নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - পদার্থবিজ্ঞান (পুরোনো সংস্করণ) - বল (Force) | NCTB BOOK

এর আগের অধ্যায়ে আমরা বেগ, দ্রুতি, ত্বরণ (এবং মন্দন), অতিক্রান্ত দূরত্ব এবং তাদের একটির সাথে অন্যটির সম্পর্ক শিখেছি, গতির সমীকরণগুলো বের করেছি এবং গতিসংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করতে সেগুলো ব্যবহারও করেছি। এই অধ্যায়ে আমরা বল প্রয়োগ করে কীভাবে গতির সৃষ্টি করা যায় কিংবা গতিকে প্রভাবিত করা যায় সেটি শিখব। আমরা নিউটনের প্রথম সূত্রটি দিয়ে শুরু করতে পারি: 

নিউটনের প্রথম সূত্র: বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু স্থির থাকবে এবং সমবেগে চলতে থাকা বস্তু সমবেগে চলতে থাকবে। (বুঝতেই পারছ বেগ যেহেতু ভেক্টর তাই সমবেগে চলতে হলে দিক পরিবর্তন করতে পারবে না, সোজা সরলরেখায় সমান দ্রুতিতে যেতে হবে।)

নিউটনের প্রথম সূত্রের প্রথম অংশ নিয়ে কারো সমস্যা হয় না কারণ আমরা সব সময়ই দেখেছি স্থির বস্তুকে ধাক্কা না দেওয়া পর্যন্ত সেটা নিজে থেকে নড়ে না, স্থির থেকে যায়। দ্বিতীয় অংশটি নিয়ে সমস্যা, কারণ আমরা কখনোই কোনো চলন্ত বস্তুকে অনন্তকাল চলতে দেখি না। ধাক্কা দিয়ে কোনো বস্তুকে গতিশীল করে ছেড়ে দিলেও দেখা যায় কোনো বল প্রয়োগ না করলেও শেষ পর্যন্ত বস্তুটা থেমে যায়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয় যেকোনো কিছুকে সমবেগে চালিয়ে নিতে হলে ক্রমাগত বুঝি সেটাতে বল প্রয়োগ করে যেতে হয়। নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে আমরা জানতে পেরেছি সেটা সত্যি নয়। সমবেগে চলতে থাকা কোনো বস্তু যদি থেমে যায় তাহলে বুঝতে হবে সেখানে কোনো না কোনোভাবে বল প্রয়োগ করা হয়েছে। ঘর্ষণ, বাতাসের বাধা এ রকম অনেক কিছু আসলে উল্টো দিক থেকে বল প্রয়োগ করে চলমান একটা বস্তুকে থামিয়ে দেয়। যদি সত্যি সত্যি সব বল বন্ধ করে দেওয়া যেত তাহলে আমরা সত্যিই দেখতে পেতাম সমবেগে চলতে থাকা একটা বস্তু অনন্তকাল ধরে চলছে। 

Content added || updated By

বল প্রয়োগ না করা পর্যন্ত স্থির বস্তু যে স্থির থাকতে চায় কিংবা গতিশীল বস্তু যে গতিশীল থাকতে চায়, বস্তুর এই বৈশিষ্ট্যটাই হচ্ছে জড়তাহঠাৎ গাড়ি চলতে শুরু করলে আমরা যেভাবে পেছনের দিকে একটা ঝাঁকুনি খাই সেটা হচ্ছে জড়তার উদাহরণ। শরীরের নিচের অংশ গাড়ির সাথে লেগে আছে। গাড়ির সাথে সাথে সেটা চলতে শুরু করেছে কিন্তু শরীরের ওপরের অংশ এখনো স্থির এবং স্থির থাকতে চাইছে! তাই শরীরের ওপরের অংশ পেছনের দিকে ঝাঁকুনি খাচ্ছে। যেহেতু এটা স্থির থাকার জড়তা তাই এটাকে বলে স্থিতি জড়তা। 

গতি জড়তার কারণে আমরা মানুষজনকে চলন্ত বাস ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে আছাড় খেতে দেখি। চলন্ত বাস ট্রেনের মানুষটির পুরো শরীরটাই গতিশীল, সে যখন মাটিতে পা দিয়েছে তখন নিচের অংশ থেমে গিয়েছে, ওপরের অংশ পতি জড়তার কারণে তখনো ছুটছে। তাই সে হুমড়ি খেয়ে পড়ছো । 

 

Content added By
Content updated By

নিউটনের প্রথম সূত্রে প্রথমবার “বল” শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে বল বলতে আমরা কী বোঝাই, সেটা এখনো বলা হয়নি। এটা যদি পদার্থবিজ্ঞানের বই না হয়ে অন্য কোনো বই হতো তাহলে “বল প্রয়োগ”-এর জায়গায় “শক্তি প্রয়োগ” কথাটা ব্যবহার করলেও বাক্যটায় অর্থের কোনো উনিশ-বিশ হতো না। কিন্তু যেহেতু এটা পদার্থবিজ্ঞানের বই, তাই আমরা এখানে শক্তি কথাটা ব্যবহার করতে পারব না। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় শক্তি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা রাশি! এখানে আমাদের বল কথাটাই ব্যবহার করতে হবে! কিন্তু বল মানে কী? আমরা তো এখন পর্যন্ত বলের কোনো সংজ্ঞা দিইনি! 

আসলে নিউটনের প্রথম সূত্রটাই বলের সংজ্ঞা হতে পারে! যার প্রয়োগের কারণে স্থির বস্তু চলতে শুরু করে আর সমবেগে চলতে থাকা বস্তুর বেগের পরিবর্তন হয় সেটাই হচ্ছে বল। নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে বলটা কী, সেটা বুঝতে পারি কিন্তু পরিমাপ করতে পারি না। দ্বিতীয় সূত্র থেকে আমরা বল পরিমাপ করা শিখব। 

তোমরা যখন তোমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা কাজে বল ব্যবহার করো তখন তোমাদের মনে হতে পারে কোনো কোনো বল প্রয়োগ করতে হলে স্পর্শ করতে হয় (ক্রেন দিয়ে ভারী জিনিস তোলা, কোনো কিছুকে ধাক্কা দেওয়া, কিংবা চলতে চলতে ঘর্ষণের জন্য চলন্ত বস্তুর থেমে যাওয়া) আবার তোমরা লক্ষ করেছ কোনো কোনো বল প্রয়োগের জন্য স্পর্শ করতে হয় না। কোনো কিছু ছেড়ে দিলে মাধ্যাকর্ষণ বলের জন্য নিচে পড়া, চুম্বকের আকর্ষণ!) কাজেই আমরা বলকে স্পর্শ এবং অস্পর্শ দুই ধরনের বলে ভাগ করতে পারি। কিন্তু তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ আমরা যেখানে স্পর্শ করছি বলে ধারণা করছি, সেখানে কিন্তু পরস্পরের অণু-পরমাণু, তাদের ঘিরে ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রন সরাসরি স্পর্শ দিয়ে নয় তাদের তড়িৎ চৌম্বক বল দিয়ে একে অন্যের সাথে কাজ করছে। অন্য কথায় বলা যায় আমরা যদি পারমাণবিক পর্যায়ে চলে যাই তাহলে সব বলই অস্পর্শক, এক পরমাণু অন্য পরমাণুকে আকর্ষণ-বিকর্ষণ করে দূর থেকে, তাদেরকে আক্ষরিক অর্থে স্পর্শ করতে হয় না । 

Content added By