নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা - সামরিক শাসন ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ (১৯৭৫-১৯৯০) | NCTB BOOK

বিচারপতি সায়েমের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের পরের দিন ৭ই নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটে যায় । জিয়াউর রহমান গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় টেলিফোনে কর্নেল তাহেরকে অনুরোধ করেন তাঁকে মুক্ত করার জন্য । বীর মুক্তিযোদ্ধা তাহের মুক্তিযুদ্ধে বোমার আঘাতে একটি পা হারান । জিয়া জানতেন জওয়ানদের মধ্যে তাহেরের বাম রাজনীতির অনেক সমর্থক ছিল । রাজনৈতিক সমর্থনের জন্য তাহের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকেও এই অভ্যুত্থানে সম্পৃক্ত করেন । এটি সামরিক বাহিনী ও বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত অধ্যায় । পরিকল্পনা মোতাবেক ৬ই নভেম্বর মধ্যরাতে তাহেরের নেতৃত্বে খালেদ মোশাররফের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান শুরু হয় । সৈন্যরা জিয়াকে গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করে আনলে জিয়া কর্নেল তাহেরকে বুকে জড়িয়ে তার প্রাণ বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ জানান । কোনো বাধা ছাড়াই সৈন্যরা জিয়াকে সেনাবাহিনীর প্রধান ঘোষণা করে।

জিয়ার ক্ষমতায় ফিরে আসার মধ্য দিয়ে মোশতাকও আশা করেছিলেন তিনি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হবেন । কিন্তু, জিয়ার সমর্থনের অভাবে মোশতাক ক্ষমতার কেন্দ্রে আর আসতে পারলেন না, রাষ্ট্রপতির পদও ফিরে পেলেন না । বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি পদে বিচারপতি সায়েম থাকলেও প্রকৃত ক্ষমতা ছিল সেনানিবাসে ; সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়ার হাতে। যে কারণে বিচারপতি সায়েম তাঁর সময়ে কোনো সিদ্ধান্তই স্বাধীনভাবে গ্রহণ করতে পারেননি। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তা রক্ষা করতে পারেননি। ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল জিয়াউর রহমান বলপূর্বক আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতির পদ দখল করে নেন। অবশ্য এর অনেক পূর্বেই সায়েমের সরকার অকার্যকর হয়ে পড়ে । নির্বাচন আয়োজনের জন্য তিনি বিচারপতি সাত্তারকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করার। কিন্তু সাত্তার নির্বাচন আয়োজনে আগ্রহী ছিলেন না, বরং তিনি মেজর জেনারেল জিয়াকে ইন্ধন জুগিয়েছেন ক্ষমতা দখলে । প্রতিদান দিতেও জিয়া কার্পণ্য করেননি । সাত্তারকে তিনি উপরাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

Content added By