঘ্নিত হলে অনেক ক্ষেত্রে তারা আলাদা সংসার গড়ে তোলে । অনেক বৃদ্ধ পিতামাতা যখন উপলব্ধি করেন যে, তাদের উপার্জনশীল ছেলে বা বউমা দ্বারা তাদের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হচ্ছে, তারা তখন সেই সন্তানকে আলাদা করে দিয়ে নিজেরা স্বাধীন জীবন যাপন করতে পছন্দ করেন । বৃদ্ধ বয়সে ছেলে বা বউমার অধীনতা অনেক বৃদ্ধ পিতামাতা মেনে নিতে পারেন না ।

আমরা এখন কয়েকজনের জীবনের বাস্তব কাহিনী থেকে বুঝতে চেষ্টা করব স্বাধীনতা কী এবং কখন একজন ব্যক্তি স্বাধীন ।

জীবন-কাহিনী ১

আমি যখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিলাম তখন নতুন পরিবেশে, নতুন শ্রেণিতে আমি একজন ভীতু ছাত্রী ছিলাম । আমি নিজে থেকে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম না, এমনকি নিজ উদ্যোগে কোন কাজও করতে পারতাম না । কোন কিছু করার পর আমি সবসময় আশা করতাম অন্যেরা আমার প্রশংসা করুক । প্রশংসা না পেলে আমার মন ভীষণ খারাপ হয়ে থাকত । স্কুলের প্রধান শিক্ষক একদিন আমাকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বললেন । আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না কেন তিনি আমাকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বললেন । আমি ভাবছিলাম, আমি কি কোন ভুল করেছি? আমার আচরণ দিয়ে আমি কি কোনভাবে তাঁকে বা স্কুলের কারো মনে আঘাত দিয়েছি? আমি নিজে এর কোন উত্তর খুঁজে পেলাম না । তাই আমি তাঁর ধমক খাওয়ার জন্যে মনে মনে প্রস্তুত হলাম । কিন্তু কী আশ্চর্য! দুরু দুরু বুকে আমি প্রধান শিক্ষকের অফিসকক্ষে প্রবেশ করলাম । তিনি অনেক খুশি হয়ে আমার প্রশংসা করলেন এবং বাবা-মাকে দেবার জন্য তাঁর প্রস্তুত করা একটি প্রতিবেদন আমাকে দিলেন । ওহ্! আমি তখন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম । আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আমি প্রধান শিক্ষককে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর অফিসকক্ষ ত্যাগ করলাম । কী যে ভালো লাগছিল! আনন্দে লাফাতে ইচ্ছে করছিল! আমি এখন ভয় আর দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত । আমি স্বাধীন ।

জীবন কাহিনী ২

আমি তখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র । একবার আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লাম । আমার অবস্থা এতই খারাপ হয়ে পড়েছিল যে, স্কুলে যাওয়াও আমার বন্ধ হয়ে গেল । বুন্ধদের সাথে ক্রিকেট খেলা বন্ধ হয়ে গেল । অথচ ক্রিকেট ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলা । আমাকে সবসময় ডাক্তারের নির্দেশ অনুসারে চলতে হতো । আমার শরীর খুবই দুর্বল হয়ে পড়ল এবং ভালোভাবে হাঁটতেও পারতাম না। ফলে আমি সবসময় মনোকষ্টে ভুগতাম । ঈশ্বরের কৃপায় আমি ধীরে ধীরে সেরে উঠতে লাগলাম। আমার মনে পড়ে, যখন আমি পুরোপুরি সেরে ওঠার পর প্রথম দিন স্কুলে গেলাম, বন্ধুদের সাথে আনন্দ করলাম আর ক্রিকেটও খেলতে পারলাম । সেদিন আমি ভীষণ আনন্দ পেয়েছিলাম । আমি দৈহিক অসুস্থতা থেকে মুক্ত! আমি ডাক্তারের বিধিনিষেধ থেকে মুক্ত! আমি স্বাধীন!

