প্রতিরোধ আন্দোলন

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা - ইংরেজ শাসন আমলে বাংলায় প্রতিরোধ, নবজাগরণ ও সংস্কার আন্দোলন | NCTB BOOK
1.6k
Summary

ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলন ছিল একটি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, যা পলাশি যুদ্ধের পর থেকে শুরু হয়। নবাব মীর কাশিম ইংরেজদের বিরুদ্ধে ফকির-সন্ন্যাসীদের সাহায্য চান এবং তারা তাঁর পক্ষে যুদ্ধ করে। জয়ের পর মীর কাশিম পালিয়ে গেলে, ফকির-সন্ন্যাসীরা আন্দোলন চালিয়ে যায়।

ফকির-সন্ন্যাসীরা সাধারণত ভিক্ষাবৃত্তি ও তীর্থস্থান দর্শনের জন্য ঘুরত। ইংরেজি শাসনের সময় তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতা বৃদ্ধি পায়, যা তাদের আন্দোলনে উৎসাহ দেয়।

  • মূল নেতৃবৃন্দ:
    • মজনু শাহ (ফকিরদের নেতা)
    • ভবানী পাঠক (সন্ন্যাসীদের নেতা)
  • প্রথম বিদ্রোহ: ১৭৬০ সালে বর্ধমান জেলায় শুরু হয়।
  • মজনু শাহ ইংরেজদের বিরুদ্ধে ১৭৭১ সালে উত্তর বাংলায় তৎপরতা শুরু করেন এবং ১৭৭৭-১৭৮৬ সালে কয়েকটি জেলার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন।
  • মৃত্যু:
    • মজনু শাহ ১৭৮৭ সালে মারা যান, এরপর তাঁর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন অন্য ফকিররা।
    • ভবানী পাঠক ১৭৮৭ সালে ইংরেজ সৈন্যদের আক্রমণে নিহত হন।

সন্ন্যাসী আন্দোলনের প্রধান নেতা ভবানী পাঠকের মৃত্যুর সঙ্গে এই আন্দোলনেরও অবাসান ঘটে।

ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলন বাংলার ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলন ছিল একটি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন । পলাশি যুদ্ধের পর থেকে এই আন্দোলনের শুরু। নবাব মীর কাশিম ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে ফকির-সন্ন্যাসীদের সাহায্য চান । এই ডাকে সাড়া দিয়ে ফকির-সন্ন্যাসীরা নবাবের পক্ষে যুদ্ধ করে । যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মীর কাশিম পালিয়ে গেলেও ফকির-সন্ন্যাসীরা তাদের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে । নবাবকে সাহায্য করার কারণে ইংরেজরা তাদের গতিবিধির প্রতি কড়া নজর রাখতে থাকে ।

চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী, ফকির-সন্ন্যাসীরা ভিক্ষাবৃত্তি বা মুষ্টি সংগ্রহের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। ধর্মীয় উৎসব, তীর্থস্থান দর্শন উপলক্ষে সারা বছর তারা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ঘুরে বেড়াত । তাদের সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য নানা ধরনের হালকা অস্ত্র থাকত । বাংলায় ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত তারা ছিল স্বাধীন এবং মুক্ত । কিন্তু, ইংরেজ সরকার তাদের অবাধ চলাফেরায় বাধার সৃষ্টি করতে থাকে। তীর্থস্থান দর্শনের ওপর করারোপ করে, ভিক্ষা ও মুক্তি সংগ্রহকে বেআইনি ঘোষণা করে। তাছাড়া তাদের ডাকাত-দস্যু বলে আখ্যায়িত করতে থাকে । ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে ফকির-সন্ন্যাসীরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনে অবতীর্ণ হয় । বিদ্রোহী ফকির দলের নেতার নাম ছিল মজনু শাহ। আর সন্ন্যাসীদের নেতার নাম ছিল ভবানী পাঠক। তাদের আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল সরকারি কুঠি, জমিদারদের কাছারি ও নায়েব-গোমস্তার বাড়ি । ১৭৬০ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় সন্ন্যাসীরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ শুরু করে ।

১৭৭১ সালে মজনু শাহ উত্তর বাংলায় ইংরেজবিরোধী তৎপরতা শুরু করেন। ১৭৭৭-১৭৮৬ সাল পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহ জেলায় ইংরেজদের সঙ্গে মজনু শাহ বহু সংঘর্ষে লিপ্ত হন। তাঁর যুদ্ধকৌশল ছিল গেরিলা পদ্ধতি অর্থাৎ অতর্কিতে আক্রমণ করে নিরাপদে সরে যাওয়া। ইংরেজদের পক্ষে তাঁকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করা কখনই সম্ভব হয়নি। তিনি ১৭৮৭ সালে মৃত্যুবরণ করলে বিদ্রোহের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন মুসা শাহ, সোবান শাহ্, চেরাগ আলী শাহ, করিম শাহ্, মাদার বক্স প্রমুখ ফকির । এই নেভারা কয়েক বছর ইংরেজ প্রশাসনকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখেন। ১৮০০ সালে তাঁরা চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন। অপরদিকে সন্ন্যাসী বিদ্রোহের নেতা ভবানী পাঠক ১৭৮৭ সালে লেফটেন্যান্ট ব্রেনানের নেতৃত্বে একদল ব্রিটিশ সৈন্যের আক্রমণে দুই সহকারীসহ নিহত হন। সন্ন্যাসী আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন তিনি । তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সন্ন্যাসী আন্দোলনেরও অবসান ঘটে ।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...