SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) - Science (Investigative Study) - NCTB BOOK

৭.১ যোজনী বা যোজ্যতা, যৌগমূলক

তোমরা আগের শ্রেণিতে যোজনী ও যৌগমূলক কী, এ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছ। এখানে, যোজ্যতা, যৌগমূলক ও যোজনী সম্পর্কে আরেকটু বিশদভাবে আলোচনা করা হবে। কোনো মৌলের পরমাণুর যোজ্যতা সম্পর্কে জানার আগে ঐ পরমাণুর যোজ্যতা ইলেকট্রন বলতে কী বোঝায় সেটি জানতে হবে।

যোজ্যতা ইলেকট্রন (Valence electron):

কোনো মৌলের পরমাণুর সর্বোচ্চ শক্তিস্তর বা সর্বশেষ কক্ষপথে যে ইলেকট্রনগুলো থাকে সেই ইলেকট্রন সংখ্যাকে যোজ্যতা ইলেকট্রন বলে। উদাহরণ দেওয়ার জন্য বলা যায় যে, বোরন (B) ও অক্সিজেন (০)-এর ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে দেখা যায়, এদের সর্বশেষ কক্ষপথে যথাক্রমে ওটি ও 6টি ইলেকট্রন রয়েছে। সুতরাং বোরন (B) ও অক্সিজেন (০) -এর যোজ্যতা ইলেকট্রন সংখ্যা যথাক্রমে ও ও ৩। ৭.১ চিত্রে বোরন (B) এবং অক্সিজেন (০) -এর যোজ্যতা ইলেকট্রন দেখানো হলো।

বোরন (B) ও অক্সিজেন (০) -এর ইলেকট্রন বিন্যাস নিচে দেখানো হলো-

তোমরা নাইট্রোজেন (N), ফসফরাস (P), ও ক্লোরিনের (Cl) ইত্যাদি মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে তাদের যোজ্যতা ইলেকট্রন কত বের করার চেষ্টা করতে পারো।

যোজনী বা যোজ্যতা (Valency)

তোমরা ইতিমধ্যে জানো যে, মৌলের পরমাণুসমূহ সর্বশেষ কক্ষপথের ইলেকট্রন গ্রহণ, ত্যাগ বা ভাগাভাগি করতে পারে। এভাবে, পরমাণুসমূহ ইলেকট্রন গ্রহণ বা ত্যাগ বা ভাগাভাগি করার মাধ্যমে অণু গঠন করে। আর অণু গঠনের সময় কোনো মৌলের একটি পরমাণুর সঙ্গে আরেকটি পরমাণুর যুক্ত হওয়ার ক্ষমতাই হচ্ছে যোজনী বা যোজ্যতা (valency)। যোজনী বা যোজ্যতাকে এভাবেও বলা যায়:

কোনো মৌলের একটি পরমাণুর সঙ্গে যত সংখ্যক হাইড্রোজেন (H) পরমাণু বা ক্লোরিন (Cl) পরমাণু যুক্ত হতে পারে, সেই সংখ্যাটিই হচ্ছে ঐ মৌলের যোজনী বা যোজ্যতা। আবার কোনো মৌলের একটি পরমাণুর সঙ্গে যত সংখ্যক অক্সিজেন পরমাণু যুক্ত হতে পারে, সেই সংখ্যাটির দ্বিগুণ হচ্ছে ঐ মৌলের যোজনী বা যোজ্যতা। উদাহরণ দেওয়ার জন্য বলা যায়,

অ্যামোনিয়া (NH3): নাইট্রোজেনের (N) 1টি পরমাণুর সঙ্গে হাইড্রোজেনের (H) 3টি পরমাণু যুক্ত হয়েছে। সুতরাং, নাইট্রোজেনের যোজনী ও।

সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl): সোডিয়ামের (Na) 1টি পরমাণুর সঙ্গে ক্লোরিনের (CI) 1টি পরমাণু যুক্ত হয়েছে। সুতরাং, সোডিয়ামের যোজনী 1।

ক্যালসিয়াম অক্সাইড (CaO): ক্যালসিয়ামের (Ca) 1টি পরমাণুর সঙ্গে অক্সিজেনের 1টি পরমাণু যুক্ত হয়েছে। সুতরাং, ক্যালসিয়ামের যোজনী 2।

আবার, কিছু মৌলের একাধিক যোজনী থাকে। যেমন- আয়রন (Fe) -এর দুটি যোজনী আছে।

FeCl : আয়রনের (Fe) 1টি পরমাণুর সঙ্গে 2টি ক্লোরিন (CI) পরমাণু যুক্ত হয়েছে। আয়রনের যোজনী 2 ।

