নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ব্যবসায় উদ্যোগ - NCTB BOOK

ব্যবসায়ের প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করলে সাফল্য সহজতর হয় এবং ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা কমে আসে। অনেকে উৎসাহের সাথে ব্যবসায় শুরু করলেও সুষ্ঠু ব্যবসায় পরিকল্পনার অভাবে অনেক সময় সফল হতে পারে না। এ অধ্যায়ে আমরা মূলত ব্যবসায় পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করব।

এ অধ্যায় শেষে আমরা-

  • ব্যবসায় পরিকল্পনার ধারণা ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • প্রকল্প পরিকল্পনার ধারণা ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • প্রকল্প প্রণয়নের ধাপগুলো বর্ণনা করতে পারব।
  • ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণের বাছাই পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সঠিক ব্যবসায়টি নির্বাচন করতে পারব।
  • প্রকল্প পরিকল্পনার কাঠামো ছক তৈরি করতে পারব।
  • আত্ম-বিশ্লেষণের ধারণা ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • আত্ম-বিশ্লেষণ পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করতে পারব।
Content added || updated By
ক. পণ্যের চাহিদা থেকে
খ. উদ্যোক্তার আগ্রহ দ্বারা
গ. কারিগরি শিক্ষা দ্বারা
ঘ. নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে
সিদ্ধান্ত গ্রহণ
সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশণা
ধারণা
মূল্যায়ন

ব্যবসায় পরিকল্পনা হলো ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের প্রতিচ্ছবি। এটি একটি লিখিত দলিল যার মধ্যে ব্যবসায়ের লক্ষ্য, প্রকৃতি, ব্যবস্থাপনার ধারা, অর্থায়নের উপায়, বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত উন্নয়নের সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়। কোন ব্যবসায় কোন দিকে অগ্রসর হবে ও কীভাবে ব্যবসায়ের সাফল্য অর্জন করা যাবে তার সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা ব্যবসায় পরিকল্পনায় পাওয়া যায়। জাহাজ বা উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে রাডার যেমন চালককে পথ চলার নির্দেশনা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করে, তেমনি ব্যবসায় পরিকল্পনা কোনো ব্যবসায়ীকে তার কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করে। নতুন ব্যবসায় শুরু করা অথবা বর্তমান ব্যবসায় সম্প্রসারণ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবসায় পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়। ব্যবসায় পরিকল্পনাকে ভ্রমণকারীর জন্য রোড ম্যাপ এবং একজন দালান নির্মাতার নীল-নকশার সাথে তুলনা করা যেতে পারে।

Content added By

ব্যবসায় শুরু, সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও এর অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ব্যবসায় পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যবসায় পরিকল্পনার প্রধান প্রধান গুরুত্ব নিম্নরূপ-

১. ব্যবসায় পরিচালনার দিক-নির্দেশনা : ব্যবসায় পরিকল্পনায় ব্যবসায়ের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কখন, কী কাজ, কীভাবে এবং কত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকে। ফলে এটি ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তার কাছে একটি দিকনির্দেশক দলিল হিসেবে কাজ করে।

২. মূলধন সংগ্রহ ও বিনিয়োগ : কোনো ব্যবসায়ের যখন অধিক মূলধনের প্রয়োজন দেখা দেয় এবং উদ্যোক্তার পক্ষে নিজস্ব তহবিল থেকে এ মূলধন যোগাড় করা সম্ভব হয় না, তখন তাকে ব্যাংক ঋণ বা অন্যান্য বাহ্যিক উৎস থেকে মূলধন সংগ্রহ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ঋণদাতা ও বিনিয়োগকারী মূলধন সরবরাহ করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় পরিকল্পনাটি বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

৩. সরকারি সুযোগ-সুবিধার সদ্ব্যবহার : ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়গুলো সরকারের নিকট থেকে অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। ব্যবসায় পরিকল্পনা ঐ সকল সুযোগ-সুবিধা পেতে সাহায্য করে।

৪. সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা : ব্যবসায়ের প্রতিযোগী সম্পর্কে ধারণা করা, আগামী দিনে ব্যবসায়ে কোন দিকে সম্প্রসারণ করা উচিত হবে এবং কোন ব্যবসায়টি অধিকতর লাভজনক হবে এবং ভবিষ্যতে কী পণ্য উদ্ভাবন করা উচিত ইত্যাদি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যবসায় পরিকল্পনা সহায়তা করে। উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়া ব্যবসায়ের সাথে জড়িত অন্যান্য পক্ষ প্রয়োজনে ব্যবসায় পরিকল্পনা অধ্যয়ন করে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।

