সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - খ্রিষ্টধর্ম শিক্ষা - অঞ্জলি ১ | NCTB BOOK

শুভেচ্ছা বিনিময় করো এবং সমবেত প্রার্থনা করে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নাও ।

প্রিয় শিক্ষার্থী, মহান সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর ও তাঁর নির্দেশাবলি জানার একমাত্র উৎস হচ্ছে বাইবেল। বাইবেলের প্রতিটি বাক্য হচ্ছে ঈশ্বরের বাণী। বাইবেল পড়ে আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা ও নির্দেশনা জানতে পারি। বাইবেল হচ্ছে খ্রীষ্টধর্মীয় জ্ঞানের মৌলিক উৎস। স্বয়ং ঈশ্বর বাইবেলের রচিয়তা।

চলো দেখি পবিত্র বাইবেলে এ বিষয়ে কী লেখা আছে।

ছেলেবেলা থেকে তুমি পবিত্র শাস্ত্র থেকে শিক্ষালাভ করেছ। আর এই পবিত্র শাস্ত্রই তোমাকে যীশুখ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে পাপ থেকে উদ্ধার পাবার জ্ঞান দিতে পারে। পবিত্র শাস্ত্রের প্রত্যেকটি কথা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে এবং তা শিক্ষা, চেতনা দান, সংশোধন এবং সৎ জীবনে গড়ে উঠবার জন্য দরকারি, যাতে ঈশ্বরের লোক সম্পূর্ণভাবে উপযুক্ত হয়ে ভালো কাজ করবার জন্য প্রস্তুত হতে পারে।  ২ তীমথিয় ৩ : ১৫-১৭

তোমাকে একটু সহজ করে বলি

নিঃসন্দেহে বাইবেলের রচিয়তা একমাত্র ঈশ্বর। পবিত্র আত্মা বিভিন্ন প্রবক্তা ও প্রেরিত শিষ্যদের তার জ্ঞানে অনুপ্রাণিত করে ঈশ্বরের বাক্য লিখতে পরিচালিত করেছেন। ঈশ্বরের মনোনীত ৪০জন ব্যক্তি ১৬০০ বছরে বাইবেল লিখেছেন। এই ব্যক্তিগণ বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। যেমন যিশাইয় ছিলেন একজন ভাববাদী, ইস্রা ছিলেন যাজক, মথি ছিলেন কর-আদায়কারী, মোশী ছিলেন মেষপালক, লুক ছিলেন চিকিৎসক, পৌল তাবু সেলাই করতেন, যোহন ছিলেন জেলে। তাঁরা সবাই ভিন্ন ধরনের ব্যক্তি এবং ১৬০০ বছরেরর ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও বাইবেলের ঘটনা বর্ণনায় কোনো বৈপরীত্য নেই বরং ধারাবাহিকতা রয়েছে।

বাইবেল লেখকগণ সবাই নিজ ভাষায় এক ঈশ্বরের কথা এবং মানুষের পরিত্রাণের পথ যে যীশুখ্ৰীষ্ট তা প্রকাশ করেছেন। এটা একমাত্র সম্ভব হয় যদি সম্পূর্ণ বাইবেল ঈশ্বরের পরিচালনাতেই লেখা হয়।

পবিত্র বাইবেল কী

গ্রিক শব্দ “বিবলিয়া” থেকে এসেছে বাইবেল। বাইবেলের যথার্থ অর্থ বই বা পুস্তক। বাইবেলে ছোট-বড় বেশ কটি পুস্তক আছে। পবিত্র বাইবেল লেখা শুরু হয়েছিল খ্রীষ্টের জন্মের ৯৫০ বছর পূর্বে, রাজা দায়ুদ ও সলোমনের রাজত্বকালে। পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় কয়েকজন লেখক বাইবেল লিখেছেন। বাইবেল হলো ঈশ্বর ও মানবজাতির মধ্যে ভালোবাসার এক দীর্ঘ ইতিহাস। পবিত্র বাইবেলের পুস্তকগুলোর একটির সাথে অন্যটির ঘটনার ধারাবাহিকতা রয়েছে।

পবিত্র বাইবেলের ভাগসমূহ

পবিত্র বাইবেল প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত - পুরাতন নিয়ম ও নতুন নিয়ম। নিয়ম মানে সন্ধি। এ কারণে এ ভাগ দুটিকে যথাক্রমে প্রাক্তন সন্ধি ও নবসন্ধি বলা হয়।

পুরাতন নিয়ম বা প্রাক্তন সন্ধি

পুরাতন নিয়মে যীশুখ্রীষ্টের জন্মের পূর্বের কথা লেখা হয়েছে। ঈশ্বর তাঁর ভক্ত আব্রাহামের সাথে এক মহাসন্ধি স্থাপন করেছিলেন। ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আব্রাহামের বংশ আকাশের তারকারাজির মতো ও সমুদ্রতীরের বালুকণার মতো অগণিত হবে। আব্রাহাম ও তাঁর বংশধরদের আপন করে নিয়েছেন এবং চেয়েছেন যেন তারাও ঈশ্বরকে ভালোবাসেন। এভাবে ঈশ্বর ও ইস্রায়েল জাতির মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরাতন নিয়মে এ সম্পর্কই প্রাধান্য লাভ করেছে। ঈশ্বর তাঁর এ জাতির জন্য রাজা ও প্রবক্তাদের পাঠিয়েছেন। তাঁরা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী ইস্রায়েল জাতিকে পরিচালনা করেছেন। পুরাতন নিয়মে তারই ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে।