 FeCl3: আয়রনের (Fe) 1টি পরমাণুর সঙ্গে ওটি ক্লোরিন (Cl) পরমাণু যুক্ত হয়েছে। আয়রনের যোজনী 31

কোনো মৌলের একাধিক যোজনী থাকলে ঐ মৌলের যোজনীকে পরিবর্তনশীল যোজনী বলা হয়। সুতরাং, আয়রনের পরিবর্তনশীল যোজনী 2 ও 3।

যৌগমূলক (Radicals)

কোনো মৌলের একাধিক পরমাণুর একটি গ্রুপ বা পরমাণুগুচ্ছ যখন ধনাত্মক বা ঋণাত্মক চার্জসহ একটি মৌলের আয়নের মতো আচরণ করে, তখন ঐ পরমাণুগুচ্ছকে যৌগমূলক বলা হয়। যৌগমূলকের একটি চার্জ থাকে, সেটি ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক দুইই হতে পারে। এই চার্জের সংখ্যাটিই হচ্ছে তাদের যোজনী। চার্জ ধনাত্মক বা ঋণাত্মক হতে পারে, কিন্তু যোজনী সব সময়ই একটি সংখ্যা।

উদাহরণ: একটি ফসফরাস (P) পরমাণু, ওটি হাইড্রোজেন (H) পরমাণু, ও 1টি H* যুক্ত হয়ে ফসফোনিয়াম আয়ন (PH) নামক যৌগমূলক তৈরি করে। যেহেতু এই PH₁ যৌগমূলকের চার্জের সংখ্যা +1, সুতরাং এর যোজনী হবে ।। সাধারণত, ধনাত্মক চার্জের যৌগমূলককে ক্ষারীয় যৌগমূলক (যেমন- NH₁) আর ঋণাত্মক চার্জের যৌগমূলককে অম্লীয় যৌগমূলক বলা হয় (যেমন- NO₃)।

৭.২ যৌগের রাসায়নিক সংকেত (Chemical formula of a compound)

তোমরা পর্যায় সারণিতে দেখেছ, প্রত্যেকটা মৌলের পরমাণুর জন্য একটি এক কিংবা দুই ইংরেজি অক্ষরের সুনির্দিষ্ট প্রতীক রয়েছে। কোনো যৌগের রাসায়নিক সংকেত হচ্ছে যেসব মৌল দিয়ে ঐ যৌগটির রাসায়নিক গঠন হয়েছে তার একটি প্রতীকী উপস্থাপনা। অর্থাৎ এখানে কোনো যৌগের অণুতে যেসব পরমাণু থাকে, সেসব পরমাণুর প্রতীক এবং সংখ্যার মাধ্যমে অণুটিকে প্রকাশ করা যায়। যেমন- H2O হচ্ছে পানির একটি অণু, এখানে দুইটি হাইড্রোজেন (H) ও একটি অক্সিজেন (০) আছে, সুতরাং পানির রাসায়নিক সংকেত হলো H2

নিচে রাসায়নিক সংকেত লেখার নিয়মগুলো উল্লেখ করা হলো:

১) কোনো মৌলের অণুর রাসায়নিক সংকেত লিখতে হলে ঐ অণুতে বিদ্যমান পরমাণুর প্রতীকটি লিখে মৌলটির প্রতীকের ডানপাশের নিচে ছোটো করে (subscript) অণুতে মৌলের সংখ্যা লিখতে হবে। যেমন- নাইট্রোজেন অণুতে 2টি নাইট্রোজেন পরমাণু (N) থাকে। সুতরাং, নাইট্রোজেনের সংকেত N3

কিছু মৌল আছে যারা অণু গঠন করে না, তাদেরকে শুধু প্রতীক দিয়ে বোঝানো হয়। যেমন- সকল ধাতু অণু গঠন করে না, কাজেই আয়রনকে বোঝাতে বা লিখতে হলে শুধু Fe লেখা হয়। আবার, নিষ্ক্রিয় গ্যাস গুলোও অণু গঠন করে না বলে এদেরকে লিখতেও শুধু তাদের প্রতীক ব্যবহার করা হয়। যেমন- হিলিয়াম লেখা হয় He হিসেবে।

