SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সমন্বিত চিংড়ি চাষের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি, গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও স্থানীয় সম্পদের সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমন্বিত চিংড়ি চাষ এদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে মিঠা পানির গলদা চিংড়ি বাংলাদেশের প্রায় সব বন্ধ জলাশয়েই রুইজাতীয় মাছের সাথে চাষ করা সম্ভব। কার্প ও গলদার মিশ্র চাষ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় সকল মিঠা পানির পুকুরেই করা হচ্ছে। গলদা চিংড়ির পোনার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা গেলে বাঁধ দেয়া নিচু ধানক্ষেত, অগভীর পুকুর, বাঁওড়ের অগভীর অংশ, রাস্তা ও রেললাইনের পাশের খাল, সেচ খাল, ইত্যাদি মিঠাপানির জলাশয়ে গলদা চিংড়ি কার্প জাতীয় মাছের সাথে চাষ করা যায়।
মিশ্র চাষের সুবিধা :

  • পুকুরের সকল স্তরের খাদ্যের সদ্বব্যহার হয়।
  • চিংড়ির দাম বেশি বিধায় আনুপাতিক লাভ বেশি।
  •  অগভীর পুকুর এবং মৌসুমী পুকুরেও চিংড়ি লাভজনকভাবে চাষ করা যায়।
  • প্রয়োজন অনুসারে ধানক্ষেতে খাল কেটে এক মৌসুমে মাছ ও চিংড়ি এবং অন্য মৌসুমে ধান চাষ করা যায়। 
  • ৪-৫ মাসের মধ্যেই চিংড়ি বাজারজাত করা যায়।

সাধারণত দুই ধরনের পুকুরে কার্প ও গলদা চিংড়ির মিশ্র চাষ করা যায়। যথা- বাৎসরিক পুকুর ও ঘের। তবে মৌসুমী পুকুরেও মিশ্র চাষ করা সম্ভব।

Content added By

সাধারণত যে কোনো ধরনের বাৎসরিক পুকুর অথবা কম গভীর পুকুরেই গলদা চিংড়ি ও কার্প মাছের মিশ্র চাষ করা যায়। মিশ্র চাষের জন্য পুকুর নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনা করা যেতে পারে।

(১) পুকুরের আয়তন ২০-২৫ শতাংশ এবং বর্ষাকালে পানির গভীরতা ১.৫-২.০ মিটারের মধ্যে থাকা উচিত।

(২) পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে সুর্যালোকের ব্যবস্থা থাকতে হবে। পুকুরের পাড়ে যেন বড় গাছপালা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

(৩) পুকুর পাড়ের ঢাল ১ : ২ এবং তলদেশ সমান হতে হবে। পুকুরের তলায় ২০ সেমি এর বেশি পচা কাদা থাকা মিশ্র চাষের জন্য ভালো নয়।

(৪) পুকুরের পাড় মূল ভূমি থেকে কমপক্ষে ৩০ সেমি উঁচু থাকা ভালো। এর ফলে বর্ষাকালে বৃষ্টি ধোয়া পানি পুকুরে প্রবেশ করতে পারবে না ।

(৫) মিশ্র চাষের জন্য দো-আঁশ মাটির পুকুর সবচেয়ে ভালো। এঁটেল মাটির পুকুরের পানি ঘোলা থাকে। ফলে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। বেলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা অত্যন্ত কম বিধায় চিংড়ি বা মিশ্ৰ চাষের জন্য বেলে মাটির পুকুর ভালো নয়।

Content added By

ঘের বলতে এমন এক খন্ড জমিকে বুঝায় যার ভেতর খাল কেটে চারদিকে বাঁধ দিয়ে বর্ষাকালে চিংড়ি ও কার্পের মিশ্র চাষ এবং শীতকালে ধান চাষ করা হয়। মিশ্র চাষের এসব খামারকে উপকূলীয় অঞ্চলে ঘের বলা হয়। ভাল ঘেরের বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো-

(১) ৫০-৬০ শতাংশ আয়তনের আয়তকার ঘের ব্যবস্থাপনার জন্য ভালো,

(২) ঘের ৪টি অংশে বিভক্ত, যথা-পাড়, বকচর, খাল ও সমতল ভূমি বা ধানচাষ এলাকা। পুকুরের মাটি আয়তনের ২৫-৩০% পাড়, ৫% বকচর, ২৫-৩০% খাল এবং ৩৫-৪৫% সমতল ভূমি বা ধান চাষ এলাকা থাকা উচিত। দো-আঁশ বা এঁটেল মাটি ঘেরের জন্য সবচেয়ে ভালো,