Content added By

ব্যবসায়ের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে সঠিক প্রকল্প নির্বাচনের উপর। প্রকল্প হচ্ছে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে, নির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রণীত পরিকল্পিত ও সুচিন্তিত কর্ম পদ্ধতি। প্রকল্প একটি নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয়ে পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী পরিসমাপ্ত হয়। একটি প্রকল্প হতে পারে সম্পূর্ণ নতুন বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত অথবা পুরাতন ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ। ব্যবসায় প্রকল্প প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হলো ধারণা চিহ্নিতকরণ এবং ধারণাগুলো মূল্যায়ন করে একটিকে নির্বাচন করা।

১. প্রকল্প ধারণা চিহ্নিতকরণ

একজন সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তার প্রকল্প চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয় তার প্রকল্প ধারণা অনুভব করার সময় থেকেই। তিনি তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে কোনো পণ্য বা সেবার চাহিদা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারেন। এই চাহিদার উপর প্রকল্প নির্বাচন নির্ভর করে। সাধারণত পণ্য বা সেবা সামগ্রীর চাহিদা প্রকল্প ধারণার জন্ম দেয়। পণ্যের ধারণা থেকেই প্রকল্পের সূত্রপাত হয়। প্রকল্প ধারণা চিহ্নিত করার সময় উদ্যোক্তার নিজের শখ বা আগ্রহ আছে এমন পণ্য, প্রকৃত চাহিদা আছে এমন পণ্য, বিদ্যমান পণ্যের অসুবিধা, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ ইত্যাদি দিকে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। নতুন প্রকল্প ধারণাগুলোর উৎসসমূহ হলো সাধারণত নিজের কল্পনা, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রকাশনা, অর্থনৈতিক ও শিল্প জরিপ প্রতিবেদন, গবেষণামূলক প্রতিবেদন ইত্যাদি।

২. ধারণা মূল্যায়ন ও প্রকল্প নির্বাচন

একজন উদ্যোক্তা বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে কয়েকটি সম্ভাব্য ধারণা চিহ্নিত করে একটি তালিকা করবেন। এ তালিকাবদ্ধ ধারণাগুলো বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে মূল্যায়ন করে ব্যবসায় প্রকল্প নির্বাচন করবেন। দুইটি পদ্ধতির মাধ্যমে চিহ্নিত ধারণাগুলো মূল্যায়ন করে প্রকল্প নির্বাচন করা যায়। এর একটি হলো ম্যাক্রোস্ক্রিনিং এবং অন্যটি হলো মাইক্রোস্ক্রিনিং।

ক. ম্যাক্রোস্ক্রিনিং (Macro-Screening) ম্যাক্রোস্ক্রিনিং হলো এমন একটি পদ্ধতি যা কতকগুলো প্রভাবক বা উপাদানের ভিত্তিতে ব্যবসায়ের ধারণাগুলো মূল্যায়ন করে একটি প্রকল্প ধারণা নির্বাচন করতে সহায়তা করে। সকল ব্যবসায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি উদ্যোক্তার নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কতিপয় উপাদান দ্বারা কম-বেশি প্রভাবিত হয়। এ প্রভাবকগুলো হলো জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আইনগত পরিবেশ।

  • জনসংখ্যা : একটি ব্যবসায়ের অস্থিত্ব, প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতি যে এলাকায় ব্যবসায়টি অবস্থিত সে এলাকার জনগোষ্ঠীর উপর নির্ভর করে। ব্যবসায় কর্তৃক প্রস্তুতকৃত পণ্য বা সেবা সামগ্রীর বাজারের আকার, বর্তমান জনসংখ্যা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ও জন্ম-মৃত্যু দ্বারা প্রভাবিত হয়।
  • অর্থনৈতিক পরিবেশ : পণ্য বা সেবার চাহিদা ব্যবসায়টির চারদিকে বসবাসকারী ভোক্তাদের আয়, সঞ্চয়, খরচ করার প্রবণতা, জীবন যাত্রার মান ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত। প্রকল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এগুলোর প্রভাব যথাযথভাবে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
  • প্রাকৃতিক পরিবেশ : সঠিক ব্যবসায় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিরাট ভূমিকা পালন করে। শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে আসে। তবে যে সব শিল্প কারখানা পরিবেশকে দূষণ করে সে সব ব্যবসায় পরিত্যাজ্য।
  • রাজনৈতিক পরিবেশ : রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের দর্শন ও রাজনীতিবিদদের আচরণ ব্যবসায় কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে।
  • সাংস্কৃতিক পরিবেশ : শিক্ষার হার, কারিগরি শিক্ষার প্রসার, সামাজিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবসায় প্রকল্প নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
  • আইনগত পরিবেশ : দেশের প্রচলিত আইন, ব্যবসায় ও শিল্পনীতি ব্যবসায়-বাণিজ্য প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

