নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা - সামরিক শাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন (১৯৫৮ - ১৯৬৯) | NCTB BOOK

১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান জন্ম নিলে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে তাদের মাঝে বৈরিতার সূত্রপাত হয় । ভারত ও পাকিস্তান- উভয়ই কাশ্মীরকে তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করত । ১৯৪৭ সালেই তাদের মাঝে কাশ্মীর নিয়ে প্রথম যুদ্ধ বাধে । কিন্তু জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে তার অবসান হয়। কাশ্মীরকে নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বাধে ১৯৬৫ সালে । আইয়ুব খানের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল ভারত আক্রমণ করে কাশ্মীর দখল করা। ১৯৬৫ সালে কাশ্মীরি নেতা শেখ আবদুল্লাহকে গ্রেফতার করা হলে ভারতের কাশ্মীরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে । আইয়ুব খান এ সুযোগ গ্রহণ করেন। প্রথমে সশস্ত্র গেরিলাদের কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করিয়ে গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করেন।  অবশেষে ৬ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তান বাহিনী ভারত আক্রমণ করলে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়।

যুদ্ধের শুরু থেকেই ভারতীয় বাহিনী প্রাধান্য দেখিয়ে লাহোরের দিকে এগিয়ে যায় । পাকিস্তানিদের এই চরম দুর্দিনে বাঙালি সেনারা অসীম সাহসের সাথে যুদ্ধ করে লাহোর রক্ষা করেন । পাকিস্তানের শোচনীয় অবস্থার মুখে পাশ্চাত্য শক্তি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের হস্তক্ষেপে ১৭ দিনের মাথায় যুদ্ধ বন্ধ হয়। ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি মাসে সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী কোসিগিনের মধ্যস্থতায় তাসখন্দ শহরে ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । এর মধ্য দিয়ে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের অবসান হয় । এ যুদ্ধের ফলে পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুববিরোধী চেতনা প্রবলভাবে জাগ্রত হয়। কারণ যুদ্ধে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পূর্ব পাকিস্তানের কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। অরক্ষিত এ অঞ্চল যেকোনো সময় ভারতের আক্রমণের শিকার হতে পারত । এমনকি এ সময় প্রশাসনিক দিক থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বাঙালি সেনারা জীবন বাজি রেখে লাহোর রক্ষা করলেও আইয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেননি।

Content added By