২) কোনো যৌগের অণু যদি দুটি ভিন্ন মৌলের পরমাণু দিয়ে গঠিত হয় তাহলে যৌগটির অণুতে বিদ্যমান মৌল (কিংবা যৌগমূলক) দুটির প্রতীক পাশাপাশি লিখে একটি মৌলের পাশে নিচের দিকে ছোটো করে অপর মৌলটির যোজনী লিখতে হবে। যেমন- আমরা জানি, অ্যালুমিনিয়াম (AI) -এর যোজনী ও এবং অক্সিজেন (০) -এর যোজনী 2। এই দুটি মৌল দিয়ে গঠিত যৌগ হচ্ছে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড, এর সংকেত AI2O3। এখানে, AI -এর পাশে নিচের দিকে ছোটো করে ০-এর যোজনী (2) লেখা হয়েছে এবং ০-এর পাশে নিচের দিকে ছোটো করে Al-এর যোজনী (3) লেখা হয়েছে। একইভাবে ক্যালসিয়াম (Ca)-এর যোজনী 2 এবং ক্লোরিন (Cl)-এর যোজনী 1, সুতরাং, উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী ক্যালসিয়াম (Ca) ও ক্লোরিন (CI) দিয়ে গঠিত ক্যালসিয়াম ক্লোরাইডের সংকেত হলো CaCl2

তবে যৌগে উপস্থিত মৌলসমূহ বা যৌগমূলকের যোজনী একই হলে সংকেতে যোজনী লেখার প্রয়োজন হয় না। যেমন- ক্যালসিয়াম (Ca) -এর যোজনী 2 এবং অক্সিজেন (০) -এর যোজনী 2 এই দুটি মৌল দিয়ে গঠিত যৌগ ক্যালসিয়াম অক্সাইডকে Ca2O2 না লিখে CaO লেখা হয়।

নিয়ম অনুযায়ী তাদের দিয়ে গঠিত যৌগের সংকেত লেখা যাবে। যেমন- ম্যাগনেসিয়াম (Mg) একটি মৌল এবং এর যোজনী 2 এবং ফসফেট (PO) একটি যৌগমূলক যার যোজনী ও। সুতরাং, নিয়ম অনুযায়ী এদের দিয়ে গঠিত ম্যাগনেসিয়াম ফসফেটের সংকেত হবে Mg, (PO)। এক্ষেত্রে, কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ না রাখার জন্য যৌগমূলকটি প্রথম বন্ধনীর মধ্যে রেখে লিখতে হয়।

৩) যদি মৌল দুটির যোজনী কোনো সাধারণ সংখ্যা দিয়ে বিভাজ্য হয়, তাহলে মৌল দুটির যোজনীকে সাধারণ সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে মৌল দুটির পাশে প্রাপ্ত ভাগফলদ্বয় নিয়ম অনুযায়ী লিখতে হবে। যেমন- কার্বন ডাইঅক্সাইড অণু কার্বন (C) ও অক্সিজেন (০) এই দুটি মৌল দিয়ে গঠিত। এখানে, কার্বনের যোজনী 4 এবং অক্সিজেনের যোজনী 2, কিন্তু এটিকে আমরা C₂O4 লিখি না। যেহেতু কার্বন 4 ও অক্সিজেনের যোজনীকে দুই দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় যথাক্রমে 2 এবং 1। সুতরাং, নিয়ম এক অনুযায়ী কার্বন (C) -এর ডানপাশে নিচে 1 এবং অক্সিজেন (০) -এর ডানপাশে নিচে 2 লেখার কথা, যেহেতু সংকেত লেখার সময় । সংখ্যাটি লেখা প্রয়োজন হয় না, তাই কার্বনডাইঅক্সাইড -এর সংকেত হচ্ছে CO₂

৭.৩ নিষ্ক্রিয় গ্যাস এবং স্থিতিশীলতা (Inert gas and stability)

তোমরা ইতোমধ্যে জানো যে, নিষ্ক্রিয় গ্যাসসমূহ পর্যায় সারণির 18 নম্বর গ্রুপে অবস্থিত। নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর এই নিষ্ক্রিয়তা বা স্থিতিশীলতার কারণ হচ্ছে এদের সর্বশেষ শক্তিস্তর ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ থাকে। হিলিয়ামের পারমাণবিক সংখ্যা 2, কাজেই তার একটি মাত্র শক্তিস্তর সেটি হচ্ছে 1s, সেটি পূর্ণ করতে মাত্র 2টি ইলেকট্রনের প্রয়োজন এবং হিলিয়ামের সর্বশেষ কক্ষপথ বা শক্তিস্তরে রয়েছে সেই দুটি ইলেকট্রন। অন্যান্য নিষ্ক্রিয় গ্যাসসমূহের সর্বশেষ শক্তিস্তরে ৪টি ইলেকট্রন দিয়ে এবং p অরবিটাল পূর্ণ থাকে। নিচে কয়েকটি নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস দেখানো হলো-

