নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গণিত - NCTB BOOK

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় তথ্য ও উপাত্তের অবদানের ফলে পৃথিবী পরিণত হয়েছে বিশ্বগ্রামে। তথ্য ও উপাত্তের দ্রুত সঞ্চালন ও বিস্তারের জন্য সম্ভব হয়েছে বিশ্বায়নের। তাই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা ও বিশ্বায়নে অংশগ্রহণ ও অবদান রাখতে হলে তথ্য ও উপাত্ত সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান অর্জন এ স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য অপরিহার্য। প্রাসঙ্গিকভাবে শিক্ষার্থীর জ্ঞান অর্জনের চাহিদা মেটানোর লক্ষে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে তথ্য ও উপাত্তের আলোচনা করা হয়েছে এবং ধাপে ধাপে শ্রেণিভিত্তিক বিষয়বস্তুর বিন্যাস করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা ক্রমযোজিত গণসংখ্যা, গণসংখ্যা বহুভুজ, অজিভ রেখা, কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে গড়, মধ্যক ও প্রচুরক ইত্যাদি সম্বন্ধে জানবে ও শিখবে।

এ অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা ---

  • ক্রমযোজিত গণসংখ্যা, গণসংখ্যা বহুভুজ ও অজিভ রেখা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • গণসংখ্যা বহুভুজ ও অজিভ রেখার সাহায্যে উপাত্ত ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ পদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • সংক্ষিপ্ত পদ্ধতির সাহায্যে গড়, মধ্যক ও প্রচুরক নির্ণয় করতে পারবে।
  • গণসংখ্যা বহুভুজ ও অজিভ রেখা লেখচিত্রের ব্যাখ্যা করতে পারবে।

 

উপাত্তের উপস্থাপন ( Presentation of Data) : আমরা জানি, গুণবাচক নয় এমন সংখ্যাসূচক তথ্যাবলি পরিসংখ্যানের উপাত্ত। অনুসন্ধানাধীন উপাত্ত পরিসংখ্যানের কাঁচামাল। এগুলো অবিন্যস্তভাবে থাকে এবং অবিন্যস্ত উপাত্ত থেকে সরাসরি প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না। প্রয়োজন হয় উপাত্তগুলো বিন্যস্ত ও সারণিভুক্ত করা। আর উপাত্তসমূহ কীভাবে সারণিভুক্ত করে বিন্যস্ত করতে হয় তা আমরা আগে শিখেছি। আমরা জানি, কোনো উপাত্ত সারণিভুক্ত করতে হলে প্রথমে তার পরিসর নির্ধারণ করতে হয়। এরপর শ্রেণি ব্যবধান ও শ্রেণি সংখ্যা নির্ধারণ করে ট্যালি চিহ্ন ব্যবহার করে গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি করা হয়। এখানে বুঝার সুবিধার্থে নিচের উদাহরণের মাধ্যমে গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি করার পদ্ধতি পুনরালোচনা করা হলো।

 

উদাহরণ ১. কোনো এক শীত মৌসুমে শ্রীমঙ্গলে জানুয়ারি মাসের 31 দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ডিগ্রী সেলসিয়াসে নিচে দেওয়া হলো। সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি কর।

14°, 14°, 14°, 13°, 12°, 13°, 10°, 10°, 11°, 12°, 11°, 10°, 9°, 8°, 90, 11°, 10°, 10°, 8°, 9°, 7º, 6º, 6º, 6º, 6º, 7°, 8°, 90, 9°, 8°, 7°

সমাধান : এখানে তাপমাত্রা নির্দেশক উপাত্তের সবচেয়ে ছোট সংখ্যা 6 এবং বড় সংখ্যা 14 ।

