নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

তৃতীয় অধ্যায়

আমার স্বাধীনতা ও সমাজ

 

ঈশ্বর মানুষকে এমন করেই সৃষ্টি করলেন যেন মানুষকে একা থাকতে না হয়, সে যেন সমাজে বাস করতে পারে । বিশ্বসৃষ্টির দিকে তাকালে আমরা দেখি কত বিচিত্র ধরনের প্রাণী, বস্তু, ফুলফল, গাছপালা, পশুপাখি রয়েছে । শুধু বৈচিত্র্যই নয়, তাদের মধ্যে রয়েছে দলবদ্ধতা । আমরা দেখি, পাখির ঝাঁক, পশুর পাল, বৃক্ষরাজি আর ফুলফলের সমাহার । প্রকৃতিতে রয়েছে একাত্মতা, মিলন ও সমন্বয় । তেমনি মানুষও সৃষ্ট হয়েছে সমাজে বাস করার জন্য । মানব পরিবারে তার জন্ম এবং মানব সমাজেই তার বাস। পরস্পরের সাহচর্য পাবার জন্যেই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করে । মানব সমাজে বাস করতে হলে মানুষকে নিজ অধিকার রক্ষা করার সাথে সাথে অপরের অধিকার স্বীকার করে নিতে হয় । প্রতিটি মানুষই ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট, তাই প্রত্যেকেরই রয়েছে ব্যক্তিমর্যাদা ও জন্মগত অধিকার । তাই নিজ নিজ অধিকার রক্ষা করে চলা প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য ।

এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-

• নিঃসঙ্গতা ও সম্প্রীতির তুলনামূলক আলোচনা করতে পারব;

অন্যদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব;

নিজের ও অন্যদের স্বাধীনতা সম্পর্কে পবিত্র বাইবেলের শিক্ষা বর্ণনা করতে পারব; • খ্রিষ্টবিশ্বাসে বলীয়ান মানুষের জীবন মূল্যায়ন করতে পারব;

অন্যদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হবো এবং

অন্যের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবো ।

নিঃসঙ্গতা ও সম্প্রীতি

নিঃসঙ্গতা হলো মানুষের খুবই কষ্টকর একটি অনুভূতি । একজন নিঃসঙ্গ ব্যক্তি অপর্যাপ্ত সামাজিক সম্পর্কের অভাবে নিজের মধ্যে শূন্যতা ও একাকীত্ব অনুভব করে । একাকীত্বের এই অভিজ্ঞতা একান্ত ব্যক্তিগত । অর্থাৎ একজনের অনুভূতি থেকে অন্যজনের অনুভূতি ভিন্নতর হয়ে থাকে । নিঃসঙ্গতাকে একটি সামাজিক তাগিদ হিসেবেও বর্ণনা করা যায় যা একজন নিঃসঙ্গ ব্যক্তিকে সামাজিক সম্পর্ক গড়তে উদ্বুদ্ধ করে । অন্যদিকে একটি বা কয়েকটি সামাজিক দলের মধ্যে পরস্পর শান্তিপূর্ণ মানবিক শক্তি ও গতিশীলতাই হলো সম্প্রীতি । জীবনে অর্থপূর্ণভাবে ও আনন্দের সঙ্গে বেঁচে থাকা এবং সমাজে টিকে থাকার জন্য মানুষ পরস্পরের সাথে যে প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলে তাই হলো সম্প্রীতি বা বন্ধুত্ব। একজন ছেলে বা মেয়ে তার পরিবারে পরস্পর ভালোবাসার বন্ধনের মাঝেই প্রথম সম্প্রীতি বা বন্ধুত্বের অভিজ্ঞতা অর্জন করে । তার সেই অভিজ্ঞতা থেকেই সে সমাজে সম্প্রীতি গড়ে তুলতে সক্ষম হয় । পরবর্তীতে আরও বৃহত্তর পরিসরে সে সম্প্রীতির অভিজ্ঞতা লাভ করে । যেমন, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি স্থানে ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, জাতি নির্বিশেষে সবার সাথে সে সম্প্রীতি গড়ে তোলে । এভাবে কষ্টকর নিঃসঙ্গ জীবন পরিত্যাগ করে মানুষ সম্প্রীতির আনন্দে বসবাস করতে উদ্যোগী হয় ।

 

আমরা যদি নিঃসঙ্গতা ও সম্প্রীতির একটি তুলনামূলক আলোচনা করি তাহলে আমরা দেখতে পাবো-- নিঃসঙ্গতা জীবন ও কাজকর্মে বয়ে আনে অনীহা । কিন্তু সম্প্রীতিপূর্ণ জীবন আনে অদম্য কর্মস্পৃহা ও জীবনের প্রতি আগ্রহ । নিঃসঙ্গতা কষ্ট ও বেদনা বয়ে আনে এবং সম্প্রীতি বয়ে আনে সুখ, শান্তি ও আনন্দ । নিঃসঙ্গ জীবনে মানুষ অন্যদের কাছ থেকে দূরত্ব সৃষ্টি করে একা সুখী হতে চায় কিন্তু প্রকৃত সুখ তারা পায় না । তারা নিজের ব্যক্তিগত ও সামাজিক প্রয়োজনগুলো মিটাতে পারে না এবং অন্যদের প্রয়োজনগুলো সম্বন্ধেও সচেতন থাকে না। সম্প্রীতিপূর্ণ জীবনে মানুষ নিজের ব্যক্তিগত ও সামাজিক প্রয়োজনগুলো অনেকটাই মিটাতে সক্ষম হয় ও অন্যদের জীবনের প্রয়োজনগুলো মিটানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রদান করে। নিঃসঙ্গ জীবনে একাকীত্ব, ব্যর্থতা ও উদ্দেশ্যহীনতার উপলব্ধি অনুভূত হয়; জীবনকে তুচ্ছ, অর্থহীন ও উদ্দেশ্যহীন মনে হয় । কিন্তু সম্প্রীতিপূর্ণ জীবনে জীবনকে সুন্দর ও অর্থপূর্ণ মনে হয় এবং ব্যক্তির মধ্যে উদারতা ও সহভাগিতার মনোভাব জেগে ওঠে । নিঃসঙ্গ জীবনে সব সময় একটি অভাব বোধ থেকে যায়, আর সম্প্রীতিপূর্ণ জীবনে অন্তরে সর্বদা একটা পূর্ণতা, আনন্দ ও কৃতজ্ঞতাবোধ বিরাজ করে ।