 

ম্যাক্রোস্ক্রিনিং-এর মাধ্যমে প্রকল্প নির্বাচন একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ। চূড়ান্তভাবে প্রকল্প নির্বাচনের জন্য প্রকল্পটির যথার্থতা আরো নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য মাইক্রোস্ক্রিনিং-এর সাহায্য নেয়া প্রয়োজন হয়।

খ. মাইক্রোস্ক্রিনিং (Micro-Screening):

মাইক্রোস্ক্রিনিং হলো বাজার চাহিদা, কারিগরি, বাণিজ্যিক ও আর্থিক দিক এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান ইত্যাদি দিক বিবেচনা করে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করার বিস্তারিত প্রক্রিয়া। নিচে মাইক্রোস্ক্রিনিং-এর উপাদানগুলো ব্যাখ্যা করা হলো।

  • বাজার চাহিদা : বাজার জরিপ ও গবেষণার মাধ্যমে পণ্যের চাহিদা, ক্রেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আগ্রহ, বাজারে প্রতিযোগীদের সংখ্যা এবং পণ্য বা সেবার সুযোগ-সুবিধা যথার্থভাবে যাচাই করা হয়।
  • কারিগরি দিক : প্রকল্পের কারিগরি দিক যাচাই করা হয় প্রযুক্তিগত ও যান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে। এ ধরনের কাজের মধ্যে রয়েছে উৎপাদন প্রক্রিয়া, প্রযুক্তি নির্ধারণ, যন্ত্রপাতি নির্বাচন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সহজসাধ্যতা ইত্যাদি।
  • বাণিজ্যিক দিক : প্রকল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে উক্ত প্রকল্পের বাণিজ্যিক লাভজনকতা নির্ধারণ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচের উপাদান, বিক্রয় মূল্য, আনুমানিক লাভ ইত্যাদি বিষয় খুব সতর্কতার সাথে বিবেচনা করতে হয়।
  • আর্থিক দিক : এ ক্ষেত্রে প্রকল্পের ব্যয় নিরূপণ, অর্থায়নের উপায়, মূলধন বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত সম্ভাব্য লাভ ইত্যাদি হিসেব করে প্রকল্প বাছাই করতে হয়।
  • জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান: জাতীয় অর্থনীতিতে প্রকল্পটি কীভাবে অবদান রাখবে তাও পরীক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। অর্থনীতিতে অবদান যাচাই করার মাপকাঠি হলো কর্মসংস্থানের সুযোগ, জাতীয় কোষাগারে কর প্রদানের পরিমাণ ইত্যাদি।

আলোচ্য দৃষ্টিকোণ থেকে যে প্রকল্পটি সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ও লাভজনক তাই বিনিয়োগের জন্য নির্ধারণ করা হয়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ক্ষুদ্র সেবামূলক ব্যবসায়, কেনা-বেচা ও অন্যান্য খুচরা ব্যবসায় প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান বিবেচনা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে মাঝারি ও বৃহৎ ব্যবসায়, যেমন ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদনমুখী ব্যবসায়ের প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে ম্যাক্রো ও মাইক্রো উভয় প্রকার স্ক্রিনিং আবশ্যক ।

৩. ব্যবসায় প্রকল্প প্রতিবেদন প্রণয়ন

ব্যবসায় প্রকল্প প্রণয়নের শেষ ধাপ হলো একটি সুন্দর প্রতিবেদন তৈরি করা। নির্বাচিত প্রকল্পটির সম্ভাবনা যাচাইয়ের তথ্যগুলোর উপর ভিত্তি করেই প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়।

Content added || updated By

একটি ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন করার সময় যত্নশীল হওয়া আবশ্যক। শিল্পোদ্যোক্তা নিজে অথবা অন্য কোনো বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে পারে। একটি সুষম ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় নিম্নে বর্ণিত গাইডলাইনগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।

