নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - পদার্থবিজ্ঞান (পুরোনো সংস্করণ) - NCTB BOOK

এই অধ্যায়ে আমরা দেখব একটি বল কীভাবে "কাজ" করে। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় এই "কাজ" শব্দটির একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ আছে। আমরা দেখব কোনো কিছুর উপর একটি বল কাজ করে সেটাকে গতিশীল করে গতিশক্তির জন্ম দিতে পারে। এই গতিশক্তি স্থিতিশক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে এবং শক্তির এই রূপান্তর খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া এবং নানা ধরনের শক্তি একে অন্যটিতে রূপান্তরিত হতে পারে। বিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শক্তি এবং এই শক্তি মানবসভ্যতার বিকাশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই কীভাবে প্রকৃতি থেকে এই শক্তি আহরণ করা যায় সেটি নিয়েও আলোচনা করা হবে। 

Content added By
Content updated By

আমরা দৈনন্দিন জীবনে কাজ শব্দটা অনেকভাবে ব্যবহার করি। একজন দারোয়ান গেটের সামনে একটি টুলে বসে সারাদিন বাসা পাহারা দিয়ে দাবি করতে পারেন তিনি অনেক কাজ করেছেন কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় সেটি কোনো কাজ নয়। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় কাজ কথাটার সুনির্দিষ্ট অর্থ আছে। কোনো বস্তুর উপর যদি F বল প্রয়োগ করা হয় এবং বল প্রয়োগ করার সময়টুকুতে যদি বস্তুটি বলের দিকে s দূরত্ব অতিক্রম করে (অর্থাৎ সরণ হয়) তাহলে ঐ বল দিয়ে করা কাজের পরিমাণ W হচ্ছে: 

                                                                   W = Fs 

কাজের একক J (জুল)  

কাজের মাত্রা [W1]= ML2T-2  

বল ভেক্টর এবং অতিক্রান্ত দূরত্ব বা সরণ ভেক্টর কিন্তু কাজের বেলায় এই দুটো ভেক্টরের গুণফল স্কেলার। আলাদা ভেক্টর হিসেবে বল এবং অতিক্রান্ত দূরত্বের দিক একই দিকে হতে হবে এমন কোনো কথা নেই কিন্তু তোমাদের এই বইয়ে আমরা শুধু একই দিকে প্রয়োগ করা বল এবং অতিক্রান্ত দূরত্বের বিষয়টি আলোচনা করব। 

তোমরা কি লক্ষ করেছ কাজ করার কথা বলার সময় আমরা বলেছি “বল”টি কাজ করেছে। একজন মানুষ বা একটি যন্ত্র হয়তো বল প্রয়োগ করে কোনো বস্তুকে ঠেলে খানিকটা দূরত্বে নিয়ে যায়। দৈনন্দিন জীবনের ভাষায় আমরা বলি মানুষটি বা যন্ত্রটি কাজ করেছে। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় সব সময়েই কিন্তু মানুষ বা যন্ত্র নয় প্রয়োগ করা বলটি কাজ করে। এই বলটি হয়তো একটি মানুষ বা যন্ত্র প্রয়োগ করেছে। 

ধরা যাক তুমি F বল প্রয়োগ করে একটা বস্তুকে s দূরত্বে ঠেলে নিয়ে বস্তুটিকে গতিশীল করে ছেড়ে দিয়েছ, বস্তুটি তখন আরো d দূরত্ব অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত থেমে গিয়েছে। কতটুকু কাজ হয়েছে? 

কাজের পরিমাণ W = Fs, পরের d দূরত্ব অতিক্রম করার সময় কোনো বল প্রয়োগ করা হয়নি বলে তখন কোনো কাজ হয়নি। 

Content added By
Content updated By

আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও আমরা শক্তি শব্দটা অনেকভাবে ব্যবহার করি কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের ভাষাতে শক্তি শব্দটার একটা নির্দিষ্ট অর্থ আছে। সাধারণ মুখের ভাষায় বল প্রয়োগ করা আর শক্তি প্রয়োগ করার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই, কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় এই দুটি বাক্যাংশ সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় বোঝায়। বল বলতে কী বোঝায় সেটা আমরা আগের অধ্যায়ে পড়ে এসেছি, এই অধ্যায়ে শক্তি বলতে কী বোঝার সেটা নিয়ে আলোচনা করা হবে। 

শক্তি বলতে কী বোঝায় আমাদের সবার মাঝে তার একটা ভাসাভাসা ধারণা আছে, কারণ আমরা কথাবার্তায় বিদ্যুৎ শক্তি, তাপ শক্তির কথা বলে থাকি। মাঝে মাঝে আমরা রাসায়নিক শক্তি বা নিউক্লিয়ার শক্তির কথাও শুনে থাকি। আলোকে শক্তি হিসেবে সেভাবে বলা না হলেও আমরা অনুমান করতে পারি আলোও হচ্ছে এক ধরনের শক্তি। দৈনন্দিন কথাবার্তায় যে শক্তিটার কথা খুব বেশি বলা হয় না, কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানে অসংখ্যবার যে শক্তির কথা বলা হবে সেটা হচ্ছে গতিশক্তি  কাজেই আমাদের ধারণা হতে পারে প্রকৃতিতে বুঝি অনেক ধরনের শক্তি আছে, কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে সব শক্তিই কিন্তু এক এবং আমরা শুধু এক ধরনের শক্তিকে অন্য ধরনের শক্তিতে রূপান্তর করি। তাহলে শক্তিটা কী? 

শক্তি হচ্ছে কাজ করার সামর্থ্য। শুধু তা-ই না, যখন কোনো বস্তুর ওপর কোনো বল প্রয়োগ করে ধনাত্মক কাজ করা হয় তখন সেই বলটি আসলে বস্তুটির মাঝে একটা শক্তি সৃষ্টি করে। বস্তুটির মাঝে যতটুকু কাজ করা হয়েছে বস্তুটির মাঝে ততটুকু শক্তি সৃষ্টি হয় এবং যে বল প্রয়োগ করছে তাকে ঠিক সেই পরিমাণ শক্তি দিতে হয়। 

কাজেই এবারে তুমি নিশ্চয়ই ঋণাত্মক বা নেগেটিভ কাজের অর্থ বুঝতে পেরেছ। কোনো বল যদি কোনো বস্তুর উপর নেগেটিভ কাজ করে তাহলে বুঝতে হবে বস্তুর যেটুকু শক্তি ছিল সেখান থেকে খানিকটা শক্তি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যেটুকু ঋণাত্মক বা নেগেটিভ কাজ করা হয়েছে ঠিক ততটুকু শক্তি সরিয়ে নেওয়া হয় এবং যে বল প্রয়োগ করেছে সে এই শক্তিটুকু কোনো না কোনোভাবে পেরে যায়। অর্থাৎ কোনো বস্তুর উপর 

ধনাত্মক কাজ করা→ বস্তুটিকে শক্তি দেওয়া 

ঋণাত্মক কাজ করা → বস্তুটি থেকে শক্তি সরিয়ে নেওয়া 

তোমরা নিশ্চরই বুঝতে পারছ শক্তির কোনো দিক নেই এবং এটি একটি স্কেলার। যেহেতু কাজ করে আমরা শক্তি তৈরি করি কিংবা শক্তি খরচ করে কাজ করি তাই দুটোরই একই একক এবং একই মাত্রা।  

