নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - জীবনের জন্য পানি | NCTB BOOK

তোমরা কচুরিপানা, ক্ষুদিপানা, ওড়িপানা, সিংগারা, টোপাপানা, শাপলা, পদ্ম, শ্যাওলা, হাইড্রিলা, কলমি, হেলেঞ্চা, কেশরদাম ইত্যাদি নানা রকম জলজ উদ্ভিদের নাম শুনেছ এবং তাদের অনেকগুলো নিজের চোখেও দেখেছ। এরা কোথায় জন্মে জান? এদের বেশির ভাগই পানিতে জন্মে (চিত্র ২.০২) এবং কিছু কিছু আছে (যেমন: কলমি, হেলেঞ্চা, কেশরদাম) যারা পানিতে আর মাটিতে দুজায়গাতেই জন্মে। অর্থাৎ পানি না থাকলে বেশির ভাগ জলজ উদ্ভিদ জন্মাতই না, কিছু কিছু হয়তো জন্মাতো কিন্তু বাঁচতে পারত না কিংবা বেঁচে থাকলেও বেড়ে উঠতে পারত না। তখন কী হতো? তখন পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটত। তার কারণ, এই জলজ উদ্ভিদগুলো একদিকে যেমন সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরি করে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখে, অন্যদিকে এদের অনেকগুলো বিশেষ করে শ্যাওলাজাতীয় জলজ উদ্ভিদগুলো জলজ প্রাণীদের খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে। এসব জলজ উদ্ভিদ না থাকলে মাছসহ পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হতো। তোমরা জান যে উদ্ভিদগুলো সাধারণত মুলের মাধ্যমে পানি আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে। কিন্তু জলজ উদ্ভিদগুলো সারা দেহের মাধ্যমেই পানিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান বিশেষ করে খনিজ লবণ সংগ্রহ করে থাকে।

তাই এদের পুরো দেহ পানির সংস্পর্শে না এলে এদের বেড়ে ওঠাই হতো না।অনেক জলজ প্রাণী বাঁচতেই পারত না, যেটি চিত্র ২.০২; ক্ষুদিপানা, টোপাপানা এবং কচুরিপানা হচ্ছে জলজ উদ্ভিদের উদাহরণ।আরেকটি লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে জলজ উদ্ভিদের কাণ্ড আর অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খুব নরম হয়, যেটা পানির স্রোত আর জলজ প্রাণীর চলাচলের সঙ্গে মানানসই। পানি ছাড়া শুকনো মাটিতে এদের জন্ম হলে এরা ভেঙে পড়ত এবং বেড়ে উঠতে পারত না এমনকি বাঁচতেও পারত না।তোমরা কি জ্ঞান জলজ উদ্ভিদ কীভাবে বংশবিস্তার করে? জলজ উদ্ভিদগুলো সাধারণত অম্লক্ষ উপারে বংশবিস্তার করে। পানি না থাকলে এই বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হতো। ভাই আমরা বলতে পারি, আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য জলজ উদ্ভিদগুলোর জন্ম খুবই জরুরি এবং তাদের বেড়ে উঠার জন্য পানির ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পানি না থাকলে জলজ উদ্ভিদগুলো জন্মাতে পারত না, জন্মালেও বাঁচতে পারত না, তার ফলে পরিবেশের ভয়াবহ একটি বিপর্যয় ঘটত।


হাজার হাজার জলজ প্রাণীর মাঝে আমাদের সবচেয়ে পরিচিত জলজ প্রাণী হচ্ছে মাছ। মাছ ধরে পানির বাইরে রেখে দিলে কী হয়? তোমরা সবাই দেখেছ যে মাছ মরে যায়। কেন মরে যায়? কারণ আমরা যেরকম বাতাস বা অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারি না, দম বন্ধ হয়ে মারা যাই, মাছের বেলাতেও তাই ঘটে। মাছ অক্সিজেন গ্রহণ করে ফুলকা দিয়ে আর ফুলকা এমনভাবে তৈরি যে এটি শুধু পানি থেকেই অক্সিজেন নিতে পারে, বাতাস থেকে নয়। যদি পানি না থাকত তাহলে কোনো মাছ বাঁচতে পারত না। শুধু মাছ নয়, যেসব প্রাণী ফুলকা দিয়ে অক্সিজেন গ্রহণ করে শ্বাসকার্য চালায়, তাদের কোনোটাই বাঁচতে পারত না। ফলে পরিবেশ হুমকির মধ্যে পড়ত আর আমাদেরও বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যেত। তোমরা আগের অধ্যায় থেকে জেনেছ যে প্রোটিন আমাদের বেড়ে ওঠার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। আমাদের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের প্রায় শতকরা ৮০ ভাগই আসে মাছ থেকে। কাজেই পানি না থাকলে আমরা প্রয়োজনীয় প্রোটিন পেতাম না, যার ফলে আমাদের দৈহিক বৃদ্ধি এবং অন্যান্য কোনো জৈবিক প্রক্রিয়াই ঠিকভাবে ঘটতো না।
 

Content added By