SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

Academy

কখন থেকে অটিস্টিক শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়? 

Created: 8 months ago | Updated: 8 months ago

আমরা চারপাশে যেসব শিশু দেখি তারা নিশ্চয়ই সবাই একইরকম নয়। কিছু শিশু শারীরিক, মানসিক ও
বুদ্ধিগত দিক থেকে সমাজের অন্যান্য সাধারণ শিশু থেকে আলাদা । যেসব শিশুর জন্য বিশেষ শিক্ষা, যত্ন ও
পরিচর্যার দরকার হয়, তারাই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। তারা হচ্ছে— প্রতিবন্ধী শিশু, অটিস্টিক শিশু ও
প্রতিভাবান শিশু। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী শিশু সম্পর্কে তোমরা সপ্তম শ্রেণিতে পড়েছ। এই পাঠে তোমরা
অটিস্টিক শিশু ও প্রতিভাবান শিশু সম্পর্কে জানবে।

 

পাঠ ১ ও ২- অটিস্টিক শিশু

আমরা আমাদের চারপাশে যে শিশুদের দেখি তাদের সকলের আচরণ কি একইরকম? কখনোই না। যেমন-
বাড়িতে কোনো অতিথি আসলে কোনো শিশু তার দিকে এগিয়ে যায়, সব প্রশ্নের স্বতঃস্ফূর্ত উত্তর দেয়। আবার
অন্য একটি শিশু অতিথি দেখলেই সামনে থেকে সরে পড়ে, তার দিকে তাকায় না, ভয় পায়। এইসব ছোটখাট
অসঙ্গতি খুবই স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা হয় তখনই যখন এইসব অসঙ্গতির এক বা
একাধিক রূপ একই শিশুর মধ্যে প্রকটভাবে থাকে এবং সকলের কাছে সেগুলো গ্রহণযোগ্যতার মাত্রা ছাড়িয়ে
যায়। এইসব অক্ষমতার কারণ সকলের কাছে স্পষ্ট থাকে না। যেমন- দৃষ্টিশক্তি সাভাবিক হওয়া সত্ত্বেও
চোখে চোখে তারা তাকিয়ে কথা বলতে পারে না। কিংবা বাকশক্তি স্বাভাবিক হওয়া সত্ত্বেও কোনো কথা
স্বাচ্ছন্দ্যে বুঝিয়ে বলতে পারে না। এ ধরনের শিশুর অক্ষমতাগুলোর সীমা বা আওতা বিশাল। বুদ্ধিবৃত্তীয় ও
আচরণগত সীমাবদ্ধতার এই সব শিশুই অটিস্টিক শিশু বা অটিজমের শিকার।

অটিজম কোনো মানসিক রোগ নয়। অটিজম বিকাশগত অক্ষমতা ও নিউরোবায়োলজিক্যাল ডিজঅর্ডার।
অটিজমের সুনির্দিষ্ট কারণ এখন পর্যন্ত অজানা। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের অধিক হারে অটিজম আক্রান্ত হতে
দেখা যায়। অটিজমের ক্ষেত্রে মেয়ে ও ছেলে শিশুর অনুপাত প্রায় ১৪৪। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বর্তমানে
অটিজম আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব অটিস্টিক সচেতনতা দিবস প্রতি
বছর ২ এপ্রিল পালন করা হয়।

অটিজমের লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য- আমরা সাধারণত যেসব রোগে ভুগে থাকি, তার লক্ষণগুলো সবার ক্ষেত্রে প্রায়
একই থাকে। যেমন- টাইফয়েড হলে জ্বর হয়। কিন্তু অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের সমস্যা বা লক্ষণ একই হবে
তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। জন্মের পর থেকেই অটিজমের কারণে শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্থ হতে থাকে।
লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় দেড় থেকে তিন বছর বয়সের মধ্যে।

