SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

কবুতরের রোগব্যাধি (Diseases of Pigeon)

বিভিন্ন প্রকার রোগ জীবাণু দ্বারা কবুতর আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত খাদ্য এবং পানির মাধ্যমে জীবাণু কবুতরের দেহে প্রবেশ করে। তাছাড়া অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা জনিত পীড়নের কারণেও অনেক সময় কবুতর দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। তাই কবুতরের খামার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে এবং গুণগত মানসম্পন্ন খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে রোগবালাই থেকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কবুতরের সংক্রামক রোগসমূহের মধ্যে সাধারণত রাণীক্ষেত, পিজিয়ন পক্স, হেপাটাইটিস, সালমোনেলোসিস, ককসিডিওসিস, ট্রাইকোমোনিয়াসিস এবং ছত্রাকজনিত রোগ গুরুত্বপূর্ণ । এছাড়া ভিটামিন বা খনিজ লবণের অভাবজনিত রোগ, বদহজম জনিত সমস্যা, গেঁটেবাত, অন্তঃপরজীবী যেমন কৃমি এবং বাহ্যিক পরজীবী যেমন: মাছি, উকুন ইত্যাদির মাধ্যমে কবুতর আক্রান্ত হতে পারে। কবুতরের গুরুত্বপূর্ণ রোগ বালাই সমুহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেয়া হলো ।

কবুতরের রাণীক্ষেত রোগ (Newcastle disease in pigeon)

Avian paramyzo virus-1 এ রোগের জন্য দায়ী। এ ভাইরাসটি সাধারণত খাদ্য যন্ত্র এবং স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে। আক্রান্ত কবুতর থেকে সুস্থ কবুতরে এ রোগের জীবাণুর বিস্তার ঘটে। এ রোগে মৃত্যুহার শতকরা প্রায় ১০ ভাগ। মুরগির রাণীক্ষেত রোগের ভাইরাসের এন্টিজেনিক বৈশিষ্ট্যের সাথে এ ভাইরাসের এন্টিজেনিক বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে।

রোগের লক্ষণ :

  • সাদা, সবুজ ডায়রিয়া হয়। 
  • পা এবং পাখা ঝুলে পড়ে।
  • ঘাড় বাঁকা করে উল্টানোর ফলে কোনো কোনো সময় এক চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া লক্ষণ দেখা দেয়। 
  • শতকরা ২-৩ ভাগ কবুতরে প্যারালাইসিস দেখা দিতে পারে। 
  • রোগের লক্ষণ, প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন দেখে এবং ভাইরাস শনাক্ত করে এ রোগ নির্ণয় করা যায় ।

রোগ দমন: কবুতরকে টিকা প্রয়োগ এবং খামারের জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করে রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

 

কবুতরের বসন্ত রোগ (Pigeon pox)

পিজিয়ন পক্স নামক এক প্রকার ভাইরাস কবুতরের বসন্ত রোগের জন্য দায়ী। সাধারণত শরীরের পালকবিহীন অংশ যেমন: চোখ বা মুখের চারদিক, পা ইত্যাদি জারণায় এ রোগের ফোস্কা বা গুটি দেখা যায় ।

রোগের লক্ষণ: 

১. আক্রান্ত কবুতরের চোখের পাতা ও চোখ ফুলে যায় । 

২. চোখ লাল হয়ে যায় এবং পানি পড়ে। 

৩. ফোস্কা বা গুটিগুলো প্রাথমিক অবস্থায় ছোট থাকে কিন্তু পরবর্তীতে বড় হয়ে যাওয়ার দরুণ অন্ধত্ব দেখা দিতে পারে। যার ফলে খেতে না পেরে আস্তে আস্তে শুকিয়ে মারা যায়।

রোগ নির্ণয় : 

শরীরের পালকবিহীন অংশ যেমন- চোখ বা মুখের চারদিক, পা ইত্যাদি জায়গায় ফোস্কা বা গুটি দেখেই সাধারণত এ রোগ নির্ণয় করা যায়।

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: 

কোনো চিকিৎসা না থাকার দরুন খামারের জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনাই রোগ প্রতিরোধের প্রধান উপায়। আক্রান্ত কবুতরকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে, উৎপন্ন হওয়া ফোস্কা বা গুটিগুলোকে প্রতিদিন কমপক্ষে তিনবার করে আয়োডিন যৌগ, যেমন- পটাশ বা আরোসান দিয়ে মুছে দিতে হবে। এতে ফোস্কা বা গুটি কেটে জীবাণুর বিস্তার রোধ সম্ভব হবে।

 

কবুতরের সালমোনেলোসিস রোগ (Salmonellosis in Pigeon)

কারণ: সধারণত Salmonella প্রজাতির (Salmonella gallinarum, Salmonella pullorum) ব্যাকটেরিয়া এ রোগের জন্য দায়ী।

