SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

তৃতীয় শ্রেণি (প্রাথমিক স্তর ২০২৪) - বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

পূজা ও উৎসব

এ অধ্যায়ে যা আছে-

  • বৌদ্ধদের প্রধান পূজা ও উৎসব
  • বাংলা অর্থসহ পুষ্প পূজার উৎসর্গ গাথা
  • বৌদ্ধদের বিভিন্ন পূর্ণিমা উৎসব
  • পূজা ও পূর্ণিমা উৎসবের গুরুত্ব
  • অন্যান্য ধর্মের পূজা-উৎসব ও অনুষ্ঠান
  • অন্যান্য ধর্মের সাথে ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি।

খুবই মজা করেছিলে এমন কোনো পূজা বা উৎসবের কথা তোমাদের মনে পড়ে কি? তোমাদের দেখা কয়েকটি পূজা ও উৎসবের নাম বলো।

বৌদ্ধদের প্রধান পূজা ও উৎসব

প্রত্যেক ধর্মের নানা রকম ধর্মীয় উৎসব ও অনুষ্ঠান আছে। ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে এ সকল উৎসব ও অনুষ্ঠান পালন করা হয়। বৌদ্ধরাও নানা রকম পূজা, উৎসব এবং অনুষ্ঠান পালন করেন। বৌদ্ধরা ত্রিরত্নের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য বিভিন্ন রকম পূজা করেন। এসব পূজার মধ্যে- পুষ্প পূজা, প্রদীপ পূজা, পানীয় পূজা, আহার পূজা, ধূপ পূজা অন্যতম। বৌদ্ধদের প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো: বৈশাখী পূর্ণিমা বা বুদ্ধ পূর্ণিমা, আষাঢ়ী পূর্ণিমা, আশ্বিনী পূর্ণিমা বা প্রবারণা, ভাদ্র পূর্ণিমা বা মধু পূর্ণিমা এবং কঠিন চীবর দানোৎসব।

চিত্র-১৫: কঠিন চীবর দানোৎসব

অংশগ্রহণমূলক কাজ-৩৫: দলগত কাজ

তালিকা তৈরি: দলে আলোচনা করে নিজেদের অংশগ্রহণ করা কয়েকটি পূজা ও উৎসবের নামের তালিকা তৈরি করি'

 

 পূজাউৎসব
  
  
  
  
  

পুষ্প পূজা 

'পূজা' একটি পুণ্যকর্ম। বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘের উদ্দেশ্যে নানা উপকরণ দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করাকে 'পূজা' বলে। পূজা করলে ত্রিরত্নের প্রতি মন প্রসন্ন হয়। পাপ চিন্তা দূর হয়। মন পবিত্র হয়। ত্রিরত্নের প্রতি শ্রদ্ধা উৎপন্ন হয়। ভালো কাজে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তাই আমাদের সকলের সকাল-বিকাল বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে বা নিজ নিজ বাড়িতে বুদ্ধ আসনের সামনে বসে বিভিন্ন পূজা করা উচিত। এখন আমরা পুষ্প পূজার নিয়মাবলি সম্পর্কে জানব।

চিত্র-১৬: পুষ্প পূজা

পুষ্পপূজা করার নিয়ম 

পুষ্প পূজা সাধারণত সকালে করা হয়। বিহারে এবং গৃহে উভয় স্থানে পুষ্প পূজা করা যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে ভালোভাবে হাত-মুখ-পা ধৌত করতে হয়। এরপর বাগান বা যেকোনো ফুলের গাছ থেকে ফুল সংগ্রহ করতে হয়। ফুলগুলো পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে একটা থালায় সুন্দর করে সাজাতে হয়। অতঃপর শ্রদ্ধাচিত্তে ফুলের থালা দু'হাতে নিয়ে পুষ্প পূজার উৎসর্গ গাথা আবৃত্তি করে বুদ্ধ আসনের সামনে অর্পণ করতে হয়। নিচে পুষ্প পূজার উৎসর্গ গাথাটি বাংলা অর্থসহ দেওয়া হলো

পুষ্প পূজার উৎসর্গ গাথা পালি

বপ্নগন্ধ গুণোপেতং এতং কুসুম সন্ততিং

পূজেযামি মুনিন্দসস সিরিপাদ সরোরূহে,

পূজেমি বুদ্ধং কুসুমেন তেন,

পুঞঞেন মে তেন চ হোতু মোক্সং।

পুষ্ণং মিলাযতি যথা ইদং মে,

কাযো তথা যাতি বিনাস ভাবং।

 বাংলা অনুবাদ: এ ফুলগুলো সুন্দর বর্ণ, গন্ধ ও গুণযুক্ত। আমি মুনীন্দ্র বুদ্ধের শ্রীপাদমূলে এই ফুল দিয়ে পূজা করছি। এ পুণ্যের ফলে আমার মুক্তি লাভ হোক। এ পুষ্প যেমন মলিন হচ্ছে, আমার দেহও তেমনি বিনাশ হবে।

