নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা - সত্তরের নির্বাচন এবং মুক্তিযুদ্ধ | NCTB BOOK

আমরা জানি, আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ। তবে, সংবিধান অনুযায়ী নাম হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ । এই নামেরও একটা ইতিহাস আছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের নামের সঙ্গে ভূখণ্ডের সীমানার সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আর নানা সময়ে এর সীমানারও বদল হয়েছে ।

প্রাচীনকালে আমাদের বাংলাদেশ নানা জনপদে বিভক্ত ছিল । তা এই গ্রন্থের শুরুর দিকে আলোচনা করা হয়েছে । মহাভারত এবং গ্রিক ঐতিহাসিক টলেমির লেখায় ‘বাংলা' নামের উল্লেখ পাওয়া যায় । তার অনেক পরে ১৩৪২ খ্রিষ্টাব্দে শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহ সর্বপ্রথম বাংলার তিনটি প্রধান কেন্দ্র লখনৌতি বা লক্ষণাবতী (গৌড়), সাতগাঁও (রাঢ়) ও সোনারগাঁ (বঙ্গ)-কে একত্র করে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । এর স্বাধীনতা ২০০ বছর স্থায়ী হয়েছিল । ইলিয়াস শাহের উপাধি ছিল 'শাহ-ই-বাঙ্গালাহ', 'শাহ-ই-বাঙ্গালিয়ান’, ‘সুলতান-ই- বাঙ্গালাহ'। আর তখন থেকে সমগ্র বাংলা অঞ্চল ‘বাঙ্গালাহ' নামে পরিচিতি লাভ করে । মুঘল আমলে সম্রাট আকবরের সময় থেকে বাংলার পরিচয় হয় ‘সুবাহ বাংলা' নামে । তবে, ইউরোপীয়রা বিশেষভাবে পর্তুগিজরা ‘বেঙ্গালা' নামে অভিহিত করেছে এই অঞ্চলকে এবং ইংরেজরা বলত ‘বেঙ্গল' ।

ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে বাংলা নামে পৃথক প্রদেশ করা হয় । বাংলার অধীনে ছিল বিহার, উড়িষ্যা এবং ছোট নাগপুর । পরে ১৯০৫ সালে বর্তমান বাংলাদেশ ও ভারতের আসাম নিয়ে ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম' নামে নতুন প্রদেশ গঠন করা হয় । আন্দোলনের মুখে ৬ বছর পরে বঙ্গভঙ্গ বাতিল করে ইংরেজ সরকার । ১৯৪৭ সালে ইংরেজ শাসনের অবসান হলে পশ্চিমবঙ্গ ভারতে আর পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয় । পাকিস্তান আমলেও আজকের বাংলাদেশ ‘পূর্ববঙ্গ' নামেই পরিচিত ছিল । পাকিস্তান সরকার পূর্ববঙ্গ পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান নামকরণ করলে বঙ্গবন্ধু এর বিরোধিতা করেন । বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলা নামের দীর্ঘ ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে । তাই বাংলার নাম পরিবর্তনের পূর্বে গণভোটের মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষের মতামত গ্রহণ করতে হবে । ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে সগৌরবে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ।

Content added By