সুতরাং উপাত্তের পরিসর = (14 – 6) + 1 = 9

এখন শ্রেণি ব্যবধান যদি 3 নেওয়া হয় তবে শ্রেণি সংখ্যা হবে 93 বা, 3 ।

শ্রেণি ব্যবধান 3 নিয়ে তিন শ্রেণিতে উপাত্তসমূহ বিন্যাস করলে গণসংখ্যা (ঘটন সংখ্যাও বলা হয়) নিবেশন সারণি হবে নিম্নরূপ :

কাজ : তোমাদের শ্রেণিতে অধ্যয়নরত সকল শিক্ষার্থীর দুইটি দল গঠন কর। দলের সদস্যদের ওজনের (কেজিতে) গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি কর।

 

ক্রমযোজিত সংখ্যা (Cumulative Frequency) : উদাহরণ ১ এর শ্রেণি ব্যবধান 3 ধরে শ্রেণি সংখ্যা নির্ধারণ করে গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি করা হয়েছে। উল্লেখিত উপাত্তের শ্রেণি সংখ্যা 3। প্ৰথম শ্রেণির সীমা হলো 6° – 8° । এই শ্রেণির নিম্নসীমা 6° এবং উচ্চসীমা ৪° সে. এবং গণসংখ্যা 11। একইভাবে দ্বিতীয় শ্রেণির সীমা 9° 11° এবং গণসংখ্যা 13। এখন প্রথম শ্রেণির গণসংখ্যা 11 এর সাথে দ্বিতীয় শ্রেণির গণসংখ্যা 13 যোগ করে পাই 24। এই 24 হবে দ্বিতীয় শ্রেণির ক্রমযোজিত গণসংখ্যা। আর প্রথম শ্রেণি দিয়ে শুরু হওয়ায় এই শ্রেণির ক্রমযোজিত গণসংখ্যা হবে 11। আবার দ্বিতীয় শ্রেণির ক্রমযোজিত গণসংখ্যা 24 এর সাথে তৃতীয় শ্রেণির গণসংখ্যা যোগ করলে 24 + 7 = 31 উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে উদাহরণ ১ এর তাপমাত্রার ক্রমযোজিত গণসংখ্যা সারণি নিম্নরূপ : 

 

উদাহরণ ২. নিচে 40 জন শিক্ষার্থীর বার্ষিক পরীক্ষার ইংরেজীতে প্রাপ্ত নম্বর দেওয়া হলো (পূর্ণ নম্বর 100)। প্রাপ্ত নম্বরের ক্রমযোজিত গণসংখ্যা সারণি তৈরি কর।

70, 40, 35, 60, 55, 58, 45, 60, 65, 80, 70, 46, 50, 60, 65, 70, 58, 60, 48, 70, 36, 85, 60, 50, 46, 65, 55, 61, 72, 85, 90, 68, 65, 50, 40, 56, 60, 65, 46, 76

সমাধান : উপাত্তের পরিসর = (সর্বোচ্চ মান – সর্বনিম্ন মান) + 1

= (90 - 35) + 1 55 + 1 = 56

শ্রেণি ব্যবধান যদি 5 ধরা হয়, তবে শ্রেণি সংখ্যা 565=11.2 বা 12 [যদি দশমিক চলে আসে তবে পরবর্তী পূর্ণসংখ্যা নিতে হয়]

সুতরাং শ্রেণি ব্যবধান 5 ধরে ক্রমযোজিত গণসংখ্যা সারণি হবে নিম্নরূপ :

চলক (Variable) : আমরা জানি সংখ্যাসূচক তথ্যসমূহ পরিসংখ্যানের উপাত্ত। উপাত্তে ব্যবহৃত সংখ্যাসমূহ চলকের মান নির্দেশ করে। যেমন, উদাহরণ ১ এ তাপমাত্রা ও উদাহরণ ২ এ প্রাপ্ত নম্বর চলক।