বাংলায় পুষ্প পূজার উৎসর্গ গাথা

বর্ণগন্ধ গুণযুক্ত কুসুম প্রদানে

পূজিতেছি ভক্তি চিত্তে বুদ্ধ ভগবানে ।

এ ফুল এ ক্ষণে সুন্দর বরণ,

মনোরম গন্ধ তার সুন্দর গঠন।

কিন্তু শীঘ্র বর্ণ তার হবে যে মলিন,

সুগন্ধ ও সুগঠন অনিত্যে বিলীন।

এরূপ জড়-অজড় সকলি অনিত্য,

সকলি দুঃখের হেতু, সকলি অনাত্মা।

এ বন্দনা এ পূজা, এ জ্ঞান প্রভায়,

সর্বতৃষ্ণা, সর্বদুঃখ ক্ষয় যেন পায়।

অংশগ্রহণমূলক কাজ-৩৬: একক কাজ

ভূমিকাভিনয়: পুষ্প পূজার উৎসর্গগাথা আবৃত্তি করি।

বৌদ্ধদের বিভিন্ন পূর্ণিমা উৎসব পরিচিতি

চিত্র-১৭: প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস উড়ানো

জন্ম থেকে মহাপরিনির্বাণ (মৃত্যু) পর্যন্ত গৌতম বুদ্ধের জীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে। ঘটনাসমূহ কোনো না কোনো পূর্ণিমা তিথিতে সংঘটিত হয়েছিল। তাই বৌদ্ধদের বেশির ভাগ ধর্মীয় উৎসব পূর্ণিমা দিবসে পালিত হয়। বৌদ্ধরা যেসব পূর্ণিমা উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করেন তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: বৈশাখী পূর্ণিমা, আষাঢ়ী পূর্ণিমা, ভাদ্র পূর্ণিমা, আশ্বিনী পূর্ণিমা ও মাঘী পূর্ণিমা। নিচে পাঁচটি পূর্ণিমার সঙ্গে জড়িত বুদ্ধের জীবনের ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:

বৈশাখী পূর্ণিমার সঙ্গে বুদ্ধের জীবনের তিনটি প্রধান ঘটনা জড়িত আছে। যথা: জন্ম, বুদ্ধত্বলাভ এবং মহাপরিনির্বাণ। বুদ্ধের ত্রিস্মৃতি বিজড়িত এই বৈশাখী পূর্ণিমাকে বুদ্ধ পূর্ণিমাও বলা হয়। বুদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি 'বেসাখ-ডে' নামে পালন করা হয়।

আষাঢ়ী পূর্ণিমার সঙ্গেও বুদ্ধের জীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা জড়িত রয়েছে। যেমন, মাতৃগর্ভে প্রতিসন্ধি গ্রহণ, গৃহত্যাগ এবং প্রথম ধর্মপ্রচার। বুদ্ধ আষাঢ়ী পূর্ণিমায় সারনাথে পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদের নিকট প্রথম ধর্ম প্রচার করেন। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে পূজনীয় ভিক্ষুসংঘ বর্ষাবাস পালন শুরু করেন।

ভাদ্র পূর্ণিমায়ও বুদ্ধের জীবনের একটি সুন্দর কাহিনি জড়িত আছে। একবার কোশাম্বীর ঘোষিতারাম বিহারে বুদ্ধ অবস্থান করছিলেন। সেখানে ভিক্ষুদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়। বুদ্ধ বিবাদে জড়িত ভিক্ষুদের শিক্ষা দেয়ার জন্য পারলেয়্য বনে চলে যান। সেখানে এক বানর বুদ্ধকে মধু দান করেন। বানরটি পরবর্তীতে এই মধু দানের পুণ্যফলে স্বর্গে পুনর্জন্ম লাভ করে। এই ঘটনার জন্য ভাদ্র পূর্ণিমাকে মধু পূর্ণিমাও বলা হয়। এই পূর্ণিমা দিবসে বৌদ্ধরা মধু দান করেন।

আশ্বিনী পূর্ণিমায় বুদ্ধ প্রবর্তিত পূজনীয় ভিক্ষুসংঘের বর্ষাবাস অধিষ্ঠান শেষ হয়। বর্ষাবাস পালন কালে ভিক্ষুরা বিহারে অবস্থান করে ধ্যান-সমাধি ও জ্ঞানচর্চা করেন। আশ্বিনী পূর্ণিমাকে প্রবারণা পূর্ণিমাও বলা হয়। প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস উড়ানো হয়। প্রবারণা পূর্ণিমা থেকে এক মাস ব্যাপী বিভিন্ন বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব পালন করা হয়।

মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে বুদ্ধ চাপাল চৈত্যে মহাপরিনির্বাণ লাভের কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেছিলেন, 'আমি আগামী বৈশাখী পূর্ণিমায় পরিনির্বাণ লাভ করব।'

বৌদ্ধরা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে পূর্ণিমা উৎসব পালন করেন। সেদিন তারা নতুন বা পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করে পূজার নানা উপকরণ নিয়ে বিহারে যান। বিহারে গিয়ে প্রার্থনা করেন। শীল গ্রহণ করেন। ধ্যান-সাধনা করেন। দান করেন এবং নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন।

অংশগ্রহণমূলক কাজ-৩৭: একক কাজ

ধারণা চিত্র: সঠিক শব্দ দিয়ে খালিঘর পুরণ করি

অংশগ্রহণমূলক কাজ-৩৮: জোড়ায় কাজ

তালিকা তৈরি: জোড়ায় আলোচনা করে পূর্ণিমা উৎসবসমূহের নামের একটি তালিকা তৈরি করি

পূর্ণিমা উৎসবের নামের তালিকা

১. বৈশাখী পূর্ণিমা বা বুদ্ধ পূর্ণিমা

২.

