একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র | NCTB BOOK

জলজ উদ্ভিদ বা হাইড্রোফাইট (Hydrophytes): যে সব উদ্ভিদ সম্পূর্ণ আর্দ্রস্থান অথবা সম্পূর্ণ বা আংশিক নিমজ্জিত অবস্থায় পানিতে জন্মায় সেগুলোকে জলজ উদ্ভিদ (hydrophytes; hydro = পানি + phyte = উদ্ভিদ) বলে । জীবনচক্র সম্পন্ন করতে এরূপ পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়াকে জলজ অভিযোজন বলা হয়। কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে জলজ উদ্ভিদ পরস্পর থেকে পৃথক হলেও তাদের অধিকাংশ বাহ্যিক ও অন্তঃস্থ গাঠনিক বৈশিষ্ট্যে একই রকম। জলজ উদ্ভিদকে তার পরিবেশের সাথে সম্পর্ক রেখে নিচেবর্ণিত চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।

ক. মুক্ত ভাসমান জলজ উদ্ভিদ (Free floating hydrophytes) : মাটির সাথে এসব উদ্ভিদের কোন যোগাযোগ নেই এবং পানির উপরিতলে ভাসমান অবস্থায় থাকে। উদাহরণ- ক্ষুদিপানা (Lemna minor),কচুরীপানা (Eichhornia crassipes), টোপাপানা (Pistia stratiotes) ইত্যাদি।

খ. মূলাবদ্ধ ভাসমান জলজ উদ্ভিদ (Rooted Floating hydrophytes) : এ ধরনের জলজ উদ্ভিদের মূলগুলো পানির নিচে কাদায় আবদ্ধ থাকে কিন্তু দীর্ঘ পত্রবৃন্তযুক্ত পাতাগুলো পানির উপরিতলে ভাসমান থাকে। উদাহরণ- শাপলা (Nymphaea nouchali), পদ্ম (Nelumbium speciosum) ইত্যাদি।

গ. মূলাবদ্ধ নিমজ্জিত জলজ উদ্ভিদ (Rooted submerged hydrophytes) : এসব জলজ উদ্ভিদেরা সর্বক্ষণ পানির নিচে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত অবস্থায় কর্দমাক্ত মাটিতে মূল দিয়ে আবদ্ধ থাকে। যেমন- হাইড্রিলা (Hydrilla verticillata), পাতা শেওলা (Vallisneria spiralis), পাতা ঝাঁঝি (Poramogeton nodosus) ইত্যাদি।.

ঘ. উভচর উদ্ভিদ (Amphibious Plants) : এসব উদ্ভিদের কিছু অংশ মাটিতে এবং কিছু অংশ পানিতে অবস্থান করে। উদাহরণ- হেলেঞ্চা (Enhydra fluctuans), কলমি লতা (Ipomoea aquatica) ইত্যাদি ।কলমি লতা (Ipomoea aquatica) ইত্যাদি ।

জলজ উদ্ভিদের অভিযোজন (Adaptation of Hydrophytes):

ক. অঙ্গসংস্থানিক অভিযোজন (Morphological adaptation):

১. এদের মূল সংক্ষিপ্ত, দুর্বল এবং সুগঠিত হয় না। মূলে মূলরোম থাকে না কারণ পানি শোষণের জন্য মূলরোমের প্রয়োজন হয় না। অনেক উদ্ভিদের (গুঁড়িপানা-Wolffia) আবার মূলই থাকেনা। ছোট উদ্ভিদ

২. কিছু উদ্ভিদের অস্থানিক ভাসমান (কেশরদাম-Jussiaea repens) থাকে যা উদ্ভিদকে
বায়ুকুঠুরী অ্যারেনকাইমা ভেসে থাকতে সাহায্য করে।