 কাজ: ছোট ছোট দলে নিঃসঙ্গতা ও সম্প্রীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ নিয়ে আলোচনা কর এবং দুইটি কলামে তা উপস্থাপন কর ।

বন্ধুত্ব গড়ার প্রয়োজনীয়তা

সমাজে বসবাস করা হচ্ছে মানুষের একটি মৌলিক মানবিক আকাঙ্ক্ষা । সহজাত বৈশিষ্ট্যের গুণেই মানুষ অনুভব করে যে, শুধুমাত্র অন্যদের সঙ্গে বসবাস করার মাধ্যমেই সে অর্জন করে প্রকৃত মানবতাবোধ । তাই বন্ধুত্বের অভিজ্ঞতা লাভের আকাঙ্ক্ষা প্রত্যেক ব্যক্তির হৃদয়ে খুবই তীব্র । মানুষ যখন একে অন্যের সাথে দায়িত্ব সহভাগিতা করে ও একযোগে কাজ করে তখন মহৎ অনেক কিছুই সে অর্জন করতে পারে । নিঃসঙ্গতা দুঃখ বয়ে আনে । আমাদের একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা দূর করতে আমাদের প্রয়োজন হয় বন্ধুত্বের । আমরা পরস্পরের সাথে সহভাগিতা, সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের মধ্যেই প্রকৃত সুখ ও আনন্দ খুঁজে পেতে পারি । একযোগে কাজ করে মানুষ মহৎ অনেক কিছুই অর্জন করতে পারে ।

আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কখনো সমাজ গড়ে উঠতে পারে না। সম্প্রীতি, একতা ও বন্ধুত্ব সহজে অর্জন করা যায় না, কোন পাত্রের মধ্যে তা ধরে রাখা সম্ভব নয় এবং পরে তা ইচ্ছেমতো ব্যবহারও করা যায় না । ভালোবাসা, সহভাগিতা, সক্রিয় অংশগ্রহণ ও যত্নের মাধ্যমে সমাজ গড়ে ওঠে সহযোগিতা ও ভালোবাসা জন্ম দেয় বন্ধুত্ব, মিলন ও সম্প্রীতির । এশিয়ায়, বিশেষভাবে বাংলাদেশে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বিদ্যমান । এই বাস্তবতায় মানুষের অভিজ্ঞতাও অনেক সময়ই অন্য ধর্মীয় ও ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে । সব ধর্মের মধ্যেই উদার ও খোলা মনোভাবাপন্ন মানুষ আছে। তারা একত্রে কাজ করে ও একে অপরকে সাহায্য করে এবং তাদের মধ্যে ভাবের আদান প্রদান ও মত বিনিময় হয় । এভাবে তাদের মধ্যেও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে ওঠে ।

 

 

কাজ: “সম্প্রীতিই মানব জীবনে সুখী হওয়ার সর্বোত্তম পন্থা”–এই বিষয়টির ওপর দুইটি দল বিতর্ক প্রতিযোগিতা করবে । অন্যরা সকলে বিচারকের ভূমিকা পালন করবে । পরে মতামত চাওয়া হলে সকলেই মতামত দিতে পারবে ।

স্বাধীনতা সম্পর্কে পবিত্র বাইবেলের শিক্ষা

পবিত্র বাইবেলের আদিপুস্তকে সাধারণ মানুষের বোঝার উপযোগী করে মানুষের উৎস কোথায় এবং মনোনীত জাতির সূচনা কোথা হতে হয়েছে সে বিষয়ে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে । আদিপুস্তকের প্রথম দুইটি অধ্যায়ে কয়েকটি মৌলিক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলোর একটি হলো ঈশ্বর স্বাধীন ইচ্ছা দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর সাথে ও অন্য সকল মানুষের সাথে সম্প্রীতিপূর্ণ জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে। তবে এই স্বাধীন ইচ্ছার বশবর্তী হয়ে মানুষ ঈশ্বর ও মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপনের পথ বেছে নিয়েছিল । এই বিষয়টি আমরা দেখতে পাই আদিপুস্তকের চতুর্থ ও ষষ্ঠ অধ্যায়ে । এখানে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে মানুষের প্রথম বিদ্রোহের কাহিনীর পর মানুষের বিরুদ্ধে মানুষের প্রথম গুরুতর অন্যায়ের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে । মানুষ অন্যায় করলেও ঈশ্বর নিজেকে সন্ধির বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন শুধুমাত্র ব্যক্তি বা জাতি বিশেষের সঙ্গে নয় বরং সমগ্র মানবজাতি ও গোটা প্রাণিকুলের সঙ্গেও। এই বিষয়টি আমরা দেখতে পাই আদিপুস্তকের নবম অধ্যায়ে । এই সন্ধির মূলকথা হলো ঈশ্বর মানবজাতি ও প্রাণিকুলকে রক্ষা করবেনই। মানুষ তবুও ঈশ্বরকে অস্বীকার করে এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে, অন্য মানুষের কাছ থেকে, সমগ্র সৃষ্টির কাছ থেকে, এমনকি নিজের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ।

পবিত্র বাইবেলে দুই ধরনের স্বাধীনতা সর্ম্পকে উল্লেখ করা হয়েছে-- রাজনৈতিক বা সামাজিকভাবে পরাধীনতা বা দাসত্ব হতে স্বাধীনতা বা মুক্তি এবং অন্যটি হলো অভ্যন্তরীণভাবে পাপের দাসত্ব হতে স্বাধীনতা বা মুক্তি । পবিত্র বাইবেলের যাত্রাপুস্তকে ইস্রায়েল জাতির মিশর দেশের দাসত্ব হতে মুক্তির বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। পরবর্তীতে প্রবক্তাদের লিখিত গ্রন্থে ইস্রায়েল জাতির বাবিলনের দাসত্ব হতে মুক্তির বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে । পবিত্র বাইবেলের নতুন নিয়মে বর্ণনা রয়েছে পাপের দাসত্ব হতে মুক্তির বিষয়ে । প্রভু যীশু খ্রিষ্ট এ জগতে মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আমাদেরকে পাপের দাসত্ব হতে মুক্তি দিতে । নিচে নতুন নিয়ম হতে কয়েকটি উদ্ধৃতি তুলে ধরা হলো ।