বিচ্ছিন্ন ও অবিচ্ছিন্ন চলক (Discrete and Continuous Variable) : পরিসংখ্যানে ব্যবহৃত চলক দুই প্রকারের হয়। যেমন বিচ্ছিন্ন চলক ও অবিচ্ছিন্ন চলক। যে চলকের মান শুধুমাত্র পূর্ণসংখ্যা হয় তা বিচ্ছিন্ন চলক, যেমন উদাহরণ ২ এ ব্যবহৃত প্রাপ্ত নম্বর। তদনুরূপ জনসংখ্যা নির্দেশক উপাত্তে পূর্ণসংখ্যা ব্যবহৃত হয়। তাই জনসংখ্যামূলক উপাত্তের চলক হচ্ছে বিচ্ছিন্ন চলক। আর যে সকল চলকের মান যেকোনো বাস্তব সংখ্যা হতে পারে, সে সকল চলক অবিচ্ছিন্ন চলক। যেমন উদাহরণ ১ এ তাপমাত্রা নির্দেশক উপাত্তে যেকোনো বাস্তব সংখ্যা হতে পারে। এ ছাড়া বয়স, উচ্চতা, ওজন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট উপাত্তে যেকোনো বাস্তব সংখ্যা ব্যবহার করা যায়। তাই এগুলোর জন্য ব্যবহৃত চলক হচ্ছে অবিচ্ছিন্ন চলক। অবিচ্ছিন্ন চলকের দুইটি মানের মধ্যবর্তী যেকোনো সংখ্যাও ঐ চলকের মান হতে পারে। অনেক সময় শ্রেণি ব্যবধান অবিচ্ছিন্ন করার প্রয়োজন হয়। শ্রেণি ব্যবধান অবিচ্ছিন্ন করার জন্য কোনো শ্রেণির উচ্চসীমা এবং পরবর্তী শ্রেণির নিম্নসীমার মধ্যবিন্দু নিয়ে সেই শ্রেণির প্রকৃত উচ্চসীমা এবং পরবর্তী শ্রেণির প্রকৃত নিম্নসীমা নির্ধারণ করা হয়। যেমন, উদাহরণ ১ এ প্রথম শ্রেণির প্রকৃত উচ্চসীমা ও নিম্নসীমা যথাক্রমে 8.5° ও 5.5° এবং দ্বিতীয় শ্রেণির উচ্চসীমা ও নিম্নসীমা যথাক্রমে 11.5° ও 8.5°, ইত্যাদি।

কাজ : তোমাদের শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনূর্ধ্ব ৪০ জনের দল গঠন কর। দলের সদস্যদের ওজন/উচ্চতা নিয়ে দলে গণসংখ্যা নিবেশন ও ক্রমযোজিত গণসংখ্যা সারণি তৈরি কর।

 

উপাত্তের লেখচিত্র (Graphs or Plots of Data) : আমরা দেখেছি যে, অনুসন্ধানাধীন সংগৃহীত উপাত্ত পরিসংখ্যানের কাঁচামাল। এগুলো গণসংখ্যা নিবেশন সারণিভুক্ত বা ক্রমযোজিত সারণিভুক্ত করা হলে এদের সম্বন্ধে সম্যক ধারণা করা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। এই সারণিভুক্ত উপাত্তসমূহ যদি লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়, তবে তা বুঝানোর জন্য যেমন আরও সহজ হয় তেমনি চিত্তাকর্ষক হয়। এ জন্য পরিসংখ্যানের উপাত্তসমূহ সারণিভুক্ত করা ও লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন বহুল প্রচলিত এবং ব্যাপক ব্যবহৃত পদ্ধতি। ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকার লেখচিত্রের মধ্যে রেখাচিত্র ও আয়তলেখ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবং এগুলো কীভাবে আঁকতে হয় তা দেখানো হয়েছে। এখানে কীভাবে গণসংখ্যা নিবেশন ও ক্রমযোজিত গণসংখ্যা সারণি থেকে গণসংখ্যা বহুভুজ ও অজিভ রেখা আঁকা হয় তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

