SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বাংলা - Bangla - শব্দ বুঝি বাক্য লিখি | NCTB BOOK

নিচের গদ্যাংশটি এস. ওয়াজেদ আলির (১৮৯০-১৯৫১) লেখা একটি প্রবন্ধের অংশ। এটি লেখকের 'ভবিষ্যতের বাঙালি' বই থেকে নেওয়া। এস. ওয়াজেদ আলি উনিশ শতকের একজন সাহিত্যিক। তাঁর লেখা অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে 'গুলদাস্তা', 'মোটরযোগে রাঁচি সফর' ইত্যাদি।

 

 

ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সামাজিক স্বার্থ

এস. ওয়াজেদ আলি

 

মানুষ কেবল নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ নিয়ে থাকতে পারে না; সামাজিক স্বার্থের আকর্ষণও সে অনুভব করে। নিজের স্বার্থের এবং সামাজিক স্বার্থের কথা ভাবা তার পক্ষে স্বাভাবিক। স্বার্থপরতা আর পরার্থপরতা-দুটি মানুষের প্রকৃতিগত। আর একে ভিত্তি করেই তার সমাজজীবন গঠিত হয়েছে, তার নীতিবাদ রচিত হয়েছে।

তবে এ কথা সত্য যে, কোনো কোনো মানুষের মধ্যে ব্যক্তিগত স্বার্থ বড়ো আকারে, কারো মধ্যে সামাজিক স্বার্থ বড়ো আকারে দেখা দেয়। যাদের কাছে ব্যক্তিগত স্বার্থের মূল্য বেশি, তারা ধনী হয়, বিষয়-সম্পত্তি করে, নিজেদের সুখ-দুঃখ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। যাদের কাছে সামাজিক স্বার্থের মূল্য বেশি, তারা দেশপ্রেমিক হয়, দশের মঙ্গলের জন্য সাধনা করে, বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সেবায়, বিভিন্ন সামাজিক আদর্শের সাধনায় আত্মনিয়োগ করে।

বলাবাহুল্য, এই শেষোক্ত শ্রেণির মানুষের উপরেই সমাজের মঙ্গল এবং উন্নতি নির্ভর করে। তাদের উৎসাহ এবং কর্মতৎপরতাই সমাজকে জীবনের উচ্চতর স্তরে নিয়ে যায়, আর তাদের অবসাদ ও নিরুৎসাহ সমাজের পতন এবং মৃত্যুর কারণ হয়।

মানুষে আর পশুতে তফাত এই যে, মানুষের জীবন চিন্তার দ্বারা এবং পশুর জীবন দৈহিক প্রয়োজনের তাড়নায় পরিচালিত হয়। মানুষ যত উচ্চে উঠতে থাকে চিন্তার, ভাবের প্রভাব তার জীবনে ততই বাড়তে থাকে। সভ্যতার বিকাশ এবং বিস্তারের মানেই হচ্ছে চিন্তার বিকাশ, ভাবের সম্প্রসারণ।

প্রত্যেক যুগেই মানুষ সামাজিক জীবনের একটা না একটা আদর্শ, একটা না একটা পরিকল্পনা নিয়ে তার বেষ্টনীর সম্মুখীন হয়েছে। মানুষের প্রকৃত ইতিহাস হলো তার মনের ইতিহাস; তার বিভিন্ন আদর্শের, তার বিভিন্ন পরিকল্পনার উৎপত্তি, বিকাশ এবং লয়ের ইতিহাস; এবং তার বিভিন্ন আদর্শ এবং পরিকল্পনার, দ্বন্দ্বের, মিলনের ও সংমিশ্রণের ইতিহাস। এই যে দ্বন্দ্ব, সংমিশ্রণ আর মিলন এ অবিরামভাবে চলেছে আর চিরকালই চলবে। এই দ্বন্দ্ব, এই সংগ্রামে সেই ভাব, সেই পরিকল্পনাই জয়ী হয় যা দেশ, কাল এবং পাত্রের উপযোগী। যে ধারণা বা পরিকল্পনায় এ উপযোগিতার অভাব ঘটে, সেটি শেষে পরাভূত হয়; এবং সমাজদেহ থেকে সম্পূর্ণরূপে নিষ্কাশিত হয়; না হয়, সমাজদেহে অপেক্ষাকৃত নিম্নতর স্থান অধিকার করে পড়ে থাকে। মানবেতিহাসের রঙ্গমঞ্চে এইরূপে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন ভাব, বিভিন্ন পরিকল্পনা এসেছে, দুদিনের জন্য নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছে, তারপর হয় মঞ্চ থেকে অদৃশ্য হয়েছে, না হয় নায়কের ভূমিকা ছেড়ে কোনো ক্ষুদ্রতর ভূমিকা নিয়ে তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।

