একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র | NCTB BOOK

জীবগোষ্ঠীঃ

 একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে দলবদ্ধ বসবাসকারী এবং পারস্পরিক মিথক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের বংশধর সৃষ্টিকারী তথা জেনেটিক তথা বিনিময়কারী একই প্রজাতির জীবসমষ্টিকে জীবগোষ্ঠী বলে। যেমন - ধানক্ষেতে পঙ্গপাল, একটি পুকুরে কটকটি ব্যাঙ, একটি জমিতে আবাদকৃত নির্দিষ্ট ফসল (যেমন-ধান, গম, সরিষা) বা একটি গর্জন বন ইত্যাদি একেকটি জীবগোষ্ঠী। একটি জীবসম্প্রদায়ে (community) শক্তির সঞ্চারণে ও পুষ্ঠির চক্রাকার আবর্তনে জীবগোষ্ঠী গতিশীল একক হিসেবে কাজ করে। এটি স্বনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি এবং এর মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্রের স্থায়িত্ব নিয়ন্ত্রিত হয়।

জীবগোষ্ঠীর বৈশিষ্টঃ

পরিবেশের একক হিসেবে জীবগোষ্ঠীর মাধ্যমে শক্তি সঞ্চারিত ও চক্রাকারে আবর্তিত হয়। সুস্থ, স্বনিয়ন্ত্রিত, গতিশীল জীবগোষ্ঠীর মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্রের স্থায়িত্ব অটুট থাকে। জীবগোষ্ঠীর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে আলোচনা করা হলো।

১. ঘনত্ব (Density) কোন নির্দিষ্ট সময়ে প্রতি একক স্থানে বসবাসকারী কোন প্রজাতির মোট সংখ্যাকে জীবগোষ্ঠীর ঘনত্ব বলে । জীবগোষ্ঠীর ঘনত্ব সর্বদা পরিবর্তনশীল। বিভিন্ন স্থানে এবং বিভিন্ন সময়ে জীবগোষ্ঠীর ঘনত্বের পরিবর্তন ঘটে । জীবগোষ্ঠীর ঘনত্ব নির্ভর করে জীবের জন্মহার, মৃত্যুহার, অভিপ্রয়ান (migration) ইত্যাদির উপর। 

২. জন্মহার বা ন্যাটালিটি (Birth rate or Natality) : (একক সময়ে একটি পপুলেশনে যে হারে নতুন সদস্যের

সংযোজন ঘটে তাকে জন্মহার বা ন্যাটালিটি বা পোটেনসিয়াল ন্যাটালিটি (potential natality) বলে) ৩. মৃত্যুহার বা মর্টালিটি (Death rate or Mortality) : (একক সময়ে একটি পপুলেসনের সদস্যদের যে হারে মৃত্যু ঘটে তাকে মৃত্যুহার বলে। জন্মহারের মতো মৃত্যুহারও পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান (যথা-ঝড়, বন্যা, খরা ইত্যাদি) দ্বারা প্রভাবিত হয়।

৪. বয়সের বন্টন (Age Distribution) ((একটি জীবগোষ্ঠীতে নানা বয়স-শ্রেণিতে (age-class) জীবসদস্যের সংখ্যা বা শতকরা হারকে বয়সের বন্টন বলে। কোন জীবগোষ্ঠীতে জীবসদস্যদের বয়সের বন্টন গুরুত্বপূর্ণ । কারণ এটি জন্ম ও মৃত্যুহার উভয়কেই প্রভাবিত করে। মৃত্যুহার সাধারণত বয়সের সাথে পরিবর্তিত হয় এবং জীবনের প্রথম ও শেষ দিকে মৃত্যুর হার হয় সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে উচ্চশ্রেণির জীবের ক্ষেত্রে মধ্য বয়সেই তাদের জন্ম দানের হার সবচেয়ে "বেশি। জীবগোষ্ঠীর একক সদস্যদেরকে প্রজননপূর্ব, প্রজননক্ষম ও প্রজননউত্তর এ তিনভাগে ভাগ করা যায়। —৫. জীবগোষ্ঠীর বৃদ্ধি (Population Growth) : জীবগোষ্ঠীর হ্রাস-বৃদ্ধি একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। জীবগোষ্ঠীর অভ্যন্তরে সদস্য সংখ্যা বাড়লে ( জন্মগ্রহণ ও বাইরে থেকে আগমন ঘটলে) জীবগোষ্ঠীর আকারও বড় হয়। পরিবেশে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান সদস্যসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত জীবগোষ্ঠীরও বৃদ্ধি ঘটে।