যোহন লিখিত মঙ্গলসমাচারের ৮:৩১- ৩৬ পদে যীশু তাঁর প্রতি বিশ্বাসী ইহুদিদের লক্ষ করে বললেন: “তোমরা যদি আমার বাণী পালনে নিষ্ঠাবান থাক, তাহলেই তো তোমরা আমার যথার্থ শিষ্য; তাহলেই তো সত্যকে তোমরা জানতে পারবে আর সত্য তোমাদের স্বাধীন করে দেবে”। ইহুদি ধর্মনেতারা তখন বলে উঠলেন: “আমরা ইহুদিরা আব্রাহামের বংশের লোক, আমরা কারো দাসত্ব করিনি কখনো । তাহলে আপনি কী করে বলছেন যে, তোমরা স্বাধীন হয়ে উঠবে?” উত্তরে যীশু বললেন: “আমি আপনাদের সত্যি সত্যিই বলছি, যে-কেউ পাপ করে, সে পাপের ক্রীতদাস। এখন, ক্রীতদাস তো স্থায়ীভাবে ঘরে থাকে না; পুত্র কিন্তু স্থায়ীভাবেই থাকে । তাই স্বয়ং পুত্রই যদি আপনাদের স্বাধীন করে দেয়, আপনারা সত্যিই স্বাধীন হয়ে উঠবেন ।”

 

রোমীয়দের কাছে লেখা সাধু পলের পত্রের ৮:১৫ পদে বলা হয়েছে: “পরমেশ্বরের কাছ থেকে তোমরা যে আত্মিক প্রেরণা পেয়েছ, তা তো দাসের সেই মনোভাব নয়, যার জন্যে তোমাদের আবার ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে; বরং তা পুত্রেরই মনোভাব, যার জন্যে আমরা “আব্বা! পিতা! বলে ডেকে উঠি । স্বয়ং ঐশ আত্মা আমাদের অন্তরাত্মার সঙ্গে মিলিত কণ্ঠে এই সত্যের সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, আমরা পরমেশ্বরের সন্তান ।” করিন্থীয়দের কাছে দ্বিতীয় পত্রের ৩: ১৭ পদে সাধু পল লিখেছেন: “যেখানে প্রভুর আত্মা, সেখানেই স্বাধীনতা।”

গালাতীয়দের কাছে লিখিত পত্রে সাধু পল বলেন: “খ্রিষ্ট যখন আমাদের স্বাধীন করে দিয়েছেন, তিনি চেয়েছেন, আমরা যেন সত্যিই স্বাধীন হয়ে থাকি । তাই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাক তোমরা; নিজেদের ওপর আর সেই দাসত্বের জোয়ালটা চেপে বসতে দিও না” (গালাতীয় ৫:১)। এখানে আরও বলা হয়েছে: “তোমরা তো স্বাধীন মানুষ হওয়ার জন্যেই আহুত হয়েছ। শুধু দেখো, এই স্বাধীনতা যেন তোমাদের নিম্নতর স্বভাবটাকে কোন রকম সুযোগ না দেয় । তোমরা বরং ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পরস্পরের সেবা কর” (গালাতীয় ৫:১৩)।

সাধু পিতর তাঁর লেখা পত্রে বলেছেন: “স্বাধীন মানুষ তোমরা-- স্বাধীন মানুষের মতোই কাজ কর । তোমাদের এই স্বাধীনতার অজুহাতে মন্দ কাজ করতে যেও না । বরং পরমেশ্বরের সেবকের মতোই কাজকর্ম কর তোমরা । সবাইকে সম্মানের চোখেই দেখ । আমাদের এই ভ্রাতৃমণ্ডলীকে ভালোবেসো । পরমেশ্বরকে সম্ভ্রম করে চল” (১পিতর ২:১৬-১৭)।

পবিত্র বাইবেলের শিক্ষানুসারে আমরা স্বাধীন হয়ে সৃষ্ট হয়েছি । আমরা ঈশ্বরের সন্তান । ঈশ্বর চান আমরা যেন আর পরাধীন না হই । স্বাধীন মানুষ হিসেবে আমরা যেন সমাজে বাস করি ।

খ্রিষ্টবিশ্বাসে বলীয়ান জীবন

খ্রিষ্টবিশ্বাসে সবল ব্যক্তির উদাহরণ আমাদের সামনে অনেক । তবে এখন আমরা এরকম ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মাত্র কয়েকজনের সাথে পরিচিত হবো। তাঁরা আমাদের মতোই সাধারণ মানুষ ছিলেন কিন্তু খ্রিষ্টবিশ্বাসে সবল জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে মণ্ডলীতে সাধু ও সাধ্বী বলে অভিহিত হয়েছেন । তাঁদেরকে আমরা আদর্শ ব্যক্তি বলে জানি ।

১. সাধু পল

সাধু পল হলেন খ্রিষ্টবিশ্বাসে একজন সবল ব্যক্তি । সিলিসিয়া প্রদেশের তার্সাস নগরে তাঁর জন্ম হয় । জন্মের পর তাঁর নাম ছিল সৌল । মন পরিবর্তনের পর তাঁর নাম রাখা হয় পল । তাঁর পিতামাতা বেঞ্জামিন গোষ্ঠীর লোক ছিলেন । জন্মসূত্রে তিনি রোমান নাগরিক ছিলেন। খুব সম্ভবত তিনি খ্রিষ্ট জন্মের কিছুকাল পরেই জন্মগ্রহণ করেন । লেখাপড়ার জন্য তাঁর পিতামাতা তাঁকে যেরুসালেমে পাঠিয়েছিলেন । সেখানে তিনি পণ্ডিত গামালীয়েলের কাছে ইহুদি ধর্মমত ও আইনকানুন সম্বন্ধে বিশেষ শিক্ষা লাভ করেন । তিনি একজন গোঁড়া ইহুদি ছিলেন । বক্তা হিসেবে তিনি বেশ ভালোই ছিলেন । তর্কবাগীশ হিসেবেও তিনি প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। প্যালেস্টাইনে যীশু প্রকাশ্য জীবন শুরু করার আগেই সাধু পল যেরুসালেমে পড়া শেষ করে তার্সাস নগরে ফিরে যান ৷

 

যীশুর মৃত্যুর কিছু পরে তিনি প্যালেস্টাইনে ফিরে আসেন। ইহুদি ধর্মমতে গোড়া বিশ্বাসী হওয়ার কারণে তিনি খ্রিষ্ট বিশ্বাসীদের বিরোধিতা করেন এবং তাদের ধ্বংস করার জন্য প্রচেষ্টা চালান। যেরুসালেমে সাধু স্তেফানের মৃত্যুর সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তখন বয়সে তিনি যুবক ছিলেন। ক্রমে তিনি ঘোর খ্রিষ্ট-বিরোধী হয়ে ওঠেন ।