শক্তির একক J (জুল)  

শক্তির মাত্রা [W] = ML2T-2

 

Content added By
Content updated By

নানা ধরনের কাজের জন্য আমরা নানা ধরনের শক্তি ব্যবহার করি। যেমন পানি গরম করার জন্য তাপ শক্তির প্রয়োজন হয়, দেখার জন্য আমাদের আলো শক্তি লাগে, আমরা শুনি শব্দ শক্তি দিয়ে। বৈদ্যুতিক শক্তি দিয়ে আমরা যন্ত্রপাতি চালাই আবার রাসায়নিক শক্তি ব্যবহার করে তড়িৎ কোষ বিদ্যুৎ তৈরি করি। ভারী নিউক্লিয়াস ভেঙে বা হালকা নিউক্লিয়াস জোড়া দিয়ে আমরা যে নিউক্লিয়ার শক্তি পাই সেটা দিয়েও বিদ্যুৎ শক্তি তৈরি করি। খাবার থেকে পুষ্টি নিয়ে আমাদের শরীরে শক্তি তৈরি হয়, আমরা কাজকর্ম করি। 

আমাদের সভ্যতার ইতিহাসটিই হচ্ছে  শক্তি তৈরি করে সেই শক্তি ব্যবহারের ইতিহাস। আমরা আমাদের চারপাশে সেই শক্তির নানা রূপকে দেখতে পাই, যেমন— যান্ত্রিক শক্তি, তাপ শক্তি, শব্দ শক্তি, আলোক শক্তি, চৌম্বক শক্তি, বিদ্যুৎ শক্তি, রাসায়নিক শক্তি, নিউক্লিয় শক্তি এবং সৌর শক্তি। 

শক্তির সবচেয়ে সাধারণ রূপ হচ্ছে যাত্মিক শক্তি, বস্তুর অবস্থান, আকার এবং গতির কারণে যে শক্তি পাওয়া যায় তাকেই যান্ত্রিক শক্তি বলে। যান্ত্রিক শন্তির দুটি রূপ হতে পারে গতিশক্তি এবং স্থিতিশক্তি। 

Content added || updated By

আমরা আগে বলেছি কাজ করার সামর্থ্য হচ্ছে শক্তি। আমরা সবাই জানি কোনো বস্তু গতিশীল হলে সেটা অন্য বস্তুকে ধাক্কা দিয়ে সেটাকেও গতিশীল করে খানিকটা দূরত্ব ঠেলে নিয়ে যেতে পারে। অন্য বস্তুকে গতিশীল করে ফেলার অর্থ নিশ্চরই সেখানে বল প্ররোগ হয়েছে এবং সেই বলের জন্য খানিকটা দূরত্ব যাওয়ার অর্থ নিশ্চয়ই সেখানে কাজ হয়েছে। কাজেই আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি 

গতির জন্য বস্তুর যে শক্তি হয় সেটা নিশ্চয়ই এক ধরনের শক্তি বা গতিশক্তি। আগের অধ্যায়ে আমরা বলেছি যে আমরা রাস্তাঘাটে যে ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটতে দেখি সেখানে যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তার প্রধান কারণ এই গতিশক্তি। একটা বাস-ট্রাক বা গাড়ি যখন প্রচণ্ড বেগে ছুটতে থাকে তখন তার অনেক বড় গতিশক্তি থাকে। দুঘর্টনার সময় এই পুরো শক্তিটার কারণে গাড়ি ভেঙেচুরে যায়, প্রচণ্ড ধাক্কায় মানুষ মারা যায়। 

একটা বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করে কাজ করা হলে সেখানে কতটুকু গতিশক্তি হবে সেটা আমরা খুব সহজে বের করতে পারি। 

ধরা যাক F বল প্রয়োগ করে m ভরের একটা বস্তুকে s দূরত্ব সরানো হলো। তাহলে এই F বলের সম্পাদিত কাজ W হচ্ছে 

                                        W = Fs 

নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র থেকে আমরা জানি F = ma গতির সমীকরণ থেকে আমরা জানি স্থির অবস্থা থেকে শুরু করা হলে 

                                    s=12at2 এবং v=at

                   কাজ W=Fs=mas=ma×12at2=12ma2t2=12mv2

কাজেই আমরা বলতে পারি F বল কোনো বস্তুকে s দূরত্বে নিয়ে গেলে তার ভেতরে যে শক্তির সঞ্চার হয় সেটি

হচ্ছে 

                                                      T=12mv2

গতিশক্তিতে v টি বর্গ হিসেবে আছে, কাজেই কোনো বস্তুর গতিশক্তিকে দ্বিগুণ বাড়াতে আমাদের চার গুণ বেশি শক্তি দিতে হয়। 

             গতির সমীকরণ শেখার সময় আমরা দেখেছিলাম v2=u2+2as

             দুইপাশে ½m দিয়ে গুণ করলে সূত্রটি দাঁড়ায়: 12mv2=12mu2+mas

ma এর পরিবর্তে যদি আমরা F লিখি এবং Fs এর পরিবর্তে W লিখি তাহলে সূত্রটি দাঁড়ায়:  

                                                   12mv2=12mu2+W

অর্থাৎ কোনো বস্তু যদি u বেগে থাকে তাহলে তার গতি12mu2 এবং তার উপর W কাজ করা হলে গতিশক্তি বেড়ে হয় 12mv2 গতির এই সমীকরণটি উল্লেখ করার সময় আমরা বলেছিলাম যে পরে আমরা এর একটি চমকপ্রদ রূপ দেখব। এটি হচ্ছে সেই রূপ অর্থাৎ গতির সমীকরণটি আসলে গতিশক্তির একটি সমীকরণ ছাড়া কিছু নয়। 

 

Content added By
Content updated By

কাজ সম্পর্কে বলতে গিয়ে আমরা বলেছিলাম যখন কোনো বল কোনো কিছুর ওপর পজিটিভ কাজ করে তখন সেখানে শক্তির সৃষ্টি হয়। গতিশক্তি সম্পর্কে বলার সময় আমরা তার একটা উদাহরণও দিয়েছিলাম, দেখিয়েছিলাম একটা বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করে সেটাকে খানিকটা দূরত্বে নিয়ে গেলে গতিশক্তি 12mv2 বেড়ে যায়। 

            

        চিত্র 4.01: স্প্রিংয়ের স্থিরাবস্থা এবং বল প্রয়োগ করে সংকুচিত করা

 

এবারে এমন একটা উদাহরণ দেওয়া হবে, যেখানে বল প্রয়োগ করে খানিকটা দূরত্ব অতিক্রম করার পরও কোনো গতিশক্তি তৈরি হবে না। মনে করো টেবিলে একটা স্প্রিং 4.01 চিত্রে দেখানো উপায়ে রাখা আছে, তুমি স্প্রিংরের খোলা মাথার আঙুল দিয়ে F বল প্রয়োগ করে স্প্রিংটাকে x দূরত্বে সংকুচিত করে দিয়েছ। এ রকম অবস্থায় তোমার হাত বা স্প্রিং কোনোটাই গতিশীল না, তাই কোথাও কোনো গতিশক্তি নেই! যেহেতু যেদিকে F বল প্রয়োগ করা হয়েছে অতিক্রান্ত দূরত্বও সেই দিকে, তাই কাজটি পজিটিভ, আমাদের কাজের সংজ্ঞা অনুযায়ী এখানে শক্তি সৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু সেই শক্তিটি কোথায়? কোনো কিছু গতিশীল নয়, তাই এখানে নিশ্চিতভাবে কোনো গতিশক্তি। 