রোগ বিস্তার :

  • আক্রান্ত ডিমের মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার ঘটে । 
  • খাবার, পানি, খামারে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে।
  • কর্মরত শ্রমিক ও আগত অন্যান্য লোকজন, খাদ্য সরবরাহের গাড়ি, বন্যপ্রাণী যেমন ইঁদুর ইত্যাদির মাধ্যমে খামারে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে । 
  • এ রোগে শতকরা ৫-৫০ বা তারও বেশি কবুতর আক্রান্ত হতে পারে।

 

রোগের লক্ষণ: 

১. আক্রান্ত কবুতরের ডাইরিয়া হয় এবং জেলির মতো হলুদ বা সবুজ পায়খানা করে। 

২. কবুতর আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়। 

৩. পা এবং পাখায় প্যারালাইসিস হয়। 

৪. ডিম পাড়ার সমস্যা দেখা দেয় । 

৫. পা এবং পাখার গিড়া ফুলে যায় ও ব্যাথা হয় ।

৬. খাদ্য কম খায় অর্থাৎ ক্ষুধামন্দা হয়। 

৭. ডিম উৎপাদন কমে যায় ।

রোগ নির্ণয় : প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন এবং ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করে এ রোগ নির্ণয় করা যায়।

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: 

কার্যকরী অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। পশু চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। রোগ প্রতিরোধের জন্য খামারে ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশ রুদ্ধ করতে হবে এবং আক্রান্ত কবুতরকে খামার থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। জেন্টামাইসিন ৩০% পাউডার, ১ গ্রাম ২০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। টেট্রাসাইক্লিন ২৫% ১ গ্রাম ২০ লিটার পানিতে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।

 

অ্যাসপারজিলোসিস (Aspergillosis)

কারণ: Aspergillus fumigatus নামক ছত্রাক মূলত এ রোগের কারণ। এ জীবাণুটি প্রধানত শ্বাসযন্ত্রকে আক্রান্ত করে তবে শরীরের ভেতরের অন্যান্য কোষকেও আক্রান্ত করতে পারে।

রোগ বিস্তার : 

১. ভিমের খোসার ভেতর দিয়ে এ রোগের জীবাণু জনে প্রবেশ করতে পারে। 

২. আপন কবুতর থেকে শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে সুস্থ কবুতর আসনত হতে পারে। 

৩. এ রোগে মৃত্যুহার শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ পর্যন্ত হতে পারে।

 

রোগের লক্ষণ: 

১. কবুতরের শ্বাসকষ্ট হয়। 

২. দেহে ঝিমানো ভাব আসে। 

৩. খাবারের প্রতি অনীহা আসে এবং ওজন কমে যায়। 

৪. ঘন ঘন পিপাসা হয় ও পানি পান করে।

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কার্যকরী ছত্রাক বিরোধী ঔষধ, যেমন- নাইস্টেট সিরাপ দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। রোগ প্রতিরোধের জন্য আক্রান্ত কবুতর খামার থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। নাইস্টেট সিরাপ ১ সিসি ১০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।

কবুতরের রক্ত আমাশয় (Coccidiosis) রোগ: 

কবুতরের রক্ত আমাশয় রোগের কারণ: Eimeria গোত্রভূক্ত বিভিন্ন প্রজাতির প্রেটোজোয়া দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে।

রোগ বিস্তার:

 ১. সংক্রমিত খাবারের মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে। 

২. পানি বা লিটার থেকে মুখের মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। 

৩. এ রোগের মৃত্যুহার শতকরা ৫০ ভাগ। 

রোগের লক্ষণঃ 

১. রক্ত মিশ্রিত ডায়রিয়া হয়। 

২. ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। 

৩. ওজন কমে যায় । 

৪. আক্রান্ত কবুতরের খাদ্যনালীর বিভিন্ন অংশে রক্তক্ষরণ, রক্তমিশ্রিত অপাচ্য খাদ্য এবং যা দেখা যায় ।

রোগ নির্ণয় : 

প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন এবং পায়খানা বা খাদ্য নালীর ভেতরের দিকের অংশ নিয়ে পরীক্ষা করে প্রটোজোয়া সনাক্ত করে এ রোগ নির্ণয় করা যায়।

রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা: 

কার্যকরী প্রটোজোয়া বিরোধী ঔষধ যেমন সালফার জাতীয় ঔষধ দিয়ে চিকিত্সা করতে হবে। রোগ প্রতিরোধের জন্য আক্রান্ত কবুতরের ঘর কার্যকরী জীবাণুনাশক দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে এবং খামারে কঠোর জৈব নিরাপত্তা বাজায় রাখতে হবে। ইএসবি ৩ এক গ্রাম ১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ৩-৫ দিন খাওয়াতে হবে ।

 

 

Content added By