 

 

মানুষের একটি আহ্বান হলো সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের মতো হওয়া । কেননা ঈশ্বর প্রত্যেক মানুষকে নিজের রূপে ও সাদৃশ্যে সৃষ্টি করেছেন (আদি ১ঃ২৬) । তাই মানুষের সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ আহ্বানই হলো স্রষ্টা-ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি বা ছবি হয়ে ওঠা এবং তাঁরই রূপ ধারণ করা । সৃষ্টিকর্তা যেমন সুন্দর, নির্মল-পবিত্র, প্রেমময় ও শান্তিময়, প্রত্যেক মানুষের আহ্বান হলো ঠিক তেমনি হয়ে ওঠা, সেই রূপে বৃদ্ধি পাওয়া, জীবন যাপন করা এবং অন্যের সামনে ঈশ্বরের দেওয়া সেই রূপ সুন্দর করে তুলে ধরা ।

পবিত্র বাইবেলের নতুন নিয়মে মথি লিখিত সু-সমাচারে যীশু সব মানুষকেই সেই আহ্বানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন: “তোমরা পবিত্র বা খাঁটি হও, ঠিক যেমন তোমাদের স্বর্গীয় পিতা পবিত্র বা খাঁটি” (মথি ৫:৪৭) । ঈশ্বরের মতো হয়ে ওঠাই যে মানুষের সবচেয়ে বড় জীবন-আহ্বান, যীশু সেই কথাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন । যীশু তাঁর ত্রি-বিধ প্রেরণ-কর্ম, তথা প্রচার, শিক্ষাদান এবং নিরাময়করণ--এর মধ্য দিয়ে মানুষকে ঈশ্বরের মতো হয়ে ওঠার বা ঐশ-রূপ ধারণের বাণী প্রচার করে গেছেন ।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথও তাঁর একটি গানে সেই সু-মহান জীবন-আহ্বানের কথাই সব মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন:

“অরূপ তোমার বাণী

অঙ্গে আমার চিত্তে আমার মুক্তি দিক সে আনি... ।”

কবিগুরু বলেছেন যে, সব মানুষের জন্য মুক্তি, পরিত্রাণ, মোক্ষ-লাভ বা নির্বাণ হলো মানুষের দেহ-মন-প্রাণে পরিপূর্ণভাবে সৃষ্টিকর্তার রূপ ধারণ করা । মানুষ যে জাতি-ধর্ম-বর্ণেরই হোক না কেন, সবারই মুক্তি চিরকাম্য । সবার জন্যে সেই একই আহ্বান, যেহেতু সবার স্রষ্টা এক--যিনি পরম সত্য-সুন্দর, প্রেমময়- শান্তিময় ঈশ্বর ।

পরম প্রেমময় ঈশ্বর কখনই কারো ওপর সেই আহ্বান বলপূর্বক চাপিয়ে দেন না । মানুষকে তিনি আহ্বান করেন, যেন সে স্বাধীনভাবে ও স্বেচ্ছায় তাঁর এই ঐশ-আহ্বানে সাড়া দেয়। কেননা এই ঐশ-আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মধ্যেই মানব-জীবনের সফলতা ও পূর্ণতা নিহিত রয়েছে । এই আহ্বানে যে ব্যক্তি সাড়া দেয় না এবং ঈশ্বরের মতো হতে চায় না, মানব জন্ম ও জীবন তার জন্যে অর্থহীন ও বৃথা ।

আহ্বানে সাড়া দান

ঈশ্বর প্রত্যেক মানুষকে স্বাধীন সত্তা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন । কেননা ঈশ্বর নিজেই স্বাধীন, তিনি কারো অধীন নন । প্রত্যেক মানুষকে তিনি তাঁর নিজ রূপ এবং সাদৃশ্যে সৃষ্টি করেছেন । পবিত্র বাইবেলে আদিপুস্তকের প্রথম অধ্যায়ের ২৬ পদে ঈশ্বর বলেন ; “এসো, আমরা আমাদের আপন প্রতিমূর্তিতে ও সাদৃশ্যে মানুষ সৃষ্টি করি ৷” কাজেই আমরা প্রত্যেকেই ঈশ্বরের মহৎ পরিকল্পনা অনুসারেই স্বাধীন মানুষরূপে সৃষ্ট হয়েছি ।