আমরা যারা স্প্রিং ব্যবহার করেছি তারা অনুমান করতে পারছি যে সংকুচিত স্প্রিংয়ের ভেতর নিশ্চয়ই শক্তিটুকু লুকিয়ে রয়েছে। কারণ আমরা জানি সংকুচিত স্প্রিংটার সামনে একটা m ভরের বস্তু রেখে স্প্রিংটা ছেড়ে দিলে স্প্রিংটা ভরটার ওপর বল প্রয়োগ করে একটা দূরত্ব অতিক্রম করাতে পারত, যার অর্থ কাজ করাতে পারত। অর্থাৎ এটি একটি শক্তি, গতিশক্তি না হলেও এটি অন্য এক ধরনের শক্তি। এই ধরনের সঞ্চিত শক্তিকে বলে বিভব শক্তি (Potential Energy)। এই শক্তিটি কোনো বস্তুর অবস্থা বা অবস্থানের জন্য তৈরি হয়। 

একটি স্প্রিংয়ের ধ্রুবক যদি হয় এবং স্প্রিংটিকে যদি তার স্থির অবস্থার সাপেক্ষে x দূরত্ব সংকুচিত করা হয় তাহলে তার ভেতরে শক্তি সঞ্চিত হয় 

                                                             V=12kx2

আমরা যখন কোনো কিছুকে উপরে তুলি তখনো সেটা বিভব শক্তি অর্জন করে। এক টুকরো পাথর ওপর থেকে ছেড়ে দিলে সেটা নিচে নামার সময় তার গতি বাড়তে থাকে তাই সেটার মাঝে গতিশক্তির জন্ম হয়। এটি সম্ভব হয় কারণ পাথরটা যখন উপরে ছিল তখন এই “উপরে অবস্থানের জন্য তার মাঝে এক ধরনের বিভব শক্তি জমা হয়েছিল। একটা পাথরকে উপরে তোলা হলে তার ভেতরে কী পরিমাণ বিভব শক্তি জমা হয়, এখন সেটাও আমরা বের করতে পারি। বুঝতেই পারছ একটা বস্তুকে উপরে তুলতে হলে যে পরিমাণ কাজ করতে হয় সেটাই বিভব শক্তি হিসেবে পাথরের মাঝে জমা হয়ে যাবে। কাজের পরিমাণ W হলে 

                                                      W = Fh 

এখানে F হচ্ছে প্রযুক্ত বল এবং h হচ্ছে উচ্চতা। F বলটি আমাদের প্রয়োগ করতে হয় উপরের দিকে এবং অতিক্রান্ত দূরত্বও উপরের দিকে, কাজেই পজিটিভ। উপরে তোলার জন্য যে বল প্রয়োগ করতে হয় তার মান স্প্রিংয়ের বলের মতো পরিবর্তন হয় না এবং এই বলটি পাথরটির ওজনের সমান। পাথরটির ওজন mg হলে 

                                                   F = mg 

                                  এবং 

                                                  W = mgh 

মনে রাখতে হবে, পাথরটির ওজন একটি বল এবং সেটি নিচের দিকে কাজ করে। পাথরটাকে উপরে তুলতে হলে এই ওজনের সমান একটা বল আমাদের উপরের দিকে প্রয়োগ করতে হয়। 

m ভরের একটা পাথরকে h উচ্চতার তুলে তার ভেতরে বিভব শক্তি সৃষ্টি করে যদি পাথরটাকে ছেড়ে দিই তাহলে সেটা যখন নিচের দিকে / দূরত্ব নেমে আসবে, তখন তার ভেতরে কী পরিমাণ গতিশক্তি জন্ম নেবে? 

শক্তির নিত্যতার কারণে তার বিভব শক্তির পুরোটুকুই গতিশক্তিতে পরিণত হবে। আমরা জানি গতিশক্তি হচ্ছে ½ mv2 তাই আমরা লিখতে পারি: 

                                

সত্যি কথা বলতে কি আমরা পড়ন্ত বস্তুর সমীকরণ বের করার সময় হুবহু এই সূত্রটি ইতিমধ্যে একবার বের করেছিলাম। শক্তির ধারণা দিয়ে সম্পূর্ণ অন্যভাবে আমরা আবার একই সূত্র বের করেছি | 

Content added By
Content updated By

পৃথিবীর সভ্যতার ইতিহাসকে সহজভাবে বলা যায় শক্তি ব্যবহারের ইতিহাস। মোটামুটিভাবে বলা যায়, কোন দেশ কতটা উন্নত, সেটা বোঝার একটা সহজ উপায় হচ্ছে মাথাপ্রতি তারা কতটুকু বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে তার একটা হিসাব নেওয়া। 

Content added By

পৃথিবী সভ্যতার ইতিহাসটা যেহেতু শক্তি ব্যবহারের ইতিহাস, তাই আমরা দেখতে পাই সারা পৃথিবীতেই সব দেশ সব জাতির ভেতরেই শক্তির জন্য এক ধরনের ক্ষুধা কাজ করছে। যে যেভাবে পারছে, সেভাবে শক্তির অনুসন্ধান করছে, শক্তিকে ব্যবহার করছে। 

জ্বালানি শক্তি (তেল, গ্যাস এবং কয়লা) : এই মুহূর্তে পৃথিবীর শক্তির সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে তেল, গ্যাস বা কয়লা। তেল গ্যাস বা কয়লা তিনটিই হচ্ছে ফসিল জ্বালানি, অর্থাৎ লক্ষ-কোটি বছর আগে গাছপালা মাটির নিচে চাপা পড়ে দীর্ঘদিনের ভাগ আর চাপে এই রূপ নিয়েছে। মাটির নিচ থেকে করলা, তেল আর প্যাসকে ভুলতে হয়। মাটির নিচ থেকে যে তেল তোলা হয় (Crude Oil) প্রাথমিক অবস্থায় সেগুলো অনেক ঘন থাকে, রিফাইনারিতে সেগুলো পরিশোধন করে পেট্রল, ডিজেল বা কেরোসিনে রূপান্তর করা হয় এবং সাথে সাথে আরো ব্যবহারযোগ্য পদার্থ বের হয়ে আসে। মাটির নিচ থেকে যে গ্যাস বের হয় সেটি মূলত মিথেন , এর সাথে জলীয়বাষ্প এবং অন্যান্য গ্যাস মেশানো থাকতে পারে এবং সেগুলো আলাদা করে নিতে হয়। আমাদের বাংলাদেশের গ্যাস তুলনামূলকভাবে অনেক পরিষ্কার এবং সরাসরি ব্যবহার করার উপযোগী।