কাজেই নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে দেখা যাচ্ছে যে, হিলিয়ামের সর্বশেষ শক্তিস্তরে 2টি এবং অন্যান্য নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ক্ষেত্রে ৪ (আট)টি ইলেকট্রন থাকায় তাদের সর্বশেষ শক্তিস্তর পূর্ণ করতে আর ইলেকট্রনের প্রয়োজন নেই। তাই এরা স্থিতিশীলতা অর্জন করে। কোনো মৌলের সর্বশেষ শক্তিস্তরে ৪ (আট)টি ইলেকট্রন থাকলে এরা সর্বাধিক স্থিতিশীল হয়। নিষ্ক্রিয় গ্যাসসমূহ অধিক স্থিতিশীল হওয়ার  দরুন তারা অন্য মৌলকে ইলেকট্রন প্রদান করে না আবার গ্রহণও করে না। ফলে, এরা রাসায়নিকভাবে আসক্তিহীন বা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

অষ্টক-এর নিয়ম (Octet Rule): আমরা জানি যে, যেহেতু নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলো সবচেয়ে বেশি স্থিতিশীল তাই প্রতিটি মৌলই তার সর্বশেষ শক্তিস্তরে (valence shell) নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জন করতে চায় অর্থাৎ তাদের সর্বশেষ শক্তি স্তরে ৪টি ইলেকট্রন অর্জন করার প্রবণতা দেখায়। একমাত্র হিলিয়াম (He) ছাড়া বাকি সব নিষ্ক্রিয় গ্যাসেরই সর্বশেষ শক্তিস্তরে ৪টি ইলেকট্রন আছে। তাই মৌল বা পরমাণুসমূহ যখন অণু গঠন করে তখন তারা ইলেকট্রন গ্রহণ, ত্যাগ বা ভাগাভাগি (sharing) করার মাধ্যমে তাদের সর্বশেষ শক্তিস্তরে ৪ (আট) টি ইলেকট্রন ধারণ করে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতো ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জন করে। একেই 'অষ্টক' নিয়ম (Octet rule) বলা হয়।

উদাহরণ: মিথেন (CH₁) অণুতে কার্বন (C) পরমাণুর সর্বশেষ শক্তিস্তরে ৪ (আট)টি ইলেকট্রন আছে। এই ৪ (আট) টি ইলেকট্রনের মধ্যে 4টি কার্বনের আর 4টি ইলেকট্রন হাইড্রোজেন (H) পরমাণু থেকে আসে। ৭.২ চিত্রে সেটি দেখানো হয়েছে।

৭.৪ রাসায়নিক বন্ধন (Chemical Bond 

কোনো রাসায়নিক যৌগ গঠন করতে দুই বা ততোধিক পরমাণু, অণু বা আয়নের মধ্যে বন্ধনই হচ্ছে রাসায়নিক বন্ধন। এই রাসায়নিক বন্ধন যৌগের পরমাণুগুলোকে একত্রিত করে রাখে বা ধরে রাখে। যেমন- দুটি হাইড্রোজেন (H) পরমাণু পরস্পরের সঙ্গে বন্ধনে যুক্ত হয়ে হাইড্রোজেন অণু (H₁₂) গঠন করে। অর্থাৎ, এখানে বন্ধন গঠনের জন্য দুটি হাইড্রোজেন পরমাণুর মধ্যে এক ধরনের আকর্ষণ বল কাজ করেছে এবং এই আকর্ষণ বলই হচ্ছে মূলত রাসায়নিক বন্ধন। অতএব, অণু গঠনের জন্য পরমাণুসমূহ যে আকর্ষণের মাধ্যমে যুক্ত থাকে, তাকে রাসায়নিক বন্ধন বলে।

বন্ধন গঠনের কারণ হচ্ছে, আসলে প্রত্যেক মৌলই তার সর্বশেষ শক্তিস্তরে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতো ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জন করে স্থিতিশীল হতে চায়। তাই যখন একই মৌল বা ভিন্ন মৌলের দুটি পরমাণু কাছাকাছি আসে তারা তাদের সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রন গ্রহণ বা ত্যাগ বা ভাগাভাগি করে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতো স্থিতিশীল ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জন করে। ফলে, পরমাণুগুলোর মধ্যে এক ধরনের আকর্ষণ তৈরি হয়। আর এই আকর্ষণের কারণেই রাসায়নিক বন্ধন গঠিত হয়।

চিত্র ৭.২: মিথেন (CH) অণুতে অষ্টক নিয়ম

৭.৪.১ আয়নিক বন্ধন (lonic Bond)

