ইতিহাসের উপাদান

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা - ইতিহাস পরিচিতি | NCTB BOOK
7.7k
Summary

ইতিহাসের উপাদান হলো সেসব তথ্য-প্রমাণ, যার ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

  • লিখিত উপাদান: ইতিহাস রচনার জন্য ব্যবহৃত সাহিত্য, বৈদেশিক বিবরণ, দলিলপত্র ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ, বেদ, 'অর্থশাস্ত্র', 'রাজতরঙ্গিনী', 'তবকাত-ই-নাসিরী', 'আইন-ই-আকবরী' ইত্যাদি। বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ যেমন ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাং ইত্যাদি ঐতিহাসিক তথ্যসমৃদ্ধ। সাহিত্য উপাদানে রূপকথা, কিংবদন্তি ও সরকারের নথিও অন্তর্ভুক্ত।
  • অলিখিত বা প্রত্নতত্ত্ব উপাদান: যেসব বস্তুর মাধ্যমে ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়, সেগুলো হল প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। যেমন মুদ্রা, শিলালিপি, স্তম্ভলিপি, ইমারশ ইত্যাদি। এই নিদর্শন থেকে প্রাচীন সভ্যতা, ধর্ম, জীবনযাত্রা, ব্যবসা বাণিজ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, সিন্ধু সভ্যতা ও বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলি। প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের আড়াই হাজার বছর পূর্বে নগর সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল।

নতুন প্রত্নতত্ত্ব আবিষ্কার এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাংলার প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা বদলে যাচ্ছে এবং নতুন করে লেখা প্রয়োজন হতে পারে।

একক কাজ: ইতিহাসের বিভিন্ন ধরনের উপাদানের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে।

যেসব তথ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব, তাকেই ইতিহাসের উপাদান বলা হয় । ইতিহাসের উপাদানকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা : লিখিত উপাদান ও অলিখিত উপাদান ।

   ১. লিখিত উপাদান: ইতিহাস রচনার লিখিত উপাদানের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য, বৈদেশিক বিবরণ, দলিলপত্র ইত্যাদি । বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সাহিত্যকর্মেও তৎকালীন সময়ের কিছু তথ্য পাওয়া যায়। যেমন : বেদ, কৌটিল্যের 'অর্থশাস্ত্র', কলহনের 'রাজতরঙ্গিনী, মিনহাজ-উস-সিরাজের 'তবকাত-ই-নাসিরী', আবুল ফাল-এর 'আইন-ই-আকবরী' ইত্যাদি। বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ সব সময়ই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত হয়েছে। যেমন- পঞ্চম থেকে সপ্তম শতকে বাংলায় আগত চৈনিক পরিব্রাজক যথাক্রমে ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাং ও ইংসিং-এর বর্ণনা। পরবর্তী সময়ে আফ্রিকান পরিব্রাজক ইবনে বক্তৃতাসহ অন্যদের লেখাতেও এ অঞ্চল সম্পর্কে বিবরণ পাওয়া গিয়েছে। এসব বর্ণনা থেকে তৎকালীন সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যान । সাহিত্য উপাদানের মধ্যে আরও রয়েছে রূপকথা, কিংবদন্তি, গল্পকাহিনি। তিব্বতীয় লেখক লামা তারনাথের বর্ণনায় পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের সিংহাসন আরোহণ সম্পর্কে যে বর্ণনা আছে, সেটি একধরনের কল্পকাহিনি। তবে অনেক কাহিনির আড়ালে অনেক সত্য ঘটনা থেকে যায় যা ঐতিহাসিকরা বিচার- বিশ্লেষণ-অনুসন্ধান করে আবিষ্কার করেন। তাছাড়া সরকারি নথি, চিঠিপত্র ইত্যাদি থেকেও নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। ইতিহাসের উপাদান

   ২. অলিখিত বা প্রত্নতত্ত্ব উপাদান : যেসব বস্তু বা উপাদান থেকে আমরা বিশেষ সময়, স্থান বা ব্যক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক তথ্য পাই, সেই বস্তু বা উপাদানই প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনসমূহ মূলত অলিখিত উপাদান। যেমন : মুদ্রা, শিলালিপি, স্তম্ভলিপি, তাম্রলিপি, ইমারস্ক ইত্যাদি। এ সমস্ত প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বিশ্লেষণের ফলে সে সময়ের অধিবাসীদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ধারণা করা সম্ভব প্রাচীন অধিবাসীদের সভ্যতা, ধর্ম, জীবনযাত্রা, নগরায়ণ, নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র, ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা, কৃষি উপকরণ ইত্যাদি সম্পর্কে । উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় সিন্ধু সভ্যতা, বাংলাদেশের মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতি ইত্যাদি স্থানের প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনের কথা। নতুন নতুন প্রত্নতত্ত্ব আবিষ্কার বদলে দিতে পারে একটি জাতির ইতিহাস। যেমন- সম্প্রতি নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতত্ত্ব আবিষ্কার। ঐ অঞ্চলের প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনে প্রমাণ হয়েছে যে, বাংলাদেশে আড়াই হাজার বছর পূর্বেও নগর সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল। এই আবিষ্কারের ফলে বাংলার প্রাচীন সভ্যতার নবদিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে বাংলার প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে অনেক ধারণা। অদূর ভবিষ্যতে নতুন ভাবে লিখতে হবে বাংলার প্রাচীন ইতিহাস ।

একক কাজ : ইতিহাসের বিভিন্ন ধরনের উপাদানের একটি তালিকা কর ।

 

Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...