নিউক্লিয়ার শক্তি: অনেক দেশ নিউক্লিয়ার শক্তিকে ব্যবহার করছে, সেখানেও এক ধরনের জ্বালানির দরকার হয়, সেই জ্বালানি হচ্ছে ইউরেনিয়াম। তেল, গ্যাস, কয়লা বা ইউরেনিয়াম, এই শক্তিগুলোর মাঝে একটা মিল রয়েছে, এগুলো ব্যবহার করলে খরচ হয়ে যায়। মাটির নিচে কতটুকু তেল, গ্যাস, কয়লা আছে কিংবা পৃথিবীতে কী পরিমাণ ইউরেনিয়াম আছে মানুষ এর মাঝে সেটা অনুমান করে বের করে ফেলেছে। দেখা গেছে পৃথিবীর মানুষ যে হারে শক্তি ব্যবহার করছে যদি সেই হারে শক্তি ব্যবহার করতে থাকে তাহলে পৃথিবীর শক্তির উৎস তেল, গ্যাস, কয়লা বা ইউরেনিয়াম দিয়ে টেনেটুনে বড়জোর দুই শত বছর চলবে। তারপর আমাদের পরিচিত উৎস যাবে ফুরিয়ে। তখন কী হবে পৃথিবীর মানুষ সেটা নিয়ে খুব বেশি দুর্ভাবনায় নেই, তার কারণ মানুষ মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই জানে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর মাঝে অন্য কিছু বের করে ফেলা হবে। যেমন নিউক্লিয়ার ফিউসান, যেটা ব্যবহার করে সূর্য কিংবা নক্ষত্রেরা তাদের শক্তি তৈরি করে। ফিউসানের জন্য জ্বালানি আসে হাইড্রোজেনের একটা আইসোটোপ থেকে, আর পানির প্রত্যেকটা অণুতে দুটো করে হাইড্রোজেন, কাজেই সেটা ফুরিয়ে যাবার কোনো আশঙ্কা নেই। 

Content added By
Content updated By

শুধু যে ভবিষ্যতে নতুন ধরনের শক্তির ওপর মানুষ ভরসা করে আছে তা নয়, এই মুহূর্তেও তারা এমন শক্তির ওপর ভরসা করে আছে, যেগুলো ফুরিয়ে যাবে না। সেই শক্তি আসে সূর্যের আলো থেকে, সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা কিংবা ঢেউ থেকে, উন্মুক্ত প্রান্তরের বাতাস থেকে, পৃথিবীর গভীরের উত্তপ্ত ম্যাগমা থেকে কিংবা নদীর বহমান পানি থেকে। আমাদের বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না যে এই শক্তিগুলো বলতে গেলে অফুরন্ত। এগুলোকে বলা হয় নবায়নযোগ্য (Renewable Energy) শক্তি— অর্থাৎ যে শক্তিকে নবায়ন করা যায়, যে কারণে এটার ফুরিয়ে যাবার কোনো আশঙ্কা নেই । 

এই মুহূর্তে পৃথিবীর সব মানুষ যে পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ হচ্ছে এই নবায়নযোগ্য শক্তি। যত দিন যাচ্ছে মানুষ ততই পরিবেশ সচেতন হচ্ছে। তাই এ রকম শক্তির ব্যবহার আরো বেড়ে যাচ্ছে। 

জলবিদ্যুৎ: পৃথিবীর পুরো শক্তির পাঁচ ভাগের এক ভাগ হচ্ছে নবায়নযোগ্য শক্তি। সেই এক ভাগের বেশির ভাগ হচ্ছে জলবিদ্যুৎ, নদীতে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা। নদীর পানি যেহেতু ফুরিয়ে যায় না তাই এ রকম বিদ্যুৎকেন্দ্রের শক্তির উৎসও ফুরিয়ে যায় না। এটা হচ্ছে প্রচলিত ধারণা। কিন্তু নদীতে বাঁধ দেওয়া হলে পরিবেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়, সে কারণে পৃথিবীর মানুষ অনেক সতর্ক হয়ে গেছে। যাদের একটু দূরদৃষ্টি আছে তারা এ রকম জলবিদ্যুৎকেন্দ্র আর তৈরি করে না। 

বায়োমাস: জলবিদ্যুতের পর সবচেয়ে বড় নবায়নযোগ্য শক্তি আসে বায়োমাস (Biomass) থেকে, বায়োমাস বলতে বোঝানো হয় লাকড়ি, খড়কুটো এসবকে। পৃথিবীর একটা বড় অংশের মানুষের কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি 

কাছে তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ নেই, তাদের দৈনন্দিন জীবন কাটে লাকড়ি, খড়কুটো জ্বালিয়ে। এই দরিদ্র মানুষগুলোর ব্যবহারিক শক্তি পৃথিবীর পুরো শক্তির একটা বড় অংশ। যদিও শুকনো গাছ খড়কুটো পুড়িয়ে ফেললে সেটা শেষ হয়ে যায়। তারপরও বায়োমাসকে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস বলার কারণ নতুন করে আবার গাছপালা জন্মানো যায়। তেল, গ্যাস বা কয়লার মতো পৃথিবী থেকে এটা চিরদিনের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায় না। 

নবায়নযোগ্য শক্তির এই দুটি রূপ, জলবিদ্যুৎ আর বায়োমাসের পর গুরুত্বপূর্ণ শক্তির উৎসগুলো হচ্ছে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, বায়ো ফুয়েল আর জিওথার্মাল। 

সৌরশক্তি: শুনে অনেকেই অবাক হয়ে যাবে, মাত্র এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় সূর্য থেকে আলো তাপ হিসেবে প্রায় হাজার মেগাওয়াট শক্তি পাওয়া যায়, যেটা একটা নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রের কাছাকাছি। সূর্য থেকে আসা আলো আর তাপের একটা অংশ বায়ুমণ্ডলে শোষিত হয়ে যায়, রাতের বেলা সেটা থাকে না, মেঘ বৃষ্টির কারণে সেটা অনিয়ন্ত্রিত। তা ছাড়াও শক্তিটা আসে তাপ কিংবা আলো হিসেবে, বিদ্যুতে রূপান্তর করার একটা ধাপ অতিক্রম করতে হয়। তারপরও বলা যায় এটা আমাদের খুব নির্ভরশীল একটা শক্তির উৎস। সূর্যের তাপকে ব্যবহার করে সেটা দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা যায়। তার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে সেটাকে সরাসরি বিদ্যুতে রূপান্তর করা। আজকাল পৃথিবীর একটা পরিচিত দৃশ্য হচ্ছে সোলার প্যানেল, বাসার ছাদে লাগিয়ে মানুষ তার নিজের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ নিজের বাসায় তৈরি করে নেয়। 

বায়ুশক্তি: সৌরশক্তির পরই যেটি খুব দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ফেলছে সেটা হচ্ছে বায়ুশক্তি। আমাদের দেশে আমরা এখনো বায়ু বিদ্যুতের বিশাল টারবাইন দেখে অভ্যস্ত নই কিন্তু ইউরোপের অনেক দেশেই সেটা খুব পরিচিত একটা দৃশ্য। যেখানে বায়ু বিদ্যুতের বিশাল টারবাইন বসানো হয়, সেখান থেকে শুধু একটা খাম্বা উপরে উঠে যায়, তাই মোটেও জায়গা নষ্ট হয় না, সেজন্য পরিবেশবাদীরা এটা খুব পছন্দ করেন। একটা বায়ু টারবাইন থেকে কয়েক মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব! বাতাস ব্যবহার করে যে শক্তি তৈরি করা হয় প্রতিবছর তার ব্যবহার বাড়ছে প্রায় ত্রিশ শতাংশ, এই সংখ্যাটি কিন্তু কোনো ছোট সংখ্যা নয়। 