একবার তিনি খ্রিষ্টানদের বন্দী করে যেরুসালেমে নিয়ে আসার জন্য সম্রাটের অনুমতি আনতে গিয়েছিলেন । সেখান থেকে ফিরে দামাস্কাস যাবার পথে তিনি নির্যাতিত খ্রিষ্টের দেখা পান । এখানেই তাঁর জীবনে আমূল পরিবর্তন নেমে আসে। তাঁর এই মন পরিবর্তনের ঘটনা আমরা প্রেরিতদের কার্যাবলি গ্রন্থে ৯:১-১৯ পদে পাই:

“তখনো সৌল প্রভুর শিষ্যদের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে বলে বেড়াচ্ছেন যে, তিনি তাদের শেষ করে দেবেন। একদিন মহাযাজকের কাছে গিয়ে তাঁকে তিনি দামাস্কাসের সমাজগৃহগুলোর সদস্যদের কাছে এই মর্মে পত্র লিখে দিতে অনুরোধ করলেন যে, ওই ধর্মমতের অনুগামী পুরুষ বা নারী কাউকে পেলেই তিনি যেন তাদের বন্দী করে যেরুসালেমে নিয়ে আসতে পারেন। পথ চলতে চলতে তিনি দামাস্কাসের বেশ কাছেই এসে গেছেন, এমন সময় হঠাৎ একটি আলো আকাশ থেকে নেমে এসে তাঁর চারদিকে উজ্জ্বল হয়ে জ্বলতে লাগল । তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন এবং শুনতে পেলেন, কার যেন কণ্ঠস্বর তাঁকে বলছে। “সৌল, সৌল, কেন তুমি আমাকে নির্যাতন করছ?” তিনি জিজ্ঞেস করলেন: “আপনি কে, প্রভু?” উত্তর এলো: “আমি যীশু, যাকে তুমি নির্যাতন করছ! এখন ওঠ, নগরে প্রবেশ কর। তোমাকে কী করতে হবে, সেখানেই তা বলে দেওয়া হবে।” সৌলের সহযাত্রীরা অবাক হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই কণ্ঠস্বর শুনেও তারা কাউকে দেখতে পাচ্ছিল না। সৌল তখন মাটি থেকে উঠলেন; তাঁর চোখ খোলা, অথচ তিনি কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না । তাই লোকেরা তাঁকে হাত ধরে দামাস্কাসে নিয়ে চলল। তিনদিন ধরে তিনি দৃষ্টিহীন হয়েই রইলেন ।

দামাস্কাসে আনানিয়াস নামে একজন শিষ্য ছিলেন। তাঁকে দর্শন দিয়ে প্রভু বললেন। আনানিয়াস, যাও। সরল সরণী নামে রাস্তায় গিয়ে সেখানে যুদার বাড়িতে ভার্সাস নগরের সৌল বলে একজন লোকের খোঁজ কর । সে এখন প্রার্থনা করছে। দিব্য দর্শনে সে দেখতে পেয়েছে, আনানিয়াস নামে একজন এসে তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেবার জন্যে তার ওপর একবার হাত রাখছে।' আনানিয়াস উত্তর দিলেন: 'প্রভু, ওই লোকটির বিষয়ে অনেকেরই কাছে শুনেছি যে, যেরুসালেমে সে আপনার ভক্তদের কত ক্ষতিই না করেছে! যারা আপনার নাম নেয়, তাদের বন্দী করবার জন্যে প্রধান যাজকদের দেওয়া ক্ষমতা নিয়েই সে নাকি এখন এখানে রয়েছে।' প্রভু কিন্তু তাঁকে বললেন: 'তুমি যাও, কারণ বিজাতীয়দের কাছে, তাদের রাজাদের কাছে এবং ইস্রায়েলীয়দের কাছে আমার নাম বয়ে নিয়ে যাবার জন্যে সে যে আমার মনোনীত পাত্ৰ ৷ আমি নিজেই তাকে বোঝাব, আমার নামের জন্যে কত দুঃখ তাকে ভোগ করতে হবে।'

আনানিয়াস তখন সেখানে গেলেন। সেই বাড়িতে ঢুকে সৌলের ওপর একবার হাত রেখে তিনি বললেন: 'ভাই সৌল, স্বয়ং প্রভুই আমাকে পাঠিয়েছেন- সেই যীশুই, এখানে আসার পথে তুমি যাঁর দর্শন পেয়েছিলে, আমাকে তিনি পাঠিয়েছেন, তুমি যেন আবার চোখে দেখতে পাও, তুমি যেন অন্তর ভরে

 

পবিত্র আত্মাকে পেতে পার।' তক্ষুণি সৌলের চোখ থেকে আঁশের মতো কী যেন খসে পড়ল এবং তিনি আবার চোখে দেখতে পেলেন । তিনি এবার উঠে দাঁড়ালেন, তারপর দীক্ষাস্নান গ্রহণ করলেন এবং পল নাম গ্রহণ করলেন ।”

দামাস্কাসেই তিনি সমাজগৃহগুলোতে প্রচার করতে শুরু করলেন, যীশুই হচ্ছেন স্বয়ং পরমেশ্বরের পুত্র। সকলেই তাঁর কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেল । পলের প্রচার ক্ষমতা দিনে দিনে বাড়তে লাগল । যীশুই যে খ্রিষ্ট, এই কথা প্রমাণ করে তিনি দামাস্কাসের ইহুদিদের দিশেহারা করে দিতে লাগলেন । সেখানে ইহুদিরা তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল । শিষ্যরা তাঁকে যেরুসালেমে পাঠিয়ে দিলেন । যেরুসালেমে গিয়ে তিনি মণ্ডলীর প্রধান, পিতরের সাথে দেখা করেন । এর পর থেকে তাঁর দীর্ঘ প্রচার জীবন শুরু হয় । প্রথমেই তিনি তাঁর জন্মস্থান তার্সাসে যান এবং সেখানে প্রচার কাজ করেন । সেখান থেকে তিনি বার্নাবাসকে নিয়ে আন্তিয়োক নগরে যান। পিতরের সাথে বিশেষ ধর্মীয় আলোচনার জন্য তাঁরা যেরুসালেমে যান। তাদের কাজ শেষ করে তাঁরা আবার আন্তিয়োকে ফিরে যান এবং একে একে তিনটি প্রৈরিতিক যাত্রা করেন । তাঁর প্রথম প্রৈরিতিক যাত্রা ছিল সাইপ্রাস দ্বীপ হয়ে পামফিলিয়া, পিসিদিয়া এবং লিকাউনিয়া হয়ে এশিয়া মাইনরের সকল স্থানে যাত্রা করা ও পিসিদিয়া-আন্তিয়োক, ইকোনিয়াম, লিস্ত্রা ও দর্বীতে মণ্ডলী স্থাপন করা ।