  • ব্যবসায় পরিকল্পনা যতটুকু সম্ভব সংক্ষিপ্ত এবং শব্দ-বাহুল্য বর্জিত হওয়া বাঞ্ছনীয়।
  • পণ্য ও বাজারের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের লক্ষ্য দু-একটি পণ্য বা অঞ্চলের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা উচিত ।
  • ব্যবসায়ের ব্যবস্থাপনা দলে অপরিচিত ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয়।
  • কোনো পণ্যকে এমন টেকনিক্যাল শব্দ দ্বারা বর্ণনা করা উচিত নয় যা কেবল বিশেষজ্ঞরা বুঝতে পারেন কিন্তু অন্যদের পক্ষে বোঝা কঠিন হয়।
  • বাস্তবসম্মত উৎপাদনের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে বিক্রয়ের পরিমাণ হিসাব করতে হবে। অত্যন্ত সাবধানতার সাথে বিক্রয় হিসাব রাখা উচিত।
  • অস্পষ্ট তথ্যের উপর ভিত্তি করে ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন করা উচিত নয়।
  • ব্যবসায় সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা বর্তমান ও ভবিষ্যতে উদ্ভব হতে পারে, এমন সমস্যার আলোচনা ব্যবসায় পরিকল্পনায় থাকা আবশ্যক।
  • ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়নকালে ব্যবস্থাপনা টিমের সকল সদস্যকে জড়িত করা এবং প্রয়োজনবোধে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
Content added By

ব্যবসায়ের আকার, প্রকৃতি, ধরন ভেদে ব্যবসায় পরিকল্পনার বিষয়বস্তু ভিন্ন হতে পারে। তবে একটি ব্যবসায় পরিকল্পনায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো থাকে।

১. ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নাম।

২. ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা।

৩. উদ্যোক্তা বা উদ্যোক্তাগণের নাম।

৪. উদ্যোক্তা বা পরিচালকবৃন্দের পরিচিতি।

৫. ব্যবসায়ের ধরন (একমালিকানা, অংশীদারি বা যৌথ মূলধনী ব্যবসায়

৬. ব্যবসায় পরিচালনার ধরন (একক ব্যবস্থাপনা, অংশীদারি ব্যবস্থাপনা বা যৌথ ব্যবস্থাপনা)

৭. মূলধনের পরিমাণ

৮. বাজার জরিপের সংক্ষিপ্ত বিবরণ (বাজারের আকার, ভবিষ্যৎ অগ্রগতির সম্ভাবনা, বাজার প্রবেশের কৌশল, পণ্যের মূল্য নির্ধারণ)

৯. মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা (মুনাফা অর্জনের বর্তমান লক্ষ্য, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য অর্জনের দিক-নির্দেশনা)

১০. প্রাক্কলিত আর্থিক বিবরণীর সংযুক্তি :

ক. মোট প্রকল্প ব্যয়

খ. প্রাক্কলিত আয়

গ. প্রাক্কলিত ব্যয়সমূহ

ঘ. প্রাক্কলিত আয়-ব্যয় বিবরণী

ঙ. প্রাক্কলিত উদ্বৃত্তপত্র

চ. প্রাক্কলিত নগদানপ্রবাহ বিবরণী

ছ. সম-আয় ব্যয় বিবরণী।

Content added || updated By

সুষ্ঠুভাবে ব্যবসায় পরিচালনার জন্য ব্যবসায় উদ্যোক্তার নগদানপ্রবাহ বিবরণী প্রাক্কলন করা প্রয়োজন। এই বিবরণী দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এ বিবরণীতে নির্দিষ্ট সময়ে কী পরিমাণ নগদ আসছে এবং কী পরিমাণ ব্যয় হচ্ছে তা সংরক্ষণ করা হয়। নগদানপ্রবাহ বিবরণী তৈরি করার ফলে উদ্যোক্তা তার ব্যবসায়ের নগদের প্রকৃত অবস্থা জানতে পারে ।

Content added By

সম আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ ব্যবসায়ের এমন একটি অবস্থাকে বোঝায় যখন আয়-ব্যয় সমান হয়। অন্য কথায় বলা যায়, এটি ব্যবসায়ের এমন রকম পর্যায় যখন লাভও হয় না, ক্ষতিও হয় না। আরো পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, যে পরিমাণ পণ্য বিক্রয় করলে মোট বিক্রয়মূল্য, মোট ব্যয়ের সমপরিমাণ হয় তাকে সম আয়-ব্যয় বলে। যে বিন্দুতে পণ্য বিক্রয় করলে আয়-ব্যয় সমান হয় তাকে সম আয়-ব্যয় বিন্দু (Break Even point) বলে। সম আয়-ব্যয় বিন্দু জানা থাকলে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জনের আশায় পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণ, বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি, মুনাফা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও মুনাফা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করা যায়। উদাহরণ: ৫০০০ ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করে বিক্রয় করলে একজন ব্যবসায়ীর লাভ বা ক্ষতি হয় না । কিন্তু ৫০০০ এর উপর ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করে বিক্রয় করলে তার লাভ হবে । অন্যদিকে ৫০০০ এর কম ব্যাট তৈরি করে বিক্রয় করলে তার ক্ষতি হবে । এক্ষেত্রে ৫০০০ ব্যাট উৎপাদন হলো সম আয় ব্যয় বিন্দু ।

