নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - পদার্থবিজ্ঞান (পুরোনো সংস্করণ) - পদার্থের অবস্থা ও চাপ (State of matter and pressure) | NCTB BOOK

তরল এবং বায়বীয় পদার্থের চাপ বোঝার আগে আমাদের ঘনত্ব সম্পর্কে ধারণাটি অনেক স্পষ্ট থাকা দরকার। ঘনত্ব হচ্ছে একক আয়তনে ভরের পরিমাণ অর্থাৎ কোনো বস্তুর ভর যদি mm এবং আয়তন V হয় তাহলে তার ঘনত্ব 

                                                    ρ=mV

ঘনত্বের একক kg/m3 অথবা gm/cc 

 ঘনত্বের মাত্রা [P] = ML-3 

টেবিল 5,01 এ তোমাদের পরিচিত কয়েকটি পদার্থের ঘনত্ব দেওয়া হলো। এখানে একটা বিষয় মনে রাখা ভালো, তাপমাত্রা বাড়লে কিংবা কমলে পদার্থের আয়তন বাড়বে কিংবা কমতে পারে। যেহেতু ভরের কোনো পরিবর্তন হয় না তাই পদার্থের ঘনত্ব তাপমাত্রার সাথে পরিবর্তন হচ্ছে পারে। সেজন্য পদার্থের ঘনত্বের কথা বলতে হলে সাধারণত সেটি কোন তাপমাত্রায় মাপা হয়েছে সেটিও বলে দিতে হয়। 

টেবিল5.01: বিভিন্ন পদার্থের ঘনত্ব

         পদার্থ                          ঘনত্ব(gm/cc)
বাতাস  0.00127  
কর্ক 0.25
কাঠ                                      0.4 - 0.5
মানবদেহ 0.995
পানি  1.00
কাচ 2.60
লোহা7.80
পারদ13.6
সোনা19.30

 

আবার অন্যভাবেও এটা দেখতে পারি। একটা পরমাণুতে নিউক্লিয়াসে নিউটন-প্রোটন থাকে, বাইরে থাকে ইলেকট্রন। ইলেকট্রনের ভর নিউট্রন-প্রোটনের ভর থেকে প্রায় 1800 গুণ কম, কাজেই যেকোনো জিনিসের ভরটা আসলে নিউক্লিয়াসের ভর। ইলেকট্রনগুলোকে না ধরলে খুব একটা ক্ষতি বৃদ্ধি হয় না। কিন্তু আমরা চারপাশে যেসব দেখি তার আকার কিন্তু নিউক্লিয়াসের আয়তন নয়। তার আয়তন এসেছে পরমাণুর আয়তন থেকে। খুব ছোট একটা নিউক্লিয়াসকে ঘিরে তুলনামূলকভাবে অনেক বড় একটা কক্ষপথে ইলেকট্রন ঘুরতে থাকে। নিউক্লিয়াসের ব্যাসার্ধ থেকে পরমাণুর ব্যাসার্ধ প্রায় এক লক্ষ গুণ বড়। 

কাজেই আমরা অন্যভাবে বলতে পারি, পৃথিবীর সব মানুষকে একত্র করে যদি কোনোভাবে চাপ দিয়ে তাদের শরীরের যে কয়টি পরমাণু আছে সেগুলো ভেঙে সমস্ত নিউক্লিয়াস একত্র করে ফেলা যায় তাহলে সেটা একটা চা চামচে এঁটে যাবে! 

Content added By
Content updated By

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঘনত্ব একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেটা অনেক সময় আমরা আলাদা করে লক্ষ করি না। যেমন ধরা যাক চুলোতে একটা পাত্রে আমরা যখন পানি গরম করতে দিই, কিছুক্ষণের মাঝেই পানি টগবগ করে ফুটতে থাকে। তার কারণ পাত্রের নিচের অংশে যে পানি থাকে সেটি যখন চুলোর আগুনে উত্তপ্ত হয়ে প্রসারিত হয় তখন তার ঘনত্ব কমে যায়। ঘনত্ব কম বলে সেই পানিটা উপরে উঠে যায় এবং আশেপাশের শীতল পানি নিচে এসে জমা হয়। একটু পর উত্তপ্ত হয়ে সেটাও উপরে উঠে যায় এবং এভাবে চলতেই থাকে এবং কিছুক্ষণেই পানিটা ফুটতে থাকে (এই পদ্ধতিতে পানি কিংবা গ্যাসকে গরম করার পদ্ধতির নাম কনভেকশন বা পরিচলন)। যদি উত্তপ্ত করার পর পানির ঘনত্ব কমে না যেত তাহলে সেটি উপরে উঠে যেত না এবং চুলোর আগুনে শুধু পাত্রের নিচের পানি গরম করতে পারতাম এবং পুরো পাত্রের পানি উত্তপ্ত করা সম্ভব হতো না। 

গ্রীষ্মকালের প্রচণ্ড রোদের মাঝে যারা পুকুরের পানিতে ঝাঁপ দিয়েছ তারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ পুকুরের উপরের পানিটা উষ্ণ হলেও নিচের পানি শীতল। এখানে তাপটুকু এসেছে উপর থেকে এবং পানি গরম হওয়ার পর ঘনত্ব কমে গিয়ে উপরেই রয়ে গেছে, পুকুরের পুরো পানি সমানভাবে উত্তপ্ত হতে পারেনি। 

বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উদ্বোধনীতে আমরা বেলুন ওড়াতে দেখেছি। এই বেলুনকে ওড়ানোর জন্য তার ভেতর বাতাস থেকে হালকা কোনো গ্যাস ঢোকাতে হয়। নিরাপত্তার দিক থেকে বিবেচনা করা হলে সেটি নিষ্ক্রিয় হিলিয়াম গ্যাস দিয়ে ভরার কথা কিন্তু হিলিয়াম গ্যাস তুলনামূলকভাবে অনেক ব্যয়বহুল বলে প্রায় সময়েই হাইড্রোজেন গ্যাস দিয়ে কাজ সারা হয়, যেটি যথেষ্ট বিপজ্জনক। শুধু তাই নয়, 

জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত মিথেন গ্যাস বাতাস থেকে হালকা বলে অনেক সময় এই গ্যাস দিয়েও গ্যাস বেলুন তৈরি করে ব্যবহার করা হয়, যেটি সমান বিপজ্জনক। 

আমরা অনেক সময় ফানুস ওড়াতে দেখেছি। এই ফানুসের নিচেও একটা আগুন জ্বালানো হয়, সেটি ফানুসকে আলোকোজ্জ্বল করার সাথে সাথে ভেতরের বাতাসকে উত্তপ্ত করে হালকা করে উপরে নিয়ে যায়। 

একটি ডিম ভালো না পচা সেটা ইচ্ছে করলে পানিতে ডুবিয়ে বের করা যায়। যথেষ্ট পচা হলে ভার ঘনত্ব পানি থেকে কম হবে এবং সেটি পানিতে ভেসে উঠবে। 

Content added || updated By