SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট-১ - হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ধারণা | NCTB BOOK

হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট হলো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য দক্ষ কর্মী সংগ্রহ, নির্বাচন, নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, বদলি, পদোন্নতি, প্রেষণা দান প্রভৃতি কার্যক্রমের সমন্বয়। এক সময় মানুষকে শুধুই উৎপাদনের উপকরণ মনে করা হতো। তবে বর্তমানে একে একটি সম্পদ বলে গণ্য করা হয়। নিচে হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করা হলো-

→ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি (Increase in productivity) : সংগঠনে শুধু উন্নত প্রযুক্তি এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেই উৎপাদনশীলতা বাড়ে না। উৎপাদনের উপকরণকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে সংগঠনের কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার কাজই হলো দক্ষ কর্মীবাহিনী গঠন এবং তাদের কাছ থেকে শতভাগ কার্য আদায় করা।

→ সংগঠনের প্রাণশক্তি (Life blood of the organization) : সংগঠনের বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে মানবীয় উপাদানকে বলা হয় সংগঠনের প্রাণশক্তি। তবে সংগঠনে মানবীয় উপাদানগুলো যদি হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদের ভূমিকায় না থাকে তবে তা সংগঠনে প্রাণ সঞ্চার করতে পারে না। দক্ষ হিউম্যান রিসোর্স হলো সংগঠনের প্রাণ। সংগঠনের অন্যান্য অংশগুলো সঠিকভাবে কার্যকর রাখতে হলে প্রাণশক্তি ঠিক থাকা প্রয়োজন। এটি কেবল হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সম্ভব।

→ উৎপাদনের ধারাবাহিকতা (Continuity of production) : উৎপাদন একটি অবিরাম প্রক্রিয়া। এর গতি সর্বদাই সচল রাখা জরুরি। এই গতিকে সর্বদা সচল রেখে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন নিশ্চিত করতে হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে টিকে থেকে কাম্য মুনাফা অর্জন করতে হলে হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু প্রয়োগ দরকার। আর হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাই পারে প্রতিষ্ঠানের জন্য সঠিক কর্মী নিয়োগ করে তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুগোপযোগী করে তুলতে।

→ লক্ষ্য অর্জন (Achieving goal) : প্রতিষ্ঠানের সব উপকরণ সঠিক থাকলেই লক্ষ্যার্জন সহজ হয় না। এজন্য অন্য সব উপকরণের সাথে মানবসম্পদের সুষ্ঠু সমন্বয় হওয়া জরুরি। হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা কর্মীদের জন্য সঠিক কার্যনীতি, কর্মপরিবেশ ও অন্যান্য সব সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে তাদের মাধ্যমে সংগঠনের লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

→ উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার (Use of modern technology) : প্রযুক্তি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। এই প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানকে তার উদ্দেশ্য অর্জন করতে হয়। আর হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা করে তাদেরকে নিত্য নতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচিত করে। এভাবে তাদেরকে নির্বিঘ্নে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে উপযোগী করে তোলে ।

→ উৎপাদন ব্যয় হ্রাস (Reducing the production cost) : প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনের গতিকে সচল রেখে কাম্য মুনাফা অর্জন করতে হলে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করা খুবই জরুরি। মুনাফার সাথে ব্যয়ের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। আর ব্যয় হ্রাস করে মুনাফা সর্বাধিকরণের ক্ষেত্রে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ভূমিকাই বেশি। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের কাজই হলো কর্মীদেরকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে তোলা। আর দক্ষ জনশক্তিই পারে ব্যয় হ্রাস করে মুনাফা বৃদ্ধি করতে।

চিত্র: উৎপাদন ব্যয় হ্রাসের প্রভাব

→ পণ্যের মান উন্নয়ন (Develop the quality of product) : আধুনিক প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন বিষয়। এজন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পণ্যের মান বা উৎকর্ষতা বৃদ্ধি । হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা কর্মীদেরকে উন্নতমানের পণ্য উৎপাদনের উপযোগী করে তোলে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান সহজে সফলতা পেতে পারে।

