নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - পদার্থবিজ্ঞান (পুরোনো সংস্করণ) - আলোর প্রতিসরণ (Refraction of Light) | NCTB BOOK
Please, contribute to add content into চোখের ক্রিয়া.
Content

চোখের উপাদানগুলোর মাঝে রয়েছে রেটিনা, চোখের লেল, অ্যাকুয়াস হিউমার, ভিট্রিয়াস হিউমার এবং কর্নিয়া (চিত্র 9.28 )। তোমরা লেন্স কীভাবে কাজ করে তার একটি ধারণা পেয়েছ। তাই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ চোখের লেন্সও একটি উত্তল লেন্সের মতো কাজ করে। আমরা দেখেছি উত্তল বা অভিসারী লেন্স সব সময় উল্টো প্রতিবিম্ব তৈরি করে। ক্যামেরায় ছবি তোলার জন্য এভাবে প্রতিবিম্ব তৈরি করা হয়। যখনই আমাদের সামনে কোনো বস্তু থাকে, তখন ঐ বস্তুর থেকে আলোক রশ্মি এই লেন্স দ্বারা প্রতিসারিত হয় এবং রেটিনার ওপর একটি উল্টো প্রতিবিম্ব তৈরি করে। রেটিনার ওপর আলো পড়লে স্নায়ুর সাথে সংযুক্ত আলোকসংবেদী করে তাকে তড়িৎ বা বিদ্যুৎ সিগন্যালে পরিণত করে। স্নায়ু এই বিদ্যুৎ বা তড়িৎ সিগন্যালকে তাৎক্ষণিকভাবে অপটিক নার্ভ বা অক্ষি স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিক্ষে পাঠায়। মস্তিক রেটিনার সৃষ্ট উল্টো প্রতিবিম্বকে সোজা করে নেয় বলে আমরা বস্তুটির যে রকম থাকে সেরকমই দেখি। চোখের ভেতরে আলোর পরিমাণ বাড়ানো কিংবা কমানোর জন্য রয়েছে আইরিশ। তোমরা যারা আগে কখনো লক্ষ করোনি তারা চোখের ওপর টর্চলাইটের আলো ফেলে দেখতে পারো আইরিশটা কী চমৎকারভাবে সংকুচিত হয়ে পিউপিলটাকে ছোট করে ফেলে। 

 

                        

                                                     চিত্র 9.28 ঃ  চোখের বিভিন্ন অংশ 

 

 

Content added By
Content updated By

কোনো কিছু ভালো করে দেখার জন্য আমরা সেটিকে আমাদের চোখের কাছে নিয়ে আসি। তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ চোখের বেশি কাছে নিয়ে আসা হলে আবার সেটি অস্পষ্ট হতে শুরু করে। মানুষের চোখের লেন্স অনেক চমকপ্রদ, এর সাথে মাংসপেশি লাগানো থাকে এবং এই মাংসপেশি লেন্সটাকে টেনে কিংবা ঠেলে পুরু কিংবা সরু করে ফোকাস দৈর্ঘ্য বাড়াতে কিংবা কমাতে পারে।কাজেই রেটিনার ওপর স্পষ্ট প্রতিবিম্ব তৈরি করার জন্য লেন্সটি সব সময়ই তার ফোকাস দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে কিংবা কমিয়ে যাচ্ছে। তোমরা নিজেরা খুব সহজে এটা পরীক্ষা করতে পারো, চোখের সামনে একটি আঙ্গুল রেখে একই সাথে এই আঙ্গুলটি এবং দূরের কিছু দেখার চেষ্টা করো। যখন আঙ্গুলটি স্পষ্ট করে দেখবে তখন দূরের জিনিসটি ঝাঁপসা দেখাবে আবার দূরের জিনিসটি যখন স্পষ্ট দেখাবে তখন আঙ্গুলটি ঝাঁপসা দেখাবে। যেকোনো দুরত্বের কোনো লক্ষ্যবস্তু দেখার জন্য চোখের লেন্সের ফোকাস দূরত্ব নিয়ন্ত্রণ করার এই ক্ষমতাকে চোখের উপযোজন বলে। 

 