প্রোটেস্টান্ট সম্প্রদায় ব্যবহৃত বাইবেলে পুরাতন নিয়মে ৩৯টি পুস্তক আছে এবং রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায় ব্যবহৃত বাইবেলে পুরাতন নিয়মে ৪৬টি পুস্তক রয়েছে। এ পুস্তকগুলো চারভাগে বিভক্ত।

১) পঞ্চপুস্তক (৫টি) 

২) ঐতিহাসিক পুস্তকসমূহ (১৬টি) 

৩) জ্ঞানধর্মী পুস্তক (৭টি) 

৪) প্রাবক্তিক পুস্তকসমূহ (১৮টি)

নতুন নিয়ম বা নব সন্ধি

দীক্ষাগুরু সাধু যোহনের জন্ম থেকে শুরু করে প্রেরিত শিষ্যদের বাণী প্রচার কাজ নিয়ে নব সন্ধি লেখা হয়েছে। নতুন নিয়মে পুস্তকের সংখ্যা ২৭টি। এ পুস্তক আবার পাঁচভাগে বিভক্ত। যথা :

১) মঙ্গল সমাচার (সুসমাচার), যাতে আছে চারটি বই : মথি, মার্ক, লুক, যোহন

২) খ্রীষ্ট মণ্ডলীর ইতিহাস, যাতে আছে একটি বই : শিষ্যচরিত বা প্রেরিতদের কার্যাবলী

৩) সাধু পলের (পৌলের) নামে পরিচিত ধর্মপত্রসমূহ-১৪টি। যথা : রোমীয়, ১ করিন্থীয়, ২ করিন্থীয়, গালাতীয়, এফেসিয় (ইফিসিয়), ফিলিপীয়, কলসীয়, ১ থেসালোনিকীয়, ২ থেসালোনিকীয়, ১ তিমথি, ২ তিমথি, তীত, ফিলেমন, হিব্রুদের কাছে ধর্মপত্র

৪) সাতটি কাথলিক ধর্মপত্র বা পত্র। যথা : যাকোব, ১ পিতর, ২ পিতর, যোহন, ১ যোহন, ২ যোহন, ৩ যোহন, যুদের (যিহূদা)

৫) প্রাবক্তিক গ্রন্থ ১টি, যথা : প্রত্যাদেশ বা প্রকাশিত বাক্য

প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক আলাদা দুটি পোস্টার পেপারে পুরাতন নিয়মের ও নতুন পুস্তকসমূহের নাম প্রদর্শন করবে । তুমি নিশ্চয়ই এ থেকে পুস্তকগুলোর নামের সাথে পরিচিত হতে পারবে।

পবিত্র বাইবেল পাঠের গুরুত্ব

বাইবেল হচ্ছে ঈশ্বরের বাণী। আমরা যেমন প্রার্থনা করার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করি ঠিক তেমনি বাইবেল পাঠের মাধ্যমে ঈশ্বরের সান্নিধ্য পেতে পারি। বাইবেল পাঠের মাধ্যমে আমরা খ্রীষ্টিয় জীবন যাপনের সঠিক নির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা পাই। বাইবেলের বাণী আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে দৃঢ় করে। যেমন আদিপুস্তক পাঠ করে ঈশ্বরের দশ আজ্ঞা পালনে অনুপ্রাণিত হয়। নতুন নিয়মে রয়েছে যীশুর দেয়া নতুন বিধিবিধান যা আমাদের ঈশ্বর, মানুষ ও প্রতিবেশীকে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত করে।

বাইবেল, মানব জাতির মুক্তির ইতিহাসের ধারাবাহিক ঘটনা

বাইবেলে রয়েছে মোট ৭৩টি পুস্তক (প্রোটেস্টান্ট বাইবেলে ৬৬টি)। এই পুস্তকগুলোতে মানব জাতির মুক্তির ইতিহাস ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

শিক্ষক তোমাদের নিচের প্রবাহ চিত্রের মাধ্যমে বিষয়টি সহজভাবে বোঝাতে পারেন।

আদিপুস্তক : আব্রাহামের কাছে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি, তাঁর বংশ আকাশের তারকারাজির মতো হবে এবং তারা হবে তাঁর আপন জাতি আর তার বংশেই জন্ম নিবে মানব জাতির ত্রাণকর্তা

যাত্রাপুস্তক : মিশরদেশ থেকে মোশীর মাধ্যমে ইস্রায়েল জাতির মুক্তি এবং মোশির হাতে দশ আজ্ঞা প্রদান

রাজাবলী : কয়েক রাজা যেমন, সলোমন ও দায়ুদের মাধ্যমে ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে পরিচালনা করেন এবং দায়ুদ বংশে উদ্ধারকর্তার জন্ম নিবে এই প্রতিশ্রুতি দেন

বিভিন্ন প্রবক্তাকে ঈশ্বর পাঠিয়েছেন যারা ইস্রায়েল জাতিকে ঈশ্বরের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন এবং প্রবক্তাগণ যীশুর জন্ম বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাবাণী করেছেন

বাইবেলের নতুন নিয়মে মঙ্গলসমাচারে দেখানো হয়েছে দায়ুদ বংশেই যীশুর জন্ম হয়েছে এবং যীশুই সেই মশীহ যার আসবার কথা প্রবক্তাগণ বলে গেছেন

Content added By