On This Page
এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২ - NCTB BOOK
Please, contribute to add content into দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি).
Content

গলদা চিংড়ির বাণিজ্যিক উৎপাদনে হ্যাচারিতে উৎপাদিত গুনগত মানসম্পন্ন পি.এল এর কোন বিকল্প নেই। চিংড়ি হ্যাচারি সুষ্ঠু ও সাফল্যজনকভাবে পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনায় গুণগত মানসম্পন্ন প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্রুড চিংড়ি নির্ধারিত সময় পাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হ্যাচারিতে ব্যবহারের জন্য ব্রুড চিংড়ি সরাসরি নদী বা ঘের বা পুকুর থেকেও সংগ্রহ করা যায়। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রাপ্তির বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতকরণের জন্য হ্যাচারি চত্বরে পরিণত রুড চিংড়ি প্রতিপালন করা অতীব জরুরি।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-

  • প্রাকৃতিক উৎস থেকে রুড সংগ্রহ করতে পারব
  • চাষকৃত পুকুর প্রস্তুত করতে পারব
  •  চাষকৃত পুকুর থেকে রুড সংগ্রহ করতে পারব
  •  ব্রুড চিংড়ি পরিবহন করতে পার
  • ব্রুড চিংড়ি হ্যাচারিতে স্থানান্তর পরবর্তী ব্যবস্থাপনা করতে পারব। 
Content added By
Please, contribute to add content into গলদা চিংড়ির ব্রুড সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা.
Content

কৃত্রিমভাবে গলদা চিংড়ির পোনা বা পোস্ট লার্ভা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্রুড চিংড়ির গুণগতমান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্রুড চিংড়ি আহরণের পর অতি যত্ন সহকারে পরিবহন করতে হবে যেন ডিমওয়ালা চিংড়ি কোনোক্রমেই আঘাত প্রাপ্ত না হয়। ঝাঁকি জাল দিয়েও ডিমওয়ালা চিংড়ি সংগ্রহ করা যেতে পারে। সকাল অথবা সন্ধ্যা, যখন দিনের তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কম থাকে এমন সময় চিংড়ি আহরণ ও পরিবহণ করা উত্তম। এতে ব্রুড চিংড়ির উপর বাড়তি পরিবেশ গত কোনো পীড়ন (stress) পড়ে না। সাধারণত ৩ ধরনের চিংড়ি সংগ্রহ করা হয়। ধূসর বর্ণের ডিমওয়ালা চিংড়ি, কমলা রঙের ডিমওয়ালা চিংড়ি ও মাথায় অবস্থিত ডিমওয়ালা চিংড়ি। ধূসর বা কমলা বর্ণের ডিমওয়ালা চিংড়ি পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে সেক্ষেত্রে মাথায় ডিমওয়ালা কমলা রঙের চিংড়ি সংগ্রহ করে ২-৩টি স্ত্রী চিংড়ির জন্য ১টি পুরুষ চিংড়ি একত্রে মজুদ করতে হবে। এভাবে সংগৃহীত চিংড়ি সংগ্রহ করে পরিশোধন পূর্বক হোল্ডিং ট্যাংকের পরিবেশে মিলনের জন্য রাখতে হবে।

Content added By

সাধারণত প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগৃহীত ব্রুড চিংড়ির গুণগত মান ভালো হয়। গলদা চিংড়ি উপকূল থেকে বহুদুরে সমুদ্রের তলদেশ থেকে শুরু করে লবণাক্ততা আছে এমন মোহনা বা উপকূলীয় নদীতে বসবাস করে।

Content added By

ব্রুড চিংড়ি বা পরিপক্ক চিংড়ি সহজেই পাওয়া যায় এমন জায়গায় হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত। বাংলাদেশের সকল ধরনের জলাশয়ে, অর্থাৎ নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় ও পুকুরে পরিপক্ব গলদা চিংড়ি পাওয়া যায়। এছাড়া হ্যাচারির নিজস্ব পুকুরেও ব্রুড চিংড়ি বা ডিমওয়ালা চিংড়ি উৎপাদন করে হ্যাচারিতে ব্যবহার করা যায়। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাস থেকে পুকুরের চিংড়ির ডিম আসতে শুরু করে। এ সময় পুকুর থেকে ডিমওয়ালা চিংড়ি আহরণ করতে হবে। ডিমওয়ালা চিংড়ি আহরণের জন্য সাধারণত মই জাল বা বেড় জাল ব্যবহার করা হয়।

Content added By

যদি একটি পিকআপ ভ্যানের ধারণ ক্ষমতা ১ টন পিভিসি ট্যাংক বা এর সমপরিমাণ হয় তাহলে ১ ঘন্টা বা তার কম সময়ের জন্য ৪০০টি ব্রুড চিংড়ি পরিবহণ করা যেতে পারে। যদি পরিবহণ দূরত্ব ৪ ঘন্টা বা তার অধিক হয়ে থাকে তাহলে ২০০ টির বেশি ব্রুড চিংড়ি পরিবহণ করা যাবে না। এ ছাড়া ৩০ সেমি লম্বা এবং ৬ থেকে ৮ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট প্লাস্টিক পাইপের মধ্যে ব্রুড চিংড়ি প্রবেশ করিয়ে পরিবহণ করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পাইপের গায়ে অবশ্যই ৪০ থেকে ৫০ টি ছিদ্র থাকতে হবে এবং পাইপের মুখ মশারির কাপড় দিয়ে আটকানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

চিত্র-১.১: ব্রুড চিংড়ি পরিবহণ 

Content added || updated By

নূরু চিংড়ি পরিবহণের সময় পানির তাপমাত্রা অনুকুল অবস্থায় রাখার জন্য পিক আপ ভ্যানে পানি ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থা থাকতে হবে। ব্রুড চিংড়িকে পরিবহণের সময় প্লাস্টিক ভালে অক্সিজেন যুক্ত পানি পূর্ণ করে পরিবহণ করা যেতে পারে। প্লাস্টিক ব্যাগের পানির তাপমাত্র অনুকূল অবস্থায় রাখার জন্য প্রতি ২ মিটার পানির জন্য ১০০ গ্রাম ওজনের বরফের টুকরা প্লাস্টিক ব্যাগের মঞ্চে নিয়ে পানির মঞ্চে ভাসিয়ে দিতে হবে। বরফ সংরক্ষণের জন্য পিক আপ ভ্যানের মঞ্চে আইস বক্স অথবা ছোট ডেফিল্ডারেটর রাখা যেতে পারে। বরফের টুকরা ব্যবহারের সময় চিংড়ির রোস্টামটিকে স্পর্শ জাতীয় পদার্থ লাগিয়ে দিতে হবে যেন আধাতজনিত কারনে রোস্ট্রামটি ভেঙ্গে না যায়।  

Content added By

পুরুষ চিংড়ি পুরুষ চিংড়ির আকার সাধারণ স্ত্রী চিংড়ির চেয়ে বড় হয়। পুরুষ চিংড়ির শিরোৰক মোটা ও আকারে বড়ো হয় এবং নিম্নোনর অপেক্ষাকৃত সরু দেখায়। আর একটি বৈশিষ্ট্য ফল পুরুষ চিংড়ির মোটা লম্বা गानী প্রসনপন। অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে দ্বিতীয় সম্ভারনপদের ভেতরের দিকের পদের (Endopodite) গোড়ার সংলগ্ন লোমশ এপেন্ডিকস কালকুলিনা দেখা যায়। এছাড়া প্রথম উপর খন্ডের ডলার খোলসের মাঝখানে একটা ছোট শক্ত কাঁটার মত দেখা যায়। জুভেনাইল বা একমাত্র পেক্ষি ম্যাসলিনা দেখেই গুৰুৰ চিংড়ি সদায় করতে হয়। কারন তখন অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায় না।

স্ত্রী চিংড়ি চিংড়ির মাথা ও দ্বিতীয় বাহু অপেক্ষাকৃত অনেকটা ছোট থাকে এবং নিয়োগরের নীচের দিকে ভিম ধারনের জন্য নিষেদর কৃত চা হয়। পিঠের মৌলস বড় হয় এবং উত্তর দিকে নেমে এসে ডিমগুলি ঢেকে রাখতে সাহায্য করে । 

চিত্র-১.২.৪ পুরুষ ও স্ত্রী চিংড়ি 

Content added By

হ্যাচারিতে রুড চিংড়ি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ও এককোষী প্রাণী দ্বারা ভাক্রান্ত হতে পারে যা চিংড়ি শোনায় সংক্রমিত হয়ে থাকে। হ্যাচারি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত না রালে হ্যাচারিতে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। হ্যাচারি জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহের ওপর গুরুত্ব দিলে সাধারণত পোনা রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। বিষয়গুলো নিম্নরূপ:

ক) হ্যাচারিতে ব্যবহৃত পানি ও পাত্তি নিয়মিত জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে :

গ) প্রতিটি ট্যাংক হতে সঠিক পরিমাণে পানি পরিবর্তন করতে হবে :

গ) প্রতিটি ট্যাংকের তলদেশ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে;

ঘ) ট্যাংকে গুনপুতমান সম্পন্ন খাদ্য সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে;

ঙ) পোনা উৎপাদন কার্যক্রম শেষে ট্যাংকসমূহ ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্তকরণ করতে হবে;

চ) পানিতে সবসময় বায়ু সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, এবং

 ্ছ) পানির তাপমাত্র সঠিক পর্যায়ে রাখতে হবে।

 

সারণিঃ প্রজনন ট্যাংকে রুড চিংড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য।

পরীক্ষণীয় বিষয়সনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য
সংগৃহীত ব্রুড চিংড়ি আক্রান্ত কি-না?চিংড়ির বিপাকীয় বর্জ্য পদার্থের ইনক্লুসন বডি দেখা যায়।
চিংড়ির ফুলকা বিকৃত, নোংরা বা অপরিচ্ছন্ন কি-না?চিংড়ির খোলস পরিবর্তন এবং বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় না।
চিংড়ির ত্বকের উপর রক্তের দাগ বা সাদা দাগ আছে কি-না?চিংড়ির খোলস পরিবর্তনে পীড়নের সৃষ্টি হয় এবং খোলস পরিবর্তনের মাধ্যমে দুর্বল চিংড়ির রূপান্তর হয় ।
সাঁতারের উপাঙ্গগুলো ফোলা আছে কি-না? চিংড়ির দেহের বিভিন্ন স্থানে আক্রমন লক্ষ্য করা যায় এবং আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়।
সঠিকভাবে চিংড়ি খোলস পরিবর্তন করছে কি-না?চিংড়ির দেহাবরণীর উপর শেওলা বিদ্যমান থাকে।
চিংড়ির দেহাবরণীর উপর কালো দাগ বিদ্যমান কি-না?স্থানীয়ভাবে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত।
চিংড়ির উপাঙ্গ বা অ্যান্টেনা ভেঙ্গে গেছে কি-না?ত্রুটিপূর্ণ পরিবহন পদ্ধতি বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত।
দেহের আকৃতি অস্বাভাবিক কি-না?ডিম দেয়ার উপযুক্ত ছোট আকৃতির রুড শ্রিম্প সাধারণত কম ডিম দিয়ে থাকে।
দেহের বর্ণ স্বাভাবিক কি-না?উজ্জ্বল বর্ণের চিংড়ি সাধারণত রোগমুক্ত হয়।
Content added || updated By

প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগ্রহ করে ব্রুড চিংড়ি হ্যাচারিতে এনে ২৫ পিপিএম মাত্রার ফরমালিনে ১৫-২০ মিনিট রেখে জীবাণুমুক্তকরণ করে নিতে হবে। যদি স্ত্রী রুড চিংড়িতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক পিগমেন্টেশন অথবা ক্ষত দেখা দেয় তাহলে ৫০ পিপিএম মাত্রায় অক্সিটেট্রাসাইক্লিন অথবা এরিথ্রোমাইসিনে ১০ মিনিট গোসল করাতে হবে। ব্রুড চিংড়িকে ব্রিডিং গ্রাউন্ডে ৩-৪ দিন পরিচর্যা করা হয়। এরপর স্বাস্থ্যবান ব্রুডকে ম্যাচুরেশন ট্যাংকে স্থানান্তর করা হয়।

Content added By

গলদা চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি প্রক্রিয়া ভিন্নতর পদ্ধতিতে অর্থাৎ চিংড়ি খোলস বদলানোর মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। খোলস পাল্টানোর সময় চিংড়ি অত্যন্ত দুর্বল থাকে। তখন তাদের আশ্রয়স্থলের প্রয়োজন হয়। তবে সকল চিংড়ি একই সময় খোলস পাল্টায় না। এ সময় সবল চিংড়ি দুর্বল চিংড়ি গুলোকে খেয়ে ফেলতে পারে। এজন্য চিংড়ি রুড পুকুর ব্যবস্থাপনায় আশ্রয়স্থল স্থাপনের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন যাতে অন্য প্রাণী বা চিংড়ি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা না থাকে। এ জন্য নারিকেল/খেজুর গাছের শুকনো পাতা/বাঁশের কঞ্চি, ভাঙ্গা প্লাস্টিক পাইপ, গাছের ডালপালা ইত্যাদি দিয়ে আশ্রয়স্থল নির্মাণ করা যায়। এক্ষেত্রে শতকে কমপক্ষে ১টি আশ্রয়স্থল স্থাপন করা উচিত।

Content added By
  • শুকনা ডাল বা নারিকেলের পাতা/খেজুর পাতা
  • বাঁশের কঞ্চি বাঁশের চোঙ্গা
  •  প্লাস্টিকের ফাঁপা পাইপ
  •  ভাঙ্গা কলসের অংশ, এবং
  • গাছের ডাল (হিজল গাছের ডাল উত্তম)।

ডালপালা হতে পাতা পড়ে পানি যেন নষ্ট না হয় সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে।

Content added By

তাল বা নারিকেলের পাতা এমনভাবে পুকুরের তলদেশে পুঁতে দিতে হবে যাতে পাতার অংশ পুকুরের তলদেশ থেকে একটু উপরে থাকে। এ ক্ষেত্রে তাল বা নারিকেলের পাতা কোণাকোনি (৪৫) পুঁতে নিলে আশ্রয়স্থল হিসেবে বেশি জায়গা পাওয়া যায় এবং পাতাগুলো পুকুরের তলদেশের উপর থাকলে সহজে পচবে না। বাঁশের কঞ্চি আটি বেঁধে অথবা প্লাস্টিকের পাইপ পৃথক পৃথকভাবে পুকুরের তলায় মাটির ওপর রেখে দিতে হবে। খেজুরের পাতাও আটি বেঁধে দেয়া যায়।

Content added By

চিংড়ি মজুদের ২/১ দিন পূর্বে তাল বা নারিকেলের পাতা প্রতি শতাংশ জলায়তনে ১-২ টি স্থাপন করতে হবে। তাল বা নারিকেলের ডাল মাটিতে এমনভাবে পুঁতে দিতে হবে যেন পাতার অংশ মাটি থেকে একটু উপরে কোপকোনি অবস্থায় থাকে। প্লাস্টিক পাইপ, ভাঙা কলসি, পুকুরের তলায় রেখে দিতে হবে। অন্যান্য উপকরণগুলো আনুপাতিক হারে ব্যবহার করতে হবে।

Content added By
Please, contribute to add content into পরিণত চিংড়ি মজুদকরণ.
Content

যে কোনো উৎস থেকে সংগৃহীত ব্রুড চিংড়ি পুকুরে মজুদের পূর্বে উক্ত পুকুরের পানির পরিবেশ ও তাপমাত্রার সাথে অভ্যস্থ করে নিতে হবে। যে পাত্রে চিংড়ি পরিবহন করে আনা হবে সেই পাত্রের ৫০% পানি ফেলে দিয়ে উক্ত পাত্রে পুকুর থেকে ১৫-২০ মিনিট ধরে পানি ছিটিয়ে ৫০% পানি পূর্ণ করতে হবে। পরিবহন পাত্রের পানির তাপমাত্রা এবং পুকুরের পানির তাপমাত্রায় সমতা না আসা পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। অভ্যস্থকরণ ব্যতিরেকে কোনো অবস্থাতেই চিংড়ি পুকুরে ছাড়া যাবে না।

Content added By

পুকুরের পানির প্রতি শতাংশে ৪০-৫০টি (স্ত্রী: পুরুষ = ২-৩ : ১)

Content added By

ব্রুড বা পরিণত চিংড়ির খাদ্য প্রস্তুত প্রণালী নিচে দেয়া হলো:

উপাদান - মিশ্রণের হার

খৈল - ৪০%
কুঁড়া - ২০%
ফিসমিল -  ২৫%
পম/ভুট্টার ভূষি - ১৫%
মোট - ১০০%

এছাড়াও প্রতি কেজি খাবারের সাথে ৫০-১০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন প্রিমিক্স মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে। সাধারণত এ জাতীয় খাদ্যে প্রায় ৩০% প্রোটিন থাকে।

Content added By

মজুদকৃত চিংড়ির দৈহিক ওজনের ৩-৪% হারে দৈনিক খাদ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে প্রতি দিনের খাদ্যকে দুভাগে ভাগ করে সকাল ও সন্ধ্যায় প্রয়োগ করতে হবে। তৈরিকৃত ও মিশ্র খাদ্যের পরিবর্তে চিংড়ির উপযোগী তৈরি পিলেট খাবার চিংড়ির দৈহিক ওজনের ৪% হারে প্রয়োগ করা যেতে পারে। চিংড়ি নিশাচর বিধায় সন্ধ্যায় কিছুটা বেশি খাবার প্রয়োগ করতে হবে। চিংড়ি খাবার ঠিকমত গ্রহণ করছে কি না তা মাঝে মধ্যে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

Content added By

পুকুরে চিংড়ির বৃদ্ধি যথাযথভাবে হচ্ছে কি না এবং তাদের দেহে রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কি না তা মাঝে মধ্যে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। গলদা চিংড়ির দৈনিক গড় দৈহিক বৃদ্ধি ০.৪.৭৫% হয়ে থাকে। চিংড়ির দ্রুত বৃদ্ধির সময়কাল হচ্ছে মার্চ থেকে নভেম্বর এবং কম বৃদ্ধির সময়কাল ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস।

Content added By

পুকুরে পরিণত চিংড়ি মজুত করার পর নিম্নলিখিত কাজগুলো পর্যায়ক্রমে করা হয়।

Content added By

বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে বাহিরের অক্সিজেন মিশ্রিত বাতাস পানির গভীরে প্রবেশ করিয়ে পানির ভিতরে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখার যন্ত্রের নামই হচ্ছে এ্যারেটর। এ্যারেটর পুকুরের পরিবেশগত সামগ্রিক উন্নতির জন্য বৃহৎ ভুমিকা পালন করে থাকে।

একটি ভালো গুণসম্পন্ন এ্যারেটর নির্বাচনের জন্য যেসব সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য রাখতে হবে সেগুলো নিম্নরূপ:

  • কম শব্দ সৃষ্টি করে;
  • দীর্ঘ কর্মজীবন ও কম ওজন;
  • প্রতিস্থাপনযোগ্য এবং সহজ কার্যপ্রণালী
  • উচ্চ অক্সিজেন স্থানান্তর ক্ষমতা, এবং
  • স্টেইনলেস ফ্রেম ও টেকসই।

মাছ বা চিংড়ির খামার ব্যবস্থা উন্নয়ন বা অগ্রগতির সাথে সাথে খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও উন্নত হচ্ছে। একটি এয়ার পাম্প ট্যাংকের বাইরে থেকে বাতাস শুষে ট্যাংকের ভিতরে নিমজ্জিত যন্ত্রপাতিতে পাম্প করে। তাই সঠিক দিক এবং সঠিক চাপে বায়ু প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করতে নিম্নে একটি এয়ার পাম্পের আনুষাঙ্গিক সরঞ্জামাদির কাজের বর্ণনা দেওয়া হলো-

এয়ারলাইন টিউবিং- এয়ার পাম্প থেকে ট্যাংকের পানিতে নিমজ্জিত সরঞ্জামে বায়ু প্রবাহকে চালু রাখে। নিয়মিত ভালভ চেক করতে হবে। পাম্প যদি বন্ধ হয়ে যায় বা শক্তি হারায় তবে চিংড়ির ট্যাংক থেকে পানি বের হওয়াকে বাঁধা দেয়।

এয়ার ভালভ- এয়ার পাম্প থেকে ট্যাংকে আসা বায়ু প্রবাহের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

টি স্প্রিটার-একটি এয়ারলাইনকে দুইটি গতিপথে বিভক্ত করে, এ ক্ষেত্রে একটি এয়ার পাম্পকে দুইটি ডিভাইস চালানোর অনুমতি দেয়। গ্যাং ভালভ একটি এয়ার পাম্প থেকে চারটি ভিন্ন ট্যাংকে বায়ু প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।

এয়ারলাইন হোল্ডার- ট্যাংকের ভিতরে বা বাইরে এয়ারলাইন টিউবিংকে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে একটি সাকশন কাপ ব্যবহার করে।

এয়ারলাইন সংযোগকারী- দীর্ঘ দূরত্বে পৌঁছানোর জন্য এয়ারলাইন টিউবিংয়ের দুইটি টুকরো একসাথে সংযুক্ত করে।

এয়ার পাম্প, ট্যাংক ডিভাইস এবং প্রয়োজনীয় আনুষাঙ্গিক উপকরণ কিনতে এবং এয়ার পাম্প স্থাপন করতে নিম্নের মৌলিক নির্দেশাবলী অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরী-

১। এয়ার পাম্পটিকে ট্যাংকের বাইরে রাখা উচিত এবং তারপরে এয়ারলাইন টিউবিংটি সঠিক দৈর্ঘ্যে কেটে দিতে হবে, যাতে এটি ট্যাংকের ভিতরে এর আনুষাঙ্গিক সরঞ্জামের সাথে বায়ু পাম্প সংযোগ করার জন্য যথেষ্ট দীর্ঘ হয়।

২। এয়ারলাইন টিউবিংয়ের এক প্রান্ত ট্যাংকের ভিতরের সরঞ্জামের সাথে সংযুক্ত করতে হবে এবং  ডিভাইসটিকে ট্যাঙ্কের ভিতরে রাখতে হবে। তারপর এয়ারলাইন টিউবিংয়ের অন্য প্রান্তটি এয়ার পাম্পের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।

৩। স্পঞ্জ ফিল্টার এবং ট্যাংক ডিভাইসের মাঝখানে কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় এয়ারলাইন টিউবিংটি কেটে এর মধ্যে চেক ভালভটি সংযুক্ত করতে হবে যাতে ফ্ল্যাপারসহ চেক ভালভের শেষ অংশ বায়ু পাম্পের মুখোমুখি হয়।

৪। যদি চেক ভালভটি পিছনের দিকে স্থাপন করা হয়, তবে এয়ার পাম্প চালু করার সময় কোনও বায়ু প্রবাহিত হবে না, তাই চেক ভালভটির চারপাশ পরীক্ষা করে নিতে হবে।

৫। এয়ার পাম্পের পাওয়ার ক্যাবল দিয়ে একটি ড্রিপ লুপ তৈরি করতে হবে এবং তারপর বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হবে। অতঃপর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ট্যাংকের ডিভাইস থেকে বুদবুদ পরিলক্ষিত হবে

Content added By

এ্যারেটর হল বায়ু চলাচলের যন্ত্র, যা পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে ব্যবহৃত হয়। এটি দ্রবীভূত গ্যাস (যেমন- কার্বন ডাই অক্সাইড) অপসারণের জন্য পানি এবং বায়ুকে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে নিয়ে আসে এবং লোহা, হাইড্রোজেন সালফাইড এবং উদ্বায়ী জৈব রাসায়নিকের মতো দ্রবীভূত ধাতুগুলিকে জারিত করে। চিংড়ি চাষিদের লক্ষ্য হল ঝুঁকি কমিয়ে সর্বোচ্চ উৎপাদন এবং মুনাফা অর্জন করা। এ্যারেটর হলো পানির গুণগত মানের ব্যবস্থাপনা এবং অক্সিজেন ঘাটতি হ্রাসের জন্য সবচেয়ে দ্রুত সমাধান প্রক্রিয়া। এটি অ্যামোনিয়া, ক্লোরিন, কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, হাইড্রোজেন সালফাইড, আয়রন এবং ম্যাঙ্গানিজের মতো রাসায়নিক পদার্থগুলিকে অপসারণ করে যা চিংড়ি চাষের পানির গুণগত মানের ওপর প্রভাব ফেলে।

এ্যারেটরের মূল উদ্দেশ্য হল অক্সিজেন সরবরাহ করা এবং পানিতে অক্সিজেন ছড়িয়ে দেওয়া। এ্যারেটর নির্বাচন করার সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল এর অক্সিজেন বিচ্ছুরণ ক্ষমতা। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি গলদা চিংড়ির বৃদ্ধি, বেঁচে থাকার হার এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করে। এ্যারেটর অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে পানির প্রাথমিক খাদ্যের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে। পুকুরের তলদেশে বসবাসকারী চিংড়ির মতো প্রজাতির জন্য পানির নীচের স্তরে অক্সিজেন সরবরাহ করা আবশ্যক। এ্যারেটর ব্যবহারের ফলে স্রোতের বিপরীতে চিংড়ি সাঁতার কাটে। ফলে চিংড়ির শরীরে কোনো ময়লা বা ক্ষতিকর প্রাণী লেগে থাকতে পারে না। অক্সিজেন মেশানো ও সরবরাহের ফলে খাদ্যের অপচয় কম হয়, পানির তলদেশ পরিষ্কার হয় এবং চিংড়ি রোগমুক্ত থাকে।

Content added By

বিভিন্ন ধরনের এ্যারেটর এর কাজ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের এ্যারেটর পাওয়া যায়। সেগুলো হল:

১. প্যাডেল হুইল এ্যারেটর,

২. ফিস পন্ড এ্যারেটর,

৩. টারবাইন এ্যারেটর,

৪. ডিফিউজার এ্যারেটর, এবং

৫. সাবমারসিবল পাম্প

প্যাডেল হইল এ্যারেটর পুকুরের উপরের স্তরে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মোটর এর শক্তি ভেদে ২ ইঞ্চি থেকে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত পানির নিচে ডুবানো থাকে। সাধারণত ২০ থেকে ৩০ আরপিএম এ এই হুইলগুলো ঘুরে থাকে। তবে বাণিজ্যিক প্যাডেলগুলো ৯০ আরপিএম এর মতো ঘুরে থাকে যেখান থেকে প্রতি অশ্বক্ষমতার (HP) জন্য ঘণ্টায় ৩ কেজি পর্যন্ত অক্সিজেন তৈরী হতে পারে।

প্যাডেল হুইল এ্যারেটর এর অসুবিধা হল এই ধরনের এ্যারেটর পুকুরের তলদেশে তেমন কাজ করতে পারে না। আমাদের দেশের পুকুরের পরিবেশগত দিক বিবেচনা করলে সাবমারসিবল পাম্প সব থেকে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারণ এটি পানির তলদেশ থেকে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে যখন উপরের স্তরে আসে তখন প্রচুর পরিমানে অক্সিজেন পানিতে মেশাতে মেশাতে আসে এবং অধিক অক্সিজেনের কারণে পুকুরের সমগ্র পরিবেশের উন্নতি ঘটে।  

Content added By

বর্তমানে বেশিরভাগ চিংড়ি চাষীদের কাছে কম বিদ্যুৎ খরচের অত্যন্ত দক্ষ বৈদ্যুতিক মোটরসহ এ্যারেটর রয়েছে। এ সমস্ত এ্যারেটর সিস্টেম এর জন্য একটি নির্দিষ্ট শক্তির উৎস প্রয়োজন। হ্যাচারি বিদ্যুতের লাইনের কাছাকাছি থাকলে খুব ভালো হয়। প্রতি ৩০০-৫০০ কেজি অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য ১ অশ্বক্ষমতার (HP) এ্যারেটর প্রয়োজন। এক অশ্বক্ষমতা বিশিষ্ট একটি এ্যারেটর এক ঘন্টা চালু থাকলে প্রায় ১ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। হেক্টর প্রতি চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রতি হেক্টরে বিদ্যুৎ খরচের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। 

Content added By

চিংড়ির ব্রুডস্টক ব্যবস্থাপনার জন্য অভ্যস্তকরণ অত্যন্ত জরুরী। ব্রুড চিংড়ি পরিবহণের পর যে পরিবেশে রাখা হবে তার নিয়ামকগুলোকে সর্বোত্তম রাখা উচিত যাতে গলদা চিংড়ির সর্বোচ্চ বেঁচে থাকার হার নিশ্চিত করা যায়। এর ফলে চিংড়ির পরিপক্ককরণ এবং উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। এই ধরনের অভ্যস্তকরণের ফলে চিংড়ির টেকসই উৎপাদন, উৎপাদিত ডিমের সংখ্যা ও গুণগতমান বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও চিংড়ির পরিপক্কতা ও প্রজননের সময় নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যদি অভ্যস্তকরণ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পালন না করা হয় তাহলে চিংড়ির উর্বরতার হার হ্রাস পেতে পারে। 

Content added By

তোমার প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি যে কোন চিংড়ি খামার বা ঘের পরিদর্শন কর। এর কর্ম পরিবেশ ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয়ে নিন্মোক্ত ছকটি পূরণ করো।

পরিদর্শনকৃত চিংড়ি খামারের নাম 
ঠিকানা 
কী কী চিংড়ি ব্রুড উৎপাদন করা হয় 
ব্রুড চিংড়ি উৎপাদনে কী কী উপকরণ ব্যবহার করা হয় 
খামারে কর্মী সংখ্যা কত? 
কর্মীগণ কাজের সময় কী কী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করে 
মৎস্য খামারে কর্মপরিবেশ সম্পর্কে লেখ 
তোমার নাম
শ্রেণি
রোল নং
প্রতিষ্ঠানের নাম
শ্রেণি শিক্ষকের নাম
 
প্রতিবেদন জমাদানের তারিখশিক্ষকের স্বাক্ষর
Content added By

চিংড়ি খামারে নিরাপদ কাজ করতে কী ধরণের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিবে তা ছকে লিখ।

ক্রম কাজের নামনিরাপত্তামূলক গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ
  ভালো ফল লাভে প্রতি ১৫ দিন অন্তর জীবাণু নাশক প্রয়োগ করতে হবে
 
 
 
 
 
 
Content added By

পারদর্শিতার মানদন্ড

  • স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুরক্ষা পোশাক পরিধান করা।
  • কাজের উপযুক্ত স্থান ও পরিবেশ তৈরি করা।
  • কাজের জন্য উপযুক্ত উপকরণ নির্বাচন ও সংগ্রহ করা।
  • যথাযথ ভাবে ডিমওয়ালা গলদা চিংড়ি পর্যবেক্ষণ করা।
  • কাজ শেষে নিয়ম অনুযায়ী জায়গা পরিষ্কার করা।
  • কাজ শেষে ব্যবহৃত উপকরণসমূহ যথাযথ ভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা ।
  • অব্যবহৃত মালামাল উপযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করা।
  • কাজ শেষে সুরক্ষা পোশাক ও উপকরণ সমূহ চেকলিষ্ট অনুযায়ী জমা দেওয়া।

ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম

০১.  মাস্ক

০২. গ্লাভস্

০৩. স্যানিটাইজার

০৪.  অ্যাপ্রন

খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ।

০১. ডিসেক্টিং বক্স

০২. ওয়াক্স টে

০৩ স্পেসিমেন জার

গ) প্রয়োজনীয় মালামাল

০১. স্কুপ নেট/ঝাঁকি জাল

০২. স্বচ্ছ পানি সহ গামলা

০৩. পেনসিল

০৪. রাবার

০৫. খাতা

(ঘ) কাজের ধারা

১. নিকটবর্তী কোনো হ্যাচারি বা গলদা চিংড়ির খামারে গমন করো।

২. হ্যাচারির ব্রুড ট্যাংক থেকে স্কুপ নেট দিয়ে গলদা চিংড়ি সংগ্রহ করো।

৩. ধৃত চিংড়ি গামলার পরিষ্কার পানিতে রাখো।

৪. গামলা থেকে পুরুষ চিংড়িগুলো সরিয়ে ফেলো।

৫. স্ত্রী ডিমওয়ালা চিংড়ি সাবধানে ট্রেতে রাখো।

৬. ডিমওয়ালা চিংড়ি সাবধানে পর্যবেক্ষণ করো। 

৭. চিংড়ির দেহের ডিমের অবস্থান, ডিমের বর্ণ, ডিমের আকার ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করো।

৮. অনুশীলনকৃত কার্যক্রমটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করো।

কাজের সতর্কতা:

ডিমওয়ালা চিংড়ি খুব সাবধানে নড়াচড়া করতে হবে।

আত্মপ্রতিফলন:

ডিমওয়ালা গলদা চিংড়ি পর্যবেক্ষণ করার দক্ষতা অর্জিত হয়েছে /হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।

Content added By

পারদর্শিতার মানদন্ড

  • স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুরক্ষা পোশাক পরিধান করা।
  • কাজের উপযুক্ত স্থান ও কর্মপরিবেশ তৈরি করা।
  • কাজের জন্য উপযুক্ত উপকরণ নির্বাচন ও সংগ্রহ করা ।
  • যথাযথ ভাবে পুরুষ গলদা চিংড়ি পর্যবেক্ষণ করা।
  • কাজ শেষে নিয়ম অনুযায়ি জায়গা পরিষ্কার করা।
  • কাজ শেষে ব্যবহৃত উপকরণসমূহ যথাযথ ভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা ।
  • অব্যবহৃত মালামাল উপযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করা। 
  • কাজ শেষে সুরক্ষা পোশাক ও উপকরণ সমূহ চেকলিষ্ট অনুযায়ী জমা দেওয়া।

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম

০১. মাক্ষ
০২. গ্লাভস্
০৩. স্যানিটাইজার
০৪. অ্যাপ্রন

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুপমেন্টস, মেশিন)

০১. ডিসেক্টিং বক্স
০২. ওয়াক্স টে
০৩. স্পেসিমেন জার

(গ) প্রয়োজনীয় মালামাল

০১. স্কুপ নেট/ঝাঁকি জাল
০২. স্বচ্ছ পানি সহ গামলা
০৩. পেন্সিল
০৪. রাবার
০৫. খাতা

(ঘ) কাজের ধারা

১. নিকটবর্তী কোনো হ্যাচারি বা গলদা চিংড়ির খামারে গমন করো।

২. হ্যাচারির ব্রুড ট্যাংক থেকে স্কুপ নেট দিয়ে গলদা চিংড়ি সংগ্রহ করো।

৩. ধৃত চিংড়ি গামলার পরিষ্কার পানিতে রাখো।

৪. গামলা থেকে স্ত্রী চিংড়িগুলো সরিয়ে ফেলো।

৫, পুরুষ চিংড়ি সাবধানে ট্রেতে রাখো।

৬. পুরুষ চিংড়ি সাবধানে পর্যবেক্ষণ করো।

৭. চিংড়ির দেহের বিভিন্ন অংশের পর্যবেক্ষণ করো।

৮. অনুশীলনকৃত কার্যক্রমটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করো।

কাজের সতর্কতা:

পুরুষ গলদা চিংড়ি খুব সাবধানে নড়াচড়া করতে হবে।

আত্মপ্রতিফলন:

ডিমওয়ালা গলদা চিংড়ি পর্যবেক্ষণ করার দক্ষতা অর্জিত হয়েছে / হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।

Content added By

পারদর্শিতার মানদন্ড:

  • যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পিপিই/এপ্রোন ও পোশাক পরিধান করা।
  • প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের স্থান পরিষ্কার করা এবং প্রস্তুত করা।
  • প্রয়োজন অনুসারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নির্বাচন এবং সংগ্রহ করা।
  • কাজ শেষে কর্মক্ষেত্র পরিষ্কার করা।
  • অব্যবহৃত যন্ত্রপাতি নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করা।
  • কাজের শেষে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করে নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করা।

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুপমেন্টস, মেশিন)

(গ) প্রয়োজনীয় মালামাল 

(ঘ) কাজের ধারাঃ

১। ব্রুড চিংড়ি সংগ্রহ করে হ্যাচারিতে এনে একটি পাত্রে ২৫ পিপিএম মাত্রার ফরমালিন দিয়ে জীবাণুমুক্ত করো।

২। এছাড়াও ফরমালিনের পরিবর্তে মা চিংড়িকে হ্যাচারিতে এনে ৫ পিপিএম মাত্রার জীবাণুনাশক দ্রবণে নিয়ে জীবাণুমুক্ত করো।

৩। এক্ষেত্রে চিংড়িকে জীবাণুনাশক দ্রবণে ১ ঘন্টা রেখে দাও।

৪। ব্লুড চিংড়িকে শোধন এর সময় কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ক্ষত দেখা গেলে ৫০ পিপিএম মাত্রার অক্সিটেট্রাসাইক্লিন অথবা এজিথ্রোমাইসিন দ্রবনে ১০ মিনিট রাখো।

৫। চিংড়ি শোধন এর পর প্রজননক্ষম চিংড়িকে ৩-৪ দিন ব্রিডিং গ্রাউন্ড এ পরিচর্যা করো।

৬। গৃহীত কার্যপ্রণালী ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করো।

কাজের সতর্কতা

১। ব্রুড চিংড়ি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট মাত্রার রাসায়নিক দ্রবণে গোসল করাতে হবে।

২। কাজের সময় গ্লাভস্ ব্যবহার করতে হবে। ৩। কাজের সময় রাসায়নিক দ্রবনের মাত্রা যেন কোন ক্রমেই প্রয়োজনের থেকে বেশি না হয় এ বিষয়ে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।

৪। ব্রুড শোধন এর সময় পানির তাপমাত্রা সঠিক পরিমাণে রাখার জন্য সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।

আত্মপ্রতিফলন

ব্রুড শোধন করার কৌশল অনুশীলন করার বিষয়ে দক্ষতা অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে

Content added By

পারদর্শিতার মানদন্ড

 স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুরক্ষা পোশাক পরিধান করা।
কাজের উপযুক্ত স্থান ও কর্মপরিবেশ তৈরি করা
কাজের জন্য উপযুক্ত উপকরণ নির্বাচন ও সংগ্রহ করা।
ব্রুড গলদা চিংড়ির খাদ্য প্রস্তুত করা।
 প্রস্তুতকৃত খাদ্য পুকুরে প্রয়োগ করা।
দক্ষতা অর্জনের জন্য জবগুলো বারবার অনুশীলন করা।

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরজ্ঞাম

০১. মাক্ষ

০২. গ্লাভস্

০৩. স্যানিটাইজার

০৪. অ্যাপ্রন

০৫. গামবুট

(গ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুপমেন্টস, মেশিন)

০১. ডিজিটাল ব্যালেন্স

০২. গামলা

০৩. বালতি

০৪. মগ

০৫. মিক্সিং মেশিন

০৬. চাটাই

(গ) প্রয়োজনীয় মালামাল

০১. চালের কুড়াঁ গমের ভুষি

০২. চিংড়ির মাথা চূর্ণ

০৩. সরিষার খৈল

০৪. ফিসমিল

০৫. সাবুদানা

০৬. মাছের তৈল

০৭. লবণ

০৮.  ভিটামিন

(ঘ) কাজের ধারা

১. উপরে বর্ণিত খাদ্য উপাদানগুলোর নিকটস্থ বাজার থেকে বাজারদর যাচাই করে সংগ্রহ করো।

২. অতঃপর খাদ্য উপাদানগুলোর পরীক্ষাগার কক্ষে নিয়ে এসে শুকনা অবস্থায় ড্রামে ভালোভাবে মিশিয়ে ফেল।

৩. উপাদানগুলোকে উত্তমরূপে মেশানোর পর মগে করে অল্প অল্প পানি দিয়ে সমগ্র মিশ্রণটি ভালোভাবে নেড়ে আঠালো পেস্ট বা মন্ডে পরিণত করো।

৪. এবার এই মন্ডে কিছু অংশ হাতে নিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি কর এবং অবশিষ্ট অংশ সেমাই বা মিকিং মেশিন দিয়ে পিলেট খাদ্য তৈরি করো।

৫. পিলেট খাদ্যগুলোকে এবার চাটাই এর উপর ছড়িয়ে দিয়ে রৌদ্রে ভালো করে শুকিয়ে নাও এবং বলগুলোকে ভেজা খাদ্য হিসেবে সরাসরি পুকুরে প্রয়োগ করো।

৬. এবার কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লেখ।

কাজের সতর্কতা:

  • হ্যাচারি পরিদর্শন কাজের সময় অব্যশ্যই স্বাস্থ্য বিধি মেনে ও যথাযথ পোশাক ব্যবহার করতে হবে।
  • হ্যাচারিতে ব্রুড মাছ বা যন্ত্রপাতি দ্বারা যেন ছাত্রের কোন ক্ষতি না হয়, সে দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

আত্মপ্রতিফলন:

ব্রুড গলদা চিংড়ির খাদ্য প্রস্তুত ও প্রয়োগের দক্ষতা অর্জিত হয়েছে /হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে

Content added By

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন:

১. গলদা ব্রুড চিংড়ি মজুদ পুকুরের আয়তন কত ?

