SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study - NCTB BOOK

প্রিয় শিক্ষার্থীরা!
পূর্বের শ্রেণিতে তোমরা জেনেছ আমাদের চারপাশের মানুষজনের সাথে কীভাবে সহাবস্থান করবো ও সম্প্রীতি বজায় রাখবো। এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা জেনে তোমাদের কথা ও কাজে এ গুণ দুটির বিশেষ চর্চা অব্যাহত রেখেছো নিশ্চয়ই। এ শ্রেণিতে তোমরা পরমতসহিষ্ণুতা সম্পর্কে জেনে তোমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে তা অনুশীলন করবে। অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, অপরকে মতামত প্রকাশের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যনে তুমি পরমতসহিষ্ণু হতে পারো। এছাড়া কেবল নিজে মত দেওয়া নয়, নিজের মতের সঙ্গে না মিললেও অন্যের মতকে গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে পরমতসহিষ্ণুতা প্রকাশ করতে পারো। পরমতসহিষ্ণুতা মানুষের মৌলিক মানবিক গুণাবলির মধ্যে অন্যতম একটি গুন। এটি একটি সুন্দর শিষ্টাচার। মানব চরিত্রে এ গুণটির অনুপস্থিতি বিশেষত পরিবার ও সমাজ জীবনে নানা বিভেদ, অনৈক্য ও অশান্তি সৃষ্টি করে। ইসলাম আমাদের সবসময় পরমতসহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়। ইসলামের শিক্ষার আলোকে আমরা আমাদের বাস্তব জীবনে এ মহৎ গুণটি চর্চা ও বিকাশের মাধ্যমে আলোকিত মানুষ হতে বন্ধপরিকর। পরমতসহিষ্ণুতা সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা বিস্তারিত জানার পূর্বে এ অধ্যায়ের শুরুতে শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা এতদসংক্রান্ত একটি অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু করবো। তাহলে শুরু করা যাক-

মতবৈচিত্রা' ছক পুরণ
তোমরা নির্ধারিত ছকটি বাড়ি থেকে পূরণ করে আনবে। এক্ষেত্রে, তুমি তোমার পরিবারের সদস্য/বন্ধু/ শিক্ষকের সহায়তা নিতে পারো।

নিজের মত জোর করে চাপিয়ে দিলে যা হতে পারেঅন্যের মতকে গুরুক দিলে যা হবে
১। ঝগড়া-বিবাদ ও অশান্তি হয়।১। শান্তি বজায় থাকে
  
  
  
  
  

পরমতসহিষ্ণুতা হলো জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমাজে বসবাসরত সকল মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা প্রদর্শন করা। ইসলামের দৃষ্টিতে কারো কথা, কাজ বা ব্যবহারে কোনো রকম ক্রোধান্বিত বা প্রতিশোধপরায়ন না হয়ে ধৈর্য, সংযম ও সহনশীলতার সাথে নিজ নিজ কর্তব্য পালন এবং অপরের মতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা প্রদর্শন করাই পরমতসহিষ্ণুতা।

মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর চরিত্রের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা অন্যতম। পরমতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও সহিষ্ণুতা তাঁর চরিত্রকে আরো উজ্জ্বল করেছে। মহানবি (সা.) ও খলিফাগণ অন্যের মতামত ও বিশ্বাসের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। ইতিহাসে তার অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে। পবিত্র কুরআনে সহিষ্ণুতা গুনটি অর্জনের জন্য বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

ইসলাম মানবিক সম্পর্ক উন্নয়ন, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার নির্দেশনা দিয়েছে। অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে কোনোভাবেই আঘাত করা যাবে না। মক্কায় যারা বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা করত তারা একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, 'আপনি কিছু দিন আমাদের নিয়মে উপাসনা করুন, আমরাও আপনার নিয়নে উপাসনা করব।' এই প্রস্তাব শুনে তিনি তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য না করে ধৈর্যধারণ করলেন। এমন সময় ওহি নাযিল হলো, 'আমি ইবাদতকারী নই যার ইবাদত তোমরা করছো। এবং তোমরাও তাঁর ইবাদতকারী নও যাঁর ইবাদত আমি করি। তোমাদের দ্বীন তোমাদের এবং আমার দ্বীন আমার'। (সূরা কাফিরুন, আয়াত: ৪-৬)