(৩) বন্যামুক্ত ও সূর্যালোকিত স্থান ঘেরের জন্য উত্তম,

(৪) এসব ঘেরে সাধারণত জুলাই-আগস্ট মাসে চিংড়ি ও কার্পের পোনা মজুদ করা হয়ে থাকে এবং অক্টোবর/নভেম্বর মাস থেকে চিংড়ি ও মাছ আহরণ করা হয়। চাষকালে ঘেরের ভেতর মাটি ১.৫ মিটার পানি থাকা বিশেষ প্রয়োজন তবে ধানক্ষেতে ০.৫ মিটারের বেশি পানি থাকা উচিত নয়,

(৫) নভেম্বর/ডিসেম্বর মাসে ধানক্ষেত থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর ঘেরে ধান চাষ করা যায়। ঘেরের একই জমি থেকে চিংড়ি, মাছ ও ধান এবং পাড়ে শাকসবজি উৎপাদন করা যায়।

মিশ্র চাষে প্রজাতি নির্বাচনঃ গলদা ও কার্পের মিশ্র চাষে সব মাছই লাভজনক নয়। মিশ্র চাষে কার্পের প্রজাতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ :

  • পুকুরে বসবাসযাগ্যে এবং প্রাকৃতিক খাদ্য ব্যবহারে সক্ষম হতে হবে,
  •  মিশ্র চাষের জন্য নির্বাচিত প্রজাতিগুলো দ্রুত বর্ধনশীল হতে হবে,
  • খাদ্য ও বাসস্থলের ব্যাপারে যেন প্রজাতিগুলো একে অপরের প্রতিযাগেী না হয়,
  • অরাক্ষুসে স্বভাবের এবং রোগ প্রতিরোধে সক্ষম হতে হবে ও
  •  বাজারে চাহিদা থাকতে হবে এবং বাজার মূল্য ভালো হতে হবে।

এসব বিষয় বিবেচনায় মিশ্র চাষে চাষযোগ্য কার্প প্রজাতিগুলো হচ্ছে দেশি কার্প ও কাতলা, রুই, মৃগেল, কালিবাউশ/বাটা বিদেশি কার্প ও সিলভার কার্প, গ্রাসকার্প, বিগহেড কার্প, কার্পিও ও সরপুঁটি। মিশ্র চাষের উপযাগেী বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছের খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস নিচে বর্ণনা করা হলো:

মাছ প্রধান প্রাকৃতিক খাদ্যখাদ্যাভ্যাস
কাতলা প্লাংকটনউপর ও মধ্যস্তর
সিলভার কার্প ফাইটোপ্লাংকটনউপরন্তর
গ্লাস কার্প প্রধাণত জলজ উদ্ভিদউপরন্তর ও সর্বস্তর
বিগ্রেড জুপ্লাংকটনউপরন্তর ও সর্বস্তর
রুই জুপ্লাংকটন, পচা জৈব পদার্থউপরন্তর ও সর্বস্তর
মৃগেল জুপ্লাংকটণ, পচা জৈব পদার্থ, তলদেশের কীট মধ্য ও নিমন্তর
কালিবাউশজুপ্লাংকটন, পচা জৈব পদার্থ, তলদেশের কীট নিমন্তর
মিরর কার্প/কার্পিওজুপ্লাংকটন, পচা জৈব পদার্থনিমন্তর
সরপুঁটিজুপ্লাংকটন ও ফাইটোপ্লাংকটনমধ্য ও নিমন্তর

সাধারণত কার্প জাতীয় মাছের বৃদ্ধি ২৮° - ৩১°সে. তাপমাত্রায় ভালো হয়। তবে ১১° সে. তাপমাত্রার নিচে মাছ কম খায় এবং ৯° সে. তাপমাত্রার নিচে মাছ খাদ্য গ্রহণ একেবারেই বন্ধ করে দেয়। বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছের তাপমাত্রার উপযুক্ত সহনশীল মাত্রা নিম্নরূপ-

প্রজাতিতাপমাত্রার সহনশীল মাত্রা (°সে.)
কাতলা, রুই, মৃগেল২০° - ৩৮°সে
সিলভার কার্প, গ্রাসকাপ২৫° - ৩৫°সে.
কার্পিও২০° - ৩০° সে

মিশ্র চাষে পানির গুণাগুণ: মাছ ও চিংড়ির বেঁচে থাকা এবং বৃদ্ধির জন্য পানির গুণাগুণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে পানির গুরুত্বপূর্ণ গুণাগুণ গুলোর উত্তম মাত্রা নিম্নরূপ

পানির গুণাগুণমাত্ৰা
পিএইচ৭-৯
তাপমাত্রা২৮ - ৩১°সে.
খরতা৪০-২০০ পিপিএম
ক্যালসিয়াম১০-১২ পিপিএম
লৌহ<০.০২ পিপিএম
ঘোলাত্বশূন্য
অক্সিজেন৫-৭ পিপিএম
ফসফরাস০.১৫ পিপিএম
মোট দ্রবীভূত পদার্থ৩০০ পিপিএম
Content added By