Content added By

লক্ষ্যবস্তু চোখের কাছাকাছি একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে বেশি কাছে এলে আর স্পষ্ট দেখা যায় না । চোখের সবচেয়ে কাছে যে বিন্দু পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুকে খালি চোখে স্পষ্ট দেখা যায়, তাকে স্পষ্ট দৃষ্টির নিকট বিন্দু বলে এবং চোখ থেকে ঐ বিন্দুর দূরত্বকে স্পষ্ট দৃষ্টির ন্যূনতম দূরত্ব ধরে নেওয়া হয়। এই দূরত্ব মানুষের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। একজন শিশুর এই দূরত্ব 5 সেন্টিমিটারের কাছাকাছি এবং একজন স্বাভাবিক বয়স্ক লোকের এই দূরত্ব 25 সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। 

সবচেয়ে বেশি যে দূরত্বে কোনো বস্তু থাকলে সেটি স্পষ্ট দেখা যায় সেটাকে চোখের দূরবিন্দু বলে। স্বাভাবিক চোখের জন্য দূরবিন্দু অসীম, যে কারণে আমরা কয়েক আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্রও স্পষ্ট দেখতে পাই । 

 

Content added By

আমরা জানি সুস্থ এবং স্বাভাবিক চোখ “নিকট বিন্দু” (Near point) থেকে শুরু করে অসীম দূরত্বের দূরবিন্দুর মাঝখানে যে স্থানেই কোনো বস্তু থাকুক না কেন সেটা স্পষ্ট দেখতে পারে। এটাই চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি। এই স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ব্যাহত হলেই তাকে চোখের দৃষ্টির ত্রুটি বলা হয়। 

চোখের দৃষ্টির অনেক ধরনের ত্রুটি থাকলেও আমরা প্রধান দুটি ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করব। সেই দুটি হচ্ছে; 

(a) হ্রস্বদৃষ্টি বা ক্ষীণদৃষ্টি 

(b) দীর্ঘদৃষ্টি বা দূরদৃষ্টি 

 

হ্রস্বদৃষ্টি বা ক্ষীণদৃষ্টি (Myopia or Nearsightedness) 

যখন চোখ কাছের বস্তু দেখতে পায় কিন্তু দূরের বস্তু দেখতে পায় না, তখন চোখের এই ত্রুটিকে হ্রস্বদৃষ্টি বলে। এরূপ চোখের দূরবিন্দুটি অসীম দূরত্ব না হয়ে কাছে থাকে এবং বস্তুকে স্পষ্ট দৃষ্টির ন্যূনতম দূরত্ব থেকে আরও কাছে আনলে অধিকতর স্পষ্ট দেখায়। নিম্নলিখিত দুটি কারণে এই জুটি হয়ে থাকে। 

(1) চোখের লেন্সের অভিসারী শক্তি বৃদ্ধি পেলে বা ফোকাস দূরত্ব কমে গেলে ও 

(ii) কোনো কারণে অক্ষিগোলকের ব্যাসার্ধ বৃদ্ধি পেলে। 

এর ফলে দূরের বস্তু থেকে আসা আলোক রশ্মি চোখের লেলের মধ্য দিয়ে প্রতিসরণের পর রেটিনার উপরে প্রতিবিম্ব তৈরি না করে একটু সামনে  প্রতিবিম্ব তৈরি করে । ফলে চোখ বস্তুটি স্পষ্ট দেখতে পায় না। 

 প্রতিকার 

এই জুটি দূর করার জন্য এমন একটি অবতল লেন্সের চশমা ব্যবহার করতে হবে। চশমার এই লেন্সের অপসারী ক্রিয়া চোখের উত্তল লেন্সের অভিসারী ক্রিয়ার বিপরীত, কাজেই চোখের ফোকাস দূরত্ব বেড়ে যাবে বলে প্রতিবিম্বটি আরো পেছনে তৈরি হবে। অর্থাৎ অসীম দূরত্বের বস্তু থেকে আসা সমান্তরাল আলোক রশ্মি চশমার অবতল লেন্স এর মধ্য দিয়ে চোখে পড়ার সময় প্রয়োজনমতো অপসারিত হয়। এই অপসারিত রশ্মিগুলো চোখের লেন্সে প্রতিসরিত হয়ে ঠিক রেটিনা বা অক্ষিপটে এর স্পষ্ট প্রতিবিম্ব তৈরি করে। 