স্বাধীনতার মধ্যেই রয়েছে সত্যিকার আনন্দ এবং মনুষ্যত্বের পূর্ণ বিকাশ। স্বাধীনতা মানুষের গঠন ও বিকাশে উৎসাহিত করে; মানব ব্যক্তিত্বকে মহত্ত্ব ও গৌরব দান করে । অন্যদিকে, স্বাধীনতাহীনতা মানব-

 

 

 

জীবনকে পর্যুদস্ত করে, জীবনকে অর্থহীন করে তোলে; জীবনের সৌন্দর্যের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটা যেকোনো মানুষের জন্যে যেমন সত্য, তেমনি কোনো প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের বেলায়ও সত্য ।

স্বাধীনতা মানুষের এক অদম্য ক্ষুধা ও আকাঙ্ক্ষা । কেননা, পরাধীনতায় কেউ বাঁচতে চায় না । একটি ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত সকলেই স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে চায় । তার এই স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা বাধাগ্রস্ত হলে বা স্বাধীনতার ক্ষুধা অপূর্ণ থাকলে শুরু হয় দ্বন্দ্ব-সংঘাত, শুরু হয় স্বাধীন জীবনের জন্যে সংগ্রাম । এই সংগ্রাম সংঘাত হতে পারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে; পিতামাতা ও সন্তানদের মধ্যে; কর্তৃপক্ষ ও অধীনস্তদের মধ্যে ।

স্বাধীনতার মধ্যে রয়েছে এক পরম আনন্দ । মানুষ স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে চায়, স্বাধীনতার আনন্দকে প্রাণভরে উপলদ্ধি করতে চায় । স্বাধীনতার এই আনন্দ তার জীবনকে উচ্ছ্বসিত ও উৎসাহিত করে সুন্দর কিছু সৃষ্টির জন্যে । স্বাধীনতা তাকে অনুপ্রাণিত করে সুন্দর করে বেঁচে থাকার জন্যে, আর এসব তার জীবনে এনে দেয় মহিমা ও গৌরব; উপহার দেয় প্রতিষ্ঠা ও সম্মান। অন্যদিকে, পরাধীনতা কর্মস্পৃহা ও উদ্যমকে নষ্ট করে দেয়; জীবনের প্রাণ-চাঞ্চল্য ও গতিকে বাধাগ্রস্ত করে দেয়; জীবনকে আনন্দবিহীন ও নীরস করে তোলে ।

স্বাধীনতা মানব-জীবনে দায়িত্বশীলতার সৃষ্টি এবং এর বিকাশ ঘটায়। স্বাধীন ব্যক্তি তার প্রতিটি কাজ কর্ম লেখা ও কথার জন্যে দায়ী থাকে বলে সে আরো চিন্তাশীল হয় । তাকে ভাবতে হয় তার প্রতিটি কাজ, কথা ও লেখা নিজের ও অন্যের জন্যে কতটুকু কল্যাণকর বা অকল্যাণকর; তা নিজের বা অন্যের কতটুকু উপকার বা অপকার করছে । স্বাধীনতা তাই সর্বদা অন্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত । একজন সত্যিকার স্বাধীন ব্যক্তি সর্বদা পরের কল্যাণে ব্রতী; অন্যের অমঙ্গল হয় এমন কিছু করা, বলা বা লেখা থেকে তার চিন্তা চেতনা ও কর্মকাণ্ড দূরে রাখে ।

স্বাধীনতা সর্বদা সুন্দর ও পবিত্র । ঈশ্বর নিজেই স্বাধীন থেকে এর পবিত্রতাকে রক্ষা করেছেন । ঈশ্বর চির মঙ্গলময়; তিনি সর্বদা বিশ্বাসীদের মঙ্গল সাধন করেন । কারো কোনরূপ অনিষ্ট করা স্বাধীনতার সৌন্দর্য ও পবিত্রতাকে নষ্ট করে দেয় । কেননা স্বাধীনতার মূল শিক্ষাই হলো নিজের ও অন্যের কল্যাণ। অসুন্দর ও অনিষ্টকর কিছু করা কখনো স্বাধীনতা হতে পারে না । সেই অধিকার কাউকে দেওয়াও হয়নি ।