→ পণ্য মূল্য হ্রাস (Reducing the selling price) : ক্রেতা ধরে রাখতে হলে পণ্যের মূল্য কমানো জরুরি। একই মানের পণ্য কেউই অধিকমূল্যে ক্রয়ে আগ্রহী থাকে না। তাই কম মূল্যে ভালো মানের পণ্য সরবরাহের বিষয়টি চিন্তা করতে হয়। এজন্য প্রয়োজন উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রশিক্ষিত জনশক্তি। কারণ এরাই পারে পণ্যের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে উৎপাদন ব্যয় ও মূল্য হ্রাস করতে।

→ শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক উন্নয়ন (Developing the labour management relationship) : সফলভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পূর্বশর্ত হলো শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্কের উন্নয়ন। উত্তম শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠানের যেকোনো সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখে। হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা কর্মীদের ন্যায্য মজুরি ও বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।

→ দক্ষ জনবল সৃষ্টি (Creating efficient work force) : প্রতিষ্ঠানের সফলতার জন্য দক্ষ জনবলের বিকল্প নেই। দক্ষ কর্মীবাহিনীই পারে প্রতিষ্ঠানের উন্নতির ধারাকে ঊর্ধ্বমুখী রাখতে। হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মী সংগ্রহ, নির্বাচন, নিয়োগ, উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করে তাদেরকে দক্ষ জনবলে পরিণত করে তোলে।

→ হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ( Human resource planning and its implementation) : সংগঠনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সুষ্ঠু হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন দরকার। সাধারণ ব্যবস্থাপনার যেমন সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকা অত্যাবশ্যক তেমনি হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের জন্যও হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা ও তার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। আর এটি হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের প্রধান কাজ।

→ কর্মীদের প্রেষণা দান (Employee motivation) : প্রেষণা কর্মীদের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তোলে । প্রত্যেক কর্মীর ভেতরেই কার্যদক্ষতা থাকে; প্রয়োজন শুধু জাগ্রত করার ব্যবস্থা নেওয়া। হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা এক্ষেত্রে কর্মীদের জন্য সুনির্দিষ্ট বেতন ও মজুরি কাঠামো নিশ্চিত করে এবং বিভিন্ন আর্থিক ও অনার্থিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে তাদেরকে প্রেষণা দিতে পারে, যা তাদেরকে শতভাগ কার্যে মনোনিবেশ করতে উদ্বুদ্ধ করে।

→ কর্মসন্তুষ্টি বৃদ্ধি (Increase job satisfaction) : আদর্শমানের দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করতে কর্মীদের কর্মসন্তুষ্টির মাত্রা বৃদ্ধি করানো দরকার। কর্মসন্তুষ্টি না থাকলে কাজের মান ভালো হয় না। আর হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা কর্মীদের কর্মসন্তুষ্টি বৃদ্ধিতে যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে থাকে।

→ কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি (Incerease morale of the employee) : উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, পণ্যের মান উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ, উৎপাদনের গতিশীলতা বাড়ানো বা সচল রাখতে কর্মীদের মনোবল বাড়ানো খুবই জরুরি। উচ্চ মনোবল সম্পন্ন কর্মীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব। হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনাই পারে কর্মীদের প্রয়োজন পূরণ করে তাদের মনোবল বৃদ্ধি করতে। 

   পরিশেষে বলা যায়, আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে প্রতিযোগিতা মোকাবেলা করে উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করতে হলে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের বিকল্প নেই। হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা শুধু দক্ষ কর্মীবাহিনীই গড়ে তোলে না, বরং তাদেরকে উৎসাহ নিয়ে কাজ করার জন্য প্রেষণা, প্রশিক্ষণ, মনোবল বৃদ্ধি প্রভৃতি বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে।

Content added By
Promotion