৬. জীবগোষ্ঠীর ভারসাম্য (Population Equilibrium) : একটি জীবগোষ্ঠী বৃদ্ধির সময় প্রথম দিকে দ্রুত বাড়ে। প্রারম্ভিকভাবে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ বৃদ্ধি একই মাত্রায় দীর্ঘকাল ধরে রাখতে জীবগোষ্ঠী সচেষ্ট থাকে। এলাকার বহনক্ষমতা (carrying capacity) যদি ঠিক থাকে, জীবের জন্যে ক্ষতিকারক উপাদান যদি অপসারিত হয় তাহলে জীবগোষ্ঠীর ভারসাম্য রক্ষিত হবে। তখন জন্ম ও মৃত্যুহার সমান হবে। এ অবস্থায় জননহার কম-বেশি হতে পারে কিন্তু বুদ্ধিহার যতদিন পর্যন্ত মৃত্যুহারের সমান থাকবে জীবগোষ্ঠীর ভারসাম্যও ততদিন সুরক্ষিত থাকবে।

৭. জীবগোষ্ঠীর বিস্তারণ (Population Dispersal) : যখন একটি জীবগোষ্ঠীর সদস্যরা জীবগোষ্ঠী অধিকৃত এলাকার ভেতরে প্রবেশ করে কিংবা ঐ এলাকা ছেড়ে অন্য জীবগোষ্ঠীর এলাকায় একক জীব হিসেবে বা জননশীল অংশ (যেমন জীব, রেণু, লার্ভা ইত্যাদি) হিসেবে অনুপ্রবেশিত হয় তখন এ চলনকে জীবগোষ্ঠীর বিস্তারণ বলে। জীবগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে আহার-আলো-পানিজনিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়াতে, আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে, শারীরবৃত্তিক কারণে, জনন বৈশিষ্ট্যের জন্য, শিকারী জীবের হাত থেকে বাঁচার জন্য জীবগোষ্ঠীর সদস্যরা সবসময় অনুকূল পরিবেশের সন্ধানে থাকে। এভাবে নতুন নতুন এলাকা জীববৈচিত্রের সমাহারে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে।

৮. সীমিতকরণ (Growth Regulation) : প্রত্যেক জীবগোষ্ঠীর বৃদ্ধির নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে ঐ জীবগোষ্ঠীর বৃদ্ধি থেমে যায় এবং বৃদ্ধির হারও কমতে থাকে। পরিবেশিক বিভিন্ন উপাদান এ বৃদ্ধির হারকে সীমিত রাখতে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। আবার কোন জীবগোষ্ঠী অন্য একটি জীবগোষ্ঠী দিয়ে প্রতিস্থাপিত হতে পারে। এভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে।

পপুলেশন বণ্টনে প্রভাবকসমূহঃ

১. জলবায়ু : পানি, আর্দ্রতা, সূর্যালোক, তাপমাত্রা, বায়ুর গতিবেগ, বৃষ্টিপাত ইত্যাদি পপুলেশনের সার্বিক গঠনে, ভূমিকা রাখে ।

২. ভূ-সংস্থান : ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা, অক্ষাংশ বিভিন্ন অরণ্যের পপুলেশন তৈরি করে। যেমন-হিমালয়ের বিভিন্ন উচ্চতায় বিভিন্ন উদ্ভিদ জন্মে। 

৩. মৃত্তিকা : মাটির প্রকৃতি, মাটির পানি, তাপমাত্রা, মৃত্তিকার বায়ু, খনিজ লবণ উদ্ভিদ পপুলেশন গঠনে ভূমিকা রাখে ।

৪. জীবজ প্রভাবক : বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীব, পরজীবী, পরাশ্রয়ী জীব পরস্পর সহাবস্থান করে এবং এদের পারস্পরিক ক্রিয়া নির্দিষ্ট পপুলেশন তৈরিতে মিথস্ক্রিয়া সৃষ্টি করে।

Content added By

Promotion