সত্যিকার স্বাধীনতা সৃজনশীলতার সৃষ্টি ও বিকাশ ঘটায় । এ যেন নদী বা ঝর্ণাধারার মতো নিজ গতিতে স্বাধীনভাবে এঁকেবেঁকে বয়ে চলে । নদী বা ঝর্ণার এই বয়ে চলার মধ্যেই রয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য । যেমন করে নদী বা ঝর্ণা তার চলার পথের ভূমিকে সৌন্দর্য-গরিমায় ও সম্পদে ঐশর্যশালী করেছে, ঠিক তেমনি স্বাধীনতা মানুষের মধ্যে সৃজনশীলতা সৃষ্টি করে তাকে বৈচিত্র্যময় করে তোলে । স্বাধীনতা বাধাপ্রাপ্ত হলে সৃজনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়; ফলে মানব-ব্যক্তিত্বের বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয় । মানুষের জীবন তখন এক আজ্ঞাবাহ দাসে পরিণত হয় ।

কাজ: শ্রেণিতে ধর্মীয় আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন এমন কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ছবি প্রদর্শন করা হবে । এর মাধ্যমে আহ্বান এবং আহ্বানে সাড়াদানের মাধ্যমে প্রকৃত স্বাধীন হওয়ার অর্থ ব্যাখ্যাও করা হবে । তোমরা ছবিতে প্রদর্শিত ব্যক্তিদের জীবন থেকে প্রকৃত স্বাধীন হওয়ার বৈশিষ্ট্যগুলোর একটা তালিকা প্রস্তুত করবে ।

 

 

 

 

স্বাধীনতা বা মুক্তি বিভিন্ন রকম হতে পারে এবং তা বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সংযুক্ত । নিম্নে আমরা কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যা স্বাধীন বা মুক্ত ব্যক্তি হওয়ার সাথে সম্পর্কিত ।

১. স্বাধীনতা ও আমার আমিত্ব

অন্তরের গভীর থেকেই মুক্ত বা স্বাধীন মানুষ হওয়ার প্রেরণা জেগে ওঠে । আমি আমার মতো করে গড়ে উঠতে চাই; নিজ নামে, নিজ পরিচয়ে বেড়ে উঠতে চাই । আমি আমার নিজের পছন্দ-অপছন্দ, রুচিবোধ, শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠতে চাই । আমি অনেকের ভিড়ে হারিয়ে যেতে চাই না; নিজের পরিচয়ে, নিজের স্বকীয়তায়, নিজের মান-মর্যাদায় বড় হতে চাই । আমি যে রকম সেভাবেই গ্রহণীয় হয়ে উঠতে চাই । অন্যরা আমাকে যা হতে বলে শুধু সেই রকম হওয়ার মাধ্যমেই নয় ।

২. স্বাধীনতা ও ভালোবাসা

স্বাধীনতার সাথে ভালোবাসার একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আমি কার সাথে মেলামেশা করবো বা কাকে ভালোবাসব সে বিষয়ে আমার স্বাধীনতা রয়েছে । কারো কারো প্রতি আমি হৃদয়ের আকর্ষণ অনুভব করি এবং তাদের সাথে আমি বন্ধুত্ব গড়ে তুলি। আবার কারো কারো প্রতি আমি তেমন কোনো আকর্ষণ অনুভব করি না বলে তাদের সাথে আমার ভালোবাসার সম্পর্কও তেমনভাবে গড়ে ওঠে না । অন্যদিকে, আমি যাদের ভালোবাসি এবং যারা আমাকে ভালোবাসে, তাদের সান্নিধ্য আমাকে আনন্দ দেয় । আমার সম্বন্ধে তাদের মতামতকে আমি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি ।

৩. স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতা

স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে, আমি আমার খেয়াল খুশিমতো যা ইচ্ছা তা-ই করব। স্বাধীনতা কতগুলো নিয়ম-কানুনের অধীন যা আমাকে মেনে চলতে হয় । যেমন, ঢাকা শহরে কখনো দেখা যায় পুলিশ লোকজনকে গাড়ি চলার রাস্তা থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে আর বলছে, ‘ফুটপাথ দিয়ে হাঁটুন’ ‘ওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হোন' ‘ট্রাফিক সিগ্‌নাল মেনে চলুন।' এ ছাড়াও আমাদের পরিবারে, সমাজে, মণ্ডলীতে আরও অনেক নিয়ম আছে । যেমন, ‘এটা করবে’ ‘ওটা করবে' ইত্যাদি । আমাকে তা মানতে হচ্ছে, শৃঙ্খলার জন্যে, দুর্ঘটনা এড়াবার জন্যে । তাই দায়িত্বহীন স্বাধীনতা উচ্ছৃঙ্খলারই নামান্তর । দায়িত্ব ছাড়া স্বাধীনতা মূল্যহীন ।

