SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা - বুদ্ধের জীবনকথা | NCTB BOOK

লুম্বিনী দক্ষিণ এশিয়ার মহাদেশের কোন দেশে অবস্থিত, চিহ্নিত করে রং করো।

 

জন্মবৃত্তান্ত

 

আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথি। এ উপলক্ষ্যে কপিলাবস্তু নগরীতে আয়োজিত হলো উৎসব। উৎসব শেষে রাজা-রানি ঘুমিয়ে পড়লেন। সে রাতে রানি মায়াদেবী দেখলেন অদ্ভুত এক স্বপ্ন চারদিক থেকে চার দিকপাল দেবতা এসে তাঁকে শয্যাসহ তুলে নিলেন। হিমালয়ের এক মনোরম স্থানে তাঁর পালঙ্ক রেখে দেবতারা সরে দাঁড়ালেন। দেব মহিষীরা এসে মায়াদেবীকে মানস সরোবরে স্নান করালেন। সুবাসিত দিব্যবস্ত্রে ভূষিত করে নিয়ে গেলেন এক সোনার প্রাসাদে। সেখানে রানি মায়াদেবীকে তাঁরা সোনার পালঙ্কে পূর্ব দিকে মাথা রেখে শুইয়ে দিলেন। 

তারপর পাশের স্বর্ণ-পর্বত থেকে একটি সাদা হাতি এলো। সেই হাতির শুঁড়ে ছিল একটি শ্বেতপদ্ম। সে সোনার প্রাসাদে প্রবেশ করে তিনবার রানির শয্যা প্রদক্ষিণ করল। তারপর রানির জঠরের দক্ষিণ দিকে শ্বেতপদ্মটি প্রবেশ করিয়ে দিল। রানির দেহ-মনে এক অপূর্ব শিহরণ খেলে গেল। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল রানির।

পরদিন সকালে রানি তাঁর স্বপ্নবৃত্তান্ত রাজা শুদ্ধোদনকে জানালেন। রাজা তা শুনে খুব বিচলিত হলেন এবং জ্যোতিষীদের ডেকে এ স্বপ্নের কারণ খুঁজতে বললেন। জ্যোতিষীরা বিশদ পর্যালোচনা করে রাজাকে বললেন, মহারাজা, এটি অত্যন্ত সুখপ্রদ স্বপ্ন, এই রাজ্যের জন্য পরম সৌভাগ্যের ইঙ্গিত; আনন্দ করুন, রানি মায়াদেবীর পুত্রসন্তান হবে। এই রাজপুত্র ভবিষ্যতে মহাতেজস্বী ও যশস্বী মহাপুরুষ হবেন। আমাদের কপিলাবস্তু রাজ্যের এ যেন পরম প্রাপ্তি। এক মহাপুরুষ জন্ম নেবেন শাক্যবংশে। স্বাগত হে রাজপুত্র!

স্বপ্নবৃত্তান্ত শুনে রাজা ও রানির মন আনন্দে উদ্বেলিত হয়। কিছুদিন পর এলো বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথি। সেই পূর্ণিমার শুভলগ্নে রানির বাসনা হলো পিত্রালয়ে যাওয়ার। রাজা শুদ্ধোদন সব ব্যবস্থা করলেন। কপিলাবস্তু থেকে দেবদহ পর্যন্ত পথ সুসজ্জিত করা হলো। রানি মায়াদেবী সহচরীসহ সোনার পালকিতে চড়ে পিত্রালয়ে চললেন। পথে রানি হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলেন। তখন পালকি পৌঁছালো দুই নগরীর মধ্যবর্তী স্থান লুম্বিনী কাননে। রানির নির্দেশে লুম্বিনী কাননে শালগাছের এক মনোরম স্থানে পালকি থামল। শালবনের শাখায় শাখায় ফুল, পাখির কাকলি। রানি একটু বিশ্রাম নিতে শালতরু তলে দাঁড়িয়ে তার একটি শাখা ধরলেন। ঠিক সেসময় তাঁর প্রসববেদনা শুরু হলো। সহচরীরা চারদিকে কাপড় দিয়ে ঘিরে দিলেন সে স্থান। সেখানেই শুভ বৈশাখী পূর্ণিমায় ভূমিষ্ঠ হন জগতের ভাবী বুদ্ধ সিদ্ধার্থ গৌতম। বৌদ্ধ সাহিত্যে বর্ণিত হয়েছে, এ সময় চার মহাব্রহ্মাসহ দিকপাল দেবতা নবজাত সিদ্ধার্থের পরিচর্যা করেছিলেন।

রাজপুত্রের জন্মের সংবাদ পৌঁছে গেল রাজা শুদ্ধোদনের কাছে। কপিলাবস্তুতে শুরু হলো উৎসব। কিন্তু সপ্তাহের মধ্যে সেই আনন্দের ধারায় নেমে এলো বিষাদের ছায়া। কুমার সিদ্ধার্থের জন্মের সাত দিন পর রানি মায়াদেবীর মৃত্যু হলো। মাতৃহারা হলেন কুমার সিদ্ধার্থ। তখন সিদ্ধার্থের প্রতিপালনের ভার নিলেন বিমাতা মহাপ্রজাপতি গৌতমী। রানি গৌতমী তাঁকে পুত্রস্নেহে পালন করেছিলেন। গৌতমীর নামানুসারে সিদ্ধার্থের আর এক নাম হয়-গৌতম।

পরবর্তীকালে গৌতম নামটি বেশ প্রসিদ্ধি লাভ করে। বিশ্বে তিনি গৌতম বুদ্ধ নামে পরিচিত। সকল জীবের প্রতি তাঁর মৈত্রী ও করুণা অপরিমেয় বলে তিনি মহাকারুণিক নামেও অভিহিত। এছাড়া তাঁর অপরিমিত গুণরাশিকে কেন্দ্র করে তাঁকে বিভিন্ন বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয়। যেমন সুগত, ভগবান, তথাগত প্রভৃতি।

ইতোমধ্যে সিদ্ধার্থ গৌতমের জন্মকথা ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। এ সময় হিমালয় পর্বতের পাশে কালদেবল নামের এক মহা ঋষি বাস করতেন। তিনি কপিলাবস্তু নগরে গিয়ে গৌতমকে দর্শন করেন। তিনি গৌতমের বত্রিশ প্রকার মহাপুরুষের লক্ষণ দেখতে পেয়েছিলেন। রাজা শুদ্ধোদনকে তিনি বলেছিলেন, কুমার গৌতম যদি গৃহে থাকেন, তাহলে তিনি রাজচক্রবর্তী হবেন, আর যদি গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাসী হন, তাহলে বুদ্ধত্ব লাভ করবেন। এই মহা ঋষির মন্তব্যের প্রথম অংশ রাজা ও রানিকে আনন্দিত করলেও সংসার ত্যাগের কথায় তাঁরা বিচলিত হন। কুমার সিদ্ধার্থ ভবিষ্যতে সন্ন্যাসব্রতের কথা যাতে না ভাবেন, সে জন্য রাজা বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন।

Content added || updated By