যেরুসালেমের প্রৈরিতিক সভায় অংশগ্রহণের পর পল প্রথমে সিলাস ও পরে তিমথি ও লুককে সঙ্গে নিয়ে তাঁর দ্বিতীয় প্রৈরিতিক যাত্রা করেন । এসময়ে তিনি ফিলিপ্পী, থেসালোনিকা, বেরেয়া, এথেন্স ও করিন্থে প্রচার করেন । তৃতীয় প্রচার যাত্রায় তিনি তিন বছর ধরে এফেসাস নগরীতে থাকেন ও সেখান থেকে বিভিন্ন স্থানে প্রচার করেন । তিনি যেরুসালেম ছেড়ে রোম ও স্পেন দেশে যাবার জন্য আরো একটি প্রচারযাত্রার পরিকল্পনা করছিলেন । ইহুদিদের অত্যাচার তাঁর এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি । সিজারিয়াতে দুই বছর কারাবাসের পর পল রোমে পৌঁছান। সেখানে আরো দুই বছর তাঁকে বন্দী অবস্থায় রাখা হয় । রোমের কারাবাস হতে ছাড়া পাবার পর পল স্পেন যাত্রা করেছিলেন এবং রোমে ফিরে এসে দ্বিতীয়বার কারাবদ্ধ হন এবং ৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে শিরচ্ছেদ করা হয় । তাঁর প্রচারের ফলে আন্তিয়োকে খ্রিষ্টবিশ্বাসীগণ প্রথম খ্রিষ্টান নামে অভিহিত হন । যেরুসালেমের বাইরে বিজাতীয়দের কাছে তিনি খ্রিষ্টকে পরিচয় করিয়ে দেন । বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মণ্ডলীকে লেখা সাধু পলের পত্রগুলো হতে আমরা খ্রিষ্টবিশ্বাসীর জীবন ও আধ্যাত্মিকতা কী হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারি । যুগ যুগ ধরে মণ্ডলী ও খ্রিষ্টবিশ্বাসী ভক্তজনগণ তাঁর এই অবদানের কথা মনে রাখবে ও তাঁর আদর্শ অনুসরণ করবে । ২৫শে জানুয়ারি কাথলিক মণ্ডলীতে সাধু পলের মন পরিবর্তন দিবস এবং ২৯শে জুন যৌথভাবে পিতর ও পলের পর্বদিন পালন করা হয়। (প্রোটেস্টান্ট মণ্ডলীতে সাধু পিতর ২৯শে জুন ও সাধু পৌলের পর্বদিন ৩০শে জুন)

২. সাধ্বী মারীয়া গরেটি

সাধ্বী মারীয়া গরেটি হলেন মণ্ডলীর নবীন সাধ্বীদের মধ্যে একজন । তিনি অতি অল্প বয়সে সাধ্বী বলে ঘোষিত হন । তাঁর পবিত্রতা ও ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষা করতে গিয়ে তিনি সাক্ষ্যময় হয়েছেন । ১৬ই অক্টোবর ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইতালিতে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতার নাম ছিল লুইজি গরেটি ও মাতার নাম আসুম্ভা কারলীনি । ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তাঁর দুই বোনের নাম ছিল তেরেজা ও

 

আরসিলিয়া এবং ভাইদের নাম ছিল আঞ্জেলো, সানড্রিনো ও মারিনো । মারীয়ার বয়স যখন ছয় বছর তখন তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়ে । ছয় ছেলেমেয়ের ভরণপোষণ করতে তাঁর পিতামাতা হিমশিম খাচ্ছিলেন । তাঁদের অবস্থা এতই খারাপ হয়ে পড়ল যে, তাঁর বাবাকে নিজের জমি বিক্রি করে দিয়ে অন্যের জমিতে মজুর খাটতে হয়েছিল । মারীয়ার বয়স যখন নয় বছর তখন তাঁর বাবা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান । মারীয়ার ভাইয়েরা, মা ও বোন যখন জমিতে কাজ করতেন তখন মারীয়া বাড়িতে থেকে ঘরবাড়ি পরিষ্কার, রান্না-বান্না, সেলাই ইত্যাদি করতেন ও ছোট বোনের যত্নও নিতেন। কষ্টের মধ্য দিয়ে তাঁদের দিন অতিবাহিত হলেও তাঁদের পরিবারে সকলের মধ্যে দৃঢ় ভালোবাসার বন্ধন ছিল । ঈশ্বরের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা ও বিশ্বাস গভীর ছিল ।

তাদের পাশেই আলেক্সান্দ্রো নামে এক যুবক ও তার বাবা সেরেনেলি বাস করত । আলেক্সান্দ্রো জানত যে প্রতিদিন যখন মারীয়ার মা, বোন ও ভাইয়েরা কাজে যায় তখন মারীয়া ও তার ছোট বোন একা বাড়িতে থাকে । আলেক্সান্দ্রো প্রায় প্রায়ই মারীয়ার কাছে আসত ও তার খোঁজ খবর রাখত । মারীয়াকে তার ভালো লাগত । যতই দিন যেতে লাগলো মারীয়ার প্রতি তার আসক্তি ততই বৃদ্ধি পেতে লাগল । মারীয়া তা বুঝতে পেরেছিল এবং আলেক্সান্দ্রোর কাছ থেকে নিজেকে দুরে সরিয়ে রাখতেন। মারীয়ার দিকে সে কামনার দৃষ্টিতে তাকাত । একদিন মারীয়াকে সে কুপ্রস্তাবও দিয়েছিল । মারীয়া তাকে বোঝাতে চেয়েছেন যে তাদের এমন ব্যবহার করা ঠিক নয় । একদিন মারীয়া বাড়িতে বসে সেলাই করছিলেন । তার ছোট বোন পাশে ঘুমাচ্ছিল । আলেক্সান্দ্রো মারীয়ার কাছে এসে তাকে কুপ্রস্তাব দিল। সে তার কুমারীত্ব নষ্ট করতে চাইল । মারীয়া আলোক্সান্দ্রোকে প্রথমে ভালোভাবে বুঝাতে চাইলেন । কিন্তু আলোক্সান্দ্রো কিছুতেই তা মানতে চাইল না । সে জোর করে মারীয়াকে ভোগ করতে চাইল । মারীয়াও জোরপূর্বক নিজেকে রক্ষা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলেন । তিনি আলেক্সান্দ্রোকে পাপের ভয় দেখালেন । এমন ব্যবহারে ঈশ্বর অসন্তুষ্ট হবেন, তাও বললেন। কিন্তু কিছুতেই আলেক্সান্দ্রো কোন বাধা মানল না । সে তবুও জোরপূর্বক মারীয়াকে ভোগ করতে চাইল । মারীয়া তাকে বললেন, তিনি মৃত্যুকে বরণ করে নেবেন তবুও নিজের পবিত্রতাকে নষ্ট হতে দেবেন না ।