মহানবি (সা.) -এর পরমতসহিষ্ণুতার অনেক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে রয়েছে। ৬২২ খ্রিস্তাব্দে মহানবি (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। সেখানে তিনি ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে মদিনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। প্রণয়ন করেন মদিনা সনদ, যা পরমতসহিষ্ণুতার প্রকৃত উদাহরণ।

৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে হুদায়বিয়ার শান্তি চুক্তির শুরুতে কুরাইশ প্রতিনিধি 'রাসুলুল্লাহ' লিখতে আপত্তি জানায়। সাহাবিগণ কিছুতেই এই প্রস্তাব মানছিলেন না। কিন্তু মহানবি (সা.) আল্লাহর রাসুল হওয়া সত্ত্বেও নিজ হাতে কলম দিয়ে 'রাসুলুল্লাহ' শব্দটি কেটে দিয়ে 'মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ' (আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদ) লিখে দিলেন। শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই রাসুলুল্লাহ (সা.) এ প্রস্তাবটি মেনে নিলেন। তিনি পরমতসহিষ্ণুতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুমহান চরিত্র ছিল উদারতা, শান্তিপূর্ণ সমঝোতা ও পরমতসহিষ্ণুতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জন্মভূমি মক্কাবাসীর ঠাট্টা-বিদ্রূপ, অত্যাচার-নির্যাতন চরমে পৌঁছালেও তিনি কিছুতেই সহিষ্ণুতা হারাননি। হিজরতের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা ও তায়িফ বিজয়ের সময় যে অতুলনীয় ক্ষমার আদর্শ প্রদর্শন করেছেন। তা বিশ্বের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না, মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা; ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো'। (সুরা হা-মিম সাজদাহ, আয়াত: ৩৪)

ইসলামে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রতি বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। এজন্য নিজের মত বা বিশ্বাস অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। অপরের মত ও বিশ্বাসের প্রতি অসহিষ্ণু না হওয়ার শিক্ষা দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, 'তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে তারা সকলেই অবশ্যই ইমান আনত; তবে কি তুমি মুমিন হওয়ার জন্য মানুষের ওপর জবরদস্তি করবে'? (সুরা ইউনুস, আয়াত: ১৯)

যে কোনো সামাজিক ও ধর্মীয় বিতর্কে প্রামাণ্য, নির্ভরযোগ্য এবং বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করা প্রয়োজন। এ কারণে ইসলাম আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও ইসলামের দাওয়াত প্রদানে জান-প্রজ্ঞা ও সহিষ্ণুতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, 'মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ সম্বন্ধে বিতর্ক করে; তাদের না আছে জ্ঞান, না আছে পথনির্দেশ, না আছে কোনো দীপ্তিমান কিতাব' (সুরা আল-হাচ্ছ, আয়াত :৮)। তাই আন্তঃধর্মীয় সংলাপ বা সমালোচনার জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রামাণ্য যুক্তি ব্যতিরেকে বক্তব্য প্রদান উচিত নয়।

প্রতিফলন ডায়েরি লিখন
'আমি বাস্তব জীবনে যেভাবে পরমতসহিষ্ণুতা চর্চা করব' উল্লিখিত শিরোনামের আলোকে তুমি একটি তালিকা তৈরি করে আনবে। এক্ষেত্রে, তুমি তোমার পরিবারের সদস্য/সহপাঠী/শিক্ষকের সহায়তা নিতে পারো।)

পরিবারে যেভাবে চর্চা করবো

বিদ্যালয়ে যেভাবে চর্চা করবো

  
  
  
  