 

দীর্ঘদৃষ্টি বা দূরদৃষ্টি (Hypermetropia or Farsightedness) 

যখন কোনো চোখ দূরের বস্তু দেখে কিন্তু কাছের বস্তু দেখতে পায় না তখন এই ত্রুটিকে দীর্ঘদৃষ্টি বলে। সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে এই ত্রুটি দেখা যায়। নিম্নলিখিত দুটি কারণে এই ত্রুটি ঘটে। 

(i) চোখের লেন্সের অভিসারী ক্ষমতা হ্রাস পেলে বা চোখের লেন্সের ফোকাস দূরত্ব বেড়ে গেলে।

 (ii) কোনো কারণে অক্ষিগোলকের ব্যাসার্ধ কমে গেলে। 

এর ফলে দূর থেকে আসা আলো সঠিকভাবে চোখের রেটিনাতে প্রতিবিম্ব তৈরি করলেও কাছাকাছি বিন্দু থেকে আসা আলোক রশ্মি চোখের লেন্সের মধ্য দিয়ে প্রতিসরণের পর রেটিনার ঠিক উপরে না হয়ে পেছনে বিন্দুতে মিলিত হয়। ফলে চোখ কাছের বস্তু স্পষ্ট দেখতে পায় না। 

প্রতিকার 

এই ত্রুটি দূর করার জন্য একটি উত্তল লেন্সের চশমা ব্যবহার করতে হবে। ফলে কাছাকাছি বিন্দু(চিত্র9.29 b)  থেকে আসা আলোক রশ্মি চশমার লেন্সে এবং চোখের লেন্সে পর পর দুইবার প্রতিসারিত হওয়ার কারণে ফোকাস দূরত্ব কমে যাবে এবং প্রয়োজনমতো অভিসারী হয়ে প্রতিবিম্বটি রেটিনা(R) এর উপরে পড়বে। 

 

Content added By
Content updated By

চোখ অত্যন্ত চমকপ্রদ বিষয়, এর অনেক ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। চোখ এবং চোখের দৃষ্টি নিয়ে সহজ কয়েকটা বৈশিষ্ট্য এখানে আলোচনা করা হলো। 

(a) চোখের সামনে কোনো বস্তু রাখা হলে রেটিনাতে তার প্রতিবিম্ব তৈরি হয় এবং আমরা বস্তুটি দেখতে পাই। বস্তুটি চোখের সামনে থেকে সরিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে কিন্তু বস্তুটি দেখার অনুভূতি চলে যায় না, সেটি আরও 0.01 সেকেন্ডের মতো থেকে যায়। এই সময়কে দর্শনানুভূতির স্থায়িত্বকাল বলে। দর্শনানুভূতির স্থায়িত্বকালের কারণে আমরা চলচ্চিত্র বা ভিডিও দেখার অনুভূতি পাই । 

(b) আমাদের দুটি চোখ সামনে (পাখিদের মতো দুই পাশে নয় তবে প্যাঁচার কথা আলাদা, প্যাঁচার চোখ মানুষের মতো সামনে), তাই আমরা একই সাথে দুই চোখে দুটি প্রতিবিম্ব দেখি। আমাদের মস্তিষ্ক এই দুটি প্রতিবিম্বকে উপস্থাপন করে আমাদেরকে দূরত্বের অনুভূতি দেয়। 

(c) তোমরা এর মাঝে জেনেছ যে আমাদের রেটিনাতে একটা বস্তুর উল্টো প্রতিবিম্ব পড়লেও আমরা কস্তুটিকে সোজা দেখার অনুভূতি পাই কারণ দেখার অনুভুতিটি চোখ থেকে আসে না, সেটি আসে মস্তিক্ষ থেকে। চোখের রেটিনাতে যে প্রতিবিম্ব পড়ে সেটি থেকে আলোর সংকেত অপটিক নার্ভে করে মস্তিকে যায়, মস্তিক সেটাকে বিশ্লেষণ করে আমাদেরকে দেখার অনুভূতি দেয়।

 

Content added By
Content updated By