যখন আলেক্সান্দ্রো দেখল যে কিছুতেই সে মারীয়াকে বশে আনতে পারছে না তখন সে ছুরিকা দিয়ে বার বার মারীয়াকে আঘাত করল এবং রক্তাক্ত মারীয়াকে ফেলে রেখে পালিয়ে গেল । মারীয়ার চিৎকার ও কান্না শুনে তার বোন কেঁদে উঠল । বাড়িতে চিৎকার ও কান্না শুনে মারীয়ার মা ও আলেক্সান্দ্রোর বাবা দৌড়ে এসে মারীয়াকে অজ্ঞান ও রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেলেন ও তাঁকে তাড়াতাড়ি কাছের হাসপাতালে নিয়ে গেলেন । ডাক্তারগণ তৎক্ষণাৎ অস্ত্রোপচার করে মারীয়াকে বাঁচাতে চাইলেন, তাঁর জখম এত বেশি হয়েছিল যে তারা তেমন কিছু করতে পারলেন না । অস্ত্রোপচারের সময় মারীয়ার জ্ঞান ফিরে আসলে তিনি ডাক্তারদের অনুরোধ করলেন তাকে যেন সেভাবেই রেখে দেওয়া হয়। চব্বিশ ঘণ্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মারীয়া মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মৃত্যুর আগে তিনি আলেক্সান্দ্রোকে ক্ষমা করেন এবং প্রকাশ করেন যে আলেক্সান্দ্রোকেও তিনি তার সাথে স্বর্গে দেখতে চান ।

 

মারীয়ার মৃত্যুর কয়েকদিন পরই আলেক্সান্দ্রো ধরা পড়ে ও তার ত্রিশ বছর কারাবাস হয় । সে স্বীকার করে যে সে মারীয়াকে ছুরিকাঘাত করলেও তার কুমারীত্ব নষ্ট করেনি। কারাগারে জীবন যাপন করতে করতে একজন বিশপের সহায়তায় ধীরে ধীরে তার মন পরিবর্তন হয় । একদিন সে স্বপ্নে দেখে যে মারীয়া তাকে সাদা লিলি ফুল উপহার দিয়েছেন ।

ফুলগুলো হাতে নেবার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো তার হাতের মধ্যেই পুড়ে যায়। কারাগার হতে মুক্তি পাবার পর আলেক্সান্দ্রো মারীয়ার মাকে দেখতে যান, যিনি তখনো বেঁচে ছিলেন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন । মারীয়ার মা-ও আলেক্সান্দ্রোকে ক্ষমা করেন। মারীয়া মৃত্যুর পূর্বে যাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন তাঁর মা-ও তাকে ক্ষমা করে দিলেন । তারা একসাথে খ্রিষ্টযাগে অংশগ্রহণ করলেন ও পবিত্র সাক্রামেন্ত গ্রহণ করেন ।

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে পোপ দ্বাদশ পিউস মারীয়া গরেটিকে সাধ্বী শ্রেণিভুক্ত করেন । তখন থেকে প্রতি বছর ৬ই জুলাই সাধ্বী মারীয়া গরেটির পর্ব পালন করা হয় । আলেক্সান্দ্রো মারীয়ার সাধ্বী শ্রেণিভুক্তিকরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল এবং মারীয়াকে ”আমার ক্ষুদ্র সাধ্বী” বলে সম্বোধন করত ও তার কাছে প্রতিদিন প্রার্থনা করত । শেষ জীবনে আলেক্সান্দ্রো ব্রাদার হিসেবে কাপুচিনো সন্ন্যাস সংঘে যোগদান করে ।

৩. ক্ষুদ্র পুষ্প সাধ্বী তেরেজা

ক্ষুদ্র পুষ্প তেরেজা ছিলেন মার্টিন লুইস ও জেলি মার্টিনের নবমতম ও শেষ সন্তান । তিনি ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২রা জানুয়ারি ফ্রান্সের এলেনকনে জন্মগ্রহণ করেন । চার বছর বয়সে তাঁর মা মারা যাবার পর তাঁর বাবা তাঁদেরকে লিজুঁতে নিয়ে আসেন । মাতৃহারা তেরেজার অনেক স্নেহযত্ন ও ভালোবাসার প্রয়োজন হলো । ফলে তাঁর বাবা ও দিদিরা তাঁকে অনেক ভালোবাসা ও আদর-যত্ন দিয়ে বড় করতে লাগলেন । পরিবারে তাঁর সব চাহিদাই মেটানো হতো । চৌদ্দ বছর বয়সে অর্থাৎ ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের বড়দিনের সময়ে তেরেজার মনের পরিবর্তন হয় । ঐ সময় থেকে শুধু নিজেকে খুশি রাখার পরিবর্তে তাঁর সমস্ত শক্তি ও সহানুভূতিশীলতা ভালোবাসায় পরিবর্তিত হতে লাগল । মাত্র ১৫ বছর বয়সে পোপের বিশেষ অনুমতি নিয়ে তাঁর সমগ্র জীবন ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করার উদ্দেশ্যে তিনি লিছুঁতে অবস্থিত কার্মেলাইট সমাজে প্রবেশ করেন এবং “শিশু যীশুর তেরেজা” নাম ধারণ করেন । কার্মেলাইটের বদ্ধ সমাজে তিনি নিভৃতে প্রার্থনার জীবন যাপন করেন এবং ঈশ্বরের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করার অনুগ্রহ লাভ করেন । ছোট বেলা হতেই বরাবর তিনি অসুস্থ ছিলেন । সন্ন্যাস জীবনে এসেও তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন । এই অসুস্থতা ও কষ্ট সবই তিনি ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করতেন ।