ইসলামে সকলের প্রতি মার্জিত সম্বোধনের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এখানে ইসলামের অনুসারী এবং ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করা হয়নি। কেননা ভদ্র ও মার্জিত 'সম্বোধন' সহিষ্ণুতা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আল-কুরআনের বিভিন্ন 'সম্বোধন' থেকে আমরা মার্জিত সম্বোধনের দিকনির্দেশনা পেয়ে থাকি। মহান আল্লাহ নিজেকে বিশ্বজাহানের প্রতিপালক বলে ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ সকল শ্রেণির মানুষকে একত্রে একই ভাষায় সম্বোধন করেছেন। কখনও তিনি 'হে মানব সম্প্রদায়', কখনও 'হে মানব জাতি', কখনও 'হে কিতাবধারী' বলে সম্বোধন করেছেন। জাতি, ধর্ম, গোত্র ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে সম্বোধন করে মহান আল্লাহর এই আহ্বান নিঃসন্দেহে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও পরমতসহিষ্ণুতার অনন্য শিক্ষা। ইসলামের এই 'মার্জিত সম্বোধন' ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আল কুরআনের মার্জিত ও মর্যাদাপূর্ণ সম্বোধন মানব হৃদয়কে স্পর্শ করে।

সমাজে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য কথা-বার্তায়, আচার-আচরণে বিনয়ী হওয়া অপরিহার্য। কুরআন মাজিদে বর্ণিত মুসা (আ.) ও ফিরাউনের মধ্যে অনুষ্ঠিত আন্তঃধর্মীয় সংলাপ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিনয়ী ও কোমল আচরণের স্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে।

সর্বোপরি ইসলাম মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে উৎসাহিত করেছে। অন্যের মতামতের প্রতি সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হতে নির্দেশ দিয়েছে। তবে কোনো উগ্র মতামত ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য সমর্থন করে না। প্রতিটি ধর্মের নিজস্ব বিধিবিধান আছে। ধর্মচর্চার নিজস্ব পথ ও পদ্ধতি রয়েছে। এক্ষেত্রে নিজের ধর্মকে মানার পাশাপাশি অন্যকে তার ধর্ম পালনের সুযোগ করে দেওয়াই ইসলামের শিক্ষা।

আগামী সেশনের প্রস্তুতি

প্রিয় শিক্ষার্থীরা।
তোমরা নিজেদের জীবনে কীভাবে পরমতসহিষ্ণুতার চর্চা করবে এ নিয়ে গল্প/কবিতা/অনুচ্ছেদ/নাটিকা লিখে আগামী সেশনে (ক্লাস) নিয়ে আসবে। তোমাদের লেখাগুলো দিয়ে তোমরা একটি ম্যাগাজিন তৈরি করবে, যা তোমাদের বিদ্যালয় লাইব্রেরি বা সুবিধাজনক জায়গায় ভোমরা সংরক্ষন করবে। তাহলে তোমরা তোমাদের লেখাগুলো যত্নসহ লেখা শুরু করো এবং শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক ম্যাগাজিন তৈরি করো।

  • নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী ম্যাগাজিন তৈরির কাজ শুরু করছো। তাহলে চলো শুরুতেই আমাদের মতামতের ভিত্তিতে ম্যাগাজিনের একটি সুন্দর নাম ঠিক করি।
  • শিক্ষকের নির্দেশনা মতো ভোমরা কয়েকজন সবগুলো লেখা সংগ্রহ করে একসঙ্গে যুক্ত করো।
  •  শিক্ষকের সহায়তায় লেখাগুলো ধারাবাহিকভাবে সাজিয়ে সুবিধাজনকভাবে বাঁধাই করো। (ম্যাগাজিনের জন্য তোমাদের নির্বাচিত নামটি প্রথম পৃষ্ঠায় (কাভার পৃষ্ঠা) ব্যবহার করো)।
  •  ম্যাগাজিনটি তৈরি হলে সকলের পড়ার বা দেখার জন্য বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার বা সুবিধাজনক স্থানে সংরক্ষণ করবে।

 

Content added || updated By