গণসংখ্যা বহুভুজ (Frequency Polygon ) : ৮ম শ্রেণিতে আমরা বিচ্ছিন্ন উপাত্তের আয়তলেখ আঁকা শিখেছি। এখানে কীভাবে প্রথমে অবিচ্ছিন্ন উপাত্তের আয়তলেখ এঁকে তার গণসংখ্যা বহুভুজ আঁকা হয়, তা উদাহরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলো।

 

উদাহরণ ৩. কোনো স্কুলের ১০ম শ্রেণির ৬০ জন শিক্ষার্থীর ওজনের গণসংখ্যা নিবেশন হলো নিম্নরূপ :

ক) গণসংখ্যা নিবেশনের আয়তলেখ আঁক।

খ) আয়তলেখের গণসংখ্যা বহুভুজ আঁক।

সমাধান : প্রদত্ত সারণিতে উপাত্তের শ্রেণি ব্যবধান বিচ্ছিন্ন। শ্রেণি ব্যবধান অবিচ্ছিন্ন হলে সারণি হবে :

ক) ছক কাগজের প্রতি ঘরকে পাঁচ একক ধরে x-অক্ষ বরাবর শ্রেণিসীমা এবং y-অক্ষ বরাবর গণসংখ্যা নিয়ে নিচে আয়তলেখ আঁকা হয়েছে। x-অক্ষ বরাবর শ্রেণিসীমা 45.5 থেকে আরম্ভ হয়েছে। মূলবিন্দু থেকে 45.5 পর্যন্ত পূর্ববর্তী ঘরগুলো আছে বোঝাতে / ছেদ চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে।

 

খ) আয়তলেখ হতে গণসংখ্যা বহুভুজ আঁকার জন্য আয়তলেখের আয়তসমূহের ভূমির সমান্তরাল বিপরীত বাহুর মধ্যবিন্দুসমূহ নির্ধারণ করা হয়েছে। চিহ্নিত মধ্যবিন্দুসমূহ রেখাংশ দ্বারা সংযুক্ত করে গণসংখ্যা বহুভুজ আঁকা হয়েছে। গণসংখ্যা বহুভুজ সুন্দর দেখানোর জন্য প্রথম ও শেষ আয়তের মধ্যবিন্দুর সংযোগ রেখাংশের প্রান্ত বিন্দুদ্বয় শ্রেণি ব্যবধান নির্দেশক x-অক্ষের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।

গণসংখ্যা বহুভুজ : কোনো অবিচ্ছিন্ন উপাত্তের শ্রেণি ব্যবধানের বিপরীতে গণসংখ্যা নির্দেশক বিন্দুসমূহকে পর্যায়ক্রমে রেখাংশ দ্বারা যুক্ত করে যে লেখচিত্র পাওয়া যায়, তাই হলো গণসংখ্যা বহুভুজ। লক্ষ কর এখানে রেখাংশগুলো প্রতিটি শ্রেণির মধ্যবিন্দু বরাবর।

 

উদাহরণ ৪. নিচের গণসংখ্যা নিবেশন সারণির বহুভুজ অঙ্কন কর।

সমাধান : x-অক্ষ বরাবর ছক কাগজের প্রতি ঘরকে 10 একক ধরে এবং y-অক্ষ বরাবর ছক কাগজের প্রতি ঘরকে গণসংখ্যার 5 একক ধরে প্রদত্ত গণসংখ্যা নিবেশনের আয়তলেখ আঁকা হলো। আয়তলেখের আয়তসমূহের ভূমির বিপরীত বাহুর মধ্যবিন্দু যা শ্রেণির মধ্যবিন্দু চিহ্নিত করি। এখন চিহ্নিত মধ্যবিন্দুসমূহ রেখাংশ দ্বারা সংযুক্ত করি। প্রথম শ্রেণির প্রান্তবিন্দু ও শেষ শ্রেণির প্রান্তবিন্দুদ্বয়কে শ্রেণি ব্যবধান নির্দেশক x-অক্ষের সাথে সংযুক্ত করে গণসংখ্যা বহুভুজ অঙ্কন করা হলো।

