SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - গণিত - Mathematics - NCTB BOOK

আমরা চারপাশে খেলার মাঠ, ধানখেত কিংবা বাড়ির সামনের বাগানের আকৃতি পর্যবেক্ষণ করি। ভালোমতো লক্ষ করলে দেখবে যে আমাদের চারপাশে বিভিন্ন আকৃতির জমি রয়েছে। মনে করো, কোনো জমির আকৃতি যদি সামান্তরিক কিংবা ট্রাপিজিয়ামের মতো হয় তাহলে তোমরা পরিমাপ করতে পারবে কি? একটি ট্রাপিজিয়াম আকৃতির জমি কীভাবে পরিমাপ করবে তা নিচের বক্সে লেখো।

এইবার চিত্র ৫.১ লক্ষ করো, এখানে একটি এলাকার বিভিন্ন জমির আকৃতিগুলোকে দেখা যাচ্ছে। এখানে কী কী আকৃতি দেখতে পাচ্ছ পর্যবেক্ষণ করো এবং খাতায় এঁকে রাখো। একটু চিন্তা করে বলো এই বিভিন্ন আকৃতির জমি আমরা কীভাবে পরিমাপ করতে পারি? তোমার সহপাঠী এবং প্রয়োজনে শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে নিচের বক্সে তোমার মতামত লেখো।

ট্রাপিজিয়াম, রম্বস, ত্রিভুজ কিংবা বৃত্তাকার জমি আমরা খুব সহজেই পরিমাপ করতে পারি। এ পরিমাপের ক্ষেত্রে কখনো গ্রিড ব্যবহার করি আবার কখনো সূত্র ব্যবহার করি। কিন্তু ছবিতে যে আকৃতিগুলো দেখতে পেলাম এমন আকৃতি পরিমাপের ক্ষেত্রে আমরা কী করব? এ অভিজ্ঞতাটির আলোচনায় এবং বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তোমরা এই আকৃতিগুলোকে খুব সহজে চিহ্নিত করে পরিমাপ করার বিভিন্ন পদ্ধতি শিখবে।

 

নিয়মিত এবং অনিয়মিত আকৃতিগুলো সঠিকভাবে শনাক্ত করার কাজটি পরিমাপ প্রক্রিয়ার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। এখন চিন্তা করে দেখো তোমাদের বিদ্যালয়ের জমির নকশাটি কি নিয়মিত নাকি অনিয়মিত আকৃতি? অনিয়মিত জমি পরিমাপের ক্ষেত্রে ত্রিভুজ ও চতুর্ভুজের বিভিন্ন ধারণা প্রয়োগ করে পরিমাপ করা সম্ভব। ইতোমধ্যে তোমরা ট্রাপিজিয়াম পরিমাপের ক্ষেত্রে এই কাজটি করেছ। অভিজ্ঞতার এই অংশে তোমরা ত্রিভুজ ও চতুর্ভুজ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবে এবং এই ধারণাগুলো প্রয়োগ করে বিদ্যালয়ের জমির নকশা পরিমাপ করতে পারবে।

প্রথমেই এসো যাচাই করে নিই ত্রিভুজ সম্পর্কিত কোন ধারণাগুলো তোমরা ইতোমধ্যে শিখেছ। পূর্ববর্তী শ্রেণিতে তোমরা সূক্ষ্মকোণী, স্থূলকোণী এবং সমকোণী ত্রিভুজ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছ। এসো নিচের ছকে কুইজের মাধ্যমে সমকোণী ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্যগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।

একক কাজ

প্রত্যেকে নিজ নিজ খাতায় বিভিন্ন আকারের ৫টি সমকোণী ত্রিভুজ আঁকো। ত্রিভুজগুলোর নিচে ১ নং ত্রিভুজ, ২ নং ত্রিভুজ,..., ৫ নং ত্রিভুজ নাম দাও। ত্রিভুজের বাহুগুলোর উপর বর্গক্ষেত্র অঙ্কন করো। অতঃপরত্রিভুজের বাহুগুলো মেপে ছক ৫.১ পূরণ করো। ৫টি ত্রিভুজের বাহুর উপর অঙ্কিত বর্গের ক্ষেত্রফল পরিমাপ করে ক্ষেত্রফলগুলোর মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়ের চেষ্টা করো।