৪. স্বাধীনতা হলো মন্দতা থেকে মুক্তি

খুব বেশিদিন আগের কথা নয় । বাংলাদেশকে পরপর চার বার বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল । আস্তে আস্তে যদিও আমাদের সেই দুর্নাম দূর হচ্ছে তথাপি এখনো সারা দেশ জুড়ে বহু মন্দতা বিরাজ করছে। যেমন: চুরি, ডাকাতি, মারামারি, ঘুষ, যৌতুক, নারী-নির্যাতন, শিশু- নির্যাতন, পারিবারিক কলহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ ইত্যাদি আরো কত কী । শুধু দেশে-বিদেশে নয়, আমার নিজের মধ্যেও কত মন্দতা বিদ্যমান । কখনো বাজে কথা বলি, অন্যকে কড়া কথা বলে আঘাত করি, রাগ করি, চুরি করি, মিথ্যা কথা বলি, পিতামাতা ও গুরুজনদের অবাধ্য হই, এছাড়া আরও কত রকমের মন্দ কাজ করি । আমার নিজেকে প্রশ্ন করা প্রয়োজন: আমি কীভাবে নিজেকে সর্বপ্রকার মন্দের হাত থেকে মুক্ত রাখতে পারি এবং একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারি ।

 

 

 

৫. মুক্তি ও স্বাধীনতার উৎস ঈশ্বর

সারা বিশ্বে ও দেশের মধ্যে এত মন্দতা ও অশান্তি দেখে কখনো কখনো নিরাশ হয়ে পড়ি । নিজের জীবনের মন্দতা নিয়েও হতাশায় ভুগি । কী করে এসব মন্দতা থেকে মুক্ত হতে পারি? জগতে এমন কে আছেন যিনি আমাকে সাহায্য করতে পারেন আমার জীবনের মন্দতা থেকে আমাকে মুক্ত করে একটি সুন্দর স্বাধীন জীবন উপহার দিতে । আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, একমাত্র ঈশ্বরই আমাকে সর্বপ্রকার মন্দতা থেকে রক্ষা করতে পারেন । আমি বরং তাঁরই ওপর নির্ভর করব । কেননা তিনিই আমার শক্তি ও মুক্তি । যীশুর মধ্য দিয়ে তিনি নিজেই এসেছেন আমাকে ও সব মানুষকে পাপ ও সমস্ত মন্দতা থেকে মুক্ত করতে এবং আমাদেরকে স্বাধীন করে তুলতে ।

৬. স্বাধীনতা ও যীশু খ্রিষ্ট

যীশু এই জগতে এসেছেন আমাদেরকে মুক্ত স্বাধীন মানুষ হওয়ার পথ দেখাতে, যে-পথ আমাদেরকে ঈশ্বরের কাছে নিয়ে যায় । তাঁর সত্যে যে বাস করে, সে-ই হয়ে ওঠে এক মুক্ত-স্বাধীন মানুষ । তাই যীশু বলেন: “তোমরা যদি আমার বাণী পালনে নিষ্ঠাবান থাক, তাহলেই তোমরা আমার যথার্থ শিষ্য; তাহলেই সত্যকে তোমরা জানতে পারবে আর সত্য তখন তোমাদের স্বাধীন করবে” (যোহন ৮:৩১-৩২)। হ্যাঁ, একজন খ্রিষ্টান হিসেবে আমি যীশুর সত্যের মধ্যে বাস করতে চাই, তাঁর মতো মুক্ত বা স্বাধীন মানুষ হতে চাই । তাঁর দেখানো সত্য পথই হলো প্রকৃত মুক্তি ও স্বাধীনতার পথ ।