কাজ : তোমাদের শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় বাংলায় প্রাপ্ত নম্বর নিয়ে গণসংখ্যা বহুভুজ আঁক।

 

উদাহরণ ৫. ১০ম শ্রেণির 50 জন শিক্ষার্থীর বিজ্ঞান বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বরের গণসংখ্যা নিবেশন সারণি দেওয়া হলো। প্রদত্ত উপাত্তের গণসংখ্যা বহুভুজ আঁক (আয়তলেখ ব্যবহার না করে)।

সমাধান : এখানে প্রদত্ত উপাত্ত বিচ্ছিন্ন। এক্ষেত্রে শ্রেণি ব্যবধানের মধ্যবিন্দু বের করে সরাসরি গণসংখ্যা 31 +40 বহুভুজ আঁকা সুবিধাজনক। প্রথম শ্রেণি (31 – 40) এর মধ্যবিন্দু 31+402=35.5 ।

x-অক্ষ বরাবর ছক কাগজের প্রতি এক ঘরকে এক একক ধরে এবং y-অক্ষ বরাবর ছক কাগজের ১ ঘরকে গণসংখ্যার ২ একক ধরে প্রদত্ত উপাত্তের গণসংখ্যা বহুভুজ আঁকা হলো।

 

ক্রমযোজিত গণসংখ্যা লেখচিত্র বা অজিভ রেখা (Cumulative Frequency Graph or Ogive Graph): কোনো উপাত্তের শ্রেণি বিন্যাসের পর শ্রেণি ব্যবধানের উচ্চসীমা x-অক্ষ বরাবর এবং শ্রেণির ক্রমযোজিত গণসংখ্যা y-অক্ষ বরাবর স্থাপন করে ক্রমযোজিত গণসংখ্যার লেখচিত্র বা অজিভ রেখা পাওয়া যায়।

 

উদাহরণ ৬. কোনো শ্রেণির ৬০ জন শিক্ষার্থীর ৫০ নম্বরের সাময়িকী পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের গণসংখ্যা নিবেশন সারণি হলো :

এই গণসংখ্যা নিবেশনের অজিভ রেখা আঁক।

সমাধান : প্রদত্ত উপাত্তের গণসংখ্যা নিবেশনের ক্রমযোজিত গণসংখ্যা সারণি হলো :

ছক কাগজের উভয় অক্ষে প্রতি এক ঘরকে দুই একক ধরে প্রদত্ত উপাত্তের ক্রমযোজিত গণসংখ্যার অজিভ রেখা আঁকা হলো।

কাজ : কোনো এক পরীক্ষায় গণিতে তোমাদের শ্রেণির ৫০ বা তার চেয়ে বেশি নম্বরপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নম্বরের ক্রমযোজিত গণসংখ্যা সারণি তৈরি কর এবং অজিভ রেখা আঁক।

কেন্দ্রীয় প্রবণতা (Central Tendency): ৭ম ও ৮ম শ্রেণিতে কেন্দ্রীয় প্রবণতা সমন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। অনুসন্ধানাধীন অবিন্যস্ত উপাত্তসমূহ মানের ক্রমানুসারে সাজালে, উপাত্তসমূহ মাঝামাঝি কোনো মানের কাছাকাছি পুঞ্জিভূত হয়। আবার অবিন্যস্ত উপাত্তসমূহ গণসংখ্যা নিবেশন সারণিতে উপস্থাপন করা হলে মাঝামাঝি একটি শ্রেণিতে গণসংখ্যার প্রাচুর্য দেখা যায়। অর্থাৎ, মাঝামাঝি একটি শ্রেণিতে গণসংখ্যা খুব বেশি হয়। বস্তুত উপাত্তসমূহের কেন্দ্রীয় মানের দিকে পুঞ্জিভূত হওয়ার এই প্রবণতাই হলো কেন্দ্রীয় প্রবণতা। কেন্দ্রীয় মান একটি সংখ্যা এবং এই সংখ্যা উপাত্তসমূহের প্রতিনিধিত্ব করে। এই সংখ্যা দ্বারা কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপ করা হয়। সাধারণত কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ হলো: (১) গাণিতিক গড় (২) মধ্যক (৩) প্রচুরক।