অটিজম শিশু বিকাশের তিনটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

১. সামাজিক মিথস্ক্রিয়া (Social interaction)- অন্য কোনো ব্যক্তির প্রতি আগ্রহ না থাকা, কে কী
করছে তা নিয়ে কৌতূহল না থাকা, অন্যের আচরণ বুঝতে না পারা।

২. যোগাযোগ (Communication) - কথা বলতে না শেখা, কোনোমতে কথা বলা, কথা বলতে

পারলেও অন্যের সাথে আলাপচারিতা করতে সমর্থ না হওয়া।

৩. আচরণ (Pattern of Behavior ) - পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ অর্থাৎ একই কাজ বারবার করা।
নিজস্ব রুটিন অনুযায়ী আচরণে অভ্যস্ত এবং এতে অনমনীয় থাকা।

১. সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এ ক্ষেত্রে যে ধরনের সীমাবদ্ধতা দেখা যায়-

বাবা-মা বা নিয়মিতভাবে দেখা হচ্ছে এমন আপনজনদেরও চোখে চোখ রেখে তাকায় না। চোখে
চোখ দিয়ে যোগাযোগ অক্ষমতা অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে প্রকটভাবে দেখা যায়।

• শিশুকে নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় না। সে হয়তো নামের ব্যাপারটা বুঝতেই পারে না।

কোনো ধরনের আনন্দদায়ক বস্তু বা বিষয় সে অন্যদের সাথে শেয়ার করে না। যেমন- নতুন খেলনা
পেলে স্বাভাবিক শিশুরা যেমন সবাইকে দেখায়, অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে কোনো খেলনার প্রতি

আগ্রহ থাকলেও সেটা নিয়ে উচ্ছ্বাস থাকে না।

স্বাভাবিক শিশুরা কারও কোলে চড়তে বা আদর পেতে পছন্দ করে। কিন্তু অনেক অটিস্টিক শিশু এ
ব্যাপারে নিস্পৃহ থাকে। অন্য কারও সংস্পর্শে যাওয়াটা তারা তেমন পছন্দ করে না।

২. যোগাযোগ- এ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাগুলো হলো-

২-৩ বছর বয়সে শিশু যে সমস্ত শব্দ উচ্চারণ করতে পারে, অটিস্টিক শিশুরা তা পারে না।

অনেক সময় ৩-৫ বছর বয়সেও দু'তিন শব্দের বেশি দিয়ে বাক্য বলতে পারে না। নিজের

চাহিদাগুলো থার্ড পার্সনে বলে। নিজের নাম যদি হয় আসিফ তাহলে বলে 'আসিফ খাবো।
যে কোনো ছড়া অল্প কিছু শব্দের মধ্যে সব সময় বলে। যেমন- তাই তাই মামা যাই দুধ খাই লাঠি
পালাই। কিংবা আয় চাঁদ টিপ যা ইত্যাদি একই শব্দ বা বাক্যাংশ বারবার উচ্চারণ করার প্রবণতা

দেখা দিতে পারে। বাবা-মা মানা করলেও শোনে না বরং বিরক্ত হয়, রেগে যায়।

৩. আচরণ- এ ক্ষেত্রে যে ধরনের অসঙ্গতি থাকে তা হলো-

অটিস্টিক শিশুরা বিশেষ ধরনের আচরণ বারবার করতে থাকে। হয়তো শরীর দোলাতে থাকে,
আঙ্গুল নাড়াতে থাকে, খেলনা বাক্সে ঢোকায়, আবার বের করে- এভাবে পুনরাবৃত্তিমূলক কাজে দীর্ঘ
সময় কাটিয়ে দেয়।

অনেক অটিস্টিক শিশুই পেন্সিল ধরার স্বাভাবিক কায়দাটি পারে না, তারা মুঠোবন্দী করে ধরে।

