নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা - প্রাচীন বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস (খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ৩২৬-১২০৪ খ্রিষ্টাব্দ) | NCTB BOOK

গুপ্ত যুগের পূর্বে প্রাচীন বাংলার ধারাবাহিক ইতিহাস রচনা করার তেমন কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি। কেননা তখনকার মানুষ আজকের মতো ইতিহাস লেখায় অভ্যস্ত ছিল না। ভারতীয় এবং বিদেশি সাহিত্যে এ সময়কার বাংলা সম্পর্কে ইতস্তত ও বিক্ষিপ্ত উক্তি থেকে আমরা ইতিহাসের অল্পস্বল্প উপাদান পাই । এ সকল বিচ্ছিন্ন ঘটনা জোড়াতালি দিয়ে সন-তারিখ ও প্রকৃত ঘটনা সংবলিত ধারাবাহিক কোনো ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয় । বস্তুত ৩২৭-২৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় থেকে প্রকৃত ইতিহাস পাওয়া যায়। গ্রিক লেখকদের কথায় তখন বাংলাদেশে ‘গঙ্গারিডই' নামে এক শক্তিশালী রাজ্য ছিল । গঙ্গা নদীর যে দুটি স্রোত এখন ভাগীরথী ও পদ্মা বলে পরিচিত- এ উভয়ের মধ্যবর্তী অঞ্চলইে ‘গঙ্গারিডই’ জাতির বাসস্থান ছিল। গ্রিক গ্রন্থকারগণ গঙ্গারিডই ছাড়াও ‘প্রাসিঅয়' নামে অপর এক জাতির উল্লেখ করেছেন । 

তাদের রাজধানীর নাম ছিল পালিবোথরা (পাটলিপুত্র) । গ্রিক লেখকদের বর্ণনার ওপর নির্ভর করে অনুমান করা যেতে পারে যে, এ দুই জাতি একই রাজবংশের নেতৃত্বে একসঙ্গে আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছিল । এও অনুমান করা যেতে পারে, আলেকজান্ডারের আক্রমণের সময় বাংলার রাজা মগধাদি দেশ জয় করে পাঞ্জাব পর্যন্ত স্বীয় রাজ্য বিস্তার করেছিলেন । তিনি ছিলেন পাটলিপুত্রের নন্দবংশীয় কোনো রাজা । এ সময় যে বাংলার রাজাই সমধিক শক্তিশালী ছিলেন প্রাচীন গ্রিক লেখকগণের লেখা থেকে তা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় ।

আলেকজান্ডারের ভারত ত্যাগের মাত্র দুই বছর পর ৩২১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ভারতের এক বিশাল অঞ্চলের ওপর মৌর্য বংশের প্রভুত্ব স্থাপন করেন । উত্তর বাংলায় মৌর্য শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে (২৬৯-২৩২ খ্রিষ্টপূর্ব)। অঞ্চলটি মৌর্যদের একটি প্রদেশে পরিণত হয়েছিল। প্রাচীন পুণ্ড্রনগর ছিল এ প্রদেশের রাজধানী। উত্তর বঙ্গ ছাড়াও মৌর্য শাসন কর্ণসুবর্ণ (মুর্শিদাবাদ), তাম্রলিপ্ত, (হুগলী) ও সমতট (দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা) অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ।

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর শুঙ্গ ও পরে কম্ব বংশের আবির্ভাব ঘটে। ধারণা করা হয় তারা কিছু ছোট অঞ্চলের ওপর শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল । এরপর বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি ভারতবর্ষ আক্রমণ করে । এর মধ্যে গ্রিক, শক, পহ্লব, কুষাণ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । তবে এ আক্রমণকারীরা বাংলা পর্যন্ত এসেছিল কি-না তা বলা যায় না ৷

ভারতে গুপ্ত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় ৩২০ খ্রিষ্টাব্দে । তখন বাংলায় কিছু স্বাধীন রাজ্যের উত্থান ঘটে । এগুলোর মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার সমতট রাজ্য ও পশ্চিম বাংলার পুষ্করণ রাজ্য উল্লেখযোগ্য । গুপ্ত সম্রাট প্রথম চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালেই উত্তর বঙ্গের কিছু অংশ গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধিকারে আসে। সমুদ্রগুপ্তের রাজত্বকালে সমগ্র বাংলা জয় করা হলেও সমতট একটি করদ রাজ্য ছিল। সমুদ্রগুপ্তের রাজত্বকাল থেকে ছয় শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত উত্তর বঙ্গ গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনস্থ একটি ‘প্রদেশ” বা 'ভুক্তি' হিসেবে পরিগণিত হতো। মৌর্যদের মতো এদেশে গুপ্তদের রাজধানী ছিল মহাস্থানগড়ের পুণ্ড্রনগর ।

Content added By