SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট-১ - হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ধারণা | NCTB BOOK

প্রতিষ্ঠানের জন্য দক্ষ লোকবল বাছাই, তাদের উন্নয়ন, প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে তাদের যোগ্যতার সর্বোচ্চ ব্যবহার ও তাদেরকে প্রতিষ্ঠানে ধরে রাখার কাজকে বলে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনাকে অনেক বাধা বা হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। তাকে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় তা হলো—

▪️বিশ্বায়ন ও বিশ্ব প্রতিযোগিতা (Globalization and global competition) : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবাদে পৃথিবী অনেক সংকুচিত হয়ে এসেছে। বর্তমানে যেকোনো জায়গা থেকেই বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক কাজ পরিচালনা করা যায়। এর ফলে প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ব প্রতিযোগিতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। এর প্রভাব হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপরও পড়ছে। ব্যবস্থাপনাকে এখন বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করে ব্যবস্থাপকীয় কাজ পরিচালনা করতে হচ্ছে।

▪️প্রযুক্তিগত পরিবর্তন (Technological change) : প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। এর কারণে হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার কৌশল ও পদ্ধতিতেও সর্বদা পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। সঠিক প্রযুক্তি নির্বাচন ও প্রয়োগ ব্যবস্থাপকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

▪️কৌশলগত পরিবর্তন (Stratigical change) : হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ পরিচালনার কৌশলও সদা পরিবর্তনশীল। স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার প্রচলন ঘটছে। হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপককেও পরিচালনাগত কৌশলে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। তবে সবক্ষেত্রে পরিবর্তনকে মানিয়ে নেওয়া সহজ হয় না। তাই এটিও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ।

▪️শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রসার (Expansion of education and training) : উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এসব দেশে যথেষ্ট পরিমাণে শিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকবল রয়েছে। তবে সুশিক্ষিত না হলে তাদেরকে দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তারা নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি করে। বিষয়টি হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার জন্য খুবই কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করে।

▪️রুচি ও চাহিদার পরিবর্তন (Change in choice and demand) : মানুষের চাহিদা ও পছন্দে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। তাই প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা ও পরিচালনায় নতুনত্ব ও পরিবর্তন আনতে হয়। তবে বাস্তবে এটি বেশ কঠিন ও ব্যয়বহুল। তাই এক্ষেত্রেও হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপককে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

▪️মেধা পাচার (Brain drain) : অনেক পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় করে হিউম্যান রিসোর্স প্রশিক্ষণ দিয়ে উন্নত করা হয়। এই প্রশিক্ষিত হিউম্যান রিসোর্সকে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান বেশি সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে নেয়। আবার অনেক মেধাবী কর্মী বিদেশেও চলে যায়। এতে প্রথমোক্ত প্রতিষ্ঠানের বড় ধরনের ক্ষতি হয়। তাই মেধাবীদেরকে ধরে রাখাও হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

▪️আইনগত আনুষ্ঠানিকতা (Legal formality) : হিউম্যান রিসোর্স সংগ্রহ ও নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক আইনি বিধি-বিধান মেনে চলতে হয়। এলাকাভিত্তিক, জাতি-গোত্র ভিত্তিক ও লিঙ্গগত সমতা বজায় রাখতে হয়। এজন্য অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মীকেও নেওয়া যায় না। এতে কাঙ্ক্ষিত মানের কর্মীবাহিনী গড়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়ে। ব্যবস্থাপনার জন্য এটিও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

▪️রাজনৈতিক প্রভাব (Political influence) : সরকার কর্তৃক নানা সময়ে প্রণীত নীতি ও বিধান অনুযায়ী বিভিন্ন শিল্পভেদে প্রতিষ্ঠান চালাতে হয়। আকস্মিক আনুষঙ্গিক আইনের পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রেই হিউম্যান রিসোর্স অনুশীলনের ওপর প্রভাব ফেলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব মোকাবেলা করা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়।

▪️শ্রমিক সংঘের চাপ (Pressure of trade union) : ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা অনেক সময় হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজারের ওপর অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। এর ফলে সঠিক পন্থায় হিউম্যান রিসোর্স পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই অযাচিত চাপ থেকে বেরিয়ে আসা হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

▪️শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন (Empowerment of employees) : বর্তমানে সবশ্রেণির লোকই স্বার্থ সচেতন। অপরদিকে, সরকার ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলোও শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষার ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক। এর সুবাদে কর্মীরা নিজেদেরকে যথেষ্ট ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী মনে করে। অনেকক্ষেত্রে তারা হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপকদেরকে তেমন গুরুত্ব দিতে চায় না। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা ব্যবস্থাপকদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।

▪️কর্মশক্তির বৈচিত্র্য (Diversification of manpower) : কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন এলাকার ধর্ম-বর্ণের, রুচি- পছন্দের লোক কাজ করে। তাদের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতায়ও ভিন্নতা থাকে। এই বৈচিত্র্যময় হিউম্যান রিসোর্সকে সমন্বয় করে লক্ষ্যের দিকে চালানো সত্যিই খুব কঠিন কাজ। এজন্য ব্যবস্থাপককে সর্বোচ্চ কৌশলী হতে হয় ।

সুতরাং বলা যায়, জগতে সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো লোকজন পরিচালনা করা। আর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজারকে এই কঠিন কাজটিই প্রতিনিয়ত করতে হয়। আর এক্ষেত্রে উপরিউক্ত চ্যালেঞ্জসমূহ তাকে মোকাবেলা করতে হয়।

Content added By
Promotion