গাণিতিক গড় (Arithmetic Average or Mean) : আমরা জানি, উপাত্তসমূহের মানের সমষ্টিকে যদি তার সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা হয়, তবে উপাত্তসমূহের গড় মান পাওয়া যায়। তবে উপাত্তসমূহের সংখ্যা যদি খুব বেশি হয় তাহলে এ পদ্ধতিতে গড় নির্ণয় করা সময়সাপেক্ষ, বেশ কঠিন ও ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ সকল ক্ষেত্রে উপাত্তসমূহ শ্রেণি বিন্যাসের মাধ্যমে সারণিবদ্ধ করে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে গড় নির্ণয় করা হয়।

 

উদাহরণ ৭. নিচে কোনো একটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গণিতে প্রাপ্ত নম্বরের গণসংখ্যা নিবেশন সারণি দেওয়া হলো। প্রাপ্ত নম্বরের গাণিতিক গড় নির্ণয় কর।

সমাধান : এখানে শ্রেণি ব্যাপ্তি দেওয়া আছে বিধায় শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত নম্বর কত তা জানা যায় না। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক শ্রেণির শ্রেণি মধ্যমান নির্ণয় করার প্রয়োজন হয়।

নির্ণেয় গাণিতিক গড়

শ্রেণিবিন্যাসকৃত উপাত্তের গাণিতিক গড় (সহজ পদ্ধতি) : শ্রেণিবিন্যাসকৃত উপাত্তের গাণিতিক গড় নির্ণয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি হলো সহজ পদ্ধতি, যাতে গড় নির্ণয়ের ধাপসমূহ নিম্নরূপ :

১. শ্রেণিসমূহের মধ্যমান নির্ণয় করা

২. মধ্যমানসমূহ থেকে সুবিধাজনক কোনো মানকে আনুমানিক গড় (a) ধরা

৩. প্রত্যেক শ্রেণির মধ্যমান থেকে আনুমানিক গড় বিয়োগ করে একে শ্রেণি ব্যাপ্তি দ্বারা ভাগ করে 

৪. ধাপ বিচ্যুতিকে সংশ্লিষ্ট শ্রেণির গণসংখ্যা দ্বারা গুণ করা

৫. বিচ্যুতির গড় নির্ণয় করা এবং এর সাথে আনুমানিক গড় যোগ করে কাঙ্খিত গড় নির্ণয় করা ।

 

সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি : শ্রেণিবিন্যাসকৃত উপাত্তসমূহের গাণিতিক গড়

 

উদাহরণ ৮. কোনো দ্রব্যের উৎপাদনে বিভিন্ন পর্যায়ে যে খরচসমূহ (শত টাকায়) হয় তা নিচের সারণিতে দেখানো হয়েছে। সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে গড় খরচ নির্ণয় কর।

সমাধান : সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে অনুসৃত ধাপের আলোকে গড় নির্ণয়ের সারণি হবে নিম্নরূপ :

 

গুরুত্ব যুক্ত উপাত্তের গড় নির্ণয় (Determination of Weighted Average) : অনেক ক্ষেত্রে অনুসন্ধানাধীন পরিসংখ্যানের চলকের সাংখ্যিক মান x1, x2,  . . .  xn বিভিন্ন কারণ/গুরুত্ব/ভার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে । এ সকল ক্ষেত্রে উপাত্তের মান x1, x2, ,  . . .  xn এর সাথে এদের কারণ/গুরুত্ব/ভার w1, w2,  . . .  wn বিবেচনা করে গাণিতিক গড় নির্ণয় করতে হয়। যদি n সংখ্যক উপাত্তের মান  x1, x2, ,  . . .  xn হয় এবং এদের গুরুত্ব w1, w2,  . . .  wn হয়, তবে এদের গুরুত্ব প্রদত্ত গাণিতিক গড় হবে :