তারা রুটিন মেনে চলতে ভালোবাসে। যেমন- বিছানায় যাওয়ার আগে হাতমুখ ধোওয়ার অভ্যাস
থাকলে হঠাৎ একদিন তা বাদ পড়লে সে চিৎকার করে। এরকম প্রতিক্রিয়ার কারণে অটিস্টিক
শিশুদেরকে জেদি বলে মনে করা হয়। বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও গেলে সে অস্বস্তি বোধ করে।

অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে সাধারনত পঁচিশ শতাংশের খিঁচুনি থাকতে পারে।

উপরের লক্ষণগুলো সব অটিস্টিক শিশুর মধ্যে একসাথে নাও থাকতে পারে। এ ধরনের কয়েকটি লক্ষণ বেশি
দিন ধরে থাকলে অবশ্যই শিশুটিকে নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
হলো, শিশুকে সমবয়সী শিশুদের সাথে মেলামেশার সুযোগ করে দেওয়া। এর মাধ্যমে একই বয়সী অন্য শিশুর
সাথে তুলনা করে শিশুর যে কোনো অস্বভাবিকতা নির্ণয় করা সম্ভব। শিশুর অটিজম দ্রুত শনাক্ত করে শিক্ষা
কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। যত কম বয়সে অটিজম শনাক্ত করা যায়, বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে
তত তাড়াতাড়ি তার আচরণের উন্নয়ন সম্ভব।

 

সমাজে অটিজম নিয়ে অনেক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা আছে। এ কারণে অটিজম সম্পর্কে বাস্তবতাগুলো আমাদের
স্পষ্টভাবে জানা দরকার। অনেকে মনে করেন যে, অটিজম নিরাময়যোগ্য। চিকিৎসায় তা সম্পূর্ণ ভালো হয়ে
যায়। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, অটিস্টিক শিশুরা আজীবন এই অক্ষমতার সমস্যায় ভোগে। অটিস্টিক শিশুর
সমস্যাগুলো কখনোই পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয়। যেটা সম্ভব তা হলো- নিবিড় পরিচর্যা ও যত্নের মাধ্যমে
তার অক্ষমতা কমিয়ে আনা, যথাযথ সহযোগিতা, বিশেষ শিক্ষা দিয়ে পরিণত বয়সে তাকে যথাস
আত্মনির্ভর করা।

অনেক সময় মনে করা হয় যে, অটিস্টিক শিশু বা ব্যক্তি সুপ্ত প্রতিভার অধিকারী। কিন্তু বাস্তবতা হলো অটিস্টিক
কেউ হয়তো বিশেষ কোনো কাজে দক্ষতা দেখাতে পারে কিন্তু এটা নিছকই ব্যতিক্রম ঘটনা। ২০-৩০% অটিস্টিক
শিশুর বুদ্ধিবৃত্তীয় অক্ষমতা থাকে না। এ ধরনের অটিজমকে অ্যাসপারগার সিনড্রোম বলা হয়। এদের অনেকেই
গণিতের মতো বিষয়ে সাভাবিক শিশুদের মতোই দক্ষতা অর্জন করতে পারে। তাদের মূল সমস্যা হলো
কথাগুলোকে সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। প্রশ্ন করা, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া
কিংবা কারও কথায় তারা মন্তব্য করতে পারে না।

অটিস্টিক শিশুদের জন্য আছে বিশেষ ধরনের স্কুল। এসব স্কুলে অটিস্টিক শিশুদেরকে প্রথাগত শিক্ষার
পাশাপাশি তাদের জন্য উপযোগী কোনো পেশাগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। নিবিড় যত্ন ও পরিচর্যার
মাধ্যমে তাদের অক্ষমতা একটু একটু করে কমিয়ে আনার চেষ্টা করাই বিশেষ শিক্ষার উদ্দেশ্য।