আত্মজীবনীতে তেরেজা লিখে গেছেন, তাঁর জীবন ছিল ক্ষুদ্র প্রেমের পথ । সংঘবদ্ধ জীবনের নিয়মিত ব্যক্তিগত ও দলগত কাজ, প্রার্থনা ও ছোট-বড় অন্যান্য সব কিছুই তিনি ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করতেন । ঈশ্বরের অবিচল প্রেমের ওপর ভিত্তি করে তিনি তাঁর প্রতিটি দিন অতিবাহিত করতেন। তিনি তাঁর জীবনে দেখিয়ে গেছেন, “জীবনে যা প্রয়োজনীয় তা কোন বৃহৎ কাজ নয়, কিন্তু মহৎ ভালোবাসা।” শিশুরা যেমন যে ব্যক্তি বা বস্তু তাদের সামনে থাকে তাদের প্রতিই মনোযোগী হয়, তেরেজাও প্রতিজন ভগিনী ও তাঁর প্রতিটি কাজের প্রতি তেমনি মনোযোগী ছিলেন। প্রতিজন ব্যক্তি ও প্রতিটি বস্তুকে

 

আমার স্বাধীনতা ও সমাজ

ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখা ও ভালোবাসা নিয়ে তাদের যত্ন করার আধ্যাত্মিকতা তিনি আমাদের দেখিয়ে গেছেন । তাঁর আধ্যাত্মিকতা ছিল সাধারণ কাজ অসাধারণ ভালোবাসা নিয়ে করা ।

প্রাকৃতিক ঋতুগুলোকে তিনি ঈশ্বরের সাথে আমাদের সম্পর্কের সাথে তুলনা করে দেখতেন । তিনি ফুল খুব ভালোবাসতেন এবং নিজেকে ঈশ্বরের বাগানের একটি ছোট্ট ফুল হিসেবে দেখতেন । ফুল যেমন নিজের জীবন দিয়ে ঈশ্বরকে খুশি করে ও ঈশ্বরের গৌরব করে, তেমনি তিনিও তাঁর জীবনকে সেভাবে দেখতেন । কার্নেলের বাগানে অন্যান্য ভগিনীদের সাথে তিনি নিজেকে একটি ছোট্ট ফুল হিসেবে দেখতেন । সেজন্যে তাঁর নামের সাথে “ক্ষুদ্র পুষ্প” যুক্ত হয়েছে। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে পোপ একাদশ পিউস তাঁকে সাধ্বী বলে ঘোষণা করেন । ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর শততম মৃত্যুবার্ষিকীতে পোপ ২য় জনপল তাঁকে মণ্ডলীর আচার্য পদে ভূষিত করেন । মৃত্যুর পূর্বে ক্ষুদ্র পুষ্প তেরেজা বলে গেছেন “আমার মৃত্যুর পর আমার প্রেরণ কাজ হবে ঈশ্বরকে ভালোবাসতে শিখানো । স্বর্গে থেকে আমি গোলাপ বর্ষণ করব ও পৃথিবীতে মঙ্গল কাজ করে যাব ।

৪. সাধু ম্যাক্সিমিলিয়ন কলবে

ম্যাক্সিমিলিয়ন কবে ছিলেন পোলাণ্ডের একজন ফ্রান্সিসকান সন্ন্যাসব্রতী। যিনি ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই আগস্ট জার্মানীর কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে একজন অপরিচিত ব্যক্তির জীবনের পরিবর্তে স্বেচ্ছায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন । তাঁর এই মহৎ কাজের জন্য জগতে বিখ্যাত হয়ে আছেন । পোপ ২য় জনপল ১০ই অক্টোবর ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে 'ভালোবাসার জন্য শহিদ' এবং 'বর্তমান কঠিন সময়ে আমাদের প্রতিপালক সাধু' বলে ঘোষণা দেন ।

ম্যাক্সিমিলিয়ন ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে পোলাণ্ডে জন্মগ্রহণ করেন । পোলাও তখন রাশিয়ার রাজ্যাধীন ছিল । ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাক্সিমিলিয়ন ও তাঁর ভাই সিদ্ধান্ত নেন যে তাঁরা ফ্রান্সিসকান সন্ন্যাস সংঘে যোগদান করবেন। যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ । দুই ভাই মিলে রাশিয়া ও অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরীর সীমান্ত পার হয়ে লাউয়ায় ফ্রান্সিসকান সংঘে যোগদান করেন । ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যাজকপদে অভিষিক্ত হন এবং প্রৈরিতিক কাজের জন্য নতুন স্বাধীনতা প্রাপ্ত পোলান্ডে ফিরে আসেন । তাঁর পৌরহিত্য জীবনকালে ১৯৩০-১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তিনি বেশ কয়েকবার মিশনারীদের নিয়ে জাপান যান এবং সেখানে সন্ন্যাসীদের জন্য মঠ স্থাপন করেন । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তাঁর স্থাপনকৃত মঠটি আনবিক বোমার হাত থেকে রক্ষা পায় ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি ইহুদিসহ অনেক পোলান্ডবাসীদের আশ্রয় দেন । ইহুদিদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে ১৭ই ফেব্রুয়ারি জার্মান গ্যাষ্টাবো তাঁকে বন্দী করে এবং জার্মানীর কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যায় । সে বৎসর জুলাই মাসে ক্যাম্প থেকে একজন পালিয়ে যাবার কারণে ক্যাম্পের ১০ জন পুরুষকে বাছাই করে নেওয়া হয় মেরে ফেলার জন্য যেন অন্য বন্দীগণ আর পালাতে সাহস না করে । সেই দশজন পুরুষের মধ্যে একজন পুরুষ তাঁর পরিবারের কথা স্মরণ করে জোরে জোরে কান্নাকাটি করে আফসোস করছিল, তাই দেখে ম্যাক্সিমিলিয়নের অনেক মায়া হলো । তিনি মনে মনে ভাবলেন আমি তো একজন পুরোহিত, আমার কোন সংসার নেই, এই লোকটি একজন স্বামী, একজন পিতা । এই ভেবে তিনি স্বেচ্ছায় সেই লোকটির পরিবর্তে নিজে এগিয়ে গেলেন সেই দশ জনের একজন হতে । এই দশজনকে আলাদা একটি কক্ষে কোন খাদ্য ও পানীয় ছাড়া রাখা হলো যেন তারা ক্ষুধার জ্বালায় ও তৃষ্ণায় ধুকে ধুকে মারা

 

যায় । এই সময়ে ম্যাক্সিমিলিয়ন সবাইকে নিয়ে প্রার্থনা ও গানের মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করতে লাগলেন । তিন সপ্তাহ পর তিনি এবং আরও তিন জন কোন কিছু না খেয়ে, কোন কিছু পান না করেও