এই মুক্তি বা স্বাধীনতার জন্যে অনেকে প্রাণ দিয়েছেন । যীশু নিজে মন্দের বিরুদ্ধে সংগ্রামে এবং মানুষকে মন্দের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রাণ দিয়েছেন । যীশুর মতো অনেক মহান ব্যক্তিত্ব মানুষের জীবনে মুক্তি বা স্বাধীনতা উপহার দিতে জীবন উৎসর্গ করেছেন । বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভারতবর্ষের মহান নেতা মহাত্মা গান্ধী, আমেরিকার মার্টিন লুথার কিং প্রমুখ মহান ব্যক্তি মানুষকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মন্দতা ও অন্যায় থেকে মুক্ত করতে প্রাণ দিয়েছেন । মন্দ থেকে মুক্ত-স্বাধীন মানুষ হতে চাইলে আমাদের ত্যাগস্বীকার করতে হবে ।

কাজঃ ঈশ্বরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রকৃত স্বাধীন জীবন যাপন করছে এমন একজনের জীবন বেছে নিয়ে তার সংক্ষিপ্ত জীবনী লেখ ।

সাধু পিতরকে যীশু তাঁর মেষদের দেখাশুনা করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যোহন লিখিত মঙ্গলসমাচারের ২১:১৫-১৭ আমরা পাঠ করি ও এর অর্থ বুঝতে চেষ্টা করি ।

সেদিন তাঁদের এই সকালের খাওয়াটা শেষ হওয়ার পর যীশু সিমোন পিতরকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘যোহনের ছেলে সিমোন, তুমি কি আমাকে ওদের চেয়ে বেশি ভালোবাস?' পিতর উত্তর দিলেন: 'হ্যাঁ, প্ৰভু, আপনি তো জানেন, আমি আপনাকে ভালোবাসি ।' যীশু তাঁকে বললেন: 'তাহলে তুমি আমার মেষশাবকদের দেখাশুনা কর!' তারপর দ্বিতীয়বার তিনি পিতরকে একই কথা জিজ্ঞেস করলেন; ‘যোহনের ছেলে সিমোন, তুমি কি আমাকে ভালোবাস?' পিতরও উত্তর দিলেন: 'হ্যাঁ, প্রভু, আপনি তো জানেন, আমি আপনাকে ভালোবাসি!' যীশু তাঁকে বললেন: 'তাহলে তুমি আমার মেষদের পালন কর!' তারপর তৃতীয়বার তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন: ‘যোহনের ছেলে সিমোন, তুমি কি আমাকে ভালোবাস?' যীশু যে তাঁকে তৃতীয়বার

 

 

 

 

“তুমি কি আমাকে ভালোবাস?' এমন প্রশ্ন করছেন, তার জন্যে পিতর দুঃখ পেলেন । তিনি এবার বলে উঠলেন: ‘প্রভু, আপনি তো সবই জানেন! আপনি তো জানেন, আমি আপনাকে সত্যিই ভালোবাসি!' যীশু তাঁকে বললেন: “তাহলে তুমি আমার মেষদের দেখাশুনা কর ।’

তুমি কি আমাকে ভালোবাস? যীশুর এই কথাটির নিচ দিয়ে দাগ দাও । এবার চোখ বন্ধ করো। মনে মনে কল্পনা করো যীশু তোমার কাছে আসছেন । এসে জিজ্ঞেস করছেন সেই একই প্রশ্ন তোমাকেও জিজ্ঞেস করছেন: “তুমি কি আমাকে ভালোবাস? তুমি যীশুকে কী উত্তর দেবে? যীশু পিতরকে বললেন, আমার মেষদের দেখাশুনা কর । তোমাকেও যদি যীশু একই কাজ দেন তবে তুমি তা কীভাবে করবে? যীশু তোমাকে কী করার জন্য ডাকছেন?

কাজ: ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সহভাগিতা কর, যীশু তোমাকে কী করতে বলছেন ?

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. ‘স্বাধীনতা” শব্দটি বুৎপত্তিগতভাবে কয়টি শব্দ থেকে আগত ?

ক. দুইটি

খ. তিনটি

গ. চারটি

ঘ. পাঁচটি

2. স্বাধীনতার অনুপস্থিতি -

i. কর্মস্পৃহা নষ্ট করে

ii. জীবনের গতিকে বাধাগ্রস্থ করে

iii. জীবনকে নীরস করে তোলে

নিচের কোনটি সঠিক ?

