সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ | NCTB BOOK

ভাইরাস, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল, প্রোটোজোয়া ইত্যাদি ধরনের অণুজীব আমাদের পরিবেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এগুলো অধিকাংশই আমাদের উপকার করে। তবে কিছু কিছু অণুজীব আছে, যেগুলো আমাদের দেহে রোগ সৃষ্টি করে। এবার আমরা কয়েকটি অণুজীব সম্পর্কে জানব।

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া

ভাইরাস

উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া ভাইরাসকে দেখা যায় না। ভাইরাসকে অণুজীব হিসেবে বিবেচনা করলেও এগুলোর আসলে স্বাধীন জীবন নেই। পরিবেশে এগুলো থাকে নির্জীব কণা হিসেবে। কিন্তু অন্য কোনো জীবের কোষে প্রবেশ করার পর ভাইরাস জীবের মতো আচরণ করতে পারে। ভাইরাসের দেহে কোষপ্রাচীর, সুসংগঠিত নিউক্লিয়াস, সাইটোপ্লাজম ইত্যাদি কিছুই নেই। তাই ভাইরাস দেহকে অকোষীয় ও বলা হয়। এগুলো শুধু আমিষ (প্রোটিন) আবরণ ও নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ বা আরএনএ) নিয়ে গঠিত। এগুলোর আমিষ আবরণ থেকে নিউক্লিক অ্যাসিড বের হয়ে গেলে এগুলো জীবনের সকল লক্ষণ হারিয়ে ফেলে। তবে অন্য জীবকোষে প্রবেশের পর যখনই সেগুলো প্রোটিন আবরণ ও নিউক্লিক অ্যাসিডকে একত্র করতে পারে, তখন এগুলো জীবনের সব লক্ষণ ফিরে পায়। অর্থাৎ জীবিত জীবদেহ ছাড়া বা জীবদেহের বাইরে এগুলো জীবনের কোনো লক্ষণ দেখায় না। এ কারণে ভাইরাস প্রকৃত পরজীবী।

ভাইরাসের মধ্যে ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাস একটি পরিচিত ভাইরাস। যেসব ভাইরাস ব্যাকটেরয়াকে ভক্ষণ করে, সেগুলোই হলো ব্যাকটেরিওফাজ। এগুলো ব্যাকটেরিয়া কোষে প্রবেশের পর জীবনের লক্ষণ প্রকাশ করে। চিত্রে এগুলোর গঠন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো। 

একটি সাধারণ ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাস

ভাইরাস গোলাকার, দণ্ডাকার, ব্যাঙাচির মতো ইত্যাদি আকৃতির হতে পারে। তবে ভাইরাসবাহিত রোগ বলতেই এই মুহূর্তে সবার আগে যে রোগটির কথা চলে আসে তা হলো কোভিড-১৯, যা প্রচলিত ভাষায় ‘করোনা' নামেই পরিচিত। করোনাভাইরাস আবার বিভিন্ন ধরনের হয়, এরকম একটি ধরণ হলো SARS-CoV-2 যা মূলত কোভিড-১৯ রোগের জন্য দায়ী। কোভিড-১৯ হলে কী ধরনের উপসর্গ হয় তোমরা সবাই ইতোমধ্যে জানো। অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে ছড়ায় এই রোগ, আক্রান্ত রোগীর সাধারণ সর্দিকাশি থেকে শুরু করে ফুসফুসের জটিলতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি গত কয়েক বছরে সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে এই বিশেষ ধরনের করোনাভাইরাস।

ভাইরাস শুধু মানুষের জন্যেই বিপদ ডেকে আনে, তা নয়। মানুষ বা অন্যান্য প্রাণী ছাড়াও উদ্ভিদের অনেক রোগের জন্যেও দায়ী বিভিন্ন ভাইরাস; যেমন- ধানের টুংরো ও তামাকের মোজায়েক রোগ ভাইরাসের কারণে হয়।

এপর্যন্ত পড়ে মনে হতে পারে যে প্রকৃতিতে শুধুই রোগ দুর্ভোগ ডেকে আনা ছাড়া ভাইরাসের আর কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু কথাটা সত্য নয়, বরং প্রকৃতিতে ভারসাম্য রক্ষার জন্য অন্য সব জীবের মতো ভাইরাসেরও প্রয়োজন। সত্যি বলতে পৃথিবীতে বাস করা অসংখ্য ভাইরাসের মধ্যে খুব কম ভাইরাসই আমাদের রোগের কারণ ঘটায়।

ব্যাকটেরিয়া

ব্যাকটেরিয়ার কিছু কথা আমরা আগের শ্রেণিতে জেনেছি। এবার একটু বিস্তারিত জানব। ব্যাকটেরিয়া হলো আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত, অসবুজ, এককোষী অণুবীক্ষণিক জীব (অর্থাৎ এগুলোর অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না)। বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ফন লিউয়েন হুক সর্বপ্রথম অণুবীক্ষণযন্ত্র ব্যবহার করে ব্যাকটেরিয়া দেখতে পান। ব্যাকটেরিয়া কোষ গোলাকার, দণ্ডাকার, কমা আকার, প্যাঁচানো ইত্যাদি ধরনের হতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার আকার-আকৃতির ভিত্তিতে এগুলোকে নিম্নরূপে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়:

বিভিন্ন আকৃতির ব্যাকটেরিয়া

ক) কক্কাস (Coccus): কোনো কোনো ব্যাকটেরিয়া কোষের আকৃতি গোলাকার। এগুলো কক্কাস ব্যাকটেরিয়া । এগুলো এককভাবে অথবা দল বেঁধে থাকতে পারে, যেমন- নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া, যেগুলোকে নিউমোকক্কাস বলা হয়।

খ) ব্যাসিলাস (Bacillus ): এরা দেখতে লম্বা দণ্ডের ন্যায়। ধনুষ্টংকার, রক্ত আমাশয় ইত্যাদি রোগ এরা সৃষ্টি করে।

গ) কমা (Comma): এগুলো বাকা দণ্ডের মতো আকৃতির ব্যাকটেরিয়া। মানুষের কলেরা রোগের ব্যাকটেরিয়া এ ধরনের।

ঘ) স্পাইরিলাম (Spirillum): এ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আকৃতি প্যাঁচানো। ইঁদুরের কামড় থেকে অনেক সময় এ ধরনের ব্যাকেটেরিয়া আমাদের শরীরে ঢুকে জ্বরসহ বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি করে।

ব্যাকেরিয়া সরল আণুবীক্ষণিক জীব হলেও সেগুলোর কিন্তু একটি সুগঠিত কোষীয় গঠন রয়েছে। এসব কোষের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা প্রকৃতকোষী বা অকোষীয় অন্য জীবে পাওয়া যাবে না।

ব্যাকটেরিয়া আদিকোষী জীব। এর অর্থ, এসব কোষের নিউক্লিয়াস (Nucleus) বা কেন্দ্রিকা সুগঠিত নয়। কোষবিজ্ঞান অধ্যায়ে আমরা জেনেছি, একটি আদর্শ নিউক্লিয়াসের নিজস্ব পর্দা থাকে, যা নিউক্লিয়াসটিকে কোষের অন্য অংশ থেকে পৃথক করে রাখে। কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। সেগুলোর মূল নিউক্লিয়ার বস্তু তথা ডিএনএ (DNA) কোষের প্রোটোপ্লাজমে অবস্থান করে। এগুলোকে নিউক্লিয়েড (Nucleoid) বলা হয়।

Content added By