নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - পদার্থবিজ্ঞান (পুরোনো সংস্করণ) - আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিকস(Modern Physics and Electronics) | NCTB BOOK

আমাদের বর্তমান সভ্যতাটির পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে ইলেকট্রনিকস, এটি মোটেও একটি অত্যুক্তি নয়। ইলেকট্রনিকসের ক্রমবিকাশকে আমরা মোটামুটি তিনটি অংশে ভাগ করতে পারব: ভ্যাকুয়াম টিউব, ট্রানজিস্টর এবং ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট। 

Content added By

1883 সালে এডিসন দেখেছিলেন লাইট বাল্বের ভেতরে ফিলামেন্ট থেকে অন্য একটি ধাতব প্লেটে ফাঁকা জায়গা দিয়েও বিদ্যুৎ পরিবহন হতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি এডিসন ক্রিয়া ( Edison Effect) নামে পরিচিত। 1904 সালে জন ফ্লেমিং এডিসন ক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে প্রথম দুই ইলেকট্রোডের একটি ভ্যাকুয়াম টিউব তৈরি করেন যেটি রেকটিফায়ার হিসেবে কাজ করত অর্থাৎ পরিবর্তনশীল বিদ্যুৎপ্রবাহকে একদিকে প্রবাহিত করত। এই ভ্যাকুয়াম টিউবটিকে ইলেকট্রনিকসের শুরু হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এই সময় রেডিও তরঙ্গ দিয়ে তথ্য আদান-প্রদানের কাজ শুরু হয়েছিল এবং গুগলিয়েলমো মার্কনির রেডিও তরঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য এই ধরনের একটি ভ্যাকুয়াম টিউবের খুব প্রয়োজন ছিল। (এখানে উল্লেখ্য যে রেডিওর আবিষ্কার হিসেবে এতদিন শুধু মার্কনির নাম উল্লেখ করা হলেও সাম্প্রতিক কালে বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর অবদানকেও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।) 

1906 সালে লি দ্য ফরেস্ট তৃতীয় একটি ইলেকট্রোড সংযোজন করে নতুন আরেকটি ভ্যাকুয়াম টিউব তৈরি করেন এবং সেটি ট্রায়োড নামে পরিচিতি লাভ করে। ট্রায়োড দিয়ে বৈদ্যুতিক প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করা যেত এবং সেটি অ্যামপ্লিফায়ার হিসেবে কাজ করতে পারত। প্রথমে মোর্সকোড দিয়ে টেলিগ্রাফ যোগাযোগ পরে টেলিফোনের মাধ্যমে কন্ঠস্বর আদান-প্রদান করার জন্য ভ্যাকুয়াম টিউবের উন্নতি হতে থাকে। প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য রাডার, যুদ্ধাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, নেভিগেশন ইত্যাদি কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিশেষায়িত ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার হতে থাকে। 1946 সালে 1800 আকুয়াম টিউব ব্যবহার করে ENIAC নামে প্রথম কম্পিউটার তৈরি করা হয়। 

Content added || updated By

1947 সালে বেল ল্যাবরেটরিতে প্রথম ট্রানজিস্টর তৈরি করা হয় এবং এই আবিষ্কারের জন্য জন বারডিন, ওয়াল্টার ব্রাটেইন এবং উইলিয়াম শকলিকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। এই ট্রানজিস্টর কত দ্রুত এবং কত ব্যাপকভাবে পুরো পৃথিবীকে পাল্টে দেবে সেটি তখনো কেউ অনুমান করতে পারেনি। 

ট্রানজিস্টর ভ্যাকুয়াম টিউবের মতোই কাজ করতে পারে কিন্তু ভ্যাকুয়াম টিউবের তুলনায় এটি অভি ক্ষুদ্র, ওজন খুবই কম, এটি ব্যবহার করতে খুব অল্প বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়, এটি অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য এবং সবচেয়ে বড় কথা এটি অনেক কম খরচে তৈরি করা সম্ভব। কাজেই ট্রানজিস্টর খুব দ্রুত ভ্যাকুয়াম টিউবকে সরিয়ে তার স্থান দখল করে নিতে শুরু করল এবং পৃথিবীর মানুষ স্বল্প মূল্যে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে তৈরি নানা ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি পেতে শুরু করল। 

Content added By

1952 এর দিকেই ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট সম্পর্কে আলোচনা শুরু হলেও সত্যিকারের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট তৈরি করা শুরু হয় ষাটের দশকে। পঞ্চাশের দশকে একটি সিলিকনের পাতলা প্লেটে (Wafer ) অসংখ্য ট্রানজিস্টর তৈরি করে সেগুলো কেটে আলাদা করে নেওয়া হতো। ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট তৈরি করার সময় এই প্রক্রিয়াটিকে আর একটুখানি এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছিল। তখন শুধু ট্রানজিস্টর তৈরি না করে তার সাথে ডায়োড কিংবা রেজিস্টর এবং ক্যাপাসিটর বসিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি সার্কিট তৈরি করা শুরু হয়। এর নাম দেওয়া হলো ইন্টিগ্রেডেট সার্কিট (আইসি IC) বা সমন্বিত বর্তনী। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে অল্প জায়গায় অনেক বেশি ট্রানজিস্টর বসানো শুরু হলো এবং তার নাম দেওয়া হলো প্রথমে লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেশন (LSI), পরে ভেরি লার্জ স্কেল ইন্ট্রেগ্রেশন (VLSI)। এই সার্কিটগুলো ব্যবহারের উপযোগী করে প্যাকেজ করা হতো যেন সরাসরি সার্কিট বোর্ডে ব্যবহার করা যায়। মাইক্রোকম্পিউটার, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, ভিডিও ক্যামেরা এবং যোগাযোগের উপগ্রহ এই ধরনের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ছাড়া কোনো দিনই সম্ভব হতো না। 

Content added By

ইলেকট্রনিকসের প্রযুক্তি এখনো এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা ভবিষ্যতে ইলেকট্রনিকস সার্কিটে অপটিকস বা আলোর সাহায্যে তথ্য বিনিময়সংক্রান্ত আইসি দেখতে পাব। একই সাথে প্রোগ্রাম করে নিজের প্রয়োজনমতো সার্কিট তৈরি করার আইসি (FPGA : Field Programmable Gate Array) আরো বেশি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে দেখব। 

Content added By