ক. i

খ. i ও iii

গ. ii ও ii

ঘ. i, ii ও iii

 

 

 

নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ে ৩ ও ৪নং প্রশ্নের উত্তর দাও :

রাজুর জীবনের লক্ষ্য লেখাপড়া শেষ করে ডাক্তার হবে । মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করবে । এ কারণে সে লেখাপড়ায় খুবই মনোযোগী । প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন করে যেন খুব ভালো রেজাল্ট করতে পারে ।

৩. লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজুর মধ্যে কোন বিষয়টি ফুটে উঠেছে ?

ক. বাধ্যতা

খ. দায়িত্ববোধ

গ. জীবনাহ্বান

ঘ. বিশ্বস্ততা

৪. রাজুর এরূপ আচরণের ফলাফল হতে পারে

i. জীবনের প্রতিষ্ঠা লাভ

ii. ভবিষ্যৎ স্বপ্ন পূরণ

iii. সুখী সুন্দর জীবন লাভ

নিচের কোনটি সঠিক ?

ক. i

খ. i ও ii

গ. ii ও iii

ঘ. i, ii ও iii

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১. জীবনাহ্বান বলতে কী বুঝ ?

২. জীবনাহ্বানের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর ?

৩. আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন ব্যাখ্যা কর ।

৪. আহ্বান ও জীবনের পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যখ্যা কর ।

৫. কীভাবে ঈশ্বরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্ত স্বাধীন মানুষ হওয়া যায় ?

 

 

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. শিক্ষক মিলন ও রুবেলকে শ্রেণি ক্যাপ্টেন নিযুক্ত করে শ্রেণির শৃঙ্খলা রক্ষা করা, শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখা, শিক্ষককে ডেকে আনা, শ্রেণির কাজ, বাড়ির কাজের খাতা জমা নেওয়া, ফেরত দেওয়া কাজগুলো করতে বললেন । মিলন শিক্ষকের অর্পিত কাজগুলো যত্ন সহকারে সময়মত সম্পন্ন করে । কিন্তু রুবেল মেধাবী ছাত্র হয়েও সঠিকভাবে ও সময়মত কাজগুলো সম্পাদন করতে পারে না ।

ক. মানুষের অদম্য ক্ষুধা ও আকাঙ্ক্ষা কী ?

খ. স্বাধীনতা কীভাবে কলুষিত হয় ?

গ. শিক্ষকের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মধ্য দিয়ে মিলনের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জনের কোন বিষয়টি প্রকাশ পায়? তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. রুবেল তার কাজের মাধ্যমে জীবনের সৌন্দর্য্যের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে বলে কি তুমি মনে কর? তোমার মতামত দাও ।

২. মিতার বাবা মা দুই জনই কর্মজীবী । দুই ভাইবোনের মধ্যে মিতা বড় । ছোটভাইকে সে খুব ভালোবাসে। ভাইয়ের প্রতি সে সর্বদা সচেতন। সে ভাইকে সময়মতো খাবার খাওয়ায়, ঘুম পাড়ায়, লেখাপড়ায় সাহায্য সহযোগিতা করে । দুই ভাইবোনের মধ্যে খুব সুন্দর সম্পর্ক বিদ্যমান ।

ক. স্বাধীনতার সাথে কার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে ?

খ. দায়িত্বহীন স্বাধীনতা উচ্ছৃঙ্খলারই নামান্তর বলতে কী বুঝ ?

গ.   মিতার মধ্যে স্বাধীনতা লাভের কোন বৈশিষ্ট্যটি ফুটে উঠেছে – ব্যাখ্যা কর ।

ঘ. স্বাধীনতা লাভ করতে মিতার গুণগুলো যথেষ্ট কি না - তোমার মতামত দাও ।

Content added By
সুখী জীবনের আহ্বান
স্বাধীনতা অর্জন
দারিদ্র্য দূরীকরণ
বন্ধুত্বপূর্ণ জীবন লাভ
বন্ধুত্ব গড়া
কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা
স্বাধীনতা অর্জন
ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা