একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - রসায়ন - রসায়ন - দ্বিতীয় পত্র | NCTB BOOK

গ্রিন হাউস প্রভাবের জন্য দায়ী গ্যাসসমূহ :

গ্রিন হাউস প্রভাবের জন্য দায়ী গ্যাসসমূহ হলো- কার্বন ডাই-অক্সাইড (ঈঙ২) - ৫০%, কৃত্রিমভাবে তৈরি ক্লোরোফ্লোরো কার্বন (ঈ.ঋ.ঈ) - ১৭%, নাইট্রাস অক্সাইড (ঘ২ঙ) - ৪%, ওজোন (ঙ৩) - ৮% এবং জলীয়বাষ্প - ২%

গ্রিন হাউস গ্যাসসমূহের উৎস :

কার্বন ডাই-অক্সাইড : বর্তমানে দিন দিন জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। বাড়তি লোকের চাহিদা মেটানোর জন্য বৃদ্ধি পাচ্ছে যানবাহন, কলকারখানা এবং অধিক ইটের ভাটা। ফলে উৎপন্ন হচ্ছে অধিক পরিমাণ ঈঙ২ গ্যাস। এছাড়া আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত থেকে জীব ও উদ্ভিদ দেহের পচন থেকে ভূপৃষ্ঠের চুনা পাথর নানাবিধ এসিডের সংস্পর্শে আসার ফলে বনাঞ্চলের অগ্নিকান্ডের ফলে নানারকম চুলিস্ন থেকে ক্রমবর্ধমান হারে অধিক পরিমাণ ঈঙ২ গ্যাস নির্গত হয়।

ক্লোরোফ্লোরো কার্বন : রেফ্রিজারেটর, কোল্ড স্টোর, বরফ কল ইত্যাদি ঠান্ডা রাখার জন্য ঈ.ঋ.ঈ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া অ্যারোসল, পস্নাস্টিক ফোমের উপাদান যেমন : আরমোকোলস স্টাইরোফম, যানবাহন শীতালায়ন ও কলকারখানার ব্যবহৃত গ্যাস ঈ.ঋ.ঈ-এর উৎস। মানুষের তৈরি ঈ.ঋ.ঈ গ্যাস ওজোন স্তর ক্ষয় সাধন করে। বায়ু দূষণ তথা স্ট্রাটোস্ফেয়ারে ক্লোরিন দূষণের প্রেক্ষাপটে ওজোন ক্ষয় পরিলক্ষিত হয়। আবার জলভূমিতে পানির নিচের পানা, নানা জাতীয় পাতা ও বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের পচনের এবং উইপোকার অন্তে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া থেকে নির্গত মিথেন গ্যাস (ঈঐ৪)-এর বিকিরণের ফলে ওজোন স্তর ক্ষয় হয় এবং ওজোন ডযড়ষব তৈরি হয়। ফলে টঠ রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে এসে পড়ছে। এর ফলে ত্বকে ক্যান্সার, চোখের ছানি, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হৃ্রাস পাবে। ওজোন ঙ৩ - ২৫% শতাংশ হ্রাস পেলে সামুদ্রিক পস্নাংটন ৩৫% হ্রাস পাবে। ফলে মৎস্যসম্পদের খাদ্যের অভাব হবে। টঠ রশ্মির ফলে তুলা, তরমুজ ও বাঁধাকপিসহ কিছু শস্য উৎপাদন কমে যাবে এবং খাদ্য শস্যেও তেজস্ক্রিয়তা দেখা দেবে। উদ্ভিদের পাতা, ফল ও বীজের বৃদ্ধি ব্যাহত হবে। কয়েক শ্রেণির উদ্ভিদের সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা হৃ্রাস পাবে এবং উদ্ভিদের ক্ষেত্রে শস্য উৎপাদন হৃ্রাস পাবে।

নাইট্রাস অক্সাইড : মটরযান শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র পস্নাস্টিক এসিড বিস্ফোরণ নির্মাণকারী কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানা ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত নাইট্রোজেন সার ইত্যাদি হতে নাইট্রাস অক্সাইড নির্গত হয়।

মিথেন  : প্রাকৃতিক উৎস বিশেষ করে গাছপালাসমূহ বায়ুমন্ডলে বেশি পরিমাণে হাইড্রো কার্বন নিঃসরণ করে। এদের মধ্যে মিথেনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। মাটিতে ও পানির জৈব যৌগের ব্যাকটেরিয়াজনিত বিয়োজনের মাধ্যমে আশানুরূপপাওয়া যায়।