অটিজম স্কুলের ছাত্রীর নিজের আঁকা ছবি

অটিজম স্কুলের পাঠদান

অটিজম স্কুলের ছাত্র আদিল, বয়স ১৩ বছর। অটিস্টিক শিশু আদিল সম্পর্কে তার মায়ের উক্তি— “আদিল
কী কী পারে না, সে হিসাব আমি রাখতে চাই না। কী পারে সে কথাগুলোই বলতে চাই। ওকে নিয়ে যখন একা
থাকি, তখন অনেক সময় মনেই হয় না- ওর কোনো সমস্যা আছে। আদিল নিজের দৈনন্দিন কাজগুলো

মোটামুটি ভালোই করতে পারে। সে পাঁচ তলা থেকে চাবি নিয়ে গিয়ে নিচতলা থেকে বাসায় আগত মেহমানকে
সঙ্গে করে আনতে পারে। আবার মেহমানকে বিদায় দিয়ে চাবি নিয়ে বাসায় আসতে পারে। আদিল যথাসাধ্য
চেষ্টা করে তার কথা আমাকে বুঝিয়েই ছাড়ে। এ জন্যই তো বলতে চাই- অদিল এখন স্বাভাবিক শিশু।”
আদিলের এটুকু সক্ষমতায় তার মা তৃপ্ত। আদিলের মায়ের এই দৃঢ় মনোবল সকল অটিস্টিক শিশুর
পরিবারের জন্য প্রেরণা।

আমাদের দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যেই অটিজম সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে। এ কারণে এই
বিশেষ শিশুদের অভিভাবকদের পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়। রাস্তাঘাটে চলাচলে, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে
কিংবা সামাজিক কোনো আনন্দ অনুষ্ঠানে কোনো কোনো অটিস্টিক শিশুর অস্থিরতায় অনেকেই বিরক্ত হন।
অভিভাবকদের অনেক সময়ই এ ধরনের মন্তব্য শুনতে হয় যে পাগল বাচ্চাটিকে না আনলেও পারতেন।
এভাবে পারিবারিক, সামাজিক কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠানে এরা থাকে উপেক্ষিত। ভালোবাসাহীন বিভিন্ন মন্তব্যে
অভিভাবকরা হয়ে পড়েন বড় অসহায়। এসো আমরা সবাই অটিস্টিক শিশু ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়াই।
অটিস্টিক শিশুর সহযোগিতায় গণসচেতনতা তৈরি করি।

পাঠ ৩ – প্রতিভাবান শিশু

কোনো কোনো শিশু অধিকাংশ শিশুর তুলনায় এক বা একাধিক ক্ষমতার দিক থেকে উল্লেখযোগ্য পারদর্শিতা
প্রদর্শন করে থাকে। এরূপ শিশুরা প্রতিভাবান শিশু। প্রতিভাবান শিশু একাডেমিক শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্পকলা,
নেতৃত্ব, গবেষণা বা অন্য যে কোনো ক্ষেত্রে উন্নত অবস্থান ও পারদর্শিতার প্রমাণ দেয়। শিশুর মধ্যে যখন
বিভিন্ন দক্ষতা ও গুণাবলির সমন্বয় ঘটে তখন তারা প্রতিভাবান শিশু। এরাও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর মধ্যে
পড়ে। কারণ বিশেষ ধরনের পরিবেশ বা সুযোগ দেওয়া না হলে তাদের প্রতিভার সর্বোচ্চ বিকাশ হয় না।

প্রতিভাবান শিশুর বৈশিষ্ট্য—-

১। শারীরিক দিক দিয়ে প্রতিভাবান শিশু ও সমবয়সী অন্যান্য শিশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। সমাজে
মেধাবী শিশু বলতেই মনে করা হয়- চোখে চশমা, হাতে বইয়ের বোঝা নিয়ে থাকা একটি শিশু। এরকম
ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সমবয়সীদের চেয়ে প্রতিভাবান শিশুর শারীরিক কোনো আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে
না। সমবয়সীদের ভিড়ে প্রতিভাবান শিশুকে পৃথকভাবে চেনা যাবে না।