৩. জলজ উদ্ভিদের কাজ নমনীয় ও স্পঞ্জী ।

৪. প্রচুর বায়ুকুঠুরীর উপস্থিতি এদের পানিতে ভাসিয়ে রাখতে সাহায্য করে।

৫. পাতা সাধারণত পাতলা ও নরম থাকে। তাই পানির টানে ছিড়ে যায় না। অনেক উদ্ভিদের পত্রবৃন্ত স্ফীত (যেমন-কচুরিপানা) যা উদ্ভিদকে ভেসে থাকতে সাহায্য করে।

৬. প্রজাতিভেদে পাতা বিভিন্ন আকৃতির হয়। অনেক সময় মোমাবৃত। কখনো অতিশয় বৃহৎ। যেমন আমাজন লিলির পাতা এতো চওড়া যে একটি ছোট শিশুকে ধারণ করতে পারে। পাতা মোমাবৃত,চওড়া হলে পানির চাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে।

খ. অন্তর্গঠনগত অভিযোজন (Anatomical adaptation) (ক) বাহ্যিক গঠন, (খ) কাণ্ডের অন্তর্গঠন

১. ত্বকে কিউটিকল হয় সম্পূর্ণ অনুপস্থিত, নয় তো খুবই পাতলা থাকে। কারণ পানির অপচয় রোধ করা প্রয়োজন হয় না।

২. কান্ড ও পাতার অভ্যন্তরে বড় বড় বায়ুকুঠুরী থাকে। এরা বায়ু (O). CO,) ধরে রাখে। তাছাড়া কুঠুরীগুলো।

৩. নিমজ্জিত উদ্ভিদে যান্ত্রিক টিস্যু সাধারণত থাকেনা। তাই সহজে পানির টানে ভেঙ্গে যায় না।

৪. উদ্ভিদের নিমজ্জিত অংশে স্টোমাটা থাকে না। কারণ কোষপ্রাচীর দিয়ে গ্যাসের বিনিময় ঘটে।

৫. পরিবহন টিস্যু থাকে না বা সুগঠিত নয়। কারণ নিমজ্জিত সকল অংশ দ্বারা পানি ও খনিজ শোষিত হয়। উদ্ভিদকে ভাসতে সাহায্য করে।

নিমজ্জিত উদ্ভিদের পাতা ও কাণ্ডের ত্বকে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে ।

গ.শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন (Physiological adaptation): সব অঙ্গ দিয়ে পানি শোষণ করতে পারে (তুকে কিউটিকল না থাকায়), পানি শোষণের জন্য মূল ও মূলরোমের কাজ ও পাতার ত্বকেও ক্লোরোফিল থাকে, তাই পানির নিচে কম আলোতে ও কম CO-যুক্ত পরিবেশে জন হয় না। প্রয়োজনীয় সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে।
অধিকাংশ জলজ উদ্ভিদ অঙ্গজ উপায়ে বংশবৃদ্ধি করে থাকে (কারণ পরাগায়ন অনিশ্চিত)। প্রস্বেদন হার কম কারণ পানি শোষণের জন্য প্রস্বেদনের টান দরকার হয়না। প্রাণীর জলজ অভিযোজন (Aquatic adaptation of animals) কিনিতে বসবাসকারী প্রাণিদের জলজ প্রাণী বলে। জলজ পরিবেশে বসবাস করার জন্য প্রাণীর যে গঠনগত  শারীরবীয় ও আচরণগত পরিবর্তন ঘটে, তাদের সামগ্রিকভাবে জলজ অভিযোজন বলা হয়। মুধরনের হতে পারে-প্রাথমিক বা মুখ্য এবং সেকেন্ডারি বা গৌণ। জলজ অভিযোজন কাজ ও পাতার বায়ু কুঠুরীতে বায়ু জমা থাকায় শ্বসন ও সালোকসংশ্লেষণের অসুবিধা হয় না।