বেঁচে ছিলেন । শেষে তাদের মেরে ফেলা হয় ।

কাজ: কয়েকজন খ্রিষ্টবিশ্বাসে সবল ব্যক্তির ছবি দেখে, তাঁদের গুণাবলিগুলোর তালিকা প্রস্তুত কর ও তা সকলের জন্য উপস্থাপন কর ।

বর্তমানকালে আমাদের করণীয় :

তুমি চোখ মেলে চাও, হৃদয়মন খুলে দাও ।

তুমি যখন মন খুলে দাও, তখন হৃদয়টাও খুলে দাও । তুমি যখন হৃদয়টা খুলে দাও, তখন বাস কর মর্যাদা নিয়ে ।

তুমি যখন মর্যাদা নিয়ে বাস কর, তখন ঐশ জীবন সহভাগিতা কর ।

তুমি যখন ঐশ জীবন সহভাগিতা কর, তখন ভালোবাসার সমাজ গড়ে তুলতে পার । তুমি যখন ভালোবাসার সমাজ গড়ে তোল, তখন অনন্তকালে প্রবেশ কর । তুমি যখন অনন্তকালে প্রবেশ কর, তখন কোন কিছুই তোমার ক্ষতি করতে পারে না । যখন কোন কিছুই তোমার ক্ষতি করতে পারে না, তখন তুমি চিরকাল জীবিতই থাকবে, এমনকি এখনো, এই বর্তমান মুহূর্তেও । (‘একদা এশিয়া' থেকে সংগৃহীত, পৃষ্ঠা ৫৭)

 

 

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা দূর করতে আমাদের কিসের প্রয়োজন ?

ক. ক্ষমার

খ. বন্ধুত্বের

গ. বিশ্বাসের

ঘ. ভালোবাসার

যীশুর কথা অনুসারে বিশ্বাসী ইহুদিরা কীভাবে তাঁর যথার্থ শিষ্য হয়ে উঠবে ?

ক. সত্য জেনে

খ. যীশুর দাসত্ব করে

গ. যীশুর বাণীর প্রতি বিশ্বস্ত থেকে

ঘ. সকল কাজে সক্রিয় হয়ে

 

নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ে ৩ ও ৪নং প্রশ্নের উত্তর দাও :

আপন কাকাত ভাই অনিল খুব নীতিবান হলেও সুনীল দুশ্চরিত্রের লোকদের সাথে চলে । অনিল তাকে প্রত্যাখান করে বলে সুনীল খারাপ লোকদের দিয়ে অনিলকে খুব আঘাত করেন । অনিল হাসপাতালে কষ্ট পেলেও সুনীলের কাছ থেকে পাওয়া কষ্ট ভুলে যান ।

৩. অনিলের চরিত্রে পাঠ্যপুস্তকের কার চরিত্রের মিল খুঁজে পাওয়া যায় ?

ক. সাধু পিতর

খ. সাধু স্তিফানের

গ. সাধ্বী মারীয়া গরেটি

ঘ. সাধু পল

৪. অনিলের নিকট থেকে সুনীল পেয়েছিলেন

i. সাহায্য

ii. ক্ষমা

iii. ভালোবাসা

নিচের কোনটি সঠিক ?

ক. i

খ. ii

গ. i ও ii

ঘ. i, ii ও iii

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১. নিঃসঙ্গতা বলতে কী বুঝ ?

২. সম্প্রীতি বজায় রেখে চলতে হয় কেন ?

৩. বন্ধুত্ব কী, বুঝিয়ে লেখ ?

৪. স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায় ?

৫. অন্যের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হয় কেন ?

৬. পবিত্রতা বলতে কী বোঝায় ?

৭. ব্যক্তি জীবনে পবিত্রতার গুরুত্ব কী ?

 

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. কণা ও বীনা দুইজন সহপাঠী । কণা লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে অনেক মিলেমিশে চলে, শিক্ষকদের অনেক সম্মান করে, স্কুলের সহপাঠক্রমিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয় । সর্বোপরি কণা তার ভালো আচরণ দিয়ে সবার কাছে খুবই প্রিয় । অপরদিকে বীনাও মেধাবী শিক্ষার্থী বটে কিন্তু সে সহপাঠীদের সঙ্গে চলাফেরা করে না, তার সুখ-দুঃখগুলো কারো সাথে সহভাগিতা করে না। হাসি খুশি থাকে না । সেজন্য বীনা অনেক সময়ই মানসিকভাবে অসুস্থ থাকে ।

ক. প্রতিটি মানুষ কার প্রতিমূর্তিতে তৈরি ?

খ. বন্ধুত্ব গড়া প্রয়োজন কেন ? বর্ণনা কর ।

গ. কণা কী ধরনের জীবন যাপন করে তা তোমার পাঠের আলোকে ব্যাখ্যা কর ।

ঘ. বীনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সে কী ধরনের ফলাফল ভোগ করতে পারে বলে তুমি মনে কর ? তোমার মতামত তুলে ধর ।

২. জ্যোতি এবং রমেন একটি ফার্মে কাজ করেন । জ্যোতি রমেনের চেয়ে বয়সে বড়। রমেন বয়সে ছোট হলেও তার দক্ষতা ও যোগ্যতা অনেক বেশি । তাদের ফার্মে জেনারেল ম্যানেজার পদটি শূন্য হলে কর্তৃপক্ষ রমেনকে ঐ পদে নিয়োগ দেন, যা জ্যোতি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি। রমেনকে সহযোগিতা না করে বরং তিনি তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালান ও বিভিন্ন কুৎসা রটান । গুরুতর অসুস্থাবস্থায় জ্যোতি বেশ কয়েক দিন যাবৎ অফিসে আসছেন না দেখে রমেন তাকে হাসপাতালে দেখতে যান এবং তার খোঁজ খবর নেন । তাছাড়া পরিবারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন । রমেনের এ মহৎ কাজ দেখে জ্যোতি রমেনের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন ।

ক. কোথায় সাধু পলের জন্ম হয় ?

খ. সাধু পল খ্রিষ্টানদের ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন কেন ?

গ. সাধু পলের আচরণের কোন দিকটি জ্যোতির মধ্যে ফুটে উঠেছে – ব্যাখ্যা কর । 

ঘ. রমেন যেন যীশুর প্রতিনিধি হয়েই কাজ করছে— উক্তিটির সাথে তুমি কি একমত ? তোমার মতামত তুলে ধর ।

Content added By
মানুষের সাথে কথা বলা
সমাজে বসবাস করা
স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করা
নিঃসঙ্গতা দূর করা