 

 

 

 

পূজা ও পূর্ণিমা উৎসবের গুরুত্ব

পূজা ও পূর্ণিমা উৎসবে যোগদানের সুফল অনেক। পূজার মাধ্যমে ত্রিরত্নের প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধা উৎপন্ন হয়। ধর্মীয় চেতনা জাগ্রত হয়। মন সুন্দর, উদার ও পবিত্র হয়। হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ দূর হয়। দান চিত্ত উৎপন্ন হয়। কুশলকর্ম করতে উদ্বুদ্ধ হয়। সকল প্রাণীর প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি হয়।

অপরদিকে, মহামানব গৌতম বুদ্ধের জীবনের সাথে পূর্ণিমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাই বৌদ্ধরা প্রতিটি পূর্ণিমা দিবস অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও গুরুত্বের সাথে পালন করেন। পূর্ণিমা উৎসবে যোগদান করে বৌদ্ধরা বুদ্ধের জীবনের নানা ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারেন। বুদ্ধের ধর্ম-দর্শন ও জীবনাদর্শ জানতে পারেন। বুদ্ধের শিক্ষা অনুসরণে অনুপ্রাণিত হন। এ কারণে বৌদ্ধদের নিকট পূজা ও পূর্ণিমা উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম।

অংশগ্রহণমূলক কাজ-৩৯: একক কাজ

শূন্যস্থান পূরণ: সঠিক শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করি

ক) পূজা ও পূর্ণিমা উৎসবে যোগদানের . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . অনেক।

খ) পূজার মাধ্যমে . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধা উৎপন্ন হয়।

গ) দান . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . উৎপন্ন হয়।

ঘ) গৌতম বুদ্ধের জীবনের  সাথে  . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

ঙ) বুদ্ধের  . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .অনুসরণে অনুপ্রাণিত হন।

অন্যান্য ধর্মের পূজা-উৎসব ও অনুষ্ঠান

চিত্র-১৮: বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের পূজা-উৎসব

বৌদ্ধদের মতো অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও বিভিন্ন পূজা, ধর্মীয় উৎসব ও অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন। মুসলিমদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ও অনুষ্ঠান হলো: ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উল-আযহা, শব-ই-বরাত এবং শব-ই-কদর। হিন্দুদের প্রধান পূজা, উৎসব ও অনুষ্ঠান হলো: দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা, লক্ষ্মীপূজা, কালি পূজা, জন্মাষ্টমী, রথযাত্রা ও দোল পূর্ণিমা। খ্রীষ্টানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ও অনুষ্ঠান হলো: বড়োদিন, ইস্টার সানডে, স্বর্গারোহন পর্ব, রবিবাসরীয় উপাসনা অনুষ্ঠান, পবিত্র আত্মার অবতরণ পর্ব ও খ্রীষ্টপ্রসাদ গ্রহণ অনুষ্ঠান।

তালিকা তৈরি: দলে আলোচনা করে (বৌদ্ধ ছাড়া) অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের পূজা, উৎসব ও অনুষ্ঠানের তালিকা তৈরি করি

ইসলাম ধর্ম

হিন্দুধর্ম

খ্রীষ্টধর্ম

   
   
   
   
   

অন্যান্য ধর্মের সাথে ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি

বাংলাদেশে মানুষ শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বাস করে। একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করে। একে অপরের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করে। একে অন্যের ধর্মীয় উৎসবে যোগদান করলে অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হয়। অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে সকল ধর্মের মানুষের সাথে সম্প্রীতি ও মিত্রতা সৃষ্টি হয়। প্রত্যেকে নিজ ধর্ম, ধর্মীয় উৎসব এবং অনুষ্ঠানকে ভালোবাসে। তাই নিজ ধর্মের ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি অন্য ধর্মের বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া একান্ত উচিত। আমাদের দেশে এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বিধায় আমাদের মধ্যে সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সামাজিক সম্প্রীতি আছে। এজন্য আমরা একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসি। একে অপরকে সাহায্য করি। এক ধর্মের মানুষের সাথে অন্য ধর্মের মানুষের সামাজিক সম্প্রীতি আছে বলে আমরা এদেশে সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ সুখে শান্তিতে বাস করছি।

অংশগ্রহণমূলক কাজ-৪১: দলগত কাজ

বাক্য লিখন: দলে আলোচনা করে সকল ধর্মের মানুষের মিলেমিশে থাকার উপকারিতা সম্পর্কে ৫টি বাক্য লিখি

১.
২.
৩.
৪.
৫.
Content added By

Promotion