ক্ষেত্রফলগুলোর মধ্যে কোনো সম্পর্ক খুঁজে পেলে কি? তোমরা যদি সঠিকভাবে বাহুর দৈর্ঘ্য পরিমাপ করো তবে নিশ্চয়ই একটি সম্পর্ক পেয়ে থাকবে। তবে বাহুগুলোর দৈর্ঘ্যের পরিমাপ অতি সূক্ষ্মভাবে নির্ণয় করতে না পারার কারণে সম্পর্ক নির্ণয়ে আসন্ন মান ব্যবহার করতে হতে পারে। সম্পর্কটি বক্সে দেওয়া হলো। তোমার অনুসন্ধানের ফলাফলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখো।

সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল অপর দুই বাহুর উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের সমষ্টির সমান।

এখন আমরা যদি সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ ৫ এবং অপর দুই বাহু a ও b ধরি, তবে আমরা লিখতে পারি,

a² + b² = c²

 

জেনে রাখো

খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে গ্রিক দার্শনিক ও গণিতবিদ পিথাগোরাস সমকোণী ত্রিভুজের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যটি নিরূপণ করেন। এজন্য এটিকে পিথাগোরাসের উপপাদ্য বলা হয়। তাঁর নামে এই উপপাদ্যের নামকরণ করা হলেও আরও প্রাচীনকাল থেকে এই উপপাদ্যটির ব্যবহার খুঁজে পাওয়া যায়। এর ব্যবহার দেখা যায় ব্যাবিলিয়নদের ব্যবহৃত বস্তুতে। আবার জানা যায় যে, খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ থেকে ৪০০ এর মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক গণিতবিদও এই উপপাদ্যটি বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

নানা রকম চতুর্ভুজ খুঁজি

জমির নকশা তৈরির ক্ষেত্রে কিংবা জমি পরিমাপের ক্ষেত্রে ত্রিভুজের পাশাপাশি চতুর্ভুজের ধারণা নানাভাবে সাহায্য করে। আমরা বিভিন্ন ধরনের চতুর্ভুজ সম্পর্কে পূর্ববর্তী শ্রেণিতে জেনেছি। নিচের চিত্রটি লক্ষ করো।

চিত্র: ৫.১২ এ বর্ণিত বিভিন্ন চতুর্ভুজকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে ছক ৫.৫ পূরণ করো :

তোমরা নিশ্চয় লক্ষ করে থাকবে যে, আমরা একটি নতুন চিত্র দেখলাম। চিত্রটির নাম হলো ঘুড়ি। ঘুড়ির দুই জোড়া সন্নিহিত বাহু সমান। আবার ঘুড়ির দুই জোড়া সন্নিহিত বাহুর দৈর্ঘ্যগুলো অর্থাৎ চারটি বাহুর দৈর্ঘ্য সমান হলে আমরা তাকে বলব রম্বস। ফলে সকল রম্বসকে আমরা ঘুড়ি বলতে পারি। একইভাবে অন্য আকৃতিগুলোর মধ্যেও কিছু সম্পর্ক খুঁজে বের করা সম্ভব। নিচের ছকের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিলে তোমরা ঐ সম্পর্কগুলো চিহ্নিত করতে পারবে। এখন জোড়ায় আলোচনার মাধ্যমে ছক ৫.৬ পূরণ করো।

 

 