Content added By

যে কোনো ব্যক্তির ব্যবসায় শুরু করার পূর্বে তার ব্যবসা করার সক্ষমতা আছে কিনা যাচাই করা প্রয়োজন। এর প্রধান কারণ হলো ব্যবসায়ে সাফল্য লাভ বা অকৃতকার্য হওয়ার ঝুঁকি আছে। ফলে ব্যবসায় শুরু করার পূর্বে সক্ষমতা যাচাই করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। ব্যবসায় সক্ষমতা যাচাই একটি জটিল বিষয়।

নিম্নের কর্মপত্রটি সততার সাথে পূর্ণ করলে একজন নতুন উদ্যোক্তা অনুধাবন করতে পারবে তার মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার গুণাবলি আছে কিনা।

ক্রমিক প্রশ্ন হ্যাঁ (১) না (0)

তুমি কি একটি ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পার ?

   
তুমি কি যেকোনো বিষয়ে সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পার এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও সে সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পার ?    
তুমি কি দায়িত্ব নিতে এবং নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী ?    
তুমি যাদের সাথে থাক তারা কি তোমাকে বিশ্বাস ও সম্মান করে ?    
তোমার কি পরিপূর্ণ শারীরিক সুস্থতা রয়েছে?    
তুমি কি একনাগাড়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে পারদর্শী ?    
তুমি কি অন্যদের সাথে মিশতে ও কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ কর ?    
তুমি কি কার্যকরভাবে অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে এবং তোমার লক্ষ্য পূরণে তাদেরকে প্রভাবিত করতে পার ?    
অন্যরা কি সহজেই তোমার চিন্তা চেতনা ও ধারণা বুঝতে পারে ?    
১০ যে ধরনের ব্যবসা তুমি শুরু করতে চাও, সে ব্যবসা সম্পর্কে তোমার কি
ব্যাপক ধারণা আছে ?
   
১১ ব্যবসার আনুষঙ্গিক ব্যাপার যেমন হিসাব রক্ষণ, আয়কর ইত্যাদি ব্যাপারে
তোমার কি ধারণা রয়েছে?
   
১২ বিপণন ও অর্থায়নে তোমার কি অভিজ্ঞতা এবং ধারণা রয়েছে?    
১৩ ব্যবসায় শুরু করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থের যোগান কি তোমার রয়েছে?    
১৪ ব্যবসায় শুরু করতে যে মালামাল প্রয়োজন সে ব্যাপারে কি তোমার ধারণা রয়েছে?    
১৫ তুমি কি সব কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে ব্যবসায় শুরু করতে চাও ?    

উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার পর প্রত্যেক হ্যাঁ বোধক উত্তরের জন্য ১ নম্বর এবং না বোধক উত্তরের জন্য ০ নম্বর দিবে। এরপর মোট কত নম্বর হলো তা বের করবে। তোমার মোট প্রাপ্ত নম্বর যদি হয় :
১২ বা তার বেশি তাহলে :         উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে ।
৭-১১ তাহলে :                          তোমার সম্ভাবনা এখনো পরিপূর্ণ নয় কিন্তু চেষ্টা করলে তুমি পারবে।
৭ এর নিচে, তাহলে :                উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যাপারে তোমার ইচ্ছাশক্তি তেমন তীব্র নয়।
অনেক ব্যক্তি উদ্যোক্তা হতে চাইলেও বাস্তব ক্ষেত্রে তাদের পর্যাপ্ত যোগ্যতা, দক্ষতা ও তীব্র বাসনা থাকে না, কিন্তু আশার কথা পরবর্তীতে এ অবস্থার পরিবর্তন হতেও পারে। তখন তুমিও একজন উদ্যোক্তা হতে পারবে।

Content added By
Please, contribute to add content into বহুনির্বাচনি প্রশ্ন.
Content
Please, contribute to add content into সৃজনশীল প্রশ্ন.
Content