বায়োফুয়েল: পৃথিবীর মানুষ বহুদিন থেকে পান করার জন্য অ্যালকোহল তৈরি করে আসছে—সেটা এক ধরনের জ্বালানি। ভুট্টা, আখ এ ধরনের খাবার থেকে জ্বালানির জন্য অ্যালকোহল তৈরি করা মোটামুটি একটা গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। রান্না করার জন্য আমরা যে তেল ব্যবহার করি সেটা ডিজেলের পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়। পৃথিবীতে অনেক ধরনের গাছপালা আছে যেখান থেকে সরাসরি জ্বালানি তেল পাওয়া যায়। পৃথিবীর অনেক দেশেই এটা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, অনেক দেশেই (যেমন ব্রাজিল) অ্যা ধরনের বায়োফুয়েল বেশ বড় আকারে ব্যবহার করতে শুরু করছে।

ভূতাপীয়: নবায়নযোগ্য শক্তির গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি হচ্ছে ভূতাপীয় বা জিওথার্মাল (Geothermal) শক্তি। আমাদের পৃথিবীর ভেতরের অংশ উত্তপ্ত অগ্নেয়গিরি দিয়ে যখন সেটা বের হয়ে আসে তখন আমরা সেটা টের পাই। তাই কেউ যদি কয়েক কিলোমিটার গর্ত করে যেতে পারে তাহলেই তাপশক্তির একটা বিশাল উৎস পেয়ে যায়। প্রক্রিয়াটা এখনো সহজ নয়, তাই ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরু হয়নি। কোনো কোনো জায়গায় তার ভূ-প্রকৃতির কারণে যেখানে এ ধরনের শক্তি সহজেই পাওয়া যায় সেখানে সেগুলো ব্যবহার শুরু হয়েছে। 

Content added By

সারা পৃথিবীতেই এখন মানুষেরা পরিবেশ নিয়ে সচেতন হয়ে উঠছে। উন্নতির জন্য দরকার শক্তি, কিন্তু শক্তির জন্য যদি পরিবেশকে ধ্বংস করে দেওয়া হয় আধুনিক পৃথিবীর মানুষ কিন্তু সেটা মেনে নেয় না। পৃথিবীর মানুষ এখন যেকোনো শক্তি যেকোনোভাবে ব্যবহার করতে প্রস্তুত নয়। পৃথিবীর সর্বনাশ না করে, প্রকৃতির সাথে বিরোধ না করে তারা পৃথিবীর মাঝে লুকানো শক্তিটুকু ব্যবহার করতে চায়। 

শক্তির রূপান্তরে পরিবেশের উপর প্রভাবের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে ফসিল জ্বালানি বা তেল, গ্যাস এবং কয়লা। এই তিনটিতেই কার্বনের পরিমাণ অনেক বেশি এবং এগুলো পুড়িয়ে যখন তাপশক্তি তৈরি হয় তখন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস তৈরি হয়, যেটি একটি গ্রিনহাউস গ্যাস। অর্থাৎ এই গ্যাস পৃথিবীতে তাপকে ধরে রাখতে পারে এবং এ কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে, যেটি বৈশ্বিক উষ্ণতা নামে পরিচিত। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। সেকারণে পৃথিবীর যেসব দেশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে এবং কৃষিজমি লবণাক্ত হয়ে পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে, তার মাঝে বাংলাদেশ একটি। এই মুহূর্তে পৃথিবীর সব দেশ মিলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করছে। 

নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রে কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ হয় না, কিন্তু নিউক্লিয়ার বর্জ্য অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় এবং এদের তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা নিরাপদ মাত্রায় পৌঁছানোর জন্য লক্ষ লক্ষ বছর সংরক্ষণ করতে হয় যেটি পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আধুনিক প্রযুক্তির কারণে নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্র অনেক নিরাপদ হলেও মাঝে মাঝে মানুষের ভুল কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এখানে বড় দুর্ঘটনা ঘটে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটতে পারে। তার দুটি উদাহরণ হচ্ছে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিল এবং জাপানের ফুকুশিমার দুর্ঘটনা। 

তুলনামূলকভাবে পরিবেশের উপর নবায়নযোগ্য শক্তির প্রভাব কম, তবে জলবিদ্যুতের জন্য যখন নদীতে বাঁধ দেওয়া হয় তখন একদিকে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে পরিবেশের ক্ষতি হয়, অন্যদিকে পানির প্রবাহ কমে যাবার কারণে বাঁধের পরবর্তী এলাকায় তীব্র খরার সৃষ্টি হতে পারে।ক দেশই (যেমন ব্রাজিল) এ ধরনের বায়োফুয়েল বেশ বড় আকারে ব্যবহার করতে শুরু করেছে

Content added By

পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় শক্তি বলতে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর কাজ করার সামর্থ্যকে বুঝায়। প্রধানত শ‌ক্তি হ‌চ্ছে পদা‌র্থের এমন একটি বৈ‌শিষ্ট্য যার সৃ‌ষ্টি বা ধ্বংস নেই, এক রূপ থে‌কে অন্য রূপ নি‌তে পা‌রে এবং এক বস্তু থে‌কে অন্য বস্তুতে যেতে পারে। 

Content added || updated By

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চারপাশে যে শক্তি দেখি সেটি অবিনশ্বর। এর কোনো ক্ষয় নেই, এটি শুধু একটি রুপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তন হয়। একটা পাখর উপরে তুললে তার মাঝে স্থিতিশক্তি বা বিভব শক্তির জন্ম হয়। পাথরটা ছেড়ে দিলে বিভব বা স্থিতিশক্তি কমতে থাকে এবং গতিশক্তি বাড়তে থাকে। মাটি স্পর্শ করার পূর্ব মুহূর্তে পুরো শক্তিটাই গতিশন্তিতে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু মাটিকে স্পর্শ করার পর পাথরটি যখন থেমে যায় তখন তার ভেতরে গতিশক্তিও থাকে না বিভব শক্তি থাকে না, তাহলে শক্তিটা কোথায় যায় ? 