পর্যায় সারণি পড়ার সময় তোমরা দেখেছ ধাতুগুলোর আয়নিকরণ শক্তির মান অনেক কম। ফলে, এরা অতি সহজেই তাদের সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট আয়ন বা ক্যাটায়নে পরিণত হতে পারে। আবার, অধাতুগুলোর ইলেকট্রন আসক্তির মান বেশি হওয়ায় তারা তাদের সর্বশেষ শক্তিস্তরে ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক বা নেগেটিভ চার্জবিশিষ্ট আয়ন বা অ্যানায়নে পরিণত হতে পারে। এভাবে সৃষ্ট হওয়া ক্যাটায়ন এবং অ্যানায়ন পরস্পরের মধ্যে এক ধরনের তড়িত আকর্ষণ বল কাজ করে তাদের নিজেদের ধরে রেখে বন্ধন তৈরি করতে পারে। এই বন্ধনই হচ্ছে আয়নিক বন্ধন।

উদাহরণ: এখানে, উদাহরণ দেওয়ার জন্য সোডিয়াম আয়ন (Na') এবং ক্লোরাইড আয়ন (Cl) -এর মধ্যে সৃষ্ট বন্ধনের ফলে তৈরি সোডিয়াম ক্লোরাইডের (NaCl) কথা বলা যেতে পারে। এই NaCl -এ আয়নিক বন্ধন বিদ্যমান।

সোডিয়াম (Na) -এর সর্বশেষ শক্তিস্তরের একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতো ইলেকট্রন বিন্যাস (সর্বশেষ শক্তিস্তরে ৪ (আট) টি ইলেকট্রন) অর্জন করে সোডিয়াম আয়ন (Na)- এ পরিণত হয় যা আমরা ইতোমধ্যে জানি। আবার ক্লোরিন (Cl) ও তার সর্বশেষ শক্তিস্তরে একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতো ইলেকট্রন বিন্যাস (সর্বশেষ শক্তিস্তরে ৪ (আট)টি ইলেকট্রন) অর্জন করে ক্লোরাইড আয়ন (Cl) -এ পরিণত হয়।

সুতরাং, এভাবে তৈরিকৃত সোডিয়াম আয়ন (Na+) এবং ক্লোরাইড আয়ন (Cl-) পরস্পরের সঙ্গে ইলেকট্রোস্ট্যাটিক আকর্ষণ বলের মাধ্যমে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আর, এভাবে ইলেকট্রোস্ট্যাটিক আকর্ষণ বলের মাধ্যমে সৃষ্ট বন্ধনই হচ্ছে আয়নিক বন্ধন। আর, যে যৌগে এ বন্ধন বিদ্যমান থাকে তাকে আয়নিক যৌগ বলে। ৭.৩ চিত্রে সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) -এর আয়নিক বন্ধন তৈরি দেখানো হলো।

এখানে উল্লেখ্য, পর্যায় সারণির 1 ও 2 নম্বর গ্রুপের ধাতব মৌলগুলো এবং গ্রুপ-16 ও গ্রুপ-17 -এর অধাতু মৌলগুলো সাধারণত আয়নিক বন্ধন তৈরি করে।

৭.৪.২ সমযোজী বন্ধন (Covalent bond)

আমরা জানি যে, অধিক আয়নিকরণ শক্তিসম্পন্ন মৌলগুলো ইলেকট্রন ত্যাগ করতে পারে না, আবার কম ইলেকট্রন আসক্তিসম্পন্ন মৌলসমূহ সহজে ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে না। যেমন- ক্লোরিন (CI) -এর সর্বশেষ শক্তিস্তরে 7টি ইলেকট্রন আছে। ফলে, ক্লোরিন তার শক্তিস্তর থেকে 7টি ইলেকট্রন ত্যাগ 

সোডিয়াম পরমাণুর আয়নিকরণ শক্তির মান অনেক কম। ফলে, এরা অতি সহজেই তাদের সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রন ত্যাগ করে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতো স্থিতিশীলতা অর্জন করতে চায়

ক্লোরিন পরমাণুর ইলেকট্রন আসক্তির মান বেশি হওয়ায় এটি নিজের সর্বশেষ শক্তিস্তরে ইলেকট্রন গ্রহণ করতে চায়। ফলে সোডিয়াম ও ক্লোরিনের দুইটি পরমাণু যথাক্রমে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জবিশিষ্ট আয়নে (ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন) পরিণত হয়

এভাবে সৃষ্ট হওয়া ক্যাটায়ন এবং অ্যানায়ন তড়িত আকর্ষণ বলের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং যৌগ হিসেবে সোডিয়াম ক্লোরাইড গঠন করে

