SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

On This Page
অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study - আখলাক | NCTB BOOK

শালীনতার শাব্দিক অর্থ মার্জিতকরণ, সংশোধন করা, পরিশোধন, লজ্জাশীলতা, বিনম্রতা, ভদ্রতা, বেশ, ভূষা, কথাবার্তা ও আচার-আচরণে মার্জিত হওয়া। যে আচার আচরণ, কথা বার্তা, চলাফেরা ও পোশাক-পরিচ্ছদে ভদ্র, সভ্য, বিনম্ন মার্জিত ও সুরুচির পরিচয় পাওয়া যায় তাকে শালীনতা বলা হয়। শালীনতা একক কোনো গুণের নাম নয়। এর পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। অনেক গুণের সম্মিলিত রূপ শালীনতা। অশ্লীলতা, লজ্জাহীনতা, উগ্রতা, অহংকার কদর্যতা ইত্যাদি শালীনতার বিপরীত।

শালীনতার গুরুত্ব

শালীনতা ইসলামি সমাজ ব্যবস্থার মূলভিত্তি। একটি সুন্দর সমাজ গঠনে শালীনতার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ইসলাম মানুষকে মার্জিত, রুচিশীল, নম্র-ভদ্র ও শালীন হওয়ার শিক্ষা দেয়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ আমাদের শালীনতার শিক্ষা দিয়েছেন। হযরত লোকমান তাঁর পুত্রকে শালীনতার যে উপদেশ দিয়েছিলেন পবিত্র কুরআনে তা উল্লেখ আছে। তিনি বলেছিলেন, 'অহংকার বশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না। পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে চলো না, কারণ আল্লাহ কোনো উদ্ধত-অহঙ্কারী ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না।' (সূরা লুকমান, আয়াত: ১৮)

মানুষের মধ্যকার সকল প্রকার পাশবিকতা ও কুপ্রবৃত্তিকে অবদমিত করার জন্য শালীনতা একান্ত অপরিহার্য। কেননা অশালীন আচার-আচরণ ও বেশ-চুষা মানুষের মধ্যকার সুপ্ত কুপ্রবৃত্তিসমূহকে জাগিয়ে তোলে। তখন মানুষ যে কোনো অসৎ ও অন্যায় কাজ করতে দ্বিধা করে না। শালীনতার চর্চার মাধ্যমেই এসব অন্যায় থেকে বিরত থাকা সম্ভব।

শালীনতা মানুষকে পাপাচার থেকে পূতঃপবিত্র রাখে। কেননা অশালীনতা, অশ্লীলতা ও লজ্জাহীনতা সমাজে পাপের দুয়ার খুলে দেয়। ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সুরা আহযাবে শালীনতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। নারী পুরুষের দৃষ্টি সংযত রাখতে বলেছেন।

শালীনতার অন্যতম দিক হলো লজ্জাশীলতা। লজ্জাশীলতা মানুষকে শালীন হতে সাহায্য করে। মহানবি (স.) বলেন 'তোমার যদি লজ্জাই না থাকে তাহলে তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারো'। (বুখারি) তিনি আরও বলেন 

الْحَيَاءُ خَيْرٌ كُلَّهُ

অর্থ: 'লজ্জাশীলতার পুরোটাই কল্যাণময়'। (মুসলিম)

লজ্জাশীলতা ঈমানেরও অঙ্গ। তাই একজন মুমিন অবশ্যই ভদ্র, লজ্জাশীল ও মার্জিত হবেন। যেমন মহানবি (স.) বলেন-

الْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الْإِيْمَانِ

অর্থ: 'লজ্জাশীলতা ইমানের একটি শাখা।' (নাসাঈ)

কারো আচার-আচরণ মার্জিত হলে সবাই তাকে ভালোবাসে। অন্যদিকে কারো আচরণ, কথাবার্তা অথবা পোশাক-পরিচ্ছদ অশালীন হলে কেউই তাকে ভালোবাসে না। সবাই তাকে খারাপ মনে করে। এজন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'অশ্লীলতা যেকোনো জিনিসকে খারাপ করে এবং লজ্জাশীলতা যেকোনো জিনিসকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে।' (তিরমিযি)

শালীনতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মার্জিত ও রুচিশীল পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করা। শালীনতার জন্য শালীন পোশাক অপরিহার্য। শালীনতাপূর্ণ জীবনাচারণে সমাজ উন্নত হয়। পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে অশোভন আচরণ মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরি করে, নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় ঘটায়।

অশালীন ব্যক্তিকে কেউ পছন্দ করে না। মহানবি (সা.) বলেন, 'মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যার অশ্লীলতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য লোকেরা তাকে পরিত্যাগ করে।' (বুখারি) এমন মানুষকে আল্লাহ তা'আলাও পছন্দ করেন না। হাদিসে এসেছে, 'নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা'আলা অশালীন ও দুশ্চরিত্র ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন। (তিরমিযি)

সুতরাং আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শালীনতার চর্চা করবো। কথা-বার্তা, পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-ব্যবহার কোনো কিছুতেই যেন উগ্রতা, অশ্লীলতা, অশালীনতা প্রকাশ না পায় সেদিকে খেয়াল রাখবো। তাহলেই আমাদের জীবন সুন্দর ও সার্থক হবে। সকলে আমাদের ভালোবাসবে। আর সমাজেও সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করবে।

প্যানেল আলোচনা
'কুরআন-হাদিসের আলোকে দেশপ্রেম চর্চা করি, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ি'
'শালীনতা জেনে/বুঝে নেই, নিজেকে আধুনিক করি'
(শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক তোমরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে উল্লিখিত শিরোনামের আলোকে আলোচনা করে উপস্থাপন করো।)

 

Content added By

Promotion

Promotion