২. গলদা ব্রুড চিংড়ি মজুদ পুকুরের গভীরতা কত ?

৩. রাক্ষুসে মাছ দমনে রোটেনন পাউডারের প্রয়োগমাত্রা কত ?

৪. পুকুরে চুন প্রয়োগের মাত্রা কিসের উপর নির্ভরশীল?

৫. পুকুরে সাধারণত কয় ধরনের সার ব্যবহার করা হয়?

৬. পুকুর প্রস্তুতকালীন সময়ে প্রতি শতাংশ পুকুরে কী পরিমাণ গোবর সার প্রয়োগ করা হয়?

৭. মজুদকৃত চিংড়ির দৈহিক ওজনের শতকরা কত ভাগ খাদ্য পুকুরে প্রয়োগ করা হয়?

৮. গলদা চিংড়ির দৈনিক গড় দৈহিক বৃদ্ধি কত?

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন:

১. গলদা চিংড়ির ব্রুড মজুদ পুকুরের পাড় কেমন হতে হয়?

২. ব্রুড পুকুরে রোটেনন প্রস্তুতকালীন সময়ে পাউডারের ব্যবহার পদ্ধতি লেখ।

৩. ব্রড পুকুর প্রস্তুতকালীন সময়ে চুন প্রয়োগ পদ্ধতি লেখ।

৪. গলদা চিংড়ির পুকুরে আশ্রয়স্থল স্থাপন করা হয় কেন ?

৫. গলদা চিংড়ির পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি লেখ।

রচনামূলক প্রশ্ন:

১. গলদা চিংড়ির ব্রুড সংগ্রহ পদ্ধতি বর্ণনা করো।

২. মজুদ পুকুরে গলদা চিংড়ি মজুদ পদ্ধতি বর্ণনা করো।

৩. পলদা ব্রুড পুকুরে এ্যায়ারেটর স্থাপন পদ্ধতি বর্ণনা করো।

Content added || updated By

অতীতে আমাদের দেশের উপকূলীয় কিছু কিছু অঞ্চলে প্রাকৃতিক উৎস হতে পোনা সংগ্রহ করে সনাতন পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ শুরু হয়। কিন্তু ব্যাপক আকারে গলদা চিংড়ি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাপ পোনা প্রাকৃতিক উৎস হতে সংগ্রহ করা সম্ভব না হওয়ায় সরকারি পর্যায়ে চাঁদপুরে প্রথম গলদা চিংড়ির গৃহাশন হ্যাচারির সূচনা করা হয়। পরবর্তীতে সরকারি কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু প্রতিষ্ঠান গলদা চিংড়ির হ্যাচারী পরিচালনার মাধ্যমে চিংড়ির প্রজননের মাধ্যমে গলদা চিংড়ির পিএল উৎপাদন করছে।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-

  •  গলদা চিংড়ির হ্যাচারির স্থান নির্বাচন করতে পারব,
  • হ্যাচারির নকশা ও ভৌত অবকাঠামো পর্যবেক্ষণ করতে পারব,
  • গলদা চিংড়ির হ্যাচারির বিভিন্ন যন্ত্রপাতির তালিকা তৈরী করতে পারব, 
  • হ্যাচারী পরিচালনার বিভিন্ন ধরনের ট্যাংক ব্যবস্থাপনা করতে পারব,
  • হ্যাচারিতে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করতে পারব, এবং
  •  হ্যাচারিতে লার্ভার স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও রোগ জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।
Content added By

যে কোন প্রকারের হ্যাচারি নির্মাণের পূর্বে অভিষ্ট প্রজাতি চিহ্নিত করতে হবে এবং বাজারের চাহিদা এবং আর্থিক যোগানের ভিত্তিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে যা হ্যাচারির নকশা তৈরিতে আবশ্যক ভূমিকা রাখে। একটি হ্যাচারি তৈরির ক্ষেত্রে তিনটি নির্ধারক রয়েছে, যেমন:-

  • অভিষ্ট প্রজাতি (Target species
  • উৎপাদন লক্ষ্য (Production target)
  • আর্থিক যোগান স্তর (Financial investment

হ্যাচারির প্রকারভেদ সাধারণত হ্যাচারির প্রয়োজনীয়তা এবং অর্থনৈতিক দক্ষতার উপর ভিত্তি করেই হওয়া উচিত। সাধারণত পলদা চিংড়ির হ্যাচারিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

ক) ছোট আকারের হ্যাচারি

এই প্রকারের হ্যাচারি মৎস্য চাষি তার নিজের পরিবারের চাহিদা মেটাতে নিজ পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় পরিচালনা করে। এক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য হলো তার নিজের হ্যাচারিতে নিজের খামারের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোনা উৎপাদন করা এবং সামান্য কিছু প্রতিবেশি চাষীদের কাছে বিক্রি করা। এটি সাধারণত ১,০০০ বর্গমিটারের মধ্যে হয়ে থাকে এবং পোনা উৎপাদনের পরিমাণও কম হয়। এ সকল হ্যাচারিতে বছরে মাত্র ৫ মিলিয়ন পোষ্ট লার্ভার বেশি হয়না এবং ২ জন কারিগরী কর্মী দ্বারা পরিচালিত হয়। এই ধরণের হ্যাচারির মূলধন বিনিয়োগের জন্য সাধারণত ১০-১৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হয়। এই প্রকার হ্যাচারিতে ব্যবহৃত চৌবাচ্চার আয়তন ১০ টনের কম হয়। কম ঘনত্বে অপরিশুদ্ধ পানি ব্যবহৃত হয়। ভাই পোনা বাঁচার সম্ভাবনা ০-৯০%। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে এই ধরণের হ্যাচারির অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

খ) মাঝারি আকারের হ্যাচারি

এইসব হ্যাচারির পুঁজি বিনিয়োগ, হ্যাচারির আকার, হ্যাচারির উৎপাদন ক্ষমতা এবং পরিচালনার পরিপ্রেক্ষিতে ছোট আকারের হ্যাচারির চেয়ে তুলনামূলকভাবে বড়। তবে হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা ছোট আকারের হ্যাচারির মতই। বছরে উৎপাদনের পরিমাণ ১০-২০ মিলিয়ন পোস্ট লার্ভা এবং তিনজন কারিগরী কর্মী ও ৩- ৪ জন শ্রমিক দ্বারা পরিচালিত হয়। এখানে পরিশোধিত পানি বেশি ঘনত্বে ব্যবহার করা হয়। পোনা বাঁচার হার প্রায় ৪০% বা তার কম। কোন কোন ক্ষেত্রে ছোট সমবায় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই ধরণের হ্যাচারিগুলো সাধারণত তাদের সদস্য চাষিদের প্রয়োজনীয় গলদা চিংড়ির পোনা সরবরাহ করে থাকে।

গ) বড় আকারের হ্যাচারি

বড় আকারের হ্যাচারি পরিচালনার জন্য বড় কর্পোরেশন, জাতীয় সংস্থা বা সমবায় প্রকল্পের সহায়তা প্রয়োজন হয়। এই হ্যাচারিগুলো বাণিজ্যিকভাবে পোনা উৎপাদন এবং সরবরাহ করে। এক্ষেত্রে মূলধন কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চিংড়ি পোনা উৎপাদন করা হয়। সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থাকে এবং সর্বোচ্চ ৬ জন কারিগরী কর্মী এবং ৬-১০ জন শ্রমিক দ্বারা পরিচালিত হয়। বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ ৩০ মিলিয়নেরও বেশি হতে পারে। এখানে পোনা বাঁচার হার সর্বোচ্চ প্রায় ৬০ শতাংশ। 

Content added By

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত একটি গলদা চিংড়ির হ্যাচারি স্থাপনের উদ্দেশ্যে উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থায়ীভাবে ব্যয়বহুল বাণিজ্যিক হ্যাচারি স্থাপন করার পূর্বে স্থান নির্বাচনের জন্য দূরদর্শীতার সাথে বিভিন্ন বিষয়াদি বিবেচনা করা প্রয়োজন। হ্যাচারি স্থাপনের লক্ষ্যে উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা উচিত।

Content added By

হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সময়ে গুণগত মানসম্পন্ন ও পরিপক ব্রুড প্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকা অত্যাবশ্যক। বাণিজ্যিক হ্যাচারি পরিচালনায় সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত ব্রুড চিংড়ি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর সহজ প্রাপ্যতার উপরে হ্যাচারির বাণিজ্যিক সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে বা চাষের জলাশয় থেকে পরিপক্ক ব্রুড চিংড়ি সংগ্রহ করা যেতে পারে অথবা ব্রুড চিংড়ি উৎপাদনের উপযোগী হ্যাচারি সংলগ্ন জলাশয় থাকলে নির্ধারিত সময়ে সেখানে রুড উৎপাদনের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যেতে পারে।

Content added By

সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী স্থানে গলদা চিংড়ির হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত, কারণ পোনা উৎপাদনের জন্য ২৮-৩২ পিপিটি লবণাক্ত সমৃদ্ধ লোনা পানির প্রয়োজন হয়। ব্রুড চিংড়ি প্রতিপালন ও গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনের জন্য লোনা পানির নিম্নোক্ত গুরুত্বপূর্ণ ভৌত-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার।

সারণি-১: গলদা চিংড়ি হ্যাচারির পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ

উপাদান-      উপযুক্ত পরিমাণ

তাপমাত্রা -                   ২৪-৩১°সে
পিএইচ -                    ৭.৫-৮.৫ 
পানির লবণাক্ততা -          ২৮-৩৩ পিপিটি
দ্রবীভূত অক্সিজেন -          >৫ পিপিএম
ক্ষারকত্ব -                    <১০০ পিপিএম
মোট ক্ষারত্ব -                  ৪০-১০০ পিপিএম

নাইট্রাইট-নাইট্রোজেন -        <০.০২ মিগ্রা/লি.
ঘোলাত্ব -                         <৫০ এফটিইউ  
লৌহ -                             <০.০১ পিপিএম

দস্তা -                          <০.২৫ পিপিএম
তামা -                         <০.১ পিপিএম
পারদ -                        <০.০১ পিপিএম
ক্যাডমিয়াম -                    ০.১৫ পিপিএম
ভারী ধাতু -                         <০.০১ পিপিএম
হাইড্রোজেন সালফাইড -                <০.১ পিপিএম
জৈব অক্সিজেন চাহিদা (বিওডি) -      <১.০ মিগ্রা/লি (৫ দিন)
আন আয়োনাইজড অ্যামোনিয়া -       <০.১ পিপিএম 

Content added By

চিংড়ি হ্যাচারিতে ব্যবহারের জন্য মানসম্মত লোনা পানি (ব্রাইন) এবং স্বাদু পানির প্রয়োজন হয়। সমুদ্রের কাছাকাছি হ্যাচারি স্থাপন করা সম্ভব না হলে হ্যাচারি পরিচালনার উপযোগী ব্রাইন ভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে আনা হয়। ব্রাইন সংগ্রহের উৎস থেকে দূরবর্তী স্থানে হ্যাচারি স্থাপন করা হলে ব্রাইনের পরিবহনজনিত ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু স্বাদু পানি হ্যাচারি সংলগ্ন এলাকা থেকেই সংগ্রহ করা হয়। হ্যাচারি স্থাপনের পূর্বে তাই ব্রাইন অপেক্ষা স্বাদু পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হয়। হ্যাচারি স্থাপনের জন্য এমন কোন স্থান নির্বাচন করা সমীচীন নয়, যেখানে ব্রাইন এবং স্বাদু পানি উভয়ই পরিবহন করার প্রয়োজন হয়। স্বাদু পানি ভূগর্ভস্থ বা ভূ-উপরিস্তরের হতে পারে। হ্যাচারিতে ব্যবহারের উপযোগী স্বাদু পানির রাসায়নিক গুণাগুণ নিম্নরুপ হওয়া বাঞ্ছনীয়:

প্যারামিটার  ---------- মাত্রা
পিএইচ ------------- ৭.০-৮.৫ 
লৌহ -------------<০-২ পিপিএম
ক্ষারত্ব-------------৮০-১০০ পিপিএম 

দ্রবীভূত অক্সিজেন -------------->৫ পিপিএম
নাইট্রাইট নাইট্রোজেন ------------ ০.১পিপিএম (যত কম তত ভালো)
নাইট্রেট নাইটোজেন ------------ ২০ পিপিএম (যত কম তত ভালো)
অ্যামোনিয়া ---------------- ০.১ পিপিএম (যত কম তত ভালো
ক্লোরিন -----------মুক্ত
ভারী ধাতু -------------<০.০১ পিপিএম
আর্সেনিক -------------<০.০১ পিপিএম
হাইড্রোজেন সালফাইডমুক্ত
কীটনাশক মুক্ত

Content added By

গলদা হ্যাচারির পারিপার্শ্বিক পরিবেশ দূষণমুক্ত না হলে হ্যাচারিতে আকস্মিক যে কোনো রাসায়নিক বা জীবাণুঘটিত দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তাই হ্যাচারি স্থাপনের জন্য স্থান নির্বাচনের প্রাক্কালে উক্ত এলাকা দূষণমুক্ত কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। শিল্প-কলকারখানা, ইটের ভাটা, রাইস মিল, কাঁচা বাজার, সুপার মার্কেট ইত্যাদির কাছাকাছি স্থানের পরিবেশ সর্বদা দূষণযুক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। শিল্প- কলকারখানার অশোধিত বর্জ্য পদার্থ এবং কালো ধোঁয়া পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। এরূপ বর্জ্য পদার্থের কারণে আশপাশের স্বাদু পানির গুণাগুণ দূষিত থাকে। তাই হ্যাচারি স্থাপনের জন্য এরূপ স্থান নির্বাচন থেকে যতদূর সম্ভব বিরত থাকাই সমীচীন।

Content added By

অত্যধিক বৃষ্টির কারণে হ্যাচারির পানির গুনাগুণ, যেমন- পানির তাপমাত্রা, পিএইচ, দ্রবীভূত অক্সিজেন এবং বিশেষ করে লবণাক্ততার তারতম্য হতে পারে যা চিংড়ির পোনা উৎপাদনে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সেজন্য হ্যাচারি স্থাপনের ক্ষেত্রে অতি বৃষ্টিজনিত এলাকা পরিহার করতে হবে।

Content added By

গলদা হ্যাচারি নির্মাণের পূর্বে এবং স্থান নির্বাচনের সময় মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ সরাসরি মাটির গুণাগুণের উপর নির্ভর করে। তাই যেখানে হ্যাচারি স্থাপন করা হবে সেই এলাকার ভূ-প্রকৃতি বিবেচনায় নিতে হবে। এছাড়া ভূ-প্রকৃতির উপর হ্যাচারির নির্মাণ খরচ অনেকাংশে নির্ভর করে।

Content added By

চিংড়ি হ্যাচারির যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হলে উৎপাদিত পোনা বাজারজাতকরণে অপরিসীম সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পরিবহনজনিত কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পেলে হ্যাচারির বাণিজ্যিক উৎকর্ষ সাধনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া ব্রাইন সংগ্রহ, ব্রুড চিংড়ি সংগ্রহ, হ্যাচারির উপকরণাদি সংগ্রহ ইত্যাদি কাজের সুবিধার্থে উত্তম যোগাযোগ ব্যবস্থাযুক্ত স্থানে হ্যাচারি স্থাপন করা আবশ্যক ।

Content added By

হ্যাচারি এলাকায় ২২০ ও ৪৪০ ভোল্টের নির্ভরযোগ্য ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। বিদ্যুৎ ব্যতীত একটি গলদা চিংড়ি হ্যাচারি বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা করা সহজসাধ্য নয়। তাই হ্যাচারি স্থাপনের পূর্বে সেখানে ১-ফেজ (২২০ ভোল্ট) এবং ৩-ফেজ (৪৪০ ভোল্ট) বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। বিকল্প হিসেবে এয়ার ব্লোয়ার চালানোর জন্য ডিজেল ইঞ্জিন ও জেনারেটর থাকা আবশ্যক।

Content added By

দক্ষ জনশক্তি ছাড়া লাভজনকভাবে হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন সম্ভব নয়। তাই দক্ষ জনশক্তির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত।

Content added By

হ্যাচারির উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য হ্যাচারিতে ব্যবহৃত ঔষধ, যন্ত্রপাতি, ব্রুড শ্রিম্প, পিএল এর খাদ্য আর্টেমিয়া ইত্যাদি সহজেই পাওয়া যায় এমন স্থানে হ্যাচারি স্থাপন করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সহজেই সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকতে হবে।

Content added By

এমন এলাকায় চিংড়ি হ্যাচারি স্থাপন করতে হবে যেখানে কৃষি বা অন্যান্য ফসলের ফলন বা চাষ হয় না। অন্যথায় সামাজিক বিশৃঙ্খলা বা পরিবেশ গত প্রতিকূলতার সৃষ্টি হতে পারে।

Content added By

সফলভাবে গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনার জন্য এলাকার সামাজিক পরিস্থিতি একটি উল্লেখযোগ্য নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ এবং নৈতিক সমর্থন ব্যতীত কোনো প্রকার উৎপাদন সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব নয়। পলদা চিংড়ি হ্যাচারি স্থাপন ও পরিচালনায় যেহেতু বড় অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়, তাই হ্যাচারি স্থাপনের পূর্বে বিনিয়োগকৃত পুঁজির নিরাপত্তার বিষয়টি সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা উচিত। হ্যাচারি এলাকার সামাজিক পরিস্থিতি, চুরি ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, ধর্মঘট, রাজনৈতিক ও অন্যান্য অস্থিরতা সে স্থানে গলদা চিংড়ি হ্যাচারি স্থাপন, পরিচালনা ও পোনা বিপণন কর্যক্রমকে ব্যাহত করবে। তাই এরূপ সমস্যা সংকুল স্থানে হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত নয়।

Content added By

হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনা সঠিকভাবে বিপণনের জন্য হ্যাচারির বাণিজ্যিক উপযোগিতা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। তাই উৎপাদিত পোনার বাজার প্রাপ্তির বিষয়টি হ্যাচারি স্থাপনকালেই গুরুত্বের সাথে বিবেচনার দাবী রাখে। গলদা চিংড়ি চাষ এলাকার কাছাকাছি যেখানে মূল চাষ মৌসুমে গলদা চিংড়ি পোনার চাহিদা রয়েছে সেসব এলাকায় হ্যাচারি স্থাপন করা হলে হ্যাচারিতে উৎপাদিত পিএল বিপণনের সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি পিএল-এর পরিবহনজনিত পীড়নের সম্ভবনা থাকে না ।

Content added By

গলদা চিংড়ির হ্যাচারিতে সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন, ধারণক্ষমতা ও ব্যবহারের উপযোগীতার ওপর এর উৎপাদন সফলতা নির্ভর করে। হ্যাচারির ধরন, হ্যাচারি পরিচালনা পদ্ধতি, উৎপাদন ক্ষমতা এবং উৎপাদন এলাকার পরিবেশের সাথে অবকাঠামোর পার্থক্য বা পরিবর্তন হতে পারে। সুতরাং, একটি হ্যাচারি নির্মাণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রেখে অভিজ্ঞ নকশাকার দিয়ে এর নকশা তৈরি করে নিতে হবে। নকশা তৈরির সময় নিম্নোক্ত বিষয় সমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

১. নির্বাচিত এলাকার ভৌগলিক সুবিধা

২. পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ

৩. উৎপাদন উপকরণ সংগ্রহের সুবিধা

৪. স্থানীয় জনগনের গ্রহণযোগ্যতা ও সম্পৃক্ততা

৫. হ্যাচারিতে কর্মরত শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা

৬. হ্যাচারি পরিচালনার ঝুঁকিসমূহ অপসারণ বা কমানোর সুবিধা

৭. হ্যাচারির বর্জ্য নিষ্কাশন ও আবর্জনা অপসারণের সুবিধা এবং

৮. জীব নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের সুবিধা।

Content added By

গলদা চিংড়ি হ্যাচারির ভৌত অবকাঠামো সঠিকভাবে এবং সঠিক ধারণক্ষমতা সম্পন্নভাবে নির্মাণ করা না হলে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে এবং হ্যাচারি পরিচালনায় বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। হ্যাচারিতে কর্মরত কর্মচারীদের ব্যবহার উপযোগিতার কথা বিবেচনায় রেখে সঠিক ডিজাইন এবং আয়তনের অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। গলদা চিংড়ি হ্যাচারির ভৌত অবকাঠামোর ডিজাইন এবং আয়তন নিম্নলিখিত বিষয়ের উপরে নির্ভর করে-

১. ভূমির আকার, আয়তন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও অবস্থানগত সুবিধা

২. মূলধন বিনিয়োগের সামর্থ্য

৩. উৎপাদনযোগ্য চিংড়ির প্রজাতি

৪. হ্যাচারির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা, পোনার বাজার ও ব্রুড চিংড়ির প্রাপ্যতা, এবং

৫. হ্যাচারি পরিচালনায় দক্ষ জনবল।

উপরোল্লিখিত বিষয়াদির প্রেক্ষাপটে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত একটি আদর্শ গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে নিম্নলিখিত ভৌত সুবিধা থাকা প্রয়োজন।

Content added By

গলদা চিংড়ি হ্যাচারির ভবনটি খোলামেলা জায়গায় হওয়া প্রয়োজন। ইটের সাধারণ গাঁথুনির উপরে অ্যাসবেস্টস অথবা ফাইবার শিটের ছাউনী দেয়া হলে ভবনের অভ্যন্তরে পরিচালিত উৎপাদন কাজে পানির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে লার্ভা প্রতিপালনের ট্যাংকে প্রচুর আলো পড়ার প্রয়োজন হয়। তাই অ্যাসবেস্টসের ছাউনীর ক্ষেত্রে এলআরটি-এর ঠিক উপরে স্বচ্ছ ফাইবার শিট স্থাপন করে ট্যাংকে আলো পড়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। হ্যাচারি ভবনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন উৎপাদন ট্যাংকসমূহ ছাড়াও আর্টিমিয়া হ্যাচিং এর ব্যবস্থা, ল্যাবরেটরি, অফিস, স্টোর, ফিডরুম, ওয়াশরুম ইত্যাদির সংস্থান রাখতে হবে। তাই নির্মাণকালে এমনভাবে এর নকশা প্রণয়ন করতে হয় যেন বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে যাতায়াতে কোনো সমস্যা না হয়, অথচ হ্যাচারির জীব-নিরাপত্তা ব্যাহত হয় না।

Content added By

গলদা চিংড়ির হ্যাচারি পরিচালনা করতে হলে সারা মৌসুমেই লবণ পানির প্রয়োজন হয়। তাই প্রথমেই লবণ পানি মজুদ করে রাখতে হয়। যে সব এলাকায় কেবলমাত্র বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ব্রাইন পাওয়া যায় (লবণ তৈরির মাঠ বা বিশেষ ভাবে হ্যাচারিতে ব্যবহারের জন্য উৎপাদিত ব্রাইন) সে এলাকা থেকে ব্রাইন সংগ্ৰহ করে মজুদ ট্যাংকে রাখতে হয়। এ ট্যাংক মাটির উপরে বা মাটির নিচে বা অর্ধেক মাটির নিচে স্থাপন করা যায়। এ ট্যাংক সিমেন্ট-কংক্রিটের দ্বারা নির্মাণ করে পানি প্রবেশ ও বাহির এবং পরিষ্কার করার পাইপলাইন রাখতে হবে।

Content added By

ভূগর্ভস্থ পানি দ্বারা গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে স্বাদু পানির চাহিদা মিটানো হয়। এ জন্য টিউবওয়েল, পাম্পমেশিন ও পাম্প হাউস প্রয়োজন। হ্যাচারির দৈনিক পানির চাহিদার উপর নির্ভর করে টিউবওয়েলের পাইপের ব্যাস, পাম্পের শক্তি ও পাম্প হাউসের আয়তন নির্ধারণ করা যেতে পারে।

Content added By

এ ট্যাংকে স্বাদু পানির সাথে ব্রাইন মিশ্রিত করে নির্ধারিত বা ঈদিত লবণাক্ততা সম্পন্ন পানি তৈরি করা হয় এবং ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত করে পানি শোধন করা হয়। এ ট্যাংকের আয়তন ও সংখ্যা হ্যাচারির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার উপর নির্ভরশীল। হ্যাচারিতে দৈনিক পানি ব্যবহারের চাহিদার উপরে নির্ভর করে অন্তত ৫ দিনের চাহিদা মিটাতে পারে এরূপ আয়তনের পানি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন শোধন ট্যাংক নির্মাণ করা উচিত। ব্যবস্থাপনা সুবিধার জন্য ১৫-২০ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাংকই উপযোগী। এ ট্যাংক মূল হ্যাচারি ঘরের বাইরে থাকতে পারে। মিশ্রণ ট্যাংক RCC ঢালাই নির্মিত হলে ভালো হয়। খরচ কমানোর জন্য ইটের গাঁথুনি দিয়েও এ ট্যাংক নির্মাণ করা যেতে পারে।

Content added By

এ ট্যাংকে বালি, কাঠকয়লা, কাঁকর, নুড়িপাথর, ঝিনুক, ইত্যাদি দিয়ে পানি ছাকনি বা ফিল্টার তৈরি করা হয়। পানিতে উপস্থিত সকল প্রকার অদ্রবর্ণীয় কণা, ভাসমান পদার্থ, বিভিন্ন প্রাণির ডিম, লার্ভা ইত্যাদি এমনকি সকল প্রোটোজোয়া, ফাংগাস এবং অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া এ ফিল্টারের সাহায্যে পৃথক করা সম্ভব। হ্যাচারির পানির চাহিদানুযায়ী প্রতি ঘন্টায় কতটুকু পানি ফিল্টার করতে হবে তা নির্ধারণ করে এর আয়তন এবং ধারণক্ষমতা ও সংখ্যা নির্ণয় করতে হয়।

Content added By

হ্যাচারির উৎপাদন ক্ষমতার উপর নির্ভর করে এর উৎপাদন ট্যাংকে একবারে অনেক পানি সরবরাহের প্রয়োজন হতে পারে। তাই প্রয়োজনের সময় ব্যবহারের উদ্দেশ্যে শোধিত ও পরিশ্রুত পানি প্রয়োজনীয় পরিমাণে জমা রাখার জন্য এ ধরনের ট্যাংকের প্রয়োজন হয়। হ্যাচারিতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পানির ৩-৫ গুণ পানি এ সমস্ত ট্যাংকে মজুদ রাখলে হ্যাচারি পরিচালনা সহজতর হয়।

Content added By

শোধিত ও পরিশ্রুত মিশ্রিত পানি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সাহায্যে সহজে উৎপাদন ট্যাংকে প্রবাহিত করার জন্য ওভারহেড ট্যাংকের প্রয়োজন হয়। এ ধরনের ট্যাংক সাধারণত সিমেন্ট-কংক্রিটের নির্মিত হয়ে থাকে এবং এর নির্মাণ ব্যয় কিছুটা ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। ওভারহেড ট্যাংকের সাহায্যে গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে দৈনিক পানি পরিবর্তনকালে লার্ভা পালন ট্যাংকে পানি সঞ্চালনের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।

Content added By

বাইরে থেকে সংগৃহীত ব্লুড বা ডিমওয়ালা চিংড়ি এই ট্যাংকে শোধন করা হয়। সাধারণত ০.৫-১ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাংক এ কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাজের সুবিধার্থে স্থায়ী অবকাঠামো অপেক্ষা ফাইবার গ্লাস বা প্লাস্টিকের স্থানান্তরযোগ্য ট্যাংক এ কাজে ব্যবহার করা হয়।। 

Content added By

ডিম ফুটে লার্ভা বের হওয়া পর্যন্ত পরিপক্ক স্ত্রী গলদা চিংড়িকে এ ট্যাংকে রেখে প্রতিপালন করা হয়। হোল্ডিং ট্যাংক দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রথমত- বাইরে থেকে ডিমওয়ালা চিংড়ি এনে একটি পৃথক চৌবাচ্চায় রাখতে হয়। পরে এ চৌবাচ্চা থেকে যেসব চিংড়ির ডিম ধূসর বর্ণের হবে সেই চিংড়ি দ্বিতীয় হোল্ডিং ট্যাংকে রাখা হয়। একটি ট্যাংকেও এ কার্যক্রম সম্পাদন করা যায় তবে পৃথক ট্যাংক ব্যবহার হ্যাচারি পরিচালনার সহায়ক ও স্বাস্থ্য সম্মত।

Content added By

এই ট্যাংকে পরিপক্ষ স্ত্রী গলদা চিংড়ি রাখা হয় এবং এখানে এর ডিম ফুটে লার্ভা হয়। অনেক হ্যাচারিতে ব্রুড হোল্ডিং ট্যাংককে হ্যাচিং ট্যাংক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে আলাদা হ্যাচিং ট্যাংক ব্যবহার করা স্বাস্থ্য সম্মত। এ কাজে স্থায়ী অবকাঠামো অপেক্ষা PVC ট্যাংক ব্যবহার করা সুবিধাজনক। হ্যাচিং ট্যাংক লম্বাকৃতি বা গোলাকার হতে পারে। এখানে ডিম ফুটার পরে লার্ভা সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সংযোগ করা যায়। তবে এর ধারণক্ষমতা ৫০০ লিটার থেকে ১ টনের মধ্যে হলে ভালো হয়।

Content added By

এই সমস্ত ট্যাংকে সদ্য ফোটা লার্ভা মজুদ করা হয় এবং পিএল হওয়ার পূর্ব সময় পর্যন্ত প্রতিপালন করা হয়। ট্যাংকের আকার উপ-বৃত্তাকার, গোলাকার অথবা বর্গাকার হতে পারে। ট্যাংক পরিষ্কার করা ও তাতে খাদ্য ও পানি ব্যবস্থাপনার সুবিধার জন্য গোলাকার ট্যাংক অধিকতর সুবিধাজনক। এ ধরনের ট্যাংকের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে খাদ্য পরিবেশন করা এবং পরিষ্কার করা সহজতর। ব্যবস্থাপনা সুবিধার জন্য গলদা চিংড়ি হ্যাচারির লার্ভা প্রতিপালনের ট্যাংক সাধারণত ৩ টন থেকে ৫ টনের মধ্যে হয়ে থাকে। ছোট হ্যাচারির জন্য ১-২ টন পানিধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ফাইবার গ্লাস বা প্লাস্টিক ট্যাংকও ব্যবহার করা যায়।

Content added By

পুনঃসঞ্চালন পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনা কালে এলআরটি-এর সাথে বায়োফিল্টার ট্যাংক নির্মাণ করতে হবে। এলআরটি সংলগ্ন বায়োফিল্টার ট্যাংক সাধারণত এলআরটি-এর আয়তনের ২৫% হয়ে থাকে। এ ট্যাংক নির্মাণকালে এলআরটি-এর সাথে বায়োফিল্টার ট্যাংকের মধ্যে পানি পুনঃসঞ্চালনের বিভিন্ন সুবিধার সংস্থান রাখতে হবে। প্রতিটি এলআরটি-এর জন্য পৃথক বায়োফিল্টার ট্যাংক নির্মাণ করতে হবে। বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সম্প্রতি বায়োফিল্টারের মাধ্যমে পানি পুনঃসঞ্চালন পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনা নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বিধায় বর্তমানে অধিকাংশ আধুনিক হ্যাচারিতে এ ট্যাংক নির্মাণ করা হয় না।

Content added By

লার্ভা পিএল পর্যায়ে রূপান্তরিত হওয়ার পরে এদের প্রতিপালনের পদ্ধতি পরিবর্তন হয়ে যায় বিধায় তখন এদের পৃথক নার্সারি ট্যাংকে প্রতিপালন করার প্রয়োজন হয়। এ কাজে স্থায়ী অবকাঠামো ব্যবহার করা যায়। তবে এলআরটি হিসেবে ব্যবহৃত ট্যাংকও পরিষ্কার করে নিয়ে এ কাজে ব্যবহার করা যায়। নার্সারি ট্যাংকের ডিজাইন ও আয়তন এলআরটি-এর অনুরূপ হতে পারে।