 

করতে চাইবে না বরং একটি বা দুইটি গ্রহণের প্রবণতা দেখাবে। এক্ষেত্রে, দুটি ক্লোরিন পরমাণু যখন নিজেদের কাছাকাছি আসবে, তখন প্রত্যেকটি ক্লোরিন পরমাণুর সর্বশেষ শক্তিস্তর থেকে একটি করে ইলেকট্রন এসে জোড়বদ্ধ হয়ে উভয় পরমাণুই ইলেকট্রন দুটি ভাগাভাগি করে নেবে। একে ইলেকট্রন শেয়ারিং (Sharing of electron) বলে।

ফলস্বরূপ, দুটি ক্লোরিন পরমাণুই তাদের সর্বশেষ শক্তিস্তরে ৪ (আট) টি করে ইলেকট্রন লাভ করে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জন করবে। যে কারণে দুটি ক্লোরিনের পরমাণুই একে অপর থেকে দূরে সরে যেতে পারে না এবং এরা এক ধরনের বন্ধনে আবদ্ধ হয় (চিত্র ৭.৪)। এ ধরনের বন্ধনকে সমযোজী বন্ধন (Covalent bond) বলে। সমযোজী বন্ধন দিয়ে যে যৌগ তৈরি হয় তাকে সমযোজী যৌগ বলে।

 সমযোজী একক বন্ধন: যখন বন্ধনে অংশগ্রহণকারী • দুটি পরমাণুর প্রত্যেকটি থেকে একটি করে ইলেকট্রন বন্ধনে অংশ নিয়ে একটি ইলেকট্রন জোড় সৃষ্টি করে

সমযোজী দ্বি-বন্ধন: যখন বন্ধনে অংশগ্রহণকারী দুটি পরমাণুর প্রত্যেকটি থেকে দুটি করে ইলেকট্রন মিলে মোট দুটি ইলেকট্রন জোড় সৃষ্টি করে

সমযোজী ত্রি-বন্ধন: যখন বন্ধনে অংশগ্রহণকারী দুটি পরমাণুর প্রত্যেকটি থেকে তিনটি করে ইলেকট্রন মিলে মোট তিনটি ইলেকট্রন জোড় সৃষ্টি করে

পানি

পানি (H₂O) একটি সমযোজী যৌগ। এখানে, একটি অক্সিজেন (০) পরমাণু দুইটি হাইড্রোজেন (H) পরমাণুর সঙ্গে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। কিন্তু অক্সিজেন পরমাণু হাইড্রোজেন পরমাণু থেকে বেশি তড়িৎ ঋণাত্মক হওয়ায় পানির অণুর সমযোজী বন্ধনে ব্যবহৃত ইলেকট্রন দুটি অক্সিজেনের দিকে সামান্য সরে যায়, সে কারণে অক্সিজেন পরমাণু আংশিক ঋণাত্মক চার্জপ্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে হাইড্রোজেন পরমাণু থেকে ইলেকট্রনগুলো সরে যাওয়ার কারণে সেগুলো আংশিক ধনাত্মক চার্জপ্রাপ্ত হয় (চিত্র ৭.৫)। উল্লেখ্য, পানিতে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন পরমাণুর মধ্যে দুটি সমযোজী বন্ধন থাকে এবং এই বন্ধনের জন্য দুটি ইলেকট্রনের প্রয়োজন হয়।

এভাবে, ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জের সমযোজী যৌগকে পোলার সমযোজী যৌগ (Polar covalent compound) বলে। সুতরাং, পানি হচ্ছে পোলার সমযোজী যৌগ এবং পোলার দ্রাবক।

যেমন: পানিতে যখন আয়নিক যৌগ যোগ করা হয়, তখন পানির অণুর ধনাত্মক প্রান্ত আয়নিক যৌগের ঋণাত্মক প্রান্ত বা অ্যানায়নকে আকর্ষণ করে। অনুরূপভাবে, পানির ঋণাত্মক প্রান্ত আয়নিক যৌগের ধনাত্মক প্রান্তকে আকর্ষণ করে। যখন এ আকর্ষণ বলের মান আয়নিক যৌগের ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের মধ্যকার আকর্ষণ বল থেকে বেশি হয়, তখন ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পানির অণু দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে যায়। আর এভাবেই আয়নিক যৌগ পানিতে দ্রবীভূত হয়।

অন্যদিকে, সমযোজী যৌগে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক প্রান্ত থাকে না। ফলে, এসব যৌগ পানির ধনাত্মক ও ঋণাত্মক প্রান্তের সঙ্গে কোনো আকর্ষণ বা বিকর্ষণ কাজ করে না। তাই, সমযোজী যৌগ পানিতে পানিতে দ্রবীভূত হতে পারে না। 