২। বুদ্ধিমত্তা- বুদ্ধি পরিমাপ করার কিছু পদ্ধতি আছে যা দ্বারা শিশুর শারীরিক বয়সের তুলনায় মানসিক
বয়স পরিমাপ করা হয়। বুদ্ধি পরিমাপের একককে বলা হয় বুদ্ধাংক বা Intelligence quotient
সংক্ষেপে IQ। সাধারণত IQ ৭০ বা তার নিচে হলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, ১০০ হলে সাধারণ বুদ্ধি সম্পন্ন
এবং IQ ১৩০-এর উপরে হলে তাকে প্রতিভাবান বলে ধরে নেওয়া হয়।

৩। প্রতিভাবান শিশুদের মানসিক দক্ষতা বেশি হয়। তারা সমস্যা সমাধানের এবং প্রশ্ন করার বিশেষ দক্ষতা
রাখে। তুলনামূলকভাবে কম বয়সে এদের ভাষার বিকাশ হয়। তাদের শব্দ ভাণ্ডার সমৃদ্ধ থাকে।
সাধারণের চেয়ে কতু সম্পর্কে তারা বেশি জানে। এ ধরনের ছেলেমেয়েরা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নীরিক্ষা
করে অনেক কিছু শেখে।

৪। লেখাপড়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য প্রদর্শন করে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে। তাদের মনোযোগ
ও স্মরণশক্তি অসাধারণ থাকে। একবার পড়লেই মনে থাকে। ফলে তারা তাড়াতাড়ি ও সহজেই শিখতে
পারে। নিজের ক্লাসের ২/৩ ক্লাস উপরের পড়া বুঝতে পারে।

৫। প্রতিভাবান শিশুরা সৃজনশীল হয়। তারা কোনোকিছু উদ্ভাবন করতে পারে, নতুনভাবে চিন্তা করতে
পারে। তাদের চিন্তাগুলো গতানুগতিক হয় না। তাতে স্বাতন্ত্র্য্য ও নিজস্বতা বেশি থাকে। যে কোনো
সমস্যা সমাধানে অনেকগুলো পথ তারা উদ্ভাবন করতে পারে।

৬। অনেক সময় প্রতিভাবানরা সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন করে থাকে। যেমন- নেতৃত্ব দেওয়ার
ক্ষমতা, দৃঢ় আত্মবিশ্বাস প্রদর্শন করা ইত্যাদি।

যদি কোনো শিশুর মধ্যে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, তবে তার ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ
যত্ন ও উন্নত পরিবেশ না পেলে শিশুর প্রতিভা ঠিকমতো বিকাশ লাভ করে না। শিশু যে উন্নত বুদ্ধিমত্তা নিয়ে
জন্মগ্রহণ করে উপযুক্ত পরিবেশে সেই বুদ্ধিমত্তার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটে।

প্রতিভাবান শিশুর জন্য করণীয় -

প্রতিভাবান শিশুরা যাতে শিক্ষার মধ্যে আনন্দ পায়, উৎসাহ পায় তার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

প্রতিভাবানদের জন্য সমবয়সীদের চেয়ে উপরের শ্রেণিতে পাঠ দানের ব্যবস্থা করে পাঠ্য বিষয়
ত্বরান্বিতকরণ, সমৃদ্ধকরণ ও বৈচিত্র্যময় করা যেতে পারে।

যে ক্ষেত্রেই মেধার পরিচয় পাওয়া যাবে, সেক্ষেত্রেই মেধা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। কেউ
পড়াশোনায় দক্ষতার পরিচয় না দেখালেও সংগীত, সাহিত্য, খেলাধুলা, চিত্রাংকন ইত্যাদি ক্ষেত্রে
উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখালে তাকে সেক্ষেত্রে মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে ।

তাদের ক্ষমতার পূর্ণ বিকাশের জন্য বহুবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা করতে হবে- যাতে শিশুর
শিক্ষণের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আসে। যেমন- পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, চিত্রাংকন, বিতর্ক
প্রতিযোগিতা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা।

 

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। বিশ্ব অটিস্টিক দিবস কোনটি?