                         চিত্র 4.02: একটি পেন্ডুলাম দুলছে ,মোট গতিশক্তি এবং বিভবশক্তির মাঝে স্থান বদল করছে

তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ পাথরটা যখন মেঝেতে আঘাত করে তখন সেটি শব্দ করে যেখানে আঘাত করেছে সেখানে তাপের সৃষ্টি করে অর্থাৎ গতিশক্তিটুকু শব্দ কিংবা তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। 

বিভব এবং গতিশক্তির ভেতরে রূপান্তরের উদাহরণটি চমৎকার (চিত্র 4.02)। একটি ছোট পাথরকে সুতা দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে দিয়ে যদি আমরা একপাশে একটু টেনে নিই তাহলে সেটি তার স্থির অবস্থা থেকে একটু উপরে উঠে যায় বলে তার ভেতর এক ধরনের স্থিতিশক্তির জন্ম হয়। এখন পাথরটা ছেড়ে দিলে তার ভেতরকার অসাম্য বলের জন্য সেটি তার স্থির অবস্থার দিকে যেতে থাকে এবং তার মাঝে গতির সঞ্চার হয়। ঠিক মাঝখানে যখন পৌঁছায় তখন তার বেগ থাকে সবচেয়ে বেশি তাই সেটি থেমে না গিয়ে অন্যদিকে যেতে থাকে এবং বেগ নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত উপরে উঠতে থাকে অর্থাৎ তার ভেতরে আবার স্থিতিশক্তির জন্ম হয়। যখন এটি সবচেয়ে উঁচুতে পৌঁছে গিয়ে থেমে যায় তখন তার স্থিতিশক্তির জন্য সেটি আবার স্থির অবস্থার দিকে যেতে থাকে। এভাবে পাথরটি দুলতে থাকে এবং স্থিতিশক্তি থেকে গতিশক্তি এবং গতিশক্তি থেকে স্থিতিশক্তির মাঝে রূপান্তর হতেই থাকে। ঘর্ষণ এবং অন্যান্য কারণে শক্তি ক্ষয় না হলে এই প্রক্রিয়াটি অনন্তকাল ধরে চলতে থাকত! 

কাজেই শক্তির রূপান্তর খুবই স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। শুধু বিভব শক্তি এবং গতিশক্তির মাঝে যে রূপান্তর হতে পারে তা নয়। আমাদের পরিচিত সব শক্তিই এক রূপ থেকে অন্য রূপে যেতে পারে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চারপাশে যে শক্তি দেখি সেটি সৃষ্টিও হয় না ধ্বংসও হয় না, শুধু তার রূপ পরিবর্তন করে। এটাই হচ্ছে শক্তির নিত্যতার সূত্র। 

Content added By
Content updated By

আমরা আমাদের চারপাশে শক্তির রূপান্তরের অনেক উদাহরণ দেখি, যেমন: 

(a) বিদ্যুৎ বা তড়িৎ শক্তি 

শক্তির রূপান্তরের উদাহরণ দিতে হলে আমরা সবার আগে বিদ্যুৎ বা তড়িৎ শক্তির উদাহরণ দিই, তার কারণ এই শক্তিকে সবচেয়ে সহজে অন্যান্য শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। শুধু তা-ই নয়, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ করা সবচেয়ে সহজ। তাই আমাদের চারপাশে নানা ধরনের শক্তি থাকার পরও আমরা আমাদের বাসায় অন্য কোনো শক্তি সরবরাহ না করে সবার প্রথমে তড়িৎ শক্তি বা ইলেকট্রিসিটি সরবরাহ করে থাকি। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বৈদ্যুতিক পাখা বা অন্যান্য মোটরে তড়িৎ বা বৈদ্যুতিক শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হতে দেখি। (যদিও চৌম্বক শক্তি আসলে বিদ্যুৎ বা তড়িৎ শক্তি থেকে ভিন্ন কিছু নয়, তার পরেও আমরা মোটর বা বৈদ্যুতিক পাখার ভেতরে বিদ্যুৎ শক্তিকে প্রথমে চৌম্বক শক্তিতে রূপান্তর করে সেখান থেকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর হতে দেখি।) বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি বা হিটারে এটা তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। বাল্ব, টিউবলাইট বা এলইডিতে তড়িৎ শক্তি আলোতে রূপান্তরিত হয়। শব্দশক্তি তৈরি করার জন্য সাধারণত কোনো কিছুকে কাঁপাতে হয়। সেটি এক ধরনের যান্ত্রিক শক্তি। তারপরও আমরা বলতে পারি স্পিকারে বিদ্যুৎ শক্তি শব্দশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। আমরা সবাই আমাদের মোবাইলে টেলিফোনের ব্যাটারিকে বিদ্যুৎ দিয়ে চার্জ করি, যেখানে আসলে তড়িৎ শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় । 

(b) রাসায়নিক শক্তি 

শক্তি রূপান্তরের উদাহরণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি নিশ্চয়ই রাসায়নিক শক্তি। আমরা আমাদের বাসায় রান্না করার জন্য যে গ্যাস ব্যবহার করি সেটা রাসায়নিক শক্তির তাপ শক্তিতে রূপান্তরের উদাহরণ। সে কারণে আমাদের বাসায় বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহ করার সাথে সাথে গ্যাসও সরবরাহ করা হয়। রাসায়নিক শক্তিকে তাপে রূপান্তর করার কারণে আমরা আলোও পেয়ে থাকি। মোমবাতির আলো তার একটা উদাহরণ। গ্যাস, পেট্রল, ডিজেল বা এ ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করে আমরা নানারকম ইঞ্জিনে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হতে দেখি। যদিও ভালো করে দেখলে আমরা দেখব রাসায়নিক শক্তি প্রথমে তাপশক্তি এবং সেই তাপশক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। তবে আধুনিক প্রযুক্তির যুগে রাসায়নিক শক্তির রূপান্তরের সবচেয়ে বড় উদাহরণটি হচ্ছে ব্যাটারি, যেখানে এই শক্তি বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। মোবাইল টেলিফোন থেকে শুরু করে গাড়ি কিংবা ঘড়ি থেকে মহাকাশযান এমন কোনো জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে ব্যাটারি ব্যবহার করে রাসায়নিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়নি। রাসায়নিক শক্তির সবচেয়ে চমকপ্রদ উদাহরণ অবশ্য আমাদের বা জীবন্ত প্রাণীর শরীর, যেখানে খাদ্য থেকে রাসায়নিক শক্তি যান্ত্রিক কিংবা বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। 

(c) তাপশক্তি 

পরিমাণের দিক থেকে বিবেচনা করলে নিঃসন্দেহে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি শক্তির রূপান্তর হয় তাপশক্তি থেকে। যাবতীয় যন্ত্রের যাবতীয় ইঞ্জিনে তাপশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করা হয়। থার্মোকাপলে (Thermocouple) দুটি ভিন্ন ধাতব পদার্থের সংযোগস্থলে তাপ প্রদান করে সরাসরি তাপ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদাহরণ থাকলেও প্রকৃত পক্ষে প্রায় সবক্ষেত্রেই তাপশক্তি থেকে যান্ত্রিক শক্তি এবং যান্ত্রিক শক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি তৈরি করা হয়। (পরিবেশ রক্ষা করার জন্য আমরা আজকাল শক্তির অপচয় করতে চাই না। তাই তাপ দিয়ে আলো তৈরি হয় সে রকম লাইট বাল্ব ব্যবহার না করে আজকাল বেশি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাল্ব ব্যবহার করা হয়।) আমরা মোমবাতির শিখায় রাসায়নিক শক্তিতে সৃষ্ট তাপের কারণে উত্তপ্ত গ্যাসের কণা বা বাল্বের ফিলামেন্টে তাপকে আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হতে দেখি। 

(d) যান্ত্রিক শক্তি 

জেনারেটরে যখন বিদ্যুৎ তৈরি হয় তখন আসলে যান্ত্রিক শক্তি ব্যবহার করে তারের কুণ্ডলীকে চৌম্বক ক্ষেত্রে ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করা হয়। ঘর্ষণের কারণে সব সময়ই তাপশক্তি তৈরি হচ্ছে, সেখানে আসলে যান্ত্রিক শক্তি তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। 