Content added By

হ্যাচারিতে উৎপাদন কাজের সাথে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে এমন ট্যাংক সিমেন্ট-কংক্রিটের তৈরি হলে এসব ট্যাংকের ভিতরের দেয়ালে মেরিন এ্যাপক্সি পেইন্টের প্রলেপ লাগানো প্রয়োজন। অন্যথায় সিমেন্টের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ছিদ্রের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়া পরবর্তীতে ট্যাংকের পানিতে এসে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এর ফলে যে কোনো সময় উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এসব ক্ষতিকর রোগজীবাণু যাতে ট্যাংকের পানির সংস্পর্শে এসে কোনো প্রকার সংক্রমণের সৃষ্টি করতে না পারে সে উদ্দেশ্যে উৎপাদন-ট্যাংকের ভিতরের অংশে এ্যাপক্সি মেরিন পেইন্টের প্রলেপ দেয়া হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন ট্যাংকের কোথাও এ রঙের প্রলেপ উঠে না যায়। এমন হলে সম্পূর্ণ ট্যাংকের এ্যাপক্সি প্রলেপ তুলে ফেলে নতুনভাবে পেইন্ট করতে হবে।

Content added By

গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে লার্ভা পিএল-এর খাদ্য প্রস্তুত, সংরক্ষণ ও অন্যান্য কাজের জন্য একটি পৃথক কক্ষ থাকা আবশ্যক। এ কক্ষটি আলো-বাতাসযুক্ত এবং স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া বাঞ্ছনীয়।

Content added By

গলদা চিংড়ির লার্ভার রূপান্তর এবং এলআরটি-তে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু পর্যবেক্ষণ, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের উপযোগিতা পরীক্ষা ও সংরক্ষণ, আর্টিমিয়া পর্যবেক্ষণ এবং অনুরূপ অন্যান্য পরীক্ষামূলক কাজের জন্য অবশ্যই একটি ল্যাবরেটরি ইউনিট থাকা প্রয়াজন।

Content added By

গলদা চিংড়ি লার্ভাকে প্রতিদিন খাদ্য হিসেবে আর্টিমিয়া নল্লি সরবরাহ করতে হয়। তাই চাহিদা অনুযায়ী আর্টিমিয়া নল্লি হ্যাচিং-এর জন্য আর্টিমিয়া ট্যাংক ব্যবহার করতে হয়। এ জাতীয় ট্যাংক সিমেন্ট-কংক্রিটের হতে পারে। তবে ফাইবার গ্লাস বা প্লাস্টিকের স্থানান্তরযোগ্য ট্যাংক হলে তা পরিষ্কার করা এবং স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে সংরক্ষণ করা সহজ হয় ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখা সুবিধাজনক হয়।

Content added By

এখানে পিএল বিক্রির আগে তাকে খাপ খাওয়ানো এবং পরিবহনের উদ্দেশ্যে উপযুক্তভাবে প্যাকিং করার জন্য আলাদা একটি শেড থাকতে হবে। তাছাড়া এ শেডে বিক্রয়ের জন্য পিএল রাখার সুবিধা, প্যাকিং এর জন্য প্রয়োজনীয় পানি রাখার সুবিধা, পোনা ও অক্সিজেন দেয়ার সুবিধা, ক্রেতার বিশ্রাম এবং বসার সুবিধা ইত্যাদি থাকা প্রয়োজন। এ এলাকায় ট্রাক বা অন্য কোনো যানবাহন সহজে যাতায়াত করতে পারে সেজন্য রাস্তা ও অন্যান্য ভৌত সুবিধা নির্মাণ করতে হবে।

Content added By

হ্যাচারির সামগ্রিক হাইজিন বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষার উদ্দেশ্যে এর উপযোগী নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। প্রত্যেকটি উৎপাদন ইউনিট থেকে বর্জ্য পানি সঠিকভাবে নিষ্কাশন করা না হলে হ্যাচারির জীব নিরাপত্তা ব্যাহত হবে এবং এ ক্ষেত্রে উন্নত গুণগতমাণ সম্পন্ন স্বাস্থ্যবান পিএল উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। হ্যাচারির প্রত্যেকটি উৎপাদন ইউনিট থেকে বর্জ্য পানি নিষ্কাশনের জন্য উপযুক্ত ঢালসম্পন্ন নর্দমা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে একটি কেন্দ্রীয় নর্দমায় মিলিত হয় এবং এখান থেকে সম্পূর্ণ হ্যাচারির বর্জ্য পানি একটি পৃথক ট্যাংকে শোধনের জন্য জমা হয়। জমাকৃত বর্জ্যপানি এ ট্যাংকে শোধনের পূর্বে বাইরে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা যাবে না।

Content added By

হ্যাচারির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি এ ইউনিটে স্থাপনপূর্বক পরিচালনা করা হয়। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে ব্রোয়ার, জেনারেটর, সাবমার্সিবল হিটারের জন্য অটো থার্মো-কন্ট্রোল প্যানেল বোর্ড, ইউডি স্টেরিলাইজার, কার্টিজ ফিল্টার, বিদ্যুতের মিটার ও প্রধান সুইচ ইত্যাদি। হ্যাচারিতে শব্দদূষণ এবং ডিজেল ও অন্যান্য জ্বালানির কারণে দূষণের সম্ভাব্যতা পরিহার করার উদ্দেশ্যে জেনারেটরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থাপনের বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। হ্যাচারির বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামোর সাথে মানানসই অবস্থানে পরিকল্পিত ভাবে এসব যন্ত্রপাতি স্থাপন করা না হলে হ্যাচারি পরিচালনার কাজ জটিল ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিতে পারে।

Content added By

একটি বাণিজ্যিক হ্যাচারিতে উন্নত গুণগতমান সম্পন্ন পিএল উৎপাদন ও বিক্রয়ের কাজকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে আরও কিছু ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করা প্রয়োজন হয়। এসব অবকাঠামো সরাসরি উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত না হলেও হ্যাচারির সার্বিক বাণিজ্যিক উৎকর্ষ সাধনে এসব অবকাঠামোর যথেষ্ট গুরুত্ব রযেছে। এসব অবকাঠামোগুলো হচ্ছে (১) অফিস রুম, (২) স্টোর রুম, (৩) রেস্ট রুম বা গেস্ট হাউস (৪) কর্মচারী, টেকনিশিয়ান এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জন্য পৃথক পৃথক আবাসিক সুবিধা এবং আবাসিক ইউনিটসমূহের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক নর্দমা ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা, (৫) গার্ড শেড, (৬) গ্যারেজ এবং গাড়ি পার্কিং এর স্থান (৯) গেইট, সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও প্রাঙ্গণ বিদ্যুতায়ন ইত্যাদি। এসব অবকাঠামোর ডিজাইন, আয়তন ও অন্যান্য সুবিধা সংযোজনের বিষয়টি হ্যাচারির চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপরে ভিত্তি করে নির্মাণ করতে হবে।

Content added By

যে সকল হ্যাচারির আঙ্গিনায় পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে সে সকল হ্যাচারিতে এ ধরনের পুকুর নির্মাণ ও ব্যবহার হ্যাচারি, পরিচালনার জন্য সুবিধাজনক এবং এতে হ্যাচারি পরিচালনা বেশ লাভজনক। হ্যাচারি সংলগ্ন স্থানে ব্রুড পালনের পুকুর থাকলে যথা সময়ে নিজস্ব হ্যাচারিতে ব্যবহারের জন্য ব্রুড চিংড়ি পাওয়া নিশ্চিত করা যায়। তাছাড়া অবিক্রিত পিএল হ্যাচারি সংলগ্ন নার্সারি পুকুরে প্রতিপালন করে জুভেনাইল পর্যায়ে বড় করে ও বিক্রয় করে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। নার্সারি পুকুরের আয়তন ১০-২০ শতক হতে পারে এবং পানির গড় গভীরতা ৬০-৭০ সেমি রাখা যেতে পারে। রুড পালন পুকুরের আয়তনও হ্যাচারিতে ব্রুড চিংড়ির চাহিদা এবং ব্যবস্থাপনা কৌশলের উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করতে হবে। এ সকল পুকুরের পানির গড় গভীরতা ১-১.৫ মিটার পর্যন্ত রাখা যেতে পারে।

Content added By

আধুনিক গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ সকল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির স্পেসিফিকেশন, মডেল, কার্যক্ষমতা, আকার আকৃতি ও ব্যবহার পদ্ধতির উপর সম্যক ধারণা না থাকলে সুষ্ঠুভাবে হ্যাচারি পরিচালনা করা সম্ভব নয়। গলদা হ্যাচারিতে বহুল ব্যবহৃত ও অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির পরিচিতি, স্পেসিফিকেশন ও ব্যবহার বিধি এবং কাজ নিচে উল্লেখ করা হলো - 

ক্রম যন্ত্রপাতি/সরঞ্জামাদিস্পেসিফিকেশন/মডেল/আকারকাজ
০১এয়ার ব্রোয়ার৫/১০ অশ্বক্ষমতা (৩-ফেজ/ ৪৪০সকল ট্যাংকে বায়ু সঞ্চালন
চালু রাখা, এটি হ্যাচারির শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্র
০২ডিজেল ইঞ্জিন১০/১৫/২০ অশ্বক্ষমতাআপদকালীন এয়ার রোয়ার
চালানোর জন্য ব্যবহৃত
০৩জেনারেটর১৫/২০ কেভি এ/২২০-৪৪০ ভোলট, সিঙ্গেল ও থ্রি-ফেজআপদকালীন বিদ্যুৎ সরবরাহ চলমান রাখা
০৪স্বাদু পানির পাম্প১/২ অশ্ব ক্ষমতা ১.৫/৩” ব্যাসভূগভস্থ পানি উত্তোলন ও সরবরাহ
০৫সাবমার্সিবল পাম্প১.৫/০.৫'' অশ্বক্ষমতা / ১ ফেজ ২২০ ভোল্টএ্যারেশন ও হ্যাচারির বিভিন্ন অংশে পানি সরবরাহ
০৬ব্যাটারি অপারেটর এ্যারেটর৯-১২ ভোল্টমাদার চিংড়ি পরিবহনকালে
বায়ু সঞ্চালন এ্যারেটর
০৭ইমরাশন হিটার (থার্মোস্ট্যাটসহ)১/২/৩/ কিলোওয়াট ২২০ / ৪৪০ ভোল্টলার্ভা/পিএল ট্যাংকের ২৮- ৩১° সে. তাপমাত্রা স্থির রাখার জন্য
০৮ইমরাশন হিটার (থার্মোস্ট্যাটসহ)লার্ভা/পিএল ট্যাংকের ২৮- ৩১° সে. তাপমাত্রা স্থির রাখার জন্য
০৯ রিফ্লাক্টোমিটারএ-১০০/ জাপান অরিজিনপানির লবণাক্ততা পরিমাপ
১০স্প্রিং ব্যালান্স১০-২০ কেজি পর্যন্তসুক্ষ্ম ওজন পরিমাপ
১১ইলেকট্রোনিক ডিজিটাল ব্যালেন্স০.০১ গ্রাম ২০০ গ্রাম পর্যন্তসুক্ষ্ম ওজন পরিমাপ
১২ডায়াল ব্যালান্স৫০০ গ্রাম ১০ কেজি পর্যন্তখাদ্য উপকরণ,আর্টিমিয়া সিস্ট, রাসায়নিক দ্রব্যাদি ইত্যাদি পরিমাপ
১৩ব্লেন্ডারলার্ভার সম্পূরক খাদ্য (কাস্টার্ড) তৈরি
১৪অটোমেটিক ইমার্জেন্সি ল্যাম্প ও এলার্ট হর্ণরোয়ার হাউজের জন্য
১৫আর্টিমিয়া হ্যাচিং ট্যাংকএফআরপি (ঢাকনাসহ) ৪০০/৫০০ লিটারআর্টিমিয়া ও স্ফুটন
১৬ডিপ ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটর১০ সিএফটিখাদ্য সংরক্ষণ (কাস্টার্ড  আর্টিমিয়া ইত্যাদি)
১৭এয়ারকুলার১.৫ টনতাপমাত্রা অনুকুলে রাখার জন্য
১৮স্টিম কুকারমাঝারি আকারেরকাস্টার্ড তৈরি

 

খ. আবশ্যকীয় সরঞ্জামাদি

ক্রম যন্ত্রপাতি/সরঞ্জামাদিস্পেসিফিকেশন/মডেল/আকারকাজ
০১নাইলন রশিবিভিন্ন সাইজপ্যাকিং, ইমারজেন্সি সংযোগ মেরামত ইত্যাদি
০২ রাবার ব্যান্ডপ্রতি প্যাকেট ১০০টি প্রতি ব্যাগ ১০০ প্যাকেট পিএল প্যাকিং ইত্যাদি
০৩ পলিথিন ব্যাগ৩০ সেমি × ২০ সেমি ২৪ সেমি × ৩৬ সেমিপিএল পরিবহন
০৪ ফিল্টার সামগ্রী (কাঠ, কয়লা, নুড়ি পাথর, বালি ঝিনুকের খোসা ইত্যাদি)পরিষ্কার, জীবাণুমুক্ত ও শুকনাবালি ফিল্টারের উপাদান
০৫পানি সঞ্চালনের পাইপ১ ইঞ্চি/১.৫ ইঞ্চি /১ ইঞ্চি ডায়ামিটার।হ্যাচারির বিভিন্ন ট্যাংকে পানি সঞ্চালন
০৬পিভিসি সাইফন ফিল্টার এবং পাইপ - ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার 
০৭ফিল্টার কাপড়৫৬/১০০/১০০ মেসশোধন ও পরিশ্রুত পানি ছাঁকনের জন্য 
০৮পিএল গণনার বাটি ও চামুচসাদা ম্যালামাইনের ও মাঝারী আকারপিএল দেখা ও গণনার কাজে ব্যবহৃত হয় 
০৯প্লাস্টিক বালতি, মগ, জগ, বাটি ইত্যাদিছোট, বড় ও মাঝারী আকারলার্ভি, পিএল ইত্যাদি সংগ্রহ ও স্থানান্তর, পানি ভরা ও নিষ্কাশন ইত্যাদি
১০অক্সিজেন সিলিন্ডারমাদার ও পিএল পরিবহনের । সময় এবং LRT তে অক্সিজেন সরবরাহ

 

গ. আবশ্যকীয় পাইপ ও ফিটিংস সামগ্রী

ক্রম  যন্ত্রপাতি/সরঞ্জামাদিস্পেসিফিকেশন/মডেল/আকারকাজ
০১ পিভিসি পাইপ

২.৫/৩/৪.৫ ইঞ্চি

০.৫/১/১.৫ ইঞ্চি 

পানি সরবরাহ লাইন বায়ু সঞ্চালন
০২ জিআই পাইপ১.৫/১/০.৭৫ / ইঞ্চিঐ 
০৩ পিভিসি ফিটিংসএলবো/রিডিউসার সকেট থ্রেডপানি সরবরাহ লাইন বায়ু সংযোগ
০৪ পিভিসি গেইট ভাল্ব০.৭৫/১/১.৫/২.৫/৫ ইঞ্চি বায়ু ও পানি সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ
০৫পলিভিনাইল অ্যাডহেসিভসংযোগ
০৬ ড্রিল মেশিন, হেক্সো ব্লেডপাইপ, রড ইত্যাদি ছিদ্রকরণ ও কাটার জন্য

 

ঘ. বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি

ক্রম যন্ত্রপাতি/সরঞ্জামাদিস্পসিফিকেশন/মডেল/আকার কাজ 
০১বাল্ব ও টিউব লাইটটিউব-৪০ ওয়াট, বাল্ব-৬০/১০০/২০০ ওয়াটহ্যাচারি প্রাঙ্গণ আলোকিতকরণ, আর্টিমিয়া ফুটানো এবং লাৰ্ভি বাছাই
০২সুইচ, প্রাগ, সকেট ইত্যাদি  বৈদ্যুতিক সংযোজন
০৩ফিউজ কাটআউট স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন
০৪অ্যাডহেসিভ টেপ লাইন সংযোজন
০৫ অটো সার্কিট ব্রেকার স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন

 

ঙ. বায়ু সঞ্চালন সরঞ্জামাদি

ক্রম যন্ত্রপাতি/সরঞ্জামাদিস্পসিফিকেশন/মডেল/আকারকাজ
০১এয়ার সুইচছোট/বড় ক্যালিবারবায়ু সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ
০২এয়ার স্টোনবুদবুদ তৈরী
০৩এয়ার কানেক্টরT Shapeসংযোগ সাধন
০৪লীড ওয়েট এয়ার স্টোন-কে তলায় স্থির রাখে

 

চ. আবশ্যকীয় নেট ও ব্যাগ

ক্রম যন্ত্রপাতি/সরঞ্জামাদিস্পসিফিকেশন/মডেল/আকারকাজ 
০১ লার্ভা ক্যাচ নেট১৫ ডায়া এবং ১৫০ মেসআর্টিমিয়া নগ্নি ধরা
০২পিএল ক্যাচ নেট১৫ ইঞ্চি ভাষা এবং ৫৬ মেসLRT থেকে পিএল ধরা ও স্থানান্তর
০৩আর্টিমিয়া ক্যাচ নেট১৫ ইঞ্চি ডায়া এবং ১০০/১২০ মেসআর্টিমিয়ার নগ্নি সংগ্রহ
০৪আর্টিমিয়া ক্যাচ ব্যাপ১৮ ইঞ্চি /৩৬ ইঞ্চি/ ১০০/২০ মেসআর্টিমিয়ার সিন্ট ধৌতকরণ
০৫মাদার ক্যাচ নেটলম্বা হাতলযুক্ত ডিপ নেটমাদার ধরা
০৬পলি প্রোপাইলিন ফিল্টার
ব্যাগ
(৩০ সেমি × ৮৫ সেমি) ১/৫/১০পরিশ্রুত পানি ছাকন 

 

ছ. ল্যাবরেটরি সরঞ্জামাদি

ক্রম যন্ত্রপাতি/সরঞ্জামাদিস্পসিফিকেশন/মডেল/আকারকাজ
০১কম্পাউন্ড মাইক্রোস্কোপ লার্ভার স্টেজ ও রোগ জীবাণু পর্যবেক্ষণ
০২গ্লাস স্লাইড ও কভার স্লিপ ঐ 
০৩গ্রিফেন বিকার১০/৫০/১০০/২৫০/৫০০/১০০০ মিলিআটিমিয়া নল্লি সংগ্রহ, পর্যবেক্ষণ, লার্ভা পর্যবেক্ষণ, রাসায়নিক পরীক্ষা ইত্যাদি 
০৪গ্যাজুয়েড সিলিন্ডার১০/৫০/১০০/২৫০/৫০০/১০০০ মিলিরাসায়নিক সামগ্রি মাপার
কাজে ব্যবহৃত হয়
০৫টেস্ট টিউব, কনিক্যাল ফ্ল্যাক্স, ফ্ল্যানেল, পিপেট ড্রপার ইত্যাদি ঐ 
০৬ডিসপোজেবল গ্লোভস্ রোগ সংক্রমণ রোধকল্পে হাতে পরিধান করা
০৭সেফটি গজ দুর্ঘটনায় ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ
০৮ম্যাগনিফাইং গ্লাস আর্টিমিয়া সিস্ট, নগ্নি ও লার্ভি পর্যবেক্ষণ
০৯ফিল্ড টেস্ট কিট (ক্লোরিন, PH, ক্ষারত্ব, হার্ডনেস, অ্যামোনিয়া, নাইট্রেট, নাইট্রাইট ইত্যাদি) স্বাদু ও লবণ পানির প্যারামিটারের মাত্রা নির্ণয়
১০১০ দ্রবীভূত অক্সিজেন কীট উৎপাদনে ট্যাংকের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা নির্ণয়

 

Content added || updated By

জীবমাত্রই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অন্যান্য প্রাণির মত চিংড়ির পিএলও বিভিন্ন রোগসৃষ্টিকারী উপাদান (Causa tive Agent) এর মাধ্যমে রোগাক্রান্ত হতে পারে। রোগসৃষ্টিকারী উপাদানগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও এককোষী প্রাণি উল্লেখযোগ্য। হ্যাচারিতে রোগ বলতে ডিমওয়ালা চিংড়ি, লার্ভা ও পিএল-এর রোগকেই বুঝায়। হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা সম্পৰ্কীয় ত্রুটি ও অপরিচ্ছন্নতার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তাই হ্যাচারি পরিচালনায় সর্বদা মনে রাখতে হবে যে “রোগ নিরাময়ের চেয়ে রোগ প্রতিরোধই উত্তম। সে জন্য হ্যাচারির অভ্যন্তরে মূলত পানি, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামাদি এবং সরবরাহকৃত খাদ্যের গুণগতমান বজায় রাখা ও জীবাণুমুক্ত রাখা একান্ত আবশ্যক।

রোগ প্রতিরোধে গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যাদি ও ঔষধপত্রের নাম নিচে দেয়া হলো:

  • ব্লিচিং পাউডার (৬০-৬৫% ক্লোরিন)
  • সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড (তরল)
  • ফরমালিন (ল্যাব গ্রেড)
  • সোডিয়াম থায়োসালফেট
  • সোডিয়াম বাই-কার্বনেট
  • অক্সিটেট্রা সাইক্লিন
  • টেফলন
  • প্রিফুরান
  • EDTA (Ethylene Di-amino Tetra acetic Acid)
  • এ্যাকোয়াকালচার প্রোবায়োটিক
  • ঝুমসাইড/প্রোটোজুয়াসাইড
  • মিথিলিন ব্লু
  • ভিটামিন প্রিমিক্স/মাল্টিভিটামিন/ভিটামিন সি।
Content added By

লার্ভা ও পিএল-এর দ্রুত বৃদ্ধি, দেহের ক্ষয়পূরণ ও পুষ্টির অভাবজনিত রোগ নিরাময়ের জন্য সময়মতো সঠিক পরিমাণে সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করা হয়। হ্যাচারিতে ব্যবহৃত সম্পূরক খাদ্য প্রধানত দুই প্রকার। যথা-

১. জীবিত খাদ্য আর্টিমিয়া।

২. তৈরি খাদ্য: কাস্টার্ড ও ফরমুলেটেড (এনক্যাপসুলেটেড) ফিড।

Content added By

আর্টিমিয়া এক প্রকার ক্ষুদ্র প্রাণিকণা এবং প্রোটিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ ক্রান্টাসিয়া যা চিংড়ির লার্ভার জন্য জীবন্ত প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

Content added By

কাস্টার্ড হলো বিভিন্ন উপকরণের সমন্বয়ে তৈরি এক প্রকার সম্পূরক খাবার যা জীবিত খাবার আটিমিয়ার পাশাপাশি লার্ভার জন্য সরবরাহ করা হয়।

১ কেজি কাস্টার্ড তৈরির ফর্মুলা নিচে দেয়া হলো।

ক্রম ------------উপকরণ------------পরিমাণ

১ ---------------গুড়া দুধ------------৩৫০ গ্রাম

২---------------ডিম----------------৩৫০ গ্রাম

৩ --------------কর্ণ ফ্লাওয়ার------------১০০ গ্রাম

৪------------ মাছ/চিংড়ি/ শ্রিম্প মিট-----------২১০ গ্রাম

৫------------কড লিভার অয়েল-----------১৭ মিলি

৭------------আগার পাউডার-----------১২ গ্রাম

৮----------অক্সিটেট্রাসাইক্লিন-------------১ গ্রাম

Content added || updated By

বর্তমানে গলদা চিংড়ির লার্ভার জন্য উপযোগী বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতকৃত ফরমুলেটেড খাদ্য বাজারে পাওয়া যায়। এর মধ্যে পিলেট খাদ্য, মাইক্রো-পার্টিকুলেট খাদ্য এবং মাইক্রো-এ্যানক্যাপসুলেটেড খাদ্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব খাদ্য প্রয়োগের পরিমাণ ও পদ্ধতি সম্পর্কে কৌটার গায়ে নির্দেশাবলি অনুসরণ করা উচিত। এসব খাদ্যের মধ্যে মাইক্রো-এ্যানক্যাপসুলেটেড খাদ্য ট্যাংকে প্রয়োগের পর দীর্ঘসময় এর অভ্যন্তরস্থ পুষ্টি উপাদান ধরে রাখতে সক্ষম। তাছাড়া এসব খাদ্যের দ্বারা ট্যাংকের পানির গুণাগুণ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। গলদা চিংড়ি লার্ভার জন্য প্রস্তুতকৃত ফরমুলেটেড খাদ্য নির্বাচনের সময় খাদ্যের পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি লার্ভার বয়স এবং মুখবিহারের মাপের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সতর্কতার সাথে খাদ্যকণার আকার নির্ধারণ করতে হবে।

Content added || updated By

প্রজননক্ষম স্ত্রী ও পুরুষ গলদা চিংড়ি সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হলো মার্চ থেকে নভেম্বর মাস। চিংড়ি সংগ্রহ করে হ্যাচারিতে আনার পর এগুলোকে প্রথম ৪-৭ দিন নির্দিষ্ট ট্যাংকে রেখে অভিযোজিত করা হয়। হ্যাচারিতে আনার পর ২৫-৫০ পিপিএম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে এদের জীবাণুমুক্ত করা হয়। পরিপক্ক ট্যাংকের প্রতি বর্গমিটারে ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ২-৭টি চিংড়ি ১:১ (পুরুষ: স্ত্রী) অনুপাতে মজুদ করা হয়। স্ত্রী চিংড়ির ওজন কমপক্ষে ৬৩-৬৮ গ্রাম এবং পুরুষ চিংড়ির ওজন কমপক্ষে ৩৫-৪০ গ্রাম হওয়া উচিত। ট্যাংকের ৬০% পানি প্রতিদিন পরিবর্তন করতে হয়। এসময় চিংড়ির দ্রুত বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করা হয়।

Content added By

পরিপক্ক ব্রুড চিংড়ি ট্যাংকে ৭-৮ দিন রাখার পর সন্ধ্যায় পানি কমিয়ে স্ত্রী চিংড়ির ডিম্বকোষের উন্নতি লক্ষ্য করা হয় যা বাইরে থেকেই দেখা যায়। অন্যদিকে পরিপক্ক পুরুষ চিংড়ির পঞ্চম চলনপদের গোড়ায় পুংজনন ছিদ্রে শুক্রকীটের মোড়ক (spermatophores ) দেখা যায়। ডিম্বাশয়ের পূর্ণতা নির্ভর করে ডিম্বাশয়ের আকার, রং এবং ডিম্বানুর মাপের ওপর। পরিপক্ক স্ত্রী চিংড়ির ডিম্বাশয়কে ৫টি দশায় ভাগ করা যায়।

ক) অপরিণত/অপরিপক্ক পর্যায় ( immature stage): এই অবস্থায় ডিম্বানু খুব ছোট থাকে। ডিম্বাশয় পাতলা ও স্বচ্ছ থাকে। ডিমের গড় আকার ০.০২৮ মিমি হয়।

খ) উন্নয়নশীল পর্যায় (early developing stage): ডিম্বাশয় এর পরিপক্কতা শুরু হয়। ডিম্বাশয় স্বচ্ছ থেকে হালকা জলপাই রঙের লম্বা ফিতার মত ডিম্বানু দেখা যায়। যা খোলসের বাইরে থেকে পরিলক্ষিত হয়। এসময় ডিমের গড় আকার ০.০৭৮ মিমি হয়।

গ) প্রায় পরিপক্ক পর্যায় (nearly ripe stage): ডিম্বাশয় এর রং ঘণ হতে থাকে এবং হালকা লাল বর্ণ ধারণ করে। ডিম্বাশয়ের দুই পার্শ্ব বর্ধিত হয়ে কিছুটা ডায়মন্ড বা প্রজাপতির আকার ধারণ করে। ডিমের গড় আকার হয় ০.১৮৮ মিমি হয়।

ঘ) পরিপক্ক পর্যায় (ripe stage): এ সময় ডিম্বাশয় সম্পূর্ণরূপে পরিপক্কতা লাভ করে। উদর অঞ্চল প্রায় সম্পূর্ণ স্থান দখল করে ডিম্বাশয় বর্ধিত হয়। গাঢ় লাল বা খয়েরি রঙের পরিপূর্ণ আকার ধারণ করে। ডিমের গড় আকার হয় ০.২৫০ মিমি।

ঙ) পরিপক্ক পরবর্তী পর্যায় (spent ripe stage): এই পর্যায়ে ডিম ছেড়ে ডিম্বাশয় পুনরায় প্রথম দশার আকার ধারণ করে। একটি পরিপক্ক স্ত্রী চিংড়ির বছরে ডিম ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৩-৭.৭৫ লক্ষ।

গলদা চিংড়ির প্রজনন ক্রিয়া: সম্পূর্ণরূপে পরিপক্ক গলদা চিংড়ির প্রজনন গভীর সমুদ্রে রাত্রিকালে সম্পন্ন হয়। প্রথমে পুরুষ চিংড়ির ওপর স্ত্রী চিংড়ি সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। এরপর একে অপরকে অঙ্কীয়দেশ বরাবর আকড়ে ধরে এবং পুরুষ চিংড়ি শ্রী চিংড়ির দেহের নিচে সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। শেষ পর্যায়ে পুরুষ চিংড়ি তার উদরের অংশ বাকিয়ে “ট” আকৃতির বেষ্টনী তৈরি করে। এভাবে তাদের মিলন সংঘটিত হয় যা ৩-৪ মিনিট স্থায়ী হয়। 

চিত্র-২.১ঃ স্ত্রী চিংড়ির ডিম্বাশয়ের পরিপক্কতার দুইটি পর্যায়

Content added || updated By

গলদা চিংড়ির প্রজনন ক্রিয়া সম্পন্ন হলে স্ত্রী গলদাকে আলাদা ট্যাংকে স্থানান্তর করা হয়। সাধারণত একটি ট্যাংকে একটি স্ত্রী গলদা চিংড়িকে অথবা ৩০০ লিটার এর ট্যাংকে ২-৩ টি স্ত্রী গলদা চিংড়িকে রাখা হয়। স্ত্রী চিংড়ির খেলিকামে স্পার্মাটোফোরের উপস্থিতি দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়। এসময় স্পনিং ট্যাংকের পানির তাপমাত্রা ৩০° ° সে এর কাছাকাছি রাখা হয়। পানির লবণাক্ততা সাধারণত ২৮-৩০ পিপিটি রাখা হয়। সর্বক্ষণের জন্য একটি বায়ু সঞ্চালন যন্ত্র, তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র এবং পানি গরম করার যন্ত্র সংযুক্ত রাখা হয় এবং উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা হয়।

সাধারণত রাত ১-২ টার মধ্যে স্ত্রী গলদা চিংড়ি ডিম ছাড়ে। স্ত্রী চিংড়ি তার তৃতীয় ভ্রমণ পদের গোড়ায় অবস্থিত জননেন্দ্রিয় পথে ডিম ছাড়ে এবং একই সাথে খেলিকাম থেকে শুক্রকীট যুক্ত করে এবং সাঁতারের মাধ্যমে ডিমগুলো ছাড়াতে সাহায্য করে। তিন ছাড়তে ২-৭ মিনিটের মতো সময় লাগে। এরপর স্ত্রী গলদা কে তুলে অন্য ট্যাংকে স্হানান্তর করা হয় এবং ডিম ফুটতে সময় দেয়া হয়। ১২-১৫ ঘন্টার মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়। প্রাথমিকভাবে এসব লার্ভাকে খাবার দেয়া হয়না। এরা ১০-১৫ মিমি আকার ধারণ করার পর এদেরকে লাভা ট্যাংকে স্থানান্তরিত করা হয় এবং সেখানে বিভিন্ন ধরনের ফাইটোপ্লাংকটন ও দুপ্লাংকটন খাদ্য হিসেবে সরবরাহ করা হয়।

Content added By

লার্ভা হলো চিংড়ির ডিম ফুটে বের হবার পর প্রাথমিক দশা। লার্ভা তিনটি স্বতন্ত্র পর্যায় অতিক্রম করে। যথা- নপ্রির ৬টি ধাপ, প্রোটোজোয়াল ৩টি ধাপ এবং মাইসিসের ৩টি ধাপ। নগ্নি থেকে প্রোটোজুইয়া হতে মাইসিস এবং এরপর মাইসিস থেকে পোষ্ট লার্ভা হতে প্রায় ২৫-৩০ দিন সময় লাগে। অর্থাৎ ডিম ফোঁটা থেকে পোষ্ট লার্ভা হতে ৩০ দিনের মতো সময় ব্যয় হয়। এ পর্যায়ে এদেরকে খাদ্য হিসেবে আর্টিমিয়া নল্লি সরবরাহ করা
হয়।

Content added By

ডিমের নিষিক্তকরণ এর পর লার্ভা হয় এবং লার্ভা পরবর্তী দশাকে পোস্ট লার্ভা বলে। প্রজননের সময় থেকে পোস্ট লার্ভা পর্যন্ত পৌছাতে এক মাসেরও বেশি সময় প্রয়োজন। এদেরকে নার্সারি ট্যাংকে প্রতিপালন করা হয়। পোস্ট লার্ভা ষষ্ঠ দিনে পৌঁছে গেলে এদেরকে কোকুন, ঝিনুক এর মাংসের কিমা খাওয়ানো হয়। দিনে ৩-৪ বার কৃত্রিম খাদ্যের সাথে এসব খাবারের মিশ্রণ তৈরি করে খাওয়ানো হয়। এসময় পানির গুণগত মান বজায় রাখার জন্য ৩০-৪০% পানি প্রতিদিন পরিবর্তন করা আবশ্যক। এতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের ঘনত্ব এবং অ্যামোনিয়ার কম ঘনত্ব (০.১ পিপিএম) এর সম্পৃক্ততা বজায় থাকে। অতিরিক্ত খাদ্য, বিপাকীয় বর্জ্য এবং মৃত শৈবাল অপসারণের জন্য ট্যাংকের নিচে নিয়মিত সাইফনিং এর ব্যবস্থা করা হয়। লবণাক্ততার পার্থক্য ৩-৪ হলে পোস্ট লার্ভা মারা যেতে পারে। তাই লবনাক্ততা ১০-১২ পিপিটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

Content added || updated By

সাধারণত চিংড়ির লার্ভাকে ফাইটোপ্লাংকটন, জুপ্লাংকটন, ডেট্রিটাস, পলিকিট, ছোট ক্রাস্টেসিয়ান সরবরাহ করা হয়। তবে নগ্নি অবস্থায় এরা খাবার গ্রহণ করেনা কেননা তাদের নিজেদের শরীরের কুসুম থলি থেকে তারা পুষ্টি গ্রহণ করে। প্রোটোজোয়া পর্যায়ে খাবার গ্রহণ শুরু হয়। তবে বয়সের সাথে সাথে এদের খাদ্য পছন্দ পরিবর্তীত হয়।

Content added By

প্রানীজ জীবন্ত খাদ্য চিংড়ির লার্ভার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক খাদ্য উপাদান কারণ লার্ভার পাচনতন্ত্র অসম্পূর্ণ এবং এতে এনজাইমের অভাব রয়েছে। তারা লার্ভা অবস্থায় নিজস্ব প্রয়োজনীয় পুষ্টি তৈরি করতে সক্ষম নয়। তাই জীবন্ত খাবার সরবরাহের মাধ্যমে লার্ভার পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা হয়। তাই হ্যাচারিতে জীবন্ত খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা রাখা হয়। এতে খরচও কমে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যেরও যোগান হয়। রটিফার, আটেমিয়া, কপিপোডসহ আরও বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণিজ খাদ্যের উৎপাদন করা হয়। উৎপাদন সচল রাখতে হ্যাচারি কর্মীদের সবসময় প্রতিটি ট্যাংকে নজর রাখা প্রয়োজন।

Content added By

পরিবেশের সর্বোত্তম অবস্থা বজায় রাখতে চাষকৃত গলদা চিংড়ির বেঁচে থাকার জন্য এবং ফলনের সর্বাধিক বৃদ্ধির জন্য দৈনন্দিন পরিচর্যা আবশ্যকীয়। যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিচর্যা করা হয় সেগুলো নিম্নরূপঃ