চতুর্ভুজের গঠন

আমরা বিভিন্ন প্রকার চতুর্ভুজের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানলাম যা আকৃতি পরিমাপের ক্ষেত্রে এবং পরিমাপের সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের সাহায্য করবে। এবার আমরা কীভাবে বিভিন্ন ধরনের চতুর্ভুজ গঠন করা যায় তা নিয়ে কাজ করব। আগের শ্রেণিতে কাঠিতে স্কেলের সাহায্যে 1 cm পরপর দাগ দিয়ে চার কাঠি ব্যবহার করে সুতার সাহায্যে কাঠিগুলোকে বেঁধে বর্গ, রম্বস, আয়ত ও সামান্তরিক তৈরি করে খাতায় বসিয়ে চিত্রগুলো এঁকেছ। এই সবকটি আকৃতিই হলো চতুর্ভুজ। এর বাইরেও চার কাঠি ব্যবহার করে নানা রকমের চতুর্ভুজ বানানো সম্ভব। তবে এদেরকে হয়তো আমরা বিশেষায়িত নাম দিতে পারব না। এক কথায় সবকটিই হচ্ছে চতুর্ভুজ। কিন্তু যে কোনো দৈর্ঘ্যের চার কাঠি হলেই কি আমরা চতুর্ভুজ গঠন করতে পারব? তোমরা ত্রিভুজ গঠনের সময় এ ধরনের সমস্যায় পড়েছিলে। যে কোনো দৈর্ঘ্যের তিনটি বাহু দিয়ে কি ত্রিভুজ গঠন সম্ভব ছিল? সেক্ষেত্রে দুই বাহুর দৈর্ঘ্যের সমষ্টি তৃতীয় বাহুর দৈর্ঘ্য অপেক্ষা বড়ো হওয়ার প্রয়োজন ছিল। চতুর্ভুজ গঠনের ক্ষেত্রে তোমরা বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের কাঠি নিয়ে চেষ্টা করো এবং তোমার সিদ্ধান্ত নিচের ফাঁকা ঘরে লেখো।

 

দলগত কাজ

চলো এবার আমরা চতুর্ভুজ গঠন করি। এক্ষেত্রে তোমরা জ্যামিতি বক্স ব্যবহার করে কাজটি করতে পার।

(ক) ABCD চতুর্ভুজটি গঠন করো যেখানে, AB = 3 cm, BC = 4 cm, CD = 5 cm এবং DA = 6 cm.

তোমাদের বিভিন্ন দলের আঁকা চতুর্ভুজগুলো কি দেখতে একই রকম? নিশ্চয়ই নয়। কারণ পাশাপাশি দুই বাহুর মধ্যবর্তী কোণের পরিমাপ জানা না থাকার কারণে তোমরা তোমাদের ইচ্ছেমতো কোণ নিয়ে কাজটি করেছ। ফলে একেক দলের চতুর্ভুজের আকৃতি একেক রকম হয়েছে। তাহলে আমরা চারটি বাহুর সঙ্গে একটি কোণ নির্দিষ্ট করে দিয়ে দেখতে পারি চতুর্ভুজগুলোর আকৃতি কেমন হয়।

(খ) ABCD চতুর্ভুজটি গঠন করো যেখানে, AB = 3 cm, BC = 4 cm, CD = 5 cm, DA = 4.5 cm এবং AB ও AD বাহুর মধ্যবর্তী কোণ 60 ডিগ্রি।

এবার দেখো যে, তোমাদের প্রত্যেক দলের চতুর্ভুজটি দেখতে একই রকম হয়েছে। তাহলে আমরা বলতে পারি যে, চারটি বাহু হলেই একটি নির্দিষ্ট চতুর্ভুজ গঠন করা যায় না। একটি কোণকেও নির্দিষ্ট করতে হয়। তবে এখানে একটি ব্যাপার আছে। তুমি যদি বাহুগুলোকে নির্দিষ্ট ক্রমে যুক্ত না করে অন্য কোনোভাবে যুক্ত করো তবুও কি নির্দিষ্ট চতুর্ভুজ পাওয়া যাবে?

সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে তোমার মতামত নিচের ঘরে লেখো।

আমরা এবার লক্ষ করি একটি চতুর্ভুজে কী কী থাকে। একটি চতুর্ভুজে চারটি বাহু, চারটি কোণ এবং দুইটি কর্ণ থাকতে পারে। এই দশটি তথ্যের মধ্য থেকে আমরা পাঁচটি নির্দিষ্ট তথ্য নিয়ে একটি নির্দিষ্ট চতুর্ভুজ অঙ্কন করতে পেরেছি। আমরা এখন নানাভাবে পাঁচটি তথ্য নিয়ে দেখব নির্দিষ্ট চতুর্ভুজ অঙ্কন করা যায় কি না। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আকৃতির নকশা তৈরি এবং পরিমাপ করার ক্ষেত্রে চতুর্ভুজ গঠনের এই বৈশিষ্ট্যগুলো তোমরা ব্যবহার করতে পারবে।

Content added || updated By