 

এছাড়া ধানের অবশিষ্ট অংশ গাবাধি পশুর মল কয়লাখনি জলাভূমিতে পানির নিচে পানা নানা জাতীয় পাতা ও বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের পচনের ফলে এবং গাছ ধ্বংসকারী উইপোকার অন্তে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া থেকে গ্যাস নির্গত হয়।

গ্রিন হাউস প্রভাবের সম্ভাব্য ফলাফল: বায়ুমন্ডলে ক্রমাগত গ্রিন হাউস গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ুমন্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের বৃদ্ধিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে বিশ্ব পরিবেশের ওপর যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে তা নিম্নে উলেস্নখ করা হলো:

১। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে পৃথিবীর সমুদ্র উপকূলবর্তী নিচু স্থলভূমি জলমগ্ন হবে। উপকূলবর্তী নিচু ধান

উৎপাদনকারী জমির পরিমাণ হ্রাস পাবে। লবণাক্ত জমির প্রকোপে মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস পাবে- ফলে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে।

২। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কিছু অঞ্চল নতুনভাবে জলমগ্ন হবে এবং কিছু অঞ্চল শুষ্ক হবে। এতে করে বাস্তুতন্ত্রের প্রাণ প্রবাহের ওপর জলবায়ুর পরিবর্তন বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

৩। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বরং অসংখ্য উদ্ভিদ ও পানির অস্তিত্বও বিপন্ন হবে। অসংখ্য জীবের প্রজাতি পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হবে।

৪। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ৩.ঈ - ৫.ঈ বৃদ্ধি পেলে পৃথিবীর দুই মেরুতে জমে থাকা বরফ গলতে শুরু করবে ফলে এই বরফ গলা পানি সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়ে দেবে এর ফলে জনপদ নগর পানির তলায় তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

৫। সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সামুদ্রিক ঝড় জলোচ্ছ্বাস ও টাইফুনের হার বেড়ে যাবে। বিপর্যয়ের এই সংকেত পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যেই পরিলক্ষিত হচ্ছে।

৬। সামুদ্রিক পানির উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে সমুদ্রের পানির তাপীয় সম্প্রসারণের কারণে দ্রবীভূত কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘনমাত্রা হ্রাস পাবে। ফলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন হবে এবং অসংখ্য জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

৭। সমুদ্র পৃষ্ঠ স্ফীত হলে আবহাওয়ায় প্রকৃতি পরিবর্তিত হবে।

বর্তমান বিশ্বে গ্রিন হাউসের প্রতিকূল প্রভাব নিয়ন্ত্রণে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাসমূহ নেয়া যেতে পারে:

১। জ্বালানি শক্তির সংক্ষেণের মাধ্যমে বায়ুমন্ডলে ঈঙ২ গ্যাসের উত্তরোত্তর পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধি করা।

২। সৌর পানি বায়ু পারমাণবিক শক্তির মতো পুনঃপুনঃ ব্যবহার যোগ্য শক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া।

৩। প্রতি কিলোমিটারে বর্তমানের চেয়ে অনেক কম জ্বালানি তেল প্রয়োজন হয় এমন মটরযান ইঞ্জিন উদ্ভাবন করা।

৪। কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপাদনকারী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যথাসম্ভব কম করা।

৫। বনাঞ্চল সংরক্ষণ ও নিয়মিত ব্যাপক বনায়নের মাধ্যমে নতুন নতুন বনাঞ্চল সৃষ্টি করা।

৬। কৃষি কাজে রাসায়নিক সারের ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার ব্যাপক প্রচলন করা।

৭এর সস্তা বিকল্প আবিষ্কার করা এবং ঈ.ঋ.ঈ ব্যবহার এবং উৎপাদন বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

৮। উপকূলে উপযুক্ত বাঁধ ও দেওয়াল নির্মাণ করা ও সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা।

৯। ত্রম্নটিপূর্ণ যানবাহনের জ্বালানির অসম্পূর্ণ দহনের ফলে এর মতো বিভিন্ন গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরি হয় তাই ত্রম্নটিপূর্ণ যানবাহনের ব্যবহার রোধ করতে হবে।

১০। কলকারখানার ও যানবাহনের কালো ধোঁয়া বায়ুমন্ডলে নির্গত না করে উপযুক্ত ফিল্টারের মাধ্যমে পরিশোধ করে নির্গত করতে হবে।