Content added By
  • লবণাক্ততা: সাধারণত গলদা চিংড়ির স্পনিং বা প্রজননের জন্য লবণাক্ততা ৩০-৩৬ পিপিটি পর্যন্ত থাকতে হয়। ভাল প্রজননের জন্য পানির লবণাক্ততা ৩০-৩২ পিপিটি নিশ্চিত করতে হবে। তবে লার্ভার প্রাথমিক পর্যায়ে বৃদ্ধির জন্য লবণাক্ততা কম থাকলে লার্ভার বৃদ্ধি দ্রুত হয়। যদিও লবণাক্ততার আকস্মিক পরিবর্তনে লার্ভার মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নিয়মিত পানির লবণাক্ততা পর্যবেক্ষণ জরুরী।
  • তাপমাত্রা: যে কোন প্রজাতির বিপাকীয় কার্যক্রমে তাপমাত্রার প্রভাব রয়েছে। যেমন- ২৪°সে তাপমাত্রার নিচে গলদা চিংড়ির ডিম ফুটে না। আবার অন্যদিকে ২৬-৩১° °সে তাপমাত্রায় লার্ভার বৃদ্ধি দ্রুত হয়। তাপমাত্রার ধীরে ধীরে পরিবর্তন চিংড়ির জন্য প্রাণঘাতী নয়। তবে হঠাৎ ২° ° সে তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে তা চিংড়ির জন্য মারাত্মক হতে পারে। এজন্য তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যাবশ্যকীয়।
  • দ্রবীভূত অক্সিজেন: দ্রবীভূত অক্সিজেন লার্ভা পালনের জন্য অন্যতম উপাদান। যদি বায়ু চলাচল মাত্র এক ঘন্টার জন্য বন্ধ রাখা হয় তবে সকল লার্ভার মৃত্যু ঘটতে পারে। তাই সার্বক্ষণিক বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
  •  পিএইচ (pH) এবং নাইট্রোজেন যৌগ: সামুদ্রিক পানির pH সাধারণত ৭.৫ থেকে ৮.৫ এর মধ্যে থাকে। পানির অ্যামোনিয়ার সাপেক্ষে ট্যাংকের পরিবেশের পরিবর্তনের মূল সূচকই হল pH । যখন pH এর মান বেশি হয় তখন তা পানির অ্যামোনিয়ার (NH3) বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে যা লার্ভার জন্য বিষাক্ত। তবে অ্যামোনিয়াম (NH4) লার্ভার ফুলকা ঝিল্লির মধ্য দিয়ে যেতে পারে না। তাই এটি লার্ভার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে অ্যামোনিয়াম (NH4) এর ঘনত্ব ১.৫ পিপিএম এবং NH3 এর ঘনত্ব ০.১ পিপিএম এর বেশি যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা যায়।
Content added By

প্রথম পর্যায়ে প্রোটোজোয়ার পরিপূর্ণ বিকাশ হয়না এবং তারা খাদ্যের সন্ধান করতে পারে না। এসময় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। প্রোটোজোয়ার খাদ্য হিসেবে ট্যাংকে ডায়াটম চাষ করলে অনেক সময় এদের অধিক ফলন হয় যা লার্ভার চলাচলে বাধা হয়ে দাড়ায়। অন্যদিকে ডায়াটমগুলো পরেরদিন সহজেই নষ্ট হয়ে যায় এবং পানির গুণগত মানকে নষ্ট করে। অক্সিজেনের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। তাই নিয়মিত ডায়াটমের ঘনত্ব পর্যবেক্ষণ করতে হয়। ডায়াটমের রঙ বাদামী হয়ে গেলে, নতুন ডায়াটম যোগ করতে হয় যাতে লার্ভার পর্যাপ্ত খাবারের ঘাটতি না থাকে। পিএলের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্টেমিয়াসহ আরও অন্যান্য খাদ্য উপাদান যোগ করা হয়। এতে লার্ভার বৃদ্ধি দ্রুত হয়। প্রতি ১০,০০০ পিএলের জন্য ৫০ গ্রাম আটেমিয়া নিশ্চিত করতে হয়। গ্রীষ্মকালে ডায়াটমের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে ট্যাংকের ওপর ছায়ার ব্যবস্থা করা হয় অথবা ট্যাংকের কিছু অংশের পানি অপসারণ করে পুনরায় নতুন লবনাক্ত পানি দিয়ে ট্যাংক পূর্ণ করা হয়। এভাবে গলদা চিংড়ির খাদ্য প্রক্রিয়া সুনিশ্চিত করা হয়।

Content added By
  • চৌবাচ্চার তলদেশ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হয়।
  •  হ্যাচারিতে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রপাতি ও পানি জীবাণুমুক্ত করা।
  •  হ্যাচারির পানি প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে পরিবর্তন করা।
  • হ্যাচারির কর্মচারীদের অ্যাপ্রন পরিধান করে কাজ করা উচিত।
  • ট্যাংকগুলো সর্বক্ষণ পলিথিন দ্বারা ঢেকে রাখা ভালো। শুধু খাদ্য সরবরাহ এবং ঔষধ প্রদানের সময় পলিথিন সরিয়ে কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
  • নিয়মিত ভাইরাল, ফাংগাল এবং ব্যাকটেরিয়াল ট্রিটমেন্ট করতে হবে।
Content added By

যেসব রোগের সংক্রমন হলে গলদা চিংড়ি চাষ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় সেগুলো হলো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ফাংগাস ঘটিত সংক্রমন। রোগ সংক্রমনের প্রধান কারণগুলো হলো-
নিয়মিত পানি পরিবর্তন না করা পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেনের ঘাটতি,

  •  হ্যাচারির যন্ত্রপাতি অপরিষ্কার রাখা,
  • পরিশোধিত পানি ব্যবহার না করা, ও
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবারের সরবরাহ নিশ্চিত না করা।

উপরোক্ত কারণগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করলে হ্যাচারিতে রোগ সংক্রমনের ঝুঁকি কম থাকে। হ্যাচারিতে যেসকল রোগ দেখা দেয় তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

Content added By

চিংড়ি চাষের সবচেয়ে ক্ষতিকর জীবাণুগুলোর মধ্যে আলোকদায়ক জীবাণু একটি। চিংড়ির বহিঃত্বক বা অগ্রে অথবা অন্যান্য অঙ্গে হয়ে থাকে। চিংড়ি বেশি মাত্রায় এ রোগে আক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে মৃত্যু মুখে পতিত হতে পারে। এসব ব্যাকটেরিয়া প্রথমে যকৃত এবং অগ্ন্যাশয় গ্রন্থিকে আক্রান্ত করে এবং পরিশেষে দেহের বিভিন্ন স্থানে গর্ভ তৈরির মাধ্যমে আক্রান্ত করে। Vibrio harveyi, V. splendidus প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া এই রোগের জন্য দায়ী।

লক্ষণঃ

১) যকৃত ও অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি বাদামী বর্ণ ধারণ করে।

২) অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি ছোট হয়ে যায়।

৩) দেহে গর্ত দেখা যায় এবং পরিশেষে উপাঙ্গের উপরের অগ্রভাগ পচন ধরে।

প্রতিকারঃ

১) Quinoline antibiotic ব্যবহার করা হয়।

২) মাইক্রোএলজি, ব্যাকটেরিওফাজ এবং প্রোবায়োটিক এর ব্যবহার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমন কমাতে পারে।

৩) প্রতিদিন ৮০% পানি পরিবর্তন করে নতুন পানি যোগ করতে হবে।

Content added By

হ্যাচারিতে ভাইরাসের আক্রমন বেশি হয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সকল পোনা মারা যায়। সংক্রমন রোধে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরী। গলদা চিংড়ির ভাইরাসজনিত রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিম্নরূপ:

Baculovirus penaei (BP) ব্যাকুলো ভাইরাস এই ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে দেখা যায়। এটি তাইওয়ানে প্রথম সনাক্ত করা হয়। এটি চিংড়িকে প্রথমে প্রোটোজুইয়্যা ধাপে এবং পরে মাইসিস ধাপে আক্রান্ত করে। বেশিরভাগ সময় ৯০% পোনা মারা যায়।

লক্ষণঃ

১) হেপাটোপ্যানক্রিয়াস এবং মিডগাট এপিথেলিয়াল কোষে একাধিক গোলাকার ছোট সাদা পাইপের মত দেখা যায়।

২) খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়।

প্রতিকারঃ

১) এই রোগের কোনো নির্দিষ্ট বা সঠিক চিকিৎসা নেই। তবে আক্রান্ত পোনাকে কিমা করা ওয়েস্টার (oyester) এর মাংস খাওয়ানো হয়।

২) পর্যাপ্ত পরিমাণে বায়ু সঞ্চালক ব্যবহার করে তাদের পরিচর্যা করা হয়।

৩) হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে হবে।

৪) সংক্রমন রোধ করতে ডিম এবং নগ্নিকে ৩ ঘন্টা যাবৎ পরিষ্কার লবণাক্ত পানিতে ধৌত করে তারপর ট্যাংকে স্থানান্তর করতে হবে।

Content added By

এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ যা প্রায় সব গলদা চিংড়ির হ্যাচারিতে আক্রমন ঘটায়। সংক্রামক জীবাণু হলো Phycomycetus fungi, Lagenidium sp., Sirolpidium sp., Phythium; Leptolegonia mania প্রভৃতি।

লক্ষণ:

১) আকস্মিক মৃত্যু ঘটে এবং মৃত্যুর হার ২০-১00%।

২) লার্ভার দেহে প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।

প্রতিকার :

১) লার্ভার ট্যাংক জীবাণুমুক্তকরণ, পানি পরিস্রাবণ, ক্লোরিনেশন করা উচিত।

২) বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যায়। যেমন: ০২ পিপিএম ফোন (treflan)। 

৩) ১-১০ পিপিএম ফরমালিন ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪) ২০ পিপিএম পরিষ্কারক সাবান গুঁড়া (detergent) দিয়ে ডিম জীবাণুমুক্তকরণ করা যেতে পারে।

৪) NaCl, KCl, MgCl এর মিশ্রণে ব্যবহৃত ঔষধ Legenidium এর আক্রমনকে হ্রাস করে।

প্রতিষেধক ঔষধ ও প্রয়োগমাত্রা
ক্লোরামফেনিকল, সারাফ্লক্সাসিন, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন এবং এনরোফ্লক্সাসিন প্রায়শই গলদা চিংড়ির এন্টিবায়োটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে অধিক পরিমাণে ব্যবহারে প্রতিরোধ শক্তি কমে যায়। তবে ক্লোরামফেনিকল ব্যবহার না করাই উত্তম এতে লার্ভার ক্ষতি হয়। প্রতিষেধক ঔষধ এবং এদের প্রয়োগ মাত্রা নিম্নরূপ:

ঔষধ ------------------মাত্রা

অক্সিটেট্রাসাইক্লিন------------১০-২০ পিপিএম
অক্সোলিনিক এসিড -------------- ০.১-০.৫ পিপিএম
ফিউরাসল (Furasol) ------------ ১.০-২.৫ পিপিএম
জেনটিন ভায়োলেট (Gentin violet) --------- ০.১-০.২ পিপিএম
ফরমালিন (Formalin) ------------ ২৫-৫০ পিপিএম

Content added By

জৈব নিরাপত্তা হলো পানিতে চাষযোগ্য সকল মাছ, চিংড়ি, অন্যান্য জলজ প্রাণির রোগ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে হ্যাচারি, খামার এসব জায়গা থেকে নির্দিষ্ট জীবাণুগুলো বাদ দেয়ার কৌশল। গলদা চিংড়ির হ্যাচারিতে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে, সেগুলো হ্রাস করার জন্য উপযুক্ত জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর করা উচিত।

ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি

  • হ্যাচারিতে প্রবেশের সময় এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে প্রবেশ করতে হবে এবং প্রতিটি প্রবেশপথে পা ডুবিয়ে প্রবেশের জন্য ফুট বাথ রাখতে হবে। যা প্যাথোজেনিক লোড কমাতে সহায়তা করে ।
  • ক্লোরিন বা ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানিতে পা ডোবানোর ব্যবস্থা রাখা উচিত।
  • চাষের স্থানে প্রবেশাধিকার ন্যূনতম সংখ্যক ভালো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।
  • দর্শনার্থীদের সংখ্যা ন্যূনতম রাখতে হবে।
  • ট্রে ব্যবহারের পর পরিষ্কার করা উচিত।
  •  মৃত এবং দুর্বল চিংড়ি নিয়ে কাজ করার সময় অত্যন্ত সাবধানে কাজ করতে হবে। এগুলো থেকে জীবাণু সংক্রমনের সম্ভাবনা থাকে। 
  • পাখি এবং অন্যান্য প্রাণির চলাচল রোধে বেড়া স্থাপন জরুরী। কারণ এসব থেকে রোগজীবাণু ছড়ায়।
  • নির্দিষ্ট প্যাথোজেনযুক্ত চিংড়ির জাত, রোগসৃষ্টিকারী এজেন্টগুলোর জন্য তাদের বিকাশ ও পর্যবেক্ষণের জন্য ডায়াগনস্টিক পদ্ধতিগুলো সাম্প্রতিক চিংড়ি চাষ শিল্পের উন্নয়নে বিশাল অবদান রাখে।
  • একটি জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থার সার্বিক এবং ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট উপাদানগুলোতে লঙ্ঘন ঘটলে রোগ
  • নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূলের জন্য জরুরী পরিকল্পনা আবশ্যক ।
  •  চিংড়ির খাবারে প্রোবায়োটিক মিশিয়ে খাবারের গুণগতমান বাড়ানো যায় যা রোগজীবাণুর আক্রমনকে হ্রাস করে।
  •  হ্যাচারিতে জীবাণুমুক্ত পরিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত। এতে বায়োসিকিউর চিংড়ি উৎপাদন ব্যবস্থা পরিবেশগতভাব টেকসই এবং অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর প্রযুক্তির প্রতিনিধিত্ব করে।
Content added By

বিশুদ্ধ ও জীবাণুমুক্ত পানি একটি গলদা চিংড়ি হ্যাচারির অন্যতম প্রধান উপাদান। তাই পানির গুণাগুণ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কাজ গলদা চিংড়ি হ্যাচারির অন্যতম প্রধান কাজ হিসেবে স্বীকৃত। হ্যাচারিতে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনের কাজে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি বা ব্রাইন এবং স্বাদু পানি উভয়ের প্রয়োজন রয়েছে। অনেক সময়ে প্রকৃতি থেকে সংগৃহীত লবণাক্ত পানি বা ব্রাইন এবং স্বাদু পানির বেশকিছু গুণাগুণ গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন কাজের অনুকূল থাকে না। তখন উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির মাধ্যমে উক্ত পানি উৎপাদন কাজের অনুকূল করে ব্যবহার করা হয়। এসব ব্যবস্থাপনা কাজকে সামগ্রিকভাবে পানি ব্যবস্থাপনা বলা হয়। গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে পানি ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয়গুলো নিম্নরূপ:

Content added By

সাধারণত ৮০ পিপিটি অপেক্ষা অধিক লবণাক্ততা সম্পন্ন সমুদ্রের পানিকে ব্রাইন বলা হয়। সাধারণত সমুদ্রের পানির লবণাক্ততা এ মাত্রা কম থাকে। তাই সাধারণত লবণ চাষের ক্ষেত্র থেকে ব্রাইন সংগ্রহ করা হয়। একটি লবণ ক্ষেত্রকে ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়।

১. আধার (Reservoir)

২. ঘনীভবনকারক (Condensor)

৩. ফটিকীকারক (Crystalizer)

গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনার উদ্দেশ্যে ঘনীভবনকারক ক্ষেত্র থেকে ব্রাইন সংগ্রহ করা হয়। সমুদ্রের পানিকে ঘনীভূত করে লবণ উৎপন করা হয়ে থাকে। ঘনীভবনের সাথে সাথে সাগরের পানি থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় ট্রেস লবণ, মাইনর লবণ এবং মেজর লবণের উপস্থিতির পরিমাণ কমতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত সাধারণ লবণ (NaCl) অবশিষ্ট থাকে। তাই এ পানি যত ঘনীভূত হতে থাকে, ততই এর মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ ট্রেস লবণের পরিমাণ কমতে থাকে। অথচ গলদা চিংড়ির জীবনচক্রের প্রাথমিক পর্যায়ে এসব ট্রেস লবণের গুরুত্ব রয়েছে। তাই গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনার কাজে ১০০-১২০ পিপিটি অপেক্ষা বেশি অপরিসীম লবণাক্ততা সম্পন্ন ব্রাইন ব্যবহার করা উচিত নয়।

ব্রাইনের প্রাপ্তিস্থান: চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলা এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী উপজেলায় সমুদ্রের পানিকে ঘনীভূত করে লবণের চাষ করা হয়। তাই এসব উপজেলার মধ্যে যোগাযোগ সুবিধার উপরে নির্ভর করে চকরিয়া বা বাঁশখালী উপজেলার লবণক্ষেত্র থেকে ব্রাইন সংগ্রহ করা যায়। সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলাধীন মুন্সীগঞ্জ থেকেও ১০০ পিপিটি ব্রাইন সগ্রহ করা যায়। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ব্রাইন সংগ্রহের জন্য উপযুক্ত সময়।

স্বাদুপানি সংগ্রহ: গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনার জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উপযুক্ত। কিন্তু মাঝে মাঝে ভূগর্ভস্থ পানির খরতা এবং বিভিন্ন প্রকার ধাতব যৌগের উপস্থিতি ব্যবস্থাপনাযোগ্য পর্যায়ে থাকে না। তখন এ পানি পরিত্যাগ করে ভূপৃষ্ঠের পানিকে উপযুক্ত পদ্ধতিতে শোধন করে হ্যাচারি পরিচালনার কাজে ব্যবহার করা যায়।

ব্রাইন ও স্বাদু পানির গুণাগুণ:

গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনার উপযোগী ব্রাইন ও স্বাদু পানির কিছু গুরুত্বপূর্ন গুণাগুণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

ক্রম গুণাগুণের বিবরণসমুদ্রের পানি/ব্রাইনস্বাদু পানি
০১লবণাক্ততা২৮-৩২% (সমুদ্রের পানি)০.০৫% 
০২তাপমাত্রা২৮-৩২° সেন্টিগ্রেড২৮-৩১° ° সেন্টিগ্রেড
০৩দ্রবীভূত অক্সিজেন>৪ পিপিএম>৪ পিপিএম
০৪পিএইচ৭.৫-৮.২৭.৫-৮.২ 
০৫খরতা (হার্ডনেস)১০০-২০০ পিপিএম৮০-১০০ পিপিএম
০৬অ্যালকালিনিটি১০০-২০০ পিপিএম১৫-১৪০ পিপিএম
০৭লৌহ<০.১ পিপিএম<০.১ পিপিএম
০৮অআয়নিত এ্যামোনিয়া <০.১ পিপিএম<০.১ পিপিএম
০৯নাইট্রেট-নাইট্রোজেন<০.২ পিপিএম<০.২ পিপিএম
১০নাইট্রাইট-নাইট্রোজেন<০.২ পিপিএম<০.২ পিপিএম
১১ক্লোরিন০ ০ 
১২হাইড্রোজেন সালফাইড<০.০০৩ পিপিএম<০.২ পিপিএম
 ভারী ধাতু<০.০০১ পিপিএম<০.১ পিপিএম
Content added By

গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে ব্রাইনের সাথে পরিমাণমত স্বাদুপানি মিশ্রিত করে লার্ভা প্রতিপালন, আর্টিসিয়া হ্যাচিং এবং রুড প্রতিপালনের উপযোগী নির্ধারিত লবণাক্ততা সম্পন্ন পানি প্রস্তুত করা হয়। এ কাজে নিম্নলিখিত সূত্র ব্যবহার করা যেতে পারে।

ব্রাইনের পরিমাণ = মিশ্রিত পানির প্রত্যাশিত লবণাক্ততা × প্রয়োজনীয় মিশ্রিত পানির পরিমাণ = ব্রাইনে লবণাক্ততা।

উদাহরণ: ১
১০০ পিপিটি লবণাক্ততা সম্পন্ন ব্রাইন থেকে ৬ পিপিটি লবণাক্ততা সম্পন্ন ১০ টন পানির প্রস্তুত করার জন্য ব্রাইন প্রয়োজন= ৬ পিপিটি × ১০ টন = ১০০ পিপিটি=০.৬ টন

অতএব স্বাদু পানি প্রয়োজন ১০ টন ০.৬ টন = ৯.৪ টন।

উদাহরণ: ২
১০০ পিপিটি লবণাক্ততা সম্পন্ন ব্রাইন থেকে ১২ পিপিটি লবণাক্ততা সম্পন্ন ১০ টন পানি প্রস্তুত করার জন্য ব্রাইন প্রয়োজন= ১২ পিপিটি × ১০ = ১০০ পিপিটি= ১.২ টন। 

অতএব স্বাদু পানি প্রয়োজন = ১০ টন- ১.২ টন= ৮.৮ টন।

Content added By

মিশ্রিত পানি থেকে লৌহ দুর করার পাশাপাশি পানিকে জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে এর সাথে ১৫ পিপিএম মাত্রায় ব্লিচিং পাউডার (৬০-৬৫% সক্রিয় ক্লোরিন উপাদান) প্রয়োগ করতে হবে। ব্লিচিং পাউডারে ক্লোরিনের উপস্থিতির কারণে জীবাণু প্রতিরোধে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আবার ব্লিচিং পাউডার একটি শক্তিশালী অক্সিডাইজিং এজেন্ট (Oxidizing agent) হওয়ায় পানি থেকে লৌহ মুক্তকরণে এর ব্যাপক কার্যকারিতা রয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানিতে ১৫ পিপিএম মাত্রায় ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করে উত্তমরূপে বায়ুসঞ্চালন (strong aceration) করা হলে ব্লিচিং পাউডারের হাইপাক্লোরাইডের সাথে পানিতে থাকা লৌহের বিক্রিয়ায় FeCl2 এর ঘন লাল তলানি সৃষ্টি হয়। পরে বায়ু সঞ্চালন বন্ধ করা হলে এ তলানী ধীরে ধীরে তলায় জমা হয় এবং পানি সম্পূর্ণরূপে লৌহমুক্ত হয়ে পড়ে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ৩-৫ দিন সময়ের প্রয়োজন হয়। এরূপ পদ্ধতিতে লৌহমুক্ত কারার পরে উৎপাদন কাজে ব্যবহারের পূর্বে পানিতে ক্লোরিনের অনুপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া এরূপ পদ্ধতিতে লৌহমুক্ত করার পরে পানি উৎপাদন ট্যাংকে সঞ্চালনের পূর্বে অধঃক্ষিপ্ত লাল বর্ণের তলানি যেন কোনোভাবেই ঢুকতে না পারে তা নিশ্চত করা জন্য ট্যাংকে পানির প্রবেশমুখে পলিপ্রোপাইলিনের ব্যাগ-ফিল্টার ব্যবহার করা যেতে পারে।

ক্লোরিনের সংস্পর্শে যেমন বিভিন্ন রোগজীবাণুর মৃত্যু ঘটে, তেমনি পানিতে ক্লোরিনের উপস্থিতির কারণে চিংড়ির ডিম, লার্ভা বা পিএল এমনকি ডিমওয়ালা চিংড়িরও মৃত্যু হতে পারে, ডিমওয়ালা চিংড়ির প্রজনন ক্ষমতা কমে যেতে পারে অথবা হ্যাচিং-এর হার কমে যেতে পারে। তাছাড়া অবশিষ্টাংশের উপস্থিতির কারণে গলদা চিংড়ির লার্ভা বা পিএল বিকলাঙ্গ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ক্লোরিন মিশ্রিত পানি ব্যবহারের পূর্বে উত্তমরূপে ক্লোরিনযুক্ত করে নেয়া প্রয়োজন। উৎপাদন কাজে ব্যবহারের পূর্বে পানিতে ক্লোরিনের উপস্থিতির মাত্রা পর্যবেক্ষণ করে এর অনুপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে পানিকে ক্লোরিনযুক্ত করা যায়।

বায়ু সঞ্চালনের সাহায্যে ক্লোরিন মুক্তকরণ: ব্লিচিং পাউডার/ক্লোরিন মিশ্রিত পানিতে উচ্চগতিতে বায়ু সঞ্চালন করা হলে প্রাথমিকভাবে পানিতে ক্লোরিনের বিষক্রিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বাতাসের অক্সিজেনের সাথে ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় পানি ধীরে ধীরে ক্লোরিনযুক্ত হতে থাকে এবং ১-৩ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ক্লোরিনমুক্ত হয়ে পড়ে।

সূর্যালোকের সাহায্যে ক্লোরিনমুক্তকরণ: প্রখর সূর্যালোকে ক্লোরিনযুক্ত পানির ক্লোরিনের বিষক্রিয়া বৃদ্ধি পেয়ে রোগজীবাণু দ্রুত ধ্বংস হয়। পরবর্তীতে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ক্লোরিন মুক্তকরণের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। সূর্যালোকের উপস্থিতি অপেক্ষা অনুপস্থিতিতে পানি ক্লোরিনমুক্ত হতে অধিক সময়ের প্রয়োজন হয়।

উভয় পদ্ধতির সমন্বয়ের মাধ্যমে ক্লোরিন মুক্তকরণ: ক্লোরিনযুক্ত পানিকে প্রখর সূর্যালোকের নিচে রেখে উত্তমরূপে বায়ু সঞ্চালন করা হলে ক্লোরিনমুক্ত হওয়ার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। প্রকৃতপক্ষে হ্যাচারিতে এভাবেই ক্লোরিনযুক্ত পানিকে ক্লোরিনযুক্ত করা হয়ে থাকে।

সোডিয়াম থায়োসালফেট ব্যবহারে ক্লোরিন মুক্তকরণ: ক্লোরিনযুক্ত পানিতে সুর্যালাকের উপস্থিতিতে বায়ুসঞ্চালন করে সেখানে উপস্থিত প্রতি ১ পিপিএম ক্লোরিনের জন্য ১ পিপিএম মাত্রায় সোডিয়াম বায়োসালফেট প্রয়োগ করা হলে পানি দ্রুত ক্লোরিনমুক্ত হয়। সোডিয়াম থায়োসালফেট ব্যবহারের ২/৩ ঘন্টার মধ্যেই উক্ত পানিকে উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যায়। তবে লার্ভা বা পিএল-এর উপরে অতিরিক্ত সোডিয়াম থায়োসালফেটের কিছু ক্ষতিকর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই সোডিয়াম থায়োসালফেট ব্যবহার কম করাই উত্তম।

Content added By

বালির ফিল্টার গলদা চিংড়ি হ্যাচারির জন্য অত্যাবশ্যক একটি অংশ। শুধু বালির ফিল্টারের সাহায্যে একটি বাণিজ্যিক চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনা করা সম্ভব। বালির ফিল্টারে ভাইরাস ও কয়েক প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া ছাড়া অন্যান্য সকল প্রকার রোগজীবাণু, প্রোটোজোয়া, অদ্রবণীয় ভারী বা হালকা জৈব ও অজৈব কণা, ফাইটোপ্লাংকটন, জুপ্লাংকটন, সামুদ্রিক প্রাণি বা উদ্ভিদ, এদের ডিম, লার্ভা বা অন্য যে কোনো পর্যায়, বালিকণা, কর্দমরেণু ইত্যাদি আটকে যায়। বালির ফিল্টার স্থাপনের জন্য ১.৫ মিটার উচ্চতার ট্যাংক উপযোগী।

বালির ফিল্টারে প্রধান পরিস্রাবক মাধ্যম হিসেবে চিকন বালি (১০-১৫ মাইক্রন) ও কাঠকয়লা এবং পানি সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে মোটা দানার বালি বা সিলেট স্যান্ড ও নুড়ি পাথর ব্যবহার করা যায়। একই ট্যাংকে একটির পরে একটি মাধ্যমের স্তর সাজিয়ে এ ধরনের ফিল্টার গঠন করা যেতে পারে। আবার বৃহদায়তনের হ্যাচারিতে একসাথে প্রচুর পরিশ্রুত পানি সরবরাহের উদ্দেশ্যে সারিবদ্ধ কয়েকটি ট্যাংক ব্যবহার করে বিভিন্ন মাধ্যম পর্যায়ক্রমে সাজানো যেতে পারে। পরিস্রাবক মাধ্যমের স্তর যত বেশি হয়, পানির পরিস্রাবণও তত ভালো হয়। যেভাবেই সাজানো হাকে না কেন, পর পর সাজানো পরিস্রাবক মাধ্যমের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত ধীর গতিতে (শুধু মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সাহায্যে) পানির প্রবাহ সৃষ্টি করে পরিস্রাবণ করাই হলো এর মূল কর্মপদ্ধতি। এ ফিল্টারে পানি পরিস্রাবণের গতি আরও ধীরে এবং পরিশ্রুত পানির মান অধিকতর নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে পরিস্রাবক মাধ্যম সমূহকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীত দিক থেকে সাজিয়ে ব্যাক-ওয়াশের সাহায্যে পানি প্রবাহিত করা যেতে পারে। পরিশ্রুত পানির চাহিদার উপরে নির্ভর করে বালির ফিল্টারের আকার ছোট বা বড় করা যায়। আবার একটি মাত্র ফিল্টারের পরিবর্তে একাধিক ফিল্টার নির্মাণ করে পর্যায়ক্রমে একটির পরে একটি ব্যবহার করা যায়।

নলকূপ থেকে সংগৃহীত ভূগর্ভস্থ পানি পরিস্রাবণের জন্য বালির ফিল্টার ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। স্বাদু পানির উৎস হিসেবে ভূপৃষ্ঠের পানি (নদী, খাল, বিল, পুকুর ইত্যাদি) ব্যবহার করা হলে তা অবশ্যই বালির ফিল্টারের সাহায্যে পরিস্রাবণ করে ব্যবহার করতে হবে।

চিত্র-২-২: বাণির ফিল্টার এর ডায়াগ্রাম

Content added || updated By

এটি একটি বালির ফিস্টার। বর্তুলাকার এফআরপি চ্যাংকের অভ্যন্তরে রক্ষিত বালির মধ্য দিয়ে মানানসই শক্তির পাম্পের সাহায্যে পানি যুক্ত গতিতে প্রবাহিত করে ফিল্টার করা হয়। ২০-৫০ মাইক্রন আকৃতির বালি এ ফিল্টারের একমাত্র পরিধানক মাধ্যম। আকার এবং শক্তির তারতম্যের উপরে নির্ভর করে এ ধরনের ফিস্টারের সাহায্যে প্রতি মিনিটে ২৫০-৫০০ মিটার পর্যন্ত পানি ফিল্টার করা সম্ভব। কিছুটা বড় আকৃতির অদ্রবনীয় পার্টিক্যাল, কিছু কিছু প্রোটোজোয়া, সামুদ্রিক প্লাংকটন, সামুদ্রিক প্রাণির ডিম, লার্ভা, পোনা ইত্যাদি এ ফিল্টারে আটকা পড়ে। কিন্তু ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, অধিকাংশ প্রোটোজোয়া, কিছু কিছু সামুদ্রিক প্লাংকটন এ ফিল্টারে আটকায় না। প্রকৃতপক্ষে এসব ফিল্টার সুইমিং পুলের পানি পরিষ্কার রাখার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চিংড়ি হ্যাচারিকে আগে এ ধরনের ফিস্টারের ব্যবহার প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে এ প্রবণতা অনেকটা কমে এসেছে । 

চিত্র-২.৩: ট্রাইটন হাইব্রেট প্রেসার ফিল্টার

Content added By

হ্যাচারিতে সমুদ্রের পানির মান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ধীর গতির বাণির ফিল্টার-এর পরে কার্টিজ ফিল্টার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ফিল্টারে এফআরণি নির্মিত বাকেটের অভ্যন্তরে ১০-১৫ মাইক্রন আকৃতির কার্টিজ সামগ্রীর সাহায্যে পানি ফিল্টার কোন আকৃতির কার্টিজ সামগ্রীর সাহায্যে পানি ফিল্টার করা হয়। এ ফিল্টারে পানির সর্বোচ্চ ক্লোরেট ৩,৫০০-৪,৫০০ লিটার/মিনিট। কার্টিজ ফিল্টার সাধারণত ওভারহেড ট্যাংকের সাথে ব্যবহার করা হয়। তবে ফ্লোরেট বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কার্টিজ ফিল্টারের সাথে অনেক সময়ে মানানসই শক্তির পাম্প ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

চিত্র-২.৪: কার্টিজ ফিল্টার

Content added By

পলিয়েস্টার বা অন্যান্য সিনথেটিক ফাইবারের তৈরি (৩০ সেমি৮৫ সেমি) ১-১০ মাইক্রনের ব্যাগ কিন্টার হ্যাচারিতে ব্যবহার করা হয়। সামুদ্রিক ফাইটোপ্লাংকটন বা মুল্লাংকটন, ক্ষুদ্র প্রাণি, ডিম ও লার্জ ভাসমান বালিকণা, কর্ণযন্ত্রে এবং অন্যান্য ভাসমান অদ্রবণীয় পদার্থ ফিল্টার ব্যালে আটকা পড়ে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষুদ্রাকৃতির প্লাংকটন, ক্ষুদ্রাতিক্ষুর বালিকণা, ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়া এ ব্যালে আটকা পড়ে না। ফিল্টার ব্যাপের ফ্লোরেট খুব কম। হঠাৎ করে পানি প্রবাহের গতি বেড়ে গেলে পিছন দিকের খোলা প্রান্ত দিয়ে ব্যালের ভিতরের পানি বেরিয়ে এসে সম্পূর্ণ পরিশ্রত পানির গুণাগুণ নষ্ট করে দেয়ার আশঙ্কা থাকে। বড় বা মাঝারি আকারের বাণিজ্যিক হ্যাচারিতে ব্যাপকভাবে পানি ফিল্টারের ক্ষেত্রে ফিল্টার ব্যাগ ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে সীমিত আঙ্গিকে আর্টনিয়া হ্যাচিং ট্যাংক, বহিরাঙ্গনে প্লাংকটনের চাষ, নার্সারি বা ভিরালা ট্যাংকে পরিশুদ্ধ পানি প্রবেশ ইত্যাদি কাজে কিপ্টার ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে।

চিত্র-২-৫: ব্যাগ ফিল্টার

Content added By

পানিকে জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে ফ্লোরিন প্রয়োগের পাশাপাশি ইউভি স্টোরিলাইজার ব্যবহার করা সমীটান। ইউরি স্টোরিলাইজারের সাহায্যে পানি থেকে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া ও ফাংগাস ইত্যাদি সকল প্রকার জীবাণু সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা সম্ভব। ইউভি স্টরিলাইজারের পাইপের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পানিতে অতিবেগুনী রশ্মি (ultra violet ray) বিচ্ছুরিত হয়। ফলে এর মধ্যে অবস্থিত সব ধরনের জীন পদার্থের জীবকোষের ডিএনএ অকার্যকর (de-activated হয়ে যায় এবং পানি সম্পূৰ্ণৰূপে জীবাণুযুক্ত হয়। ইউডি স্টেরিলাইজারের কার্যকারিতা নিম্নলিখিত ৩টি বিষয়ের উপরে নির্ভর করে।

-জীবাণুর আকৃতি,

- নিঃসৃত বিকিরণের মাত্রা, এবং

-প্রবাহিত পানিতে আলট্রাভায়োলেট রশ্মি সঠিকভাবে প্রবেশ করার নিশ্চয়তা।

পানিতে উপস্থিত জীবাণুর আকৃতি যত বড় হয়, এদের উপরে আলট্রাভায়োলেট রশ্মির কার্যকারিতাও তত কম হয়ে থাকে। ৩৫,০০০ মাইক্রো-ওয়াট/সেকেন্ড/বর্গ সেমি মাত্রার বিকিরণের সাহায্যে অধিকাংশ ভাইরাস, জীবাণু নিধন করা সম্ভব। তাই পানিকে সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে আলট্রাভায়োলেট রশ্মির সন্তোষজনক বিকিরণ মাত্রা ৩৫,০০০ মাইক্রো-ওয়াট সেকেন্ড/বর্গ সেমি হওয়া প্রয়োজন। আদর্শ পরিস্থিতিতে আলট্রাভায়োলেট রশ্মির বিকিরণ সম্ভবত ৫ সেন্টিমিটার অপেক্ষা অধিক পুরু প্রয়োজন পানির স্তর ভেদ করতে পারে না। এছাড়া পানিতে ভাসমান অথবা দ্রবীভূত জৈব/অজৈব পদার্থের উপস্থিতি বা ঘোলাত্বের কারণে বিকিরণের মাত্রা আরও কমে যেতে পারে। তাই একই মাত্রার আলট্রাভায়োলেট রশ্মির বিকিরণ পরিষ্কার স্বাদু পানি অপেক্ষা অজৈব আয়নের ঘনত্ব সম্পন্ন অর্থ-লবণাক্ত পানিতে তুলনামূলকভাবে কম কার্যকর হয়ে থাকে। পানিকে জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে ইউডি স্টেরিলাইজার ব্যবহার করার সময়ে এসব বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