 

উদাহরণ ৯. কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে পাশের হার ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিচের সারণিতে উপস্থাপন করা হলো। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ কয়টি বিভাগের স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে পাশের গড় হার নির্ণয় কর।

 

সমাধান : এখানে পাশের হার ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেওয়া আছে। পাশের হারের ভার হলো শিক্ষার্থীর সংখ্যা। যদি পাশের হারের চলক x এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা চলক . ধরা হয়, তবে গুরুত্ব প্রদত্ত গাণিতিক গড় নির্ণয়ের সারণি হবে নিম্নরূপ :

 পাশের গড় হার 77.14

কাজ : তোমাদের উপজেলার কয়েকটি স্কুলের এস.এস.সি পাশের হার ও তাদের সংখ্যা সংগ্রহ কর এবং পাশের গড় হার নির্ণয় কর।

 

মধ্যক (Median): ৮ম শ্রেণিতে আমরা শিখেছি যে, পরিসংখ্যানের উপাত্তগুলো মানের ক্রমানুসারে সাজালে যেসকল উপাত্ত ঠিক মাঝখানে থাকে সেইগুলোর মানই হবে উপাত্তগুলোর মধ্যক। যদি উপাত্তের সংখ্যা n হয় এবং n যদি বিজোড় সংখ্যা হয় তবে মধ্যক হবে n+12 তম পদের মান। আর n যদি জোড় সংখ্যা হয় তবে মধ্যক হবে n2 তম ও n2+1 তম পদ দুইটির সাংখ্যিক মানের গড়। এখানে সূত্র ব্যবহার না করে এবং ব্যবহার করে কীভাবে মধ্যক নির্ণয় করা হয় তা উদাহরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলো।

 

উদাহরণ ১০. নিচের 51 জন শিক্ষার্থীর উচ্চতার গণসংখ্যা নিবেশন সারণি দেওয়া হলো। মধ্যক নির্ণয় কর।

সমাধান : মধ্যক নির্ণয়ের ক্রমযোজিত গণসংখ্যা সারণি :

নির্ণেয় মধ্যক 165 সে.মি.।

লক্ষ করি : 23 থেকে 38 তম পদের মান 165 ।

 

উদাহরণ ১১. নিচে 60 জন শিক্ষার্থীর গণিতে প্রাপ্ত নম্বরের গণসংখ্যা নিবেশন সারণি। মধ্যক নির্ণয় কর।

সমাধান : মধ্যক নির্ণয়ের ক্রমযোজিত গণসংখ্যা সারণি :

এখানে, n = 60, যা জোড় সংখ্যা।

 নির্ণেয় মধ্যক 75 ।

কাজ :

ক) তোমাদের শ্রেণির 49 জন শিক্ষার্থীর উচ্চতা (সে.মি.) নিয়ে গণসংখ্যা সারণি তৈরি কর এবং কোনো সূত্র ব্যবহার না করে মধ্যক নির্ণয় কর।

খ) পূর্বের সমস্যা থেকে 9 জনের উচ্চতা বাদ দিয়ে 40 জনের উচ্চতার (সে.মি.) মধ্যক নির্ণয় কর।

 

 

উদাহরণ ১২. নিচে একটি গণসংখ্যা নিবেশন সারণি দেওয়া আছে।

ক) গণসংখ্যা নিবেশন সারণি বলতে কী বুঝ?