 ৭.৪.৩ ধাতব বন্ধন (Metallic bond)

চিত্র ৭.৬: ধাতব বন্ধন

আমরা আয়নিক বন্ধনে একটি ধাতু ও অপর একটি অধাতুর মধ্যে বন্ধন দেখেছি। আবার, সমযোজী বন্ধনে দুটি অধাতব পরমাণুর মধ্যে বন্ধন দেখেছি। কিন্তু, যখন দুটি ধাতব পরমাণু একসঙ্গে বা কাছাকাছি আসে তখন কী ঘটে? আসলে, দুটি ধাতব পরমাণু কাছাকাছি এলে তাদের পরমাণুর মধ্যে যে বন্ধন গঠিত হয় তাকে ধাতব বন্ধন (Metallic bond) বলে। যেমন- তামা, লোহা বা অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি জিনিসপত্র, রুপা বা সোনার অলংকার, ইত্যাদিতে ধাতব বন্ধন বিদ্যমান।আমরা জানি যে, ধাতব পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসে তাদের সর্বশেষ শক্তিস্তরে সাধারণত 1টি, 2টি বা ওটি ইলেকট্রন থাকে। এসব ধাতুর আকার একই পর্যায়ে অবস্থিত অধাতুর চেয়ে বড়ো হয়। ফলে, তাদের সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ কম হয় এবং এরা সহজে ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হতে পারে। এই ধনাত্মক আয়নকে পারমাণবিক শাঁস (Atomic core) বলা হয়।

ধাতব পরমাণু থেকে ত্যাগ করা ইলেকট্রনগুলো পারমাণবিক শাঁসের মধ্যবর্তী স্থানে মুক্তভাবে ঘোরাফেরা বা চলাচল করতে পারে। এ ধরনের ইলেকট্রনকে সঞ্চরণশীল ইলেকট্রন (Delocalized electron) বলে (চিত্র ৭.৬)। আসলে, এই ইলেকট্রনগুলো কোনো নির্দিষ্ট পরমাণুর অধীনে না থেকে পুরো ধাতব খণ্ডের সবকটি ধাতব আয়নের হয়ে যায়। ফলে দেখা যায়, সব ধাতব আয়নই এই সঞ্চরণশীল ইলেকট্রনের প্রতি এক ধরনের স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণে আকর্ষিত হয়। এ কারণে, দুটি ধাতব আয়ন তাদের পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে না এবং এটিই হচ্ছে ধাতব বন্ধনের কারণ। আবার, ধাতুর মধ্যে এ সঞ্চরণশীল ইলেকট্রনই ধাতুর বিদ্যুৎ পরিবাহিতা, তাপ পরিবাহিতা, নমনীয়তা, ইত্যাদি ধর্মের জন্য দায়ী।

৭.৫ আকরিক, ধাতু নিষ্কাশন ও সংকর ধাতু

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা ধরনের ধাতু ব্যবহার করি। এসব ধাতুকে খনি থেকে আকরিক হিসেবে উত্তোলন করে লাভজনক উপায়ে সংগ্রহ বা নিষ্কাশন (extract) করে ব্যবহারোপযোগী করা হয়। এ সম্পর্কে জানতে হলে তোমাদের আকরিক ও ধাতু নিষ্কাশন সম্পর্কে জানতে হবে।

আকরিক

মাটির তলদেশ বা উপরিভাগে প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান যেসব পদার্থ থেকে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধাতু বা অধাতু সংগ্রহ করা হয়, তা খনিজ হিসেবে পরিচিত। আর যেসব খনিজ থেকে লাভজনক উপায়ে ধাতু ব্য অধাতু সমূহকে সংগ্রহ বা নিষ্কাশন করা যায়, সে সকল খনিজকে আকরিক (ore) বলে।

উদাহরণ: গ্যালেনা (লেড সালফাইড, Pbs) হচ্ছে লেড (Pb) ধাতুর আকরিক। কারণ, গ্যালেনা থেকে লাভজনকভাবে লেড (Pb) ধাতু সংগ্রহ বা নিষ্কাশন করা যায়। হেমাটাইট থেকেও লাভজনক উপায়ে আয়রন বা লোহাকে নিষ্কাশন করা যায় তাই হেমাটাইট (Haematite, Fe2O3) হলো আয়রন বা লোহার (Fe) আকরিক।