Content added By

অণুজীবের সাহায্যে এলআরটি-এর পানি পরিশাধেনের উদ্দেশ্যে হ্যাচারিতে বায়োফিল্টারের মাধ্যমে পানি পুনঃসঞ্চালন করা হয়। বদ্ধ-হ্যাচারি পরিচালনা পদ্ধতিতে বায়োফিল্টার অত্যাবশ্যক। বায়োফিল্টার স্থাপনের মাধ্যমে ব্যবহৃত পানিকে পরিশোধন এবং পুনঃসঞ্চালন করে বার বার ব্যবহার করা যায়। ফলে পানির সাশ্রয় হয়। এলআরটি-এর পানিতে লার্ভার বর্জ্য পদার্থ, অব্যবহৃত খাদ্য ও মৃত লার্ভা, আর্টিমিয়া ইত্যাদির পচনের ফলে পানিতে অনায়নিত অ্যামোনিয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে পানি লার্ভার জন্য বিষাক্ত হয়ে উঠে। বায়োফিল্টারে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা ক্ষতিকর অনায়নিত অ্যামোনিয়া প্রথমে কম ক্ষতিকর নাইট্রাইটে এবং পরবর্তীতে নিরপেক্ষ নাইট্রেটে রূপান্তরিত হয়। ফলে ট্যাংকের পানি লার্ভার জন্য উপযোগী হয়ে পড়ে। বায়োফিল্টার নিম্নলিখিত কার্যাদি সম্পন্ন করে

১. পানি থেকে অ্যামোনিয়া ও নাইট্রাইট দূর করে,

২. পানির পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করে,

৩. দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ায়,

৪. কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমায়, ও

৫. ট্যাংকের পানিতে উপস্থিত বিভিন্ন অদ্রবণীয় কণা অপসারন করে।

Content added By

বায়োফিল্টারের আয়তন সাধারণত এলআরটি-এর ১০% এবং উচ্চতা এলআরটি-এর সমান হতে হবে। প্রতিটি এলআরটি-এর জন্য পৃথক বায়োফিল্টার প্রয়োজন। এর মোট উচ্চতা এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যেন পানিপূর্ণ অবস্থায় বায়োফিল্টার এবং এলআরটি-এর উপরের ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত খালি থাকে। জীবাণুমুক্ত করে ধৌত করার পরে ১ মিটার উচ্চতার একটি বায়োফিল্টারে ৮৫ সেন্টিমিটার উচ্চতা পর্যন্ত মিডিয়া দেয়া যেতে পারে। বায়োফিল্টার স্থাপনের পূর্বে পাথর, ঝিনুক, নেট, ড্রাম, পাইপ, এয়ার স্টোন ইত্যাদি ১৫০ পিপিএম ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানিতে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পরবর্তীতে জীবাণুমুক্ত স্বাদু পানি দিয়ে ভালাভাবে ধুয়ে রৌদ্রে শুকাতে হবে। বায়োফিল্টারের নিচের দিকে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ২০ মিলিমিটার সাইজের পাথর দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। ২য় স্তরে ১৫ সেমি ঝিনুক, ৩য় স্তরে ২০ সেমি পাথর, ৪র্থ স্তরে ৫ সেমি ঝিনুক, ৫ম স্তরে ২০ সেমি পাথর ও ৬ষ্ঠ স্তরে ১০ সেমি ঝিনুক পর্যায়ক্রমে সাজাতে হবে এবং উপরের ১৫ সেমি খালি জায়গা রাখতে হয় থেকে বায়োফিল্টারে পানি প্রবেশ করার পাইপ স্থাপন করতে হবে এবং বায়োফিল্টার থেকে এলআরটি-তে শোধিত পানি পুনঃসঞ্চালনের জন্য নুড়িপাথরের নিচ পর্যন্ত পাইপ স্থাপন করে বাতাসের পাইপ ও এয়ার স্টোন স্থাপন করতে হবে।

Content added By

প্রথমে স্বাদু পানি দিয়ে বায়োফিল্টার ভর্তি করে ২৫০ পিপিএম হারে ফরমালিন দিয়ে ২৪ ঘণ্টা বায়ুসঞ্চলন করার পর সমস্ত পানি ফেলে দিয়ে প্রথমে জীবাণুমুক্ত স্বাদু পানি এবং পরে ১২ পিপিটি লবণাক্ত পানি দিয়ে উত্তমরূপে পরিষ্কার করতে হবে। বায়োফিল্টারে পরিশোধিত ১২ পিপিটি লবণ পানি দিয়ে ঝিনুকের উপর ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত পানি দিয়ে এতে বায়ুসঞ্চালনের ব্যবস্থা করতে হবে। অতঃপর ১.৫ মিলি তরল অ্যামোনিয়া যোগ করতে হবে। ২০-২৫ দিন বায়ুসঞ্চালনের পর পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ পরীক্ষা করতে হবে। যদি এ অবস্থায় অ্যামোনিয়া না পাওয়া যায় তবে পুনরায় অ্যামোনিয়া দিতে হবে এবং ৩-৪ দিন পর পুনরায় অ্যামোনিয়া পরীক্ষা করতে হবে। মনে রাখতে হবে অ্যামোনিয়ার অনুপস্থিতি বায়োফিল্টারের ১০০ ভাগ কার্যক্ষম নির্দেশিক। বায়োফিল্টারে অ্যামোনিয়ার অস্তিত্ব সম্পূর্ণ বিলীন না হওয়া পর্যন্ত লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংকের সাথে এর সংযোগ দেয়া যাবে না।

Content added By

বায়োফিল্টার স্থাপন করে সাথে সাথে তা এলআরটি-এর সাথে সংযুক্ত করা যাবে না। বায়োফিল্ডারকে সক্রিয় করার পূর্বে এলআরটি-এর সাথে সংযুক্ত করা হলে প্রতিপালন ট্যাংকের পানি অ্যামোনিয়াজনিত বিষাক্ততা থেকে মুক্ত হবে না বিধায় লার্ভার জন্য বিপদজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তিনটি পদ্ধতিতে বায়োফিল্টার সক্রিয় করা যায়।

প্রথম পদ্ধতিঃ নতুন বায়োফিল্টারে নুড়ি স্থাপনপূর্বক নির্ধারিত লবণাক্ততা সম্পন্ন পানি প্রবেশের পরে ১.৫ মিলি অ্যামোনিয়া যোগ করতে হবে। এরপর ২০-২৫ দিন বায়ুসঞ্চালন করা হলে নুড়িপাথরের গায়ে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে হেটারোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। যাহোক ২০-২৫ দিন পরে পানিতে অ্যামেনিয়ার  পরিমাণ কমে গেলে বা অনুপস্থিত থাকলে এদের উপস্থিতির মাধ্যমে বায়োফিল্টারের সক্রিয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
দ্বিতীয় পদ্ধতি: কোনো সক্রিয় বায়োফিল্টার থেকে কিছু নুড়িপাথর এনে নতুনভাবে প্রস্তুতকৃত বায়োফিল্টারে দিয়ে ৮-১০ দিন বায়ুসঞ্চালন করা হলে নুড়িপাথরের পায়ে হেটারোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় এবং বায়োফিল্টার সক্রিয় হয়ে যায়।

তৃতীয় পদ্ধতি: বায়োফিল্টার স্থাপনের পরে এর ১২ পিপিটি লবণাক্ত পানিতে কিছু তেলাপিয়া ছেড়ে ২-৩ সপ্তাহ পালন করা হলে নুড়িপাথরের গায়ে হেটারোট্রপিক ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেবে এবং বায়োফিল্টার সক্রিয় হবে। বায়োফিল্টার সক্রিয় হয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণে নিশ্চিত হলে ট্যাংক থেকে তেলাপিয়া মাছ সরিয়ে নিয়ে। বায়োফিল্টারকে এলআরটি-এর সাথে সংযুক্ত করে দেয়া যাতে পারে।

বায়োফিল্টারের কার্যকারিতা: তিনটি পর্যায়ের মাধ্যমে বায়োফিল্টারের কার্যকারিতা বর্ণনা করা যায়।

১ম পর্যায়: অ্যামোনিফিকেশান বা মিনারেলাইজেশান

বায়োফিল্টারে স্থাপিত নুড়িপাথরের গায়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হেটারোট্রপিক ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। এসব হেটারোট্রপিক ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা এলআরটি-এর পানিতে লার্ভার মৃতদেহ, মলমূত্র প্রয়োগকৃত খাদ্যের অবশিষ্টাংশ ইত্যাদি পচনের ফলে লার্ভার জন্য চরম ক্ষতিকর আয়নিত ও অনায়নিত অ্যামোনিয়ার সৃষ্টি হয়। এ প্রক্রিয়াকে অ্যামোনিফিকেশান বা মিনারেলাইজেশান বলা হয়।

২য় পর্যায়: নাইট্রিফিকেশান

১ম পর্যায়ে হেটারোট্রপিক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট ক্ষতিকর আয়নিত ও অনায়নিত অ্যামোনিয়া নাইট্রোসোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে অক্সিডেশান প্রক্রিয়ায় প্রথমে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর নাইট্রাইটে পরিণত হয়। পরবর্তীতে পুনরায় এ নাইট্রাইট আবার নাইট্রোব্যাক্টারের মাধ্যমে সর্বাধিক কম ক্ষতিকর নাইট্রেটে পরিণত হয়। এর ফলে এলআরটি-এর পানি ক্ষতিকর অজৈব নাইট্রোজেনজনিত বিষাক্ততা থেকে মুক্ত হয়ে লার্ভার জীবনধারণের উপযোগী হয়। নাইট্রিফিকেশান পদ্ধতি সুষ্ঠুভাবে চলার জন্য ৬টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ এগুলো নিম্নরূপ:

১ বায়োফিল্টারে পানিতে যে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ যেমন অ্যান্টিবায়োটিকের অনুপস্থিতি

২ বায়োফিল্টারের পানির তাপমাত্রা ২৮-৩০° সেন্টিগ্রেড থাকা বাঞ্ছনীয়;

৩. বায়াফিল্টারের পানির পিএইচ ৭.৫-৮.৫ মাত্রার মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়;

৪. বায়োফিল্টারের পানির দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ৪ পিপিএম এর বেশি থাকা বাঞ্ছনীয় ; 

৫. বায়োফিল্টারের পানির লবণাক্ততা ১০-১৫ পিপিটি এর মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়, এবং

৬. বায়োফিল্টারে স্থাপিত নুড়িপাথর ও ঝিনুকের পরিমাণ বেশি হলে অধিক পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে এবং নাইট্রিফিকেশানের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়।  বায়োফিল্টারের প্রত্যাশিত সক্রিয়তা প্রাপ্তির জন্য এসব নুড়িপাথর ও ঝিনুক ছোট আকারের এবং অমসৃণ পৃষ্ঠ সম্পন্ন হলে ভালো হয়।

৩য় পর্যায়: ডিসিমিলেশান বা ডি-নাইট্রিফিকেশান 

বায়োফিল্টারের নুড়িপাথরের নিচে অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে অ্যানারোবিক ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। এরা পানিতে উপস্থিত নাইট্রেটকে ভেঙে নাইট্রাইট, মুক্ত নাইট্রোজেন, মিথেন, হাইড্রোজেন সালফাইড ইত্যাদি গ্যাস তৈরি করে। এর ফলে বায়োফিল্টারের পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়ে। এ প্রক্রিয়াকে ডিসিমিলেশান বা ডি- নাইট্রিফিকেশান বলা হয়। এ প্রক্রিয়ায় পানিতে উপস্থিত নাইট্রেটের পরিমাণ কমলেও বায়োফিল্টারে তা ব্যাপকভাবে চলতে দেয়া ঠিক নয়। কারণ এর ফলে পানিতে ক্ষতিকর অ্যাসিড সৃষ্টি হয়। তাই বায়োফিল্টারে নাইট্রেটের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিছু পানি পরিবর্তন করে দেয়া উচিত। বায়োফিল্টারের নুড়িপাথরের নিচে বায়ুসঞ্চালনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ডি-নাইট্রিফিকেশানের পরিমাণ কমানো সম্ভব।

Content added By
  • যে কোনো হ্যাচারি তৈরির সময় প্রাথমিকভাবে যে ট্যাংকগুলো নির্মাণ করা হয় সেগুলো হলো- প্রজনন ট্যাংক, মজুদ ট্যাংক, লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংক, পোস্ট লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংক, মিঠা ও লবণাক্ত পানির ট্যাংক, পরিশুদ্ধ পানির ট্যাংক, ব্রুডস্টক প্রতিপালন ট্যাংক ইত্যাদি।
  •  ডিমওয়ালা চিংড়ি প্রতিপালন ট্যাংকঃ সংগৃহীত চিংড়ি হ্যাচারিতে আনার পর এই ট্যাংকে এদের প্রতিপালন করা হয়। ট্যাংকের আকৃতি গোলাকার, বর্গাকার, আয়তাকার হতে পারে। উচ্চতা সাধারণত ১.২-২.০ মিটার এবং ধারণ ক্ষমতা ৫-৪০ টন হয়। যদিও ট্যাংকের আকার, আয়তন হ্যাচারির পোনা উৎপাদনের সক্ষমতার ওপর নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ট্যাংকে পানি অপসারণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। যাতে করে নিয়মিত পানি পরিবর্তন করে পুনরায় নতুন পানি সঞ্চালন করা যায়।
  • প্রজনন ট্যাংকঃ এই ট্যাংকগুলো সমতল বিশিষ্ট অথবা কোণাকার তল বিশিষ্ট হতে পারে। ফাইবার- গ্লাস, প্লাস্টিক, প্লেস্টি গ্লাস ইত্যাদি দ্বারা তৈরি করা হয়। এদের পানি ধারণ ক্ষমতা ৫০ লিটার থেকে ১.৫ টন পর্যন্ত হতে পারে। লবণাক্ততা ২৮-৩২ পিপিটি এবং তাপমাত্রা ৩০°° সে এর কাছাকাছি রাখতে হয় এবং সবসময় পর্যবেক্ষণ করতে হয়।
  • লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংকঃ সদ্য ডিম ফোটানো লার্ভা প্রতিপালেনের জন্য দুই ধরনের ট্যাংক ব্যবহার করা হয়। একটি ছোট আয়তনের অন্যটি বড় আয়তনের। তবে আমাদের দেশে সাধারণত ৩টন ক্ষমতার লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংক ব্যবহৃত হয়। নগ্নিকে খাবার প্রদান করা হয় না। তবে প্রোটোজোয়া পর্যায়ে পৌঁছানোর পর থেকে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইটোপ্লাংকটন, ঈষ্ট, এলজি, ডায়াটম এসব সরবরাহ করা হয়। ডায়াটমের পরিমাণ বেড়ে গেলে তা অপসারণের ব্যবস্থাও করতে হয়। নিয়মিত পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। পানির নিয়ামকগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকা উচিত এতে পানির গুণগত মান বজায় থাকে।
  • পোস্ট লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংকঃ পোষ্ট লার্ভা প্রতিপালনের ট্যাংকগুলোতে একটি স্তর হিসেবে পলিথিন জাল প্রদান করা হয়। লার্ভা পালনের এই পর্যায়ে পানির গুণগত মান বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসময় ৩০-৪০% পানি প্রতিদিন পরিবর্তন করা হয় এতে অক্সিজেনের ঘনত্ব, অ্যামোনিয়ার ঘনত্ব (০.১ পিপিএম এর কম) নিশ্চিত করা যায়। অতিরিক্ত খাদ্য, বিপাকীয় বর্জ্য এবং মৃত শৈবাল অপসারণের জন্য ট্যাংকের নিচের পানি সাইফনিং করা হ্যাচারির একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং নিয়মিত কাজ। লালন পালনের ৫০% পানি নিষ্কাশন হয়ে গেলে ২-৩ ঘন্টার জন্য টাটকা সমুদ্রের পানির অবিরাম প্রবাহ বজায় রাখা হয়। এতে আটকে থাকা কঠিন কণাগুলো নিষ্কাশন হয় এবং পানির স্বচ্ছতা বজায় থাকে। যখন ট্যাংকের নিচে পলি জমে পুরু স্তর হয় তখন পোষ্ট লার্ভাগুলোকে অন্য ট্যাংকে স্থানান্তরিত করা হয়। পোষ্ট লার্ভাকে রোগের সংক্রমন থেকে রক্ষা করতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।
Content added By

ডিমের বর্ণ কালচে ধূসর বা ছাই বর্ণের হলে হ্যাচিং ট্যাংকের স্থানান্তর করা হয়। হ্যাচিং ট্যাংকের পানির পুণ নিম্নরুপ হতে হবে।

তাপমাত্রা------------ ২৮-৩১° ° সেলসিয়াস
পিএইচ --------------৭.৫-৮.৫
লৌহ ----------------০.০পিপিএম
ক্লোরিন  ----------------০.০ পিপিএম
দ্রবীভূত অক্সিজেন ----------- ৪-৫ পিপিএম

নাইট্রাইট নাইট্রোজেন------------০.১ পিপিএম এর কম
অ্যামোনিয়া--------------০.১ পিপিএম এর কম
হাইড্রোজেন সালফাইড
হ্যাচিং ট্যাংকে প্রতি বর্গমিটারে ৩-৪টি ডিমওয়ালা চিংড়ি মজুদ রাখতে হবে। হ্যাচিং ট্যাংকে উপযুক্ত ডিমওয়ালা চিংড়ি স্থানান্তরের পরে পরিশোধনকৃত ১২ পিপিটি লবণাক্ত পানির সাথে স্বাদু পানি মিশিয়ে হ্যাচিং ট্যাংকের পানির লবণাক্ততা ৪-৫ পিপিটি করতে হবে। হ্যাচিং ট্যাংকের পানিতে ১০ পিপিএম ইডিটিএ এবং ০.০৫ পিপিএম ট্রাফলান প্রয়োগ করা যেতে পারে। ডিমওয়ালা চিংড়ির আশ্রয়স্থল হিসেবে হ্যাচিং ট্যাংকে ৬-৮ ইঞ্চি লম্বা সাইজের ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপ পরিমাণমত দেয়া যেতে পারে। পানির উচ্চতা  ১.৫-২ ফুট রাখতে হবে। হ্যাচিং ট্যাংকে খাদ্য সরবরাহ করা ঠিক নয়। কারণ খাদ্যের মাধ্যমে লার্ভার শরীরে সংক্রমনের সম্ভবনা থাকে।

Content added By

গলদা চিংড়ির ডিম সর্বদা রাতের বেলায় ফুটে, কখনও দিনের বেলায় ফুটে না। সকাল বেলা ১২০ মিলি মাইক্রন স্কুপ নেটের সাহায্যে হ্যাচিং ট্যাংক থেকে লার্ভা সংগ্রহ করতে হয়। হ্যাচিং ট্যাংক থেকে লার্ভা সংগ্রহ করার জন্য ২০-৫০ মিলি আয়তনের কয়েকটি বীকার, ৪-৫ পিপিটি মাত্রার পরিশ্রুত ও জীবাণুমুক্ত পানি, বালতি, মগ, গামলা, ফরমালিন ইত্যাদি উপকরণ প্রয়োজন হয়। লার্ভা সংগ্রহ করার পূর্বে কালো পলিথিন দিয়ে হ্যাচিং ট্যাংক ঢেকে দিতে হবে। হ্যাচিং ট্যাংকের বায়ু সঞ্চালন বন্ধ করে এক পার্শ্বে একটি বাল্ব জ্বালিয়ে দিলে লার্ভা গুলো আলোর কাছে চলে আসবে। এরপর খুব ধীরে ধীরে স্কুপ নেটের সাহায্যে লার্ভা সংগ্রহ করে গামলার পানিতে ছাড়তে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী বার বার এ প্রক্রিয়া চালিয়ে লার্ভা পৃথক করতে হবে। অতঃপর ২৫-৩০ লিটার পরিমাপের গামলায় হ্যাচিং ট্যাংক থেকে ৮-১০ লিটার পানি নিয়ে বায়ু সঞ্চালন দিয়ে সংগৃহীত লার্ভা রাখতে হবে। লার্ভা সংগ্রহের কাজ শেষ হলে প্রথমে গামলায় সংগৃহীত লার্ভি থেকে সাইফনিং করে ময়লা দূর করতে হবে। তারপর গামলার ভিতরে ১২ পিপিটি লবণাক্ততা সম্পন্ন পানি ১ থেকে ২ মগ ছিটিয়ে দিতে হবে অথবা শরু পাইপের সাহায্যে সরবরাহ করতে হবে।

এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আধা ঘণ্টা পর পর ১২ পিপিটি লবণাক্ততা সম্পন্ন পানি গামলায় সরবরাহ করতে হবে। পর্যায়ক্রমে ৫-৭ ঘণ্টার মধ্যে গামলা পানির লবণাক্ততা ১২ পিপিটি আনতে হবে। ১২ পিপিটি লবণাক্ততায় আসার পর উক্ত লার্ভার গামলায় ২০০-২৫০ পিপিএম ফরমালিন (প্রতি ২৫ লিটার পানিতে ৫ মিলি) প্রয়োগ করে আধাঘন্টা বায়ু সঞ্চালন পূর্বক পরিশোধন করতে হবে এবং আধাঘন্টা পর ৫০% পানি ফেলে দিয়ে পুনরায় ২ মগ ১২ পিপিটি পানি গামলায় আস্তে আস্তে ঢালতে হবে। প্রতি ২৫-৩০ লিটারের গামলায় ১,০০,০০০-১,৫০,০০০টি লার্ভা রাখা যায়। এভাবে সংগৃহীত লার্ভা এলআরটি-তে নির্ধারিত ঘনত্বে মজুদ করতে হয়। প্রতিপালন ট্যাংকে ১ টন পানিতে সাধারণত ১ লক্ষ লার্ভা মজুদ করা যায়। সেজন্য লার্ভা গণনা করা প্রয়োজন। প্রথমে লার্ভা সহ গামলার মোট পানির পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে। একটি ছোট বীকারে গামলা থেকে লার্ভাসহ অল্প পানি নিয়ে তার পরিমাণ জেনে লার্ভার সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে।

নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে গামলায় লার্ভা আনুমানিক সংখ্যা জানা যেতে পারে। লার্ভা সংখ্যা = (ছোট বীকারে লার্ভার সংখ্যা + ছোট বীকারের পানির আয়তন) x গামলার পানির মোট আয়তন।
এলআরটি-তে লার্ভা মজুদের সময় এদেরকে এলআরটি-এর পানির সাথে ভালোভাবে খাপ খাইয়ে মজুদ করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে প্রথমে পরিশোধিত লার্ভার গামলাটি ফরমালিন মিশ্রিত পানি দিয়ে তলাসহ চতুর্দিক পরিষ্কার করতে হবে অতঃপর লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংকের সাথে লার্ভা ভর্তি গামলার পানির তাপমাত্রা ঠিক করার জন্য এলআরটি-এর পানি দুই মগ করে লার্ভার গামলায় ১০ মিনিট পর পর ছিটিয়ে অথবা পাইপের সাহায্যে ধীরে ধীরে সরবরাহ করতে হবে এবং গামলাটি লার্ভা এলআরটি-এর পানিতে ভাসিয়ে রাখতে হবে।

উভয় পানির তাপমাত্রা সমান হলে আস্তে আস্তে প্রতিপালন ট্যাংকের পানিতে লার্ভা ছাড়তে হবে। রাত ৮.০০ টা থেকে ৯.০০ টার মধ্যে এলআরটিতে লার্ভা ছাড়ার কাজ সম্পন্ন করা ভাল।

Content added || updated By

হ্যাচিং ট্যাংক থেকে সদ্য ফুটা লার্ভা সংগ্রহ শোধন ও গণনাপূর্বক নির্ধারিত মজুদ ঘনত্বে লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংক বা এলআরটি-তে মজুদ করা হয়। এ ট্যাংকেই লার্ভার ১১টি পর্যায় অতিক্রম করে এরা পোস্টলার্ভা পিএল-এ রূপান্তরিত হয়। এর জন্য পানির তাপমাত্রা, লবণাক্ততা ও অন্যান্য বিষয়াদির উপরে নির্ভর করে প্রায় ২৫-৩৫ দিন সময়ের মধ্যে লার্ভা পিএল-এ রূপান্তরিত হয়। এই সময়টি লার্ভার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল। উৎপাদন কর্মকাণ্ডের সর্বাপেক্ষা সংবেদনশীল অংশ এখানে অনুশীলন করা হয়। গলদা চিংড়ির লার্ভা প্রতিপালনে এলআরটি ব্যবস্থাপনায় নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডগুলো সম্পন্ন করা হয়:

১. এলআরটি-তে নির্দিষ্ট সংখ্যক লার্ভা সঠিক পদ্ধতিতে শোধনপূর্বক এলআরটি-এর পানির সাথে ভালোভাবে খাপ খাওয়ানোর পর মজুদ করা 

২. লার্ভার জন্য জীবিত প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে আর্টিমিয়া নগ্নি সরবরাহ করা এবং এজন্য নিয়মিত প্রয়োজনীয় পরিমাণ আটিমিয়া সিস্ট হ্যাচিং-এর ব্যবস্থা করা

৩. নির্ধারিত সময় থেকে লার্ভার জন্য পরিমিত পরিমাণে কাস্টার্ড খাদ্য সরবরাহ করা এবং এজন্য নিয়মিত, প্রয়োজনীয় পরিমাণ কাস্টার্ড খাদ্য তৈরি করা

৪. কাস্টার্ড খাদ্য প্রয়োগের পাশাপাশি এ খাদ্যের মোট চাহিদা ও কাস্টার্ড সরবরাহের পরিমাণের সাথে সমন্বয় সাধন করে লার্ভার জন্য নিয়মিত ফরমুলেটেড খাদ্য পরিবেশন করা

৫. এলআরটি থেকে লার্ভার পরিত্যক্ত উচ্ছিষ্ট খাদ্য দৈনিক ১ অথবা ২ বেলা সাইফনের সাহায্যে নিয়মিত অপসারণ করা

৬. এলআরটি-এর দেয়াল ও মেঝেতে জমে থাকা ময়লা নিয়মিত ব্রাশ করে পরিষ্কার করা এবং সাইফনের সাহায্যে অপসারণ করা

৭. পুনঃসঞ্চালন পদ্ধতিতে পরিচালিত হ্যাচারিতে পানি পুনঃসঞ্চালনের উদ্দেশ্যে বায়োফিল্টার স্থাপন, বায়োফিল্টার সক্রিয়করণ, এলআরটি-এর সাথে বায়োফিল্টারের সংযোগ স্থাপন এবং বায়োফিল্টার পরিচালনা করা

৮. বায়োফিল্টার পরিচালিত হতে থাকলে নিয়মিত এলআরটি-এর পানিতে আয়নিত ও অনায়নিত অ্যামোনিয়া, নাইট্রাইট ও নাইট্রেটের পরিমাণ নির্ধারণ এবং এলআরটি-এর পানিতে এসবের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা

৯. খোলা-পানি পদ্ধতিতে পরিচালিত হ্যাচারিতে প্রতিদিন সমগুণাবলি সম্পন্ন পানি দ্বারা এলআরটি- এর ২৫-৩০% পানি পরিবর্তন করা

১০. এলআরটিতে পানির গভীরতা, তাপমাত্রা, পি.এইচ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলি, পানিতে ফেন সৃষ্টি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা;

১১. পানিতে বায়ুসঞ্চালন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা

১২. লার্ভার রূপান্তর প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা

১৩. নিয়মিত লার্ভার স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা, এর চলাফেরা, নড়াচড়া, খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা ও অন্যান্য শারীরিক বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করা

১৪. লার্ভার নিয়মিত আণুবীক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করে এর শরীরে ক্ষতিকর রোগজীবাণু আছে কিনা পরীক্ষা করা

১৫. এলআরটি-এর পানিতে ক্ষতিকর রোগজীবাণুর উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা

১৬. লার্ভার রোগজীবাণু প্রতিরোধে নিয়মিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে উপযুক্ত রাসায়নিক সামগ্রী ও ঔষধপত্র নির্ধারিত মাত্রায় ব্যবহার করা

১৭. লার্ভার রোগ সনাক্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা

১৮. লার্ভার রোগ নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেলে ক্ষতিগ্রস্থ ট্যাংকে উচ্চ ক্লোরিন প্রয়োগপূর্বক সম্পূর্ণ ট্যাংকে রোগাক্রান্ত লার্ভা ধ্বংস করে সতর্কতার সাথে নিষ্কাশন করা এবং ট্যাংকটি জীবাণুমুক্ত করে ধুয়ে রাখা

১৯. এলআরটি-তে প্রোবায়োটিক ব্যবহার করা হলে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা

২০. এলআরটি ইউনিটের মেঝে, নর্দমা, পাইপলাইন ও অন্যান্য অবকাঠামো নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করে পরিষ্কার রাখা

২১. এলআরটি থেকে পোনা পর্যবেক্ষণের জন্য স্থাপিত বিকার ও পাত্রের পানি নিয়মিত পরিবর্তন করা, এবং

২২. এলআরটি ইউনিটে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি ও তৈজসপত্র নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করে ধৌত করা।

গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে এলআরটি ব্যবস্থাপনা কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে কাজের ধরণ অনুযায়ী উপরোল্লিখিত বিষয়গুলোকে কয়েকটি প্রধান শিরোনামের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যেমন-

১. এলআরটি-তে পার্ভার খাদ্য ব্যবস্থাপনা

২. এলআরটি-এর পানি ব্যবস্থাপনা

৩. এলআরটি পরিষ্কারকরণ ও

৪. লার্ভা স্বাস্থ্য পরিচর্যা এবং রোগজীবাণু নিয়ন্ত্রণ।

Content added By

এই ট্যাংকগুলো সাধারণত ১-২০ টনের মধ্যে হয়ে থাকে। তবে হ্যাচারির চিংড়ি চাষের পরিমাণের ওপর এই ট্যাংকগুলোর আয়তন নির্ভর করে। এগুলো ফাইবার গ্লাস, পলিথিন, পাতলা কাঠ, কংক্রিট প্রভৃতি দিয়ে নির্মাণ করা হয়। চাষের প্রাণিগুলোকে নিয়মিত খাবার প্রদান করা হয় এবং ট্যাংকগুলোতে পানি সরবরাহ ও অপসারণের ব্যবস্থা রাখা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী এগুলো পরিষ্কার করা হয় এতে ফলন বৃদ্ধি পায়।

Content added By

লার্ভার সর্বশেষ ধাপ হলো পোস্ট লার্ভা। এসময় গলদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভাগুলোকে আলাদা আলাদা চৌবাচ্চায় স্থানান্তর করা হয় এবং এসব চৌবাচ্চার আকার আয়তন লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংকের সদৃশ হয়ে থাকে। পোস্ট লার্ভাকে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক, কৃত্রিম এবং জীবন্ত খাদ্য সরবরাহ করা হয়। দ্রুত বৃদ্ধির জন্য আর্টেমিয়া জাতীয় প্রাণিকণা দেয়া হয়। এছাড়াও ডায়াটম, মাইক্রোএলজি, জমাট শুকনো খাদ্য ( Spirulina powder), মাইক্রোএনক্যাপসুলেটেড আর্টেমিয়া, শামুক, মাছের উচ্ছিষ্টের কিমা করে খাওয়ানো হয়। এর ফলে গলদার পোনার দ্রুত বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি পরিবর্তন করে নতুন পানি যোগ করতে হয়। ফলে ট্যাংকের পানির তাপমাত্রা, অক্সিজেনের ঘনত্ব, অ্যামোনিয়ার ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে থাকে। পানির গুণগত মান রক্ষা করতে সার্বক্ষণিক বায়ু সঞ্চালনের ব্যবস্থা রাখা আবশ্যক। এছাড়াও রোগ জীবাণুর সংক্রমন প্রতিরোধ করতে নিয়মিত প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ করা বাধ্যতামূলক। উপরোক্ত ব্যবস্থাপনাগুলো গলদা চিংড়ির সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করে।

Content added By

তোমার প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি যে কোন চিংড়ি খামার পরিদর্শন কর যেখানে চিংড়ি হ্যাচারিতে ব্যাবহারের জন্য ব্রুড চিংড়ি পালন করা হয়। এর কর্ম পরিবেশ ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয়ে নিম্নোক্ত ছকে তোমার মতামত দাও।

পরিদর্শনকৃত চিংড়ি হ্যাচারির নাম 
ঠিকানা 
হ্যাচারিতে কীভাবে পুরুষ ও স্ত্রী গলদা চিংড়ি সনাক্ত  করা হয়? 
হ্যাচিং ট্যাংক থেকে লার্ভা সংগ্রহ করতে কী কী উপকরণ ব্যবহার করা হয়? 
খামারে কর্মী সংখ্যা কত? 
কর্মীগণ কাজের সময় কী কী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করে। 
মৎস্য খামারে কর্মপরিবেশ সম্পর্কে মতামত দাও 
তোমার নাম
শ্রেণি
রোল নং
প্রতিষ্ঠানের নাম
শ্রেণি শিক্ষকের নাম
প্রতিবেদন জমাদানের তারিখ
শিক্ষকের স্বাক্ষর
Content added By

চিংড়ি খামারে নিরাপদ কাজ করতে তোমরা কোন কাজে কী ধরণের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিবে তা ছকে লিখ।

ক্রম কাজের নামনিরাপত্তামূলক গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ
১ হ্যাচারিতে জাল টেনে চিংড়ি বাছাইকরণভালো ফল লাভে প্রতি ১৫দিন অন্তর জীবাণু নাশক প্রয়োগ করতে হবে
   
 
 
Content added By

পারদর্শিতার মানদণ্ড

  • স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুরক্ষা পোশাক পরিধান করা।
  •  চিংড়ি হ্যাচারির বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করা
  •  চিংড়ি হ্যাচারির কোন অংশের কি কাজ তা করে শেখা।
  • শ্রেণি বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে এটা কোন ধরনের হ্যাচারি তা নির্ণয় করা।
  • দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজনে বিভিন্ন অংশের কাজগুলো বারবার অণুশীলন করা।

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম

মাস্ক

গ্লাভস্

স্যানিটাইজার

অ্যাপ্রন

গামবুট

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুপমেন্টস, মেশিন)

পি এইচ মিটার

অক্সিজেন মিটার

থার্মোমিটার স্প্রিং ব্যালেন্স


(গ) প্রয়োজনীয় মালামাল

একটি সচল চিংড়ি হ্যাচারি

খাতা, পেন্সিল, কলম

প্রয়োজনীয় যানবাহন

(ঘ) কাজের ধারা:

১। বিদ্যালয় হতে নিকটতম দূরত্বের কোন সচল হ্যাচারি মালিকের সাথে শিক্ষকের সহায়তায় যোগাযোগ করে হ্যাচারি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করে রাখো।

২। হ্যাচারির বিভিন্ন অংশের বিবরণ সম্বলিত বই এর তাত্ত্বিক অংশ ব্যবহারিক অনুশীলনের আগে ভালভাবে বুঝার চেষ্টা করো।

৩। নির্দিষ্ট তারিখে শ্রেণি শিক্ষকসহ হ্যাচারিতে গমন করো।

৪। হ্যাচারির বিভিন্ন অংশ বা অবকাঠামাগুলো এক এক করে পর্যবেক্ষণ করো।

৫। প্রতিটি অংশ পৃথক পৃথকভাবে সনাক্ত করি এবং ঐ অংশের কার্যক্রম সরজমিনে প্রত্যক্ষ করো। 

৬। চিংড়ি প্রজনন কার্যক্রমের পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলোর সাথে হ্যাচারির সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোর সম্পর্ক চিহ্নিত করো।

৭। গৃহীত কার্যক্রমগুলো চিত্রসহ ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করো।

