SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study - আদর্শ জীবন চরিত | NCTB BOOK

বদর যুদ্ধের পটভূমি

মদিনায় হিজরতের পর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মান, মর্যাদা ও শক্তি আরো বৃদ্ধি পায়। মদিনার ধর্মীয় সহাবস্থান ও সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নেতৃত্বে মদিনার উন্নতি দেখে মক্কার কুরাইশরা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। ফলে তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতা এবং মদিনার আশেপাশে লুটতরাজ শুরু করে। এসময় মদিনার মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবন উবাই-এর নেতৃত্বে একদল ইহুদি কুরাইশদের সাথে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা মহানবি (সা.) ও মুসলমানদেরকে ধ্বংস করার পরিকল্পনায় লিপ্ত থাকে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ার সাথে কুরাইশদের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করায় তারা মদিনাকে তাদের বাণিজ্য পথের হুমকি মনে করে। এ হুমকি দূর করতে তারা একটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

মহানবি (সা.) কুরাইশদের এসকল অপতৎপরতার গতিবিধি লক্ষ রাখার জন্য আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশের নেতৃত্বে মক্কার উপকন্ঠে একটি দল প্রেরণ করেন। তখন ছিল রজব মাস। রজব মাসে যুদ্ধ করা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু নাখলা নামক স্থানে কুরাইশদের একটি দলের সাথে জাহাশের নেতৃত্বাধীন দলের যন্ডযুদ্ধ সংঘঠিত হয় এতে কুরাইশদের দলনেতা আমর বিন হাযরামী নিহত হয়। নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ করায় মহানবি (সা.) আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশকে ভর্ৎসনা করেন। নাখলার এ ঘটনায় কুরাইশদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। তারা প্রতিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। অবশেষে মদিনার মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য তারা চূড়ান্ত রণপ্রস্তুতি গ্রহণ করে।

এদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, সিরিয়া থেকে ফেরার পথে আবু সুফিয়ানের বাণিজ্যিক কাফেলা মুসলমানদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। গুজবের সত্যতা যাচাই না করেই কুরাইশরা আবু জেহেলের নেতৃত্বে ১০০০ (এক হাজার) সুসজ্জিত সৈন্য নিয়ে যুদ্ধের জন্য বের হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের এ সংবাদ জানতে পেরে চিন্তিত হয়ে পড়েন। তখন মহান আল্লাহ ওহি পাঠিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সান্ত্বনা প্রদান করেন এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দেন।

যুদ্ধের ঘটনা

মহানবি (সা.) মদিনার অদূরে বদর প্রান্তরে মুসলিম সৈন্য নিয়ে হাজির হন। তাঁর সঙ্গী হলেন ২৫৩ জন আনসার এবং ৬০জন মুহাজিরসহ মোট ৩১৩ জন সৈন্যের একটি দল। অপরপক্ষে মক্কার কাফিরদের ছিল ১০০০ (এক হাজার) সৈন্যের সুসজ্জিত দল। এর মধ্যে তিনশত অশ্বারোহী এবং সাতশত উদ্ভারোহী। মহানবি (সা.) যুদ্ধের শুরুতে সৈন্যদের উদ্দেশ্যে উপদেশ ও নির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেন। দ্বিতীয় হিজরি ১৭ রমযান মোতাবেক ১৭ মার্চ ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে বদর প্রান্তরে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১০০০ জন সুসজ্জিত সৈন্যের বিরুদ্ধে মাত্র ৩১৩ জন ইমানি শক্তিতে বলিয়ান সৈনা অসম যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।

প্রথমেই সম্মুখ যুদ্ধে কুরাইশদের নেতা উতবা, শায়বা ও ওয়ালিদ পরাজিত ও নিহত হয়। এরপর যুদ্ধের অল্পক্ষণের মধ্যেই মহান আল্লাহর সাহায্যে মুসলিম সৈন্যরা কুরাইশদের ওপর বিজয়ী হলেন। ৬ জন মুহাজির ও ৮জন আনসারসহ মোট ১৪ জন মুসলমান শাহাদাত বরণ করেন। অপরপক্ষে ৭০ জন কাফির-মুশরিক নিহত হয় এবং সমসংখ্যক সৈন্য যুদ্ধবন্দী হয়।
যুদ্ধবন্দীদের সাথে সহানুভবতা

রাসুলুল্লাহ (সা.) বদরের যুদ্ধবন্দীদের সাথে সহানুভূতির মনোভাব পোষণের নির্দেশ দেন। ফলে মুসলিম সৈন্যরা যুদ্ধবন্দীদের সাথে উদার ও মানবিক আচরণ করেন। তাদের মধ্যকার বস্ত্রহীনদের বস্তু প্রদান করা হয়। তাঁদের খাদ্য প্রদান করা হয়। সবশেষে মুক্তিপণ নিয়ে আটক কুরাইশ সৈন্যদের মুক্ত করে দেওয়া হয়। কয়েকজন যুদ্ধবন্দীকে মুসলিম বালকদের শিক্ষাদানের বিনিময়ে মুক্ত করে দেওয়া হয়। এমনকি ভবিষ্যতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবে না এ মর্মে ওয়াদা প্রদানের মাধ্যমেও অনেককে মুক্তি দেওয়া হয়। যুদ্ধবন্দীদের প্রতি এমন মহানুভবতা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।

যুদ্ধের গুরুত্ব 

বদরযুদ্ধে মুসলমানদের জয়লাভের মাধ্যমে বিশ্বের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এটি ছিল সত্য ও মিথ্যার মধ্যে ফয়সালাকারী যুদ্ধ। এ যুদ্ধে জয়লাভের ফলে মিথ্যার উপর সত্যের বিজয় হয়। মক্কার কাফির- মুশরিকদের দন্ত চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়। মদিনা ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ইসলামের অবস্থান সুদৃঢ় হয়। তাছাড়া এত অল্পসংখ্যক মুসলিম সৈন্য বিপুলসংখ্যক অমুসলিম সৈন্যের বিপরীতে জয়ী হওয়ার ফলে তাঁদের মনোবল ও ইমানি শক্তি বৃদ্ধি পায়। চূড়ান্তভাবে কুরাইশদের ক্ষমতা ও শক্তি খর্ব হয় এবং মহানবি (সা.)-এর শক্তি ও মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পায়। ফলে দলে দলে লোক ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে।

এছাড়া কুরাইশদের ফেলে যাওয়া অস্ত্র-শস্ত্র, ঘোড়া, উট এবং অন্যসামগ্রী লাভের মাধ্যমে মুসলমানদের পার্থিব শক্তি-সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়। মদিনা ও আশেপাশের ষড়যন্ত্রকারী মুনাফিক ও ইহুদিদের উপর মুসলমানরা প্রভাব বিস্তার করে। সর্বোপরি আরবের বুকে ইসলাম এক অপরাজেয় শক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

 

Content added || updated By

Promotion

Promotion