ধাতু নিষ্কাশন

আমরা জানি যে, সব ধাতুর সক্রিয়তা (reactivity) একরকম নয়। কিছু ধাতু কম সক্রিয়, কিছু মোটামুটি সক্রিয়, আবার কিছু ধাতু অধিক সক্রিয়। সে কারণে বিভিন্ন ধাতুর ধর্মও বিভিন্ন হয়ে থাকে। এসব ধাতুর মধ্যে কিছু ধাতু মুক্ত অবস্থায় থাকে এবং কিছু ধাতু তাদের সংশ্লিষ্ট আকরিকের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় থাকে। যে পদ্ধতিতে ধাতুকে তার সংশ্লিষ্ট আকরিক থেকে সংগ্রহ করা যায়, তাকে ধাতু নিষ্কাশন বলে।

এই ধাতুগুলোকে আকরিক থেকে পৃথক করতে নির্দিষ্ট কোনো একটি প্রক্রিয়া নেই। সেই কারণে ভিন্ন ভিন্ন ধাতুর নিষ্কাশন প্রক্রিয়াও ভিন্ন। যে সমস্ত ধাতু খুব কম সক্রিয়, যেমন- সোনা (Au), প্লাটিনাম (Pt), রুপা (Ag)- এদেরকে কখনো কখনো প্রকৃতিতে বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।

আবার অধিক সক্রিয় ধাতুগুলোকে তাদের অক্সাইড, সালফাইড, নাইট্রেট, কার্বনেট, ইত্যাদি যৌগ হিসেবে প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। এসব সক্রিয় ধাতুগুলোকে আকরিক থেকে পৃথক করতে বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়। যেমন- বিজারণ (reduction) পদ্ধতি, তড়িৎ বিশ্লেষণ (electrolysis) পদ্ধতি ইত্যাদি। ধাতুগুলোকে তাদের আকরিক থেকে পৃথক বা নিষ্কাশন করার জন্য আকরিককে চূর্ণ-বিচূর্ণ, ঘনীকরণ, বিশুদ্ধকরণ ইত্যাদি বেশ কিছু ধাপ সম্পন্ন করতে হয়। প্রত্যেক ধাতুর ধর্ম বা বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে সেই ধাতুরগুলোর জন্য উপযোগী ধাপসমূহ অনুসরণ করে তাদেরকে সংশ্লিষ্ট আকরিক থেকে পৃথক বা নিষ্কাশন করা হয়।  

সংকর ধাতু

সংকর ধাতু হচ্ছে দুই বা ততোধিক ধাতুর সংমিশ্রণ থেকে তৈরি একটি পদার্থ। ধাতুগুলোর সংমিশ্রণ করার জন্য সাধারণত নির্ধারিত কতগুলো ধাতুকে একত্রে গলানো হয়। এই গলিত মিশ্রণকে ঠান্ডা করলে যে ধাতব মিশ্রণ পাওয়া যায়, তাকে সংকর ধাতু বলে। প্রাচীন তাম্র যুগে মানুষ গয়না, বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতি তৈরি করতে তামা (Cu) ব্যবহার করত। এই তামা বা কপার নরম ধাতু বলে সেগুলো বেশিদিন কার্যকর থাকত না। সেজন্য, সেই প্রাচীনকাল থেকেই কপার (Cu) -এর সঙ্গে টিন (Sn)-কে গলিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে, পরবর্তী কালে সে মিশ্রণকে ঠান্ডা করে ব্রোঞ্জ তৈরি করা হয়। ব্রোঞ্জ হচ্ছে এক প্রকার সংকর ধাতু, এই ব্রোঞ্জ দিয়ে বিভিন্ন রকমের হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতি তৈরি করে ব্যবহার করা হতো।

একইভাবে, লোহার (Fe) সঙ্গে কার্বন (C) মিশিয়ে যে সংকর ধাতু তৈরি করা হয় যাকে আমরা স্টিল বলি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে ছুরি, কাঁচি ব্যবহার করে করি তা স্টিল দিয়ে তৈরি। এছাড়া, স্টিল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতিও তৈরি করা হয়। আবার লোহার সঙ্গে কার্বন (C), নিকেল (Ni), ম্যাঙ্গানিজ (Mn) ও ক্রোমিয়াম (Cr) মিশিয়ে স্টেইনলেস স্টিল (Stainless steel) তৈরি করা হয় যা মরিচাবিহীন থাকে। রান্নার পাত্র ও রান্নার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী, বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অস্ত্র পচারের সরঞ্জাম তৈরিতে স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করা হয়। পাশের টেবিলে কয়েকটি পরিচিত সংকর ধাতুতে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপাদান ও পরিমাণ উল্লেখ করা হলো।

 

Content added By