কাজের সতর্কতা

  •  হ্যাচারি পরিদর্শন ও কাজের সময় অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও যথাযথ পোষাক তথা অ্যাপ্রন, পামবুট, হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। 
  • হ্যাচারিতে ব্রুড চিংড়ি বা যন্ত্রপাতি দ্বারা যেন কোন ক্ষতি না হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

আত্মপ্রতিফলন

চিংড়ি হ্যাচারির বিভিন্ন অংশ পর্যবেক্ষণ ও সনাক্তকরণে দক্ষতা অর্জিত হযেছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে

Content added By

পারদর্শিতার মানদন্ড

  • উপকরণ সনাক্ত ও চুড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা।
  • উপকরণ কি কাজে ব্যবহৃত হয় তা করে দেখা।
  • দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজনে উপকরণ ব্যবহার বারবার অনুশীলন করা। 
  •  যন্ত্রপাতির চুড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা।
  •  তালিকা অনুযায়ী শর্ত মোতাবেক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা।
  • একই যন্ত্রপতি একাধিকবার ব্যবহারের অনুশীলন করে দক্ষতা অর্জন করা।

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরজ্ঞাম

মাস্ক

স্যানিটাইজার

অ্যাপ্রন

গামবুট
 

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুপমেন্টস, মেশিন)

মাইক্রোস্কোপ (Microscope)

ব্যালান্স (Balance)

ক্যাথেটার (Catheter) টিস্যু হোমোজেনাইজার (Tissue homogeniser)

সেন্ট্রিফিউজ (Centrifuge)

সিরিঞ্জ (Syringe)

ডিসেক্টিং বক্স (Dissecting box)

থার্মোমিটার (Thermometer)

রিফ্লাক্টোমিটার (Refractometer)

পিএইচ মিটার (pH meter)

অক্সিজেন মিটার (Oxygen meter)

রেফ্রিজারেটর (Refrigerator)

ডিপ ফ্রিজার (Deep freezer )

এ্যারেটর (Aerator)

জেনারেটর (Generator)

বৈদ্যুতিক চুলা (Electric heater)

অক্সিজেন সিলিন্ডার (Oxygen cylinder)

সেকি ডিস্ক (Secchi disk )

প্লাংকটপ গণনাকারী এসআর সেল (Plankton counting SR. cell)

ট্রলি / পিক-আপ

হ্যাক 'স' করাত (Hack saw)

ব্লেন্ডার (Blender)

ডেসিকেটর (Desiccator)

হ্যাক কীট (Hach kit)

(গ) প্রয়োজনীয় মালামাল

একটি সচল চিংড়ি হ্যাচারি

খাতা, পেন্সিল, কলম

প্রয়োজনীয় যানবাহন

 মেজারিং টেপ

(ঘ) কাজের ধারা

১. নিকটস্থ কোনো চিংড়ি হ্যাচারিতে গমন করো।

২. হ্যাচারির বিভিন্ন যন্ত্রপাতিগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করো।

৩. হ্যাচারির বিভিন্ন যন্ত্রপাতিসমূহ পর্যবেক্ষণ কালে এসব যন্ত্রপাতির ব্যবহার বা পরিচালনা সম্বন্ধে হ্যাচারি ব্যবস্থাপকের নিকট থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করো।

৪. হ্যাচারির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লেখ।

কাজের সতর্কতা:

  • হ্যাচারি পরিদর্শন ও কাজের সময় অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও যথাযথ পোষাক তথা অ্যাপণ, গামবুট, হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।
  •  হ্যাচারিতে ব্রুড মাছ বা যন্ত্রপাতি আমার দ্বারা যেন কোন ক্ষতি না হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

আত্মপ্রতিফলন:

চিংড়ি হ্যাচারির বিভিন্ন অংশ পর্যবেক্ষণ ও সনাক্তকরণে দক্ষতা অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।

Content added || updated By

পারদর্শিতার মানদন্ডঃ

  • উপযুক্ত উৎস নির্ধারণ করা।
  • পারদর্শী কর্মীকে নিয়োগ দিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে পোনা সংগ্রহ।
  • পরিবেশবান্ধব সকল সরঞ্জাম ব্যবহার করে পোনা সংগ্রহ।
  • পোনাকে সুষ্ঠুভাবে হস্তান্তর করা।
  •  পরিমাণমত বরফ ও পানি ব্যবহার করা ।
  • প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ করা।

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুপমেন্টস, মেশিন)

(গ) প্রয়োজনীয় মালামাল

ঘ) কাজের ধারাঃ

১। প্রাকৃতিক উৎস থেকে গলদা পোনা সংগ্রহ করো।

২। সংগ্রহের পর সঠিকভাবে গণনা করো।

৩। দুটি পলিথিন ব্যাগের (৩ x ২ ফুট) একটিকে আরেকটির মধ্যে ভরে নাও

৪। এরপর পানি দিয়ে দেখতে হবে কোন ছিদ্র আছে কি না।

৫। ব্যাগে ৪-৫ লিটার পানি ভরে নিতে হবে। পানি ভর্তি ব্যাগে ২-২.৫ হাজার পোনা ছাড়ো।

৬। পোনা ছাড়ার পরই পলিথিন ব্যাগের বাকি অংশ অক্সিজেন দিয়ে পূর্ণ করে ব্যাগের মুখ রাবার ব্যান্ড দ্বারা ভালভাবে আটকে দাও।

৭। আরেকটি পলিথিন ব্যাগে কয়েক টুকরো বরফ দিয়ে তার ভিতর পোনাসহ পলিথিন ব্যাগটি প্রবেশ করাও। 

৮। সবশেষে ইনসুলেটেড বাক্সে পোনাসহ পলিথিন ব্যাগগুলো বসিয়ে বাক্সটিতে আরও কয়েক টুকরো বরফ এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে দাও।

কাজের সতর্কতা-

পানির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

পানির লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

সকাল অথবা বিকালে পোনা পরিবহণ করা উচিত। পরিবহনের আগে পোনাকে খাদ্য সরবরাহ করা যাবে না।

মেঘলা দিনে বা অতিরিক্ত রৌদ্রে পোনা পরিবহন করা উচিত নয়।

পোনা এমনভাবে পরিবহন করতে হবে যাতে এর উপাঙ্গগুলো যথাযথ থাকে।

আত্মপ্রতিফলনঃ

গলদা চিংড়ির পোনা প্যাকিং এবং পরিবহণ কৌশল সম্পর্কে দক্ষতা অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।

Content added By

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন:

১. চিংড়ি হ্যাচারি সাধারনত কয় ভাগে বিভক্ত?

২. চিংড়ির পোনা উৎপাদনের জন্য কত পিপিটি পানি প্রয়োজন?

৩. হ্যাচারিতে ব্যবহৃত স্বাদু পানির মাত্রা কত?

৪. পানি ব্যবস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে গলদা হ্যাচারিকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়?

৫. গলদা হ্যাচারির জন্য ভুগর্ভস্থ পানির পিএইচ-এর মাত্রা কত হতে হবে?

 ৬. ব্রাইনের পরিমাণ নির্ধারণের সূত্রটি লেখ।

৭. হ্যাচারিতে সাধারণত কত ধরনের সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করা হয়?

৮. আর্টিমিয়া সিস্ট থেকে নগ্নি উৎপাদনের পদ্ধতি কয়টি?

৯. গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনায় কত পিপিটি এর ব্রাইন ব্যবহার করা হয়?

 ১০. ব্রাইন সংগ্রহের উপযুক্ত সময় কখন?

১১. বায়োফিল্টারের পানির তাপমাত্রা কত হওয়া উচিত?

১২. বায়োফিল্টারের পানির পিএইচ কত হওয়া উচিত?

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন:

১. হ্যাচিং ট্যাংক বলতে কী বোঝ?

২. কোন কোন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গলদা হ্যাচারি ডিজাইন করা হয় লেখ।

৩. লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংক সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।

৪. আর্টিমিয়া কী?

৫. ডিমওয়ালা চিংড়ি খাপ খাওয়ানো বলতে কী বোঝ?

৬. বাংলাদেশে ব্রাইনের প্রাপ্তিস্থানগুলোর নাম লেখ। 

৭. গলদা হ্যাচারিতে বায়োফিল্টারের কাজগুলো লেখ।

রচনামূলক প্রশ্ন:

১. গলদা হ্যাচারির স্থান নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়গুলো বর্ণনা করো।

২. গলদা হ্যাচারিতে ব্যবহার্য বিভিন্ন ট্যাংকের বর্ণনা দাও। 

৩. গলদা হ্যাচারির হ্যাচিং ট্যাংক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বর্ণনা করো।

৪. গলদা হ্যাচারির লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংকে খাদ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বর্ণনা করো।

৫. লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংক পরিষ্কারকরণ ও জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতি বর্ণনা করো

Content added By

বাণিজ্যিকভাবে পুকুর বা ঘেরে গলদা চিংড়ি চাষের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত সংখ্যক সুস্থ সবল চিংড়ি জুভেনাইল। আর এই জন্য হ্যাচারিতে উৎপাদিত পিএল নার্সারিতে প্রতিপালনের মাধ্যমে জুভেনাইল উৎপন্ন করে চিংড়ি চাবিরা তাদের খামারের পুকুরে বা ঘেরে মজুদ করেন। গলদা চিংড়ির রেণু বা পোস্ট লার্ভা (পিএল)-কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে যত্ন সহকারে ৪৫-৬০ দিন নার্সারি পুকুরে লালন-পালন করে মজুদ পুকুরে ছাড়ার উপযোগী চারা পোনা বা জুভেনাইল উৎপাদন করার পদ্ধতিকে গলদা নার্সারি ব্যবস্থাপনা বলা হয়। চিংড়ি চাষের জন্য নার্সারি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-

  •  নার্সারী পুকুর প্রস্তুত করতে পারব।
  • নার্সারী পুকুরে গলদা চিংড়ি পোনা (পিএল) মজুদ করতে পারব।
  • নার্সারী পুকুরে খাদ্য ও পানি ব্যবস্থাপনা করতে পারব।
  • নার্সারী পুকুর থেকে পোনা আহরণ, স্থানান্তর ও অবমুক্তকর করতে পারব।
Content added By

গলদা চিংড়ি চাষের এলাকা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে গুণগত মানসম্পন্ন জুভেনাইলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য সঠিক নিয়মে নার্সারি পরিচালনা অতীব প্রয়োজন। আধুনিক চিংড়ি চাষে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনের ক্ষেত্রে নার্সারি পুকুরের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ, সবল ও বড় আকারের পোনা এবং পোনার মৃত্যুর হার সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এবং মজুদ পুকুরের উৎপাদন নিশ্চিত করতে নার্সারি পুকুরের প্রয়োজনীয়তা নিচে বর্ণনা করা হলো-

১. সুস্থ ও সবল পোনা উৎপাদন করা যায় এবং পোনার মৃত্যুহার কমানো যায়,

২. অল্প জায়গায় অধিক হারে পোনা মজুদ করে বড় পোনা উৎপাদন করা যায়,

৩. রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত প্রাণির হাত থেকে চিংড়ির পোনাকে রক্ষা করা যায়,

৪. নার্সারি পুকুর আয়তনে ছোট হওয়ায় এর ব্যবস্থাপনা খরচ তুলনামূলকভাবে কম হয়,

৫. নার্সারি পুকুরে পোনা প্রতিপালনের ফলে চিংড়ি চাষির আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকে,

৬. উন্নত ব্যবস্থাপনার কারণে রোগবালাই-এর সম্ভাবনা কম থাকে,

৭. নার্সারি পুকুরে লালনকৃত পোনা খামারে মজুদ করলে চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, এবং 

৮. নার্সারি পুকুরে প্রতিপালিত পোনা খামারে মজুদ করে বছরে ২-৩ টি ফসল উৎপাদন করা যায়।

হ্যাচারিতে উৎপাদিত চিংড়ি পিএল নার্সারিতে প্রতিপালনের মাধ্যমে জুভেনাইল উৎপন্ন করা হয়। চিংড়ি চাষে নার্সারি পুকুর ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম। নার্সারি পুকুর ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ হলো-

১. পানির তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে,

২. পানির পিএইচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে,

৩. প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাচুর্যতা নিশ্চিত করতে হবে,

৪. সঠিক মাত্রায় সম্পূরক খাদ্য প্রয়ণ করতে হবে,

৫. অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, এবং

৬. রাক্ষুসে মাছ ও অন্যান্য অবাঞ্ছিত প্রাণী নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

Content added By

গলদা নার্সারি পুকুরে রেণু বা পিএল ছাড়ার পর দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধির মাধ্যমে এরা সুস্থ ও সবল জুভেনাইল-এ পরিণত হয়। অল্প গভীরতা সম্পন্ন জলাশয় রেণু বা পিএল প্রতিপালনের জন্য নার্সারি পুকুর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পিএল বড় হওয়ার সাথে সাথে এদের বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়। গলদার নার্সারি কার্যক্রমে এক স্তর পদ্ধতিতে এর ব্যবস্থাপনা করা হয়।

Content added By

কার্প জাতীয় রেণু পোনার নার্সারি পুকুর প্রস্তুতির মতই গলদা নার্সারি প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। পিএল মজুদের উপযোগী নার্সারি পুকুর প্রস্তুতি কাজের ধাপগুলো নিচে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো।

ক) আগাছা পরিষ্কার ও পাড় সংস্কার এবং পাড়ের উপর ডালপালা পরিষ্কার,

খ) রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূরীকরণ,

  • পুকুর উত্তমরূপে শুকিয়ে তলার কাদা অপসারণ করতে হবে, অথবা 
  • ৯.১% শক্তি সম্পন্ন রোটেনন পাউডার ২৫ গ্রাম/শতাংশ/ফুট পানিতে প্রয়োগ করতে হবে এবং এর বিষক্রিয়া ৭ দিন পর্যন্ত বজায় থাকে।

গ) চুন প্রয়োগ: ১ কেজি পাথুরে চুন/শতাংশ হারে প্রয়োগ করতে হবে;

ঘ) সার প্রয়োগ: প্রতি শতাংশে জৈব সার ১০ কেজি, ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম ও টিএসপি ৭৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।

Content added By

গলদা চিংড়ির পিএল-এর দৈহিক বৃদ্ধি প্রক্রিয়া ভিন্নতর। চিংড়ির পিএল খোলস বদলানোর মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। খোলস বদলের সময় চিংড়ি অত্যন্ত দুর্বল থাকে। এ সময় সবল চিংড়ি অর্থাৎ যেগুলো খোলস বদলায় না সেগুলো দুর্বল গুলোকে খেয়ে ফেলতে পারে। এজন্য চিংড়ি নার্সারি ব্যবস্থাপনায় আশ্রয়স্থল স্থাপনের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, যাতে অন্য কোন প্রাণী বা চিংড়ি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশংকা না থাকে। পুকুরের তলার কিছু জলজ উদ্ভিদ থাকলে (হাইড্রিলা, নাজাস) তা চিংড়ির আশ্রয়স্থল হিসেবে ভাল কাজ করে।

Content added By
  • শুকনো ভাল বা নারিকেলের পাতা/খেজুরপাতা,
  • বাঁশের কঞ্চি/বাঁশের চোঙ্গা,
  • প্লাস্টিকের ফাঁপা পাইপ,
  • ভাঙা কলসের অংশ, ও
  • গাছের ডাল (হিজল গাছের ডাল উত্তম)
Content added || updated By

ভাল বা নারিকেলের পাতা এমনভাবে পুকুরের মাটিতে পুঁতে দিতে হবে যাতে পাতার অংশ মাটি থেকে একটু উপরে থাকে। এ ক্ষেত্রে তাল বা নারিকেলের পাতা কোনাকোনি (৪৫) কোনে পুঁতে দিলে আশ্রয়স্থল হিসেবে বেশি জায়গা পাওয়া যাবে এবং পাতাগুলো মাটির উপর থাকলে সহজে পচবে না। বাঁশের কঞ্চি আঁটি বেঁধে অথবা প্লাস্টিকের পাইপ পৃথক পৃথকভাবে পুকুরের তলায় মাটির উপর রেখে দিলে ভাল হয়। খেজুরের পাতা ও আঁটি করে বেঁধে দেয়া যায়।

Content added By

পিএল মজুদের ১-২ দিন আগে তাল, নারিকেল বা খেজুর পাতা প্রতি শতাংশে ১-২ টি হিসেবে স্থাপন করতে হবে। অন্যান্য উপকরণগুলো আনুপাতিক হারে ব্যবহার করতে হবে।

Content added By

গলদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভি বা পিএল দেখতে অবিকল বড় চিংড়ির মত তবে আকারে অনেক ছোট। পিএল- এর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো-

১. পিএল-এর চেহারা ও আচরণ লার্ভা থেকে পৃথক

২. পিএল দেখতে পূর্ণাঙ্গ চিংড়ির মতো দেখায় যারা সম্মুখ দিকে চলাচল করে

৩. পিএল ট্যাংকের দেয়াল বা মেঝেতে আঁকড়ে থাকে।

চিত্র: ৩.১৪ গলদা চিংড়ির পিএল

Content added By

১. সুস্থ সবল পিএল এর এন্টিনিউল সোজা সম্মুখদিকে বিস্তৃত থাকে এবং পুচ্ছ পাখনা (uropode) সুন্দরভাবে থাকে,

২. সুস্থ সবল পিএল-এর পরিপাকনালী সর্বদা খাদ্যে পরিপূর্ণ থাকে এবং উদরাঞ্চলের পেশীসমূহ সুগঠিত থাকে,

৩. সুস্থ সবল এবং উন্নতমানের পিএল-এর শরীর স্বচ্ছ, মসৃণ ও পরিষ্কার থাকে

৪. সুস্থ সবল পিএল এর শরীর ক্ষতবিক্ষত থাকে না এবং উপাঙ্গসমূহ অসম্পূর্ণ বা কাটাছেঁড়া থাকে না এবং

৫. দেখতে পূর্ণাঙ্গ চিংড়ির মত, তারা চলার দিক পাল্টিয়ে সম্মুখের দিকে চলতে শুরু করে ট্যাংকের দেয়াল আঁকড়ে থাকে।

Content added By

১. রং নীলাভ বা কালচে ধরনের,

২. খাবারের প্রতি অনীহা পরিলক্ষিত হয় অর্থাৎ খাবার গ্রহণ করতে চায় না,

৩. ট্যাংকের তলায় পড়ে থাকতে দেখা যায়, এবং

৪. নিম্নমুখী আঁকা বাঁকা পথে এলোমেলোভাবে সাঁতরায়।

পিএল গণনা: পিএল ট্যাংক থেকে স্কুপনেট অথবা ছাঁকুনির সাহায্যে পিএল গণনার সাদা চামুচে নিয়ে চামুচে পিএল এর সংখ্যা গণনা করা হয়। এভাবে কয়েকটি নমুনায়ন করে এক চামুচে পিএল-এর গড় সংখ্যা নির্ধারণ করে এবং এ সংখ্যার উপরে ভিত্তি করে প্রতিটি পলিথিন প্যাকেটে পিএল নিতে হবে এবং পরিবহন করতে হবে। পিএল-এর আকারের ওপর প্রতিটি পলিথিন ব্যাগে পিএল নেওয়ার সংখ্যা নির্ভর করে।

Content added By

অক্সিজেনযুক্ত পলিথিন ব্যাগে পিএল প্যাকিং ও পরিবহন করা হয়। পলিথিন ব্যাগে পিএল প্যাকিং করার পদ্ধতি নিম্নরূপ-

  • পিএল প্যাকিং এর কাজে দুইটি পলিথিন ব্যাগ একটির ভেতরে আরেকটি ব্যবহার করতে হবে;
  •  প্রতিটি পলিথিন ব্যাগের আকার ৩৬"x২০" হওয়া দরকার
  •  ভিতরের পলিথিন ব্যাগটির দুইটি কোণা রাবার ব্যান্ড দিয়ে বাঁধতে হবে যেন ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে পোনা মারা যেতে না পারে
  • পলিথিন ব্যাগের এক-তৃতীয়াংশ ৪-৫ লিটার পানি দ্বারা পূর্ণ করতে হবে। এ পানির গুণাগুণ পিএল ট্যাংকের পানির গুণাগুণের অনুরূপ হতে হবে
  • পলিথিন ব্যাগে নির্দিষ্ট পরিমাণ পিএল নেওয়ার পরে এর বাকি দুই-তৃতীয়াংশ অক্সিজেন দ্বারা পূর্ণ করতে হবে
  • পর্যায়ক্রমে দুইটি পলিথিন ব্যাগের মুখ গার্ডার বা সুতলি দিয়ে ভাজ করে বাঁধতে হবে, এবং
  • পরিবহনে বেশি সময়ের প্রয়োজন হলে তাপমাত্রা সহনীয় অবস্থায় রাখার জন্য রাতে পরিবহণ করা ভালো।

তবে জাইরোফোমের বাক্সে পলিথিন ব্যাগ পরিবহন করা হলে পিএল-এর পানির তাপমাত্রা বাহ্যিক তাপমাত্রার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে। পরিবহনকালীন সময়ের উপর নির্ভর করে প্রতি ব্যাগে ১,০০০-৩,০০০টি পিএল পরিবহন করা যেতে পারে। পরিবহনকালীন সময়ের উপর নির্ভর করে প্রতি লিটার পানিতে কি পরিমাণ পিএল পরিবহন করা যায় তা নিচে ছক আকারে উল্লেখ করা হলো-

ক্রম পরিবহনকালীন সময় (ঘন্টা)পিএল-এর সংখ্যা/লিটার
১ ঘন্টা৫০০-৬০০
৪ ঘন্টা৪০০-৫০০
৮ ঘন্টা৩০০-৪০০
১২ ঘন্টা২৫০-৩০০
১২ ঘণ্টার বেশি২৫০-২০০

গলদা চিংড়ি চাষের এলাকা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে গুণগত মানসম্পন্ন জুভেনাইলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য নার্সারি পরিচালনায় উদ্যোক্তা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সম্প্রসারণমূলক কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

Content added || updated By

নার্সারি পুকুর ব্যবস্থাপনার উপর ভিত্তি করে পুকুরে পিএল মজুদ ঘনত্ব নির্ধারণ করা হয়। পুকুরে শুধু সার ব্যবহারে মজুদ ঘনত্ব কিছু কম এবং সার ও খাদ্য দুই-ই ব্যবহারে মজুদ ঘনত্ব কিছু বেশি হতে পারে। আবার পুকুরে পানি বদল ও বায়ু সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকলে মজুদ ঘনত্ব আরও বেশি হবে। উল্লিখিত বিষয়সমূহ বিবেচনায় শুধু প্রাকৃতিক খাদ্য, মানসম্মত সম্পূরক খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা সময়ের ওপর নির্ভর করে শতাংশ প্রতি মজুদ ঘনত্ব কম বেশি করা যায়। নার্সারি পুকুরে প্রতি শতাংশে পিএল মজুদ ঘনত্ব হলো- এক মাস ব্যাপী মজুদের ক্ষেত্রে ২,০০০-৩,০০০ টি এবং দুই মাস ব্যাপী মজুদের ক্ষেত্রে ১,৫০০-২,০০০ টি।

পরিবেশের তাপমাত্রা ও অক্সিজেনের তারতম্যের কারণে মজুদের পর পিএল ব্যাপক হারে মারা যেতে পারে। পুকুরে ছাড়ার আগে এদেরকে নতুন পরিবেশের সাথে সহনশীল করে নিলে এ মৃত্যুহার অনেকাংশে রোধ করা যায়। পরিবহন পাত্রে পানির তাপমাত্রা ও পুকুরের পানির তাপমাত্রায় সমতা আনয়নই হচ্ছে পরিবেশ সহনশীলকরণ বা খাপ খাওয়ানো। নতুন পরিবেশের সাথে সহনশীল করে নার্সারি পুকুরে পিএল ছাড়ার ধারাবাহিক কাজগুলো নিম্নরূপ-

  •  নার্সারি পুকুর পাড়ে পিএল এর ব্যাগের ভিতর দুই প্যাকেট ওরস্যালাইন বা ১০০ গ্রাম গ্লুকোজ দিতে হয়
  •  যে পাত্রেই পরিবহন করা হউক না কেন তা ১৫-২০ মিনিট পুকুরের পানিতে ভাসিয়ে রাখতে হবে
  • পুকুরে ভাসমান অবস্থায় তলার অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা পানি হাত দিয়ে ওপরে তুলে পলিথিন ব্যাগের ওপর বৃষ্টির মতো ছিটাতে হবে
  • এরপর হাত দ্বারা পরিবহন পাত্র এবং পুকুরের পানির তাপমাত্রার ব্যবধান পরীক্ষা করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন দুই অবস্থায় পানির ভাপমাত্রার ব্যবধান ১-২ সে. এর বেশি না হয
  • পরিবহন পাত্র ও পুকুরের পানির তাপমাত্রা সমান না হওয়া পর্যন্ত জান্তে জান্তে পাত্র ও পুকুরের পানি অদল বদল করে পানির তাপমাত্রায় সমতা আনতে হবে, এবং  
  • উভয় পানির তাপমাত্রা সমান হলে পাত্রের মুখ কাত করে ধরে বাইরে থেকে ভেতরের দিকে স্রোতের ব্যবস্থা করতে হবে। এ অবস্থায় সুস্থ, সবল পিএল স্রোতের বিপরীতে ধীরে ধীরে বাইরে চলে যাবে

চিত্র: ৩.২ চিংড়ির পিএল অবমুক্ত করণ।

পাড়ের কাছাকাছি অল্প গভীরতায় মের বা পুকুরের যেখানে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে পিএল ছাড়তে হবে। গলদা নার্সারি পুকুরে বিকেলে পিএল মজুদ করা সবচেয়ে ভালো। এ সময় পিএল মজুদ সম্ভ না হলে সকালেও মজুদ করা যেতে পারে। এ ছাড়াও ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় দিনের যে কোনো সময়ে নার্সারি পুকুরে পিএল ছাড়া যেতে পারে। তবে দুপুরের কড়া রোদ, মেঘনা দিন বা ভ্যাপসা আবহাওয়ায় (বিশেষত নিম্নচাপের দিনে) পুকুরে গলদার পিএল ছাড়া উচিত নয়। 

Content added By

পিএল গলদা নার্সারি পুকুরে মজুদের পর বিভিন্ন কারণে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে মজুদকৃত পিএল মারা যেতে পারে। সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-

  • পরিবহনজনিত পীড়ন,
  • শারীরিক আঘাত
  •  পানির বিষক্রিয়া,
  •  হঠাৎ করে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং
  • ক্ষতিকর কীট পতঙ্গের আক্রমণ, যেমন- ক্লাডোসেরা, কপিপোড।

হ্যাচারিতে উৎপাদিত পিএল-এর পুকুরের পানির লবণাক্ততার সাথে খাপ খাওয়ানোতে হাপা ব্যবহার করা যায়। এ ক্ষেত্রে একটি ৬x৪ ঘনফুট সাইজের হাপা পুকুরের পানির বেশি গভীর স্থানে স্থাপন করতে হবে। পিএল এর পুকুরের পানিতে খাপ খাওয়ানো শেষে পানিতে ছাড়ার পূর্বে ১০০টি পোনা হাফায় রাখতে হবে এবং ১২ ঘণ্টা পর পর পিএল-এর সংখ্যা গননা করে দেখতে হবে। যদি দেখা যায় ২৪ ঘণ্টা পর ৭০-৮০ ভাগ পিএল বেঁচে আছে তবে ধরে নিতে হবে বাঁচার হার সন্তোষজনক। বাঁচার হার সন্তোষজনক হলে পুকুরে নিয়মিত সার ও খাদ্য প্রয়োগসহ অন্যান্য পরিচর্যার ব্যবস্থা নিতে হবে। আর যদি বাঁচার হার সন্তোষজনক না হয় তা হলে পিএল মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পর পুনরায় আংশিক বা নতুন করে মজুদ করতে হবে। 

Content added By

প্রতি শতকে ৮০০-১,০০০টি পিএল মজুদ করা যায়। নিচে ১,০০,০০টি পিএল এর জন্য উল্লিখিত মাত্রায় গুণগত মান সম্পন্ন পিলেট খাবার প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

এ ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে তৈরি পিলেট হিসেবে বাজারে প্রাপ্ত স্টার্টার-১ বা নার্সারি-১ প্রথম মাসে এবং স্টার্টার-২ বা নার্সারি-২ দেহের ওজনের ভিত্তিতে খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে।

Content added By

গলদা চিংড়ি সাধারণত আলো আঁধারিতে খেতে বেশি পছন্দ করে। সে কারণে সূর্যোদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের সাথে সাথে খাদ্য প্রয়োগ করা উত্তম। তাছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী দুপুরে ও রাত্রেও আনুপাতিক হারে খাদ্য প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে সূর্যাস্তের সময় প্রয়োগকৃত খাবারের পরিমাণ বেশি হতে হবে।

Content added By

প্রতিদিন ফিডিং ট্রে-তে খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। কাঠ, বাঁশ, টিন অথবা সিনথেটিক নেট দ্বারা ফিডিং ট্রে বা খাদ্যদানী তৈরি করা যেতে পারে। পুকুরের আকার অনুযায়ী ফিডিং ট্রে-এর পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত এক বিঘা আয়তনের একটি পুকুরের জন্য ৭-৮ টি ট্রে ব্যবহার করা উত্তম। ট্রে সাধারণত পাড়ের বকচর অথবা পুকুরের ঢালে স্থাপন করতে হয়।

Content added By

নার্সারি পুকুরে জোয়ারের সময়ে আংশিক এবং পাম্প মেশিনের সাহায্যে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তনের মাধ্যমে পানি ব্যবস্থাপনা বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে জোয়ারের সময় অথবা পাম্প মেশিনের সাহায্যে জলাধারে পানি পূর্ণ করে রাখা হয় এবং প্রয়োজনানুসারে পরিমাণমতো পানি নার্সারি পুকুরে সরবরাহ করা হয়। নার্সারি পুকুরের পানির গুণাগুণ ঠিক রাখার জন্য পুকুরের পানি প্রতিদিন প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করা ভাল। নার্সারি পুকুরে পানির গুণাগুণ নিম্নরূপ হওয়া দরকার।

উপাদানমাত্রা
তাপমাত্রা২৫°-৩১° সে
দ্রবীভূত অক্সিজেন৫-৭ পিপিএম
পিএইচ৭.০-৮.৫
স্বচ্ছতা২৫-৩৫ সে. মি
লবণাক্ততা০-৪ পিপিটি (গলদা)

 

Content added By

পিএল মজুদের পর প্রতিদিন পুকুর বা ঘের পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পানির রং হালকা সবুজ রাখার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রয়োজনে সার ব্যবহার করতে হবে। চিংড়ি খুব সকালে পাড়ের কিনারে চলে আসলে বুঝতে হবে পুকুরে অক্সিজেন ঘাটতি আছে। অক্সিজেন সরবরাহের জন্য অ্যালুমিনিয়ামের পাতিল দিয়ে ঢেউ নিতে হবে অথবা বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে পানি আন্দোলিত করতে হবে। প্রয়োজনে বাইরে থেকে দূষণমুক্ত নতুন পানি সরবরাহ করতে হবে। শতক প্রতি ১৫০ গ্রাম হারে এমপি সার প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। বিক্রির উপযোগী হলে জুভেনাইল বিক্রি করতে হবে অথবা ঘনত্ব কমিয়ে দিতে হবে।

Content added By

কমফাঁসের বেড়াজাল, ব্যাগনেট, স্কুপনেট, প্লাস্টিক গামলা ইত্যাদির সাহায্যে নার্সারি পুকুর থেকে শতকরা ৯০ ভাগ চিংড়ি জুভেনাইল ধরা যায়। বাকি চিংড়ি জুভেনাইল পানি শুকিয়ে ধরা হয়। জোয়ার ভাটা এলাকায় সে ক্ষেত্রে জোয়ার আসার দুই তিন ঘন্টা পূর্বে পুকুরের পানি কিছুটা কমিয়ে নিতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে জোয়ারের সময় পুকুরে পানি ঢুকানোর সময় বড় পোনা পানি সরবরাহ খালের নিকট চলে আসে এবং সেসময়েও হারভেষ্টিং বক্স দ্বারা কিছু জুভেনাইল ধরা যেতে পারে। এই হারডেষ্টিং বক্স থেকে প্লাস্টিক বালতি দিয়ে পোনা সংগ্রহ করা হয় এবং সংগৃহীত পোনা থেকে সুস্থ ও সবল চিংড়ি জুভেনাইল বাছাই করে নিয়ে মজুদ পুকুরে স্থানান্তর করা হয়। আবার অনেক সময় মজুদ পুকুর সংলগ্ন নার্সারি পুকুরের সংযোগ খালের মুখ খুলে দিলে সরাসরি পোনা মজুদ পুকুরে চলে যায়।

Content added By

তোমার প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি যে কোন চিংড়ি খামার পরিদর্শন কর যেখানে চিংড়ি নার্সারিতে ব্যাবহারের জন্য লার্ভা চিংড়ি পালন করা হয়। এর কর্ম পরিবেশ ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয়ে নিম্নোক্ত ছকে তোমার মতামত দাও।

পরিদর্শনকৃত চিংড়ি খামারের নাম 
ঠিকানা  
কী কী উপায়ে পুকুর প্রস্তুত করা হয়? 
পোস্ট লার্ভা মজুদের সময় কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা হয়? 
খামারে কর্মী সংখ্যা কত? 
কর্মীগণ কাজের সময় কী কী ব্যক্তিগত সরঞ্জাম ব্যবহার করে। 
চিংড়ি নার্সারির কর্মপরিবেশ সম্পর্কে মতামত দাও 
তোমার নাম
শ্রেণি
রোল নং
প্রতিষ্ঠানের নাম
শ্রেণি শিক্ষকের নাম
 
প্রতিবেদন জমাদানের তারিখশিক্ষকের স্বাক্ষর
Content added By

চিংড়ি খামারে নিরাপদ কাজ করতে তোমরা কোন কাজে কী ধরণের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিবে তা ছকে লিখ। 

ক্রম কাজের নামনিরাপত্তামূলক গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ
১ লার্ভা উৎপাদনপুকুরে অবশ্যই রাক্ষুসে মাছ মুক্ত হতে হবে
  
 
 
Content added By

পারদর্শিতার মানদন্ড
• স্বাস্থ্যবিধী মেনে সুরক্ষা পোশাক পরিধান করা
• চিংড়ি নার্সারির বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করা।
চিংড়ি নার্সারির কোন অংশের কি কাজ তা করে শেখা।
• শ্রেণি বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে এটা কোন ধরনের নার্সারি তা নির্ণয় করা।
দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজনে বিভিন্ন অংশের কাজগুলো বারবার অনুশীলন করা ।

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম

মাক্ষ

গ্রাভস্

স্যানিটাইজার

অ্যাপ্রন

গামবুট

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুপমেন্টস, মেশিন)

পি এইচ মিটার

অক্সিজেন মিটার

থার্মোমিটার

পাওয়ার টিলার

(গ) প্রয়োজনীয় মালামাল

চুন

জৈব সার

ইউরিয়া সার

টি এস পি সার

পেন্সিল

খাতা

(ঘ) কাজের ধারা

১. উপকূলীয় অঞ্চলের চিংড়ি চাষ এলাকায় কোনো নার্সারি পুকুরে গমন করো।

২. নার্সারি পুকুরের তলদেশ ২-৫ সপ্তাহ সূর্যালোকে শুকিয়ে নিতে হবে।

৩. পুকুরের তলদেশ লাংগল বা ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করে মাটির পিএইচ অনুযায়ী চুন প্রয়োগ করতে হবে।

৪. চুন প্রয়োগের ৪/৫ দিন পর ৮০০-১,০০০ কেজি/একর জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।

৫. এরপর একর প্রতি ২০ কেজি ইউরিয়া ও ৩৮ কেজি টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে ।

৬. সার প্রয়োগের পর ৬ ইঞ্চি পানি প্রবেশ করিয়ে ১০-১২ দিন অপেক্ষা করতে হবে। 

৭. অতঃপর পানির গভীরতা ২-৩ ফুট বাড়াতে হবে।

৮. পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য না জন্মালে পুনরায় ৮ কেজি/একর ইউরিয়া সার এবং ২০ কেজি/একর টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে। এর পর ৫-৬ দিন অপেক্ষা করতে হবে।

৯. নার্সারি পুকুর প্রস্তুতির ধাপগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করো।