Content added || updated By

উপরের গদ্যাংশটি থেকে কমপক্ষে দুটি করে সমাস, উপসর্গ ও প্রত্যয়ের মাধ্যমে গঠিত শব্দ শনাক্ত করো। ১ম কলামে শব্দ লিখবে, ২য় কলামে শব্দটিকে ভাঙবে এবং ৩য় কলামে শব্দটি কীভাবে গঠিত তা লিখবে। লেখা হয়ে গেলে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো। তিন ধরনের গঠিত শব্দের একটি করে উদাহরণ দেখানো হলো।

 

গঠিত শব্দ

শব্দটি ভাঙলে যেমন হবে

কীভাবে গঠিত

সমাজজীবন

সমাজ+জীবন

সমাসের মাধ্যমে

সম্প্রসারণ

সম্+প্রসারণ

উপসর্গের মাধ্যমে

সামাজিক

সমাজ+ইক

প্রত্যয়ের মাধ্যমে

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

শব্দগঠন

 

বাংলা ভাষায় শব্দগঠনের প্রধান উপায় তিনটি: সমাস, উপসর্গ এবং প্রত্যয়।

 

ক. সমাস

 

সমাস শব্দগঠনের একটি প্রক্রিয়া। দুটি শব্দ মিলে যখন একটি শব্দে পরিণত হয়, তখন তাকে সমাস বলে। সমাসের মাধ্যমে গঠিত শব্দের নমুনা: মা+বাবা-মা-বাবা; সিংহ+আসন-সিংহাসন;

ঘি+ভাজা=ঘিয়েভাজা; নীল+পদ্ম = নীলপদ্ম; অরুণ+রাঙা=অরুণরাঙা; রাজা+পথ =রাজপথ।

সমাসের মাধ্যমে গঠিত শব্দকে বলা হয় সমস্তপদ। উপরের উদাহরণগুলোতে মা-বাবা, সিংহাসন, ঘিয়েভাজা, নীলপদ্ম, অরুণরাঙা ও রাজপথ-এগুলো সমস্তপদ। সমস্তপদের দুটি অংশ-পূর্বপদ ও পরপদ। এখানে মা, সিংহ, ঘি, নীল, অরুণ, রাজা হলো পূর্বপদ এবং বাবা, আসন, ভাজা, পদ্ম, রাঙা, পথ হলো পরপদ।

সমাস-সাধিত শব্দকে ব্যাখ্যা করা হয় যে শব্দগুচ্ছ দিয়ে তাকে বলা হয় ব্যাসবাক্য। যেমন: 'মা-বাবা'র ব্যাসবাক্য-মা ও বাবা, 'সিংহাসন' শব্দের ব্যাসবাক্য-সিংহ চিহ্নিত আসন, 'ঘিয়েভাজা' শব্দের ব্যাসবাক্য ঘিয়ে ভাজা, 'নীলপদ্ম' শব্দের ব্যাসবাক্য-নীল যে পদ্ম, 'অরুণরাঙা' শব্দের ব্যাসবাক্য- অরুণের মতো রাঙা, 'রাজপথ' শব্দের ব্যাসবাক্য-পথের রাজা।

 

নিচে কিছু সমাস-সাধিত শব্দের নমুনা দেওয়া হলো:

 

Content added || updated By

নিচের শব্দগুলোর আগে বা পরে অন্য শব্দ যোগ করে নতুন শব্দ বানাও। কাজ শেষে সহপাঠীকে তোমার কাজ দেখাও, তুমিও তার কাজ দেখো এবং একে অপরের কাজ নিয়ে আলোচনা করো। একটি নুমনা করে দেখানো হলো।

এভাবে নিজেরা শব্দের আগে-পরে শব্দ যোগ করে নতুন নতুন শব্দ বানানোর খেলা খেলতে পারো।

 