(ক) ২ ফেব্রুয়ারি

(খ) ২ এপ্রিল

(গ) ২ জুন

(ঘ) ২ জুলাই

২। প্রতিভাবান শিশু তারা-

(ক) যাদের বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিক হয়।

(খ) যারা ছোটদের খুবই স্নেহ করে

(গ) যারা যুক্তিপূর্ণ কথা বলে

(ঘ) যারা অন্যদের সাথে সহজে মেশে না।

নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও

সজল ও বাবুল দুই ভাই। ছোট ভাই সজল একা একা খেলতে পছন্দ করে। চোখে চোখে তাকায় না।
বাবা-মা ও অন্য শিশুর সাথে ঠিকভাবে কথা বলতে সমস্যা হয়। দিন দিন তার আচরণে অনগ্রসরতা
দেখা যায়।

৩। সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সজলের সমস্যা হলো-

(ক) অন্যকে খেয়ালই করে না এমন আচরণ করা

(খ) পরিচিত মুখ দেখলে হাসে কিন্তু চেনে না

(গ) ক্ষুধা পেলে তার থাকে প্রকাশ করে দেখায়

(ঘ) খেলনা পেলে অন্যদের সঙ্গে খেলা শুরু করে

৪। সজলের বাবা-মার অবস্থায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা হলো-

(i) অন্যের সাথে সজলের সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করা।

(ii) তার প্রতিভার সন্ধান করা।

(iii) তাকে বিশেষ স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া।

নিচের কোনটি সঠিক?

(ক) তি

(গ) ii ও iii

(*) i iii

(ঘ) i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন

১। মিসেস রেহানার ৮ বছরের ছেলে রনি স্কুলের অন্য ছেলেদের মতো পড়াশোনা পারে না, শিক্ষক প্রশ্ন
করলে উত্তর দেয় না, একই কথা বারবার বলে, খেলাধুলাতেও পিছিয়ে থাকে। শিক্ষকরা প্রায়ই অভিযোগ
করেন। মিসেস রেহেনা নিজে ছেলেটির যত্ন করেন। তারপরেও কোনো কিছুতে তার শেখার আগ্রহ দেখা
যায় না। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তিনি রনিকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং মিসেস রেহানাকে
রনির জন্য বিশেষ শিক্ষা ও যত্নের পরামর্শ দেন।

ক. অটিস্টিক শিশুর সমস্যার নাম কী?

খ. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলতে কী বোঝায়?

গ. কী কারণে রনি অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. পরিবারের সকল সদস্যের সহযোগিতায় রনির ক্ষমতার বিকাশ সম্ভব-কথাটির সঙ্গে তুমি কি
একমত? যুক্তি দাও।

২। কাঠমিস্ত্রি রশীদের ৬ বছরের ছেলে রোমেল অল্প সময়ে পাঠ্যপুস্তক মুখস্থ করে ফেলে। কৌতূহলের
বিশে সে বাবার যন্ত্রপাতির নাম ও ব্যবহার জেনে ফেলে। বাবা যতই শাসন করে না কেন, ছেলের যুক্তির
কাছে কথা বলতে পারে না। বাড়িওয়ালা রশীদের ছেলেটিকে বিশেষভাবে যত্ন নেয়ার জন্য নিজেই
ছেলেটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

ক. কত বছর বয়সে অটিস্টিক শিশুর লক্ষণ দেখা যায়?

খ. অটিস্টিক শিশুর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর?

গ. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর মধ্যে রোমেল কোন প্রকৃতির ব্যাখ্যা কর।

ঘ. 'বাড়িওয়ালার সহযোগিতা রোমেলের প্রতিভা বিকাশের সহায়ক' বক্তব্যটি যুক্তি সহকারে
মূল্যায়ন কর।

Content added By

Related Question

View More