১০. ব্যবহারিক খাতায় নার্সারি পুকুর প্রস্তুতির ওপর প্রতিবেদন লেখ।

কাজের সতর্কতা:

  •  নার্সারি পুকুর প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ ও কাজের সময় অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও যথাযথ পোষাক তথা এ্যাপ্রোন, গামবুট, হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।
  •  নার্সারিতে যন্ত্রপাতি আমার দ্বারা যেন কোন ক্ষতি না হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
  •  চুন ও সার প্রয়োগের সময় মুখে মাক্স পরিধান করতে হবে।

আত্মপ্রতিফলন:

চিংড়ি নার্সারি পুকুর প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ ও সনাক্তকরণে দক্ষতা অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।

Content added By

পারদর্শিতার মানদন্ড

  • স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুরক্ষা পোশাক পরিধান করা 
  • চিংড়ি নার্সারির বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করা
  •  চিংড়ি নার্সারির কোন অংশের কি কাজ তা করে শেখা
  •  শ্রেণি বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে এটা কোন ধরনের নার্সারি তা নির্ণয় করা।
  • দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজনে বিভিন্ন অংশের কাজগুলো বারবার অনুশীলন করা।

(ক) ব্যাক্তিগত সুরক্ষা সরজ্ঞাম

মাক্ষ
স্যানিটাইজার
অ্যাপ্রন
গামবুট

(খ) প্রয়োজনীয় মালামাল

পলিথিন ব্যাগ
স্বচ্ছ পানি
পোনা
মগ
গামলা

(গ) কাজের ধারা

১। নিকটস্থ কোন বাজার থেকে বড় আকারের ২টি পলিথিন ব্যাগ সংগ্রহ করো।

২। এবার নিকটবর্তী কোন হ্যাচারিতে গমন করো।

৩। একটি পলিথিন ব্যাগকে আর একটি পলিথিন ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে ব্যাগ দুটিকে একত্রিত করে এর ভিতরে ৪/৫ লিটার পানি রাখো । 

৪। এবার পলিথিন ব্যাগের পানিতে ৩-৪ হাজার চিংড়ির পোনা রেখে এতে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করো।

৫। পলিথিন ব্যাগ অক্সিজেন পূর্ণ হলে অক্সিজেন সিলিন্ডারের নলটি ব্যাগ থেকে বের করে দিয়ে ব্যাগের মুখ রাবার ব্যান্ড দিয়ে ভালোভাবে বাঁধ যেন অক্সিজেন বের না হয়ে যায়। 

৬। অতঃপর পলিথিন ব্যাগের নিচের দুই কোণা রাবার ব্যান্ড দিয়ে বাঁধ যাতে পানি ও অক্সিজেনের চাপে ব্যাগ ফেটে না যায়।

৭। এবার ব্যবহারিক খাতায় প্যাকিং পদ্ধতিটি ধারাবাহিক ভাবে লেখ।

কাজের সতর্কতা:

  • গলদা চিংড়ি পি এল পরিবহনের জন্য প্যাকিং অনুশীলন ও কাজের সময় অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও যথাযথ পোষাক তথা এ্যাপ্রোন, গামবুট, হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।
  • নার্সারিতে পোনার আমার দ্বারা যেন কোন ক্ষতি না হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
  •  অক্সিজেন পলিথিনে ঢোকানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন ফেটে না যায়।

আত্মপ্রতিফলন:
চিংড়ি নার্সারিতে পি এল প্যাকিং ও পরিবহনের দক্ষতা অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।

Content added By

পারদর্শীতার মানদন্ড

  • যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পিপিই/অ্যাপ্রন ও পোশাক পরিধান করা।
  • প্রয়োজন অনুযায়ী নার্সারি পুকুর প্রস্তুত করা।
  • পুকুরের আয়তন অনুসারে পোষ্ট লার্ভার পরিমাণ নির্ধারণ করা।
  •  নির্ধারিত পরিমাণ পোস্ট লার্ভা সংগ্রহ করা।
  • ভালো ও খারাপ লার্ভা শণাক্ত করা। .
  • ভালো মানের লার্ভা নার্সারি পুকুরে মজুদ করা। .
  • পুকুরের পানি ও প্যাকেট/ড্রামের পানি খাপ খাওয়ানো। অব্যবহৃত মালামাল নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করা
  • কাজের শেষে ব্যবহৃত টুলস ও যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করে যথাযথ স্থানে সংরক্ষণ করা।

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুপমেন্টস, মেশিন)

(গ) প্রয়োজনীয় মালামাল

ঘ) কাজের ধারাঃ

১। প্লাস্টিক ব্যাগ বা পাতিলে করে আনা গলদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভা ছায়াযুক্ত শীতল স্থানে রাখো।

২। প্লাস্টিক ব্যাগের বা পাতিলের পানির তাপমাত্রা ও নার্সারি পুকুরের পানির তাপমাত্রা থার্মোমিটার দিয়ে মেপে নাও।

৩। প্লাস্টিক ব্যাগ বা পাতিলের ও পুকুরের পানির তাপমাত্রার ব্যবধান ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে আস্তে আস্তে পুকুরের পানি নিয়ে পাতিলের পানিতে মিশাও এবং ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করো।

৪। এরপর পাতিল থেকে ২০% পানি ফেলে দিয়ে নার্সারি পুকুরের পানি নিয়ে পাতিল ভর্তি কর এবং ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করো।

৫। প্লাস্টিক ব্যাগ বা পাতিলের পানির তাপমাত্রা পুকুরের পানির তাপমাত্রার সমান হলে প্লাস্টিক ব্যাগ বা পাতিলের মুখ নার্সারি পুকুরের পানিতে কাত করে ব্যাগের বা পাতিলের ভিতর হাত দিয়ে পানির স্রোত সৃষ্টি করো।

৬। গলদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভাগুলো প্লাস্টিকের ব্যাগ বা পাতিল থেকে স্রোতের বিপরীতে লার্ভাগুলো বেরিয়ে যেতে দাও।

৭। এরপর পাতিল দিয়ে পুকুরের পানিতে ঢেউ সৃষ্টি করো।

৮। পোস্ট লার্ভার সঠিক পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য নমুনা হিসেবে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ বা পাতিলের পোস্ট লার্ভা পপনা করো।

৯। সম্পূর্ণ অনুশীলনটি ধৈর্য্য সহকারে কর এবং ব্যবহারিক খাতায় লেখ।

সতর্কতা-

  • পাতিলের পানির তাপমাত্রা ও নার্সারি পুকুরের পানির তাপমাত্রার মধ্যে অনেক ব্যবধান থাকলে পোস্ট লার্ভার মৃত্যুর হার বেড়ে যেতে পারে তাই এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • কোনো মেঘলা দিনে অথবা বেশি রৌদ্রের সময় পুকুরে চিংড়ির পোস্ট লার্ভা ছাড়া যাবে না।
  • সকাল বেলা বা বিকাল বেলা পোস্ট লার্ভা পুকুরে ছাড়া উত্তম।
  • চিংড়ির পোস্ট লার্ভা মজুদ করার সময় লার্ভার চাপমুক্ত অবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

আত্মপ্রতিফলন

নার্সারি পুকুরে গলদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভা মজুদ করার বিষয়ে দক্ষতা অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।

Content added By

পারদর্শিতার মানদন্ড

  •  স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা (পিপিই) ও শোভন পোষাক পরিধান করা
  • প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের স্থান প্রস্তুত করা।
  • কাজের প্রয়োজন অনুযায়ী টুলস, ম্যাটেরিয়াল ও ইকুইপমেন্ট নির্বাচন এবং সংগ্রহ করা প্রয়োজন অনুযায়ী নার্সারি পুকুরে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করার জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল সংগ্রহ করা 
  • কাজ শেষে কাজের স্থান পরিষ্কার করা .
  • অব্যবহৃত মালামাল নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করা এবং
  • কাজের শেষে চেকলিষ্ট অনুযায়ী ব্যবহৃত টুলস ও যন্ত্রপাতি ভালভাবে ধুয়ে মুছে নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করা

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম হ্যান্ড গ্লাভস্

গামবুট
অ্যাপ্রন
পিপিই
ফাষ্ট এইড বক্স
মাস্ক

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুইপমেন্টস, মেশিন)

কাঁচের বিকার
স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাস
মগ
বালতি
গামলা
ওজন মেশিন
প্ল্যাংকটন নেট
সেকি ডিস্ক
থার্মোমিটার
স্প্রিং ব্যালেন্স

 

(গ) কাঁচামাল

সম্পূরক খাবার

ডিটারজেন্ট

সাবান

(ঘ) কাজের ধারা

১। নার্সারি পুকুরে পিত্রলকে সম্পূরক খাবার দেওয়ার জন্য হাপা টেনে পুকুরের লালনকৃত পিত্রলের নমুনা সংগ্রহ করা।

২। সংগৃহিত নমুনা হতে পুকুরের মোট পিত্রলের ওজন নির্ধারণ করো।

৩। পিত্রলের ওজন নির্ধারণ করার পর নির্ধারিত ছক মোতাবেক সম্পূরক খাবারের পরিমাণ নির্ণয় করো।

৪। পুকুরের প্রাকৃতিক খাবারের প্রাচুর্যতা নিরুপণের জন্য সেকি ডিস্ক, প্লাংকটন নেটের সাহায্য প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করো।

৫। পুকুরের পানির তাপমাত্রা পরিমাপ করো।

৬। সকল জৈব, ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলী নিরীক্ষার পর পুকুরে প্রয়োগের জন্য পিত্রলের খাবার পুন: নির্ধারণ করো।

৭। পরিমাপকৃত পিত্রলের খাবার পুকুরে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী প্রদান করো।

৮। সমগ্র প্রক্রিয়া শেষে ব্যবহৃত উপকরণ সমূহ পরিষ্কার করে যথাস্থানে রাখো।

কাজের সতর্কতা:

  • সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগের সময় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে প্রয়োগকৃত খাদ্যে প্রোটিনের পরিমাণ সঠিক মাত্রায় আছে কী না
  • পুকুরে চিংড়ির পোনার মোট ওজন সঠিকভাবে পুনঃ নির্ধারণ করা হয়েছে কী না তা খেয়াল রাখতে হবে
  • তাছাড়া প্রয়োগকৃত খাদ্য পুকুরের তলদেশে জমা হচ্ছে কী না তা খেয়াল রাখতে হবে।

আত্মপ্রতিফলন:

প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা সর্বোচ্চ ব্যবহার করে নার্সারি পুকুরে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগের দক্ষতা যথাযথভাবে অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।

Content added By

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন:

১. গলদা চিংড়ি পিএল নার্সারি পুকুরে কত দিন লালন-পালন করা হয়?

২. গলদা চিংড়ির নার্সারি পুকুর প্রস্তুতকালে প্রতি শতাংশে কী পরিমাণ চুন প্রয়োগ করা হয়।

৩. গলদা চিংড়ির নার্সারি পুকুর প্রস্তুতির সময় সার প্রয়োগের মাত্রা কত?

৪. চিংড়ি নার্সারি পুকুরে প্লাস্টিকের ফাঁপা পাইপ ব্যবহার করা হয় কেন?

৫. এক মাস ব্যাপী মজুদের ক্ষেত্রে নার্সারি পুকুরে পিএল মজুদের ঘনত্ব কত? 

৬. দুই মাস ব্যাপী মজুদের ক্ষেত্রে নার্সারি পুকুরে পিএল মজুদের ঘনত্ব কত?

৭. গলদার নার্সারি পুকুরে কোন সময় খাদ্য প্রয়োগ করা উচিত? 

৮. এক বিঘার গলদা চিংড়ির নার্সারি পুকুরে কয়টি খাদ্যদানী ব্যবহার করা উচিত?

৯. গলদার সুস্থ লার্ভা কত দিন পর্যন্ত পানির উপরের স্তরে অবস্থান করে?

১০. গলদার অসুস্থ লার্ভার রং দেখতে কেমন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন

১. গলদা চিংড়ির নার্সারি ব্যবস্থাপনা বলতে কী বোঝ?

২. গলদা চিংড়ির নার্সারি পুকুরের দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ। 

৩. গলদা চিংড়ির পিএলএর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য লেখ।

৪. গলদা চিংড়ির পিএল গণনা পদ্ধতি সংক্ষেপে লেখ।

৫. অসুস্থ লার্ভার বৈশিষ্ট্যগুলো লেখ।

রচনামূলক প্রশ্ন 

১. গলদা চিংড়ির নার্সারি পুকুরে আশ্রয়স্থল স্থাপন পদ্ধতি বর্ণনা করো।

২. গলদা পিএল প্যাকিং ও পরিবহন পদ্ধতি বর্ণনা করো।

৩. গলদা চিংড়ির পিএল মজুদকরণ ও অবমুক্ত করণ পদ্ধতি বর্ণনা করো।

Content added || updated By

জীবনমাত্রই নানা প্রকার রোগ-ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। তাই চিংড়ির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্র হয় না। সাধারণত চিংড়ি পুকুরে পরিবেশের ভারসাম্য অবস্থায় বসবাস করে। এই পরিবেশের যে কোনো পরিবর্তনের ফলে বা ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে এই ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পড়ে। ফলে চিংড়ির দেহে পরিবেশগতভাবে নানা ধরনের চাপ পড়ে এবং রোগজীবাণু রুত বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। দূষিত পানি, অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা প্রভৃতি কারণে চিংড়ির পুকুরের পরিবেশের ওপর চাপ পড়ে। এর ফলে চিংড়িতে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। আধুনিক চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণের পূর্বে চিংড়ির রোগবালাই চেনার উপায়, কারণ নির্ণয়, প্রতিরোধ বা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক ।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-

  •  গলদা চিংড়ির স্বাস্থ্য রক্ষায় উপযুক্ত পরিবেশ সনাক্ত করতে পারব • পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ নির্ণয় করতে পারব
  •  রোগাক্রান্ত চিংড়ি সনাক্ত করতে পারব
  •  চিংড়ির রোগের কারণ সনাক্ত করতে পারব, এবং
  •  রোগ প্রতিরোধের উপায় সনাক্ত করতে পারব। 
Content added By

চিংড়ির স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পরিবেশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নানাবিধ কারণে চিংড়ির পুকুর দূষিত হয় এবং চিংড়ির স্বাস্থ্য বিপন্ন হয়ে থাকে। চিংড়ির স্বাস্থ্য রক্ষায় পুকুর বা খামারের জলজ পরিবেশ, চিংড়ির রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ও চিংড়ির মধ্যে একটি দুর্বল ভারসাম্য অবস্থা বিদ্যমান থাকে। কোনো কারণে এ ভারসাম্য অবস্থার বিপর্যয় ঘটলে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর প্রভাব বৃদ্ধি পায় ও চিংড়ি রোগাক্রান্ত হয়ে থাকে। পানিই চিংড়ির জীবনধারণের একমাত্র পরিবেশ এবং পরিবেশের সাথেই নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়ে বাস করে। তাই পুকুরের জলজ পরিবেশগত অবস্থা যত ভালো হবে চিংড়ির স্বাস্থ্যও তত ভালো থাকবে।

Content added By

জলজ পরিবেশের পারিপার্শ্বিক চাপ, রোগজীবাণু এবং চিংড়ির দেহের অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফলে রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। সে জন্য চিংড়ির রোগাক্রান্ত হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ বা নিয়ামক কাজ করে। এখন পর্যন্ত যেসব কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

  • পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণের অবনতি (পানির তাপমাত্রা, পঁচা জৈব পদার্থ, পিএইচ, দ্রবীভূত অক্সিজেন, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড ইত্যাদি),
  • প্রয়োজনের অতিরিক্ত সার ও খাদ্য প্রয়োগ
  •  বাইরে থেকে ময়লা ও দূষিত পানির প্রবেশ, গলদা চিংড়ি চাষে অধিক মজুদ ঘনত্ব,
  • প্রয়োজনীয় ও সুষম পুষ্টির অভাব,
  • জুভেনাইল পরিবহনে ত্রুটিপূর্ণ পরিবহন ব্যবস্থা ও হ্যালিং, এবং 
  • পরজীবী ও রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর সংক্রমণ।

চিংড়ির স্বাস্থ্যের ওপর জলীয় পরিবেশের গুণাগুণের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ চিংড়ির জন্য যত বেশি স্বাচ্ছন্দ্য হবে জলজ প্রাণী হিসেবে চিংড়ির জীবনধারণ তত বেশি পীড়নমুক্ত হবে। কারণ পরিবেশগত পীড়ন চিংড়িকে অধিকতর সংবেদনশীল করে তালে। পুকুরের জলীয় পরিবেশ খারাপ হলে মাছ ও চিংড়ি দ্রুত মারা যায় । সে তুলনায় অন্যান্য রোগ সৃষ্টিকারী প্রাণী বা পুষ্টির অভাবজনিত কারণে চিংড়ির মড়ক হতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় । 

নিচের প্রবাহ চিত্রের মাধ্যমে চিংড়ি রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণ বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা যায়।

চিত্র-৪.১: রোগাক্রান্ত চিংড়ি

চিংড়ির স্বাস্থ্য রক্ষার উপযোগী পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ নিচের সারণিতে দেয়া হলোঃ

ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণসহনশীল মাত্রা
তাপমাত্রা২৫-৩১° সে
স্বচ্ছতা২৫-৩৫ সেমি
পিএইচ৭.৯
নাইট্রাইট<০.০০২ পিপিএম
হাইড্রোজেন সালফাইড<০.১ পিপিএম
ম্যাগনেসিয়াম১০-১২ পিপিএম
খরতা৪০-২০০ পিপিএম
লবণাক্ততা৩-৪ পিপিটি
দ্রবীভূত অক্সিজেন৫-৭ পিপিএম
মুক্ত অ্যামোনিয়া০.০২৫ পিপিএম
নাইট্রেট২০ পিপিএম
ক্যালসিয়াম১০-১২ পিপিএম
লৌহ০.০২ পিপিএম
ফসফরাস০.১৫ পিপিএম

পানির উপরোক্ত ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণের পরিবর্তন হলেই চিংড়ির স্বাস্থ্য রক্ষাকারী পরিবেশ বিনষ্ট হয় এবং পরিবেশগত পীড়নের সৃষ্টি হয়। এর ফলে মাছের রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু বৃদ্ধির আশঙ্কা বেড়ে যায়। এজন্য চিংড়ি চাষের সফলতা অর্জনের লক্ষ্যে চিংড়ির জন্য অনুকূল পরিবেশ রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

Content added By

পোনা অবস্থায় কিংবা দেহ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অবস্থায় চিংড়ি রোগাক্রান্ত হতে পারে। চিংড়ি জীবিত থাকা অবস্থায় রোগাক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। কারণ চিংড়ি মৃত হলে লক্ষণগুলো সঠিকভাবে সনাক্ত করা সম্ভব হয় না। রোগাক্রান্ত চিংড়ি সনাক্তকরণের সাধারণ লক্ষণসমূহ নিচে দেয়া হলো-

  • চিংড়ি পুকুরের পাড়ের কাছে থেকে বিচ্ছিন্ন ও অলস অবস্থায় ঘোরা ফেরা করা,
  • খাদ্যগ্রহণ কমিয়ে দিলে বা একবারে খাদ্যগ্রহণ বন্ধ করলে খাদ্যনালী শূন্য থাকলে,
  •  ফুলকায় কালো বা হলদে দাগ পড়লে বা অস্বাভাবিক রং দেখা দিলে,
  • চিংড়ির ফুলকায় পচন দেখা দিলে,
  •  চিংড়ির খোলস নরম হলে,
  • হাত-পা বা মাথার উপাঙ্গে পচন ধরলে
  •  চিংড়ির খোলস এবং মাথায় সাদা সাদা দাগ দেখা দিলে
  • চিংড়ি হঠাৎ বা ধীরে ধীরে মারা গেলে,
  • খোলস ফ্যাকাশে ও শক্ত হয়,
  • পদ-উপাঙ্গের আকৃতি অস্বাভাবিক হলে,
  •  স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্থ হলে,
  • চিংড়ির দেহ নোংরা হলে বুঝতে হবে চিংড়ি ফাউলিং দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, এবং
  •  চিংড়ির পোনা উৎপাদনের সময় ডিম অস্বচ্ছ ও ডিম ফোটে না।
Content added By
  • চিংড়ির খোলস বা শিরোবক্ষ অঞ্চলের ক্যারাপেসে (Carapace) কালো রং দেখা দেয়। 
  • পদ উপাঙ্গ, ইউরোপড এবং ক্যারাপেসে কালো দাগের সৃষ্টি হয়। 
  •  বহিঃকংকাল হালকা সাদা বর্ণ ধারণ করে। 
  • চলন ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং অলসভাবে চলাফেরা করে অথবা লাফ দিতে কিংবা দেহ বাঁকানো। 
  • দেখা যায় পুকুরের পাড়ের দিকে ভেসে থাকতে দেখা যায়। 
  •  চিংড়ির ফুলকা বাদামি বর্ণ ধারণ করে এবং রোগাক্রান্ত চিংড়ি এলোমেলো বা অনিয়মিতভাবে সাঁতার কাটতে থাকে। 
  • রোগাক্রান্ত দেহে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে কিছুটা বসে যায়, কিন্তু সুস্থ সবল চিংড়িতে এমন গর্ত হয় না । 
  •  খাদ্যনালী কেটে দেখলে কোনো খাদ্যকণা দেখা যায় না। 
  •  ফুলকা কমলা, হলদে, লাল, বাদামি কিংবা তামাটে রং ধারণ করে। 
  • ফুলকা স্বাভাবিক মনে হয় না, ফুলকা ছিড়ে যায়।
  •  যকৃত অগ্নাশয় প্রস্থিতে স্বাভাবিক রঙের পরিবর্তন ঘটে কিংবা হলুদ বর্ণ দেখা দেয়। 
  •  চক্ষু-ছাই ও ঘোলাটে বর্ণ ধারণ করে। 
  •  চিংড়ির খোলস ফ্যাকাসে ও শক্ত আকৃতির হয়ে যায়। 
  •  চিংড়ি স্বাভাবিকভাবে লেজ সংকুচিত ও সম্প্রসারিত করতে পারে না। 
  • রোগাক্রান্ত চিংড়ির চোখের বর্ণ সাদা হয়।
  • চিংড়ির মাংসপেশির সংযোগস্থলে কিংবা লেজের নিম্নাংশের মাংস পেশিতে কালো দাগ বা লম্বা কালো আঁচড় দেখা যায়। 
  • উদর এবং শিরোবক্ষে খোলসের সংযোগস্থলে বাদামি বর্ণের ফোটা দাগ বা ডোরা কাটা দাগ দেখা যায়
  •  চিংড়ির লেজ লাল বর্ণ ধারণ করে এবং চিংড়ির বহিঃত্বক হালকা লাল বর্ণ ধারণ করে
  • চলন পদ উপাঙ্গ দেহের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়, এবং
  • লেজের অংশ বিশেষে ফোটা ফোটা দাগ দেখা যায় এবং কোনো কোনো অংশ স্ফীত হয়ে যায়।

পরিবেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে রোগ সনাক্তকরণ: পুকুরের পারিপার্শ্বিক পরিবেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেও রোগাক্রান্ত বিষয়ে পূর্বাভাস করা যায়। হঠাৎ পুকুরের পানির রঙের পরিবর্তন ঘটলে বা পানির তাপমাত্রা ৩২° সে. এর উপরে আসলে গলদা চিংড়ির রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। দিনের বেলায় পানির উপর দিয়ে চিংড়ি দ্রুত সাঁতার কাটলে বুঝতে হবে পুকুরে অক্সিজেনের অভাব ঘটেছে।

Content added By

চিংড়ি, রোগজীবাণু ও পরিবেশগত পীড়নের পারস্পরিক আন্তঃক্রিয়ায় চিংড়ির শরীরে সৃষ্ট অস্বাভাবিক অবস্থাকে রোগ বলা হয়। পুকুরের জলজ পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে চিংড়ির রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুসমূহের জন্য অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে চিংড়ির রোগবালাই সৃষ্টি হয়। এসব রোগের ধরন, রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু সমূহের প্রজাতি, প্রকৃতি ও আক্রমণের ধারা অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। এ কারণেই রোগের লক্ষণও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। প্রকৃতি অনুযায়ী চিংড়ির রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু বা কারণ সমূহকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (ক) ব্যাকটেরিয়া (খ) ভাইরাস, (গ) ছত্রাক, ও (ঘ) পরজীবী।

Content added By

ব্যাকটেরিয়া খুবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুবীক্ষণিক জীব। এদের শরীরের ব্যাস সাধারণত ০.০০১ মিমি এর মতো হয়ে থাকে। অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া খালি চোখে এদের দেখা যায় না। জলে, স্থলে, বাতাসে সর্বত্রই এরা বিদ্যমান। চিংড়ির পেশীকোষে সাধারণত প্রচুর ব্যাকটেরিয়া থাকে। তবে এদের গায়ে, পায়ে, ফুলকা ও খাদ্যনালীতে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। এসব ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে চিংড়ির দেহে বিভিন্ন প্রকার রোগের সৃষ্টি হয়। নিম্নবর্ণিত ব্যাকটেরিয়াসমূহ চিংড়িতে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করে থাকে।

১. ভিব্রিও ব্যাকটেরিয়া এই জাতীয় ব্যাকটেরিয়া চিংড়ির রক্তে প্রবেশ করে রক্ত প্রবাহ বন্ধ করে দেয় । ফলে চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেলে চিংড়ি মারা যায়। 

২. সিউডোমেনাস ব্যাকটেরিয়া এই ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের ফলে চিংড়ির দেহের রং পরিবর্তিত হয়।

৩. কাইটিনাভেরাস ব্যাকটেরিয়া: এরা চিংড়ির খোলস ও ক্যারাপেসকে আক্রান্ত করে। এদের আক্রমণের ফলে চিংড়ির খোলসে অসংখ্য কালো কালো দাগ দেখা যায়।

৪.  ফিলামেন্টাস ব্যাকটেরিয়া: চিংড়ির উদর, খোলস, শিরোবক্ষ ও পুচ্ছ পাখনা (Telson) অঞ্চলে এই ব্যাকটেরিয়া আক্রমন করে থাকে। ফুলকা আক্রমন হলে চিংড়ির শ্বাস-প্রশ্বাসে বিঘ্ন ঘটে ফলে চিংড়ির ব্যাপক মড়ক দেখা দেয়।

ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ: এককোষী অনুজীবদের একটি বিরাট জগৎ ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গঠিত। ব্যাকটেরিয়া আণুবীক্ষনিক জীব যা খালি চোখে দেখা যায় না। চিংড়ির দেহে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া থাকে এবং উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এই ব্যাকটেরিয়া চরম ক্ষতিকর রোগ সৃষ্টি করে। রোগ সৃষ্টিকারী প্রধান ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতিসমূহ হলোঃ Vibrio parahaemolyticus, Vibrio harveyi, Vibrio vulnificus, V. damsela, Aeromonas spp., Flavobacterium spp, Vibrio alginolyticus প্রভৃতি। গলদা চিংড়িতে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগ গুলো হলোঃ Filamentous bacterial disease, Necrotising Hepatopancreatitis (NHP), Mycobacteriosis, Chitinolytic bacterial shell disease, Rickettsial infection প্রভৃতি।

Content added By

ব্যাকটেরিয়ার চেয়ে ভাইরাস আকারে অনেক ছোট। ভাইরাস সাধারণত ইলেকট্রনিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না। বাংলাদেশে মাঝে মাছে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিংড়ির ব্যাপক মড়ক দেখা যায়। সাধারণত চীনা "ভাইরাস" এবং সিস্টেমিক এক্টোডারমাল ও মেসাডোরমাল ব্যাকিউলা ভাইরাস সংক্ষেপে সাদা ভাইরাস নামে পরিচিত। এরা চিংড়ির গায়ে সাদা দাগের সৃষ্টি করে। এছাড়া মনোডন ব্যাকিউলো ভাইরাস ও ই-টাইপ ব্যাকিউলা ভাইরাস এর কারণেও চিংড়িতে ভাইরাস রোগের সৃষ্টি হয়। নিম্নমানের খাদ্য প্রয়োগ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও দূষিত মাটি ইত্যাদির কারণে ভাইরাসজনিত রোগ ছড়াতে পারে। এই রোগের ফলে চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া, খাদ্য গ্রহণে বিরত থাকা, লেজের অংশ অস্বচ্ছ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। অনেক সময় কোনো লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই ভাইরাস আক্রমণের ফলে ব্যাপক হারে চিংড়ি মারা যেতে থাকে।

ভাইরাসজনিত রোগ: ভাইরাস এক প্রকার অতিক্ষুদ্র জৈবকণা বা অনুজীব যা জীবিত কোষের ভিতরে বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। চিংড়ি চাষের সমস্যাগুলোর মধ্যে ভাইরাসজনিত রোগ অন্যতম। চিংড়ি চাষে ভাইরাসের আক্রমনে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং আমাদের দেশে ভাইরাসের কারনে চিংড়ির ব্যাপক মহামারী দেখা যায়। চিংড়ির ক্ষেত্রে প্রধান ভাইরাস জনিত রোগ গুলো হলোঃ White Spot Syndrome Virus (WSSV), Yellow head virus (YHV), Baculovirus penaei (BP), Monodon Baculovirus (MBV), Infectious Myonecrosis Virus (IMNV), Hepatopancreatic Parvovirus (HPV) ।

Content added By

সাধারণত ফুসেরিয়ান, স্যাপ্রোলোনিয়া, লেজিনিডিয়াম, হেলিপস ও সাইলেপিডিয়াম নামক ছত্রাক দ্বারা চিংড়ি আক্রান্ত হয়ে থাকে। ছত্রাক সাধারণত চিংড়ির ফুলকায় আক্রমণ করে থাকে। ফলে চিংড়ি শ্বাসকষ্টে মারা যায়।

ছত্রাকজনিত রোগ: ছত্রাক প্রধানত চিংড়ির লার্ভা পর্যায়ে বেশি আক্রমন করে। এছাড়া সাধারণত চিংড়ির ফুলকাতেও আক্রমন করে। ছত্রাক সাধারণত চিংড়ির ফুলকাতে আক্রমন করে শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে। যার ফলে চিংড়ি মারা যায়। প্রধান সংক্রামক প্রজাতিগুলো গুলোঃ Lagenidium callinectes, L. marina Sirolpidium spp. Pythium spp. Fusarium solani, Fusarium incarnatum প্রভৃতি।

Content added By

বিভিন্ন প্রকার পরজীবী চিংড়ির রোগ সৃষ্টি করে থাকে। এসব পরজীবী চিংড়ির খোলস, ফুলকা ও বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আক্রমণ করে থাকে। এসকল পরজীবী এককোষী বা বহুকোষী হয়ে থাকে। বহুকোষী পরজীবীর মধ্যে ট্রিমাটোডা (trematode) নেমাটাডা (nematode) সিস্টোভা (cestode) জাতীয় কৃমি দ্বারা চিংড়ি আক্রান্ত হয়ে থাকে।

চিংড়িতে প্রোক্রিসটোনেলা (Prochristonelia), প্যারাক্রিটোনেলা (Parachristonelia) এবং রেনিবুলবাস পিনাইর (Renibulbus Penacl) ধরনের সিস্টোড বা ফিতাকৃমি দেখা যায়। এছাড়া চিংড়িতে তিন ধরনের উকুন (Shrimp fluke) দেখা যায়। এগুলো হচ্ছে অপারকলিডি (Opercolidae), মাইক্রোফলিডি (Microphollidae) ও একিনোস্টোমাটিভাস (Echinostomatidas)। এককোষী প্রোটোজোয়া দ্বারাও চিংড়ি আক্রান্ত হয়। এক্টোকমেনসেল প্রোটোজোয়া, প্রোটোজোয়া কমেনসেলস, এপোস্টোম সিলিয়েট, গ্রেগারিন, মাইক্রোন্তোরিডিয়া প্রভৃতি এককোষী প্রাণী দ্বারা চিংড়ি আক্রান্ত হয়ে থাকে।

পরজীবীঘটিত রোগ; বিভিন্ন প্রকার এককোষী ও বহুকোষী পরজীবী আছে যারা চিংড়ির রোগ সৃষ্টি করে। এই পরজীবীগুলো চিংড়ির ত্বকের সাথে লেগে থেকে ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি করে। ফুলকাতে আক্রমণ করে, চিংড়ির ওজন কমিয়ে দেয় এবং অবশেষে মৃত্যু ঘটায়। Block/ Brown gill disease হয়ে থাকে Zoothamnium, Epistylis, Vorticella প্রোটোজোয়ার জন্য, Gregarine disease হয়ে থাকে অ্যানিলিড পরজীবী Nematopsis spp. এর জন্য এবং Cotton shrimp এর জন্য দায়ী Agmasoma sp.