খ) উপরের গণসংখ্যা সারণি থেকে মধ্যক নির্ণয় কর।

গ) তারপর সারণিতে প্রদত্ত উপাত্তের বহুভুজ অঙ্কন কর।

সমাধান :

ক) প্রদত্ত উপাত্তসমূহকে নির্দিষ্ট শ্রেণি ব্যবধান ও শ্রেণি সংখ্যা নির্ধারণের মাধ্যমে বিন্যস্ত ও সারণিভুক্ত করাকে গণসংখ্যা সারণি বলে।

খ) মধ্যক নির্ণয়ের জন্য গণসংখ্যা নিবেশন সারণি : 

 

 

কাজ : তোমাদের শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীকে নিয়ে ২টি দল গঠন কর। একটি সমস্যা সমাধানে প্রত্যেকের কত সময় লাগে (ক) তার গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি কর, (খ) সারণি হতে মধ্যক নির্ণয় কর।

 

প্রচুরক (Mode) : ৮ম শ্রেণিতে আমরা শিখেছি যে, কোনো উপাত্তে যে সংখ্যা সর্বাধিক বার উপস্থাপিত হয়, সেই সংখ্যাই উপাত্তের প্রচুরক। একটি উপাত্তের এক বা একাধিক প্রচুরক থাকতে পারে। কোন উপাত্তে যদি কোন সংখ্যাই একাধিকবার না থাকে তবে সেই উপাত্তে কোন প্রচুরক নেই। এখানে সূত্র ব্যবহার করে কীভাবে শ্রেণিবিন্যস্ত উপাত্তের প্রচুরক নির্ণয় করতে হয় তাই আলোচনা করা হলো।

 

উদাহরণ ১৩. নিচের সারণিটি লক্ষ কর।

ক) কেন্দ্রীয় প্রবণতা কী?

খ) প্রদত্ত সারণি থেকে প্রচুরক নির্ণয় কর।

গ) উপাত্তের অজিভ রেখা অঙ্কন কর।

সমাধান :

ক) অবিন্যস্ত উপাত্তসমূহ মানের ক্রমানুসারে সাজালে, উপাত্তসমূহ মাঝামাঝি কোনো মানের কাছাকাছি পুঞ্জিভূত হয়। আবার উপাত্তসমূহ গণসংখ্যা নিবেশন সারণিতে উপস্থাপন করা হলে কোনো একটি শ্রেণিতে গণসংখ্যার প্রাচুর্য দেখা যায়। উপাত্তসমূহের কেন্দ্রীয় মানের দিকে পুঞ্জিভূত হওয়ার এই প্রবণতাকে কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলে।

 

খ) প্রচুরক নির্ণয়ের সারণি :

 

গ) অজিভ রেখা অঙ্কনের জন্য সারণি :

 

 

উদাহরণ ১৪. নিচের গণসংখ্যা নিবেশন সারনি থেকে প্রচুরক নির্ণয় কর :

সমাধান : এখানে গণসংখ্যা সর্বাধিক 25 বার আছে (41 – 50 ) শ্রেণিতে। সুতরাং, প্রচুরক এই শ্রেণিতে আছে।

 

উদাহরণ ১৫. নিচের গণসংখ্যা নিবেশন সারনি থেকে প্রচুরক নির্ণয় কর :

সমাধান : 

এখানে গণসংখ্যা সর্বাধিক 25 বার আছে (41 – 50) শ্রেণিতে। এই শ্রেণিতে প্রচুরক বিদ্যমান। আমরা জানি প্রচুরক 

শ্রেণি বিন্যস্ত উপাত্তে প্রথম শ্রেণি প্রচুরক শ্রেণি হলে, তার আগের শ্রেণির গণসংখ্যা শূন্য ধরতে হয়। শ্রেণিবিন্যস্ত উপাত্তে শেষ শ্রেণি প্রচুরক শ্রেণি হলে, তার পরের শ্রেণির গণসংখ্যা শূন্য ধরতে হয়।
Content added || updated By

Promotion