খ. উপসর্গ

 

যেসব শব্দের প্রথম অংশ সাধারণত কোনো অর্থ প্রকাশ করে না, কিন্তু দ্বিতীয় অংশের অর্থ থাকে, সেসব শব্দকে বলা হয় উপসর্গ-সাধিত শব্দ। উপসর্গের মাধ্যমে গঠিত শব্দের নমুনা: পরা+জয়=পরাজয়; পরি+তাপ=পরিতাপ; বি+ফল=বিফল; আ+কাল=আকাল; উপ+গ্রহ=উপগ্রহ।

 

উপসর্গের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই। উপসর্গ স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হতে পারে না। কিন্তু অন্য শব্দের আগে ব্যবহৃত হয়ে অর্থদ্যোতনা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন: 'দান' শব্দটির পূর্বে বিভিন্ন উপসর্গযোগে অনেকগুলো অর্থদ্যোতক শব্দ গঠিত হতে পারে। যেমন: অব+দান=অবদান, প্রতি+দান=প্রতিদান, প্র+দান=প্রদান ইত্যাদি।

 

নিচে কিছু উপসর্গ-সাধিত শব্দের নমুনা দেওয়া হলো :

Content added || updated By

নিচের ছকের প্রথম কলামে কয়েকটি উপসর্গ দেওয়া হলো। এসব উপসর্গের সঙ্গে যুক্ত হয় এমন শব্দ মাঝের কলামে লেখো। তৃতীয় কলামে লেখো উপসর্গ-সাধিত শব্দটি। তোমার বানানো শব্দগুলো যেন উপরের উপসর্গ- সাধিত শব্দের উদাহরণ থেকে আলাদা হয়। কাজ শেষে সহপাঠীকে তোমার কাজ দেখাও, তুমিও তার কাজ দেখো এবং একে অপরের কাজ নিয়ে আলোচনা করো। প্রথমটি করে দেখানো হলো।

 

গ. প্রত্যয়

 

যেসব শব্দের প্রথম অংশ অর্থযুক্ত এবং দ্বিতীয় অংশ অর্থহীন, সেসব শব্দকে বলা হয় প্রত্যয়-সাধিত শব্দ। যেমন: দিন+ইক-দৈনিক। এখানে 'দিন' শব্দের পরে 'ইক' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ 'দৈনিক' তৈরি হয়েছে। এভাবে প্রত্যয়ের মাধ্যমে গঠিত শব্দের উদাহরণ: পড়ু+উয়া=পড়ুয়া; চল্+অন্ত=চলন্ত; ফুল+দানি=ফুলদানি; ঢাকা+আই=ঢাকাই ইত্যাদি।

খেয়াল করো, উপরের প্রথম দুটি শব্দের প্রথম অংশ 'পড়' এবং 'চল্' হলো ক্রিয়ামূল। ক্রিয়ামূলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া প্রত্যয়কে বলে কৃৎপ্রত্যয়। এখানে 'উয়া' ও 'অন্ত' হলো কৃৎপ্রত্যয়।

আবার পরের দুটি শব্দের প্রথম অংশ 'ফুল' ও 'ঢাকা' হলো নামশব্দ। নামশব্দের সঙ্গে যুক্ত হওয়া প্রত্যয়কে বলে তদ্ধিত প্রত্যয়। এখানে 'দানি' ও 'আই' হলো তদ্ধিত প্রত্যয়।

প্রত্যয়-সাধিত কিছু শব্দের নমুনা নিচে দেওয়া হলো:

 

Content added || updated By

নিচের ছকের দ্বিতীয় কলামে কয়েকটি প্রত্যয় দেওয়া হলো। প্রথম কলামে এমন কিছু ক্রিয়ামূল বা নামশব্দ লেখো যেগুলো এসব প্রত্যয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়। তৃতীয় কলামে লেখো প্রত্যয়-সাধিত শব্দটি। তোমার বানানো শব্দগুলো যেন উপরের প্রত্যয়-সাধিত শব্দের উদাহরণ থেকে আলাদা হয়। কাজ শেষে সহপাঠীকে তোমার কাজ দেখাও, তুমিও তার কাজ দেখো এবং একে অপরের কাজ নিয়ে আলোচনা করো। প্রথমটি করে দেখানো হলো।

Content added || updated By