এছাড়াও পরিবেশ দূষণ, পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব ও ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে চিংড়ি রোগাক্রান্ত হতে পারে। নিচে চিংড়ির রোগর কারণসমূহ ও রোগ সৃষ্টির বিভিন্ন উপাদানের বর্ণনা দেওয়া হলো।

রোগের কারণরোগ সৃষ্টির অন্তর্নিহিত উপাদান
ক) সংক্রমন

ব্যাকটেরিয়া

ভাইরাস

ছত্রাক

পরজীবী

খ) পরিবেশ দুষণঅক্সিজেনের অভাব
মাত্রা অতিরিক্ত অ্যামোনিয়া
মাত্রা অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেশি জৈব তলানী
হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তন
হঠাৎ লবণাক্ততার পরিবর্তন
কীটনাশকের ব্যবহার
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদের আধিক্য
গ) পুষ্টিহীনতা

প্রাকৃতিক খাদ্যের অভাব

 সুষম খাদ্যের অভাব

অধিক ঘনত্বে পোনা মজুদ

ঘ) ব্যবস্থাপনায় ত্রুটিপোনা বা জুভেনাইল উৎপাদনে ত্রুটি আহত বা ক্ষতযুক্ত পোনা
পরিবহন জনিত পিড়ন বা ত্রুটি
পোনা প্রতিপালনে ত্রুটি
পুকুর প্রস্তুতিতে ত্রুটি।

গলদা চিংড়ির চাষে এবং বাণিজ্যিকভাবে সফলতা অর্জনের জন্য চিংড়ির রোগবালাই প্রতিরোধ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিংড়ির রোগ প্রতিকার বা চিকিৎসা ব্যবস্থা যথেষ্ট জটিল, ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল। তাই চিংড়ির রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করাই উত্তম। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমেও রোগবালাই এর আক্রমণ থেকে চিংড়িকে রক্ষা করা সম্ভব। সাধারণত সম্ভাব্য রোগবালাই হতে চিংড়িকে রক্ষা করার জন্য পূর্বাহ্নেই যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তাকে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বলা হয়। রোগবালাই প্রাদুর্ভাবের কারণসমূহ বিশেষণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।

Content added By

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ইদানিংকালে চিংড়ি চাষের প্রসার লাভ করছে। চিংড়ি চাষের প্রসারের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশে যে সকল সাধারন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় সে সকল রোগ ও তাদের প্রতিকার ব্যবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো-

Content added By

কারণ: ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ

লক্ষণ : মজুদের ৩-৪ মাস পর অ্যান্টেনা, সন্তরণপদ খণ্ডিত অথবা খসে পড়তে থাকে।

প্রতিকার : সাময়িকভাবে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে,

 সম্ভব হলে পানি পরিবর্তন করতে হবে, এবং

 পিএইচ পরীক্ষা করে প্রয়োজনে ২৫০-৩০০ গ্রাম/শতাংশ হারে ডালোমাইট প্রয়োগ করতে হবে।

Content added By

কারণ : পরিবেশগত কারণে হয়ে থাকে। পানির পিএইচ, লবণাক্ততা বা তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে খোলস পাল্টায় না এবং শক্ত হয়ে যায়।

লক্ষণ : খোলস স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে শক্ত থাকে,

বয়সের তুলনায় চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি কম হয়।

প্রতিকার : পুকুরের জলজ পরিবেশ উন্নয়ন করতে হবে,

 হঠাৎ পরিবেশের যে কোন পরিবর্তন, যেমন- পানির উচ্চতা বৃদ্ধি অথবা পরিমানমত রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

Content added By

কারণ : পরিবেশগত যে কোনো প্যারামিটারের তারতম্যের কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। বিশেষ করে লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে এটা বেশি হতে দেখা যায়।

লক্ষণ: করাত ও ক্যারাপেস অংশে ধূসর রঙের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথর দেখা যায়।

প্রতিকার : পুকুরের পানি পরিবর্তন করতে হবে,

     স্বাদু পানির সরবরাহ বৃদ্ধি করা, এবং

      পানির গভীরতা বৃদ্ধি করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

Content added By

গলদা চাষের মাঝামাঝি সময়ে প্রায়ই এ রোগ দেখা যায়।

কারণ : পানিতে ক্যালসিয়াম কমে যাওয়া

পানিতে অ্যামোনিয়া ও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া
পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব থাকলে এ রোগ হতে পারে, এবং
অনেকদিন পানি পরিবর্তন না করা।

লক্ষণ : খোলস নরম হয়ে যায়,

পা লম্বা ও লেজ ছোট হয়, ও

 দেহ ফাঁপা হয়ে পঞ্জের মত হয়।

প্রতিকার : পুকুরে ২-৩ মাস অন্তর শতাংশ প্রতি ০.৫ কেজি হারে চুন প্রয়োগ

খাবারে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।

Content added By

কারণ: খাদ্যে ভিটামিন বি-কমপেক্স, ফ্যাটি অ্যাসিড, আমিষ ও খনিজ দ্রব্যের অভাব,

লক্ষণ : দেহ নরম থাকে এবং রং নীলাভ হয়ে যায়,

উল্লেখ্য যে, সুস্থ চিংড়ি রান্না করলে রং লাল হয়।

প্রতিকার : খাদ্যের সঙ্গে ৫০ মিলি গ্রাম/কেজি হারে ভিটামিন প্রিমিক্স প্রয়োগ।

Content added By

কারণ : খোলস পরিবর্তন না করা ও চিংড়ির চলাফেরার গতি কমে যাওয়া,
লক্ষণ : চিংড়ি ধরার পর সারা দেহে সবুজ শেওলা দেখা যায়।
প্রতিকার : পানি বাড়িয়ে দিতে হবে এবং পরিমাণমত রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে।

Content added By

কারণ : জৈব ও অজৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি, অক্সিজেনের পরিমাণ কম, পোনার মজুদ ঘনত্ব বেশি।

 লক্ষণ : চিংড়ির ফুলকায় পশম বা উলের মত আবরণ পড়ে, ফুলকায় ফোটা ফোটা দাগ, সন্তরণ পদ ও উপাঙ্গ খসে পড়া, কালো বর্ণ ধারণ করা।

প্রতিকার: কিউপ্রাস ক্লোরাইড ২ পিপিএম/লিটার দ্রবণে ৩-৪ দিন চিংড়িকে ধৌত করা।

Content added By

কারণ : ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের আক্রমণ

লক্ষণ: ফুলকায় কালো দাগ ও পচন, ফুলকায় জৈব পদার্থ জমে থাকা।

প্রতিকার : ফাংগাসে আক্রান্ত হলে অ্যাজালামোইসিনে গোসল করানো, ফিলামেন্টাস ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলে ফিউরাজলিডন দ্রবণে গোসল করানো।

Content added By

পলদা চিংড়ি চাষে চিংড়ির রোগবালাই প্রতিরোধ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ চিংড়ির রোগ চিকিৎসা ব্যবস্থা যথেষ্ট জটিল এবং ব্যয়বহুল। সেক্ষেত্রে চিংড়ির রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করাই শ্রেয়। রোগবালাই প্রাদুর্ভাবের কারণসমূহ বিশ্লেষণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। নিচে রোগ প্রতিরোধের উপায়সমূহ বর্ণানা করা হলো- 

Content added By

চিংড়ি চাষে পরিবেশের উপর নিবিড় নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করা যাতে পারিবেশিক পীড়ন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। চিংড়ির সুস্থ ও সবল স্বাস্থ্যের জন্য এসব প্রভাবক অনুকূল মাত্রায় থাকলে রোগ প্রতিরোধের সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

পরিবেশের উপর নিবিড় নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবকগুলোর উপর লক্ষ্য রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন-

  • পানির দ্রবীভূত অক্সিজেন
  • পানির পিএইচ (pH) ও তাপমাত্রা
  • কীটনাশকের ব্যবহার
  • পরিবেশে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হাইড্রোজেন সালফাইড এর উপস্থিতি
  • অতিরিক্ত খাদ্য প্রয়োগ বা রাসায়নিক সার ব্যবহার জনিত কারণে অ্যামোনিয়া সৃষ্টি
  • কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর উপস্থিতি
  • শেওলাজাতীয় পদার্থ পচনের ফলে উৎপন্ন বিষাক্ত পদার্থ 
  • পুকুরের তলদেশে পুঞ্জীভূত জৈব পদার্থ প্রভৃতি।
Content added || updated By

গলদা চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে উন্নত ব্যবস্থাপনা চিংড়ির রোগবালাই প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে সঠিক ঘনত্বে ও সঠিক পদ্ধতিতে চিংড়ির পোনা মজুদ করা প্রয়োজন, যাতে পুকুরের পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ সহনশীল মাত্রায় বজায় থাকে এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এজন্য, সুস্থ ও সবল পোনা সংগ্রহ করে তা ঘের বা পুকুরে মজুদ করা উচিত। এছাড়া ব্যবস্থাপনাজনিত পীড়ন নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে পোনা স্থানান্তরের সময় হাত দিয়ে পোনাকে স্পর্শ না করা, পোনা নাড়াচাড়া না করা, অধিক ঘনত্বে পোনা পরিবহন না করা এবং অধিক গরমে বা তাপমাত্রায় পোনা স্থানান্তর, পরিবহন ও পুকুরে মজুদ না করা প্রভৃতি বিষয় গুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া দরকার।

চিংড়ি খামারে বা পুকুরে অবাঞ্ছিত মাছ ও প্রাণির প্রবেশ রোধ করে পুকুরকে বহিরাগত রোগজীবাণুর আক্রমণ থেকে মুক্ত রাখা যায় । এজন্য পুকুরের আগমন ও নির্গমন নালা প্রয়োজনমত বন্ধ রাখা, পুকুরের পাড় বন্যার কবল থেকে রক্ষা করা, পুকুরে ক্ষতিকারক পাখি বসতে না দেয়া এবং কাপড় চোপড় না ধোয়া প্রভৃতি বিষয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার।

বহিরাগত রোগজীবাণুর আক্রমণ থেকে জলাশয় কে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে পোনা সংগ্রহের জাল, পরিবহন পাত্র, চিংড়ি ধরার জাল প্রভৃতি ব্যবহারের পূর্বে ও পরে জীবাণুনাশক উপকরণ যারা জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। নিয়মিত পুকুর পর্যবেক্ষণ করা এবং কোনো কারণে মৃত বা রোগাক্রান্ত চিংড়ি তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ করা যাতে খামারের অন্য চিংড়ি রোগাক্রান্ত হতে না পারে। এছাড়া লক্ষণ অনুযায়ী রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।

Content added By

চিংড়ির প্রয়োজনীয় পুষ্টিসাধন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বজায় রাখার জন্য নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। চিংড়ির মোট দৈহিক ওজনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করা, খাদ্যের গুণাগুণ পরীক্ষা করা এবং সময় মত খাবার দেয়া প্রভৃতি বিষয়ে লক্ষ রাখা আবশ্যক। এ ছাড়াও নিয়মিত জাল টেনে চিংড়ির বৃদ্ধির হার এবং স্বাস্থ্য ও রোগবালাই পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে খামারের উৎপাদন নিশ্চিত করা যায়। এ ছাড়াও পুকুরে খাদ্য প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে বড় আকারের গলদা চিংড়ি পুকুর থেকে সরিয়ে ফেললে ভাল ফল পাওয়া যায়। কারণ অপেক্ষাকৃত বড় চিংড়ি খাদ্য প্রতিযোগিতায় প্রাধান্য বিস্তার করে থাকে এবং ছোট আকারের চিংড়ি কাংখিত মাত্রায় বড় হতে পারে না।

রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধের তুলনামূলক সুবিধা

ক্রম রোগ প্রতিরোধরোগ প্রতিকার
তুলনামূলক সহজতুলনামূলক জটিল
আর্থিকভাবে লাভজনকআর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি
চিংড়ির গুণগতমান ভালো থাবেগুণগতমান খারাপ হয়
পরিকল্পনামাফিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভবভবিষ্যদ্বাণী সম্ভব হয় না
রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার কমরাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার বেশি
পরিবেশ সহনীয়পরিবেশ সহনীয় নয়
টেকসইটেকসই নয়

 

Content added By

গলদা চিংড়ির রোগ দমনের জন্য বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এসব রাসায়নিক দ্রব্যের মধে সাধারণ চুন, লবণ, পটাশ বা পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, ম্যালাকাইট গ্রিন, মিথিলিন ব্লু, ফর্মালিন, তুঁতে, বিভিন্ন ধরনে এন্টিবায়াটিক প্রভৃতির ব্যবহার সর্বাধিক।

Content added By

পুকুরে রোগমুক্ত পরিবেশ রক্ষার জন্য ও পানিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টির পর্যাপ্ততা সৃষ্টির জন্য এবং বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে চুন ব্যবহার করা হয়। বাজরে বিভিন্ন ধরনের চুন পাওয়া যায়। কার্যকারিতা ও মূল্য বিবেচনায় পুকুরে সাধারণত পাথুরে চুন ব্যবহার করা হয়।

Content added By

বিভিন্ন ধরনের বাহ্যিক পরজীবী দমনের জন্য সাধারণত খাওয়ার লবণ (table salt, NaCl) ব্যবহার করা হয়। সাধারণত পিপিএম, পিপিটি বা শতকরা দ্রবণ হিসেবে লবণ জলে চিংড়িকে গোসল (bath) করানো বা চুবানো (dip) হয়। পিপিএম (parts per million) অর্থ দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগ বা নিযুতাংশ। এক পিপিএম সমান এক লিটার পানিতে এক মিলিগ্রাম দ্রব্য। পিপিটি (parts per thousand ) অর্থাৎ হাজার ভাগের এক ভাগ বা সহস্রাংশ অর্থাৎ এক পিপিটি হচ্ছে ১ লিটারে ১ সিসি বা ১ এমএল এর সমপরিমাণ।

Content added By

পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দেখতে বেগুনি রঙের। জীবাণু মুক্তকারী দ্রব্য হিসেবে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াজনিত ও বহিঃপরজীবীজনিত রোগ দমনে পটাশ বা পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গনেট ব্যবহার করা হয়। বাজারে ঔষধের দোকানে এই দ্রব্যটি সাধারণত পটাশ নামে পরিচিত। পটাশ সহজে পানিতে দ্রবণীয় এবং অল্পতেই পানি গাঢ় বেগুনি রঙের হয়ে যায়।

Content added By

এটা এক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য বা কেলাসিত অবস্থার থাকে। শুষ্ক অবস্থায় পিঙ্গল বর্ণের ছোট ছোট কণা বা পাউডারের মতো দেখতে। বিভিন্ন ছত্রাক, বাহ্যিক পরজীবী ও ব্যাকটেরিয়া দমনে ম্যালাকাইট গ্রিন ব্যবহার করা হয়। এটা সহজেই পানিতে দ্রবণীয় এবং অল্পতেই পানি পাঢ় সবুজ বর্ণের হয়।

Content added By

গাঢ় নীল বর্ণের রাসায়নিক দ্রব্য যা কঠিন অবস্থায় পিঙ্গল বর্ণের থাকে। এই পদার্থ সহজেই পানিতে দ্রবণীয়। সাধারণত চিংড়ির ফুলকা রোগ দমনে মিথিলিন ব্লু ব্যবহার করা হয়।

Content added By

সাধারণত ৰাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ৪০% ফরমালডিহাইডের দ্রবণ ফরমালিন হিসেবে পরিচিত। এককোষী বহিঃপরজীবী ও মনোজেনেটিক ট্রিমাটোড দমনে ফর্মালিন ব্যবহার করা হয়। এছাড়া জীবাণুনাশক হিসেবেও ফর্মালিন ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

Content added By

তুঁতে নীল রঙের স্ফটিকাকার দ্রব্য। এই দ্রব্য সাধারণ মুদি বা ঔষধের দোকানে পাওয়া যায়। ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত রোগ নিয়ন্ত্রণে তুঁতের প্রবণ কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হয়।

Content added By

ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য সাধারণত কিছু কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় । আমাদের দেশে সচরাচর টেট্রাসাইক্লিন ( অক্সিটেট্রাসাইক্লিন), ব্যবহার করা হয়। চিংড়ির রোগ দমনে খাদ্যের সাথে মিশিয়ে এসব ঔষধ প্রয়োগ করা হয়।

Content added By

সঠিক ব্যবস্থাপনার ওপর অধিক এবং লাভজনক উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। ভালো ব্যবস্থাপনার পরও চাষকালীন সময়ে গলদা চিংড়ি চাষের পুকুরে বেশ কিছু কারিগরি সমস্যা দেখা দিতে পারে যার কারণে ব্যাপক হারে উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা থাকে। মাছ ও চিংড়ি চাষের পুকুরের এরূপ কিছু সাধারণ কারিগরি সমস্যা সম্পর্কে নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

Content added By

পুকুর শুকানো অথবা বিষ প্রয়োগ করার পরও অনেক সময় পুকুর বা ঘেরে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ থেকে যেতে পারে। এছাড়াও বর্ষাকালে পানির সাথে বা অন্য যে কোনা সময় বাইরে থেকে শোল, টাকি, কৈ, শিং, মাগুর, চান্দা, তেলাপিয়া ইত্যাদি মাছ পুকুরে প্রবেশ করতে পারে। এতে ব্যাপকভাবে মাছ ও চিংড়ির উৎপাদন বিঘ্নিত হবে এবং খামার পরিচালনায় লোকসান হতে পারে।
প্রতিকার: পাখি, জাল, বৃষ্টির পানির স্রোত বা মানুষের মাধ্যমে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ প্রবেশ করে। তাই এ সমস্ত উৎস থেকে সতর্ক থাকতে হবে । নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে উল্লিখিত সমস্যার প্রতিকার করা যেতে পারে।

  • পুকুরে বা ঘেরে বাইরের পানি ঢুকতে না দেয়া;
  •  জাল ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা, এবং
  •  প্রয়োজনে পুকুরের চারদিকে ৩০-৪০ সেমি উঁচু বানা বা মশারী জালের বেড়া বা বেস্টনী দেয়া।
Content added By

অতিরিক্ত শেওলার জন্য পানির রং ঘণ সবুজ বা নীল হয়ে যায়। ফলে রাতের বেলায় পানিতে অক্সিজেন কমে যায় এবং দিনের বেলায় পিএইচ মান বেড়ে যায়। এ ছাড়া শেওলা মরার পর পুকুরের তলায় জমা হয় এবং পঁচে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে মাছ ও চিংড়ি পানির উপরিতলে খাবি খায় এবং কখনও কখনও ব্যাপক হারে মারা যায়।

প্রতিকার:

তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে পুকুরে বা ঘেরে অগভীর নলকূপের পরিষ্কার ঠান্ডা পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা গেলে ভাল হয়। সে সাথে পুকুরে বা ঘেরে খাদ্য ও সার প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়াও কিছু সিলভার কার্পের চারা পোনা ছেড়ে জৈবিকভাবে অতিরিক্ত উদ্ভিদকণার উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা যায়।

Content added By

অতিরিক্ত লৌহ অথবা লাল শেওলার জন্যে পানির উপর লালস্তর পড়তে পারে। ফলে সূর্যের আলো পানিতে প্রবেশ করতে পারে না। এজন্যে পুকুরে খাদ্য ও অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দেয়।

প্রতিকার:

ধানের খড় বা কলাপাতা পেঁচিয়ে দড়ি বানিয়ে পানির উপর থেকে টেনে তুলে ফেলা যায়।

Content added By

বিভিন্ন কারণে ঘের বা পুকুরের তলদেশে অ্যামোনিয়া সৃষ্টি হতে পারে। উচ্চতর পিএইচ এ অ্যামোনিয়া চিংড়ির জন্য অত্যন্ত মারাত্মক। পুকুরে ফাইটোপ্লাংকটন বেড়ে গেলে পানির পিএইচ দ্রুত উপরে উঠে আসে। ফলে ব্যাপক সংখ্যায় মাছ ও চিংড়ি মারা যায়। চিংড়ির ফুলকায় কালো দাগ পড়লে বুঝতে হবে নাইট্রোজেন বর্জ্য ও অন্যান্য রাসায়নিকের মাত্রা বেশি। অ্যামোনিয়া বেড়ে গেলে রক্ত পরিবহনতন্ত্র দ্রুত আক্রান্ত হয়।

প্রতিকার:

মজুদ ঘনত্ব কমিয়ে সার ও খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ রাখা, সম্ভব হলে ৩০-৫০% পানি বদল ও পানির পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

Content added By

অনেক পুকুরেই আগস্ট-সেপ্টেম্বর এবং এপ্রিল-মে মাসে এ সমস্যা প্রকট আকারে দেখা দেয়। সাধারণত ভোর রাতের দিকে মাছ ও চিংড়ি পানির উপর ভেসে উঠে খাবি খেতে থাকে। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যাওয়ার কারণে এটা ঘটে। অক্সিজেন স্বল্পতা যদি খুব বেশি ও দীর্ঘমেয়াদি হয় তবে মাছ ও চিংড়ি দুর্বল হয় পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত মারা যায়।

প্রতিকার :

প্রাথমিক অবস্থায় সাময়িকভাবে সার ও খাদ্য প্রয়োগে বন্ধ রেখে বাঁশ পিটিয়ে বা সাঁতার কেটে পানিতে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়াতে হবে। বিপদজনক অবস্থায় পুকুরে পরিষ্কার নতুন পানি সরবরাহ বা স্যালো টিউবওয়েলের মাধ্যমে একই পুকুরের পানি ছিটানারে ব্যবস্থা করতে হবে। তবে দীর্ঘ সময়ব্যাপী পানিতে অক্সিজেন স্বল্পতা চলতে থাকলে বড় মাছ ও চিংড়ি ধরে বিক্রি করা যেতে পারে।

Content added By

সাপ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, উদ-বিড়াল সরাসরি খেয়ে ফেলে এবং মাছ ও চিংড়ির উৎপাদন অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে।

প্রতিকার:

এ সমস্ত প্রাণী নিয়ন্ত্রণে কায়িক মাধ্যমই সবচেয়ে ভালো। উদ- বিড়াল নিয়ন্ত্রণে চুন ভর্তি ডিমের খোসা পুকুরের পাড়ে রেখে দিলে এদের উৎপাত কমে যায়। বাঁশের চাটাই ব্যবহার করে সহজেই কাঁকড়া মারা যায়। সাধারণভাবে ব্যাঙ যে সমস্ত অঞ্চলে ডিম দেয় যেমন- পানি ও পাড়ের সংযোগ স্থলের ঘাস দূর করে ফেলতে হবে। এছাড়াও যে সমস্ত পুকুরের আশেপাশে জঙ্গল থাকে সেখানেই এসব প্রাণির উপদ্রব বেশি হয়। তাই ঘের বা পুকুরের চারপাশ আগাছা জঙ্গলমুক্ত রাখতে হবে। পুকুরের পাড়ে ঘন ফাঁসের পুরাতন জাল দিয়ে বেড়া বা বেষ্টনী দেয়া যেতে পারে।

Content added By

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ সমস্যা। প্রায় সব চাষিই প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাদ্য প্রয়োগ করে থাকেন। ফলে এসব খাদ্যের একটা বড় অংশ তলায় জমা হয়ে পানির পরিবেশ নষ্ট করে ফেলে। এতে মাছ ও চিংড়ি সহজেই রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যায়।

প্রতিকার:

খাদ্য প্রয়োগের পূর্বে খাদ্যের সঠিক মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। মাঝে মাঝে খাদ্য প্রয়োগ স্থানের মাটিতে জমে থাকা অতিরিক্ত কাদা অপসারণ করতে হবে।

Content added || updated By

বৃষ্টি ধোয়া পানিতে পুকুর ঘোলাটে হয়ে যেতে পারে। এর ফলে সূর্যের আলো পানিতে প্রবেশ করতে পারে না এবং প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়াও মাছের ফুলকা নষ্ট হয়ে মাছ মারা যেতে পারে।

প্রতিকার :

বৃষ্টি ধোয়া পানির প্রবেশ রোধ করার জন্য সমতল ভূমি থেকে পুকুরের পাড় উঁচু রাখতে হবে। ঘোলাত্ব নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি শতাংশ পানিতে ১ কেজি করে পোড়া চুন বা জিপসাম ২ কেজি হারে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

Content added By

অতিরিক্ত খাদ্য ও জৈব পদার্থ পুকুরের তলায়ে জমা হয়ে তলার মাটি কালো দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে যায়। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে চাষ করা পুকুরে বা ঘেরে এ সমস্যা প্রকট আকারে দেখা দেয়। এর ফলে বিষাক্ত গ্যাস তলায় জমা হয়ে মাছ ও চিংড়ির মড়ক দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও চিংড়ির দেহ কালো হয়ে বাজার মূল্য হ্রাস করে।

প্রতিকার :

গলদা চিংড়ি ছাড়ার পূর্বে তলার অতিরিক্ত কালো কাদা তুলে ফেলতে হবে। চাষকালীন সময়ে চিংড়ির মড়ক দেখা দিলে দ্রুত পানি বদল, মজুদ ঘনত্ব হ্রাস এবং সার ও খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে।

Content added By

চিংড়ি চাষের এটি একটি বড় সমস্যা। স্বভাবগত কারণে চিংড়ি স্বজাতিভুক প্রাণী। যখন এদের খাদ্যাভাব দেখা দেয় তখন এরা অপেক্ষাকৃত ছোট ও দুর্বল আকৃতির চিংড়িগুলোকে ধরে খায় ফলে চিংড়ি আহরণের সময় মজুদের তুলনায় অনেক কম চিংড়ি আহরিত হয়।

প্রতিকার:

মজুদকালীন সময়ে পুকুরে সমান আকৃতির পিএল বা জুভেনাইল মজুদ করতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত সার ও সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করে পুকুরে খাদ্যের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে হবে।

Content added By

বৃষ্টির পর অনেক সময় মাছ ও চিংড়ি পানির উপর ভেসে খাবি খেতে পারে। পানির পিএইচ কমে যাওয়ার ফলে এটা ঘটে থাকে। পিএইচ কমে গেলে ক্ষতিকর হাইড্রোজেন সালফাইডের বিষক্রিয়া বেড়ে যায় ফলে অনেক সময় চিংড়ির মড়ক হয়ে থাকে।

প্রতিকার:

বৃষ্টির পরপরই পানির পিএইচ পরিমাপ করতে হবে। প্রতিবার ভারী বৃষ্টির পর শতাংশ প্রতি ৭৫-৮০ গ্রাম হারে পোড়া চুন বা ডলোমাইট প্রয়োগ করতে হবে।

Content added By

অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে রাতের বেলায় চিংড়ি পাড়ের কাছাকাছি এমনকি পাড়ের উপর চলে আসতে পারে। ফলে শিয়াল বা অন্য কোনো নিশাচর রাক্ষুসে প্রাণী দ্বারা চিংড়ি আক্রান্ত হতে পারে।

প্রতিকার :

অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় অতিরিক্ত সতর্ক প্রহরার ব্যবস্থা করা। তবে পুকুরের পানির পরিবেশ ভালো থাকলে এ অবস্থা দেখা যায় না। পাড় ঘেঁষে মশারীর জাল দিয়ে বেড়া প্রদান করা যেতে পারে।

Content added By

গলদা চিংড়ির চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পরিচালিত হয়। প্রতিটি ব্যবসার ন্যায় চিংড়ির চাষের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে। চিংড়ি চাষির ঝুঁকিপূর্ণ দিকসমূহ হলো-

১। বন্যা,

২। অতিরিক্ত খরা,

৩। চিংড়ির বাজারদর,

৪। শীতকালীন ঝুঁকি,

৫। রোগব্যাধি,

৬। মাছ চুরি, ও
 

৭। বিষ প্রয়োগ।

চিংড়ি চাষির ঝুঁকিপূর্ণ দিকসমূহ বিবেচনায় উদ্ভুত সমস্যাদি নিম্নোক্তভাবে সমাধান করা যেতে পারে-

  • বন্যার মাছ ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বন্যা আসার আগেই বড় আকারের চিংড়ি গুলো আংশিক আহরণের মাধ্যমে ধরে ফেলতে হবে।
  • শুষ্ক মৌসুমের পানির স্তর নিচে নেমে গেলে বিজ্ঞান ভিত্তিক উপায়ে মাছ চাষ সম্ভব নয়। এমনকি গভীর বা অগভীর নলকূপের সাহায্যে পানি বাড়ানোর কোন ব্যবস্থা করা না গেলে বিক্রয়যোগ্য চিংড়ির বিক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • ভালো বাজার মূল্য প্রাপ্তির নিরিখে সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে সবাই যে মৌসুমে চিংড়ি বিক্রি করবে তখন চিংড়ি বিক্রি করে পুকুর বা ঘেরের জীবভর কমিয়ে দিতে হবে।
Content added By

তোমার প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি যে কোন চিংড়ি খামার পরিদর্শন কর যেখানে চিংড়ি হ্যাচারিতে ব্যবহারের জন্য ব্রুড চিংড়ি পালন করা হয়। এর কর্ম পরিবেশ ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয়ে নিন্মোক্ত ছকে তোমার মতামত দাও।

পরিদর্শনকৃত চিংড়ি খামারের নাম 
ঠিকানা 
চিংড়ি রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণ গুলো কী কী?

১.

২.

৩.

রোগাক্রান্ত চিংড়ি লক্ষণ গুলো কী কী?

১.

২.

৩.

চিংড়ির কী কোন প্রকার রোগ হয়েছে?

১.

২.

৩.

খামারে কর্মী সংখ্যা কত? 
কর্মীগণ কাজের সময় কী কী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করে

১.

২.

মৎস্য খামারে কর্মপরিবেশ সম্পর্কে মতামত দাও 

১.

২.

৩.

তোমার নাম
শ্রেণি
রোল নং
প্রতিষ্ঠানের নাম
শ্রেণি শিক্ষকের নাম
 
প্রতিবেদন জমাদানের তারিখশিক্ষকের স্বাক্ষর
Content added By

চিংড়ি খামারে নিরাপদ কাজ করতে তোমরা কোন কাজে কী ধরণের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিবে তা ছকে লিখ।

ক্রম কাজের নামনিরাপত্তামূলক গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ
  
  
  
  
৫   
Content added By

পারদর্শিতার মানদন্ড

  •  স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা (পিপিই) ও শোভন পোষাক পরিধান করা
  • প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের স্থান প্রস্তুত করা।
  • কাজের প্রয়োজন অনুযায়ী টুলস, ম্যাটেরিয়াল ও ইকুইপমেন্ট নির্বাচন এবং সংগ্রহ করা
  • রোগাক্রান্ত চিংড়ি সংগ্রহ করা
  • রোগাক্রান্ত চিংড়ি পর্যবেক্ষণ করা
  • রোগাক্রান্ত চিংড়ির লক্ষণ দেখে রোগ সনাক্ত করা
  • কাজ শেষে কাজের স্থান পরিষ্কার করা
  • অব্যবহৃত মালামাল নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করা এবং
  • কাজের শেষে চেকলিষ্ট অনুযায়ী ব্যবহৃত টুলস ও যন্ত্রপাতি ভালভাবে ধুয়ে মুছে নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করা।

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম 

হ্যান্ড গ্লাভস্

অ্যাপ্রন

পিপিই

ফাষ্ট এইড বক্স 

মাস্ক

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুপমেন্টস, মেশিন)

ব্যাবচ্ছেদ টে

ফরসেপ

আঁতশ কাঁচ

নিডল

মাইক্রোস্কোপ

(গ) প্রয়োজনীয় মালামাল

গামছা

টিস্যু পেপার

খাতা, পেন্সিল

বালতি

(ঘ) কাজের ধারা

১. নিকটস্থ খামার থেকে ৮/১০ টি চিংড়ি সংগ্রহ করো।

২. সংগৃহীত চিংড়ি বালতিতে করে দ্রুত পরীক্ষাগারে নিয়ে আসো।

৩. ফরসেপ দিয়ে চিংড়িগুলোকে বালতি থেকে তুলে ট্রেতে রাখো।

৪. নিডল দিয়ে নেড়ে চেড়ে চিংড়িগুলোকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করো।

৫. চিংড়ির খোলসের রং, ফুলকার রং, উপাঙ্গসমূহের অবস্থা প্রভৃতি পর্যবেক্ষণ কর এবং এসব অঙ্গ প্রত্যঙ্গের অবস্থা খাতায় লিপিবদ্ধ করো।

৬. চিংড়ির রোগ সনাক্তকরণের পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লেখ।

কাজের সতর্কতা

  • রোগাক্রান্ত চিংড়ি তাজা বা সদ্য মৃত হলে রোগ নির্ণয় সহজতর হবে।
  • ব্যাবচ্ছেদ এর পরে অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহের বিকৃতি সনাক্ত করতে হলে প্রয়োজনবোধে মাইক্রোস্কোপ এ পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

আত্মপ্রতিফলন

রোগাক্রান্ত চিংড়ি পর্যবেক্ষণ ও সনাক্তকরণ কৌশল অনুশীলন করার বিষয়ে দক্ষতা যথাযথভাবে অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে

Content added By

পারদর্শিতার মানদণ্ড

  •  স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা (পিপিই) ও শোভন পোষাক পরিধান করা
  • প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের স্থান প্রস্তুত করা।
  • কাজের প্রয়োজন অনুযায়ী টুলস, ম্যাটেরিয়াল ও ইকুইপমেন্ট নির্বাচন এবং সংগ্রহ করা
  •  রোগাক্রান্ত চিংড়ি সংগ্রহ করা
  • সংগ্রহিত চিংড়িকে জীবাণুমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি ও জীবাণু নাশক দিয়ে দ্রবণ তৈরি করা 
  •  রোগাক্রান্ত চিংড়ির জীবাণু মুক্ত করার জন্য জীবাণু নাশক দ্রবনে চুবানোর ব্যাবস্থা করা
  • কাজ শেষে কাজের স্থান পরিষ্কার করা
  • অব্যবহৃত মালামাল নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করা এবং
  • কাজের শেষে চেকলিষ্ট অনুযায়ী ব্যবহৃত টুলস্ ও যন্ত্রপাতি ভালভাবে ধুয়ে মুছে নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করা

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম।

হ্যান্ড গ্লাভস্

অ্যাপ্রন

পিপিই

ফাষ্ট এইড বক্স

মাস্ক 

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুপমেন্টস, মেশিন)

হাপ ড্রাম

মগ

স্কুপ নেট

চামচ

মাইক্রোস্কোপ

(গ) প্রয়োজনীয় মালামাল

পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট

লবণ

খাতা পেন্সিল

(ঘ) কাজের ধারা

১। একটি বালতির মধ্যে ১০ লিটার পানিতে ১ চা চামচ পরিমাণ পটাশ (পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট) বা ২০০গ্রাম লবণ মেশাও।

২। এবার আক্রান্ত চিংড়িগুলোকে হাতজাল দিয়ে উঠিয়ে বালতির মিশ্রণে ৩০ সেকেন্ড ডুবিয়ে তুলে রাখো।

৩। এভাবে কয়েক বার আক্রান্ত চিংড়িকে শোধনের পর আর একটি বালতি তৈরি কর এবং আরো কয়েকবার শোধনের পর পুকুরে মজুদ করো।

৪। চিংড়িকে জীবাণুমুক্তকরণের কাজটি মৃদু ঠান্ডা আবহাওয়ায় সম্পন্ন কর। এজন্য সকাল বা বিকালে সবচেয়ে ভালো । মেঘলা দিনে বা ভ্যাপসা গরমের সময় এ কাজ করা উচিৎ নয়।

৫। গৃহীত কার্যপ্রণালী ব্যাবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করো।

কাজের সতর্কতা

  • জীবাণু নাশক ব্যাবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অনুমিত মাত্রায় জীবাণু নাশক ব্যবহার করতে হবে।
  •  আক্রান্ত চিংড়িকেজাল বা হাপা হতে হাত জাল দিয়ে উঠিয়ে বালতির মিশ্রণে ৩০ সেকেন্ড বা সহ্য করার মতো সময় ডুবিয়ে দ্রুততার সাথে পুকুরে ছাড়ার ব্যাবস্থা করতে হবে।
  • প্রখর রোদে বা বৃষ্টির সময় এ কাজ করা উচিৎ নয়।

আত্মপ্রতিফলন

রোগাক্রান্ত চিংড়ি জীবাণুমুক্তকরণ কৌশল অনুশীলন করার বিষয়ে দক্ষতা যথাযথভাবে অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।

Content added By

পারদর্শিতার মানদন্ড:

  •  যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পিপিই/অ্যাপ্রন ও পোশাক পরিধান করা।
  • প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের স্থান পরিষ্কার করা এবং প্রস্তুত করা।
  • প্রয়োজন অনুসারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নির্বাচন এবং সংগ্রহ করা। .
  • কাজ শেষে কর্মক্ষেত্র পরিষ্কার করা।
  • অব্যবহৃত যন্ত্রপাতি নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করা।
  • কাজের শেষে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করে নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করা।

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুপমেন্টস, মেশিন)

(গ) প্রয়োজনীয় মালামাল

(ঘ) কাজের ধারাঃ

১। পুকুরের পানিতে থার্মোমিটার ব্যবহার করে পানির তাপমাত্রা নির্ণয় করো।

২।  pH মিটার বা লিটমাস পেপার দিয়ে পানির পিএইচ নির্ণয় করো।

৩। দ্রবীভূত অক্সিজেন মিটার দ্বারা পানির দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ নির্ণয় করো।

 ৪। রিফ্লাক্টোমিটারের সাহায্যে পানির লবণাক্ততা পরিমাপ করো।

৫। অ্যামোনিয়া টেষ্ট কীট ব্যবহার করে পানিতে দ্রবীভূত অ্যামোনিয়ার পরিমাণ নির্ণয় করো।

সতর্কতা

  • দক্ষ টেকনিশিয়ান এবং জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি দ্বারা পানির গুণাগুণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
  • পর্যবেক্ষণের সময় যত্ন সহকারে প্রতিটি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে।
  • পর্যবেক্ষণের সময় পানিতে বসবাসকারী চিংড়ি যেন পীড়িত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • পানির ভৌত রাসায়নিক গুণাগুণ নির্ণয়ের পর ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করে নির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে।

আত্মপ্রতিফলনঃ

পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ নির্ণয়ে দক্ষতা অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।

Content added By

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন :

১। রোগ কী?

২। চিংড়ির স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পানির অনুকূল তাপমাত্রা কত?

৩। চিংড়ির স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কত? 

৪। পানির তাপমাত্রা কত হলে চিংড়ি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে?

৫। চিংড়ির রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুসমূহকে কয়টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়?

৬। ব্যাকটেরিয়া কোন ধরনের জীব?

৭। কাইটিনোভাইরাস ব্যাকটেরিয়া চিংড়ির দেহের কোথায় আক্রমণ করে?

৮। চিংড়ির এন্টেনা ও সন্তরণ পদ খসে পড়া রোগের কারণ কি?

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন:

১। চিংড়ির রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুসমূহের নাম লেখ।

 ২। চিংড়ির রোগ প্রতিকারে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের নাম লেখ।

৩। চিংড়ির রোগ সৃষ্টিতে ব্যবস্থাপনা ত্রুটিগুলো কী কী?

৪। চিংড়ির রোগ দমনে পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের ব্যবহারবিধি লেখ।

৫। চিংড়ির রোগের সাধারণ লক্ষণগুলো লেখ।

রচনামূলক প্রশ্ন

১। চিংড়ির রোগ ও রোগের কারণসমূহ বর্ণনা করো। 

২। চিংড়ির রোগ প্রতিরোধের উপায় সমূহ বর্ণনা করো।

৩। চিংড়ির এন্টেনা ও সন্তরণ পদ খসে পড়া রোগ, খোলস শক্ত হওয়া রোগ, গায়ে শেওলা পড়া রোগ এবং কালো ফুলকা রোগ বর্ণনা করো।

৪। চিংড়ি চাষে ঝুঁকিপূর্ণ দিক গুলো লিখ এবং সমাধানের উপায় বর্ণনা করো।

Content added By

Promotion