যে সব প্রাণী জলচর পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভুত হয়ে আজীবন পানিতেই রাস করেছে, কখনও ডাঙ্গায় বাস করেনি সে সব প্রাণীর অভিযোজন হচ্ছে মুখ্য জলজ অভিযোজন, যেমন- মাছ। অন্যদিকে যে সব প্রাণী ভূচর (অর্থাৎ স্থলচর, যেমন - ভূপান্তর, ভূগর্ভচর, বৃক্ষচর, খেচর প্রভৃতি) 
পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়ে বিবর্তনের গতিপথে কোনো কারণে জলচর হতে বাধ্য হয়েছে সে সব প্রাণীর অভিযোজন হচ্ছে গৌণ জলজ অভিযোজন। যেমন - তিমি, কাছিম, কুমির, জলহস্তি প্রভৃতি ।

* মুখ্য জলজ অভিযোজন : মাছ হচ্ছে মুখ্য জলচর প্রাণীর প্রধানতম উদাহরণ। পানিতে দ্রুত সাঁতার কাটতে যেন অসুবিধা না হয়, সে কারণে মাছের দেহ মাকু আকৃতির। কিন্তু সামুদ্রিক মাছ ছাড়া অধিকাংশ মাছ দ্বিপার্শ্বীয় চাপা। দেহপেশির তরঙ্গায়িত আন্দোলনে মাছ সাতার কাটে। ভারসাম্য রক্ষা ও চলনে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন পাখনা সহযোগিতা করে। শ্বসনের জন্য দ্রবীভূত গ্যাসীয় বিনিময় ঘটাতে অপারকুলামে সুরক্ষিত ফুলকা অবস্থিত। অনেক মাছ দ্রুত উপরে উঠতে এবং ডুবে যেতে সহায়তা করতে বায়ুথলি (পটকা) বহন করে। পানির গুণাগুণ দূর থেকে বুঝতে দেহের দুপাশে পার্শ্বীয় রেখাতন্ত্র নামে গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক ও গ্রাহকইন্দ্রিয় রয়েছে।

* গৌণ জলজ অভিযোজন : স্থলচর প্রাণিদের কোনো ধারা বা সদস্য যখন বিবর্তনের গতিপথে পানিতে বংশপরম্পরায় জীবনযাপনে সক্ষম তখন ওদের অভিযোজনকে গৌণ জলচর অভিযোজন নামে অভিহিত করা হয়। কয়েক প্রজাতির ব্যাঙ, কাছিম, কুমির, সাপ, পাখি, তিমি, জলহস্তি, উট প্রভৃতি প্রাণী গৌণ জলজ অভিযোজন প্রদর্শন করে।

গৌণ জলজ অভিযোজনের মধ্যে রয়েছে : দেহের আকার ছিমছাম গড়নের। ঘাড়ের খাঁজ অনুপস্থিত, লেজ সুগঠিত, পিনা লুপ্তপ্রায়। গ্রীবাসঞ্চালন প্রায় অনুপস্থিত। ত্বক বহিঃকংকালবিহীন (লোম বা আঁইশবিহীন)। তুর্কীয় গ্ৰন্থি নেই বললেই চলে। পুরু চর্বিস্তর অবস্থিত। হাঁস, রাজহাঁস, ব্যাঙের পদগুলো লিপ্তপাদ। তিমি, ডলফিন-এ পশ্চাৎপদ লুপ্ত, অগ্রপদ জিপার বা প্যাডলে (flippers or paddle) রূপান্তরিত। তিমি সাঁতার ও ভারসাম্য রক্ষায় বিভিন্ন ধরনের পাখনাবিশিষ্ট । পাচ্ছিক পাখনার আন্দোলনে দেহ সামনে এগিয়ে চলে। কয়েক প্রজাতির তিমি সদস্য দাঁতবিহীন, কয়েক প্রজাতি দাঁতযুক্ত দাঁতবিহীনদের ব্যালীন প্লেট থাকে।

Content added By