(e) আলোক শক্তি 

আলো হচ্ছে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ এবং এই তরঙ্গের একটা নির্দিষ্ট মাত্রার তরঙ্গদৈর্ঘ্য আমরা চোখে দেখতে পাই, সেটাকে আমরা আলো বলি। এর চেয়ে বেশি এবং কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যও প্রকৃতিতে রয়েছে এবং আমরা নানাভাবে তৈরিও করছি। যেমন মাইক্রোওয়েভ ওভেনে আমরা এই বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গকে তাপশক্তিতে রূপান্তর করি। আজকাল সোলার সেল ব্যবহার করে সরাসরি আলো থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়। এখন যদিও ফটোগ্রাফিক কাগজ ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে কিন্তু আমরা সবাই জানি আলোক সংবেদী ফটোগ্রাফির ফিল্মে আলোর উপস্থিতি রাসায়নিক শক্তির জন্ম দেয়। 

(f) ভর 

তোমরা নিশ্চয়ই বিভিন্ন ধরনের শক্তির রূপান্তরের মাঝে হঠাৎ করে ভর শব্দটি দেখে চমকে উঠেছ। আমরা যখন শক্তিকে বোঝাই তখন কখনো সরাসরি ভরকে শক্তি হিসেবে কল্পনা করি না। কিন্তু আইনস্টাইন তাঁর আপেক্ষিক সূত্র দিয়ে দেখিয়েছেনE=mc2 এবং এই সূত্রটি দিয়ে ভরকে শক্তিতে  রূপান্তরের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। নিউক্লিয়ার বোমাতে ভর থেকে শক্তি রূপান্তর করা হয়েছিল, সেখানে প্রচণ্ড তাপ, আলো এবং শব্দ শক্তি হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহর ধ্বংস করে দিয়েছিল। শক্তির রূপান্তরের এই পদ্ধতিটি শুধু বোমাতে নয়, নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রেও ব্যবহার করা হয়। সরাসরি তাপশক্তি তৈরি হলেও সেই তাপকে ব্যবহার করে বাষ্প এবং বাষ্পকে ব্যবহার করে টারবাইন ঘুরিয়ে সেই টারবাইন দিয়ে জেনারেটরে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়  

শক্তির এই ধরনের রূপান্তর আমাদের চারপাশে ঘটতে থাকলেও আমাদের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা দরকার। শক্তি থাকলেই কিন্তু সব সময় সেই শক্তি ব্যবহার করা যায় না। পৃথিবীর সমুদ্রে বিশাল পরিমাণ তাপশক্তি রয়েছে, সেই শক্তি আমরা ব্যবহার করতে পারি না। (ঘূর্ণিঝড় মাঝে মাঝে সেই শক্তি নগর লোকালয় ধ্বংস করে দেয়!) আবার যখনই শক্তিকে একটি রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তন করা হয় তখন খানিকটা হলেও শক্তির অপচয় হয়। মূলত এই অপচয়টা হয় তাপশক্তিতে এবং সেটা আমরা ব্যবহার করার জন্য ফিরে পাই না। শক্তির এই অপচয়টি আসলে প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা নয়। এটি পদার্থবিজ্ঞানের বেঁধে দেওয়া নিয়ম। 

বিজ্ঞান শেখার প্রাথমিক পর্যায়ে অনেকেই এটা জানে না এবং তারা এক শক্তিকে অন্য শক্তিতে রূপান্তর করে অনন্তকাল চলার উপযোগী একটা মেশিন তৈরি করার চেষ্টা করে (একটি মোটর জেনারেটরকে ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করছে সেই বিদ্যুৎ দিয়েই আবার মোটরটিকে ঘোরানো হচ্ছে। এটি অনন্তকাল চলার একটি মেশিনের উদাহরণ। যেটি কখনোই কাজ করবে না।) 

Content added By
Content updated By

তোমরা জানো বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটিতে বলা হয়েছে যে বস্তুর ভর আর শক্তি একই ব্যাপার, এবং ভর m কে যদি শক্তিতে রূপান্তর করা যায় তাহলে সেই শক্তি E এবং এর পরিমাণ হচ্ছেE=mc2 যেখানে c হচ্ছে আলোর বেগ। আলোর বেগ (3×108 ms-1) বিশাল, সেটাকে বর্গ করা হলে আরো বিশাল হয়ে যায়, যার অর্থ অল্প একটু ভরকে শক্তিতে রূপান্তর করতে পারলে আমরা বিশাল শক্তি পেয়ে যাব, নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্রে ঠিক এই ব্যাপারটিই করা হয়। 

নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্রে যেসব জ্বালানি ব্যবহার করা হয় তার একটি হচ্ছে ইউরেনিয়াম 235 এখানে 92টি প্রোটন এবং 143টি নিউট্রন রয়েছে। প্রকৃতিতে এর পরিমাণ খুব কম, মাত্র 0.7%, এর অর্ধায়ু 703,800,000 (704 মিলিয়ন) বছর। এই ইউরেনিয়াম 235 নিউক্লিয়াস খুব সহজেই আরেকটা নিউট্রনকে গ্রহণ করতে পারে (যদি সে নিউট্রনের গতি কম হয়) তখন ইউরেনিয়াম 235 পুরোপুরি অস্থিতিশীল হয়ে যায়, এটা তখন  এবং  এই দুটো ছোট নিউক্লিয়াসে ভাগ হয়ে যায়। তার সাথে সাথে আরো তিনটা নিউট্রন বের হয়ে আসে যেটা নিচের সমীকরণে দেখানো হয়েছে। 

                                                       

কেউ যদি সমীকরণের বাম পাশে যা আছে তার স্তর বের করে এবং সেটাকে ডান পাশে বা আছে তার ভরের সাথে তুলনা করে তাহলে দেখৰে ডান পাশে ভর কম, যেটুকু স্তর কম সেটুকু আসলে E=mc2 এর শক্তি হিসেবে বের হয়ে এসেছে।

এই বিক্রিয়ায় যে তিনটি নিউট্রন বের হয়ে এসেছে, তারা আসলে প্রচণ্ড গতিতে বের হয়ে আসে, তাই খুব সহজে অন্য ইউরেনিয়াম () সেগুলো ধরে রাখতে পারে না। কোনোভাবে যদি এগুলোর গতিশন্তি কমানো যায় তাহলে সেগুলো অন্য ইউরেনিয়াম () নিউক্লিয়াসে আটকা পড়ে সেটাকেও ভেঙে দিয়ে আরো কিছু শক্তি এবং আরো তিনটি নতুন নিউট্রন বের করবে। নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্রে এই কাজটি করা হয় তাই বের হয়ে আসা নিউট্রনগুলোর গতি কমে আসার পর সেগুলো আবার অন্য নিউক্লিয়াসকে ভেঙে দেয় এবং এভাবে চলতেই থাকে। এই প্রক্রিয়াকে বলে চেইন রি-অ্যাকশন (Chain Reaction ) । 

এই পদ্ধতিতে প্রচণ্ড তাপশক্তি বের হয়ে আসে, সেই তাপশক্তি ব্যবহার করে পানিকে বাষ্পীভূত করে সেই বাষ্প দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে জেনারেটর থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয় এবং এ রকম বিদ্যুৎকেন্দ্রকে আমরা বলি নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র! এরকম একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে খুব সহজেই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব। তবে এই নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার পর যে বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয় সেগুলো ভয়ংকর রকম তেজস্ক্রিয়, তাই সেগুলো প্রক্রিয়া করার সময় অনেক রকম সাবধানতা নিতে হয়। নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার পর যে বাড়তি নিউট্রন বের হয় কোনোভাবে সেগুলোকে অন্য কোথাও শোষণ করিয়ে নিতে পারলেই নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। নিউট্রনকে শোষণ করার জন্য বিশেষ ধরনের রঙ নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টরে থাকে যেগুলোকে বলে কন্ট্রোল রড। সেগুলো দিয়ে নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টরকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। 

Content added By
Content updated By

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ক্ষমতা শব্দটা অনেক ব্যবহার হয় এবং সব সময়ই যে শব্দটা ভালো কিছু বোঝানোর জন্য ব্যবহার হয় তা নয়! কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানে ক্ষমতা শব্দটার সুনির্দিষ্ট অর্থ আছে, ক্ষমতা হচ্ছে কাজ করার হার। অর্থাৎ t সময়ে W কাজ করা হয়ে থাকলে ক্ষমতা P হচ্ছে: 

                                                                        P=Wt

আমরা আগেই দেখেছি কাজ করার অর্থ হচ্ছে শক্তির রূপান্তর। শক্তির যেহেতু ধ্বংস নেই তাই কাজ করার মাঝে দিয়ে শক্তির রূপান্তর করা হয় মাত্র। তাই ইচ্ছে করলে আমরা বলতে পারি ক্ষমতা হচ্ছে শক্তির রূপান্তরের হার। কাজ বা শক্তি যেহেতু স্কেলার তাই ক্ষমতাও স্কেলার। 

পদার্থবিজ্ঞান শিখতে গিয়ে আমরা নানা ধরনের রাশি সম্পর্কে জেনেছি, তাদের এককের নাম জেনেছি এবং চেষ্টা করেছি প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রে সেই রাশিটির মাত্রা সম্পর্কে জানতে। ক্ষমতা রাশিটির একক এবং মাত্রা হচ্ছে 

এখানে এটি আমরা প্রথম জানলেও এর এককটি আমাদের খুব পরিচিত। যদি প্রতি সেকেন্ডে 1 জুল কাজ করা হয় তাহলে আমরা বলি 1 ওয়াট (W) কাজ করা হয়েছে বা শক্তির রূপান্তর হয়েছে। আমরা যদি 100 W এর একটা বাতি জ্বালাই তার অর্থ এই বাতিতে প্রতি সেকেন্ডে 100 শক্তি ব্যয় হচ্ছে। যখন আমরা খবরের কাগজ পড়ি, দেশে 1000 MW নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হবে তার অর্থ সেই নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্রে প্রতি সেকেন্ডে 1000×106J বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন হবে। 

Content added By
Content updated By

আমরা একটু আগে বলেছিলাম যে শক্তিকে তার একটি রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত করার বেলায় সব সময়ই খানিকটা শক্তির অপচয় হয়। কাজেই সব সময়ই আমরা যে পরিমাণ কাজ করতে চাই তার সমপরিমাণ শক্তি দিলে হয় না, একটু বেশি শক্তি দিতে হয়। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করি। নানা ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহার করি। তার সব সময়েই দেখা যায় সেগুলোতে ঘর্ষণ বা অন্যান্য কারণে শক্তির অপচয় হয়। সেজন্য প্রায় সময়ই একটি যন্ত্র বা ইঞ্জিন কতটুকু দক্ষতার সাথে শক্তি ব্যবহার করছে আমাদেরকে তার পরিমাপ করতে হয়। সেজন্য আমরা কর্মদক্ষতা বলে একটি নতুন রাশি ব্যবহার করে থাকি। কর্মদক্ষতাকে শতকরা হিসাবে এভাবে লেখা 

কর্মদক্ষতা হচ্ছে: 

                 =(কাজের পরিমাণ/প্রদত্ত শক্তি)×100

                 =( (প্রদত্ত শক্তি – শক্তির অপচয়)/প্রদত্ত শক্তি) X 100 

 

Content added By
Content updated By

একটি দেশের উন্নয়নের সাথে শক্তির ব্যবহারের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি একটি দেশ কতটুকু উন্নত সেটি বোঝার প্রথম মাপকাঠি হিসেবে শক্তির ব্যবহারকে বিবেচনা করা যেতে পারে। 

আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য আমাদের সবার প্রথম শিক্ষার দিকে নজর দেওয়া উচিত। এই দেশে বিপুল সংখ্যক ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে চালানোর জন্য সেখানে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়। তাদের পড়াশোনা করার জন্য রাতে আলোর দরকার হয় এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা না হলে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উচ্চশিক্ষার বেলায় ল্যাবরেটরি ব্যবহার করতে হয়, কম্পিউটার এবং নেটওয়ার্ককে সচল রাখতে হয় যার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো বিকল্প নেই । 

আমাদের দেশের অর্থনীতিতে কৃষি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশটি ছোট বলে কৃষি উপযোগী ভূমির পরিমাণ কম এবং সেটি আরো কমে আসছে। এই কৃষিভূমিতে দুই বা ততোধিক ফসল ফলিয়ে আমাদের দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এ কারণে শুধু প্রাকৃতিক কৃষির উপর অপেক্ষা না করে কৃষি জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয় এবং শক্তির সরবরাহ ছাড়া সেটি কোনোভাবে সম্ভব না। পানি সেচের জন্য পাম্প চালাতে বিদ্যুৎ কিংবা জ্বালানির প্রয়োজন হয়। চাষাবাদের জন্য সারের প্রয়োজন হয় এবং সার কারখানায় বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সরবরাহ ছাড়া প্রয়োজনীয় উৎপাদন সম্ভব নয়। জমি চাষ করার জন্য এবং ফসলকে প্রক্রিয়া করার জন্য ট্রাক্টর ব্যবহার করা হয় এবং ট্রাক্টরের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানির সরবরাহ থাকতে হবে। 

কৃষির পর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য শক্তির সরবরাহ প্রয়োজন। সুস্থ দেহে থাকার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দরকার হয়। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরি এবং বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করার জন্য শক্তির দরকার হয়। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার জন্য শক্তির দরকার হয়। চিকিৎসাসেবার জন্য হাসপাতালে এক মুহূর্তের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকতে পারে না। 

শিক্ষা, কৃষি এবং স্বাস্থ্য ছাড়াও দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিল্প, কলকারখানা এবং অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য শক্তির দরকার হয়। সে কারণে সঠিক পরিকল্পনা করে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে যেন ভবিষ্যতে শক্তির ঘাটতি না হয়। শক্তির অপচয় বন্ধ করতে হবে এবং নতুন কূপ খনন করে গ্যাস অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে হবে। দেশে বিদ্যুৎ প্রয়োজন অনেক বেড়ে জাওয়ার কারণে নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব্য সমাধান হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

 

Content added By